ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৩+১৪

0
412

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা রেগে গিয়ে,’কিইইই?’বলেই ইয়াশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

“ইরার হঠাৎ আ**ক্র**মণে ইয়াশ পুরো বোকা বনে গেলো।ইরা ইয়াশের পেটে ওর নখের আঁ**চড় বসিয়ে দিলো।ইয়াশ এতে একটুও ব্যথা পেলো না।কিন্তুু ইরা কে ছাড়ানোর জন্য জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।ইরা ইয়াশকে চেঁচাতে দেখে ওকে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো,’এই মটু এতো জোরে কেউ চেঁচায়?একটু হলেই আমার কান তব্দা খেয়ে যেতো।”

“ইয়াশ উঠে বসলো; তারপর ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’একদম আমাকে মটু বলবে না; তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

“কি করবেন আপনি?১০০বার বলবো মটু মটু মটু…”

“হাহাহাহা তুমি তাহলে এই মটুর পাতলু।মানে মটু-পাতলু।কি দারুণ জুটি তাই না?”

“ইরা এইবার নিজের কথার জালে নিজেই ফেসে গেলো।এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো।শাওয়ার নেওয়ার পর ওর খেয়াল হলো, ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিয়ে আসে নি।ইরা ভাবলো,’এখন কিভাবে আমি জামা-কাপড় আনবো?রুমের এক কোণায় আমার জামা-কাপড়ের ব্যাগ দেখলাম।কিন্তুু ওই মটু টা যদি আমাকে এভাবে দেখে ফেলে কি হবে?ভেবেই ইরা তোয়ালে দিয়ে শরীর ঢেকে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখলো, ইয়াশ বিছানায় বসে আছে।ইরার কিছুই করার নেই।তাই বাধ্য হয়ে ইয়াশ কে নরম কন্ঠে ডাকলো,’এই যে শুনছেন?”

“ইয়াশ শুনেছে;কিন্তুু সাড়া দিলো না।ও ভাবছে ইরা অন্য কাউকে ডাকছে।কারণ,ইরা তো ওকে এতো ভালোভাবে ডাকার প্রশ্নই আসে না।
ইয়াশের সাড়া-শব্দ না পেয়ে ইরা মনে মনে ইয়াশ কে ‘বয়রা’ বলে সম্বোধন করে আবার ডাকলো,’এই যে ইয়াশ শুনছেন?”

“ইয়াশ এইবার পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আমাকে ডাকছো?”

“তো কাকে ডাকবো?এই রুমে আপনি ছাড়া আর কে আছে শুনি?আচ্ছা শুনুন, ফ্লোরে আমার ব্যাগ থেকে একটা থ্রি-পিস নিয়ে আমাকে দিয়ে যান।আমি ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিতে ভুলে গেছি।”

“ইরার কথা শুনে ইয়াশের মনে লাড্ডু ফুটলো।খুশি মনে ইয়াশ ইরার ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ইরা কে দিতে গেলো।ইরা অন্যদিকে তাকিয়ে জামা টান দিতেই,জামার বদলে ইয়াশের হাতে টান লাগলো।সাথে সাথে ইয়াশ হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে গেলো।এদিকে ইয়াশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই, ইরা ইয়াশের সাথে ধা**ক্কা লেগে ইরা পড়ে যেতে নিলো।তখন ইরাকে ধরতে গিয়ে ইয়াশ এবং ইরা দু’জনেই বাথটাবে পড়ে গেলো।ইরা নিচে আর ইয়াশ উপরে।ইয়াশ এমন ওপরে থাকায় ইরার যেনো দম ফেটে যাচ্ছে।কোনোরকমে শক্তি যুগিয়ে ইরা দিলো চি**ৎ*কার।ইয়াশ সেটা শুনে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।বাথটাবে পানি থাকায় দু’জনেই ভিজে গেলো।ইরা উঠে বসে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে বলে উঠলো,’আপনি ইচ্ছে করে এই কাজ টা করলেন তাই না?”

“ইরার প্রশ্নে ইয়াশের মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,’আমি আবার কি করলাম?”

“ন্যাকামি করার জায়গা পান না?আপনি হলেন একজন শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট বন্য ইঁদুর।যখনই শুনেছেন আমি ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিয়ে আসিনি।ওমনি আপনার লোভ লেগে গেলো।কি ভেবেছেন,আপনার মতলব আমি কিছুই বুঝিনা?”

“ইরার কথা শুনে এতক্ষণে ইয়াশ ইরার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, ইরা শরীরে একটা কালো রঙের তোয়ালে পেঁচানো।ইরা কে এই অবস্থায় দেখে ইয়াশ যেনো পা**গল প্রায়।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,’বিশ্বাস করো আমি এই অবস্থায় কোনোদিন কোনো মেয়েকে দেখিনি।আজ প্রথম দেখলাম,তুমি সত্যি খুব সুন্দর সোনাপাখি।আই লাভ ইউ।”

“একেই বাথটাবের ঠান্ডা পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে ইরা।তার ওপর ইয়াশের এই রোমান্টিক কথা ইরার কাছে বি**ষের মতো লাগছে।ইরা ইয়াশ কে কটমটিয়ে বললো,’আপনি যদি এখান থেকে না যান, তাহলে আমি চি**ৎ*কার করে সবাইকে ডাকবো।”

“ইয়াশ দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’এটা পুরো সাউন্ড প্রুফ রুম।তোমার চি**ৎ*কার কেউ শুনবে না।বাট ডোন’ট ওয়ারি সোনা।আ’ম ইনোসেন্ট বয়।তোমাকে বিয়ে করতে পেরেছি,এটাই আমার সৌভাগ্য। কিছুদিন পর তোমার মাথা টা ঠান্ডা হলে আমার কাছে এসে বললেই, আমি রাজি হয়ে যাবো।এখন আমি যাই সোনা,তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার আজকে আর ঘুম হবে না।’বলেই সেখান থেকে দ্রুত কে**টে পড়লো ইয়াশ।”

“ইয়াশ যেতেই ইরা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে,ফ্লোর থেকে অর্ধভেজা জামা-কাপড় উঠিয়ে সেগুলো পড়ে বের হলো।”

“ওয়াশরুম থেকে বের হতেই;ইয়াশ ইরা কে বললো,’প্লিজ সোনাপাখি এখন কোনো সিনক্রিয়েট করো না।আমি জানি, তুমি এখনোও সবকিছু মানতে পারছোনা।কিন্তুু সিচুয়েশনটা বোঝার চেষ্টা করো।মা নিচে আমাদের জন্য ওয়েট করছে;প্লিজ নিচে চলো।”

“ইরা ভাবলো,’সব দোষ করেছে ইয়াশ।ওর বাবা-মা তো করে নি।তাই রাজি হয়ে গেলো।দু’জনে ডাইনিং রুমে পৌঁছাতেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো নীলাদ্রি এবং ইরার।”

“নীলাদ্রি ইরা কে ইয়াশের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’তুই এখানে?”

“ইরা যেনো আরও বেশি অবাক হলো।শাড়ি পরিহিত নীলাদ্রি কে দেখে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে।ইরা পাল্টা প্রশ্ন করলো,’আমারও তো একই প্রশ্ন তুই এখানে কিভাবে এলি?”

“নীলাদ্রি বুঝে গেছে চাইলেও ইরার কাছ থেকে কিছু লুকাতে পারবে না।তাই মলিন মুখে বললো,’৪দিন আগে নিহান আমাকে বিয়ে করেছে।তোকে জানালে তুই আমাকে পঁচা নালায় চুবিয়ে মা**র*তি;তাই বলিনি।কিন্তুু তুই এখানে কেনো?”

“নীলাদ্রির কথা শুনে ইরা মনে হয় ঠা**স করে আকাশ থেকে পড়লো।কোনোভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,’গতকাল রাতে অ্যাক্সিডেন্টলি ইয়াশের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তাই আমি এই বাড়িতে অবস্থান করছি।”

“ইরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো নীলাদ্রি। ভাবলো,’আমাদের দুই বান্ধবীর কপালে কি তাহলে এই লেখা ছিলো?”

“নীলাদ্রি এবং ইরার কথার মাঝে শায়লা বেগম গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,’তোমরা কি শুধু কথা বলবে নাকি খেতে বসবে?”

‘গতকাল রাতে ইরাকে নিয়ে এই বাড়িতে আসার পর শায়লা বেগম মন ভার করে থাকলে,ইমতিয়াজ আহমেদ এবং ইয়াশ তাকে অনেক বোঝায়।আর পুরো ঘটনা বলে।তখন শায়লা বেগম বুঝতে পারেন,পুরোটাই পরিস্থিতির স্বীকার। তাই তিনি এখন স্বাভাবিক আচরণ করছেন।’

“শায়লা বেগমের নির্দেশে ইয়াশ,ইরা এবং নীলাদ্রি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো।শায়লা বেগম নীলাদ্রি কে বললেন,’তুমি কি ইরা কে আগে থেকে চেনো?তোমাদের কথা-বার্তায় মনে হলো তোমরা পূর্ব-পরিচিত।”

“নীলাদ্রি ম্লান হেসে বললো,’হুমম মা ইরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
“শায়লা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন,’তাই নাকি তোমরা দু’জন বান্ধবী?আরে বাহ!ভাগ্যক্রমে তোমাদের সম্পর্ক টা আরও গাঢ় হয়ে গেলো।এখন তোমরা দুই জা হয়ে গেছো।দু’জনে সবসময় মিলে-মিশে থাকবে।’বলেই তিনি সবার প্লেটে খাবার বাড়লেন।ইমতিয়াজ আহমেদ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং থাকায় সকালেই নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেছে।নিহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।তাই নীলাদ্রি সেই সুযোগে নিচে আসলো।ওই বদ্ধ রুমে নীলাদ্রির দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।তাই আজ শায়লা বেগমের সাথে খাওয়ার জন্য নিচে এলো।এহতিশাম এখনোও ঘুমাচ্ছে।তাই শায়লা বেগম আর ডাকেনি।”

“ইয়াশের খাওয়া শেষ।এদিকে ইরা গরুর মাংস দিয়ে ভাত মেখে মাত্রই মুখে দিলো,তখনই ওর বমি এসে পড়লো। নীলাদ্রি প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করে নি।যখন দেখলো ইরার প্লেটে গরুর মাংস, তখন নীলাদ্রি বুঝে গেলো ইরার এমন করার কারণ।ইয়াশ ইরাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,’কি হলো সোনা?এমন করছো কেনো?নাও পানি খাও।’ইরা ঢকঢক করে পানি খেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’এটা কিসের মাংস?”

“পাশ থেকে শায়লা বেগম বললেন,’কেনো মামনি এটা তো গরুর মাংস ভুনা।”

“ইরা হা করে তাকিয়ে বললো,’গরুর মাংস ভুনা খেতে এইরকম?”

“ইরার রিয়েকশন দেখে নীলাদ্রি ঠোঁট টিপে হেসে বললো,’ইরা এই বাড়িতে সবার একটু গ্যাস প্রবলেম আছে।তাই তারা মশলা জাতীয় খাবার অ্যাভয়েড করে।আমি মেইড কে দিয়ে আমার জন্য আলাদা রান্না করিয়েছি।তুই আমার খাবার খা।’বলেই নীলাদ্রি ইরার প্লেটে মুরগির মাংসের তরকারি দিলো।ইরার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই আর কথা না বাড়িয়ে খাবার খেয়ে নিলো।ইরা কে খাবার খেতে দেখে ইয়াশ তৃপ্তির হাসি দিলো।”

——————–
“এদিকে নিহান ঘুম থেকে উঠে নীলাদ্রি কে রুমে না দেখে,তড়িৎ গতিতে বেলকনি এবং ওয়াশরুম চেক করলো।কিন্তুু কোথাও নীলাদ্রি কে না পেয়ে নিহানের মাথা গরম হয়ে গেলো।নিহান রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে গেলো।ডাইনিং টেবিলে নীলাদ্রি কে সবার সাথে বসে খেতে দেখে, নিহান অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করলো।তেড়ে গেলো নীলাদ্রির দিকে।চোখের পলকেই নীলাদ্রি কে সবার সামনে চেয়ার থেকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো ওপরে।ইরা তো এটা দেখে পুরো থ হয়ে গেলো।শায়লা বেগম এবং ইয়াশ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারা হয়তো আগে থেকেই এমন কিছু দেখার অপেক্ষায় ছিলো।”

“নিহান নীলাদ্রি কে রুমে নিয়ে গিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে,দরজা আটকে দিলো।নীলাদ্রি সবেমাত্র খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে উঠতে যাবে,তখনই এই অঘটন ঘটে গেলো।”

“নিহান ঘাড় কাত করে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তার চোখ জোড়া লাল টকটকে।নীলাদ্রি ভেবেছিলো,’ নিহান এভাবে ওকে সবার সামনে কোলে নিয়ে আসার কারণে একটু প্রতিবাদ করবে।কিন্তুু নিহানের ঘাড় কাত করা, আর লাল চোখজোড়া দেখে নীলাদ্রির প্রতিবাদী মনোভাব ফুস করে উড়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে নিচু স্বরে বললো,’আপনি ঘুমিয়েছিলেন।একা একা রুমের মধ্যে বোর হচ্ছিলাম।তাই একটু নিচে গিয়ে সবার সাথে নাস্তা করছিলাম।”

“নিহান এইবার এক লাফে নীলাদ্রির কাছে চলে আসলো।তার চুলগুলো এলোমেলো।ঘুম থেকে উঠেই নীলাদ্রি কে না পেয়ে খুঁজতে গিয়েছে।তাই চুলগুলো এখনোও এলোমেলো হয়ে আছে।নিহান কে দেখতে এখন সাদা চামড়ার পা**গলের মতো লাগছে।”

“নিহান নীলাদ্রির খুব কাছে এসে ওর চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে বললো,’এই চুলগুলো ভাবছি কে**টে আমার কাছে সযত্নে রেখে দেবো নীলাঞ্জনা।যেনো ভুলেও কেউ না দেখতে পারে।”

“নীলাদ্রির বুক কেঁপে উঠলো।আমতা
আমতা করে বললো,’আমি তো চুলগুলো ভালো করে বেঁধে গিয়েছি।তাহলে…..

” হুসসসস….একদম কথা বলবেনা।চুপ করে থাকো।আমি এই যাবো,আর এই আসবো।’বলেই নিহান টেবিলের ড্রয়ার থেকে কে**চি বের করে নীলাদ্রির কাছে আসলো।ওর চুলে হাত বুলিয়ে বললো,’এতো সুন্দর চুলগুলো কেনো অন্যকেউ দেখবে?উহুমম..আমি ছাড়া এই চুল দেখার অধিকার কারো নেই সুইটহার্ট।’বলে নিহান নীলাদ্রির চুল কা**টার জন্য কে**চি লাগাতে যাবে; তখনই নীলাদ্রি ছিটকে দূরে সরে গেলো।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দুই হাত জোর করে বললো,’দয়া করে আমার শখের চুলগুলো কাটবেন না।আমি প্রমিজ করছি,আমি এখন থেকে বাসায় সবসময় হিজাব পড়ে চলা-ফেরা করবো।আপনি ব্যতীত এই চুল কেউ দেখবেনা।”

“নীলাদ্রির অনুনয়ের সুরে কথা শুনে নিহান তৃপ্তির হাসি দিলো।এই ভেবে যে নীলাদ্রি ওর বশ্যতা স্বীকার করেছে।নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে বললো,’সুইটহার্ট আজ থেকে এই রুম থেকে তোমার বের হওয়া পুরোপুরি বন্ধ।তুমি আমার খাঁচার পাখি।আজ থেকে এখানেই বন্দী থাকবে তুমি।দরকার হলে সবকিছু বাদ দিয়ে আমি তোমার সাথে সারাদিন সময় কাটাবো।আমি একাই তোমার জন্য এনাফ।তোমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।’বলে নীলাদ্রির মুখের সামনে মুখ নিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’দেখো দেখো আমি কতো সুন্দর দেখতে।তুমি চাইলে এর থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে দেখাতে পারবো।দেখবে তুমি?”

“নীলাদ্রি নিহানের পা**গলামো কথা শুনে ভ**য়ে কেঁপে উঠলো।কান্না করে বললো,’প্লিজ এইভাবে কথা বললে আমার খুব ভ**য় লাগে।দয়া করে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলুন।”

“নিহান এইবার নীলাদ্রির আরো কাছে এসে বললো,’কিভাবে কথা বলবো?ওহহ তুমি আরও সুন্দর করে কথা বলতে বলছো তাইতো?দাঁড়াও এখুনি খাতা আনছি।’বলেই নিহান তার ব্যাগ থেকে খাতা-কলম বের করে লিখলো,

‘নীলাঞ্জনা তুমি আমার সাধনা
তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না,
তোমাকে আমি কারোর নজরে পড়তে দেবো না।
তুমি যে আমার ২০৯ বছরের আরাধনা….’

~মেহের আফরোজ~

“নিহান এগুলো লিখে নীলাদ্রির সামনে এসে বারবার সেটা পড়তে থাকলো;আর বললো,’দেখোতো এখন ঠিক আছে কিনা?এখন তো স্বাভাবিক ভাষায় বলছি।”

“নীলাদ্রি প্রতিত্তোরে কিছুই বলছে না।নিহানের এই ভুগিচুগি কবিতা নীলাদ্রির মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।ও তো নিহানের অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে ভ**য় পেয়ে গেছে।”

“নীলাদ্রি নিহানের সামনে থেকে সরে যেতে চাইলো।কিন্তুু নিহান ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে বললো,’কি হলো সুইটহার্ট বোরিং লাগছে?আচ্ছা দাঁড়াও,আমি আরেক টা কবিতা বানাচ্ছি…

“নীলাদ্রি আর সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,’দয়া করে আপনার এইসব পা**গলামি বন্ধ করুন।আমি আর নিতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে এভাবে মানসিক টর্চার করবেন না।”

“নিহান কিছু একটা ভেবে এইবার নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে,চোখজোড়া স্বাভাবিক করে নীলাদ্রির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,’আমার দিকে তাকাও সুইটহার্ট;তাকাও বলছি।”

“নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো,এখন নিহানের চেহারা একদম স্বাভাবিক লাগছে।নীলাদ্রিকে তাকাতে দেখে; নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির দুই গালে হাত রেখে বললো,’এখন আমাকে সুন্দর লাগছে তাই না?আমি জানি।এখন নিশ্চয়ই তোমার আর বোরিং লাগবে না?এখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর আমিও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো।তুমি চাইলে আমার সাথে খেলতেও পারো।আমি খুব ভালো ক্যারাম খেলতে পারি।আমি জানি,তুমিও ক্যারাম খেলতে খুব ভালোবাসো।আসো আজ আমরা সারাদিন ক্যারাম খেলবো।’বলেই নিহান ঝড়ের গতিতে স্টোর রুম থেকে ক্যারাম বোর্ড নিয়ে আসলো।তারপর নীলাদ্রি কে বললো,’নাও শুরু করো।”

“নীলাদ্রি মলিন মুখে বললো,’এখন আমার খেলার মুড নেই।প্লিজ জোর করবেন না।”
নীলাদ্রি বলতেই,নিহান ক্যারাম বোর্ড সরিয়ে ফেললো।তারপর নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’ওকে.. আমাকে বলো,তুমি কি করতে পছন্দ করো?”

“নিহান প্রশ্ন করতেই নীলাদ্রি চেঁচিয়ে বললো,’আমি এই রুমের মধ্যে থেকে বোর হচ্ছি।আমার স্থান পরিবর্তন করতে ইচ্ছে করে।একা থাকতে ভালো লাগে না।সবার সাথে মিশতে ইচ্ছে করে।”

“ব্যাস এটুকুই যেনো নীলাদ্রির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।নিহান নীলাদ্রিকে মুহূর্তের মধ্যে কোলে তুলে নিয়ে বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসালো।তারপর ওর পাশে নিজেও বসে পড়লো।এমনভাবে নীলাদ্রির সাথে লেপ্টে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো,যেনো নীলাদ্রি একটুও সরতে না পারে।তারপর নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’তোমার ওই রুমে বোরিং লাগছিলো;তাই এখানে নিয়ে এসেছি।তোমার সবার সাথে মিশতে ইচ্ছে করে।কিন্তুু আমি থাকতে সেটা কখনোই সম্ভব নয়।তাই আমি নিজেই তোমার সাথে মিশে বসে আছি।তুমি চাইলে আরও মিশতে পারবো।এইবার তুমি খুশিতো নীলাঞ্জনা?”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“তুমি চাইলে আরও মিশতে পারবো।এইবার তুমি খুশি তো নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি আর কি বলবে।আজ ওর মুখের ভাষাগুলো ও মনে হয় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে।তাই ও স্ট্যাচুর মতো সেভাবেই বসে রইলো।নিহান তো সেটা দেখে খুব খুশি হলো।নীলাদ্রির পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।তারপর বললো,’তুমি সুস্থ হবে কবে?আমার যে আর তর সইছে না।”

“নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’আমি তো সুস্থই; কিন্তুু আপনাকে জানিয়ে কি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবো?কখনোই না।”

“নিহান আজ তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির মনের কথা জেনে গেলো।সবকিছু জানতে পেরে নিহান যেনো আরও ভ**য়ং**কর রূপ ধারণ করলো।তার চোখ জোড়া পূর্বের ন্যায় লাল টকটকে হয়ে গেলো।হার্টবিট আগের ন্যায় বেড়ে গেলো।কপালের রগ গুলো গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করলো।বি**স্ফো**রিত নয়নে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি সুস্থ তাই না?এতোদিন আমাকে মিথ্যা কথা বলে ঘুরিয়েছো তাইনা?বাহ!তুমি তো দেখছি দারুণ ভাবে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারো।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি হতবিহ্বল হয়ে গেলো।ভাবলো, ‘এই সাইকো লোকটা কিভাবে জানলো,যে আমি সুস্থ?আমি তো কথাটা মনে মনে বলছিলাম।নাকি আমি ভুলে মুখ ফসকে বলে ফেলেছি!উফফ আমার মাথায় এখন কিছুই আসছে না।মুখ দিয়ে সত্যি বললে এখনই তো ধরা খেয়ে যাবো।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই নিহান বাঁকা হেসে বললো,’এখন আর কথা বানিয়ে লাভ নেই।চলো শুভকাজ টা সেরে ফেলি।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রির বুকে দিড়িম দিড়িম আওয়াজ হতে লাগলো।নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকলো।নিহান সেটা দেখে ওকে আরও জোরে চেপে ধরলো।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’একদম সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করবে না।এখন আমি যা বলবো সবকিছু মনযোগ দিয়ে শুনবে।”

” নীলাদ্রি নিহানের কোনো কথাই শুনবে না।কারণ নিহানের কথা শোনার পরপরই যদি ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?’এটা ভেবেই নীলাদ্রির শরীর রি রি করে উঠলো।”

“নীলাদ্রির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। নিহানের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বললো,’আমি আপনার সব কথা শুনবো;তবে রাতে।আমি চাই আপনি আমার জন্য রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে আমাদের বাসরঘর সাজাবেন।তারপর আপনার মনের কথাগুলো সব বলবেন।তারপর আমরা ফুলসজ্জা করবো।”

“নিহান এইবার আর তার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির মন ঘাটলো না।নীলাদ্রির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনেই বেশ খুশি হয়ে গেলো।নীলাদ্রির গালে চুমু দিয়ে বললো,’ঠিকাছে আজ রাতে তোমার পছন্দ মতো বাসরঘর সাজানো হবে।এখন আমি তোমার জন্য খাবার আনছি।তুমি কিন্তুু এখান থেকে এক পাও নড়বে না।’নীলাদ্রি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।নিহান হাসি মুখে নিচে চলে গেলো।”

” নীলাদ্রি সেই সুযোগে ওয়াশরুমে গেলো।কয়েক মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে এসে আবারও বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসলো।নীলাদ্রি বেলকনির সাথে ঘেঁষে থাকা আম গাছটির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ভাবলো,’হায়! আমার আম গাছ,তুমি না থাকলে আজ আমার পা**গলের হাত থেকে আর রক্ষা পাওয়া হতো না।তোমাকে অনেক গুলো থ্যাংকস।’বলেই মুচকি হাসলো নীলাদ্রি।”

“নিহান খাবার নিয়ে এসে বললো,’আজ আমরা এক প্লেটে খাবো।আর তুমি চাইলে আজ আমাদের বাসর ঘর টা বেলকনিতে সাজাবো।তোমার তো আবার রুমের মধ্যে বোরিং লাগে।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রি যেনো বোকা বনে গেলো।মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ! কি বলেন আপনি?আমরা বেলকনিতে বাসর করবো আর দেয়ালের ওইপাশ থেকে মানুষজন দেখবে?আপনার কি আক্কেল জ্ঞান সব গেছে নাকি?সবসময় তো বলতে থাকেন কেউ আমার দিকে তাকালে, আপনার নাকি ভালো লাগেনা।তাহলে এখন বলছেন বেলকনিতে বাসর করবেন?”

” নিহান নিজের কথায় নিজেই থ হয়ে রইলো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’সরি সুইটহার্ট এটা একদম আমার মাথায় ছিলো না।কি বলো তো,এতোদিন তোমায় কাছে পাইনি।তার ওপর আজ বলতে না বলতে তুমি রাজি হয়ে গেলে।সব মিলিয়ে আমি মনে হয় বেশামাল হয়ে গেছি।তাই আর কি এই বিষয় টা মাথায় ছিলো না।কিন্তুু তুমি তো রুমে বোরিং ফিল করো।”

“নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’আপনার সাথে মধুচন্দ্রিমা করতে কখনোই বোরিং ফিল করবো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান যেনো খুশিতে হাওয়ায় ভাসছে।নীলাদ্রির মুখের কাছে ওর গাল নিয়ে বললো,’আজ পর্যন্ত একবারও আমায় নিজে থেকে একটা কিস করো নি।রাতে তো যা হবার হবে।এখন একটা কিস করো প্লিজ।”

” নীলাদ্রি ভাবলো,’এমনিতেই মিথ্যা কথা বলে ধরা খেয়ে গেছি।এখন যদি চুমু দিতে রাজি না হই,তাহলে দেখা যাবে এখুনি যা হওয়ার হয়ে যাবে।এর থেকে চুমু দেওয়া অনেক ভালো।’ভেবে নীলাদ্রি এই প্রথম নিহানের গালে ওর ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।’তারপর নিচু স্বরে বললো,’প্লিজ এখন সরুন।আমার খুব লজ্জা লাগছে।”

“নীলাদ্রির ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে নিহান তো প্রায় শেষ।নিজেকে কোনোভাবে কন্ট্রোল করে বললো,’আপাতত এতটুকুতেই আমি খুব খুশি।তবে রাতে কিন্তুু তোমায় ছাড়ছিনা।’বলেই নীলাদ্রি কে খাইয়ে দিতে লাগলো।এবং নিজেও খেলো।”

“রাত ৯টা বাজে খাওয়া-দাওয়া করে নিহান বাইরে গেলো নীলাদ্রির জন্য ফুল কিনতে।নিহান যেতেই নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে কাভার্ড থেকে কয়েকটা জামা-কাপড় ব্যাগে ভরে,ওর জমানো কিছু টাকা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো পালানোর সিদ্ধান্ত নিলো।তবে এইবার আর ওদের বাসার মতো সদর দরজা দিয়ে নয়।নিহানের রুমের বেলকনির সাথে ঘেঁষে থাকা আম গাছ বেয়ে পালাবে ভাবলো।”

” নীলাদ্রি আগে নিচে ব্যাগ ছুঁড়ে মারলো।তারপর আম গাছ বেয়ে হুড়মুড় করে নিচে নেমে গেলো।নিচে নেমে দেখলো বাড়ির সামনের গেট লক করা।আর সামনে দিয়ে যাওয়া রিস্ক হবে।তাই বাড়ির পেছন দিয়ে বের হওয়ার জন্য ছোট একটা গেট দেখলো।নীলাদ্রি খুশি মনে গেটের সম্মুখে পা বাড়াতেই, শুনতে পেলো কারো পায়ের আওয়াজ।নীলাদ্রি সতর্ক হয়ে আম গাছের পেছনে লুকালো।দেখলো এহতিশাম সেই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।বাড়ির পেছনের দিকটা অন্ধকার হওয়ায় এহতিশাম নীলাদ্রি কে দেখতে পায়নি।তাই এহতিশাম বাসার দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ কিছু একটা মনে করে পেছনে ফিরলো এহতিশাম।নীলাদ্রি আরও জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো।এহতিশাম বড় বড় পা ফেলে বাসায় চলে গেলো।এহতিশাম যেতেই নীলাদ্রি দিলো ভো দৌড়।”

“নীলাদ্রি এলোমেলো ভাবে দৌড় দেওয়ার কারণে ওর স্লিপার টা ছিড়ে গেছে।নীলাদ্রি খালি পায়েই দৌঁড়াতে শুরু করলো।এদিকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় নীলাদ্রি একটা শুনশান একটা রাস্তায় চলে এলো।নীলাদ্রি ভাবলো, ‘আমি তো বাস স্ট্যান্ডের দিকে যেতে চেয়েছিলাম।এখানে কিভাবে চলে আসলাম?হয়তো এই জায়গার পথ না চেনার কারণে এমন টা হয়েছে।ধুর… পথে যদি একটা গাড়ি নিয়ে নিতাম, তাহলে না জুতা ছিড়তো;আর না পথ হারাতাম।’মনে মনে কথাগুলো বলে নীলাদ্রি এইবার হাঁটতে থাকলো।হাঁটতে হাঁটতে নীলাদ্রি একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেলো।গলির সাইডে দেখলো,৩-৪জন যুবক বসে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।ফাঁকা গলিতে নীলাদ্রি কে দেখে ছেলেগুলো একে-অপরের দিকে তাকালো।নীলাদ্রি ছেলে গুলো কে দেখে বিপরীত দিকে হাঁটা ধরলো।ছেলেগুলো নীলাদ্রির পেছনে হাঁটা ধরলো।নীলাদ্রি ছেলেগুলোর পায়ের জুতার আওয়াজ পেয়ে হাঁটার গতিবেগ বাড়িয়ে দিলো।”

———————
“এদিকে ইরা সেই বিকাল থেকে নীলাদ্রির সাথে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে।কিন্তুু, ইয়াশ ইরার পেছনে আঠার মতো লেগে আছে।কিছুক্ষণ আগে ইয়াশ ঘুমিয়েছে। সেই সুযোগে ইরা নীলাদ্রির রুমে উঁকি দিতেই;পেছন থেকে একটা রাশভারি পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,’তুমি এখানে কি করছো?”

“ইরা কন্ঠ টা চিনতে পারলো।ভ**য়ে ওর আত্মা মনে হয় অর্ধেক হয়ে গেলো।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ইরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,’আআআসোলে আমি নীলাদ্রির সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”

“নিহান কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনার সাথে কারো দেখা করা নিষেধ। তুমি তোমার রুমে যাও।ভুলেও এই রুমের ধারে-কাছে যেনো তোমায় না দেখি।”

“ইরা নিহান কে মনে মনে ১০১টা গা**লি দিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।নিহান রুমে ঢুকে নীলাদ্রি কে না দেখতে পেয়ে ওয়াশরুম,বেলকনি,ছাদে সব জায়গায় খুঁজলো। নীলাদ্রি কে কোথাও না পেয়ে নিহান ভ**য়ং**কর ভাবে গ**র্জ**ন করে উঠলো।ইরা সবেমাত্র ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসে পানি খাচ্ছিলো, সেই মুহূর্তে নিহানের এমন ভ**য়ং**কর চি**ৎ*কার শুনে ইরার হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে ভে**ঙে গেলো।”

“নিহান নিচে এসে চিৎকার করে সবাইকে ডাকলো।নিহান ইরাকে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,’তুমি নীলাঞ্জনাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছো তাইনা?”

“এতক্ষণে সবাই ডাইনিং রুমে হাজির হলো।ইয়াশ দেখলো নিহান ইরার দিকে র**ক্ত**চক্ষু নিক্ষেপ করেছে।ইমতিয়াজ আহমেদ এখনো বাসায় আসেনি।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে বাবা এভাবে চি**ৎ*কার করছিস কেনো?”

“সেটা ইরাকেই জিজ্ঞেস করো।ও আমার নীলাঞ্জনা কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।'”

“নিহানের চিৎকারে ইয়াশের ঘুম ভেঙে গেছে।এখানে এসে নিহানের কথা শুনে,ও আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।’
এহতিশাম এসে নিহান কে বললো,’কি হয়েছে নিহান?”

“যা বলেছি শুনেছিস তো।নীলাঞ্জনা পালিয়ে গেছে, আর ওকে পালাতে সাহায্য করেছে ইরা।”

“নিহানের এমন মিথ্যা অপবাদে ইরার চোখে পানি চলে এসেছে।একেই ওর বাবা ওকে মিথ্যা দোষারোপ করেছে। এখন আবার নিহান করছে,যেখানে সকালের ওই ঘটনার পর থেকে নীলাদ্রির সাথে একবারও ইরার দেখা হয় নি।”

” ইরা নিহানকে বললো,’দয়া করে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না।আমি নীলাদ্রির সাথে তখন দেখা করতে গিয়েছিলাম।কিন্তুু রুমে ঢোকার আগেই আপনি এসে পড়েছেন।আমি এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা।”

“এতক্ষণে ইয়াশের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হলো।ইয়াশ নিহান কে বললো,’ভাইয়া ইরা হয়তো সত্যি কিছু জানেনা।তুমি আরেকটু ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখো।”

” এহতিশাম বললো,’নিহান আমার মনে হয় একটু আগে নীলাদ্রি বাসা থেকে পালিয়েছে; আমাদের বাসার পেছনের গেট দিয়ে। আমি যখন ওইদিক দিয়ে আসছিলাম, তখন আম গাছ টা নড়তে দেখেছি।হয়তো নীলাদ্রি আমাকে দেখে ওখানে লুকিয়ে ছিলো।কিন্তুু, আমি বিষয়টি তখন খেয়াল করিনি।”

“এহতিশামের কথা শুনে নিহান যা বোঝার বুঝে গেছে।নিহান এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।তারপর তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে, নীলাদ্রির অবস্থান দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

“এদিকে নীলাদ্রি বর্তমানে এলোমেলো পা ফেলে অজানা রাস্তায় দৌড়ে চলেছে।পিচঢালা রাস্তায় অনেকক্ষণ যাবৎ দৌঁড়ানোর কারণে ওর পায়ের চামড়া থেঁতলে গেছে।পা দিয়ে র**ক্ত বের হচ্ছে। তাতে নীলাদ্রির হুঁশ নেই।একসময় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে নীলাদ্রির পা রাস্তায় থাকা ইটের সাথে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলো।”

“এতক্ষণ ওর পেছনে দৌঁড়ানো যুবক গুলো অবশেষে নীলাদ্রির কাছে পৌঁছাতে পারলো।নীলাদ্রি কে ওরা ৪জন চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরলো।একজন বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো,’কি গো ফুলটুসি তুমি দেখছি অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় নাম দিলে ফার্স্ট হতে।হেব্বি দৌঁড়াতে পারো।নীলাদ্রির ওরনা রাস্তায় পড়ে গেছে।ওর জামা ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।ফলে ওর শরীরের ভাজগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।ছেলেগুলো এমনভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে;মনে হয় কোনো সুস্বাদু খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।”

“নীলাদ্রি ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,’দয়া করে আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।আপনাদেরও তো ঘরে মা-বোন আছে।আজ যদি আমার জায়গায় আপনাদের বোন এখানে থাকতো,তাহলে কি এমন একটা কাজ করতে পারতেন?নিশ্চয়ই না।”

“ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো,’এইসব ডায়লগ পুরনো হয়ে গেছে সুন্দরী।তোমার ওই চাঁদ মুখ খানা দিয়ে সুন্দর কিছু বলো।যাতে আমাদের শরীরে কারেন্ট ধরে যায় ফুলটুসি।’বলেই ছেলে গুলো দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকলো,আর বিশ্রি ভাবে নীলাদ্রির শরীরের ভাজগুলো দেখতে থাকলো।নীলাদ্রি দুই হাত বুকের ওপর রেখে বললো,’আমি এই ঘটনা কাউকে বলবো না।দয়া করে আমাকে যেতে দিন।”

“একজন যুবক কু**টিল হেসে বললো,’ফুলটুসি তোমাকে ছেড়ে দেবো,তবে আমাদের স্যারের কাছে।আর আমরা এখন তোমাকে একটু টেস্ট করবো।অবশ্য তুমি ভা**র্জি*ন না হলেও সমস্যা নেই।স্যার বলেছে একটা খাসা মা***ল হলেই চলবে।তোমাকে দেখেতো খদ্দেরদের মাথাই নষ্ট হয়ে যাবে।যৌবনে যে তোমার দুধে আলতা শরীর টা টলমল করছে।অনেক দিন পর পুরাই ঝা**ক্কা*স একখান মা***ল পাইছি।’বলেই ছেলেটা বিশ্রি হাসি দিয়ে নীলাদ্রির দিকে পা বাড়াতে গেলেই,হঠাৎ করে দেখলো পা আর পায়ের জায়গায় নেই।শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পড়ে আছে।ছেলেটির মস্তিষ্ক সচল হতেই গগন কাঁপানো চি**ৎ*কার দিতে চাইলো।কিন্তুু পারলো না;কারণ সামনে থাকা সুদর্শন অথচ ভ**য়ং**কর ব্যক্তিটি তার কন্ঠস্বরকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে