ভ্রান্তির অগোচরে {পর্ব~~৫}

1
1618

ভ্রান্তির অগোচরে {পর্ব~~৫}

ঊম্মে হাবিবা জাহান

–‘হ্যা এনেছি।ব্যাগেই আছে দিবো এখন?

–‘ হ্যা দে পরে নেয়,একটু পরে লোকজন ভেতরে আসবে হুড়মুড় করে। আর অপেক্ষা করার প্রয়োজন দেখছি না। তুলি প্যাকেটটা এগিয়ে দিতেই রুবি খুলে দেখে মেরুন রঙের জিলবাব।
গায়ে জড়াতে জড়াতে বলল,মেরুন কালার নিলি কেমন করে? তোর না এই রং তেমন ভালো লাগে না!

–‘হু তেমন ভালো তো লাগে না তবে তোকে ভালো দেখায় তাই নিলাম।তারপর রুবিকে ঘেষে বসে কাধে মাথা রেখে বলে তোর তো একটা হিল্লে হয়ে যাচ্ছে বেঁচে যাচ্ছিস।আমার কাছে বিয়ে এত ঝামেলা লাগে কি বলবো।তারপর আমার পরিবার তো তুই জানিসই। আমার বিয়েটা বোধহয় নিকষকালো সন্ধ্যার মতো হবে রে, অন্ধকার কাটিয়ে ঘুম ভাঙা পরভৃতের কূজনে চারপাশ মুখরিত কোনো বসন্তের সকালে নয়।যেটা চেয়েছিলাম।দীর্ঘ শ্বাস পতিত করলো তুলি।

–‘ হতাশ হওয়ার কিছু নেই রে তুলি।আল্লাহ উপর ভরসা রাখ তার উপর ছেড়ে দে চিন্তা ভাবনাটুকু।তুই শুধু ইমানের উপর অটল থাক।তুই কি সেই আয়াতটি শুনিসনি?আল্লাহ বলেছেন,”ভয় পেয়ো না!আমি তোমাদের সাথেই আছি। আমি সব শুনি এবং দেখি।” চিন্তা করিস না,আল্লাহ তো আছেন সাহায্য করার জন্য।তিনি চাইলে তোর পুরো পরিবার হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পারে। তুই বরং দোয়া কর তাদের জন্য। আর জানিস?অবিবাহিতদের জন্য একটা দোয়া আছে যা পাঠ করে, তারা চক্ষু শীতল করা সঙ্গী চেয়ে নিতে পারে।

–‘ কি দোয়া?

–‘রাব্বানা হাবলানা মিন আজো ওয়া জিনা ওয়া জুররিয়াত্বিনা মাররতা আ’ইউনি ওয়াজ আলনা লীল মুত্তাক্বীনা ইমামা।(সূরা ফুরকান;আয়াত ৭৪)

–‘সত্যিই রুবি তোর সাথে কথা বললেই আমি কেমন স্বস্তিবোধ করি।আশা খুঁজে পায়।

–‘আল্লাহর বাণীই তো স্বস্তির বীজ।আল্লাহর বাণী, রাসূলের সুন্নাহের সাথে ঘনিষ্ট হ, গভীর সম্পর্ক করে দেখ। অস্বস্তি, হতাশা তোকে ছুঁতেই পারবে না।

–‘ ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবি কিন্তু।

–‘ ফি আমানিল্লাহ। কেন নয়!তুই নেককার মুমিন হলে আমারও লাভ।

–‘ মানে? তোর কেমনে লাভ হয়?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



–‘তাহলে শোন,হাসান আল বাসরী(র.) বলেছেন,তোমরা পৃথিবীতে ভালো মানুষদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে সচেষ্ট হও,কারণ এই সম্পর্কের কারণে হয়তো তোমরা আখিরাতে উপকৃত হতে পারবে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কিভাবে?
তিনি বললেন যখন জান্নাতিরা জান্নাতে অধিষ্ঠিত হয়ে যাবে তখন তারা পৃথিবীর ঘটনা স্মরণ করবে এবং তাদের পৃথিবীর বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যাবে।তারা বলবে,আমি তো আমার সেই বন্ধুকে জান্নাতে দেখছি না,কি করেছিল সে?
তখন বলা হবে,সে তো জাহান্নামে।
তখন সেই মু’মিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বলবেন,হে আল্লাহ আমার বন্ধুকে ছাড়া আমার কাছে জান্নাতের আনন্দ পরিপূর্ণ হচ্ছেনা।
অতঃপর আল্লাহ সুবহানু তা’আলা আদেশ করবেন অমুক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাতে।তার বন্ধু জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেল এই কারণে নয় যে সে তাহাজ্জুদ পড়ত,বা কুরআন পড়ত অথবা সদকাহ, রোজা রাখত বরং সে মুক্তি পেল কেবলই এই কারণে যে তার বন্ধু তার কথা স্মরণ করেছে।তার জান্নাতি বন্ধুর সম্মানের খাতিরে তাকে জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দেওয়া হলো।
জাহান্নামিরা তখন অত্যন্ত অবাক হয়ে জানতে চাইবে কি কারণে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হলো, তার বাবা কি শহীদ? তার ভাই কি শহীদ? তার জন্য কি কোনো ফেরেশতা বা নবী শাফায়াৎ করেছেন?
‘বলা হবে’না, বরং তার বন্ধু জান্নাতে তার জন্য আল্লাহর কাছে অনুরোধ করেছে।
এই কথা শুনে জাহান্নামিরা আফসোস করে বলবে,হায় আজ আমাদের জন্য কোনো শাফায়াৎকারী নেই এবং আমাদের কোনো সত্যিকারের বন্ধু নেই।এই আয়াতগুলোতে উল্লেখ আছে, “অতএব আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই।এবং কোন সহৃদয় বন্ধুও নেই।” (সূরা আশ-শো’আরা, আয়াত ১০০/১০১)
বুঝতে পারছিস সৎ, নেককার মুমিন বন্ধুর কত গুরুত্বপূর্ণ।

–‘ হু বুঝতে পেরেছি।আমার জানা ছিল না।তোর মাধ্যমে জেনে গেলাম জাযাকাল্লাহ খাইরান কলিজা পাখিটা। আমি বোধহয় এমন একটা বন্ধু পেয়ে গেছি,আলহামদুলিল্লাহ! বলে রুবিকে একটু চেপে ধরে।

–‘ হালকা একটু হেসে বলে। জানিনা রে কতটা পারছি।এই ফেৎনা ফাসাতের যুগে ইমানের উপর অবিচল থাকা কঠিন খুব প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।তিনিই হেফাজতের মালিক।

–‘দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, হু ঠিক বলছিস।পরিবেশটা আবার ভারি হয়ে উঠছিল।তখনই সাথী আসলো। এসেই ঘরের চারদিক ভালো করে খুজতে থাকলো।বাথরুমের সামনে গিয়েও ফিরে এসে তুলিকে জিজ্ঞেস করলো,

–‘এই তুলি রুবি কই গেছে?

–‘তুলি চোখ গোল গোল করে বলে আপু এই এ-ই তো রুবি।

–‘ধুর কি বলিস এই মহিলা রুবি কেন হবে?বলেই ভালো করে লক্ষ করে।তারপর চিৎকার করে বলে রুবি তুই?তুই বোরকা পরছিস ক্যান?আমি তো চিনতেই পারি নাই।

–‘আলহামদুলিল্লাহ খুশি হলাম।

–‘ কি আজব কথাবার্তা রুবি।মেজ মামী মেজ মামী দেখে যাও তোমার মেয়ের কান্ড।বিয়ের দিন কেউ বোরকা পরে?এতো নামি-দামি পার্লার থেকে লোক এনে সাজিয়ে লাভ হলো কি?বোরকা দিয়ে সব ঢাকায় যদি হবে।সাথীর চিল্লানিতে রোকেয়া ছুটে আসে।

–‘আরে সাথী আস্তে এটা বিয়ে বাড়ি।এমনিতেই কত লোকজন কত কথা তোর চিল্লাচিল্লি শুনলে না জানি কি ভাবে। কি হইছে?

–‘ দেখ রুবি কি করছে?বোরকা পরে বসে আছে।বিয়ের দিন কেউ বোরকা পরে? এই আশেপাশে কেউ পরছে তুমি দেখছো?নাকি তোমার মেয়ে একলাই দুনিয়ার সব ধর্মকর্ম জানে আর সে একলাই মুসলমান আর আমরা কাফের।ঢং যতসব দুইদিন ধরে পর্দা কইরা এক্কেবারে মুন্সি হইয়া গেছে।

–‘ রোকেয়া রুবির দিকে তাকিয়ে দেখলেন,রুবি মুখটা স্বাভাবিক রেখে বসে আছে।মনে হচ্ছে,কিছুই হয়নি।সাথী যে এত শক্ত লাগামহীন কথা বলল তাতে যেন রুবির হেলদুল নেই।তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,তার ঠিকই খারাপ লাগছে তার মেয়েকে কেউ কথা শোনাচ্ছে। কি রে রুবি আজকেও বোরকা পরতে হলো? একদিন না পরলে কি হবে? কেন এতো কথা শুনছিস লোকের?রুবি চুপচাপ বসে রইলো কিছুই বলল না।রুবির যে কষ্ট হচ্ছে না এমন নয়।তবে তার কষ্ট টা অন্য জায়গায়। অভিমান হচ্ছে খুব বাবা মায়ের উপর। রোকেয়ার ডাক পরলো, তিনি চলে যাওয়ার সময় বললেন, সাথী ওর যা ইচ্ছা করতে দে।সাথীও ব্যঙ্গ করে চলে গেলেন।

বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। রুবিকে বিদায় দেওয়ার পালা।নাজিম সাহেব খুব
গম্ভীরা হয়ে আছেন।রুবির ঘরে হালকা ভিড়,খুব পরিচিত কিছু লোকজন আর আহনাফ আর তার মামা।একমাত্র মেয়ে তার রুবি বড্ড বেশি আদরের।আজ চলে যাচ্ছে কেমন যেন কষ্ট অনুভব করছেন তিনি।বিদায় পর্বে রুবিকে আহনাফের হাতে তুলে দিয়ে বললেন,বাবা মেয়েটা আমার খুব আদরের, ভেবে না তোমাকে শুধু আমার মেয়েটা দিয়েছি আমার কলিজাটা দিয়ে দিচ্ছি তোমাকে আজ থেকে রুবি তোমার আমানত। ওকে দেখে রেখো। ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করে দিও।তারপর রুবির উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ বাণী বললেন।
রুবাইয়াত নিস্প্রভ কন্ঠে বাবাকে বলল,আব্বা তোমাকে যে দোয়াটা শিখিয়ে দিয়েছি সেটা বলো।
নাজিম খান আহনাফের হাত ধরে আস্তে করে বলেন, “বারাকাল্লাহু লাকা আলাইকা ওয়া যামা বায়নাকুম ওয়া ফী খাইরিন।”
রুবির মা আর বের হলেন না।ঘরে শুয়েই কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন তিনি। রুবাইয়াত গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিল।রুবি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় শেষ পর্যন্ত তার কান্নারাও ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।


শ্বশুরবাড়ি আসার পর রুবিকে একটা সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করছেন। বিয়ের দিন এমন বোরকা পরে আসছে।নতুন বউ কি দেখবে না লোকে?মানুষ কি শুধু খাওয়ার জন্য আসছে বিয়ে বাড়ি বউ দেখতে আসে নাই?আনোয়ারা বেগম খুব সতর্কতার সঙ্গে কথা বলে কাটিয়ে গেলেন।আমাগো বউ পর্দা করে মেলা পরহেজগার তাই তো পোলা বিয়া করায়ছি নইলে এমুন বান্দর রঙা চুলের আর ছুটু ছুটু জামা কাপড় পড়া মাইয়ার তো দুনিয়ায় অভাব নাই।ওমুন মাইয়া মানুষ আমার মোটেই পছন্দ না, লাজ-লজ্জাবিহীন।
নাদিয়া(আহনাফের মামাতো বোন) ও নাদিয়া নে আহনাফের বউরে ঘরে দিয়ে আয় আর কিছু খাওন লইয়া যা,বলে আনোয়ারা বেগম রান্নাঘরে
কাজ কতদূর এগোচ্ছে তা দেখতে গেলেন।রাত পোহালেই বউভাতের অনুষ্ঠান।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে