ভ্রান্তির অগোচরে {পর্ব~৪}

0
1009

ভ্রান্তির অগোচরে {পর্ব~৪}

ঊম্মে হাবিবা জাহান


বিয়েবাড়ির হইহট্টগোল শুরু কাল থেকে হলেও আজ তার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেশি।আশেপাশের প্রতিবেশিরাও এতক্ষণে হাজির হয়ে গেছে।রুবির অনুরোধেই তার বাবা মহিলা আর পুরুষের জন্য আলাদা করে বসার ব্যবস্থা করেছে যদিও তাদের এলাকায় একসাথে বসার ব্যবস্থা হয়ে থাকে।রুবাইয়াত আসায় নাজিম খানের চিন্তা অনেকাংশে কমে গেছে। কাল চিন্তায় নিজাম খানের হুট করে প্রেসার বেড়ে অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাজারের মাঝেই অসুস্থ হয়ে যখন হাসিবের ফার্মেসীতে বসে ছিল তখনই কোথা থেকে যেন উদয় হলো রুবাইয়াত। এতদিন পর ছেলেকে দেখে তার চোখে আপনাআপনি ভিড় জমাতে শুরু করে অশ্রুরাশি।বাবা অসুস্থ শুনে রুবাইয়াত তাকে বসিয়ে দিল।বাকি বাজারটা করে রিক্সা ডেকে বাবাসহ বাড়িতে ফিরলো।বাড়িতে ফিরতেই রোকেয়ার আর্তনাদযুক্ত কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। মা- ছেলের কথপোকথন বেশিক্ষণ সম্ভাব্য হলো না বিয়ের বাড়ির ভিড়ে।রুবি নিজের ঘরের এককোণে চুপচাপ বসে ছিল।কেউ “আসসালামু ওয়ালাইকুম”সালাম দিয়ে তার রুমে প্রবেশ করলো শব্দ পেয়ে সে আশ্চর্য দৃষ্টিতে পিছনে ঘুরে তাকায় তাদের বাসায় এত ভদ্রলোক কে আসলো দেখতে।কারণ সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মতো উন্নত মানসিকতার মানুষ সে খুজেও পায়নি কখনো। অথচ সে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলে অনেকে বলেছে, কথায় কথায় এত সালাম দিস রুবি, তুই কি মুন্সিবাড়ির বউ-ঝি নাকি? রুবির ওসব ব্যঙ্গাত্মক কথায় কিছু আসে যায় না।সে জানে নবীজি (স.) ও ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে সালাম দিতেন।রুবি চায় সে যেন নবীজি কে অনুসরণ করতে পারে তাতে যে যা-ই বলুক তার মন খারাপ হয় না এখন আর!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



–‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। স্তম্ভিত হয়ে যায় রুবি।এ সে কাকে দেখছে?এই আমুল পরিবর্তন কি করে হলো?পুরো আপদ মস্তক পরিবর্তন! আস্তে করেই বলল,ভাইয়া?চোখগুলো চিকচিক করে উঠলো তার।

–‘কেমন আছিস বাবুইপাখি? রুবাইয়াত খুব মায়া জড়ানো কন্ঠে বলল।

–‘ তোমার সাথে কথা নেই। খুব অভিযোগের সুরে বলল।এতদিন পরে তুমি আসছো বাবুইপাখির খোজ নিতে।যাও তুমি জানতে হবে কেমন আছি না আছি।

–‘ রুবাইয়াত আচ্ছা সরিরে পাখিটা নে এবার কান্না থামা। একটু পরে দেখা যাবে চোখের পানির বদলে নাকের পানিতে ভিজি দিবি।

–‘ভাইয়ায়ায়া একটু চেচিয়ে উঠে, আমার মোটেও নাকের পানি পরে না।তোমার পরে।

–‘ এহহহ,তোর পরে। ছোটবেলায় নাকের পানি ফেলতিস আর চেটেচেটে খেতিস।

–‘ ছিঃ ভাইয়া এগুলো কোনো কথা আমার বমি আসছে।ইয়াক আম্মাআয়ায়ায়ায়া!

–‘ হা হা হা, এই ছিদকাদুনে পিচ্চি মেয়ের নাকি আবার বিয়ে হবে?বলতেই পরিবেশটা ভারি হয়ে এলো।

–‘ আমি করবো না বিয়ে ভাইয়া। তোমাদের ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই মনে হচ্ছে আমার দম আটকে যাচ্ছে।

–‘ধুর পাগলী! কিচ্ছু হবে না। আর বিয়ে তো একদিন দিতেই তো হতো এখনই দেয় তাড়াতাড়ি বিদেয় হ। এখন আমি একা রাজত্ব করবো নাজিম খানের শান্তিনীড়ে।

–‘ইশ!এত সোজা না বুঝলা ভাইয়া। আমার রাজত্ব আমি ছাড়বো না একটা ভাবি আসা পর্যন্ত। ভাবি নিয়ে আসবো তার হাতে রাজত্ব অর্পণ করবো।

–‘রুবাইয়াতের মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠে। সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে বাবা আমাকে গরু কাটার দিকটা দেখতে বলেছে। এখন উঠিরে বাবুইপাখি।

–‘রুবিও বুঝতে পারে এখন এই প্রসঙ্গ তোলা উচিত ছিল না।আচ্ছা, ভাইয়া শুনো খাওয়া-দাওয়া করেছো?কখন আসলে?

–‘ এই তো কিছুক্ষণ আগেই। খেয়ে নিবো, আসছি এখন।

–‘হু।


দুপুর হতেই রুবির কয়েকজন ক্লাসমেট চলে আসে।শিরিন,নিশি, কণা আর তুলি। এদের মধ্যে তুলিই রুবি ক্লোজ ফ্রেন্ড বাকিরা ক্লাসমেট তাদের সাথে রুবির তেমন মেন্টালি অ্যা’টাচ নেই।তাদের অতি আধুনিক চলাফেরার সাথে রুবি জীবন পন্থা একদমই বৈসাদৃশ্য। তুলি অবশ্য তাদের থেকে ভিন্ন সেও ধার্মিক দিকগুলো মেনে চলার চেষ্টা করে তবে পারিবারিকভাবে তেমন সাপোর্ট পায় না।সেদিনও রুবির কাছে দুঃখ করে বলল,সে তার খালাতো ভাইয়ের বিয়ে যেতে চাইনি বলে নাকি তার মা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে।কারণটাও শুনতে চাইনি কেন সে যেতে চাই না।যারা ছোট থেকে মাদ্রাসা পড়াশোনা করে তাদের ইসলামিক জ্ঞান বা শিক্ষায় মূখ্য বিষয় হয়।তাই ছেলেদের দাড়ি রাখা আর মেয়েদের পর্দা করাটা নিয়মাধীন ভেবে নেয় আমাদের সমাজে তবে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ইসলামিক বিষয়াদির ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা পায় না। পরিক্ষার রেজাল্টের জন্য ইসলাম শিক্ষা পড়া মাত্র।অধিকাংশ পরিবারও ছেলে-মেয়েদের ধর্ম সম্পর্কে জানাতে, তাদের ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পোষণ করাতে উদাসীন।তারা নিজেদের ক্ষেত্রেই উদাসীন সন্তানদের কি বলবে।কোনো জেনারেল স্টুডেন্ট যদি হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে বা নিজের আসল সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হয়ে তা পালন করে তবে আমাদের সমাজের আল্ট্রা-মর্ডান লোকেরা তাকে নিয়ে জোকস লিখতে বসে যায়,উপহাসের পাত্রী বানিয়ে ফেলে।তুলির না যাওয়ার কারণ ছিল।সে জানে তার পর্দা করা কঠিন হবে সেখানে, কাজিনরা মজার করার নামে নানা অশ্লীলতা মেতে উঠবে এবং তাকেও যে টানা-ছেছড়া করবে তা তুলি নিশ্চিত। কিন্তু মাকে কে বোঝাবে সেদিন তুলিকে রুবি অনেক প্রবোধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছিল সাথে ছিল একটা দীর্ঘশ্বাস যা আফসোসের কষ্টের নয়। কারণ রুবি নিজেও এমন অনেক কিছু ফেস করেছে।

–‘কণা বলে উঠে বিয়েবাড়ি আসলাম নাকি মরাবাড়ি আসলাম বুঝতে পারছি না।

–‘ নিশি বলে কেন এমন বলছিস?

–‘ দেখিস না বক্স টক্স কিছু আনেনি, গান-বাজনা ছাড়া বিয়েবাড়ি জমে নাকি?বিয়ে বাড়ি মনেই হচ্ছে না।

–‘নিশি হেসে বলল,এমন করে বলিস কেন? তুই তো জানিস আমাদের রুবি হুজুর মানুষ।

–‘ শিরিন বলল,থাম তোরা সব কিছুতেই তোদের নাক গলাতে হবে।যার যেমনে বিয়ে করার ইচ্ছে সে তেমনি করুক,তাতে তোদের কি?তোদের বিয়েই তোরা বক্স-টক্স ডিজে-ফিজে এনে নাচিস।

–‘ আরে বাপরে তুই খেপলি কেন?আমরা তো এমনি বলেছি,জাস্ট ফান!

–‘ এই জাস্ট ফানের নাম করে এখন মানুষ মানুষের হৃদয় নিয়ে খেলা করে।কত সস্তা মনে করে, কত সহজে!

‘রুবি কাল থেকেই চুপচাপ। অনেকের এই অভিযোগ ছিল কেন বক্স আনেনি বিয়েবাড়ি বাচ্চারা একটু মজা করবে না?রুবির মা, মেয়ের পছন্দ না গান-বাজনা বলে পাশ কাটিয়ে গেছে।
তবে এখন শিরিনের কথায় তুলি আর রুবিও অবাক হয়ে গেল।তুলি দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল,ব্যাপার কি?তুলি মাথা দু’দিকে দুলিয়ে ইশারা করলো সে কিছু জানে না।

সাথীপুর(সাথী রুবির ফুপির মেয়ে) সাথে করে এক মহিলাকে নিয়ে এসেছে।অলিভ কালারের টপস আর পায়ের সাথে লেগে থাকা ইন্ডিগো কালারের টাইস এর সাথে গলায় একটা স্কাফ ঝুলানো। কাধ সমান করে ছাটা চুলগুলোতে সোনালী-বাদামী রঙের আবরণ। রুবির বুঝতে বাকি রইলো না যে তার না করা স্বত্তেও সাথীপু পার্লারের লোক নিয়ে এসেছে।এই সাথীপু নিজের সাজ-গোজে তো মহা উৎসুক। রুবিকেও ছাড়লো না।

–‘ কই রে রুবি দেখ নাতাশা আপুকে নিয়ে আসছি।আমাদের জেলার বেস্ট মেকআপ উনি করেন।উনার কত কত এ্যাপয়েন্টমেন্ট বাদ দিয়েছেন শুধু আমার সাথে পরিচিত বলে।এমনিতে কোথাও গিয়ে সার্ভিস দেয় না।আরে নাতাশা আপু আপনি বসেন বসেন।রুবি তুই ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে আয়। সাথীপু বলল।

–‘ হ্যা যাচ্ছি। সাথীপু তুমি একটু আমার সাথে আসো…না! কাজ আছে।

–‘ এমা তোর সাথে বাথরুমে আমার কি কাজ?আমারে ডাকস ক্যান?বাথরুমে এখন তোর রোমাঞ্চ করার দিন আসতাছে। এ-ই কাল থেকে পারবি। আমি ভাই এতক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত আর জ্বালাস না তো। যা ফ্রেশ হ।সাথীর কথায় রুমে উপস্থিত থাকা রুবির বান্ধবীসহ নাতাশা খলখলে হাসি দিয়ে উঠে।

–‘সাথীপু যে এমন মজা নিবে কে জানতো?ঘাট হয়েছে তাকে ডেকে।বিরক্তি নিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফিরে এসে নাতাশাকে উদ্দেশ্যে করে বলে, আমাকে কিন্তু খুব লাইট মেকওভার করে দিবেন।এমনিতেই মেকআপ মোটেও পছন্দ না আমার গন্ধটা কেমন যেন বিদখুটে লাগে।

–‘ সে কী কথা রুবি বিয়ে কি রোজ রোজ করবি?একটু গর্জিয়াস ব্রাইডাল লুক না হলে চলে নাকি?সবাই দেখে কি বলবে? বলবে বাপেরবাড়ির মানুষ টাকা বাচানোর জন্য এমন সস্তা মেকআপ করিয়েছে।

–‘ ঠোঁটের আগা কিঞ্চিৎ বাকা করে নিল রুবি। হাসি ছিল নাকি রহস্য সম্যক বুঝতে পারলো না সাথী।রুবি বলল,চিন্তা করো না সাথীপু। কিছুই বলবে না লোকে।সাথী বোকাসোকা চোখে চেয়ে রইলো।


বর এসেছে বর এসেছে বলে অনেকে এগিয়ে গেল গেটের কাছে।নাতাশা কিছুক্ষণ আগেই বিদায় নিয়েছে।সাথী খুব জোড়াজুড়ি করেছিল, বর আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে কিন্তু তার নাকি পরপর আরও তিনটা সিরিয়াল এ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে তারজন্য সে থাকতে পারেনি।রুবির রুমের সবাই-ই বেড়িয়ে যায় বর দেখতে আবার কেউ গেটের সামনে টানাটানির নাটকীয়তা চমৎকারিত্বই দেখতে।তুলিকে বসে থাকতে দেখে বলল,তুইও যাবি নাকি?

–‘ না না পাগল হইছিস?

–‘ বলতে পারিস পাগল।বিয়ে নিয়ে এ পর্যন্ত যে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা সামলে উঠতে গিয়ে পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।তারপরও জানি না শেষ রক্ষা হবে কী না।তুলি স্পষ্ট দেখতে পেল।রুবির নাকের দু’পাশটা ফুলে ফুলে উঠছে হয়তো ভাজ পরা নাকের ডগায় কিছু লোহিত কণিকা এসে ভিড় জমিয়েছে,যা মেকআপের আবরণে ঢাকা পরে গেছে।চোখগুলো চিকচিক করছে তার।

–‘ কি রে রুবু তুই না মোটেও দুর্বল না?আমাদের সবসময় বলিস আশাহত হবি না।আল্লাহ কখনো কারো সাধ্যের বেশি পরিক্ষা করেন না।তাহলে তুই…

–‘ আমি আশাহত নই তুলি।”হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল”আমার জন্য আমার আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমায় সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য আর বিয়ে, সংসার,সন্তান ইত্যাদি যা-ই বলি না কেন এসব তো জীবনের প্রয়োজনে আসল উদ্দেশ্য তো রবের দাসত্ব!আল্লাহ আমায় অঢেল নিয়ামত দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।আমি আশাহত হলে যে কুফরি(অকৃতজ্ঞতা) করা হবে,এতটা অধম কি করে হতে পারি? শয়তানকে জিতিয়ে।থাক সেসব কথা, তোকে যেটা আনতে বলেছি সেটা এনেছিস?

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে