ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৫+১৬

0
333

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ছেলেটির মস্তিষ্ক সচল হতেই গগন কাঁপানো চি**ৎ*কার দিতে চাইলো।কিন্তুু পারলো না;কারণ সামনে থাকা সুদর্শন অথচ ভ**য়ং**কর ব্যক্তিটি তার কন্ঠস্বরকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

“ছেলেটির পা থেকে অনবরত র**ক্ত পড়তে থাকায়,একসময় ছেলেটি ছটফট করতে করতে সেখানেই জ্ঞান হারালো।এদিকে বাকি তিন জন ছেলে সামনের ব্যক্তিটির ভ**য়ং**কর লাল চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে, থরথর করে কাঁপতে থাকলো।অতিরিক্ত ভ**য়ে ওদের ৩জনের প্যান্ট নষ্ট হয়ে গেলো।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’তোরা তো আজকেই শেষ।”

“এদিকে নীলাদ্রি তার সবচেয়ে পরিচিত মুখটির দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।নিহানকে এই মুহূর্তে এখানে ও কল্পনাও করতে পারে নি।নীলাদ্রি অতিরিক্ত দৌঁড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে গেছে, তার ওপর নিহানকে এইভাবে একজনের পা কা**ট**তে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারালো।”

“নিহান ইয়াশ এবং এহতিশাম কে ডেকে রেহানের মতো ছেলেগুলোর অবস্থা করতে বললো।ইয়াশ আর এহতিশাম আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।তবে নীলাদ্রির আড়ালে।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো।আর ইয়াশ এবং এহতিশাম ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে ছেলেগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।পৃথিবী থেকে ভ**য়ং**কর ভাবে বিদায় নিলো আরও ৪জন পাপিষ্ঠ।”

————-
“নীলাদ্রির ঘুম ভাঙলো সকাল সাড়ে ৯টায়।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান উল্টো দিকে ফিরে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রি একটু অবাক হয়ে গেলো।কারণ, নিহান ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।হঠাৎ নীলাদ্রির চোখ জোড়া আটকে গেলো, রুমের চারিদিকে রজনীগন্ধায় ছড়ানো ছিটানো ফুলগুলো দেখে।”

“নীলাদ্রি ওর মাথায় হাত দিয়ে একটু চেপে ধরে চোখ বন্ধ করতেই,ওর গতকাল রাতের কথা সব মনে পড়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো নিহানের হাতে থাকা ধা**রা**লো ছু**রি দিয়ে ছেলেটির পা কা**টা**র কথা।’ভেবেই নীলাদ্রির গা শিউরে উঠলো।”

“নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান এখনোও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রি একবার নিজের শরীরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, সেই একই জামা এখনোও পড়ে আছে এবং শরীর টাও অক্ষত।এর মানে ছেলেগুলো ওর সাথে কিছুই করে নি।তার আগেই নিহান এসে ওকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। আজ মনের অজান্তেই ,নীলাদ্রি খুব খুশি হলো।গ্রাম্য ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ‘মানুষ নিজের বেলা ১৬আনা;পরের বেলা ৪আনা।’আজ নীলাদ্রির বিপদে নিহান ঝাঁপিয়ে পড়েছে।একটা ছেলের পা কে**টে**ছে।তাতে নীলাদ্রির বিন্দু মাত্র খারাপ লাগলো না।কারণ, ছেলেগুলো ছিলো ন**র**পশুর চেয়েও অধম।কিন্তুু একই কাজ যদি নিহান অন্য কারো ক্ষেত্রে করতো; তাহলে হয়তো নীলাদ্রি আবারও নিহান কে ভ**য় পেতো,ভুল বুঝতো।অথচ আজ সেইরকম কিছুই হলো না।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’নিহান হয়তো ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্য খুব রেগে আছে।আর হয়তো ঘুম থেকে উঠে নতুন কোনো পা**গলামি শুরু করবে।এইসব কিছু করার আগেই নীলাদ্রি নিহানের হাত-পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে।আর কখনোও পালানোর কথা ভাববে না।’ভেবে নীলাদ্রি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে জামা-কাপড় নিয়ে নিঃশব্দে ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

“শাওয়ার নিয়ে নীলাদ্রি চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে গিয়ে,কিছুক্ষণ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর রুমে আসতেই দেখলো, নিহান সোফায় বসে পেপার পড়ছে।নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’অদ্ভুত বিষয় আজ লোক টার কি হলো?না আমার সাথে কথা বলছে,না রাগ করছে?আর না কোনো পা**গলামি করছে?এতো বড় অপরাধ করার পরেও কিছুই বললো না!উল্টো দেখি পায়ের ওপর পা তুলে পেপার পড়ছে!”

“নীলাদ্রির মনে আজ সকাল থেকেই অনুশোচনা কাজ করছে।তাই মনে সাহস যুগিয়ে নিহানের সামনে গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই যে শুনছেন,আ’ম সরি।আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।গতকাল রাতে আপনি না আসলে, আমার যে কি হতো আল্লাহ জানে।আমি আর কখনোও এই ভুল করবো না।আপনি আমায় শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।’একাধারে কথাগুলো বলে থামলো নীলাদ্রি।নিহানের রিয়েক্ট দেখার জন্য উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তুু নিহানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখলো না।নিহান এখনোও পেপারেের কাগজে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি তো বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’এই লোক কি এক রাতের মধ্যেই বোবা হয়ে গেলো নাকি?আমার কথাগুলো কি তার কানে পৌঁছায় নি?মনে হয় পেপার পড়ার ধ্যানে আছে।তাই আমার কথা শুনছে না।আমার বাবাকেও দেখতাম, পেপার পড়ার সময় কারো কথা কানে তুলতো না।পেপারের মধ্যেই ডুবে থাকতো।”

“নীলাদ্রি আবারও নিহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলা খাঁকারি দিলো।এইবার নিহান নীলাদ্রির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সোফা থেকে উঠে পেপারটি বিছানায় ফেলে রুম থেকে চলে গেলো।এভাবে নীলাদ্রি কে ইগনোর করে চলে যাওয়াতে, ও অপমানিত বোধ করার বদলে বেশ অবাক হয়ে গেলো।”

“সকালে নীলাদ্রিকে মেইড এসে খাবার দিয়ে বললো,’ম্যাম নিহান স্যার বলেছে, আজ থেকে আপনাকে নিচে গিয়ে সবার সাথে লাঞ্চ আর ডিনার করতে।এখন আপনার শরীর টা দুর্বল তাই এখানেই ব্রেকফাস্ট করুন,দুপুরে সবার সাথে লাঞ্চ করবেন।”

“মেইডের কথা শুনে, নীলাদ্রি কি আকাশ থেকে পড়বে নাকি মাটি খুঁড়ে ভেতরে চলে যাবে বুঝতে পারলো না।কিছুক্ষণ মেইডের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’ওকে..আপনি এখন যেতে পারেন।’মেইড মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।এদিকে নীলাদ্রি নাস্তা করা বাদ দিয়ে,গালে হাত রেখে গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। আজ সকাল থেকেই একের পর এক চমক পেয়ে যাচ্ছে।সামনে আরও কতো চমক বাকি আছে সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছে নীলাদ্রি।”

———–
“গতকাল রাত থেকে ইরা ইয়াশের সাথে একবারও কথা বলে নি।ইয়াশ ইরার সাথে অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে।কিন্তুু ইরা ধমক দিয়ে ইগনোর করেছে।ইরাকে ইয়াশ নীলাদ্রির বাসায় ফেরার কথা বললে ও খুব খুশি হয়; কিন্তুু খুশিটা কারো কাছে প্রকাশ করছে না।কারণ, গতকাল রাতে নিহান ওকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে; সবার সামনে অপমান করেছে।সেটা ইরা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।”

“ইরা বিছানায় শুয়ে কথাগুলো ভাবছে;তখনই ইয়াশ ওর থেকে একটু দূরত্বে বসে বললো,’ঘুঘু পাখি এভাবে আর রাগ করে থেকো না।তোমার চঞ্চলতা না দেখলে আমার একটুও ভালো লাগে না।প্লিজ তোতাপাখি একটু কথা বলো।”

” ইরা আজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।হঠাৎ ইয়াশের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।ইয়াশ ইরার আরেকটু কাছে এসে বললো,’সোনা পাখি একটা কথা বলি,আমার না তোমার ওটা খেতে খুব ভালো লাগে।তোমার ওটা একটু নোনতা আবার কিছুটা মিষ্টিও। তবে আমার খুব ভালো লেগেছে।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরার মুখে এইবার কথা ফুটলো।শোয়া থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে, ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’কি বললেন আপনি?”

“ইয়াশ ইরার গলার দিকে তাকিয়ে বললো,’বলেছি তোমার ওটার স্বাদ একটু নোনতা হলেও, আমার খুব ভালো লেগেছে।”

“ইরা ইয়াশের দৃষ্টি বুঝতে না পেরে, ওর অন্য চিন্তা মাথায় এলো।তখনই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইয়াশের দিকে।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’মোটু লু**চু একটা… দুইদিন যেতে না যেতেই আমার দিকে বা**জে নজর দেওয়া হচ্ছে?আর আজে-বা**জে কথা বলা হচ্ছে তাই না?দু**শ্চ*রিত্র বা**জে লোক;আপনারা দুই ভাই একইরকম।আমাদের দুই বান্ধবীর জীবনটাই বরবাদ করে দিলেন।’বলেই ইয়াশ কে ঠা**স করে একটা থা**প্প*র দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

“ইয়াশ ইরার যাওয়ার পানে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বললো,’যা বাব্বাহ!আমি তো কিছুদিন আগে রাতে ওদের বাসায় গিয়ে ওর ঘাড় থেকে র**ক্ত খেয়েছিলাম।আর পরে ওকে মেডিসিনও খাইয়ে দিয়েছি।সেটাই তো বলতে যাচ্ছিলাম।পুরো কথা না শুনেই থা**প্প**র মেরে চলে গেলো?অবশ্য ওর থা**প্প**রে তো আমি একটুও ব্যথা পাই নি।কারণ, ওতো জানেনা ভ্যাম্পায়ার রা মানুষের আ**ঘা**তে ব্যথা পায় না।’বলেই আশেপাশে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কামড় দিলো ইয়াশ।ওর মনে পড়ে গেলো, এহতিশাম ওকে ইরার কাছে নিজের ভ্যাম্পায়ার রূপের কথা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে।তাহলে ভ্যাম্পায়ার কিং ওদের শাস্তি দেবে।কথাগুলো ভেবে ইরাকে খুঁজতে ইয়াশ রুমের বাইরে চলে গেলো।”

” শায়লা বেগম ডাইনিং টেবিলে দুপুরের খাবার সাজিয়ে রাখছিলেন,আর ইরা তাকে সাহায্য করছে।ইরা ইয়াশের সাথে খিটখিটে আচরণ করলেও, শায়লা বেগমের সাথে যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলে।সেই সময় নীলাদ্রি নিচে এসে দাঁড়াতেই, শায়লা বেগম আর ইরা দু’জনেই ভূত দেখার মতো নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে রইলো।নীলাদ্রি তাদের দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলো, তারা এইসময় নীলাদ্রি কে এখানে আশা করেনি।”

“নীলাদ্রি এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসে হাসি মুখে বললো,’আপনার ছেলে আজ থেকে আমাকে আপনাদের সাথে নাস্তা সহ,লাঞ্চ এবং ডিনার করতে বলেছে।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে শায়লা বেগম এবং ইরার মুখমন্ডল হা হয়ে রইলো।সেটা দেখে মিষ্টি হাসলো নীলাদ্রি।শায়লা বেগম বললেন,’সত্যি কি তোমাকে নিহান এই কথা বলেছে?কিন্তুু গতকাল তো…

“শায়লা বেগম কে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ইরা বলে উঠলো,’দেখ নীলাদ্রি বেস্টফ্রেন্ড হিসাবে তোর প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন।কিন্তুু গতকাল তুই এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, সব অপবাদ এসে পড়েছে আমার ওপর।তোকে নাকি আমি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি।এইসব কথা বলে নিহান আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।আমি তার আচরণে বুঝতে পেরেছি,সে তোর ব্যাপারে যথেষ্ট পজেসিভ।তাই বলবো, দয়া করে আর আমাকে তোদের মধ্যে টানিস না,আর মাকেও না।কারণ, তিনিও তার ছেলের আচরণে যথেষ্ট ব্যথিত।”

“ইরার মুখে এহেন কথা শুনে নীলাদ্রির খুব খারাপ লাগলো।ওর পালানোতে যে ইরার ওপর দোষারোপ করা হবে;এটা নীলাদ্রি ভাবতেও পারেনি।নীলাদ্রি নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,প্লিজ ইরা আমার উপর রাগ করে থাকিস না।আমি ভাবতে পারিনি, যে উনি তোকে দোষারোপ করবে।আ’ম সরি দোস্ত। তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে।”

“এরইমধ্যে শায়লা বেগম বলে উঠলেন,’বুঝেছি তোমাদের দুই বান্ধবীর মধ্যে মান-অভিমান চলছে।এইসব নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আলোচনা করবে।এখন খেয়ে পেট শান্তি করে নাও।নিহানের অফিস থেকে আসার সময় হয়েছে।”

“শায়লা বেগমের মুখে নিহানের অফিসের ব্যাপারে শুনে, নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’সে অফিসে গেলো অথচ আমাকে একবার বলেও গেলো না?এই না বলেছিলো আমার সাথে সবসময় মিশে থাকবে,সারাদিন আমার সাথে সময় কাটাবে,তাহলে এখন দেখছি সবকিছু বিপরীত।’ভেবে নীলাদ্রি আনমনে খাবার খেতে শুরু করলো।”

“এদিকে ইয়াশ ইরার পাশে বসে, প্লেটে ভাত এবং মাগুর মাছের তরকারি বেড়ে খেতে শুরু করলো।ইয়াশ খাওয়া-দাওয়া করে উঠে যেতে নিলে ইরা বললো,’একি আপনি সবজি,ইলিশ মাছের তরকারি নিলেন না কেনো?”

”ইয়াশ মুচকি হেসে বললো,’ওগুলো আমার শরীরে তেমন কাজে লাগবে না।ওগুলো তোমার জন্য জরুরি, তুমি খাও সোনা।’বলেই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেলো।”

“ইরা খেয়াল করলো,’শায়লা বেগম ও শুধু মাগুর মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেলেন।ভাতের পরিমাণ কম,পুরো প্লেট মাগুর মাছ দিয়ে ভরা ছিলো।কয়েক মিনিট পর এহতিশাম এসে চেয়ারে বসে, প্লেটে ভাত নিয়ে সেই মাগুর মাছের তরকারি নিয়ে খেতে শুরু করলো।’ইরা বেশ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা আপনাদের পরিবারে কি সবাই মাগুর মাছের তরকারি খুব পছন্দ করে?”

“হুমম আমরা সবাই র**ক্ত জাতীয় মাছ বা যেকোনো খাবার খেতে খুব পছন্দ করি।আমাদের পরিবারে সবার শরীরেই র**ক্তের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম।তাই সবসময় দুর্বলতা অনুভব করি।ডক্টর বলেছে র**ক্ত জাতীয় খাবার খেতে।”

“ইরা বললো,’তাহলে আপনারা সবাই প্রতিদিন এই খাবার গুলোর পাশাপাশি ২টা করে হাফ বয়েল ডিম খাবেন,এক গ্লাস করে দুধ খাবেন তাহলেই তো হয়ে গেলো।”

“শায়লা বেগম ইরার কথার প্রেক্ষিতে কি বলবে ভেবে পেলো না।তখনই এহতিশাম কথা ঘুরানোর জন্য গলা খাঁকারি দিয়ে শায়লা বেগম কে বলে উঠলো,’মা.. বাবা কি আজ রাতে বাসায় ফিরবে?নাকি ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং এর জন্য ইন্ডিয়া যাবে?”

“শায়লা বেগম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,’আরে তোর বাবা বললো,৩দিন পর ইন্ডিয়া যাবে।তার সাথে নাকি নিহান ও যাবে।”

“এহতিশাম ‘ওহ’ বলে উঠে গেলো।এদিকে নীলাদ্রি এতক্ষণ ভাবনার জগতে বিচরণ করছিলো।যখনই শুনলো নিহান ইন্ডিয়া যাবে, তখনই ও মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।নিহান ওকে এই বাসায় একা রেখে ইন্ডিয়া যাবে।এটাও কি সম্ভব?”

“নীলাদ্রি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ইরার সাথে সোফায় বসলো।তারপর ইরাকে একে একে সব কাহিনী খুলে বললো।সবকিছু শুনে ইরার মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।”

“নীলাদ্রি বললো,’এভাবে হা করে থাকলে তো মশা ঢুকে যাবে,মুখ বন্ধ কর।এইবার তোর কাহিনী বল।”

“ইরা এইবার মুখ মলিন করে ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব কাহিনী বললো।সবকিছু শুনে নীলাদ্রির খুব খারাপ লাগলো।ভাবলো,’আমার বিষয় টা আমার মা পুরোপুরি জানে।কিন্তুু ইরার বিয়েটা এইরকম ক**ল*ঙ্ক মাথায় নিয়ে হবে, সেটা ভাবতেই তো অবাক লাগছে।’নীলাদ্রি ইরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’তুই চিন্তা করিস না দোস্ত। পাছে লোকে কিছু বলে।মানুষের কাজই হলো অন্যকে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা।একসময় দেখবি, মানুষ নতুন সমালোচনা নিয়ে মেতে উঠবে।তখন তোর কাহিনী মাটি চাপা পড়ে যাবে।আর আঙ্কেলের বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দে।আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো।তবে ইয়াশ ছেলে টা খুব ভালো।তোর পুরো বিপরীত; একদম সহজ-সরল।হয়তো ও তোকে খুব ভালোবাসে।তাইতো খুব সহজেই তোকে বিয়ে করতে রাজি হলো।আর যদি ও তোকে চাপে পড়ে বিয়ে করতো,তাহলে ও বিয়ের পর বদলে যেতো।কিন্তুু আমার তেমন মনে হয় না।ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার করিস না।”

“নীলাদ্রির কথাগুলো শুনে ইরা ভাবলো,’সত্যি তো মটু টা বেশ ভদ্র।একদম আমার বিপরীত।তবে তাকে এতো সহজে আমি মানবো না।এই ইরা কে পেতে হলে তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।’ইরার ভাবনার মাঝেই সদর দরজা দিয়ে নিহান কে ঢুকতে দেখে, ইরা নীলাদ্রির থেকে দূরে সরে বসলো।”

“ইরার দৃষ্টি লক্ষ্য করে নীলাদ্রি সামনে তাকাতেই দেখলো নিহান দাঁড়িয়ে আছে।নীলাদ্রি ভাবলো,’এই মনে হয় আবারও সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে ওপরে গিয়ে পা**গলামি শুরু করবে।কিন্তুু ওর ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে,নিহান ধুপধাপ পা ফেলে ওপরে চলে গেলো।”

“সেটা দেখে ইরা চেহারায় আ**তং**ক নিয়ে বললো,’তোর আশিক বর এসে পড়েছে।আমার সাথে তোকে এভাবে দেখে কি না কি করে বসে আল্লাহ জানে।তোর সাইকো বর কে দেখলেই ভ**য়ে আমার আত্মা শুকিয়ে যায়।দেখেছিস, কিভাবে হনহন করে চলে গেলো?মনে হয় খুব রাগ করেছে।এইজন্যই বলেছিলাম,আমাদের সাথে কথা বলার দরকার নেই।সবসময় ১লাইন বেশি বুঝিস।যা গিয়ে তোর সাইকো বরের রাগ ভাঙা।”

“ইরা বলা মাত্রই নীলাদ্রি হনহন করে ওপরে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখলো, নিহান টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে;হয়তো অফিসের কাজ করছে।নীলাদ্রি এইবার মনে হয় বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে চলে গেলো।নিহানের এহেন আচরণে অতিরিক্ত চিন্তায় ওর পুরো মুখ ঘামে ভিজে গেলো।নীলাদ্রি বিছানা থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখের ঘাম মুছে আমতা আমতা করে বললো,’সরি আমি এমনিতেই ইরার সাথে একটু কথা বলছিলাম।আর বলবো না।’বলেই মনে মনে ভাবলো,’আমার মতো প্রতিবাদী একটা মেয়ে এই লোকটার কাছে বারবার সরি বলছি।সত্যি ভাবতে খুব অবাক লাগছে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই নিহান ল্যাপটপ বন্ধ করে ধীর পায়ে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।নীলাদ্রি ভাবলো,’এখনই হয়তো উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে।কি করি আমি?’এরইমধ্যে নিহান ওর খুব কাছে চলে আসলো।নীলাদ্রির বুকের মধ্যে দিড়িম দিড়িম আওয়াজ হচ্ছে।এই আওয়াজ টা যেনো নিহান স্পষ্ট শুনতে পেলো।নিহান আরেকটু কাছে আসতেই, নীলাদ্রি চোখ বন্ধ করে ফেললো।অনুনয়ের সুরে বলতে থাকলো,’প্লিজ প্লিজ এইবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দিন।আমি আর কারো সাথে কথা বলবো না।’বলেই নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো,নিহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ড পর নিহান নীলাদ্রির হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি তো এই কাহিনী দেখে পুরো বোকা বনে গেলো।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি তো এই কাহিনী দেখে পুরো বোকা বনে গেলো।”

“নিহান শাওয়ার নিয়ে প্রায় ১৫মিনিট পর বের হলো।নীলাদ্রি এখনোও থমথমে মুখ নিয়ে বিছানায় বসে আছে।নিহান সেটা দেখে বাঁকা হেসে ওর সামনে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আগামীকাল থেকে তুমি ইউনিভার্সিটিতে যাবে।সামনে তোমার ইনকোর্স এক্সাম আছে।এটা না দিলে ফাইনাল এক্সাম দিতে পারবে না।আর আমি তোমার সাথে যাবো না।তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে যেতে পারো।আর হ্যা, আজ থেকে শুরু করে টানা ১০দিন পর্যন্ত আমি বাসায় থাকবো না।৩দিন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকবো।তারপর ইন্ডিয়া যাবো।আশা করি তুমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবে।আর হ্যা, চাইলে তোমার মায়ের সাথে দেখা করে আসতে পারো।আজ থেকে তুৃমি স্বাধীন।’বলেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।”

“একের পর এক শকড পেতে পেতে নীলাদ্রি মনে হয় হাঁপিয়ে গেলো।টি-টেবিলে থাকা পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।এইমুহূর্তে ঘুম না হলে ওর মাথা ঠান্ডা হবে না।”

“নীলাদ্রির ঘুম ভা**ঙলো মাগরিবের আযানের সময়।নীলাদ্রি ওজু করে মাগরিবের নামাজ পড়ে ইরার রুমের দিকে গিয়ে দেখলো, রুমের দরজা চাপানো।নীলাদ্রি দরজায় নক করতেই দেখলো,ইয়াশ দরজা খুলে দিলো।ইয়াশকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলাদ্রি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার মুখের এই অবস্থা কে করেছে?আর আপনি কোমরে দড়ি বেঁধে রেখেছেন কেনো?”

” ইয়াশ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,’আপনার ওই দুষ্টু বান্ধবী ছাড়া কে করবে?দেখছেন না আমার মুখে কেমন কলমের কালি লাগিয়ে দিয়েছে।আর আমি যেনো তাড়াতাড়ি চিকন হয়ে যাই, তার জন্য কোমরে দড়ি বেঁধে দিয়েছে।আপনি বলুন এটা কে কি বলে?”

“নীলাদ্রি অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’এটাকে তো পুরুষ নির্যাতন বলে।কিন্তুু, ইরা আপনার মুখে কলমের কালি মেখে দিলো কেনো?”

“ইয়াশ মলিন স্বরে বললো,’আমি ওর জন্য একটা কবিতা লিখতে গিয়েছিলাম।দুই লাইন লেখার পর ও সামনে আসতেই,আমি ওকে কবিতা শোনাতে নিলেই ও হঠাৎ করে রেগে-মেগে আমার চেহারার ওপর কলম খুলে কালিগুলো ঢেলে দেয়।”

“পেছন থেকে ইরা কটমটিয়ে বললো,’আপনার কবিতা শুনে আপনাকে যে উগান্ডায় পাঠাইনি এটা আপনার ভাগ্য।আর ওই মোটা শরীর নিয়ে বারবার আমার কাছে ঘেঁষতে আসেন,তাই দূরে সরিয়ে দিয়েছি।স্লিম হয়ে আমার সামনে আসবেন;তখন দেখা যাবে।আমি আরেকবার যদি দেখি আপনার ওই ভুগিচুগি কবিতা নিয়ে আমার সামনে এসেছেন;তাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন।”

“ইরার কথাগুলো শুনে ইয়াশ নীলাদ্রি কে বললো,’দেখেছেন ভাবি আপনার বান্ধবী কতোটা ঝগড়ুটে?আমাকে স্বামী হিসাবে একটুও সম্মান করে না।”

“ইয়াশের বলা শেষ বাক্যটি মনে হয় নীলাদ্রির বুকে তীরের মতো বিধলো।ভাবলো,’আমিও তো আমার স্বামী কে সম্মান করিনা।সবসময় দূরে ঠেলে দেই।তাইতো সে আমার থেকে আজ অনেক দূরে চলে গেলো।যদিও সে আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে।কিন্তুু সে আমাকে সত্যি ভালোবাসে; এটা তার আচার-আচরণেই বুঝতে পারি।’ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনাকে এই অবস্থায় দেখে আমি খুব ভ**য় পেয়ে গেছি।আপনি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ।”

“নীলাদ্রি বলতেই,ইয়াশ ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো, ‘এভাবে ছেলেটার ওপর টর্চার না করলেও পারিস।সে তো আর নিহানের মতো না।তার আচার-আচরণ একদম স্বাভাবিক।সময় থাকতে মূল্যায়ন করতে শেখা উচিত।’কথাগুলো বলেই নীলাদ্রি নিচের দিকে দৃষ্টি দিলো।কথাগুলো নীলাদ্রি ইরাকে বোঝাতে গিয়ে হয়তো নিজেকেই বুঝিয়েছে।”

“ইরা নীলাদ্রি কে বললো,’আর বলিস না।এই মটু টা সবসময় অতিরিক্ত করে।কিছুদিন আগে ক্লাসে ওর কবিতা শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।আজ আবারও কবিতা শোনাতে এসেছে মটু কোথাকার।”

“নীলাদ্রি ধমকের স্বরে বললো,’ইরা মোটা ছেলে যদি তুই এতোই ঘৃ**ণা করিস,তাহলে ইয়াশ কে এই ব্যাপারে বুঝিয়ে বল।ওকে ডায়েট করতে বল।এতে ওর নিজের জন্যও ভালো হবে।আর হ্যা, এই মোটু শব্দ টা আর বলবিনা।শুনতে আনইজি লাগে।কারো উইক পয়েন্ট নিয়ে তাকে সেই কথা বললে সে খুব কষ্ট পায়।বিষয়টি আমি এতোদিন না বুঝলেও এখন বুঝেছি।তাই বলছি ছেলেটাকে একটু সময় দে।হুট করেই তো সবকিছু একবারে পাওয়া যায় না।ধৈর্য ধরতে হয়।আর ধৈর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়।”

“নীলাদ্রির কথাগুলো শুনে ইরার মনটা হয়তো একটু পরিবর্তন হলো।তাই মিষ্টি করে হেসে বললো,’দোস্ত এরপর থেকে ওই মটুকে আর মটু বলবো না।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’এইমাত্রই তো মটু বললি।’

“ইরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,’সরি সরি আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।’
নীলাদ্রি ইরার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো।”

—————–
“সময় চির বহমান দেখতে দেখতে ১০দিন কে**টে গেলো।এই ১০দিনে নীলাদ্রির মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।নীলাদ্রি,ইরা এবং ইয়াশ ইনকোর্স এক্সাম দিয়েছে।ইরা ইয়াশ কে নিহান আর এহতিশামের এক্সাম না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে, ইয়াশ বিষয়টি ‘জানিনা’ বলে এড়িয়ে গেছে।”

“এক্সামের আগে নীলাদ্রি ওর মায়ের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করে এসেছে।তারপর ইরাদের বাসায় গিয়ে রাহাত আহমেদ কে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছে।নীলাদ্রির কথা শুনে রাহাত আহমেদ নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।আর বললেন,’তিনি খুব তাড়াতাড়ি ইরার সাথে দেখা করবেন।তবে এটা ইরাকে জানাতে বারণ করেছে।কারণ তিনি ইরাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।”

————–
“জোছনা রাত।নীলাদ্রি বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসে, একমনে তাকিয়ে আছে আকাশে থাকা বড় থালার মতো চাঁদটির দিকে।চাঁদের আলোয় আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এইমুহূর্তে মেঘের ভেসে বেড়ানোর সুন্দর দৃশ্যটি যদি ক্যাপচার করা যেতো দারুণ হতো।কিন্তুু কিছুদিন আগে নীলাদ্রি যখন ওর ব্যাগে ফোন খুঁজছিলো,তখন দেখলো ফোন নেই।ভাবলো,নিহান হয়তো ফোন টা অনেক আগেই নিয়ে গিয়েছে।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লো নীলাদ্রি।এই ১০দিন নীলাদ্রি নিজের ওপর পাহাড় সমান অভিমান করেছে।প্রতি রাতে নিহানের কথা ভেবে কান্না করে বালিশ ভিজিয়েছে।পরীক্ষা টা না থাকলে হয়তো ওর কান্নার গতিবেগ বেড়ে গিয়ে ম্যাট্রেস টাও ভিজে যেতো।এই কয়েকদিন নীলাদ্রি ওর বেশিরভাগ সময় বেলকনির দোলনায় বসে কাটিয়েছে।বারবার মনে করেছে নিহানের সেই পা**গলাটে কথাগুলো।মাঝে মাঝে একা একাই হেসে উঠেছে নীলাদ্রি।কথাগুলো ভেবে চোখের কার্নিশে পানি জমে গেলো,কিন্তুু পানিটা আর জমতে পারলো না।গাল বেয়ে টপটপ করে নিচে গড়িয়ে পড়লো।আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,’আমি আপনাকে খুব মিস করছি নিহান।আপনার সেই পা**গলামি গুলো খুব মিস করছি।হয়তো আপনি আমাকে আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছেন।তাই এতোদিন নিজের মধ্যে একটা ক্ষো**ভ পুষে রেখেছিলাম।কিন্তুু আমার প্রতি আপনার এই অবহেলা আমি মানতে পারছিনা নিহান।আমি আমার মনের কথাগুলো আপনাকে জানাতে চাই নিহান।চলে আসুন প্লিজ।এই বাসায় এতোগুলো মানুষ থাকার পরেও, আপনার অনুপস্থিতি আমার জন্য বড্ড বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে।’কথাগুলো বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো নীলাদ্রি।কিন্তুু, আজ ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই।”

“নীলাদ্রি আনমনে গেয়ে উঠলো,

🎶কি করে বলবো তোমায়
আসোলে মন কি যে চায়,
কেন সে পালিয়ে বেড়ায়
তোমার থেকে…

কি করে বলবো তোমায়
কেন এ মন হাত বাড়ায়,
আবারও হারিয়ে সে যায়
তোমার থেকে…

তুমি জানতে পারোনি
কতো গল্প পুড়ে যায়,
তুমি চিনতে পারোনি
আমাকে হায়..🎶

————
“ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পড়েছে নীলাদ্রি। শায়লা বেগমের কাছে শুনেছে, সকাল ১১টার মধ্যে বাসায় আসবে ইমতিয়াজ আহমেদ এবং নিহান।নীলাদ্রির মনে যেনো প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে।অনেকদিন পর মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে নীলাদ্রির।সকালে
ইরার রুমে গিয়ে ওকে নিজের রুমে ডেকে এনে, ওর সামনে কয়েকটা শাড়ি রেখে বললো,’দেখতো নিহান আমাকে কোন শাড়িতে দেখলে বেশি পছন্দ করবে?”

” ইরা দুষ্টু হেসে বললো,’কিরে বান্দরনি তুই কি তোর সাইকো বরের প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?”

“নীলাদ্রি মুখে লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে বললো,’আর কতো ঘুরাবো বল।লোকটা আমায় সত্যি খুব ভালোবাসে।জানিস নারীরা কিসে আটকায়?”

“কিসে?”

“পুরুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও যত্নে আটকায়।নিহান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে ঠিকই।কিন্তুু পরবর্তীতে আমার কোনো অযত্ন করেনি।আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে। কিন্তুু আমি আমার ইগোর কারণে সবসময় তাকে প্রত্যাখ্যান করেছি,পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।তাই সে খুব কষ্ট পেয়েছে।তাইতো আমায় রেখে এতো দূরে চলে গেছে।আর আমাকে চোখে আঙুল তুলে বুঝিয়ে গিয়েছে, সে আমার জীবনে কতোটা প্রয়োজনীয়।”

“আরে বাহ!আমার বান্ধবীর দেখি মাথায় বুদ্ধির জুরি নেই।আমাকে একটু বুদ্ধি ধার দে।এই বুদ্ধি দিয়ে ইয়াশ কে যদি একটু স্লিম বানাতে পারতাম; তাহলে কতো ভালো হতো।
নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’কেনো তুই তো ইয়াশ কে ডায়েট চার্ট দিয়েছিস।ও সেটা ফলো করে না?”

” হুমম মাত্র দুই দিন হলো দিয়েছি।কিন্তুু হুট করে তো কেউ খাওয়া-দাওয়া কমাতে পারেনা।তবুও আমি চোখ রাঙিয়ে যতটুকু কন্ট্রোল করি।তবে ইয়াশ কে আমার এখন ভালো লাগে।ছেলেটা সত্যি খুব সহজ-সরল।আমি বলতে পা**গল।আচ্ছা শোন, তুই এই নীল শাড়িটা পর,আর তার সাথে হালকা মেকআপ,আর ম্যাচিং জুয়েলারি পর।এতেই তোকে দারুণ লাগবে।আমাদের আশিক দুলাভাই এমনিতেই পটে যাবে।আমি এখন যাই,দেখি গিয়ে আমার ভোলাভালা স্বামী কি করছে।’বলে ইরা চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি ইরার কথা মতো সাজগোজ করে নিহানের জন্য অপেক্ষা করলো।আজ যেনো নীলাদ্রির অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না।নীলাদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজার দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো।সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, তবুও নিহান এলো না।নীলাদ্রি কে শায়লা বেগম তার কাছে ডেকে জোর করে খাইয়ে দিয়েছেন।নীলাদ্রি সেই একই সাজে নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।সন্ধ্যার একটু পরে হঠাৎ কলিংবেল বাজতেই, নীলাদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো।নীলাদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে উকি দিয়ে দেখলো,শায়লা বেগম দরজা খুলে দিয়েছেন।ইমতিয়াজ আহমেদ এবং নিহান বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো।নীলাদ্রি তৎক্ষনাৎ নিজের রুমে দৌড়ে চলে গেলো।বিছানায় বসে ঘোমটা টেনে মুচকি হাসলো।ভাবলো,’আজ নিহান কে পুরোপুরি চমকে দিবে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো নিহান।নীলাদ্রি একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো।ভাবলো,’নিহান ওর কাছে এসে ওকে এই রূপে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরবে।’কিন্তুু এইবারও নীলাদ্রির ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে, নিহান জামা-কাপড় নিয়ে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি ঘোমটার আড়াল থেকে নিহান কে দেখছিলো।যখন নিহান চলে গেলো নীলাদ্রির চাঁদ মুখখানা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।চোখের পানি মুছে ভাবলো,’আজ যেভাবেই হোক নিহানের অভিমান ভাঙাবো।’সাইকো টাইপ লোকদের যে আবার অভিমান থাকে এটা জানা ছিলো না নীলাদ্রির।ঘোমটা খুলে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো নীলাদ্রি।”

“নিহান শাওয়ার নিয়ে নেভি ব্লু টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে বের হতেই, নীলাদ্রি নিহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।আকস্মিক ঘটনায় নিহানের হৃদস্পন্দন মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য সেখানেই থমকে গেলো।নীলাদ্রির শরীরের উষ্ণ স্পর্শে,নিহানের বরফের মতো ঠান্ডা শরীরে যেনো আরও একবার শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো।নিহানের এই সুপ্ত অনুভূতিগুলো নীলাদ্রির বোঝার ক্ষমতা নেই।এ যেনো ২০৯বছরের সাধনার পর সুমিষ্ট ফলাফল।এই প্রথম নীলাদ্রি নিজে থেকে নিহান কে জড়িয়ে ধরলো।নিহানের মন যেনো আকাশে সেই মেঘেদের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে।কতোদিন পর এতো সুন্দর অনুভূতি হলো, এটা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না।মানুষ যখন কোনো লক্ষ্য পূরণ করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে অবশেষে সফলতা অর্জন করে,তখন সেই জিনিসটি তার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান মনে হয়।না চাইতে পাওয়ার থেকে, সাধনা করে সফলতা অর্জন করার থেকে সুখকর কিছু পৃথিবীতে নেই।”

“আজ নিহানের মনেও সেই সফলতা অর্জনের আনন্দ বইছে।নিহান তার চোখজোড়া বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করে; নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে আলতো করে হাত রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’ নীলাঞ্জনা এভাবে আমাকে বেশিক্ষণ জড়িয়ে ধরলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।তারপর দেখা যাবে
টিস্যুতে ঘর ভরে যাবে।তবুও তোমার সর্দি কমবে না।”

“এই রোমান্টিক মুহূর্তে নিহানের মুখে এমন কথা শুনে,অনেক দিন পর মন খুলে হাসলো নীলাদ্রি।নিহান কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেকি সুরে বললো,’কতোদিন যাবৎ আপনার মুখে এই নামটি শোনার জন্য অপেক্ষা করেছি জানেন?না আপনি তো কিছুই জানেন না।কারণ, আপনি তো আমাকে ছেড়ে অফিসের কাজে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিলেন।আপনি বলেছিলেন, সবসময় আমার সাথে থাকবেন।কিন্তুু আপনি আপনার কথা রাখেন নি।আমার প্রতি এটাই কি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ?”

“নিহান নীলাদ্রির হাত ছাড়িয়ে একটু পেছনে সরে গিয়ে বললো,’আমি জানি তুমি আমায় জেদের বসে জড়িয়ে ধরেছো।এভাবে জড়িয়ে ধরলে সত্যি তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“নীলাদ্রি মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’ভালোবাসার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে।আমিও পারবো আপনার ঠান্ডা শরীরের সাথে মিশে থাকতে।আর এখন থেকে আমি আপনার যত্ন নিবো।সবসময় র**ক্ত জাতীয় খাবার খাওয়াবো।তাহলে ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার র**ক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাবে।কিন্তুু, আমি জানি যে র**ক্তস্বল্পতার রোগীরা শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল থাকে।কিন্তুু, আপনি দেখছি একদম ফিট।আপনার এই ফিট থাকার রহস্য…..

“নিহান নীলাদ্রি কে আর কিছু বলতে দিলো না।নীলাদ্রি কে অবাক করে দিয়ে, নিহান ওকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে গেলো।তারপর ছাদের রেলিং এর ওপর বসালো।রেলিং এর ওপর বসে নীলাদ্রির তো ভ**য়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’আমার খুব ভ**য় লাগছে,প্লিজ আমি নামবো।যদি এখান থেকে পড়ে যাই?”

“নিহান নিজেও রেলিং এর ওপর বসে নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’এই যে আমি তোমার হাত শক্ত করে ধরেছি।তুমি পড়ে গেলে আমিও পড়ে যাবো।তবে চিন্তা করো না,তোমার শরীরে বিন্দু পরিমাণ আ**ঘা*ত লাগতে দেবো না।ভালোবাসি তোমায় নীলাঞ্জনা; পা**গলের মতো ভালোবাসি।”

“এতোদিন পর নিহানের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শুনে অজানা ভালো লাগায় নীলাদ্রির শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

“শুনশান স্থানে নীরবতা ঘিরে ধরেছে দু’জন যুবক যুবতীকে।একজন মানবী; আর একজন মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।চারিপাশ থেকে ভেসে আসা স্নিগ্ধ বাতাসে শরীরে অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে নীলাদ্রির।এইমুহূর্তে খুব করে প্রিয়জন কে কাছে পেতে মন চাইছে।”

“নীলাদ্রির আকাঙ্ক্ষা একটুও বুঝতে দেরি হলো না সামনে থাকা ব্যক্তিটির। সে ধীরে ধীরে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।অতঃপর চুলগুলো সরিয়ে ওর ঘাড়ের কাছে এসে ঠোঁট জোড়া ছোঁয়াতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।বুকের মধ্যে ধুকপুকানি যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। লজ্জামাখা মুখ নিয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বললো,’প্লিজ এতোটা কাছে আসবেন না।”

“সামনে থাকা ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি চিন্তা করো না;আমি তোমার ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষবো না।আমি শুধু তোমাকে গভীর ভাবে একটু আদর করবো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে