#মধুমাস
#পর্ব_০৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা পাগলের মতো কাঁদে।নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হাত কামড়ে ধরে।ফিরোজ তো তার অনুভূতির কথা জানতো তাহলে?কিভাবে এতো সহযে রাজী হয়ে গেলো?আবার ভাবলো কোথায় ফিরোজের ফ্যামিলি আর কোথায় শ্যামাদের ফ্যামিলি।কতো বড়োলোক উনারা আর শ্যামারা মধ্যবিত্ত পরিবার।মুনিয়াদের ফ্যামিলি বেশ অবস্থাসম্পন্ন ফিরোজদের সাথে টক্কর দিয়ে চলার ক্ষমতা আছে।এই ধনী গরিবের ব্যবধানের কারনেই কি ফিরোজ শ্যামাকে আপন করে নিলো না?শ্যামা এতোকিছু মানতে চাইছে না,ভালোবাসায় পাগল মনে এসব সংজ্ঞা চলে না।রিপনের স্ত্রী শান্তা দরজা ধাক্কিয়ে ডাকে।শ্যামা জলদি ওরনা দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চায়।দরজা খুলে বললো,
“কি ভাবি?”
শান্তা শ্যামার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।ফর্সা মুখ কান্নার কারনে কেমন লাল দেখাচ্ছ,বেশী লাল হয়ে আছে নাকের ডগা।
“কান্না করেছো কেনো?”
ভাবি খুবই বিচক্ষণ মহিলা,উনার কাছে কিছু লুকানো প্রায় অসম্ভব।কিন্তু শ্যামা চায় না ফিরোজের কথা তার ভাবি জানুক কারন ভাবী জানলেই ভাই জানবে আর তার ভাই আর আব্বা যে ফিরোজকে একদম পছন্দ করেনা সেটা সে জানে তাই আবারো বিছানায় গুটিসুটি মে,রে শুয়ে বললো,
“মাথা এত্তো ব্যাথা করছে ভাবী।মনে হচ্ছে মাথাটা ভেঙ্গে ফেলি।”
শান্তা ননদের মাথা ব্যাথা সম্পর্কে জ্ঞাত তাই আর সন্দেহ না করে বললো,
“টাইগার বাম দিয়ে দেবো?”
শ্যামা না করলো।
“নাপা খেয়েছি।একটু শুয়ে থাকি তাহলেই কমে যাবে।”
শান্তা দরজার কাছে গিয়ে বললো,
“ফুলকপির পাকোড়া বানিয়েছি রুমে দিয়ে যাবো?”
শ্যামার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার মনে হচ্ছে যেকোনো মূহুর্তে কেঁদে দেবে।ফুলকপির পাকোড়া!এদিকে তার কলিজা পাকোড়ার মতোই ভাজি হয়ে যাচ্ছে।অতিকষ্ট করে বললো,
“না রেখে দাও ব্যাথা সারলে খাবো।”
শান্তা আর কিছু না বলে দরজা টেনে বন্ধ করে চলে যায়।ভাবী চলে গেলে শ্যামা উঠে দরজা আটকে দেয়।এই কান্নার বহর কাউকে দেখানোর না কাউকে বুঝানোর না কাউকে বলে মন হালকা করার মতো না এই কষ্ট গোপনীয়,একান্ত নিজের।শ্যামার মনে হচ্ছে ফিরোজ যদি বিয়ে করে ফেলে তাহলে শ্যামা ম,রে যাবে।অবুজ,অপরিপক্ক মন ফিরোজ ছাড়া আর কিছু চায় না,তার মনে হয় ফিরোজের সঙ্গ পেলে আর কিছু চাই না।মোবাইল হাতে নিয়ে ফিরোজকে আবারো ফোন দেয় কিন্তু বরাবরের মতো এবারো একটা মেয়ে বন্ধ বলে ঘোষণা করে।এই সার্ভিসের মেয়েটার কণ্ঠ সবসময় মিষ্টি মনে হলেও আজকে এতো বিশ্রী লাগছে।শ্যামা মেসেঞ্জারে গিয়ে ফিরোজকে অগনিত ম্যাসাজ পাঠায়।বুকটা এতো কাঁপছে।চোখের পানি যেনো কোনো বাধা মানছে না।ছেলের বউয়ের কাছে শ্যামার মাথা ব্যাথার কথা জানতে পেরে উনি আসে।কাঠের দরজায় আ,ঘাত করে মেয়েকে ডাকে।শ্যামা বিরক্ত হয়।উঠে দরজা খুলে আবারো বিছানায় শুয়ে পড়ে।ফাতেমা বেগম ভ্রু কুঁচকে মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
“কিরে!বেশী খারাপ লাগছে নাকি?”
শ্যামা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।ফাতেমা বেগম তাড়া দিয়ে বললো,
“কলপাড়ে আয় মাথায় পানি দিয়ে দেই।মাথায় তেল পানি দেস না বলেই এমন ব্যাথা হয়।আয় আয় উঠ।”
শ্যামা আস্তে করে বললো,
“মাথায় পানি দিয়েছি আম্মা।”
ফাতেমা বেগম তেল এনে শ্যামাকে দিয়ে দেয়।শ্যামা শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে একসময় ফাতেমা বেগম চলে গেলে শ্যামা মোবাইল হাতে নিয়ে গ্যালারি খুলে।ফিরোজের অসংখ্য ছবি।একটা ছবি জুম করে সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটা দেখলো।ফিরোজের থুতনিতে একটা গর্ত।সবসময় থুতনিতে এই টোলটা থাকে,হাসলে আরো সুন্দর লাগে।ফিরোজ এমনিতেই সুন্দর,এই টোলের কারণে আরো সুন্দর লাগে। শ্যামা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এই থুতনির গর্তটা ছুঁয়ে দেখার খুব লোভ ছিলো,আদর করার ইচ্ছাগুলো অপূর্ণই থেকে যাবে?এতো এতো ইচ্ছা স্বপ্ন সব এক মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে?শ্যামা ফুপিয়ে উঠে,টুপটাপ চুমু খায় মোবাইলে।কান্না গলায় ফিসফিস করে বললো,”তুমি আমার,শুধু আমার।”
মা না থাকলে পৃথিবীতে কারো কাছে নিজের অনুভূতি,কষ্ট, ইচ্ছা ঠিকঠাক প্রকাশ করা যায় না।ফিরোজ স্তব্ধ হয়ে সোফায় বসে আছে।মুখের ভাব গম্ভীর।সে আজকে সারাদিন হোটেলে ছিলো,বাড়ির কোনো কথা কিংবা আলোচনা সে জানে না সন্ধার আগে বাসায় এসে শুনলো তার বিয়ে ঠিক।মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও বোধহয় সে এতোটা আ,ঘাত পেতো না যতোটা এই সংবাদ শুনে পেয়েছে।তার বিয়ে ঠিক অথচ সে জানে না!তার মতামতের দাম নেই নাকি?মেয়েদের প্রতি বিতৃষ্ণার কথা মোহাম্মদ আলী জানেন তারপরেও কিভাবে উনি এই কাজ করলো?এতোদিন ফিরোজ তার আব্বাকে যথেষ্ট সম্মান করে এসেছে,সে জেনে এসেছে সবাই তাকে না বুঝলেও তার আব্বা তাকে বুঝবে কিন্তু উনি এটা কি করলো?মোহাম্মদ আলী বাহিরে গেছে।ফারিয়া ছুটে এসে জানালো শ্যামাকে দাওয়াত দিয়ে এসেছে। শ্যামার নাম কানে যেতেই ফিরোজের কপালের পাশে নীল রগ টানটান হয়ে ফুলে উঠে।আর কেউ না জানলেও সে তো জানে তার জন্য শ্যামা কতোটা পাগল,এই খবর শুনে না জানি কি করছে।ফিরোজের বুকে যন্ত্রনা হলো,ইচ্ছে করলো সব ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দিতে।রোজিনা বেগম সামনে ঘুরঘুর করছে।ফিরোজ উনার দিকে তাকালে উনি বললো,
“তোমার আব্বা যা করেছে ভেবে চিন্তেই করেছে।”
ফিরোজের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমার মতামত ছাড়া এই সিদ্ধান্ত আব্বা নিতে পারে না।”
“উনি তোমাকে জন্ম দিয়েছে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে।বেশী পাকনামি করবে না।”
“আমি পাকনামি করি?”
ফিরোজ সামনের সেন্টার টেবিল লাত্থি দিয়ে ফেলে দেয়।উপরের কারু কার্যের উপর কাচ বসানো ছিলো বলে বিকট শব্দ হয়ে সেটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে সারা ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।রোজিনা বেগম থমকে যায় ফিরোজের রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায় না।ফিরোজ রুমে ঢুকে সশব্দে দরজা আটকে দেয়।মুনিয়া!মানে মুনিয়াকে বিয়ে করতে হবে?অসম্ভব।রাগে ফিরোজ মাথার চুল টেনে ধরে।হাতের মোবাইল আছড়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়।সে এই বিয়ে কখনোই করবেনা।এতো শত চিন্তার মাঝে ফিরোজের চোখে দীঘির মতো টলটলে চোখের অধিকারীনির চেহারা ভেসে উঠে,ভালোবাসি বলে ডুকরে কেঁদে উঠা মূহুর্তটা মনে পড়ে।তখনি মোহাম্মদ আলী ফিরোজের নাম ধরে ডাকেন।
ফিরোজ নিজেকে শান্ত করার জন্য জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে ছাড়ে।রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে মোহাম্মদ আলী ভাঙ্গা গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ফারিয়া খুবই সাবধানে গ্লাসগুলো পরিষ্কার করছে।ছেলেকে দেখে মোহাম্মদ আলী শক্ত গলায় বললো,
“এসব কি ফিরোজ?”
ফিরোজ তার আব্বার দিকে তাকায়।শান্ত গলায় বললো,
“রাগ হয়েছিলো তাই।”
“রাগ হবার কোনো কারণ তো দেখি না।বিয়ে ঠিক হলে ছেলেরা খুশী হয় তুই রাগ হচ্ছিস কেনো?”
“আমি বিয়ে কররে চাই না আব্বা।”
মোহাম্মদ আলী সোফায় বসে ছেলেকে বসতে ইশারা করেন।ফিরোজ বসে বললো,
“আপনাকে আগেও বলেছি আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“কেনো?”
“এমনি কোনো কারণ নেই।”
মোহাম্মদ আলী ভেবেছিলেন ফিরোজ তাকে শ্রদ্ধা করে মানে, উনি যদি বিয়ে ঠিক করেন তাহলে ফিরোজ না করবে না কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অবস্থা উল্টো।
“মুনিয়া ভালো মেয়ে।তাছাড়া আমাদের বংশের সাথে মানায়।”
ফিরোজ শক্ত গলায় বললো,
“এসবে আমার কিছু যায় আসে না আব্বা।আমি বিয়েই করবো না।”
“আমি চাই তুমি বিয়ে করো।উনাদের কথা দেয়া হয়ে গেছে।”
“আপনি আমার মতামত ছাড়া এমন কাজ করলেন কি করে?”
মুনিয়ার বাবা খুবই বড়োলোক মানুষ।মোহাম্মদ আলীর সাথে আত্মীয়তা হলে খাপে খাপ মিলে যায়।মুনিয়া নাকি নিজেই বলেছে সে ফিরোজকে পছন্দ করে।একমাত্র মেয়ের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকেনি তাই মোহাম্মদ আলীর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেন আর উনিও রাজী হয়ে যায়।উনার মনের ভাব কোনো ভাবে যদি ফিরোজকে রাজী করানো যায় তাহলেই হলো।কিন্তু ছেলে যে এভাবে না করবেন ধারনা করেননি।
“মেয়ে দেখতে শুনতে ভালো তাই ভাবলাম তুমি কিছু বলবে না।”
“আপনি এখনি না করে আসবেন।”
“তা কি করে হয়।”
রেজিনা বেগম তেড়েমেরে বললো,
“লায়েক হয়ে গেছে না হুকম দেয়।”
মোহাম্মদ আলী স্ত্রীকে ধমকে বললো,
“চুপ,বেয়াদব মহিলা সব জায়গায় কথা বলবেনা।”
ফিরোজ তার আব্বার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।মোহাম্মদ আলী অনড় কন্ঠে বললো,
“বিয়ে করতেই হবে।আমি কথা দিয়েছি মান রাখার দায়িত্ব তোমার।”
ফিরোজ অসহায়বোধ করে।আব্বার হাত ধরে বললো,
“আমার মা নেই আব্বা।আপনাকেই নিজের সব মনে করি।আমি চাই আপনি আমাকে বুঝুন।আমি বিয়ে করবো না।যদি কখনো করি আপনাকে জানাবো।দয়া করে এখন আমাকে এসবে জড়াবেন না।”
ছেলের এমন কাতর আবদার মোহাম্মদ আলী ফেলতে পারে না।ছেলের কথাগুলো বুঝে মাথা নাড়ে।কিছুক্ষণ কথাগুলো নিয়ে ভাবে তারপর গম্ভীর গলায় বললো,
“যখনি বিয়ে করবে আমাকে জানাবে আমি বিয়ে ঠিক করবো। আজাত আর কুজাত বললেই কিন্তু বিয়ে করাবো না।”
ফিরোজ কথা না বলে চুপ থাকে।মোহাম্মদ আলী রুমে চলে যায় রোজিনা বেগম পিছুপিছু যায় আর বলে,”বিয়ে করবেনা করবেনা মায়ের মতো আকাম ঠিক করতে পারবে,এইসব মানুষদের চিনা আছে।”
ফিরোজ নিজের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বসে থাকে।কিছু সময় কথা হজম করতে হয়।তার আব্বাকে বলে যেহেতু বিয়ে ভাঙ্গতে পেরেছে সুতরাং এখন আর রাগ কিংবা তর্ক করার দরকার নেই,হিতে বিপরীত হতে পারে।চুপচাপ উঠে রুমে চলে যায়। এইসব কথা বলতে বলতে কখন যে ঘড়ির কাটা রাত এগারোটায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি।ফ্লোর থেকে মোবাইল উঠিয়ে অন করার কিছুক্ষণ পরে শ্যামার একের পর এক ম্যাসাজ টুং টাং শব্দ করে আসে।ফিরোজ ম্যাসাজগুলো পড়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়,রুমে নিজেকে আটকে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়।দরজা চাপিয়ে আবারো বেরিয়ে পড়ে।এমন ম্যাসাজ দেখার পরে আর নিজেকে আটকে রাখা যায় না।কোন মায়াবলে সে শ্যামাদের বাড়ির দিকে হাটে,যেখানে প্রতিক্ষারত এক কোমল কিশোরী তার প্রতিক্ষায় বসে আছে।শ্যামার কিছু ম্যাসাজ ছিলো এমন,
“ফিরোজ ভাই।”
“আপনি ফোন ধরেন প্লিজ।”
“ফারিয়া যা বললো তা কি সত্যি?”
“আমি মানি না।”
“আমি ম,রে যাবো তো।”
“আপনি আমাকে মে,রে ফেলিবেন না প্লিজ।”
“আপনার বিয়ে হলে আমার লা শ দাফন হবে।”
“একবার আমার কাছে আসুন না,এই আমাকে দেখুন কিভাবে বিয়ে করিবেন আমাকে কাঁদিয়ে?”
“আমি ম,রে যাবো ফিরোজ।”
“ইচ্ছে করছে হাতের রগ কেটে ফেলি কিংবা অন্যকিছু।”
“আপনি আমার শুধু আমার।”
ফিরোজ চুপচাপ শ্যামাদের বাড়িতে যায়।এতোটাও রিস্ক নিতো না যদি শ্যামা ফোন ধরতো।মেয়েটা ফোন ধরছে না।সে আলতো করে শ্যামার রুমের টিনে হালকা করে শব্দ করলো।সাথে সাথেই ঝপাৎ করে জানালা খুলে গেলো।ফিরোজকে দেখে শ্যামা ডুকড়ে কেঁদে উঠে।ধরা গলায় বললো,
“ফিরোজ ভাই।”
ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“বাহিরে আসতে পারবে?”
শ্যামা জানালা বন্ধ করার আগে জলদি বললো,
“আসছি।”
ফিরোজ পিছিয়ে যায়।শ্যামা আসলে গভীর চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে।উশখু খুশকু চুল লাল নাক মুখ কান্নার কারণে ফুলে উঠা চোখ ফিরোজের নজর এড়ায় না।সামনে হাটতে হাটতে বললো,
“সামনে আসো।এখানে কথা বললে কেউ শুনে ফেলবে।”
দুজনে হেটে কিছুটা সামনে যায়।ফিরোজের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ভাবতেই হঠাৎ সে কেঁদে উঠে।ফিরোজ শ্যামার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।শ্যামার ইচ্ছে করছে সামনে দাঁড়ানো পুরুষটাকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সেদিনের থাপ্পড়ের কথা ভেবে আর সাহস হলো না।মাথা নেড়ে বললো,
“আমি ম”রে যাবো।”
ফিরোজের শান্তি লাগছে।তার জন্য কেউ কান্না করছে ভাবতেই ভালো লাগছে।
“কেনো ম’রে যাবে?”
শ্যামার কথা গলায় আটকে যাচ্ছে।
“আপনাকে ছাড়া বাঁচতে চাই না।”
“আচ্ছা,এসব উল্টাপাল্টা ম্যাসেজ পাঠিয়েছো কেনো?”
শ্যামা ফিরোজের শান্ত দুই চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সত্যিই বিয়ে করছেন?”
এতোক্ষণ যতো অশান্তি লাগছিলো শ্যামাকে দেখে কেনো যানি অশান্তির যায়গায় শান্তি লাগছে।ভালো লাগছে মেয়েটাকে দেখে,মনের ক্লান্তভাব দূর হয়ে যাচ্ছে।শ্যামাকে আরেকটু কষ্ট দিতে ইচ্ছে হলো।
“বিয়ের বয়স হয়ে গেছে তো।”
শ্যামা কিছু না বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।ফিরোজ বললো,
“মুনিয়াও ভালো মেয়ে তাই আর রাজি হতে দেরী করিনি।”
শ্যামার মনে হলো সামনের মানুষটা খুবই খারাপ।ফ্যাসফ্যাস করে কেঁদে বললো,
“আপনি এতো খারাপ!আমার কষ্ট বুঝলেন না।আমি ম,রে গেলেই বুঝি শান্তি হবে?”
ফিরোজ শ্যামার উতলা ভাব দেখে আর মজা করেনা।গম্ভীর গলায় বললো,
“আব্বা ঠিক করেছে।আমি জানি না।”
শ্যামা মুখে হাত চেপে ধরে।লোকটা এতো খারাপ।বুক থেকে হু হু করে কান্নারা বেরিয়ে আসছে।ফিরোজ শ্যামার কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠা দেহের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো কাঁদো কেনো?”
“আপনি বুঝবেন না।”
“কি বুঝবো আমি?”
“বিয়ে করবেন না প্লিজ।”
“বিয়ে তো ঠিক।ফাইনাল কথাও হয়ে গেছে।”
শ্যামা বললো,
“আপনি না করে দেন।”
“না করেই দিয়েছি।”
শ্যামা চমকে বললো,
“সত্যি?”
“হ্যাঁ,আমি বিয়ে করবো না।”
শ্যামা এতোক্ষণ কান্না করছিলো এখন ফিক করে হেসে বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ।”
ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।দুজনে নিরবে কথা বলে।দক্ষিনা বাতাস গা ছুঁয়ে যায় সাথে নিয়ে যায় কান্না,দুশ্চিন্তার ভার।ফিরোজ হঠাৎ মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বেলে শ্যামার দিকে করে শ্যামাকে দেখে।কান্নার কারণে নাকের ডগা লাল টুকটুকে হয়ে আছে।এতো আদুরে লাগছে কেনো মেয়েটাকে?সে গভীর চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমার জন্য আর পাগলামি করোনা শ্যামা।”
“আপনি কিছু বুঝেন না।”
“তোমার যে চাওয়া তা কখনো পূরণ হবে না।”
শ্যামা চোখ কুঁচকে বললো,
“কেনো?”
ফিরোজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“এমনিই,অনেক সমস্যা আছে।”
শ্যামা মাথা নেড়ে বললো,
“যতোই সমস্যা থাকুক আমার কিছু আসে যায় না।”
“তুমি বাচ্চা তোমার কি আসবে যাবে।”
শ্যামা গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি বাচ্চা না।”
“শ্যামা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো,তুমি নদীর ওইপাড়ে আমি এইপাড়ে।দুইজন একপাড়ে আসা সম্ভব না।সুতরাং পাগলামি করোনা।ঠিক আছে? ”
শ্যামা না করে।
“আমি আপনার পাড়ে চলে আসবো,আমি সব করতে রাজী ।”
মেয়েটা এতো পাগল।ফিরোজ হঠাৎ গম্ভীর গলায় বললো,
“আমি তোমার এতো বড়ো আমার সাথে এভাবে কথা বলতে ভ,য় লাগে না?”
শ্যামা ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর আস্তে করে বললো,
“ভ”য়!এখানে কেনো এসেছেন আপনি?আমাকে ভালোবাসেন?”
ফিরোজ থমকে যায়।অপলকভাবে চেয়ে থাকে মেয়েটার দিকে।ভালোবাসে?কি জবাব দেবে।এতো রাতে ছুটে এলো কেনো সে?কিসের টান।সে সোজা জবাব দেয় না।গম্ভীর গলায় বললো,
“বাড়ি যাও।”
শ্যামা তখনো গভীর চোখে তাকিয়ে আছে।নিভু নিভু গলায় বললো,
“ভালোবাসি।”
ফিরোজ শ্যামাকে দেখে নেয়।
“বাড়ি যাও।না হলে কিন্তু বিয়ে করে নেবো।”
চলবে……