#মধুমাস
#পর্ব_১১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
রিপন ঘরে এসেও চিল্লাচিল্লি করে,ফিরোজকে দেখে নেবে সে।রাগে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে।শ্যামা আজকে আর কলেজে যায় নি।আপন দুজন মানুষের মাঝে এই দ্বন্দ্ব দেখে আর কোথাও যাবার জোর পায়নি।ফারিয়াও বাড়ি ফিরে গেছে,ফিরোজ কিছুক্ষণ শক্ত চোখে শ্যামাকে দেখেছে তারপর দ্রুত পদক্ষেপে ভেতরে চলে গেছে,এই একটু তাকানোতেই শ্যামার ভেতরটা কষ্টে ভেঙ্গেচুরে গেছে,রক্তলাল চোখে যে অপমানে ভরপুর ছিলো তা শ্যামা এতোদূর থেকেও টের পাচ্ছিলো।সবার ভাষ্যমতে রিপন ফিরোজকে অনেকক্ষন ধরেই খোঁচা মে,রে কথা বলছিলো,ফিরোজ প্রথমে ঠান্ডা মাথায় বুঝালেও পরে রেগে যায়।রিপনই প্রথমে ফিরোজের গায়ে হাত তুলেছে,এতোবড়ো ছেলেকে সবার সামনে মা,রা কি অপমানের না? অপমানিত হয়ে ফিরোজ কেনো চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে?সেও পালটা আ,ক্রমণ করেছে।ভাগ্য ভালো তখন তাদের কাছে লোক ছিলো উনারাই দুজনকে ছাড়িয়ে নেয়।
উপস্থিত সবার কথা শুনে স্বপন ইসলাম বুঝতে পারে দোষটা উনার ছেলেরই।ফিরোজ যেমন খারাপ তেমনি উনার ছেলে কেমন ত্যাড়া এটাও উনার জানা আছে।রিপনের হম্বিতম্বি দেখে স্বপন ইসলাম ধমকে বললেন,
“গাধার মতো লাফাচ্ছিস কেনো?”
রিপন রাগে ফুসফুস করে বললো,
“আব্বা;ফিরোজ্জায় জানেন কি করেছে।”
“আমার জানার দরকার কি?তুই কুত্তার মতো লাগতে গিয়েছিস কেনো?”
“ও এতো বড়ো বড়ো কথা বলে কেনো?”
“তাতে তোর কি?”
“আমাদের দল কি খারাপ নাকি?ওর দল নিয়ে এসব কথা আমার সহ্য হয় না।”
“যার যার দল তার কাছে ভালো হবে এটাই স্বাভাবিক।তাই বলে গায়ে হাত তুলবি?”
রিপন সামান্য পরিমাণ অনুশোচনা নেই।সে রগরগে কন্ঠে বললো,
“ভালো করেছি মে,রেছি,দরকার হলে লা,শ বানিয়ে ক,বর দিয়ে ফেলবো।”
রিপনের কথায় শ্যামার বুকের খাঁচা ছেড়ে প্রান পাখি উড়ে যাবার যোগার।বড়ো বড়ো চোখদুটো পানিতে টইটই হয়ে যায়,হাত পা তিরতির করে কাঁপতে থাকে।ফাতেমা বেগম আৎকে উঠে বললো,
“এসব কি বলিস রিপন?মাথা ঠিক আছে?”
রিপন চুপ করে থাকে।ফাতেমা বেগম বলে যায়,
“ফিরোজ নেতাফেতা পুলাপান ওর সাথে টক্কর দেয়ার কি দরকার?”
“তো নেতা বলে কি ওর আঙ্গুল চুষতে হবে নাকি?”
স্বপন ইসলাম ধমকে বললেন,
“চুপ কর বেয়াদব।দলকে তুই আমার থেকে বেশী ভালোবাসিস নাকি?চুপ থাকতে না পারলে বাড়ি থেকে বেরোবি না।”
হঠাৎ রিপন শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ওই বাড়িতে যাবি তোর পায়ের খুড়া ভেঙ্গে ফেলবো,অসভ্যদের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।মনে রাখিস।”
শ্যামা কেঁপে উঠে।ওই বাড়িতে যাওয়া মানে তার বান্ধুবীর কাছে যাওয়া কিন্তু শ্যামা যে বান্ধবী ছাড়াও আরেকজনের কাছে যায় এই কথা কি কেউ জানে? না জানে না। জানলে রিপন এতোক্ষণে তাকে ইচ্ছামতো মা,র দিতো কিংবা জানে মে,রে ফেলতেও দ্বিধা করতো না।শ্যামা কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে।অজানা ভ,য় আতং,কে কলিজা শুকিয়ে খড়খড়ে হয়ে যায়।
রিপন গজগজ করতে করতে রুমে চলে যায়।কেউ শ্যামার চোখের পানি দেখার আগে সে তার ছোট রুমে চলে যায়।বুকে এতো য,ন্ত্রণা হচ্ছে।কালকে পাওয়া বৃষ্টির ফোঁটা না ধরতেই কি মিলিয়ে যাবে?অনাবৃষ্টির মাঠে প্রথম ভালোবাসার বৃষ্টি সে মন ভরে গ্রহণ’ও করতে পারলো না।ফিরোজ কি আবারো কঠিন হয়ে যাবে?ফিরোজের রাগে লাল হওয়া চোখের কথা মনে পড়ে শ্যামার ভ,য় হয়,প্রচন্ড ভ,য়ে কুকড়ে যায় অতী সাহসী প্রেমি হৃদয়।ফ্যালফ্যাল চোখে কাঁদতে থাকে,সে কি করবে কিংবা কি করা উচিত বুঝতে পারে না।ফিরোজকে ফোন দিতে গিয়েও দেয় না যদি আরো রেগে যায়।
সাপ্তাহ খানেক চলে যাবার পরেও শ্যামা ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।সম্ভবত ফিরোজ তাকে সবদিক দিয়েই ব্লক করে রেখেছে,সে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম পাচ্ছে না।ফারিয়ার থেকে শুনেছে সেদিন ফিরোজকে নাকি মোহাম্মদ আলী খুবই বকাবকি করেছেন,রাস্তাঘাটে এসব করার জন্য উনি প্রচন্ড রেগে গেছেন।শ্যামা লুকিয়ে ফারিয়াদের বাড়িতে গিয়েছিলো কিন্তু ফিরোজের দেখা পায় নি।ব্যর্থিত মনে ফিরে এসেছে।এই সাতদিন শ্যামা যে কতো কেঁদেছে এটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।সেদিন রাতে ফিরোজের কথায় একটু একটু সম্মতি ছিলো,গলার স্বর ছিলো কোমল,শ্যামা যেনো আশকাড়া পাচ্ছিলো।ক্ষুধার্ত মন এইটুকু আশকাড়া পেয়েই আরো বেশী পাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে; কিন্তু আরো বেশী পাবার তুলনায় যোগাযোগই যখন বন্ধ তখন?শ্যামার মনে হয় সে ম,রে যাবে,এই জীবনে ফিরোজকে আপন করে পাওয়া হবে না,থুতনিতে ইচ্ছেমতো আদর দেয়া হবেনা কতো অপূর্ণতা নিয়ে শ্যামা ম,রে যাবে ভাবতেই সে ডুকড়ে কেঁদে উঠে।মোবাইলটা অযত্নে পরে আছে।মোবাইল ব্যাটারী লো হয়ে বন্ধ হয়ে যায় যায় অবস্থা।শ্যামা সেদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
“বন্ধ হয়ে যাক ;সব বন্ধ হয়ে যাক আমার জীবনও বন্ধ হয়ে যাক।ফিরোজকে ছাড়া কোনোকিছু চলার দরকার নেই।”
ফিরোজ ফ্লোরে বসে আছে মাথাটা বিছানায় হেলানো।সে একটুও শান্তি পাচ্ছে না,বুকের পাখি ছটফটিয়ে জানান দিচ্ছে শান্তি নেই কোথাও একফোঁটা শান্তি নেই।বুকের এমন ছটফটানির কারণ ফিরোজ জানে।এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শ্যামা,শ্যামাকে নিয়েই তার মনের যতো জল্পনা কল্পনা।সেদিন অহেতুক কারণ নিয়ে রিপন তার সাথে ঝগড়া করেছে,আর সে কখনো ভাবেনি সামান্য কথা কাটাকাটি এভাবে মা”রা”মা”রি”তে রূপ নেবে।রিপন সবসময়ই উগ্র স্বভাবের।শ্যামা তাকে ভালোবাসে এটা শোনার পরেও অনেক ঝামেলা করবে,এমনকি শ্যামাকে মা,রতেও পারে।তাই সে চাচ্ছিলো শ্যামাকে দূরে সরাতে।শ্যামার ফ্যামিলি মানবে না আর ফিরোজের ফ্যামিলিও মানবে না।সেদিন মোহাম্মদ আলী ফিরোজকে ধমকে বলেছেন,
“রিপনরা ছোট বংশের মানুষ,মান সম্মানের কোনো ভ,য় নেই।ওদের সাথে তর্ক করে নিজেদের সম্মান নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।ওদের ছোঁয়ার বাহিরে থাকাই মঙ্গল আর যেনো ওদের সাথে কথা বলতে না দেখি।”
ফিরোজ জানে তার আব্বা বরাবরের মতো অহংকারী,নাকউঁচু স্বভাবের মানুষ।উনি কখনো ফিরোজের স্ত্রী হিসেবে শ্যামাকে মানবেনা।ফিরোজ তাই নিজেকে আটকাতে চেয়েছিলো,সব যোগাযোগ বন্ধ করে নিজের অনুভূতি আটকাতে চেয়েছে কিন্তু আটকাতে পারলো কই?কারণে অকারণে মেয়েটাকে মনে পড়ছে।না চাইতেও নিঃশ্বাস হচ্ছে বিষা,দের মতো।সারাক্ষণ মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়ে বেড়াচ্ছে।না চাইতেও মানিব্যাগ বের করে নীল কাগজটা নাকে চেপে ধরছে,ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিচ্ছে।একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতো মিস করতে পারে ফিরোজের ধারনা ছিলো না।”লাবিউ সোনাপাখি”
শ্যামার বলা এই কথাটা ফিরোজের কানে এখনো বাজছে।এতো মিষ্টিও কোনো কথা হয়?বুকে প্রেমের ঘন্টা ঢংঢং করে বেজে যায়।তার এতোদিনে ঘৃণা,অবহেলা উধাও হয়ে সেখানে ভালোবাসার বীজ মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো।ফিরোজের মনে হচ্ছে শ্যামাকে ছাড়া তার চলবে না।মেয়েটাকে ছাড়া একটুও ভালো থাকা যাচ্ছে না,একটুও শান্তি পাওয়া হচ্ছে না ;যেকোনো মূল্যেই হোক এই পাগলকে তার মনের হাসপাতালে ভর্তি করাতেই হবে।না মানুক কারোর ফ্যামিলি,তাতে কি আসে যায়?সে শ্যামাকে চায় এর চেয়ে ধ্রুব সত্য কি হতে পারে?দুজন এক হতে হলে যদি রক্তগঙ্গা বয়িয়ে দিতে হয় তাহলে তাই সই।ফোনটা বের করে গুনে গুনে সাতদিন পরে তার পাগল পাখির কাছে ফোন দিলো।দুইবার রিং হওয়ার পরেই ফোন রিসিভ হয়।
শ্যামা কখনো ভাবেনি ফিরোজ তাকে ফোন দেবে।ফিরোজের ফোন দেখেই অভিমানে কেঁদে দেয়।ফোন রিসিভ করে কেঁদে কেঁদে বললো,
“ভালোবাসি না হুহ্!এভাবে কষ্ট দিতে হয়।”
শ্যামার কান্নাজড়িত কন্ঠ শুনে ফিরোজের বুকে শুল ফুঁটে।বুকের বাম পাশে কেমন সুক্ষ্ম চিনচিনে ব্যাথা হয়।নরম গলায় বললো,
“সরি।”
ফিরোজের আত্মসমর্পণ শ্যামাকে আরো কাঁদায়।
“সরি!কতো কেঁদেছি যানেন।আমাকে আপনি এতো কষ্ট দেন কেনো?ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে আমার কি দোষ?আমি যদি কষ্টে ম,রে যেতাম তো?”
ফিরোজ মনোযোগ দিয়ে শ্যামার কথাগুলো শুনে বললো,
“তোমাকে ম,রতে দিবো না তুমি আমার……”
ফিরোজ আর কি বলছে শোনা যাচ্ছে না।শ্যামা কান থেকে মোবাইল নামিয়ে দেখে মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।এদিকে কারেন্টও নেই।রাগে,দুঃখে শ্যামা ফুপিয়ে কাঁদলো।কতোদিন পরে ফোন দিয়েছে আর সে কিনা মোবাইলের ব্যাটারি লো বানিয়ে রেখেছে।হাতে কোনো উপায় না থাকায় শ্যামা বিছানায় বসে থাকে।ফিরোজের মুখের বাকি কথাটা কি ছিলো?আরেকটু শুনতে পেলে কি ক্ষতি হতো?
ফোন কেঁটে গেলে ফিরোজ আবার ফোন করে কিন্তু তাকে নিরাশ করে ফোন বন্ধ বলে ঘোষণা দেয়।ফিরোজ উঠে দাঁড়ায়।দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গন্তব্যের দিকে হাটে।আজকে মন ভরে না দেখলে কিংবা কথা না বললে তার কলিজা ফেঁটে যাবে।শ্যামার রুমের টিনে হাতের আঙ্গুল দ্বারা হালকা করে টুকা দেয়।ভেতরে শব্দ পেলে ফিরোজ ফিসফিস করে ডাকলো,
“হ্যালো,গেঞ্জিচোর!”
ফিরোজের কন্ঠ শুনে শ্যামা ফট করে জানালা খুলে দেয়।ফিরোজ জানালার শিক ধরে বললো,
“কি ব্যাপার গেঞ্জি চোর!আমাকে এতো ভ,য় পাও কবে থেকে যে ভ,য়ে ফোন কেটে দিয়েছো।”
শ্যামার কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।ফোন কাটার কারণে যে ফিরোজ তাদের বাড়িতে চলে আসবে এটা সে কল্পনাও করেনি।ফিরোজের কথায় মাথা নেড়ে না করে বললো,
“মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।”
ফিরোজ লাইটের হালকা আলোয় শ্যামাকে দেখে বললো,
“বাহিরে আসতে পারবে?নাকি চলে যাবো?”
ফিরোজ এসেছে আর শ্যামা যাবেনা তা কি করে হয়?শ্যামা দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।ফিরোজ হেটে পুকুরপাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়।আশেপাশে ঝি ঝি পোকার মেলা বসেছে।অদ্ভুত শব্দে রাতটা কেমন গা ছমছমে করে দিচ্ছে।শ্যামা কাছে এসে দাঁড়ালে ফিরোজ বললো,
“তারপর কি খবর?”
শ্যামার অভিমান হয়।গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি বুঝেই এসব করেন তাই না?”
“কি করলাম?”
“আমাকে কষ্ট দেন।”
“কষ্ট পেয়েছো?”
“পাবো না?আপনি জানেন না আপনি আমার কি।”
ফিরোজ হাসে।মিহি গলায় বললো,
“আমি তোমার কি?”
শ্যামা অন্ধকারে ফিরোজকে দেখার বৃথা চেষ্টা করে বললো,
“আপনি আমার জান,আমার শরীরের প্রতিটা রক্তকণিকায় আপনি মিশে আছেন।”
শ্যামার কথা শুনে ফিরোজ কিছু বলে না চুপ করে থাকে।মনে মনে ভাবে শ্যামাও বোধহয় তার রক্তে মিশে গেছে; তা না হলে প্রতি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে তার কেনো শ্যামাকেই মনে পড়বে?সে তারপরও স্বীকার যায় না।
“পাগলামি বন্ধ করতে পারবে না?”
শ্যামা ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে উঠে।
“আমার এসব আপনার কাছে পাগলামি মনে হয়?”
“আরে!আবার কাঁদো কেনো?”
শ্যামা কথা বলেনা।ফিরোজই আবার বলে,
“তোমার ভাই যা চিজ।এসব জানলে তোমাকে মে,রে ফেলবে।জানের মায়া নেই নাকি?”
“আপনি একবার ভালোবাসুন প্লিজ জান কেনো ক,বরে চলে যেতেও দ্বিধা করবো না।”
ফিরোজ অপলক তাকিয়ে থাকে।
“ম,রতে হবে না।”
“কথা দিন আর এমন করবেন না।যাইহোক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না।আপনার সাথে কথা না বললে আমার দম আটকে আসে।”
ফিরোজ শ্যামাকে দেখে।কতো সহযে মনের সব কথা বলে দেয় সে কেনো পারেনা?সে কেনো শ্যামার মতো নিজেকে শক্ত খোলস থেকে বের করতে পারে না।শ্যামার কথায় মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।তুমি যা বলবে তাই হবে।”
শ্যামা খুশী হয়।ফিরোজ হাতের মোবাইলে লাইট জ্বেলে শ্যামার মুখের দিকে করে।লাইটের আলোয় শ্যামা চোখ বন্ধ করে ফেলে।আৎকে উঠে বললো,
“কি দেখেন?”
ফিরোজ নিভু গলায় বললো,
“আপনাকে দেখি ম্যাডাম।”
শ্যামা যেনো একটু লজ্জা পেলো।মাথার গোমটা টেনে আরেকটু বড়ো করতে চাইলো।ফিরোজের কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেনো?কেমন নেশা নেশা।ফিরোর শ্যামাকে দেখে নিয়ে বললো,
“তুমি আগুনে ঝাপ দিচ্ছো।বুঝে শুনে।ঠিক আছে?”
শ্যামা অন্যরকম গলায় বললো,
“আগুনে তো ঝাপ সেই কবেই দিয়েছি।আমার হৃদয় কবে থেকেই পুড়ছে অথচ ভালোবেসে নেভানোর মানুষ নেই।যার জন্য এই জ্বলন পোড়ন সে দেখেও দেখে না।সইচ্ছায় আমাকে মৃ,ত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
ফিরোজ মুগ্ধ হয়ে শ্যামার কথাগুলো শুনে।শ্যামা আবারো বললো,
“আমাকে ভালোবাসেন তো?”
ফিরোজ অকপটে বললো,
“না।”
“ভালো না বাসলে এই রাত দুপুরে দেখা করতে আসেন কেনো?কিসের দায়?”
“সেটাও বলতে হবে?”
“হবে।আপনি কেনো আসেন বলেন?”
“জানিনা।”
“জানেন কিন্তু বলবেন না।”
ফিরোজ কথা বলেনা সে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে নির্ঘাৎ উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে।সে বললো,
“অনেক রাত হলো।বাড়ি যাও।”
শ্যামা চুপসে যায়।কচি পাতায় বিষের ফোটা পড়লে যেমন পাতা তৎক্ষনাৎ নেতিয়ে যায় শ্যামাও তেমন নেতিয়ে গেলো।বড়ো বড়ো চোখে পানিতে টইটই হয়ে গেলো।তার এতো কথার কোনো দাম নেই?অভিমানে টলটলে হয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।ফিরোজ চমকে যায়।একবার বলাতেই চলে যাচ্ছে কেনো?ও তো এমন না।ফিরোজ পথরোধ করে বললো,
“কই যাচ্ছো?”
শ্যামা ধরা গলায় বললো,
“বাড়িতে।”
“কেনো?”
“আপনি না চলে যেতে বললেন।”
“আমি বললেই চলে যাবে?”
“যাবোনা?”
“না।জোর করে থাকবে।”
শ্যামা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“জোর করে সব আদায় করা যায় না।”
ফিরোজ মুচকি হেসে বললো,
“চোরেরা সব পারে।”
“গেঞ্জিই চুরি করতে পারে মন তো পারে না।”
ফিরোজ শ্যামার খুব কাছে আসে।যতোটা কাছে আসলে নিঃশ্বাসের সাথে নিঃশ্বাসের আলিঙ্গন হয় ততোটা।ফিসফিস করে বললো,
“গেঞ্জির সাথে মনটাও নিয়ে গেছো।”
শ্যামা অবাক হয়ে বললো,
“মন তো কথা শুনেনা।”
ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শোনেনা?আচ্ছা তুমি যা বলবে তাই হবে।”
“কি বলবো?”
“যা ইচ্ছা।”
শ্যামা ফিরোজের চোখের দিকে তাকায়।
“আপনি আমার হয়ে যান।”
ফিরোজ হাসে।এতো কাছে কোনো ছেলের হাসি দেখে শ্যামার মন কেঁপে উঠে।এক পা পিছিয়ে বললো,
“কি হলো!হাসেন কেনো?”
শ্যামা এক পা পিছালে ফিরোজ এক পা সামনে আনে।শ্যামার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“আমাকে পাগল না বানালে হচ্ছিলো না?পাগলের পাগলামি সহ্য হবেতো শ্যামা পাখির?”
শ্যামা কেঁপে উঠে।দম আটকে তাকিয়ে থাকে ফিরোজের দিকে।এ কি সেই ফিরোজ!যে কথায় কথায় কাঁদাতো?শ্যামার শক খাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে ফিরোজ ফিসফিস করে বললো,
“মধুমাস বোধহয় খুবই নিকটে।মধুরানী কি মধুরাজার অভিষেকের জন্য প্রস্তুত?”
শ্যামা কথা বলতে পারে না।ফিরোজ খুব যত্নে শ্যামার হাতটা নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় পুড়ে নেয়।নরম হাতটার উল্টোপিঠে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো,
“প্রস্তুত না হলে নাই আমি অভিষেক করবোই।ছোট মেয়েকে দাবানলে পোড়াতে হলেও মধুরাজা হতে হবে।”
শ্যামা এতোসব না পাওয়া সুখ একসাথে পেয়ে বোকা হয়ে যায়।ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।প্রচন্ড উত্তেজনায় শরীর কাঁপে থরথর করে।মুখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় উচ্চারণ করে,
“ফিরোজ ভাই!”
ফিরোজ তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামার মুখে ফিরোজ ভাই ডাকটা শুনে তাকায়।তারপর হঠাৎ করে বললো,
“আর একটুও নিজেকে লুকোতে পারলাম না।”
শ্যামা এতো পরিমান অবাক হয়েছে যে কোনো কথা বলতে পারছেনা।সে বললো,
“এসব কি সত্যি?”
ফিরোজ ফিসফিস করে বললো,
“আমি কিন্তু খুবই ভ,য়ানক প্রেমিক হবো শ্যামা।বসন্তের রাজা বলে কথা।”
তারপর থেমে কানের সাথে ঠোঁট লাগায়।শ্যামা কেঁপে উঠে।শিহরণ জাগে সারা দেহে।ফিরোজ রয়েসয়ে বললো,
“ভালোবাসি আমার গেঞ্জিচোর।”
চলবে……