ভ্রান্তির_অগোচরে {প্রথম পর্ব}

0
1833

ভ্রান্তির_অগোচরে {প্রথম পর্ব}

ঊম্মে হাবিবা জাহান।

★★★
–‘মা তোমার নাম কি?

–‘নুজাইরাহ খানম রুবি।

–‘ মাশা-আল্লাহ! মাশা-আল্লাহ! খুব সুন্দর নাম। তা কোন ক্লাসে পড় তুমি?

–‘অনার্স করছি সমাজবিজ্ঞান,প্রথম বর্ষ।

–‘ আনোয়ারা বেগম কিছুক্ষণ মম জাতীয় আওয়াজ করে বললেন,বেশ। খুটিয়ে খুটিয়ে রুবিকে দেখছেন তিনি, লম্বা তো মাশা-আল্লাহ ঠিকমতোই আছে, গায়ে রং টাও ভালো।তার অভিজ্ঞতার চোখ বলছে মেয়ে বেশ নম্র-ভদ্র হবে। একেই আহনাফের সাথে ভালো মানাইবো।আর এমন মেয়ে আমার ছেলেকে ঘরে বাধতে পারবে নাহলে এজীবনে ওর আর বান্ডলেপানা যাইবো না।বন্ধুদের পাল্লায় পরে উচ্ছনেই দিন কাটাইবো।পোলা আমার এখনো বন্ধু কোনটা শত্রু কোনটা তাই ঠিক পাইলো না।হায় মাবুদ, তুমিই আশা ভরসা।

‘রুবির পাশ থেকে তার ছোটচাচী বলে উঠলেন।আপনার আরও কিছু জানার থাকলে বলেন আপা।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


–‘ আনোয়ারা পান চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, না তেমন কিছু বলার নাই,তয় মাইয়া নামাজ-রুজা করে তো? দেইখা মনে অইতাছে পর্দা করে।এক হাত ঘোমটা দিয়া বইসা আছে।আমার অববোশ্য
ঘরোয়া মাইয়া পছন্দ। ঘোমটা দিয়া ঘরে থাকবো ঘরের কাম-কাজ করবো স্বামী -সংসার সামলাবো তাইলে না হইলো বাড়ির বউ। এখনকার মাইরা সব ফ্যাশন ট্যাশন নিয়া ব্যস্ত তাগো না আছে স্বামীর খেয়াল না আছে সংসারের খেয়াল শ্বশুর-শাশুড়ি তো কোন ছাড়!একটু থামলেন আনোয়ারা। আমার একটা মাত্র পোলা বুঝলেন।ব্যবসা করে সারাদিন ছুটাছুটি করেই পার করে। আমি বুইড়া মানুষ আইজ আছি কাইল নাই। একটা ঘরোয়া মাইয়া না হইলে আমার পোলারে দেইখা রাখবো কে?চিন্তায় আমি শেষ হইয়া যাইতাছি। পোলারে একটা গতি কইরা না দিতে পারলে আমি মইরাও শান্তি পামু না।

–‘ না না আপা। চিন্তা করবেন না আমাগো মেয়ে খুব ভালো। নামাজ কন রোজা কন সবই করে।প্রতিদিনই কুরআন পড়ে। আমাগো রুবি তো শুধু চাই যেন পর্দা করবার পারে আর ঘরের কাজের কথা কি বলবো আপা খুবই সুন্দর। আমি আধা বুড়ি হইয়া এত গুছাইয়া কামকাজ করতে পারি না।ঘরোয়া মেয়ে যদি বলেন তো ওর চেয়ে ভালো মেয়ে আর আমি একটা দেখি নাই আপা।

–‘ তাইলে তো আর কিছু কওনের নাই নাজমা(নাজমা রুবি ছোটচাচী)। তুমি হইলা গিয়া ছোট বোনের মতো তোমার উপর ভরসা করতে পারি। তোমাগো মাইয়া তো আমার পছন্দ হয়েছে।সবাইকে নিয়া একদিন আসো,তারপর বাকি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা একদিন আসেন আমাগো বাড়ি আমার পোলাও দেখবেন আর বাড়ি ঘরদোর দেইখা আসবেন।
আনোয়ারা উঠে এসে রুবির মাথায় হাত বুলিয়ে ভালো থাইকো মা বলে কিছু টাকা তার হাতে গুজে দিল।


নিজের রুমে এসে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো রুবি। এ যেন একটা পরিক্ষা বিয়ের আগে শুধু মেয়েদেরকেই সেই পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় এই সমাজে। আধুনিকতার বুলিতে জর্জরিত এই সমাজেও আজও বিয়ের আগের এই ইন্টারভিউতে প্রশ্নের পাহাড় গড়ে তুলে শুধু মেয়েদের জন্য আর যদি হয় গ্রাম তাহলে দ্বিতীয় অপশন নেই।বিয়ে তো দুজনেরই হয় তবে কেন এই নিয়ম?রুবির মনে আছে সীমা আপুর বিয়ের আগে যখন দেখতে এসেছিল তখন সীমা আপু ছেলেকে কিছু প্রশ্ন করেছিল।এই কারণে তার সেই বিয়েটা হয়নি, আপু নাকি খুব চঞ্চল, বেয়াদব, এসব জায়গায় কি মেয়েরা কথা বলে নাকি! এসব পটর পটর করা মেয়েরা নাকি অলক্ষী হয়, বেয়াদব হয়!এরপর বাড়ির সবাইও সীমা আপুকে অনেক বকে ছিল।কিন্তু আপু তো খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছিল তাহলে বেয়াদব কেন বলল এই উত্তর সেদিন পায়নি রুবি।তাই আজকের এই প্রথম ইন্টারভিউতে রুবি খুব ঘাবড়ালেও চুপচাপ ছিল।

খান বাড়ির বড় মেয়ে হলো সীমা। ধার্মিকতায় খুবই দৃঢ় স্বভাবের। তবে শুরুতে ছিলো না এই দৃঢ়তা। কলেজের এক বান্ধবীর বদৌলতে পরিবর্তন হয়েছিল তার জীবন দর্শন।আর তার পর প্রতিনিয়ত সে চেষ্টা চালিয়েছে ইসলামি সংস্কৃতি দিয়ে জীবন সাজাতে।সুন্দর, সহজ পথের সাথী হিসেবে চেয়েছে একজন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী যাতে বাকিটা চলার পথে সেই মানুষটার সাথে পূর্ণ করতে পারে দ্বীন।একটা পর একটা সমন্ধ ভেঙ্গেছে সে। বাবা-মা, আত্মীয় সবার অনেক তিরস্কার পেয়েছে এবং তাকে পাগল বলেও উপহাস করেছে অনেকে, এইতো অতি নিকটের মানুষেরাই।এই কারণে যে চোখ ধাধানো রূপ সে আড়াল করে রেখেছে,সুমধুর সুর ছিল তার গলায় প্রত্যেকবার স্কুল-কলেজের সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রগীতি গেয়ে ফাস্ট প্রাইজ জয়িতা মেয়েটি হুট করে চুপচাপ হয়ে গেছে। গান-বাজনায় রংচঙ মাখা প্রতিবেশীর বিয়েতে যাওয়া বাদ দিয়েছে।যেখানে আশেপাশের সবাই উচ্চ শিক্ষিত উচ্চ পদস্থ সরকারি চাকরিওয়ালা ছেলে খুঁজে পায় না মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য সেখানে সীমা আপু একটা পর একটা ভালো সমন্ধ নাকচ করে গিয়েছে পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে যদিও সীমা আপুকে বললে বলতো এগুলো ভালো সমন্ধ নয়রে পাগলী এগুলো হলো ধোকা আর বকাবকিতে কষ্ট পাইনা রে,কষ্ট তো হয় বাবা-মার এই অপারগতায়।সে শুধু চেয়ে দ্বীনদার পাত্র!
সেদিন থেকেই রুবি এটাই ভাবতো কি এই দ্বীনদার? যার জন্য আপু এত কষ্ট সহ্য করে,সবার বকা শুনে, চাচীর ঝাড়ি খেয়ে দিন শুরু হয় শেষ হয় চাচার হুমকি দিয়ে। কি এই দ্বীনদার কারা এই দ্বীনদারগণ?তারা কি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট বা সরকারি চাকরিওয়ালাদের থেকেও কম কিংবা বেশি স্পেশাল? দ্বীনদার যদি ভালোই হয়, চাচা তাহলে এমন রাগ কেন করে?সেদিনের সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাচ্চা রুবি থেকে নিজেকে প্রকাশিত করেছে এক অন্যতম রুবিতে।সেও আজ ডুবতে চাই ভাসতে চাই দ্বীনদারীতায়।কত মধুর এই দ্বীন! রুবি মাঝে মাঝেই আফসোসে কেঁদে উঠে কেন এত দেরি হলো এই অমৃতের স্বাদ বুঝতে। এই অমোঘ সত্যের মিষ্টুতায় নিজেকে উজ্জীবিত করতে!

সীমা আপুর সেই ধৈর্য্যর ফল সে পেয়ে গিয়েছে।এবার রুবির পালা।এইবারই তার প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে দেখতে আসা এর আগে সমন্ধ আসলেও বাড়ির বড়মেয়ের বিয়ের আগে ছোট মেয়েকে দেখানোটা সমীচীন হয় না বলে দেখায়নি। তাই বাড়ি পর্যন্ত এ্যালাও ছিল না।


হনহনিয়ে ঘরে ঢুকলেন রোকেয়া।মেয়েটা দুপুরে ভার্সিটি থেকে ফিরে খেতে পারেনি। হঠাৎ করেই নাজমা মেহমান নিয়ে হাজির হবেন কে জানতো?কোন প্রস্তুতি ছাড়ায় দেখাদেখি হয়ে গেল। রুবি কাত হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। রুবির কাধে একটু ধাক্কা দিয়ে বলেন,

–‘কিরে ঘুমিয়ে গেছিস?

–‘ রুবি ঘাড় ঘুরিয়ে মা কে দেখে উঠে পরে।না ঘুমায়নি মাথাটা ভারি লাগছে তাই শুয়েছি।কিছু বলবে?

–‘ দুপুরে ফাটা রোদে পুড়ে আসলি তারউপর খাওয়া দাওয়া কিছুই করলি না।মাথা ব্যাথা করবে না তো কি করবে সন্ধ্যায় আজ চা পর্যন্ত নিলি না। রুবির কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখতে পেয়ে তিনিই আবার বললেন চল তোর আব্বা ডাকে খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে।

–‘আব্বা কখন আসলো?

–‘ কিছুক্ষণ আগেই। রোকেয়া উঠলেন বেরুতে বেরুতে বললেন আয় দেরি করিস না।

রুবির শরীরটা কেমন বিবশ হয়ে আছে। উঠতে মন চাইছে না কিন্তু আব্বা অপেক্ষা করছে যেতেই হবে। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আব্বা একবেলা সুযোগ ও ছাড়তে চাই না রুবিকে সাথে নিয়ে খাবার খাওয়ার। রুবিরা দুই ভাই বোন।রুবাইয়াত রুবির বড় ভাই।সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা প্রাইভেট কোম্পানির জব করে।বাবা নাজিম খান নিজ এলাকায় ফার্নিচারের দোকান তার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রুবি। ছোট থেকেই দেখেছে বাবার অদম্য পরিশ্রম, মায়ের হিসাব করে চলা।তবে সন্তানদের বেলায় কখনো তারা কৃপণতা করেননি।বরং তার বড়লোক চাচাতো ভাই বোনদের সাথে সমতা রেখে চলেছে সব সময় সব বিষয়ে পোশাক-আশাক,নামি-দামি স্কুল কলেজ, কোচিং এক্সট্রা হাত খরচ ইত্যাদি। না বলতেই সব পেয়ে যাওয়া এবং দ্বীনি জ্ঞান এর অভাবে রুবাইয়াতের স্বভাবে এসে ঘিরতে থাকলো কিছু অধার্মিক, অসামাজিক কার্যকলাপের আবরণ। শেষে মেয়েলী সম্পর্কেজড়িয়ে একবার বেশ অপদস্ত হতে হয় রুবাইয়াত সহ খান বাড়ির সবাইকে।কৃতকর্মের ফলে সৃষ্টি হওয়া পারিবারিক বিদ্বেষের তীরে ঘায়েল হয়ে একসময় রুবাইয়াত বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রুবির মা বাবা মাঝে মাঝেই ভেবে পাই না তারা তাদের সন্তানের জন্য জীবনভর পরিশ্রম করে সমস্তটা দিয়ে এতো কিছু করলো, এত ভালো নামি-দামি স্কুল কলেজে পড়ালেন তবু কেন এমন নৈতিক অবক্ষয় তাদের ছেলের?রুবি তখন মনে মনে বলে, তোমরা আমাদের বাহ্যিক প্রয়োজন মিটিয়েই ভেবেছ তোমাদের দায়িত্ব শেষ। আসল দায়িত্ব একবার চোখ তুলে দেখোনি আম্মা। পরিচয় করিয়ে দাওনি সেই মহান সত্তার সাথে যিনি আমাদের প্রভু।শিখাওনি নিজস্ব সংস্কৃতি, বলে দাওনি আল্লাহর রাসূলের পথ অনুসরণ করতে, সেই সত্য দ্বীনের পথে হাটতেই শিখাওনি! যে হৃদয়ে দ্বীনের ছোয়া নেই সেখানে বাহ্যিক কর্মে সেই নৈতিকতার গুণ কি করে থাকবে?কিন্তু তোমাদের চাওয়া গুলো এমনি,গোয়ালঘরে রাখবে ষাড় গরু আর আশা করবে সে দুগ্ধ দিবে! তা কি কখনো হয়? রুবি উঠে দরজা ভিড়িয়ে রেখে খাবার ঘরে দিকে পা বাড়ালো।

বিঃদ্রঃ গল্পের প্রয়োজনে অনেক আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে