ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৯+১০

0
391

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“ইরা কে কাশতে দেখে,ইয়াশ ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশের স্পর্শ পেয়ে;ইরা বি**স্ফো**রিত নয়নে ইয়াশের দিকে তাকালো।”

“ইরার এভাবে তাকানো দেখে,ইয়াশ বললো,’কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? বুকে নাকি পিঠে?”

“ইরা রেগে গিয়ে এক ঝটকায় ইয়াশের হাত সরিয়ে বললো,’হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই বডি?”

“ইরার এহেন কথায় ইয়াশ তো পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,’আমি আবার কি করলাম?তোমার তো কাশতে কাশতে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।তাই তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম,যাতে তোমার কষ্ট না হয়।আজকাল দেখি মানুষের উপকার করলেও ধমক খেতে হয়।সত্যি মানবজাতি বড়ই অদ্ভুত প্রাণী।”

“ইরা রেগে গিয়ে বললো,’এই মটু একদম আমাকে নিয়ে টিটকারি করবেন না।তাহলে আপনার ঠ্যাং ভে**ঙে ল্যাংড়া করে দেবো।”

“এই ঝগড়ুটে টকটকি এতো ঝগড়া কার কাছ থেকে শিখেছো?তোমার মনে কি ঝগড়ার ডিকশনারি আছে নাকি?সবসময় দেখি ওঁৎ পেতে থাকো,কখন আমি কিছু বলবো;আর তুমি টেপ রেকর্ডার চালিয়ে দেবে।যাইহোক, আমার গানের সুরে কবিতা টা কেমন লাগলো বললেনা তো?”

“একেই তো ইরা ইয়াশের গান শুনে পানি খেতে গিয়ে বিষম খেলো, তার ওপর এখন আবার গা জ্বালানোর মতো প্রশ্ন করছে।’ইরা এইবার তেঁতে উঠে ইয়াশের কাছে এগিয়ে বললো,’আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাই না?দাঁড়ান খাওয়াচ্ছি আপনাকে হাবুডুবু।’বলেই ইয়াশের পায়ের কাছে গিয়ে জোর করে জুতা খুলতে লাগলো।”

“এদিকে পায়ে ইরার হাতের স্পর্শ পেয়ে,ইয়াশের সুড়সুড়ি লাগলো।এমন হওয়াতে ইয়াশ তো হেসেই কু**টি*কু**টি হয়ে যাচ্ছে।ইরা সেটা দেখে আরও বেশি রেগে গেলো।এক পর্যায়ে ইরা ইয়াশের পা মচকে দিলো।”

“কিন্তুু অদ্ভুত ব্যাপার হলো,তখনও ইয়াশ কোনো রকম চি**ৎকার করলো না।উল্টো খিলখিল করে হাসতে লাগলো।ইরা তো এই কাহিনী দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।ইয়াশের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো,ইয়াশের পা ঠিক হয়ে গেছে।’এমনিতেই গতকাল রাত থেকে আশিক জ্বীনের চিন্তায়, ইরার অবস্থা নাজেহাল।তার ওপর চোখের সামনে ইয়াশের অদ্ভুত রকমের হাসি দেখে ইরা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।”

“ইরাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ইয়াশ তো পুরো বোকা বনে গেলো।ইয়াশ ইরাকে ফ্লোর থেকে টেনে বেঞ্চে বসিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বলতে থাকলো,’,কি হয়েছে জানু?এভাবে পড়ে গেলে কেনো?চোখ খোলো সোনাপাখি।’ইয়াশ এভাবে ইরাকে কিছুক্ষণ যাবৎ ডাকলো।কিন্তুু ইরার কোনো সাড়াশব্দ নেই।”

“হঠাৎ ক্লাসে এহতিশাম প্রবেশ করে ইরার এই অবস্থা দেখে,ইয়াশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’এই মেয়েটির কি হয়েছে?”

“ইয়াশ এহতিশাম কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।তারপর এহতিশাম কে সব বুঝিয়ে বললো।ইয়াশের কথা শুনে এহতিশাম গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আরে মাথা মোটা মেয়েটা তোর পা অটোমেটিক ঠিক হওয়াতে ভ**য় পেয়ে গিয়েছে।তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।এখনোও ক্লাসে কেউ আসে নি।এক কাজ কর,ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ওর মাথা থেকে কিছুক্ষণ আগের স্মৃতি মুছে দে।তারপর পানির ছিটা দে।তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।আর হ্যা, ওর সামনে নিজেকে এভাবে প্রকাশ করবিনা।তাহলে ভ্যাম্পায়ার কিং খুব রেগে যাবে।’বলেই এহতিশাম বেঞ্চে বসে আবারও বইয়ের মধ্যে মুখ গুজলো।”

“ইয়াশ আশেপাশে তাকিয়ে, ইরার মাথায় হাত দিয়ে ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে কিছুক্ষণ আগের স্মৃতি মুছে দিলো।তবে ওর গাওয়া ফানি গান টা মুছলো না।কারণ,এটা যে খুব যত্ন করে ইরার জন্য বানিয়েছে।তারপর ইরার চোখে-মুখে পানির ছিটা দিতেই, ইরা কয়েক সেকেন্ড পর পিটপিট করে তাকালো।কোনোরকমে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার কি হয়েছিলো?”

“ইয়াশ কিছু বলতে যাবে; তখনই সব স্টুডেন্ট ক্লাসে ঢুকে গেলো।ইয়াশ আর কিছুই বলতে পারলো না।চুপচাপ ওর বেঞ্চে গিয়ে, ব্যাগ থেকে ডুমুর ফল বের করে খেতে লাগলো।কারণ, ইরার সাথে এতক্ষণ বিতর্ক করতে করতে ওর অনেক ক্ষুধা লেগে গেছে।”

————-
“এদিকে দুপুর ২টায় ঘুম ভাঙলো নীলাদ্রির।নীলাদ্রি ঘড়ি দেখে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলো।কয়েক সেকেন্ড পর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রুম পুরো ফাঁকা।নীলাদ্রি ভাবলো,’আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি,তবুও সাইকো লোকটা আমায় ডাকলো না কেনো?ওই অদ্ভুত লোকটা কোথায় গেলো?ইশশ! তার বাবা-মা আমাকে নিয়ে কি না কি ভাববে আল্লাহ জানে।অথচ আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয়নি।”

“হঠাৎ নীলাদ্রি ওয়াশরুমের ভেতর থেকে পানির আওয়াজ পেলো।নীলাদ্রি বুঝতে পারলো, যে নিহান ভেতরে আছে।নীলাদ্রি বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠতে যাবে, তখনই দেখলো নিহান একটা হালকা পিংক কালারের তাওয়াল জড়িয়ে বের হয়েছে।নীলাদ্রির প্রথমেই নজর গেলো নিহানের সিক্স প্যাক বডির ওপর।নীলাদ্রি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো।যেকোনো মেয়ে এইরকম বলিষ্ঠ শরীর দেখলে আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। নীলাদ্রি আনমনে এভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।তখনই নিহান চুটকি দিয়ে নীলাদ্রি কে বললো,’এভাবে লোভীদের মতো তাকিয়ে না থেকে বুকে আসো,চুমু দাও।গতকাল রাতে তোমাকে চুমু দিতে দিতে আমি বেশ হাপিয়ে গেছি।’তারপর ঢং করে একটু নিঃশ্বাস ছাড়লো নিহান।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রির গতকাল রাতের সব কথা মনে পড়তেই ও শিউরে উঠলো।মুখে রাগী ভাব নিয়ে বললো,’আপনি একজন অ**সভ্য, ছোট**লোক,কা**পু**রু**ষ….

“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাঁকা হেসে বললো,’কতবার বলেছি নতুন কিছু প্র্যাক্টিস করো।এগুলো শুনতে শুনতে একঘেয়ে হয়ে গেছি।ভাবছি, তোমাকে গা**লির পাশাপাশি চুমুর ট্রেনিং দিবো।গতকাল রাতে এতো আদর করলাম,কিন্তুু তোমার কোনো রেসপন্স পেলাম না।একটা মানুষ এতোটা ঘুম কাতুরে কিভাবে হয় আমার মাথায় আসে না।যাইহোক, ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে নিচে যাবে।বাবা-মা ওয়েট করছে।আর হিজাব পড়ে মুখ ঢেকে নিচে যাবে।”

“নীলাদ্রি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেনো?নিচে গেলে হিজাব পড়ে মুখ ঢেকে বের হতে হবে কেনো?”

‘কারণ, তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট জোড়া এখন টকটকে লাল হয়ে আছে।বাবা-মায়ের নজরে পড়লে, তুমি নিজেই লজ্জা পাবে।’

“নীলাদ্রি একমুহূর্তও সেখানে না দাড়িয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়না থেকে কালো কাপড় টি সরিয়ে ঠোঁটের দিকে তাকাতেই হকচকিয়ে গেলো।ভাবলো,’একি হয়েছে আমার ঠোঁটের?ওই সাইকোটা মনে হয় কোনোদিনও মেয়েদের ঠোঁটে চুমু দেয় নি।তাইতো আমাকে জোর করে বিয়ে করে, বাসর না করতে পেরে সব ঝাল ঠোঁটের ওপর মিটিয়েছে।উফফ… এই সাইকো লোকটাকে ইচ্ছে করে দুই হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে আবার নিচে ফেলে দেই।কিন্তুু আমার মুখে জোর থাকলেও,শরীরে তো জোর নেই।’ভেবেই শাওয়ার ছেড়ে পুরো শরীর স্ক্রাবার দিয়ে ঘষতে লাগলো।”

“ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নীলাদ্রি তাওয়াল দিয়ে ওর চুলগুলো মুছতে মুছতে বেলকনি তে যেতে নিলে,নিহান ওর হাত টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে ওর ঘাড়ে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।নীলাদ্রি তো পুরো শকড খেলো।নীলাদ্রি প্রথমে নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক মোচড়া-মুচড়ি করলো।কিন্তুু কাজ হলো না।নিহানের চুৃুমুর পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো।এদিকে নীলাদ্রির খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।তাই বুদ্ধি করে ওর হাতের কনুই দিয়ে নিহানের পেটে ঠেলা মারতেই নিহান একটু পিছিয়ে গেলো।”

“নীলাদ্রি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,’আপনি কি এইসব চুম্মাচুম্মি আর ঘেঁষাঘেঁষি ছাড়া কিছুই পড়তে পারেন না?গতকাল রাত থেকে আমাকে দেখলেই বারবার হা**মলে পড়েন কেনো?অসহ্য।”

“নিহান দুষ্টু হেসে নীলাদ্রির দিকে একটু ঝুকে বললো,’হুমম সুইটহার্ট আমি তো অনেক কিছুই পারি।কিন্তুু তুমি তো অসুস্থ তাই কিছু করতে পারছিনা।কিন্তুু তোমাকে দেখলেই আমি আর নিজের মধ্যে থাকিনা।কন্ট্রোললেস হয়ে যাই।এতে আমার কি দোষ বলো?তার ওপর কালো শাড়ি আর ব্লাউজ পরিহিত অর্ধনগ্ন পিঠে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা দেখে খুব হিংসা হচ্ছিলো।তাই সেগুলো শুষে নিলাম।এখন আর একটুও পানি নেই।তুমি চাইলে চেক করতে পারো।আর তাছাড়া তুমি আমার বউ।তোমার সাথে সবকিছু করার অধিকার আমার আছে।এগুলো তো জাস্ট ট্রেইলার।মধুচন্দ্রিমা এখোনও বাকি আছে সুইটহার্ট।”

“নিহানের এহেন কথায়, নীলাদ্রির মুখের ভাষাগুলো মনে হয় বহুদূরে পালিয়ে গেলো।নীলাদ্রি কি বলবে এই লোককে?দেখা যাবে কোনো ভালো কথা বলতে গেলেও, আরেক টা ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা বলে নীলাদ্রি কে লজ্জায় মেরে ফেলবে।এর থেকে নীরব থাকাই শ্রেয়।নীলাদ্রি নিহানের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

“নিহান বুঝতে পেরেছে নীলাদ্রি লজ্জা পেয়েছে।তাই মুচকি হেসে গলার স্বর উঁচু করে বললো,’নীলাঞ্জনা আবার ওয়াশরুমে গেলে কেনো?ভুলেও কিন্তুু পিঠে পানি লাগাবে না।তাহলে আবারও একই কাজ হবে,এমনকি তার থেকেও ডাবল হবে।”

“নীলাদ্রি ওয়াশরুম থেকে নিহানের কথাগুলো শুনে, এক দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো।মূলত নীলাদ্রি নিহানের এইসব কথার থেকে বাঁচতেই এখানে এসেছে।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখলো, নিহান রুমে নেই।এটা দেখে খুশি তে লাফিয়ে উঠলো নীলাদ্রি।সাথে সাথে রুমে ঢুকে বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো নিহান সেখানেও নেই।বুঝতে পারলো হয়তো নিচে গেছে।”

——————
“ইমতিয়াজ আহমেদ,শায়লা বেগম এবং নিহান ডাইনিং টেবিলে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।ইমতিয়াজ আহমেদ নিহান কে বললেন,’নীলাদ্রি কে সবকিছু বলেছো?”

“না বাবা এখনও হয়তো সেই সময় টা আসে নি।একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।আমি ভেবেছি, ওকে আরও কিছুদিন সময় দেবো।ধীরে ধীরে যখন আমাদের সাথে মিশে যাবে,তখন বললেও ততটা ভ**য় পাবে না।”

“নিহানের পাশ থেকে শায়লা বেগম বললেন,’নিহান একদম ঠিক কথা বলেছে।যেহেতু ওরা মানবজাতি,তাই ওদের সাথে আমাদের আকাশ-পাতাল তফাৎ।ওকে আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন।তারপর যদি সবকিছু শুনে আমাদের কথা ও না মানে,তখন কি করবি নিহান?”

“মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে নিহানের কাটকাট জবাব,’ওকে তো মানতেই হবে।আর যদি না মানে তাহলে হয় ও ম**রবে,নইলে আমি ম**রবো।”

“নিহানের এহেন কথায় শায়লা বেগম মুখ মলিন করে বললেন,’সামান্য একজন দুর্বল মানবীর জন্য তুই নিজের জীবন দিয়ে দিবি নিহান?”

“ও সামান্য নয় মা।ও আমার কাছে অসাধারণ একজন মানবী।ওকে হারিয়ে যুগ যুগ ধরে পা**গলের মতো আমি দেশ-বিদেশে ঘুরেছি।অবশেষে আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে।ওকে কখনোও হেয় করে কথা বলবে না।আর ও তোমাদের সাথে খাবে না।ওর খাবার মেইড কে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেবে।’বলেই নিহান হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই,নীলাদ্রির সাথে ধা**ক্কা লাগলো।”

“নিহানের বলিষ্ঠ শরীরের সাথে ধা**ক্কা লেগে নীলাদ্রি কপালে খুব ব্যথা পেলো।নিহান সামনে তাকিয়ে দেখলো, হিজাব পড়ে মুখ ঢাকা এক রমনী কপালে হাত দিয়ে ‘উহ’ শব্দ করছে।”

“নিহান বুঝতে পারলো,নিহানের বুকের সাথে ধা**ক্কা লেগে নীলাদ্রি ব্যথা পেয়েছে।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে সরাসরি ওপরে চলে গেলো।নীলাদ্রি কে খাটে বসিয়ে ওর হিজাব খুলে দিয়ে, পা**গলের মতো ওর কপালে চুমু দিতে লাগলো।আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’খুব ব্যথা পেয়েছো নীলাঞ্জনা?আমার এই শক্ত বুক তোমায় ব্যথা দিয়েছে?দেখবে আমি এই বুক টাকে কিভাবে শাস্তি দেই?’বলেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ফল কা**টার ছু**রি। মুহূর্তের মধ্যেই সেটাকে হাতে নিয়ে শার্ট খুলে বুকে দিলো এক টান।চোখের পলকেই সবকিছু হয়ে যাওয়ায়, নীলাদ্রি আর কিছুই করতে পারলো না।সামান্য ব্যথা পাওয়ায় নিহান যে এমন একটা অদ্ভুত কাজ করে বসবে, সেটা নীলাদ্রির কল্পনারও বাইরে ছিলো।নীলাদ্রি নিহানের বুকের দিকে তাকিয়ে আরও অবাক হয়ে গেলো।ভাবলো,’কি অদ্ভুত!বুকের চামড়া কে**টে কিছুটা মাংস বেরিয়ে এসেছে,অথচ একটুও র**ক্ত বের হচ্ছে না।কিন্তুু নিহান ব্যথায় ছটফট করছে।কারণ, নিহান একজন ভ্যাম্পায়ার;সে নিজেই নিজেকে আ**ঘাত করছে।নিহান চাইলেই তার পাওয়ার ব্যবহার করে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যেতে পারে।কিন্তুু সে নীলাদ্রির প্রতিক্রিয়া দেখতে চায়।তাই আরও ছটফট করতে থাকলো।নীলাদ্রি তো সেটা দেখে বেহুশ প্রায়।দ্রুত নিহানকে ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,’ফাস্ট এইড বক্স কোথায়?আমাকে বলুন,আমি এনে দিচ্ছি।”

“নিহান তার হাত দিয়ে কাভার্ডের দিকে দেখিয়ে দিলো।নীলাদ্রি দ্রুত কাভার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিহানের কাছে গেলো।বক্সটি খুলে স্যাভলন দিয়ে প্রথমে ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার করলো।তারপর ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।একবার ক্ষুদে ডাক্তারি করতে গিয়ে জেনেছিলো যখন কারো কে**টে গিয়ে ক্ষত হবে।তখন প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফ্রিজে থাকা এক টুকরো বরফ আক্রান্ত স্থানে লাগালেই র**ক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তুু নিহানের শরীর থেকে তো কোনো র**ক্ত পড়ছে না।তবুও নীলাদ্রি এক দৌড়ে ফ্রিজ থেকে বরফের টুকরো এনে নিহানের বুকের ক্ষত স্থানে চেপে ধরে বললো,’এখন কি একটু আরাম লাগছে?”

“নিহানের শরীর এমনিতেই বরফের মতো ঠান্ডা, তার ওপর নীলাদ্রির এই বরফ টুকরো নিহানের কাছে কিছুই লাগছেনা।কিন্তুু নীলাদ্রির নিহানের কষ্ট নিয়ে এমন চিন্তিত প্রতিক্রিয়া এবং এভাবে নিহানের বুকে হাত রাখায় নিহানের বেশ ভালো লাগছে।নিহান ব্যাপারটি আরও ভালোভাবে অনুভব করার জন্য, চোখ বন্ধ করে ওর পাওয়ার ব্যবহার করে ব্যথা কিছুটা কমিয়ে; নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’নীলাঞ্জনা এই বুকে একটা চুমু দিতে পারবে?”

“এই অবস্থায় নিহানের মুখে চুমুর কথা শুনে, নীলাদ্রির এইবার মাথা ঘোরানোর উপক্রম হলো।নিহানের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলো,’এতো ব্যথা নিয়ে,একটা মানুষের মনে এই টাইপের কথা কিভাবে আসে?আমি হলে তো এতক্ষণে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে, সারা বাড়ি মাথায় তুলতাম।কিন্তুু উনি তো মনে হয় কোনো সাধারণ মানুষ নয়
নিশ্চয়ই তার কোনো মানসিক রোগ আছে।বিষয়টি নিয়ে আমাকে রিসার্চ করতে হবে।’ভেবেই নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,’এই চুমুটুমুর কথা পরে হবে।আর আপনি কি র**ক্ত জাতীয় খাবার খান না?এইরকম একটা ক্ষত হলো,,অথচ আপনার বিন্দুমাত্র র**ক্ত বের হলো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হাসবে না কাদবে বুঝতে পারলো না।কারণ, ভ্যাম্পায়ারদের প্রধান এবং জাতীয় খাবার হলো র**ক্ত।আর ভ্যাম্পায়ার রা আ**ঘাত পেলেও তাদের শরীর থেকে র**ক্ত ঝড়ে না।তাই ভ্যাম্পায়ারদের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা থাকে।’কিন্তুু এটা তো নীলাদ্রি কে বলা যাবে না।তাই নিহান ম্লান হেসে বললো,’কি বলোতো এইসব র**ক্ত জাতীয় খাবার আমার একদম ভালো লাগে না।তাই বেশি খাই না।এখন তুমি এসে গেছো,তাই এখন থেকে প্রতিনিয়ত খাবো।”

“নীলাদ্রি বুদ্ধিমতী ভাব নিয়ে বললো,’এখন থেকে ডুমুর ফল খাবেন।এই ফলটি খেলে শরীরে সবচেয়ে বেশি র**ক্ত বৃদ্ধি পায়।আপনার ভাই ইয়াশ তো দেখি এই ফল খায়।কিন্তুু আপনি তো দেখছি অ্যানিমিয়া রোগীকেও হার মানাবেন।আর এমন পা**গলামি কেউ করে?যদি ক্ষত টা আরও গভীর হতো, কি হতো ভেবে দেখেছেন?”

“নিহান নীলাদ্রির কথা শুনে ওর গালে হাত রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’ওহ মাই কুইন ইউর ওয়ার্ড’স আর অ্যাজ সুইট অ্যাজ ইউ আর।”

————-
“কিছুক্ষণ আগে মেইড এসে দুপুরের খাবার নিহানের রুমে দিয়ে গেছে।
নীলাদ্রি খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে প্রথমে নাক-মুখ কুচকে ভাবলো,’গরুর মাংস ভুনা তে না আছে তেল,না হলুদ, না মরিচের গুঁড়া।কালার টাইতো কেমন অন্যরকম।এরা কি রান্নাও করতে জানেনা!এদিকে নিহান অলরেডি খেয়ে ফেলেছে।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো খাচ্ছো না কেনো?”

” নীলাদ্রি প্রতিত্তোরে কিছুই না বলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত মেখে সবেই এক লোকমা মুখে দিয়েছে,তখনই ওর বমি এসে পড়লো।একেই গতকাল রাত থেকে না খেয়ে আছে,তার ওপর এমন ম্যাটম্যাটে খাবার খেয়ে ওর ভেতর থেকে বমি চলে আসলো।কোনোরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে এক গ্লাস পানি খেয়ে বললো,’এই ধরনের খাবার আপনারা কিভাবে খান?এটার মধ্যে কি আদা-রসুন বাটা,মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া কিছুই দেয় নি?কি ধরণের মেইড রেখেছেন যে রান্না ও করতে পারেনা?”

“নীলাদ্রির এমন রিয়েকশন দেখে নিহান অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’তোমায় কি করে বলবো, যে ভ্যাম্পায়ারদের চিরশ**ত্রু হলো রসুন।”নিহান বুদ্ধি খাটিয়ে বললো,’ইয়ে মানে গুঁড়া মরিচ,আদা-রসুন বাটার তরকারি খেলে আমার একটু গ্যাস প্রবলেম হয়।তাই আমার মতো আমাদের পরিবারের সবাই এটি অ্যাভয়েড করে।তুৃমি চাইলে নিজের মতো রান্না করে খেতে পারো।”

“নীলাদ্রি আর কি বলবে।বাটিতে থাকা পায়েস খেয়ে মন জুড়ালো, কিন্তুু পেট জুড়ালো না।”

“নিহান খাওয়া-দাওয়া করে নীলাদ্রি কে বললো,’সুইটহার্ট আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাবো।তুমি এই রুম থেকে ভুলেও বের হবে না।আর কেউ আসলে তাদের সাথে কথা ও বলবে না।আমি নিজের ব্যক্তিগত সম্পদকে কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করিনা।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণে বুঝে গেছে নিহানের মাথার নিউরনগুলো ওলট-পালট হয়ে গেছে।তাই তাকে বলেও কোনো লাভ নেই।তাই অগত্যা মাথা নেড়ে সায় জানালো।”

“নিহান কে বাইরে যেতে দেখে, সিতারা বেগম ওর রুমে এসে নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলেন।আকস্মিক এভাবে জড়িয়ে ধরায় নীলাদ্রি কিছুটা হতভম্ব হলো।ওর মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,’কি হয়েছে মা?এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে যে?”

“আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি মা।তোর অসম্মতি তে এই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত হয় নি।’নীলাদ্রি বললো,’এখন আর এইসব বলে লাভ নেই মা।আমি জানি তুমি পরিস্থিতির স্বীকার।”

“সিতারা বেগম বললেন,’আমি চাইলে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করতে পারতাম।কিন্তুু তোর বাবা গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট করার পর,মামলা-মোকদ্দমা করেও কোনো লাভ হয়নি।কারণ,যার জন্য অ্যাক্সিডেন্ট করেছে সে ছিলো প্রভাবশালী ব্যক্তি।আইন আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য নয়।”

“নীলাদ্রি নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,’ উফফ মা ওইসব পুরনো কথা বাদ দাও প্লিজ।আর শোনো,আমার মনে হয় নিহানের মাথায় কোনো সমস্যা আছে।আই থিংক সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম।এমন একটা মানুষের সাথে থাকা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না।তাই আমি এখান থেকে পালিয়ে যাবো ভাবছি।তারপর…

” নীলাদ্রির কথা আর শেষ হতে পারলো না।তার আগেই পেছন থেকে একটা পুরুষালী তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’আমাকে একা রেখে কোথায় পালিয়ে যাবে নীলাঞ্জনা?আমি ম**রে গেলেও তোমার পিছনে প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবো সুইটহার্ট।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“আমি ম**রে গেলেও তোমার পেছনে প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবো সুইটহার্ট।”

“নিহানের তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর শুনতেই, সিতারা বেগম এবং নীলাদ্রি পেছনে ঘুরে তাকালো।নীলাদ্রির তো ভ**য়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ওপরে ও জেদি ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে নিহানকে ও প্রচন্ড ভ**য় পায়।”

“নিহান দরজার সামনে আসতেই, ওদের কথা গুলো শুনতে পেয়ে এই কথাটি বলেই রুমে ঢুকলো।সিতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’শাশুড়ি মা আপনার মেয়ে এখন আমার স্ত্রী।ওকে আগেও যেমন ভালোবেসেছি।এখনও তেমন ভালোবাসবো।আপনি এইসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।তাহলে আপনার প্রেশার লো হয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে। কোনো বিপদ-আপদ তো আর বলে কয়ে আসে না।তাই না শাশুড়ি মা?”

“নিহানের কথায় হয়তো কিছু একটা ছিলো।নীলাদ্রি ভাবলো,”যা করার আমাকে একাই করতে হবে।এর মধ্যে মা কে জড়ানো যাবে না।’তাই নীলাদ্রি ওর মাকে বললো,’মা তুমি তো অসুস্থ তাই এখন একটু অন্যরুমে গিয়ে রেস্ট করো।”

“সিতারা বেগম ম্লান হেসে বললেন,’গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি অনেক রেস্ট করেছি।তাই এখন আর রেস্ট করবো না।যেহেতু তোদের বিয়ে হয়ে গেছে।তাই আমি আজ আমার বাসায় চলে যাবো।”

“নিহান সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,’সে কি মা এটা কি শুধু আমাদের বাড়ি?এটা আপনারও বাড়ি।আপনি এখানে আরও ৭ ঘন্টা থেকে যাবেন।এতো তাড়াতাড়ি আপনাকে আমি যেতেই দেবো না।”

“নীলাদ্রি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো নিহানের দিকে।ও ভেবেছিলো, নিহান সিতারা বেগম কে আরও ৭ দিন থেকে যাওয়ার জন্য বলবে।আর সে কি না মাত্র ৭ঘন্টা থেকে যেতে বলছে?অবশ্য তার বলাটাই স্বাভাবিক।কারণ,সে তো পা**গল।আর পা**গলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।”

“নীলাদ্রির ভাবনাচ্ছেদ ঘটলো সিতারা বেগমের কথায়।তিনি নিহানকে বললেন,’বাবা সব বাবা-মায়ের কাছেই তার মেয়েরা রাজকন্যা।মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও আমার মেয়েকে আমরা সাধ্যমতো সবকিছু দিয়েছি।তোমাকে বলবো না ওকে রাজরানী করে রাখতে।তবে ওর গায়ে কখনোও হাত তলো না।ও আ**ঘাত খুব ভ**য় পায়।তোমার কাছে এতটুকু অনুরোধ আমার।”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’আমি যতদিন থাকবো,ততদিন নীলাঞ্জনার গায়ে হাত কেনো,কেউ চোখ তুলে তাকাতেও পারবে না।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মা।’বলেই নিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

“নিহানের এতটুকু কথায় সরলমনা সিতারা বেগমের চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠলো।উনি নিহানের কথার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলেন,যে নিহান তার কথা রাখবে।অথচ কিছুক্ষণ আগে যে নীলাদ্রি নিহানের ব্যাপারে এতো কথা বললো,সেগুলো প্রায় ভুলেই গেলেন।সিতারা বেগম নীলাদ্রির দিকে হাসি-মুখে তাকিয়ে বললেন,’মা নীলাদ্রি আমরা চোখে যা দেখি সেটা সবসময় সঠিক হয় না।আর চোখে যেটা দেখিনা সেটাই সঠিক হয়।হতে পারে ছেলেটা তোর অসম্মতিতে তোকে বিয়ে করেছে।কিন্তুু ছেলেটার চোখে তোর জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি।তোর বাবা ও আমাকে এমন ভাবেই ভালোবাসতো।তাই এখন থেকে তুই ওর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবি।”

“নিহানের কথার মর্মার্থ সিতারা বেগম না বুঝলেও,নীলাদ্রি বুঝেছে।কিন্তুু নীলাদ্রি ওর অসুস্থ মা কে এইসব বিষয়ে জড়াতে চাইছে না।তাই মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’তুমি চিন্তা করো না মা।তোমার মেয়ে এখন ছোট নেই,আমি সবকিছু সামলে নেবো।তুমি শুধু দোয়া করবে।আর হ্যা, বাবার পেনশনের টাকা গুলো কিন্তুু জমিয়ে রেখো না।নিয়মিত ওষুধ কিনে খাবে।মনে রেখো আগে আমি থাকলেও,এখন কিন্তুু তোমাকে একাই সংগ্রাম করতে হবে।তাছাড়া তুমি তো বললেও, এখানে এসে থাকবে না।তাই নিজের খেয়াল নিজে রাখবে।”

“নীলাদ্রি এমন ভাবে ওর মায়ের সাথে কথা বলছে যেনো কোনো বাচ্চাকে কথাগুলো বলছে।সিতারা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর সিতারা বেগমকে নিহান তার বাড়িতে পৌঁছে দিলো।”

——————-
“রাতে নীলাদ্রি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ দেখছিলো,আর আনমনে হাসছিলো।ওর কাছে মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখতে খুব ভালো লাগে।মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি একটুখানি ছুঁয়ে দেখতে পারতো।”

“হঠাৎ পেছনে এসে নিহান দাঁড়ালো।নিহানের উপস্থিতি টের পেলো না নীলাদ্রি।সেতো ধূসর রঙা মেঘ দেখতে ব্যস্ত।নিহান মেঘে ঢাকা আবছা দৃশ্যমান চাঁদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শক্তি আহরণ করলো।তারপর নীলাদ্রির শাড়ির ফাঁক দিয়ে কোমরে হাত দিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর নীলাদ্রির ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে টুপ করে কয়েকটা চুমু দিয়ে বললো,’কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো তুমি?”

“নীলাদ্রি এখন আর বাঁধা দিলো না।কেনো জানি এই মেঘ মালায় নিহানের আলতো স্পর্শ ওর ভালো লাগছে।আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে;একটু মেকি সুরে বললো,’বলবো না এটা সিক্রেট।আর আপনি আমার কোমর ছাড়ুন আমার সুড়সুড়ি লাগছে।”

“নিহান কোমর থেকে হাত সরিয়ে দুই হাত দিয়ে নীলাদ্রি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,’একটা গান শুনবে নীলাঞ্জনা?তুমি তো গান খুব ভালোবাসো।তাই তোমার জন্য একটা গান শিখেছি।”

“গানের কথা শুনলে নীলাদ্রির আর হুশ থাকে না।মনে মনে ভাবলো,’এই লোক আবার গান ও পারে!ভাবতেই অবাক লাগছে।’নীলাদ্রি নিহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,’হুমম শুনবো।’

“নিহান মুচকি হেসে শুরু করলো,

🎶লাল ফিতে সাদা মোজা সু স্কুলের ইউনিফর্ম,
ন’টার সাইরেন সংকেত সিলেবাসে মনোযোগ কম,
পড়া ফেলে এক ছুট ছুট্টে রাস্তার মোড়ে,
দেখে সাইরেন মিস করা দোকানীরা দেয় ঘড়িতে দম,
এরপর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া,
স্কুল বাসে করে তার দ্রুত চলে যাওয়া ।

এরপর বিষন্ন দিন বাজেনা মনোবীণ,
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন,
হাজার কবিতা বেকার সবই তা ।
তার কথা কেউ বলে না,
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ।

সন্ধ্যা ঘনাতো যখন পাড়ায় পাড়ায়,
রক থাকতো ভরে কিছু বখাটে ছোড়ায়,
হিন্দি গানের কলি সদ্য শেখা গালাগালি
একঘেয়ে হয়ে যেত সময় সময় ।

তখন উদাস মন ভুলে মনোরঞ্জন,
দাম দিয়ে যন্ত্রনা কিনতে চায়,
তখন নীলাঞ্জনা প্রেমিকের কল্পনা,
ও মনের গভীরতা জানতে চায় ।

যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে,
তাকাতো সে অবহেলে দু’চোখ মেলে,
হাজার কবিতা বেকার সবই তা।।
তার কথা কেউ বলে না,
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ।🎶”

————–
“নিহানের কন্ঠে এতো সুন্দর একটি গান শুনে নীলাদ্রি বেশ অবাক হয়ে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’বাহ!আপনার কন্ঠ তো দারুণ। নচিকেতার এই গানটি আমার ভীষণ প্রিয়।যখন আকাশ মেঘলা থাকতো, কেনো জানি তখন খোলা চুলে বেলকনিতে গিয়ে এই গানটি শুনতাম।গানটি যদিও বেশ আগের।কিন্তুু আমার কাছে খুব ভালো লাগে।আমি আবার পুরনো দিনের গানগুলো একটু বেশি পছন্দ করি।ওই গানগুলো শুনলে মনের মধ্যে অন্যরকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি হয়।এটা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।জানেন আমার এই গানটির মধ্যে কোন দু’টি লাইন বেশি প্রিয়?”

‘কোনটা?’

‘নীলাদ্রি মুচকি হেসে দুই লাইন গাইলো,
‘যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে
তাকাতো সে অবহেলে দু’চোখ মেলে।’

‘আনমনেই গান গেয়ে,অনেক কথা বলে যাচ্ছিলো নীলাদ্রি।আর নিহান মুগ্ধ হয়ে নীলাদ্রির বাচন-ভঙ্গি দেখছিলো।হঠাৎ নীলাদ্রির খেয়াল হলো,মাত্র একটা গান শুনেই ও নিহানের সাথে হেসে-খেলে কথা বলছে।ভাবলো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ!আমি এতোটা নি**র্লজ্জ হলাম কি করে?এই সাইকো টা আমায় জোর করে হু**মকি দিয়ে বিয়ে করেছে।তারপর গতকাল রাত থেকে কতোটা খারাপ ব্যবহার করেছে।আর আমি নাকি একটা গান শুনেই পটে গেলাম।’ভেবেই নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এই যে আপনি কি নিজে কে খুব চালাক মনে করেন?ভেবেছেন,একটা গান শুনিয়ে আমায় পটাবেন।হুহহ..মোটেও না।আমার মনের প্রাচীর অনেক শক্ত।আজ পর্যন্ত আপনার থেকেও অনেক সুদর্শন ছেলেরা আমার মনে জায়গা পায় নি।আর আপনি তো অনেক দূরের কথা।”

“নিহানের মাথা গরম করার জন্য নীলাদ্রির এতটুকু কথাই যেনো যথেষ্ট ছিলো।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে সোজা রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর ওর ওপর উঠে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বললো,’নেভার কম্পেয়ার মি টু এনিওয়ান এলস,মাইন্ড ইট।”

“একে তো নিহান নীলাদ্রির ওপর পুরো ভর ছেড়ে দিয়েছে।তার ওপর ইংরেজিতে ডায়লগ দিচ্ছে।নীলাদ্রির এখন নিঃশ্বাস ছাড়তে খুব কষ্ট হচ্ছে।ও নিহান কে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।আর মনে মনে বলছে,এই গন্ডারের মতো শরীর নিয়ে আমার মতো একটা পিঁপড়ার গায়ে পড়তে কি একটু খারাপ ও লাগছেনা?ভেবেই ‘ উহহ’ শব্দ করে উঠলো।”

“নিহান বুঝতে পারলো, নীলাদ্রির কষ্ট হচ্ছে তাই সে সরে গেলো।নীলাদ্রি উঠে বসলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’ওই মিয়া কি খান আপনি?এতো বড় হাতির মতো শরীর টা কে নিয়ে আমার উপর উঠতে আপনার লজ্জা লাগে না?আরেকটু হলে তো দম বন্ধ হয়ে ম**রেই যেতাম।”

“নিহান দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’ওকে নেক্সট টাইম উঠলে বেশি ভর দেবো না সুইটহার্ট।”

“নীলাদ্রি নিহানের অঙ্গ-ভঙ্গি বুঝতে পেরে বললো,’আচ্ছা আপনি এইরকম ঠোঁট কা**টা স্বভাব কার থেকে পেয়েছেন বলেন তো?আপনার বাবা কে দেখে তো এমন মনে হলো না।এহতিশাম আর ইয়াশ ও যথেষ্ট ভদ্র। কিন্তুু আপনি এইরকম কেনো?আপনার মন এবং মুখ দুটোই নি**র্লজ্জ।”

“নিহান এইবার হো হো করে হেসে উঠলো।হাসি থামিয়ে নীলাদ্রির হাত ধরে উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বললো,
‘প্রথমত, আমার পুর্বপুরুষেরা ছিলো ব্রিটিশ।হতে পারে তাদের থেকেই এই স্বভাব পেয়েছি।কিন্তুু চরিত্রহীন হই নি।আমি শুধু এক তোমাতেই আসক্ত।’
‘দ্বিতীয়ত, এহতিশাম আর ইয়াশ কে আগে থেকেই তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে নিষেধ করে দিয়েছি।’
‘তৃতীয়ত,তুমি আমার মুখ আর মন কে নি**র্লজ্জ না বলে;আমার আপাদমস্তক সহ পুরো আমি টাকেই যদি নি**র্লজ্জ বলতে,তাহলে আমি আরও বেশি খুশি হতাম।

‘যাইহোক, আমি তোমার জন্য বিরিয়ানি এনেছি।আপাতত এটা খেয়ে নাও।আগামীকাল থেকে তোমার পছন্দের খাবারের কথা আমাকে বলবে।আমি মেইড কে বলে দেবো।আর হ্যা, ভুলেও মেইডের সাথে কথা বলতে যাবে না।’

“নীলাদ্রি চোখ-মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি আমার সবকিছুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছেন।আমি এটা করলে দোষ, ওটা করলে দোষ।আর আপনি সবকিছু করবেন সেটা একদম ঠিক।এটাকে বলা হয় মানসিক নির্যাতন।”

“নিহান নীলাদ্রির চিবুকে হাত দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,’যেদিন আমার মতো করে আমাকে ভালোবাসতে পারবে,তখন তোমারও আমার মতো এমন অনুভূতি হবে সুইটহার্ট।এখন তুমি কিছুই বুঝবে না।কারণ,তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না।’বলেই নিহান রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেলো।”

“এতো গরমের তীব্রতা কাটিয়ে অনেক দিন পর আকাশ ভেদ করে ধরনীতে বারিধারা শুরু হলো।মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টির গতিবেগও প্রতিযোগিতা দিয়ে নেমেছে।কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরনীর মাটি শীতল হয়ে গেলো।এ যেনো সৃষ্টিকর্তার অনন্য নিয়ামত।নিহান বৃষ্টিতে ভিজছে।কিছুক্ষণ পর পর গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে বজ্রপাত হচ্ছে।বজ্রপাত ভ্যাম্পায়ার রা সহ্য করতে পারে না।তাই নিহান চুপচুপে ভেজা জামায় নিচে নেমে, রুমে ঢুকে কাভার্ড থেকে ব্লু টি-শার্ট এবং ট্রাউজার নিয়ে সরাসরি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।”

“নীলাদ্রি বিরিয়ানি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে,মাত্রই শোয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছিলো, এমন সময় নিহান কে ভেজা জামা-কাপড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে দেখে বুঝতে পারলো নিহান বৃষ্টিতে ভিজেছে।নীলাদ্রি ভাবলো,’এই শীতল বৃষ্টির পানিতে যদি এই গরম সাইকোর মাথা টা একটু ঠান্ডা হতো,তাহলে কতোই না ভালো হতো।’ভেবে কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।হঠাৎ করে ওর মনে পড়লো,সামনের সপ্তাহে এক্সাম আছে।নীলাদ্রির কাছে নোটস নেই।কিভাবে কি করবে?ও তো বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বই ও নিয়ে গেছিলো,যেনো পরীক্ষার সময় হাজির হতে পারে।কিন্তুু ক্লাসমেটদের থেকে নোটস নেওয়ার কথা ভুলে গেছিলো।আগামীকাল যেভাবেই হোক ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে।কিন্তুু ওই উগান্ডা দেশের লোককে কিভাবে বোঝাবে, সেই চিন্তায় নীলাদ্রির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।”

“এরইমধ্যে নিহান ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই; নীলাদ্রি হাসি-মুখে নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আহারে আপনি এমন বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন কেনো?যেই হারে বজ্রপাত হচ্ছে, যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো?”

“নীলাদ্রির কন্ঠে মিষ্টি কথা শুনে;নিহান বেশ অবাক হয়ে নীলাদ্রির কপালে হাত দিয়ে বললো,’নাহ!জ্বর তো নেই।হঠাৎ এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে?কিছু চাও নাকি?”

“নীলাদ্রি আর কথা ঘুরালো না।ফিচেল হেসে বললো,’আসোলে সামনের সপ্তাহে পরীক্ষা আছে।তাই আমার ক্লাসমেটদের থেকে কিছু নোটস নেওয়া লাগতো।তাই বলছিলাম,আমি আগামীকাল ইউনিভার্সিটিতে যেতে চাই।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান প্রথমে রেগে গেলেও;পরক্ষণেই ডেভিল হেসে বললো, ‘ওকে যেতে দেবো,তবে ক্লাসে গিয়ে আমার সাথে বসতে হবে।আর সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাতে হবে।বলো, রাজি আছো?”

“নীলাদ্রি ভাবলো, ‘এ আর এমনকি!কিন্তুু ইরা জানলে তো ওর আর রক্ষা নেই।তাই আমতা আমতা করে বললো,’আমি প্রমিজ করছি,এই সাপ্তাহিক এক্সাম টা শেষ হলে সবাই কে জানিয়ে দেবো।নইলে, আমরা যেহেতু ক্লাসমেট হওয়া শর্তেও বিয়ে করেছি;এটা নিয়ে সবাই হাসি-ঠাট্টা করবে।আর আমার খুব মন খারাপ হবে।মন খারাপ হলে আমার পরীক্ষা ভালো হবে না।তাই একটু বোঝার চেষ্টা করুন। তবে ক্লাসে আমি আপনার সাথেই বসবো।”

“নিহান কিছু একটা ভেবে ‘ওকে’ বলেই নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর নিহানকে আর কে পায়।নীলাদ্রির সারা মুখে, গলায়, ঘাড়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো।বেচারি নীলাদ্রি আর কি করবে।কাজ হাসিল করার জন্য সবকিছুই চোখ-মুখ বুজে সহ্য করছিলো।তাছাড়া নিহান ওর স্বামী।চাইলেও বাধা দিতে পারবে না।অবশ্য নীলাদ্রিরও বেশ ভালো লাগছিলো।এমন একটা হ্যান্ডসাম বর নিজে থেকে এইরকম ভাবে কাছে আসলে, কার না ভালো লাগবে।নীলাদ্রি বেশ উপভোগ করছিলো।কিন্তুু, ওর কঠোর মন ওর শরীরকে রেসপন্স করতে দিচ্ছিলো না।যার কারণে, বেচারা নিহান একাই আদর করতে থাকলো।অপরপক্ষ থেকে আদর ফিরিয়ে দেওয়া হলো না।”

——————
“সকালে নাস্তা করে নিহান এবং নীলাদ্রি ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।নীলাদ্রি ক্লাসে ঢুকে দেখলো,ইরা আসে নি।নীলাদ্রির একটু মন খারাপ হলো।কিন্তুু নিহান কে কিছু বুঝতে দিলো না।নিহান এবং নীলাদ্রি আজ এক বেঞ্চে একসাথে বসলো।সেটা দেখে ক্লাসের সবাই আড়চোখে তাকালো।এহতিশাম এবং ইয়াশ একসাথে বসলো।ইয়াশ ইরাকে ক্লাসে না দেখে খুব মিস করতে লাগলো।আর এহতিশাম তো বইয়ের মধ্যেই ডুবে আছে।”

“ক্লাসে সহকারী অধ্যাপক রেহান খান ঢুকতেই,সবাই সালাম দিলো।রেহান স্যারের চোখ জোড়া প্রথমেই নিহান এবং নীলাদ্রির দিকে গেলো।সে অপলক দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি বইয়ের পৃষ্ঠা ওলট-পালট করছিলো, তাই খেয়াল করেনি। কিন্তুু নিহানের নজরে ঠিকই পড়েছে।”

“টিফিন পিরিয়ডে সবাই ক্যান্টিনে চলে গেলো।নিহান নীলাদ্রির সাথে লেপ্টে বসে আছে।এমন সময় নীলাদ্রি নিহান কে বললো,’আমার খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে।ব্যাগে পানির বোতল নেই।আপনার ব্যাগেও মনে হয় নেই।এক কাজ করবেন,আমার জন্য ক্যান্টিন থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে আসবেন?”

“নিহান নীলাদ্রি কে হাসি মুখে বললো,’ওকে সুইটহার্ট আমি যাবো আর আসবো।তুমি কিন্তুু এখান থেকে নড়বে না।”

“নিহান এমন ভাবে কথা বলছে, মনে হয় নীলাদ্রি কে ছোট বাচ্চাদের মতো ট্রিট করছে।নীলাদ্রি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।নিহান ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যেতেই,নীলাদ্রি মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’ইশশ..হিটলারের বংশধর যা বলবে আমার নাকি তাই শুনতে হবে।তোর এইরকম সাইকো ভালোবাসার খ্যাতা-পুড়ি।”বলেই ক্লাস থেকে বের হয়ে ওয়াশরুমে গেলো।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যেই না ক্লাসে ঢুকতে যাবে, তখনই নীলাদ্রির হাত টান দিয়ে লাইব্রেরির কক্ষে নিয়ে এলো রেহান খান।”

“রেহান খান তার জন্য বরাদ্দ কক্ষটির দরজা আটকে, নীলাদ্রির দিকে বাকা হেসে বললো,’নীলাদ্রি জান,আমি এভাবে তোমার হাত ধরাতে কি তুমি খুব অবাক হলে?”

“নীলাদ্রি শুধু অবাক হয় নি।তার থেকেও বেশি হয়েছে।যে টিচার কিনা সবসময় মুড নিয়ে চলে;সে কিনা এভাবে ওকে টেনে এনেছে?কিন্তুু কেনো?”

“মি.রেহান খান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,’এই ইউনিভার্সিটিতে আমি ২বছর যাবৎ জয়েন করেছি।নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তুমি যখন গান গেয়ে স্টেজ থেকে নিচে নামছিলে, তখন অ্যাক্সিডেন্টলি তোমার সাথে আমার ধা**ক্কা লাগে।কেনো জানিনা, সেদিন থেকেই আমার একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে।আমার মতো গম্ভীর মানুষটাও সেদিন তোমার প্রেমে পড়ে গেছে।ব্যাপার টা বেশ সিনেমাটিক তাইনা?আজ পর্যন্ত অনেক মেয়ের সাথেই আমার ধা**ক্কা লেগেছে,কিন্তুু কখনোও হার্টবিট মিস হয়নি।কথাগুলো শুনে, তোমার কাছে খুব অবাক লাগছে তাই না?আমার কাছেও তাই।তারপর থেকে আমি সবার অগোচরে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমার সর্বাঙ্গে আমার চোখের বিচরণ করতাম।এক কথায় তোমার প্রতি ভ**য়ং**কর ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ি।এখন হয়তো বলতে পারো, এতোদিন কেনো তোমায় মনের কথা বলিনি?অ্যাজ আ টিচার হিসাবে আমার একটা রেসপন্সিবিলিটি আছে।ভেবেছিলাম,এক্সাম টা হয়ে গেলে তোমায় বলবো।কিন্তুু, আজ তোমায় নিহানের সাথে বসতে দেখে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে গেছি।তাই তোমাকে এখানে আনলাম।”

“রেহান খান একাধারে কথাগুলো বলেই,নীলাদ্রির দুই বাহু ধরে বললো,’তুমি আমার জীবনের অপ্সরা নীলাদ্রি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।উইল ইউ এক্সেপ্ট মাই লাভ?’
রেহান খানের এহেন কথায় নীলাদ্রি যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।”

“এদিকে নিহান এসে নীলাদ্রি কে ক্লাসে না পেয়ে এদিক সেদিক খুৃঁজে বেড়াচ্ছে।খুঁজে না পেয়ে নিহান ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করলো।যখন নীলাদ্রির বর্তমান অবস্থান জানতে পারলো, তখন নিহান যেনো রাগে বেশামাল হয়ে গেলো।ফাঁকা ক্লাসে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করে উঠলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে