ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১১+১২

0
64

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ফাঁকা ক্লাসে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করে উঠলো নিহান।”

“রেহান এখনও নীলাদ্রির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ড পর নীলাদ্রির গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি হলো জান?কিছু বলছো না কেনো?”

“গালে পুরুষালি শক্ত হাতের স্পর্শ পেতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।রেহানের থেকে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললো,’স্যার আপনি খুব সুদর্শন পুরুষ।আর আপনাকে ক্যাম্পাসের সব মেয়েরাই পছন্দ করে;আমিও করি।কিন্তুু আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত,কারণ আমি বিবাহিত।২দিন হয়েছে নিহানের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কাউকে জানানো হয় নি।ভেবেছি এই পরীক্ষা শেষ হলে সবাইকে জানাবো।আ’ম সরি স্যার।আমাকে এখন যেতে হবে।নিহান নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’বলেই নীলাদ্রি বাইরে যেতে নিবে,তখনই রেহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে ফেললো।নীলাদ্রি তার দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো স্যার?আবার আমার হাত ধরেছেন কেনো?আমি তো আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।”

“রেহানের চোখজোড়া মনে হয় র**ক্তিম আভায় ছড়িয়ে গেলো।কপালের ওপর থেকে সিল্কি চুল গুলো সরিয়ে ডেভিল হেসে বললো,’এতোদিন যাবৎ তোমাকে ভালোবেসেছি,অবশ্যই ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়।তোমাকে পুরোপুরি নিজের করে পাওয়ার জন্য কতো স্বপ্ন দেখেছি আমি;আর তুমি ‘আ’ম সরি’ বললেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?হাহাহাহা কখনোও না ডার্লিং।বিয়ে করতে না পারি;তোমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করতে ঠিকই পারবো।’বলেই নীলাদ্রির হিজাব একটানে খুলে ফেললো রেহান।হিজাবে পিন থাকায় নীলাদ্রির গলায় আ**ঘাত লাগলো।নীলাদ্রি ‘উহহ’ শব্দ করে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো।”

“এদিকে নীলাদ্রির হিজাব সরানোর পর বক্ষবিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠতেই, রেহান লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো,’ওয়াও সো হ**ট ফি…

“রেহান আর কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই গালে শক্ত হাতের ঘু**ষিতে,গাল থেকে গলগল করে র**ক্ত বেরিয়ে পড়লো।”

“নীলাদ্রি সেটা দেখে ভ**য়ে মুখ চেপে ধরলো।নিহান রেহানের শার্টের কলারে হাত দিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,’আমার কলিজার দিকে তুই কু**নজর দিয়েছিস।এর জন্য তোকে ভ**য়া*নক থেকে ভ**য়া*নক শাস্তি পেতে হবে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’
বলেই নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে ওর হিজাব দিয়ে বললো,এটা পড়ে নাও নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা হাতে কোনোরকমে হিজাব পড়লো।তারপর নিহান ওর হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।ক্যাম্পাসের সবাই টিফিন পিরিয়ডে ক্যান্টিনের আশেপাশে থাকায় বিষয়টি কারো দৃষ্টিগোচর হলো না।”

————–
“বাসায় গিয়ে নীলাদ্রি কে সরাসরি ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো নিহান।ওয়াশরুমে গিয়ে নীলাদ্রি কে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে, শাওয়ার ছেড়ে দিলো।নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।ওর চোখজোড়া দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।এদিকে নিহান নীলাদ্রির পুরো শরীরে শ্যাম্পুর বোতল থেকে, পুরো শ্যাম্পু ঢেলে স্ক্রাবার দিয়ে ওর হাত-পা ঘঁষতে লাগলো; আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’ওই নর**পি**শাচ টাকে আমি ছাড়বো না।ও তোমার শরীরে হাত দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে।এর পরিণাম খুব ভ**য়া*নক হবে।’এভাবে বিড়বিড় করার পর একসময় নীলাদ্রির বক্ষবন্ধনীতে নজর পড়তেই নিহানের চোখজোড়া থমকে গেলো।নিহান তার চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো,’এতো বড় গলার জামা কেনো পড়েছো তুমি?”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ যাবৎ কেঁদে যাচ্ছিলো।হঠাৎ নিহানের এমন প্রশ্নে নীলাদ্রি কিছুটা ভড়কে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,’আসলে দর্জি ওয়ালা কে আমার ছোট গলার জামার মাপে বানাতে দিয়েছিলাম।কিন্তুু, উনি এই জামা টার গলা একটু বড় বানিয়ে ফেলেছে।”

“নিহান রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’পুরুষ দর্জি নাকি মহিলা দর্জি দিয়ে জামা বানিয়েছো?”

‘মহিলা দর্জি দিয়ে বানিয়েছি।’

“নিহান এইবার আরো রেগে গেলো।ভাবলো,’একজন মহিলা দর্জি হয়ে কিভাবে এতোটা কেয়ারলেস হতে পারে?’ভেবে নিহান বললো,’নেক্সট টাইম আমি তোমার জামা-কাপড় বানিয়ে দেবো।প্রয়োজন হলে শিখে নেবো।কিন্তুু তুমি আর ভুলেও এই ধরনের জামা পরবে না।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ! উনি আমার জামা বানালে তো আমার শরীর ফিতা দিয়ে মাপবে, আর সবকিছু জেনে যাবে।এই ভ**য়ে আমি ভুলেও পুরুষ দর্জির কাছে জামা বানাতে দেইনা।”

“নীলাদ্রির ভাবনা গুলো নিহান ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে শুনে ফেলেছে।নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’খুব ন্যারো মাইন্ডের তুমি।অলরেডি তোমার পুরো শরীরে আমার হাত অনেকবার বিচরণ করেছে।তবুও তোমার এতো লজ্জা?হাউ ফানি সুইটহার্ট!’ বলেই ওয়াশরুম থেকে বড় বড় পা ফেলে নিহান চলে গেলো।নিহান চলে যেতেই;নীলাদ্রি অবাক হয়ে ভাবলো,’এই লোক কি মাইন্ড রিডার?এতো দেখি আমার মনের কথাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলে ফেলে।সাইকো টাইপ লোকদের মনে হয় এটা একটা বিশেষ গুণ।”

———-
“দুপুরে মেইড নীলাদ্রির পছন্দের খাবার দিয়ে গেছে।নীলাদ্রি মনে মনে নিহান কে খুঁজলো।কিন্তুু নিহান সেই যে বের হয়েছে তারপর আর কোনো খবর নেই।নীলাদ্রির খুব ক্ষুধা লেগেছে,তাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।”

“সন্ধ্যায় নিহান বাসায় ফিরে রুমে এসে উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো।আজ আর নিহান নীলাদ্রির সাথে কোনো কথা বলছে না,দুষ্টুমি তো দূরের কথা।নীলাদ্রি বুঝতে পারলো, নিহান রেহান স্যারের বিষয়টি নিয়ে এখোনও খুব রেগে আছে।নীলাদ্রি নিহানের এই নীরবতা মেনে নিতে পারছে না।একেই নিহান কারো সাথে মিশতে দেয় না।আর নিহানের রুমেও কেউ আসে না।বাসায় এতো মানুষ থাকতেও,নীলাদ্রির নিজেকে কেমন বন্দিনী মনে হয়।তার ওপর নিহান ওর সাথে এখন কথা ও বলছে না।নীলাদ্রির মুখ কথা বলার জন্য নিশপিশ করছে।নীলাদ্রি বিছানায় বসে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই যে শুনছেন,দুপুরে কিছু খেয়েছেন?”

“নিহান প্রতিত্তোরে কিছুই বললো না।
নীলাদ্রি হতাশ হলো।কারণ,নিহান ওর সাথে ফ্রী হলেও নীলাদ্রি নিহানের সাথে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে।তার একটাই কারণ,নীলাদ্রি এখনও নিহান কে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না।বারবার শুধু চোখের সামনে নিহানের রেগে যাওয়া ভ**য়ং**কর মুখখানা ভেসে ওঠে।’ ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নীলাদ্রি নিহানকে আবারও বললো,’আপনি কি আমার ওপর এখনও রেগে আছেন?বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে রেহান স্যারের কক্ষে যাইনি।আমি তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম;তখনই তিনি আমার হাত ধরে…

“নীলাদ্রি কে নিহান আর কিছু বলতে না দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’তোমার মুখে ওই জা***র এর নামে একটা কথাও শুনতে চাই না।তোমার মুখে আমি ব্যতীত অন্য কারো নাম শুনলেও, আমার হিংসা লাগে।তুমি শুধু আমার নাম নিবে,আর কারো নয়।আর এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।তুমিও ঘুমিয়ে পরো।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’বলেই নীলাদ্রির কপালে আর ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো নিহান।নীলাদ্রি কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।কেনো জানি এইমুহূর্তে নীলাদ্রির শরীরে নিহানের স্পর্শ অজানা ভালো লাগায় ছড়িয়ে গেলো।নীলাদ্রি একসময় ঘুমিয়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।তারপর ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে,নীলাদ্রির মাথায় হাত দিয়ে ওকে কয়েক ঘন্টার জন্য গভীরভাবে ঘুম পারিয়ে দিলো।যেনো নিহানের কাজে ব্যাঘাত না ঘটায়।”

———————
“এদিকে আজ ইউনিভার্সিটিতে ইরার সাথে দেখা না হওয়ায়,মনের দুঃখে ইয়াশ রুমের মধ্যে গরুর র**ক্তের ললিপপ মুখে দিয়ে হাঁটছে;আর কিছুক্ষণ পর পর পাঁয়চারি করছে।ওর মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।বারবার ইরার মায়াবী চেহারা টা একবার দেখতে মন চাইছে।ইয়াশ ভাবলো,’ইরার বাসায় যাবে।শুধু একবার দেখেই চলে আসবে।’যেই ভাবা সেই কাজ। ঝড়ের গতিতে ইয়াশ
ইরাদের বাসার সামনে চলে গেলো।”

“অপরদিকে আশিক জ্বীনের ভ**য়ে চিন্তা করতে করতে, ইরার গতকাল রাত থেকে জ্বর এসেছে।ওর বাবা ওর সেবাযত্ন করেছে।রাতে ইরার একটু ভালো লাগছিলো।তাই বসে বসে ফেইসবুকে ভূতের গল্প পড়ছিলো।ইরা ভূতে ভ**য় পেলেও, ভূতের গল্প পড়তে ওর খুব ভালো লাগে।এমন সময় ইয়াশ ইরাদের সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবলো,’আজ হিরোদের মতো সদর দরজা দিয়ে ইরার রুমে প্রবেশ করবো।”

“ইয়াশ দুষ্টু হাসি দিয়ে ওর পাওয়ার ব্যবহার করলো,আর এক চুটকিতেই দরজা ভেতর থেকে খুলে গেলো।ইরার বাবা রাহাত আহমেদ তার রুমে ঘুমাচ্ছেন।ইয়াশ নিঃশব্দে ইরার রুমের দরজার সামনে নায়কের মতো ভাব নিয়ে দাঁড়ালো।দেখলো,ইরা মোবাইল হাতে নিয়ে খুব কৌতূহল নিয়ে কিছু একটা পড়ছে।ইয়াশ ওর পাওয়ার ব্যবহার করে দেখলো,ইরা ভূতের গল্প পড়ছে।ইয়াশের এইমুহূর্তে একটু হিংসা লাগলো।কারণ ও নিজেই তো মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।ও থাকতে কেনো ইরা এইসব ছোট-খাটো ভূতের গল্প পড়তে যাবে?”

“পরক্ষণেই ভাবলো,’ইরা তো ওর ব্যাপারে কিছুই জানেনা।তাই হয়তো এগুলোর ব্যাপারেই ওর আগ্রহ।নাহ!এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।ইরাকে ওর প্রতি আকর্ষিত করতেই হবে।ইয়াশের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।ইয়াশ চুপি চুপি ইরার খাটের নিচে ঢুকে খাট নাড়াতে লাগলো।”

“একেতো ইরা ভূতের গল্প পড়ছে।তার ওপর এভাবে হঠাৎ খাট নড়তে থাকায় ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ধীরে ধীরে খাট আরও জোরে নড়তে থাকলো।ইরা ভাবলো,’নিশ্চয়ই এটা আশিক জ্বীনের কাজ।’ইরা ভাবলো,’এইবার নিজেই আমি এই লু**চু আশিক জ্বীনের সাথে ফাইট করবো।নইলে আমার নাম ও ইরা না হুহহ।’ভেবেই ইরা গলার স্বর উঁচু করে বললো,’এই যে লু**চু,ছ্যাচড়া মার্কা,উগান্ডা শহরের আশিক জ্বীন ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে ভাগেন,তাড়াতাড়ি ফুটেন।নইলে আমিও কিন্তুু আপনার মাথা নাড়িয়ে চরকির মতো ঘুরাবো।”

“ইরার কথা শুনে ইয়াশ মিটিমিটি হেসে খাট নাড়ানো বন্ধ করে দিলো।”

“ইরা বেশ অবাক এবং খুশি হলো।ভাবলো,’আশিক জ্বীন ওর কথা শুনে ভ**য় পেয়েছে; তাই খাট নাড়ানো বন্ধ করে পালিয়েছে।’ভেবে ইরা বিজয়ের হাসি দিয়ে খাটের নিচে তাকাতেই, জোরে এক চি**ৎকার দিলো।রাত বাজে ১১টা।ঢাকা-শহরে রাত ১১টা মানে সন্ধ্যা। এখনও আশেপাশের প্রতিবেশীরা ঘুমায় নি।ইরার গগন কাঁপানো চি**ৎকার শুনে,ইরার বাবার ঘুম ভেঙে গেলো।এদিকে পাশের ইউনিটের প্রতিবেশী দরজা খুলে দেখলো, ইরাদের ঘরের দরজা খোলা।এদিকে ইয়াশ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে ইরার মুখ চেপে ধরে বললো,’সরি জান্টু পাখি,ঘন্টু পাখি আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতোটা ভ**য় পাবে।”

“এতক্ষণে পাশের ইউনিট সহ,পাশের বিল্ডিং এর
প্রতিবেশীরাও ইরাদের বাসায় উপস্থিত হলো।তারা ভেবেছে, ‘ইরাদের বাসায় চোর ঢুকেছে।তাই সবাই ছু**রি,লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে দৌড়ে এলো।কারণ, অনেকদিন যাবৎ এই মহল্লায় চুরি হচ্ছে।তাই তারা ভাবলো, ইরা চোর দেখে ভ**য় পেয়ে চি**ৎকার করেছে।ইরার বাবা সহ আশেপাশের সবাই ইরার রুমে প্রবেশ করতেই, তাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো।”

“ইরার পাশে ইয়াশ কে বসে থাকতে দেখে, তাদের মধ্যে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেলো।সবাই কানাকানি করে বলছে,’ইরা ওর প্রেমিক কে বাসায় ডেকে এনে ফ**ষ্টি*ন**ষ্টি করছে।সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।”

“এদিকে রাহাত আহমেদ তো ইরার রুমে ইয়াশ কে দেখে, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।লজ্জায় তার মাথা নিচু হয়ে গেলো।”

“অপরদিকে ইরার পাশের ইউনিটের এক আন্টির মা গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে।তিনি ইরার সাথে ইয়াশ কে দেখে নাক ছিটকালেন।তারপর পান চিবিয়ে,পানের পিক রুমের এক কোণায় ফেলে সবার সামনে সুর টেনে বলে উঠলো,’ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!এতোদিন কইতাম আমাগো গেরামের মাইয়ারা তলে তলে টেম্পু চালায়।আর ঢাকা-শহরে আইয়া দেহি, এইখানের মাইয়ারা অকালে পাইক্কা ঝুনা ঝুনা হইয়া গেছে। ঘরের মধ্যে নাগর লইয়া ল*টর*প*টর করে ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!”

“ওই বৃদ্ধ মহিলার মেয়ে পাশ থেকে বললো,’শুধু তো এটা না মা।ঢাকা-শহরের বেশির ভাগ মেয়েরা বিয়ের আগে প্রেমিককে নিয়ে লিভ-ইন রিলেশনশিপ করে।এর থেকে গ্রামের মেয়েরা অনেক ভালো।”

“বৃদ্ধ মহিলা বললো,’লিব রিলাশন হেইডা আবার কি?”

“পাশে থেকে একজন যুবক বললো,’আরে দাদি লিব রিলাশন না;লিভ-ইন রিলেশনশিপ।মানে বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়েরা একই ঘরে থেকে সংসার করে।”

“বৃদ্ধ মহিলা তো এটা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,’ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!এই মাইয়াগো লেইগাই তো দুনিয়াডা ভাইস্যা গ্যালো।’আশে-পাশের মানুষ গুলো আরও অনেক ধরণের কটুকথা শোনালো।”

“ইয়াশ তো ভ্যাবলার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর তো কারো কথাই মাথায় ঢুকছে না।ইরা এইসব সহ্য করতে না পেরে বললো,’চুপ করুন আপনারা।না জেনে-শুনে এই ধরনের বা**জে কথা বলবেন না।এই ছেলেটাকে আমি ডাকিনি।সে কিভাবে আমার বাসায় আসলো, আমি নিজেও জানি না।”

“একজন বললো,’ঢং করছো কেনো?অবশ্য ধরা পড়লে সবাই ঢং করে অস্বীকার করে।তুমিই তো তোমাদের সদর দরজা দিয়ে তোমার প্রেমিক কে ঢুকিয়েছো।ভাগ্যিস, দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছো।নইলে, আমরা তো এই কাহিনী জানতেই পারতাম না।”

“ইরা কটমটিয়ে বললো,’আমি যদি তাকে ঘরে ঢুকিয়ে থাকি,তাহলে কেনো আমি চিৎকার করবো?”

“ইরা প্রশ্ন ছুড়ে দিলে কেউ কিছু বলতে যাবে, তখনই ঠা**স করে ইরার গালে থা**প্পর পড়লো।ইরা গালে হাত দিয়ে সম্মুখে তাকিয়ে দেখলো, রাহাত আহমেদ র**ক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে।”

“রাহাত আহমেদ তীব্র কন্ঠে বললেন,’আমার এতোদিনের অর্জিত মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।আরে দু**শ্চ*রিত্র মেয়ে, তোর জন্যই তো আমি এতোদিন বিয়ে করি নি।ভেবেছি, ঘরে সৎ মা আসলে তোর কষ্ট হবে।কিন্তুু তুই কি করলি?ঘরের মধ্যে ছেলে এনে…ছিঃ ছিঃ ছিহ!তোকে তো জন্ম দেওয়ার আগেই মেরে ফেলা উচিত ছিলো। তাহলে অন্তত এমন একটা জ**ঘন্য পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতো না।”

“বিনা অপরাধে একটা মেয়ে যখন তারই আপন মানুষের কাছ থেকে এতোটা নি**কৃষ্ট কথা শোনে;তখন সেই মেয়ের মনের অবস্থাটা কি হয়, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।ইরা তো আজ পর্যন্ত একটা প্রেম ও করেনি।অথচ আজ ওকে এতোটা খারাপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হলো।আ**ত্ম*হ**ত্যা মহাপাপ না হলে, ইরা অনেক আগেই সেটা করে ফেলতো।ইরার এখন ইচ্ছে করছে, ইয়াশ ক্যাবলা কান্ত কে ক**ষিয়ে ১০টা থা**প্পর দিতে।কিন্তুু, এতো মানুষের মধ্যে সেটা সম্ভব নয়।”

“এরই মধ্যে মহল্লার এক স্থানীয় ব্যক্তি সিফাত সাহেব বলে উঠলেন,’রাহাত ভাই আগামীকাল হয়তো এইসব কাহিনী পুরো মহল্লায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে।জানেন তো,বাঙালিরা ‘ক’ বললে ‘কলিকাতা’ বুঝে নেয়।আর আমরা এই মহল্লার বদনাম কখনোই চাই না।তাই বলছিলাম,ছেলে-মেয়ে যেহেতু একটা দু**র্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।ওদের কে গা**লা*গা**লি করলে তো আর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবেনা।আমি কাজী ডাকার ব্যবস্থা করছি।আপনি এই ছেলের বাসায় ফোন করে তাদের কে এখানে আসতে বলুন।”

“রাহাত আহমেদ শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,’আপনারা যা ভালো বোঝেন করেন।আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে ইচ্ছুক নই।”

” সিফাত সাহেব তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ২জন যুবক কে বললেন,’যা কাজীকে ডেকে নিয়ে আয়।এতো রাতে যদি সে আসতে না চায়।তাহলে আমার কথা বলবি।’দুজন যুবক মাথা নাড়িয়ে কাজীকে ডাকতে চলে গেলো।তারপর সিফাত সাহেব ইয়াশ কে বললেন,’তোমার বাবার ফোন নাম্বার দাও আমি কথা বলবো।”

“ইয়াশ তো ভ**য়ে কাচুমাচু হয়ে গেলো।এইমুহূর্তে ও চাইলে ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।বা চাইলে এই জায়গায় উপস্থিত সবার স্মৃতি মুছে দিতে পারে।কিন্তুু পরক্ষণেই ভাবলো,’এটাই সুবর্ণ সুযোগ।এটা মিস করলে যদি ইরা কে না পাই,তাহলে ভ্যাম্পায়ার জীবনটাই বৃথা যাবে।আর ইরা যেই রাগী মেয়ে,আমাকে তো পাত্তাই দেয় না।দেখা যাবে ওর পেছনে ঘুরতে ঘুরতে একসময় নিজেই পা**গল হয়ে যাবো।এর থেকে ভালো সুযোগের সৎ ব্যবহার করি।’ভেবেই ইয়াশ সিফাত সাহেব কে ইমতিয়াজ আহমেদের ফোন নাম্বার দিলো।সিফাত সাহেব ইমতিয়াজ আহমেদ কে ফোন দিয়ে সবকিছু বললো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম ঘুমানোর জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিলেন,এমন সময় ফোন আসায় ইমতিয়াজ আহমেদ ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলেন।তারা দুজনেই ইয়াশের ঘটনা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।শায়লা বেগম তো কান্না জুড়ে দিলো,কপালে হাত দিয়ে বললো,’এই মানব জাতির মধ্যে কি মায়াজাল আছে?যে ভ্যাম্পায়ার গুলো ওদের জন্য মরিয়া হয়ে যায়?আমার সহজ-সরল ছেলে ইয়াশ এমন কাজ কিভাবে করলো?”

“ইমতিয়াজ আহমেদ শায়লা বেগম কে বললেন,’তুমি দেখি মানবজাতির সাথে সাথে থাকতে থাকতে, তাদের মতো ছিচকাঁদুনে হয়ে গেছো।কান্না থামাও,আমি দেখছি কি করা যায়।’বলেই,ইরাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ ইরার রুমে ঢুকতেই দেখলেন,কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য বসে আছেন এবং তার মুখোমুখি বসে আছে ইয়াশ এবং ইরা।ইরা কান্না করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে।মনে হয় এখুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।”

“সবাই ইমতিয়াজ আহমেদ কে দেখে বুঝে গেলো সে ইয়াশের বাবা।ইমতিয়াজ আহমেদ ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,’ইয়াশ তোমার সম্পর্কে যেটা শুনেছি সেটা কি সত্যি?”

“ইয়াশ ভ**য় কে জয় করে নিচের দিকে তাকিয়ে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।ইমতিয়াজ আহমেদ ইয়াশের সম্মতি পেয়ে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’তোমরা রাজি থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

“ইমতিয়াজ আহমেদের সম্মতি পেয়ে সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।কাজী ইয়াশ কে কবুল বলতে বললে,’ইয়াশও নিহানের মতো হাসি মুখে ৮-১০বার কবুল বলে দেয়।কারণ, ইয়াশেরও নিহানের মতো এতোবার কবুল বলার ইচ্ছে ছিলো।আজ সে ভীষণ খুশি।এদিকে ইরা কে কবুল বলতে বললে, ইরা জলে টইটম্বুর চোখ নিয়ে ওর বাবার দিকে তাকালো।”

“রাহাত আহমেদ সেটা লক্ষ্য করে বললেন,’ভুলের মাশুল দাও।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।”

“ইরা মনে খুব কষ্ট পেলো।কিন্তুু ওর এই কষ্টে কারো কিছু আসে-যায় না।বরং এইমুহূর্তে বিয়ে না করলে সবাই আরও অপমান করবে।ও কখনোও চায় না ওর জন্য ওর বাবা আর অপমানিত হোক।তাই নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে একাধারে ৩বার কবুল বললো।ইয়াশ এবং ইরার বিয়ে অবশেষে রাত ১টায় সম্পন্ন হলো।আশেপাশের সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো।তারপর সবাই আরও কিছু কথাবার্তা বলে যে যার বাসায় চলে গেলো।”

“ইরার অনেকক্ষণ যাবৎ মাথা ঝিমঝিম করছিলো।তাই মাথায় পানি দেওয়ার জন্য যেই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,তখনই ইরা সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলো।ইয়াশ ইরাকে ধরে বসলো।ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন, ‘অতিরিক্ত চিন্তায় হয়তো ওর প্যানিক অ্যা**টাক হয়েছে।চিন্তা করো না;ভালো মতো ঘুম হলেই ঠিক হয়ে যাবে।’বলেই তিনি রাহাত আহমেদ কে বললেন,’আপনি অনুমতি দিলে আজকেই বৌমাকে আমাদের ঘরে নিয়ে যেতে চাই।’
রাহাত আহমেদ ম্লান হেসে বললেন,’আপনার যা ইচ্ছে হয় করতে পারেন।তবে ওকে বলে দিবেন;আজ থেকে এই বাড়ির দরজা ওর জন্য চিরকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”

” ইমতিয়াজ আহমেদ বেশ বুঝতে পারলেন,’তার মেয়ের এহেন কান্ডে রাহাত আহমেদ কতটা কষ্ট পেয়েছেন।প্রতিটি বাবা-মা সন্তান কে কষ্ট করে লালন-পালন করেন, যাতে বড় হয়ে তারা বাবা-মায়ের কষ্টের মর্যাদা রাখে।কিন্তুু কিছু ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের এই আবেগ কে শস্তা আবেগ মনে করে ভুল পথে পা বাড়ায়।’ভেবেই ইমতিয়াজ আহমেদ রাহাত আহমেদ কে বললেন,’আমি বুঝতে পারছি আপনি কতো টা কষ্ট পেয়েছেন।তবে আপনি চিন্তা করবেন না।আমার ছেলের কোনো আজে-বাজে নেশা নেই।ও আপনার মেয়েকে খুব সুখে রাখবে।আপনার মেয়ে আমারও মেয়ে হয়ে থাকবে।’রাহাত আহমেদ ইমতিয়াজ আহমেদের কথা শুনে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লেন।”

———–
“ঘড়ির কাটায় রাত ৩টা বাজে।রেহান খান দুপুরে নিহানের হু**মকি শুনে, বেশ ভ**য় পেয়ে যায়।সেই সাথে নিহানের সেই র**ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকা তার বারবার মনে পড়ছে।তাই রেহান বাসায় এসে তার বন্ধু আরিফ কে ফোন দিয়ে আজ রাতটা তার বাসায় কাটাতে চায়।রেহানের বন্ধু অফিসের কাজের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে।সে রেহান কে দারোয়ানের কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে গিয়ে লক খুলে থাকতে বলে।বন্ধুর বলা কথামতো, রেহান বিকালে ওই বাসায় চলে যায়।রাত ৩টা বেজে গেছে,তবুও রেহানের চোখে ঘুম নেই।বিছানায় শুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রেহান ভাবলো,’নিহান আর নীলাদ্রি যদি প্রিন্সিপাল কে সব বলে দেয়,তাহলে আমার চাকরি নিয়ে টান পড়বে।এর থেকে ভালো আগামীকাল কলেজে গিয়ে, ট্রান্সফার লেটার দিয়ে অন্য কলেজে চলে যাবো।”

“রেহানের ভাবনার মাঝেই পাশের রুম থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো।

“”Twinkle twinkle little star.
How I wonder what you are.
Up above the world so high.
Like a diamond in the sky.
Twinkle twinkle little star.
How I wonder what you are.”

বাচ্চা মেয়েটির ভয়ং**কর কন্ঠে কবিতা শুনে, রেহানের পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“বাচ্চা মেয়েটির ভ**য়ং**কর কন্ঠে কবিতা শুনে রেহানের পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

“রেহান বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের দরজা খুলে, পাশের রুমের দরজার কাছে গিয়ে কান ঠেকালো।শুনলো, এখনও বাচ্চা মেয়েটি কবিতার সেই লাইনগুলো বারবার বলছে।রেহান বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’আরিফ তো বলেছিলো ওর বাসায় কেউ নেই।তাহলে এই বাচ্চা মেয়ে কোথা থেকে আসলো?আর মেয়েটির কন্ঠ এতো ভ**য়ং**কর কেনো?’ভেবেই রেহান দরজা খুলতে চাইলো।কিন্তুু দেখলো, দরজা ভেতর থেকে লক করা।রেহান আবারও কান ঠেকালো।কিন্তুু এইবার কিছু শুনতে পেলো না।রেহান সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই,সেই বাচ্চা মেয়েটির কান্নার আওয়াজ পেলো।ধীরে ধীরে আওয়াজ টি আরও বাড়তে লাগলো।শুনশান বাড়িটিতে বাচ্চা মেয়েটির কান্নার আওয়াজ যেনো আকাশে থাকা কালো মেঘের ন্যায় ছড়িয়ে পড়লো।ঘরের দেয়াল গুলোও কাঁপতে থাকলো।প্রায় ৪-৫মিনিট যাবৎ এভাবেই কাঁপতে থাকলো।রেহান প্রথমে এটাকে ভূমিকম্প ভাবলেও পরে ভাবলো,’বাংলাদেশে তো এতক্ষণ ভূমিকম্প হলে সবাই মাটির নিচে তলিয়ে যেতো।”

“রেহান বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।সে তার রুমের দিকে পা বাড়াতেই,ক্যাচক্যাচ করে সেই রুমের দরজাটি খুলে গেলো।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে রেহান আরও ভ**য় পেয়ে গেলো।তবে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগলো,রুমের ভেতরে থাকা বাচ্চাটিকে দেখার জন্য।রেহান শুকনো ঢোক গিলে রুমের মধ্যে ঢুকতেই দেখলো, একটা সাদা ফ্রক পড়া মেয়েটি পেছন ফিরে পিয়ানো বাজাচ্ছে।পিয়ানোর আওয়াজটিও অন্যরকম।রেহান ধীরে ধীরে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো।রেহান মেয়েটার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে থাকতেই,মেয়েটি হঠাৎ করে তার দিকে তাকালো।রেহান মেয়েটির চেহারা দেখে সাথে সাথে চি**ৎ*কার দিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।রেহানের চি**ৎ*কারের শব্দ বাইরে গেলো না।হয়তো কেউ কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

“রেহান ফ্লোর থেকে উঠে রুম থেকে বাইরে বের হতে নিলেই,দরজা ভেতর থেকে আটকে গেলো।রেহান এইমুহূর্তে পেছনে ফিরতে সাহস পেলো না।কারণ,সে বুঝতে পারছে পেছনে কেউ আছে।রেহান মেয়েটির দিকে তাকাতে ভ**য় পেলো।কারণ, মেয়েটির ফর্সা মুখে র**ক্তি*ম চোখ জোড়া থেকে অনর্গল সাদা পানীয় কিছু পড়ছে।কপালের রগ গুলো কালো হয়ে ফুলে আছে।ঠোঁট জোড়া কুচকুচে কালো।ঠোঁটজোড়ার দুই পাশ দিয়ে কালো পানীয় কিছু পড়ছে।মাথার এক পাশে চুল আছে,আরেক পাশে নেই।সবমিলিয়ে মেয়েটা কে দেখে রেহানের ভ**য়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো।”

“রেহান কন্ঠে ভ**য় এবং আ**তং*ক নিয়ে বললো,’ককককে তুমি?ককককি চাও?”

“বাচ্চা মেয়েটি হঠাৎ করে রূপ বদলে দানবাকৃতির শরীর এবং মুখমন্ডল নেকড়ের বেশ ধারণ করে বললো,’তোর জান চাই।”

“রেহান পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখলো, ভ**য়ং**কর একটি নেকড়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নেকড়েটির চোখজোড়া দিয়ে মনে হয় আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে।রেহান ভ**য় এবং বিস্ময়ের কন্ঠে বলে উঠলো,’কককককে তুমি?আআআমার সাথে এমন করছো কেনো?”

“রেহানের প্রশ্ন শুনে নেকড়েটি আবারও বাচ্চা মেয়েটির রূপ ধারণ করে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বললো,’আমি তোর যম।আজকেই তোর শেষ দিন।’বলেই রেহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

“রেহান বাচ্চা মেয়েটির সাথে পেরে উঠছিলো না।তাই টেবিলে থাকা ফুলদানি টি দিয়ে মেয়েটির মাথায় আ**ঘা*ত করতেই,মেয়েটি নিচে পড়ে গেলো।রেহান তড়িঘড়ি করে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো।”

“বাচ্চা মেয়েটি সেটা দেখে বি**দ*ঘুটে হাসি দিয়ে রেহানের পেছনে দৌড়ালো,কখনোও সিড়ির কার্নিশ বেয়ে নাচতে নাচতে নিচে নামলো।রেহান সেদিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে স্টোর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।”

“বাচ্চা মেয়েটি ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রেহানের দিকে তাকিয়ে ভ**য়ং**কর ভাবে হাসতে থাকলো।মুহূর্তেই মেয়েটি রূপ বদলে একজন সুদর্শন পুরুষের রূপ ধারণ করলো।রেহান সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের কন্ঠে বলে উঠলো, ‘নিহান তুমি এখানে?”

“রেহানের প্রশ্ন শুনে নিহান গগন কাঁপিয়ে হাসি দিলো।সেই হাসি দেয়ালের সাথে প্রতিধ্বনি হয়ে আবার ফিরে আসছে।হাসি থামিয়ে নিহান রেহানের দিকে ওর র**ক্তি*ম চোখজোড়া নিক্ষেপ করে বললো,’হ্যা আমি এখানে।তুই আমার নীলাঞ্জনার দিকে কু**নজর দিয়েছিস।তাই আজ তোর প্রাণ বায়ুর এখানেই সমাপ্তি ঘটবে।”

“রেহান এতক্ষণে বুঝে গেছে, নিহান কোনো সাধারণ মানুষ না।রেহান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’তুমি কে?”

“নিহান বি**দ**ঘুটে হাসি দিয়ে বললো,’আমি ভ্যাম্পায়ার; ওরফে তোর যম।’বলেই রেহানের ওপর হা**ম*লে পড়লো।রেহান তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিহানকে আটকাতে চাইলো;কিন্তুু নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।যখন নিহান রেহানের ঘাড়ে কামড় দিতে যাবে;তখনই রেহান তার মাথা দিয়ে নিহানের মাথায় খুব জোরে আ**ঘা*ত করলো।নিহান একটু সরে যেতেই, রেহান উঠে সেই রুম থেকে বের হয়ে দরজা আটকে নিচে চলে গেলো।”

“রেহান নিচে গিয়ে মেইন দরজা খুলতেই দেখলো, সামনে দাড়িয়ে আছে বেশ বড় একটি বাদুড়।বাদুড়ের চোখ জোড়া থেকে আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে।রেহান মনে হয় সেই লাভায় পু**ড়ে ভ**স্ম হয়ে যেতে লাগলো।হঠাৎ পেছন থেকে আবারও পিয়ানো বাজানোর শব্দ কানে আসতেই, রেহান পেছনে ফিরে দেখলো, নিহান দাঁড়িয়ে আছে।রেহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’তততুমি এখানে কিভাবে এলে?তোমার রুমের দরজা তো বন্ধ করে এসেছিলাম?”

“নিহান আরও ভ**য়ং**কর ভাবে হাসতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললো,’কি বলতো আমি না আমার শিকার নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসি।কি ভেবেছিস,তুই মাথা দিয়ে ধা**ক্কা দিবি আর আমি ব্যথা পেয়ে সরে যাবো?হাহাহাহোহো ওটা তো একটু অভিনয় করলাম।যাইহোক তোর মতো দূষিত মানুষের র**ক্ত খেয়ে রুচি নষ্ট করার ইচ্ছে আমার নেই।আমি আবার বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।তোকে খাবে আমার ভাই এহতিশাম।’বলেই বাদুড় টির দিকে তাকিয়ে বললো,’এহতিশাম আজ তোর জন্য স্পেশাল ডিনারের আয়োজন করেছি।খেয়ে অবশ্যই রিভিউ দিবি।”

“নিহান বলতেই এহতিশাম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাদুড় থেকে মানুষের রূপ ধারণ করে, রেহানের দিকে তাকিয়ে তাকে লা**থি মে**রে ফ্লোরে ফেলে দিলো।তারপর বাসার ভেতরে এসে হাত দিয়ে ইশারা করলো,আর অটোমেটিক দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।”

“রেহান ফ্লোর ঘেঁষে উঠতে চাইলো,আর হাত জোর করে বলতে থাকলো,’আমার ভুল হয়েছে।আমি এইরকম কাজ আর কখনোও করবো না।আমাকে ক্ষমা করে দাও।তোমরা তো আমার স্টুডেন্ট।একদিন হলেও তোমাদের পড়িয়েছি।তাই শিক্ষক হয়ে তোমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি;আমাকে ছেড়ে দাও।দরকার হলে আমি এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।আর কখনোও বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবো না।”

“নিহান পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে বললো,’বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,’দুর্জন বিদ্যান হইলেও পরিত্যাজ্য।’নিশ্চয়ই এটা তুই পড়েছিস।তোর মতো নি**কৃ*ষ্ট মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।আজকেই হবে তোর শেষদিন।’বলেই
রেহানের বুকে নিহান সজোরে কয়েকটি লা**থি মে**রে এহতিশাম কে ইশারা করে বললো,’ওর এমন অবস্থা করবি,যেনো এখানে ওর চিহ্ন ও না থাকে।ও যেনো সারাজীবন নিখোঁজ হয়ে থাকে।’বলেই সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।”

“এহতিশাম রেহানের দিকে তাকিয়ে বি**দ*ঘুটে হাসি দিয়ে বললো,’খুব বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই।তাই তোর জীবন দিয়ে এই ভুলের মাশুল দিতে হবে।যদিও আমি অনেকদিন যাবৎ এমন ফ্রেশ র**ক্ত খুজছিলাম।জানিস,প্রতিদিন রাতের বেলা শিকার খুজতে বের হলে সব হেরোইন,ফেনসিডিল খোর সামনে পাই।এগুলোর দূষিত র**ক্ত খেতে খেতে আমার রুচিটাই নষ্ট হয়ে গেছে।কিন্তুু আমি জানি, তোর এইরকম বাজে নেশা নেই।তোর র**ক্ত টা একদম ফ্রেশ।তাই অনেকদিন পর খুব মজা করে খেতে পারবো।’বলেই এহতিশাম আসল ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করলো।চোখের সামনে এমন দানবাকৃতির ভ**য়ং**কর ভ্যাম্পায়ার দেখে রেহানের চোখের মণি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।এহতিশাম রেহানের ওপর হা**ম*লে পড়লো।মুহূর্তের মধ্যেই রেহানের শরীরের সব র**ক্ত শুষে নিলো।তারপর অন্যান্য নেকড়ে ভ্যাম্পায়ারদের ডেকে, রেহানের দেহ খেয়ে ফেলতে বললো।ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল রেহানের এমন তরতাজা প্রাণহীন দেহ দেখে খুশিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।পৃথিবী থেকে ভ**য়ং**কর ভাবে শেষ বিদায় নিলো রেহান নামক মানুষটি।”

—————–
“ঘুমন্ত এক রমনীর পাশে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহান।নীলাদ্রির ঘন কালো লম্বা চুল গুলো বালিশের এক পাশে অবহেলায় পড়ে আছে।নিহান ওর চুলের কাছে গিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া নারীটিকে এইমুহূর্তে নিহানের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।নিহান এখন নিজের কন্ট্রোলে নেই।ধীরে ধীরে ওর ওষ্ঠদ্বয় নীলাদ্রির ঘাড়ের কাছে চলে গেলো।ঘাড়ের কাছে যেতেই নিহানের খুব র**ক্তে*র তৃষ্ণা পেলো।নিহান চাইলেই নীলাদ্রির ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষতে পারে এবং ওর যেনো ক্ষতি না হয় তার জন্য মেডিসিনও দিতে পারে।কিন্তুু ওই যে কিছু তিক্ত বিধিনিষেধ অতিক্রম করে, নীলাদ্রির শরীর থেকে র**ক্ত শুষে নেওয়া নিহানের পক্ষে সম্ভব নয়।নিহান দ্রুত নীলাদ্রির কাছ থেকে সরে গেলো।বেলকনিতে গিয়ে দেখলো, একটি কুকুর রাস্তার এক সাইডে হাটছে।নিহান মুহূর্তের মধ্যেই বাদুড়ের রূপে ঝড়ের গতিতে কুকুরটির কাছে গিয়ে দেখলো,কুকুটির শরীর বেশ চকচকে।হয়তো কারো পোষা কুকুর।নিহান মুহূর্তেই কুকুরটির ওপর হা**ম*লে পড়লো।আজ রাতে কুকুরের র**ক্ত খেয়ে নিহান তার ক্ষুধা নিবারণ করলো।”

“কিছুক্ষণ পর নিহান আবারও নীলাদ্রির কাছে ফিরে এলো।নীলাদ্রি এখনও নিহানের ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করার কারণে, গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির গলায় হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,’সবসময় আমার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকো।কিন্তুু এখন তুমি কিছুই করতে পারছোনা।কারণ,তোমার সবকিছুই এখন আমার কন্ট্রোলে নীলাঞ্জনা সুইটহার্ট।’বলেই নীলাদ্রির গলায় ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।ধীরে ধীরে নিহান নীলাদ্রির অজান্তেই ওর পুরো শরীরে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো।”

“নীলাদ্রির ঘুম ভাঙলো সকাল ৯টা বাজে।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।নিহানের ঠান্ডা শরীর নিয়ে এভাবে জড়িয়ে ধরায়, নীলাদ্রির শরীরে কাঁপুনি শুরু হলো।ওর নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।নীলাদ্রি মোচড়ামুচড়ি করতে থাকলো।এতে নিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।নিহান ঘুমঘুম চোখে বললো,’উমম সুইটহার্ট সারারাত তোমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি।এখন একটু আরাম করে ঘুমাতে দাও।২৪ঘন্টার মধ্যে ২ঘন্টা ঘুমাতেই হবে; প্লিজ এমন করো না।’বলে নীলাদ্রি কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।”

“নীলাদ্রি তো পুরো হতবিহ্বল হয়ে গেলো।ঘনঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তুু পারছেনা,ওর শরীর মনে হয় ক্রমাগত অসাড় হয়ে গেলো।তাই ‘উমম’ শব্দ করতে থাকলো।এভাবে শব্দ করায় নিহানের ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেলো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, ওর কষ্ট হচ্ছে।তাই নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো।”

“নিহান ছেড়ে দেওয়ার পর নীলাদ্রির মনে হলো, বাঘের খাঁচা থেকে মাত্র জান নিয়ে ছাড়া পেয়েছে।ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,’আমার শরীর টাকে কি আলুর বস্তা পেয়েছেন?যেভাবে শক্ত করে ধরেছেন মনে হয়,একটু হলে চিৎপটাং হয়ে যেতাম।”

“নিহান আড়মোড়া ভে**ঙে মুচকি হেসে নীলাদ্রির ঘাড়ে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’রাতে যেভাবে শাড়ির আঁচল এলোমেলো করে ঘুমিয়েছিলে, তাতে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা দায় হয়ে পড়েছিলো।তাই সারা রাত তোমায় মন ভরে আদর করে কিছুক্ষণ আগে ঘুমালাম।আর তুমি মোটেও আলুর বস্তা না।তুমি তো আমার নরম তুলতুলে মিষ্টি একটা বউ।”

“নিহানের আদর করার কথা শুনে, নীলাদ্রি খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলো শাড়ি আর শাড়ির জায়গায় নাই;ফ্লোরে পড়ে আছে।নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে নীলাদ্রির মনে হয় মাথা ঘুরে গেলো।ফ্লোর থেকে শাড়ি উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে বললো,’অ**সভ্য,ই**তর,নোং**রা লোক; আপনাকে বলেছিলাম আমি অসুস্থ আর আপনি কি না…

“নীলাদ্রির কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে, নিহান ওর ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।৩মিনিট পর নীলাদ্রি কে ছেড়ে বললো,’নেক্সট টাইম এভাবে ঠোঁট নেড়ে কথা বলবে না।তাহলে আমার নেশা ধরে যায়।”

“নীলাদ্রি এক ঝটকায় নিহানের থেকে সরে গিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,’চুমুখোর লু**চু মার্কা পুরুষ;সারাদিন শুধু আমার সাথে চুম্মাচুম্মি আর চিপকে থাকার ধান্দা করেন।আজ আমার যেই ক্ষতি টা করলেন;তার জন্য আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না।আমি আজকেই এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।’বলেই নীলাদ্রি বিছানা থেকে নামতে নিলে,নিহান এক ঝটকায় নীলাদ্রির হাত টান দিয়ে ওর বুকের ওপর ফেলে নীলাদ্রির চিবুকে হাত দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বলে উঠলো,’তুমি আমার বউ।তোমার সাথে আমি চিপকাচিপকি করবো না তো অন্য কেউ করবে?হাহ….এইসব ননসেন্স টাইপের কথা কিভাবে বলো আমার মাথায় আসে না।আর শোনো, গতকাল রাতে তোমাকে এইভাবে এলোমেলো ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে
আমি ঠিক থাকতে পারিনি।তাই একটু-আকটু মজা করেছি,চুমু দিয়েছি।স্বামী হিসেবে এতটুকু করতেই পারি।আর তোমার সাথে এখনোও ফুলসজ্জা করিনি।তুমি সুস্থ হলে, তোমার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে তারপর করবো।ততদিন আমার এই চুমুর টর্চার তোমাকে সহ্য করতে হবে।”

“নীলাদ্রি নিহানের বুক থেকে জোরাজোরি করে উঠে কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,’আপনি আমার কোথায় কোথায় চুমু দিয়েছেন?”

“হায় সুইটহার্ট !এখন তোমাকে ডিটেইলসে বলতে হবে?ওকে বলছি,প্রথমে তোমার চুলে,তারপর ঘাড়ে,গলায়,পুরো মুখে তারপর গলার একটু নিচে, তারপর…..

” আর কিছু বলতে দিলো না নীলাদ্রি।দুই হাত দিয়ে নিহানের মুখ চেপে ধরে বললো,’আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আপনি আমার সম্ভ্রমহানী করেছেন।আমি এর প্রতিশোধ নেবোই নেবো।নইলে আমার নাম পাল্টে রাখবো।’বলেই নীলাদ্রি ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিহান সেদিকে তাকিয়ে হোহো করে হেসে উঠলো।”

————–
“সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম ভাঙলো ইরার।ঘুম ভাঙতেই দেখলো, ইরার মাথা শক্ত কিছুতে শুয়ে আছে।ইরা মাথা উচু করে দেখলো, ইয়াশ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে;আর ইরার মাথা ইয়াশের শক্ত বুকের ওপর।ইয়াশ কে দেখেই ইরার গতকাল রাতের কথা সব মনে পড়ে গেলো।মুহূর্তেই ইরার মন পাহাড় সমান ভারি হয়ে গেলো।ইরার একে একে মনে পড়তে লাগলো রাতে ইরার সাথে ইয়াশ কে দেখে প্রতিবেশীদের সেই নি**কৃষ্ট কটুক্তি।রাহাত আহমেদের ঘৃ**ণার দৃষ্টি।প্রতিটি কথা মনে করে, ইরা ইয়াশের বুকে মাথা রেখেই ডুকরে কেদে উঠলো।ইরার চোখের পানিতে ইয়াশের বুক ভিজে গেলো।”

“বুকের ওপর গরম তরলের অনুভব হতেই ইয়াশের ঘুম ভেঙে গেলো।ইয়াশ তাকিয়ে দেখলো ইরা হেঁচকি তুলে কাঁদছে।ইয়াশ বুঝতে পারলো,গতকাল রাতের কথা মনে করে ইরা কাদছে।ইয়াশ ইরাকে কি বলে স্বান্তনা দেবে ভেবে পেলো না।তাই ইরার পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে স্বান্তনার স্বরে বললো,’সোনাপাখি মন খারাপ করো না।যা হয়েছে আমাদের ভালোর জন্যই হয়েছে।নইলে তোমাকে পেতে আমার সারাজীবন অপেক্ষা করতে হতো।আর তোমার যেই তেজ।দেখা যেতো তুমি আমাকে রিজেক্ট করতে করতে পা**গলা গারদে পাঠিয়ে দিতে।যাইহোক,তোমাকে পেয়ে আমি অনেক হ্যাপি সোনাপাখি।তুমি চিন্তা করো না,আমি তোমার পা হতে মাথা পর্যন্ত সব ধরনের খেয়াল রাখবো।’বলে ইরার মাথায় চুমু দিলো।”

“ইরা এতক্ষণ গতকাল রাতের কথা মনে করে কান্না করার কারণে ভুলেই গেছিলো,যে ও ইয়াশের বুকে আছে।ইয়াশ ইরার মাথায় চুমু দিতেই ইরা মনে হয় শকড খেলো।তড়িৎ গতিতে ইয়াশের বুক থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসে বললো,’এই মটু ভুলেও আমায় ছোঁয়ার চেষ্টা করবিনা।তোর সাহস হলো কি করে আমার মাথায় চুৃুমু দেওয়ার?”

“ইরার এহেন কথায় ইয়াশ শোয়া থেকে উঠে বসে মাথায় হাত দিয়ে বললো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ!স্বামীকে এভাবে কেউ তুই করে বলে?আগে যা বলার বলতে, এখন তো আমি তোমার স্বামী।এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে বুঝেছো সোনা।আর গতকাল রাতে তুৃমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে,তাই ওই অবস্থায় আমার শশুর বাবার অনুমতি নিয়ে তোমাকে পার্মানেন্টলি এই বাসায় নিয়ে এসেছি।”

“তুৃমি তো অসুস্থ ছিলে তাই বাসর করতে পারিনি।আজ রাতে রুম টাকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে মজা করে বাসর করবো কেমন সোনা?’ইরার গালে এক হাত রেখে কথাগুলো বললো ইয়াশ।”

“ইরা এক ঝটকায় ইয়াশের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,’আপনার মতো মটুর সাথে আমি করবো বাসর?হাহ..সেটা কল্পনাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।আমার পছন্দ স্লিম বডির ছেলেদের।আপনার মতো এমন ফুলকপি কে না।”

“ইরার মুখে বার-বার ‘মটু’ শব্দটি শুনে ইয়াশের বেশ খারাপ লাগলো।মন খারাপ করে বললো,’তুমি আমায় মটু বললে আমার খুব খারাপ লাগে।এভাবে কারো স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যঙ্গ করে কথা বলা উচিত নয়।সৃষ্টিকর্তা চাইলে তোমারও এমন স্বাস্থ্য হতো।”

“ইরা মুখ ভেং**চি কে**টে ঝগড়ুটে স্বরে বললো,’জ্বি না।আমি আপনার মতো সারাদিন এমন খাই খাই করি না।আপনি তো সময় পেলেই খাওয়া শুরু করেন।অনেকে আবার রোগ-ব্যধি বা বংশগত কারণে মোটা হয়ে যায়।কিন্তুু আপনি খাওয়ার কারণে মোটা হন।তাই আপনাকে আমি পছন্দ করি না।আপনি এইমুহূর্তে এই রুম থেকে ফুটেন।”

“ইরার এলোমেলো চুল,চোখের কাজল লেপ্টে চোখের নিচ পুরো কালো হয়ে গেছে।এই মুহূর্তে ইরাকে দেখে ইয়াশের কালো পেত্নীর কথা মনে পড়ে গেলো।তার ওপর ইরা যেভাবে গমগম করে কথা বলছে, এতে ইরাকে সত্যিকারের পেত্নীর মতো লাগছে।ইয়াশ মিটিমিটি হেসে ইরাকে বললো,’সোনাপাখি তুমি জানো এইমুহূর্তে তোমাকে দেখতে কেমন লাগছে?”

“ইরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,’আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগছে।সেটা আবার নতুন করে বলতে হবে না।”

“ইয়াশ দুষ্টু হেসে বললো,’হুহহ..মোটেই না।তোমাকে এই মুহূর্তে তাল গাছে থাকা কালো পেত্নী বুড়ির মতো লাগছে।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা রেগে গিয়ে,’ কিইইই?’বলেই ইয়াশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে