ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৭+৮

0
427

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমরা আজ রাতেই বিয়ে করবো নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি হকচকিয়ে গেলো?শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আজ বিয়ে করবেন মানে?আপনি কি একবারও আমার মতামত ভালো করে জানতে চেয়েছেন?আর আপনি বললেই আমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো?হাহ!আমি বেঁচে থাকতে, আপনার মতো সাইকো লোককে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবো না।”

“নিহান ডেভিল হেসে বললো,’ওহ…তাই নাকি সুইটহার্ট?আমাকে তোমার পছন্দ নয় বুঝি?বুঝেছি তোমার ওই রেহান স্যার কে পছন্দ;তাই না?ওকে ফাইন,আগামীকাল তোমার সামনে তার দ্বি-খ**ন্ডিত দেহ পাবে।”

“নীলাদ্রি চোখ-মুখ কুঁচকে মনের মধ্যে একরাশ ঘৃ**ণা নিয়ে চি**ৎকার করে বললো,’আমি আপনার মতো জ**ঘন্য ব্যক্তিকে বিয়ে করবো না।ম**রে গেলেও বিয়ে করবো না।শুনেছেন আপনি?আপনার যা করার করে নিন।”

“নীলাদ্রির তেজি কন্ঠে কথাগুলো শুনে নিহানের চোখ জোড়া লাল হয়ে গেলো।ওর এখন ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু, নিহান কে এই অবস্থায় দেখলে, নীলাদ্রির প্যানিক অ্যা**টাক হতে পারে।নিহান সেটা কখনোই চায় না।তবে নিহান চাইলেই নীলাদ্রি কে হিপনোটাইজ করতে পারে,কিন্তুু নিহান সেটাও চাইছে না।নিহান চাইছে, নীলাদ্রি মন থেকে ওকে বিয়ে করতে রাজি হোক।কিন্তুু নীলাদ্রি তো নাছোড়বান্দা।ও কিছুতেই নিহান কে বিয়ে করতে রাজি হবে না।’নিহানের মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো।নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’বাহ!মানুষের মস্তিষ্ক খেয়ে আমার ব্রেইন টা অনেক সক্রিয় হয়েছে।সত্যি মানুষের বুদ্ধির জুরি নেই।’ভেবেই নীলাদ্রির দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি কি তোমার মায়ের মৃ**ত্যু দেখতে চাও?”

“নিহানের মুখে মায়ের মৃ**ত্যুর কথা শুনে নীলাদ্রি কন্ঠে আ**তংক নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘মায়ের মৃ**ত্যু মানে?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে একটু ঝুঁকে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’সুইটহার্ট আমি আমার হবু শাশুড়ি মায়ের ইনহেলার এহতিশামের কাছে দিয়ে এসেছি।আর সে এখন আমাদের বাসায় অবস্থান করছে।তার তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা।ইনহেলার তার শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য অপরিহার্য। কিন্তুু দেখো ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!তোমার জন্য তোমার মায়ের এখন কষ্ট হবে।তারপর সে ধীরে ধীরে মৃ**ত্যুর দিকে ধাবিত হবে।”

“নীলাদ্রি নিহানের কথাগুলো শুনে দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো,’চুপ করুন।আপনি একজন মানুষ রূপী জা*****র।আপনার মধ্যে কোনো মায়া-দয়া নেই।আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার মায়ের অসুস্থতার সুযোগ নিচ্ছেন।ছিহ!ধিক্কার জানাই আপনার মতো ন**র**প***শু কে।”

“নীলাদ্রির এইসব গা**লা*গা**লি শুনে নিহান অন্যদিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।নিহান এমনভাবে পৈ**শা**চিক হাসি দিচ্ছে,মনে হয় সে আগে থেকেই জানতো,নীলাদ্রি তার কথাগুলো শুনে এইরকম ভাবে রিয়েক্ট করবে।নিহান নীলাদ্রির কথা গায়ে মাখলো না।কারণ, নীলাদ্রির জেদ সম্পর্কে নিহানের থেকে ভালো কেউ জানেনা।কিন্তুু, নিহানের জেদের কাছে নীলাদ্রির জেদ তুচ্ছ।”

“নিহান নীলাদ্রির দুইবাহু ধরে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,’তোমার গা**লা*গা**লি কি আরও বাকি আছে?নাকি তোমার ভান্ডারে যতটুকু ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে?শেষ হয়ে গেলে বলতে পারো,আমি তোমায় হেল্প করবো।আমি অনেকগুলো বাঙালি গা**লি শিখেছি।ওগুলো শুনতে আরও ভালো লাগবে।”

“নীলাদ্রি এইবার অবাকের শীর্ষে পৌঁছালো।ওর মস্তিষ্কে শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘একটা মানুষ কিভাবে এতোটা নি**র্লজ্জ হতে পারে!নীলাদ্রি যে ভাষাগুলো নিহান কে বললো,তার জায়গায় অন্য কেউ হলে নীলাদ্রির সাথে এতক্ষণে হয়তো খারাপ কিছু করে ফেলতো।কিন্তুু নিহান ক্ষেত্রবিশেষে রা**গী হলেও,এইমুহূর্তে তাকে একদম শান্ত,নম্র,ভদ্র মানুষ বললেও কম হবে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই ওর গালে ঠান্ডা ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই, কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।নীলাদ্রি ওর চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,’আপনি একজন চরিত্র**হী**ন পুরুষ।বিয়ের আগে একটা মেয়েকে এভাবে চুমু দেওয়া মোটেও ভালো মানুষের কাজ নয়।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হো হো করে হেসে উঠলো।শুনশান নীরব স্থানে নিহানের হাসির শব্দ গুলো বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।নিহান কয়েক সেকেন্ড পর হাসি থামিয়ে বললো,’তোমাকে শুধু চুমু কেনো; তোমার সাথে এইমুহূর্তে বাসর করার অধিকারও আমার আছে।তুমি আগেও আমার ছিলে, আর সারাজীবন আমার হয়ে থাকবে।এনিওয়ে কান্না করতে করতে তোমার গাল একদম লবনাক্ত হয়ে গেছে।চুমু দিয়ে জিহ্বায় নোনতা স্বাদ অনুভব হলো।তবে আমার এতে সমস্যা নেই, তোমার শরীরের নোনতা স্বাদ ও আমার ভালোই লাগে।আফটার অল তুমি আমার জীবনের স্পেশাল মানবী।”

“নীলাদ্রির মস্তিষ্কের নিউরনগুলো মনে হয় কিছুক্ষণের জন্য অচল হয়ে গেলো।হঠাৎ করেই নীলাদ্রি ওর মুখে পানির ছিটা পড়তেই হকচকিয়ে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো, নিহানের হাতে পানির বোতল।নিহান হাসি মুখে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’গাল টা সত্যিই খুব নোনতা হয়ে গেছে।তাই পানি ছিটিয়ে দিলাম।বলেই নীলাদ্রির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,’এখন একটুও নোনতা লাগছেনা।”

“নীলাদ্রি এইবার নিহানকে কষিয়ে একটা থা**প্পড় দিলো।নিহান নীলাদ্রির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’তোমার সাহস হলো কি করে আমার গালে থা**প্পড় দেওয়ার?”

“নীলাদ্রি চেঁচিয়ে বললো,’আপনার জন্য এর থেকেও বেশি শাস্তি প্রযোজ্য ছিলো।কিন্তুু আফসোস!আমার হাতের কাছে এই মুহূর্তে কিছু নেই।তাহলে সেটা দিয়েই আপনার মাথা ফাটিয়ে ফেলতাম।”

“নিহান মনে হয় নীলাদ্রির কথা শুনে খুব মজা পেলো।একে তো নীলাদ্রি ওকে থা**প্পড় মে**রে, ওর মনে ক্রোধ সৃষ্টি করেছে।তার ওপর এখন আবার হু**মকি দিচ্ছে।কিন্তুু, নীলাদ্রি জানেনা যে, ভ্যাম্পায়ারদের এইসব ছোটোখাটো আ**ঘাতে কিছুই হয় না।বরং এতে ওরা আরও হিং***স্র হয়ে ওঠে এবং অপরপাশের ব্যক্তিটির ঘাড়ে বা**ইট করে তাকে মে**রে ফেলে।ভ্যাম্পায়ার রা তখন ব্যথা অনুভব করে,যখন তাদের স্বজাতি ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আ**ঘাত পায়।কিন্তুু নিহানের এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।তাই নিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নীলাদ্রি কে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বললো,’বাসর রাতে তো আমাকে আর গা**লি দেওয়ার সময় পাবে না।তখন তোমার ঐ গোলাপি ঠোঁট যুগল আমার দখলে থাকবে।তাই এখন একটু গা**লি দিয়ে নাও।”

“নীলাদ্রি এইবার বি**স্ফো*রিত নয়নে নিহানের পানে চেয়ে বললো,’আপনি একটা অ**সভ্য,ন**র*প**শু,জা*****র,নি**র্লজ্জ, বে**হায়া,কা****পুরুষ।”

“নিহান এইবার নিজের দুই কান চেপে ধরে বললো,’উফফ স্টপ নীলাঞ্জনা।এই একই গা**লি বারবার শুনতে শুনতে আমি বোরিং হয়ে যাচ্ছি। নতুন গা**লি দাও।তুমি দেখছি গা**লি টাও ভালো করে জানো না।রেগে গেলে এইভাবে কেউ শুদ্ধ ভাষায় গা**লি দেয় নাকি?সত্যি তুমি খুব বোকা নীলাঞ্জনা।’ ব্যাঙ্গাত্ব-স্বরে কথাগুলো বলে মিটমিট করে হাসছে নিহান।”

“নীলাদ্রি সেটা দেখে আরও তেঁতে উঠে নিহানের শার্টের কলারে হাত দিতে যাবে,তখনই নিহান ওর হাত ধরে গম্ভীর স্বরে বললো,’অনেক পা**গলামী করেছো,আর নয়।তুমি দেখছি খুবই নির্দয় এবং স্বার্থপর মানুষ।তোমার মায়ের যেকোনো সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।তুমি সেটা চিন্তা না করে, শুধু নিজের কথা ভেবে চলেছো।রিয়েলি শেইম ইউ নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রির এখন ওর মায়ের কথা মনে পড়লো।মায়ের কথা মনে পড়তেই,নীলাদ্রির চোখজোড়া জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো।নিহান বিষয়টি বুঝতে পেরে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’এইসব ন্যাকা কান্না বাদ দিয়ে চুপচাপ আমার সাথে চলো।এইসব কান্না পরেও করা যাবে।সামনে আরও কান্না করার জন্য পানি জমিয়ে রাখো।সব শেষ হয়ে গেলে,তখন কাঁদতে খুব কষ্ট হবে।আর তুমি এতোদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছো,তোমার কষ্ট আমি একদম সহ্য করতে পারি না নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি এইমুহূর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।রোবটের ন্যায় সে্ গাড়িতে বসে রইলো।একজন নারী মানসিক ভাবে যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো,শারীরিক ভাবে পুরুষের থেকে কখনোই বেশি শক্তিশালী হতে পারবে না।নিহান চাইলেই নীলাদ্রির সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিতে পারে।’ভেবে নীলাদ্রি আরও বেশি নীরবতা পালন করতে থাকলো।এইমুহূর্তে নিহানকে দেখে ওর সত্যি খুব ভ**য় লাগছে।কারণ,নিহানের সুন্দর মুখস্রিতে লাল আভা ছড়িয়ে আছে।যেটা দেখে নীলাদ্রির শরীর ক্রমাগত শি**উরে উঠছে।নিহান মুচকি হেসে, আবারও ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া আলতো করে নীলাদ্রির গালে স্পর্শ করতেই;কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি। কিন্তুু কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।সে যেনো এক জ্যান্ত কাঠের পুতুলে পরিণত হয়েছে।”

“সেটা লক্ষ্য করে নিহান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’আমি তো এটাই চাইছিলাম।আমার কথা তুমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।আর এতো কম সময়ে তুমি সব বুঝেও গেলে।এই না হলে আমার নীলাঞ্জনা।’বলেই নিহান গাড়ি স্টার্ট দিলো।”

“প্রায় ১ঘন্টার পথ পারি দিয়ে ওরা বাসায় পৌঁছালো।বাসার গেটের সামনে সি এন জি থামিয়ে নিহান এক সাইডে গিয়ে, ওর বাটন ফোন দিয়ে ইয়াশ কে ফোন করে বললো,’এই গাড়িটা যার থেকে ভাড়া নিয়েছে; তার কাছে যেনো পৌঁছে দেয়।আর আজ রাতের জন্য নিহান বিয়ে উপলক্ষে বাসায় আগে থেকেই বিভিন্ন প্রাণীর র**ক্ত এনে রেখেছে,সেটা দিয়েই ওরা পার্টি করবে।”

“নিহানের কথা শুনে ইয়াশ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,’ভাইয়া আমি কিন্তুু সন্ধ্যা থেকে না খেয়ে আছি;তুমি তো জানো আমি ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারি না।আজ কিন্তুু আমি সবার থেকে বেশি খাবো।”

“ইয়াশের কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বললো,’সবসময় তো তোরই ঘরের মধ্যে খাওয়ার রাজত্ব চলে।আজকেও সমস্যা হবে না।আর শোন আশে-পাশের প্রতিবেশীদের জন্য স্পেশাল খাবারের আয়োজন করবি,খাবারের আইটেমের মধ্যে গরুর মাংসের বিরিয়ানি, খাসির মাংসের কাচ্চি আর মুরগির শাহী কোরমা, স্পেশাম মালাই দই এবং খাবারের সাথে অবশ্যই স্পেশাল লেমন জুস দিবি।এই গরমে সাধারণ মানুষের জন্য এটা খুব প্রয়োজনীয় পানীয়।এখন আমি যে কাজ গুলো করতে বললাম,ঝটপট সেটা করে ফেল।আর হ্যা, অবশ্যই কাজী কে নিয়ে আসবি।আর কাজীর দিকে ভুলেও নজর দিবি না বুঝেছিস?”

“ইয়াশ মুচকি হেসে বললো,’ ওকে ভাইয়া,তুমি আমাকে যতোটা পেটুক মনে করো ;আমি কিন্তুু ততোটাও নই।আমি আর এহতিশাম ভাইয়া একরকম পরিমাণে খাই।”

“নিহান মুচকি হেসে ফোন কেটে দিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো সুইটহার্ট এখনোও রোবটের মতো বসে আছো কেনো?বাসায় তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।তুমি নামবে নাকি আমি কোলে করে নিয়ে যাবো?অবশ্য তোমার মতো পাটকাঠি কে উঠাতে আমার তেমন কষ্ট হবে না।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ পর রুঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,’চলা-ফেরা করার জন্য আল্লাহ আমার হাত-পা দিয়েছেন।আমি একাই যেতে পারবো।’বলেই গাড়ি থেকে নেমে নিহানদের বাসার সদর দরজা খুলে সোজা বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো।বাসায় ঢুকেই নীলাদ্রির চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো।
নিহানদের বাসার হল রুমের দেয়ালগুলোর রং পুরো কালো।দেখলেই কেমন গা ছমছম করে ওঠে।নীলাদ্রি ভেতরে ঢুকতেই আশে-পাশের প্রতিবেশীরা বলাবলি করে উঠলো,’এটা কি নতুন বউ?একি মেয়েটা এখোনও সাজে নি কেনো?”

“তাদের কথা শুনে শায়লা বেগম মুচকি হেসে বললেন,’আমার বৌমাকে আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দেবো।তার পাশ থেকেই সিতারা বেগম মলিন হেসে মাথা নাড়লেন।”

“নীলাদ্রি প্রথমে ওর মায়ের কাছে গেলো,জিজ্ঞেস করলো,’মা এহতিশাম কি তোমাকে ইনহেলার দিয়েছে?”

“সিতারা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন,’ইনহেলার তো আমার কাছেই ছিলো।এহতিশাম কেনো দেবে?”

“মা-মেয়ের কথার মাঝেই শায়লা বেগম নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন,’মা আজ তোমায় আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দেবো।দেখেছো তুমি কতো ভাগ্যবতী?তোমার শাশুড়ি নিজের হাতে তোমায় বিয়ের কনে সাজাবে।”

“শায়লা বেগমের কথা শুনে নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে তাকাতেই,সিতারা বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালেন,’তারা যা বলে তাই যেনো শোনে।’নীলাদ্রি বুঝে গিয়েছে যে ওরা মা-মেয়ে দুজনেই চিতা বাঘের ফাঁদে পড়েছে।কথা না শুনলে যেকোনো সময় আ**ক্রমণ করবে।’ভেবেই নীলাদ্রি শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে মাথা নাড়লো।”

“শায়লা বেগম নীলাদ্রি কে সুন্দর করে বিয়ের কনে সাজিয়ে দিলেন।মেরুন রঙের বেনারসিতে গোল্ডেন কালার স্টোন বসানো।মাথায় লাল রঙের দোপাট্টা।হাত ভর্তি মেরুন রঙের চুড়ি।হালকা গহনা,এবং মুখে হালকা মেকআপ,ঠোঁটে মেরুন রঙের লিপস্টিক,নাকে নোজ পিন,কানে ঝুমকা,চুলগুলো খোপা করে কাঠগোলাপের গাজরা লাগিয়ে দিলো শায়লা বেগম।তারপর নীলাদ্রির চিবুক ধরে বললেন,’বাহ!কতো সুন্দর লাগছে তোমায়।আজ আমার নিহান তো তোমার থেকে একদমই চোখ সরাতে পারবে না।আমার ছেলেটা তোমায় এই রূপে দেখে পা**গল হয়ে যাবে।”

“নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’আপনার ছেলে তো পা**গলই।নতুন করে পা**গল হওয়ার কি আছে!’বলেই হঠাৎ কেনো জানি নীলাদ্রির বধু বেশে নিজেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করলো।যতো যাই কিছু হোক না কেনো নিজেকে বধু সাজে সব মেয়েরই একবার না একবার দেখার সাধ জাগে।নীলাদ্রির ও তাই হলো।ও হন্যে হয়ে আয়না খুজতে লাগলো।শায়লা বেগম সেটা খেয়াল করে বললেন,’কিছু খুজছো মামনি?

“নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো ,’আয়না কোথায়?”

” শায়লা বেগম ম্লান হাসি দিয়ে বললেন,’এই ঘরে আয়না নেই।তবে নিহানের ওয়াশরুমে আয়না কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে।তুমি সেখানে গিয়ে আয়না দেখে আবার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিও।”

“শায়লা বেগমের এহেন কথায় নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।তবে নিহানের রুমের কথা শুনে ও বেশ রে**গে গেলো।তাই ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করে ক্যামেরা অন করে; নিজেকে বউ সাজে দেখে বেশ চমকে গিয়ে ভাবলো,’সত্যি তো বধু বেশে আমাকে দেখতে অসাধারণ লাগছে।’
মনে মনে নিজেই নিজের প্রশংসা করলো নীলাদ্রি।”

“এদিকে মেহমানের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে।এখন কাজীসহ সবাই নিচে হল রুমে বসে আছে।নীলাদ্রি এবং নিহান মুখোমুখি বসে আছে।নীলাদ্রি নিহানের দিকে একবারও তাকায় নি।অপরদিকে নীলাদ্রি কে বউয়ের সাজে দেখে নিহান বেহুশ প্রায়।তার মন চাইছে, এখুনি নীলাদ্রির গালে,ঠোঁটে টুপ করে কয়েকটা চুমু দিতে।কিন্তুু এতো মুরব্বিদের সামনে এগুলো করা ঠিক হবে না।’ ভেবে দুই হাত এক করে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো।”

“কাজী সবকিছু পড়ে নিহানকে কবুল বলতে বললেই, নিহান ৮-১০বার কবুল বলে ফেললো।সবাই তো সেটা দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।এদিকে কাজী সাহেব নীলাদ্রি কে কবুল বলতে বললে, নীলাদ্রি নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে বসে রইলো।ও হয়তো মনে মনে পণ করেছে।আজ কিছুতেই কবুল বলবে না।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নীলাদ্রি নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে বসে রইলো।ও হয়তো মনে মনে পণ করেছে;আজ কিছুতেই কবুল বলবে না।”

“নীলাদ্রিকে চুপ করে থাকতে দেখে কাজী সাহেব আবারও বললেন,’মা বলো কবুল।”

“নীলাদ্রি তখনও চুপ করে রইলো।এদিকে নীলাদ্রির এই নীরবতা দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।নিহান সবার ভিড়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো কবুল বলছো না কেনো?”

‘নীলাদ্রি এখনও চুপ।’

“সিতারা বেগম নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে বললেন,’মা কবুল বল।’

“নিহান নীলাদ্রির শীতল চাহনি দেখে বুঝে ফেললো,’এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে কবুল বলবে না।’
নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির পাশে বসে; ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,’তখন কিন্তুু ইনহেলার টা এহতিশামের কাছে দেইনি।এখন কিন্তুু তোমার মায়ের ইনহেলার আমার কাছেই আছে।তুমি চাইলে দেখাতে পারি।আর তুমি যদি এখানে কোনোরকম সিনক্রিয়েট করো,তাহলে কিন্তুু আমার আরও ভ**য়ং**কর রূপ দেখবে।আর আমায় পুলিশের ভ**য় দেখিয়ে লাভ নেই।এখানে যে কয়জন উপস্থিত আছে; সবাই পুলিশের স্ত্রী,ভাই,বোন,বাচ্চা।সবাই আমায় খুব বিশ্বাস করে।তুমি চেঁচিয়ে এইসব কথা বললেও, কেউ বিশ্বাস করবে না।উল্টো তোমার এবং তোমার মায়ের অপমান হবে।আর তোমার মায়ের এমনিতেই শ্বাসকষ্ট এবং লো প্রেশার।বেচারি আন্টি তোমার জন্য চিন্তায় চিন্তায় পরপারে পাড়ি জমাবে।তুমি কি এটাই চাও?তাহলে আমি রাজি আছি।”বলেই ডেভিল হাসি দিলো নিহান।”

“নীলাদ্রির মা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নেই।ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনরা ধীরে ধীরে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে।মায়ের কিছু হয়ে গেলে নীলাদ্রি কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।’ভেবেই বি**স্ফো**রিত নয়নে নিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে;এক নিঃশ্বাসে তিন বার কবুল বলে দিলো।”নীলাদ্রি কবুল বলা মাত্রই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সিতারা বেগমের চোখজোড়া দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগলো।সবাই ভাবলো,তিনি হয়তো একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে কান্না করছে।তাই সবাই তাকে স্বান্তনার বাণী শোনালো।”

“এদিকে নীলাদ্রির চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে আছে।কিন্তুু এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে না।ও হয়তো চোখের পানিগুলো কে জোর করে আটকে রেখেছে।হঠাৎ সবাই হাসি-মুখে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।”

“সবাই চলে যাওয়ার পর সোফায় নীলাদ্রি এবং নিহান কে একসাথে বসানো হলো।সেটা দেখে ইয়াশের মনে লাড্ডু ফুটলো।ভাবলো,’ইশশ! ওই টকটকি যদি আমার বউ হতো,তাহলে আমরাও এইরকম ঘেঁষাঘেঁষি করে একসাথে বসতে পারতাম।কিন্তুু ওই টকটকি তো আমাকে দেখলেই তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।’ভেবেই ইয়াশের মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।ভাবলো,’আজ তো টকটকির বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেলো।এতো খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।এক কাজ করি একটা প্যাকেটে করে টকটকির জন্য খাবার নিয়ে যাই।যতোই হোক বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।’ভেবেই ইয়াশ ইরার জন্য প্যাকেটে কিছু খাবার নিয়ে ঝড়ের গতিতে ওদের বাসায় গিয়ে ইরার রুমে উপস্থিত হলো।”

“রাত ১১টা বাজে।ইরা বিছানায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।এমন সময় ইয়াশ ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে অদৃশ্য হয়ে গেলো।তারপর ইরার বিছানার পাশে থাকা টি-টেবিলে আস্তে করে প্যাকেট টি রাখলো।”

“কয়েকমিনিট পর ইরা ম্যাগাজিন রেখে টি-টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো, সেখানে খাবারের প্যাকেট।ইরা তো বেশ অবাক হলো।আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ওর মনে পড়ে গেলো ওর ঘাড়ে দু’টো’ দাঁতের দা**গের কথা।ইরা ভাবলো,’ছোটবেলায় শুনেছি,জ্বীনেরা নাকি স্বপ্নে বা সামনাসামনি মজাদার খাবার দিলে সেটা খেতে হয় না।খেলে সারাজীবনের জন্য ওই মানুষটি কে জ্বীনেরা বশ করে ফেলে।এতোদিন সেটা মুখে মুখে শুনলেও আজ দেখছি বাস্তবে ঘটছে।মনে হয় আমার ওপর কোনো আশিক জ্বীনের নজর পড়েছে।তাই তো আমাকে হরেক রকমের মজাদার খাবারের লোভ দেখিয়ে বশে আনতে চাইছে।হাহাহা আমি খুব সাহসী মেয়ে আমি এই খাবারে হাত ও লাগাবো না।’মনে মনে কথা গুলো বলে।ইরা সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো,’এই যে অদৃশ্য আশিক জ্বীন।তোমার এই খাবার আমি খাবো না।তোমার খাবার তুমি খাও।আমাকে এতো সহজে পটাতে পারবেনা।’বলেই মুখ ভেং**চি কে**টে আবারও ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে পড়তে থাকলো।”

“ইয়াশ অদৃশ্য অবস্থায় ইরার কথাগুলো শুনে মন খারাপ করলো।কয়েক মিনিট পর ভাবলো, ‘যদিও দুই ঘন্টা আগেই আমি মজা করে র**ক্ত খেয়েছি।কিন্তুু এখন আমার আবারও ক্ষুধা লেগেছে।ইরা কে তো আর জোর করে খাওয়াতে পারবো না।এর থেকে ভালো আমি নিজেই খেয়ে ফেলি।’বলেই ইয়াশ টি-টেবিলে রাখা খাবারের প্যাকেট খুলে গপগপ করে নিঃশব্দে খেয়ে ফেললো।’তারপর ইরার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বাসায় চলে গেলো।”

“ইরা ম্যাগাজিন বন্ধ করে টি-টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।দেখলো খাবারের প্যাকেট পুরো ফাঁকা।ভাবলো,’জ্বীন টা কি আমার কথা শুনে সত্যি খাবারগুলো খেয়ে নিলো?হাউ ইজ ইট পসিবল?”

“ইরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত সাড়ে ১২টা বাজে।ভাবলো,’এখন নীলাদ্রি ঘুমিয়ে গেছে।আগামীকাল সকালে ফোন দিয়ে সব বলতে হবে।’ভেবেই ইরা ওর রুম থেকে বেরিয়ে;ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।”

————-
“নিহানের রুমে বিছানার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে নীলাদ্রি।মাথার দোপাট্টা দিয়ে চেহারা কিছুটা ঢাকা রয়েছে।নিহান নিজের জন্য হাতে এক গ্লাস ডুমুর ফলের জুস এবং নীলাদ্রির জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে ঢুকে;নীলাদ্রির দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো।নীলাদ্রি নিহানের উপস্থিতি টের পেয়ে, আরও গুটিসুটি হয়ে বসলো।এসির মধ্যেও নীলাদ্রি ঘেমে গিয়েছে।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে;ওর মুখের সামনে এক গ্লাস দুধ দিয়ে বললো,’এটা একটানে খেয়ে নাও।সারাদিন তোমার ওপর অনেক ধকল গিয়েছে।এটা খেলে এনার্জি ফিরে পাবে।”

“দোপাট্টা হালকা উচু করে নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,’আমার ক্ষুধা লাগেনি।আমি এটা খাবো না।”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘খাবে নাকি জোর করে খাওয়াবো?এইসব ছলাকলা এখানে চলবে না।রুটিন মতো খেতে হবে।আমার সাথে থাকতে হলে তোমার আরও শক্তির প্রয়োজন।”

“নীলাদ্রি চোখ পাকিয়ে বললো,’মানে?”

‘মানে সামনে আমাদের বাচ্চা হবে;তখন তুমি যদি হেলদি না হও,তাহলে বেবির ক্ষতি হবে।’

“নীলাদ্রি নিহানের কথা শুনে কটমটিয়ে বললো,’আপনাকে আমি স্বামী হিসাবে মেনে নিলেতো বাচ্চা হবে!”

‘হাহাহা আমি অলরেডি তোমার স্বামী হয়ে গেছি,এখন তোমার মানা না মানায় আমার কিছুই আসে-যায় না।তুমি নিজের ইচ্ছেতে এই বিয়েতে রাজি হয়েছো নীলাঞ্জনা।’

“নিহানের এহেন কথায় তেঁতে উঠলো নীলাদ্রি।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’আমি মোটেও আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হই নি।আপনি আমার মা কে আর আমাকে হু**মকি দিয়ে রাজি করিয়েছেন।আর এখন এতো বড় মিথ্যা কথা কিভাবে বলছেন আপনি?”

“নিহান মুচকি হাসলো।কারণ,নীলাদ্রির রাগী মুখ খানা দেখার জন্যই কথাটা বলেছে।ভেবেই নীলাদ্রির কাছে এসে ওর দুই বাহু ধরে বললো,’তোমার সাথে এইসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছে আমার নেই।আজ রাত কে বলা হয়, ‘সোহাগ রাত।’আজ রাতে আমি তোমায় আদর-সোহাগে ভরিয়ে দেবো।আজ রাত আমাদের জন্য স্পেশাল রাত।তাই অযথা বকবক করে সময় নষ্ট করো না।এখন তোমাকে আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।তোমাকে কথাগুলো না বললে আমার এবং তোমার দু’জনের জন্যই সমস্যা হবে।তাই আমার কিছু কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে।’বলেই নীলাদ্রির কাঁধে হাত দিতেই;নীলাদ্রি বিছানা থেকে নেমে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,’খবরদার আমার গায়ে হাত দিবেন না।”

“নিহান এইবার রে**গে গিয়ে নীলাদ্রির দিকে তার লাল চোখ জোড়া দিয়ে তাকালো।তারপর ওর হাত ধরে কঠোর কন্ঠে বললো,’সমস্যা কি তোমার?আমার কথা শুনছো না কেনো?আজ তোমাকে আপন করে নিতে চাইছি।আর তুমি বারবার বাঁধা দিচ্ছো কেনো?”

“নীলাদ্রি নিহানের আচরণে বুঝে ফেললো, যে নিহান যেটা বলছে সেটা না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না।কিন্তুু নীলাদ্রি তো কখনোই রাজি হবে না; তাই নীলাদ্রির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,’ আসলে প্রতিমাসে মেয়েদের যেই সমস্যা টা হয়;আমারও আজ সেই সমস্যা হয়েছে।প্লিজ এখন কিছু করবেন না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’কি বলছো তুমি?তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু এনেছো?নাকি আমি এনে দেবো?”

” নীলাদ্রি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললো,’হুমম সবকিছু এনেছি।এখন একটু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো।হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”

“নিহান চাইলে তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রি সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা কথা বলছে;সবকিছু জানতে পারতো।কিন্তুু, নীলাদ্রির করুণ চাহনি দেখে নিহান আর কিছুই বললো না।সে নীলাদ্রির হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে ঘুমাবে।ভুলেও নিচে ঘুমাতে যাবে না।এইসব মেলোড্রামা আমার পছন্দ নয়।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’আপনার পাশে ঘুমালে সমস্যা নেই।আপাতত এতো বড় বিপদের হাত থেকে তো রক্ষা পেলাম; এতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।”ভেবেই নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে, ওর ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রায় ১ঘন্টা পর নীলাদ্রি ফ্রেশ হয়ে বের হলো।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান চোখ বন্ধ করে আছে।নীলাদ্রি ভাবলো নিহান ঘুমিয়ে গেছে।ভেবেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।নীলাদ্রি তোয়ালে দিয়ে ওর চুলগুলো মুছতে মুছতে বেলকনির দিকে গেলো।কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মন ভরে নিঃশ্বাস নিলো নীলাদ্রি। তারপর রুমে ফিরে এসে নিহানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’মানুষ এতো সুন্দর কিভাবে হয়?”

“এই পৃথিবীতে সবাই সুন্দরের পূজারী।রাস্তা-ঘাটে কোনো সুন্দর নারী বা পুরুষ দেখলে একবার না একবার নজর পরবেই।সেটা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক।অনেকে বলে, যার মন সুন্দর সেই প্রকৃতপক্ষে সুন্দর।এই কথাটা ১০০% সঠিক।কিন্তুু প্রতিটি মানুষ কিন্তুু প্রথমে সৌন্দর্য দেখেই প্রেমে পরে।কারণ প্রথম দেখায় কারো মন পড়া যায় না।একসময় ধীরে ধীরে সেই মানুষটি বিপরীত দিকের মানুষটিকে পছন্দ করতে শুরু করে।”

“আমরা অনেকেই গায়ের রং ফর্সা হলেই, তাকে সুন্দরের উপাধি দেই।কিন্তুু এটা সম্পূর্ণ ভুল।শ্যামলা বা কালো রঙের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও অনেক সুন্দর চেহারা আছে।যেটা আমাদের চোখে পড়ে না।মূলত ফর্সা হলেই তাকে সুন্দর বলা উচিত না।যদি বাহ্যিক ভাবে কোনো ব্যক্তির সৌন্দর্য বর্ননা করা হয়,তাহলে অবশ্যই ব্যক্তিটির চেহারার গঠন সুন্দর হতে হবে।যেমন,নিহানের জোড়া ভ্রুর নিচে চোখ
দুটো ভাসা ভাসা,চোখের পাপড়িগুলো বেশ কালো এবং ঘন,সরু নাক,হালকা লাল রঙের পাতলা ঠোঁট জোড়া দেখলেই একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।সেই সাথে তার সিক্স প্যাক বডি ;সব মিলিয়ে একদম ‘প্রিন্স চার্মিং’ বলা যায়।”

“নীলাদ্রি খেয়াল করলো, বেলকনি থেকে আসা চাঁদের আলো সরাসরি নিহানের মুখের ওপর পড়ছে।এইমুহূর্তে নিহান কে চাঁদের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না।নীলাদ্রি আরেকটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলো, ‘নিহানের মুখে চাঁদের আলো পড়াতে নিহানের সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।মনে হয় নিহান চাঁদের আলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে।”

“নীলাদ্রির ভাবনাটি সঠিক হলেও,অবুঝ মেয়েটি বিষয়টি নিয়ে ভাবলো না।কারণ সে জানেনা, যে ভ্যাম্পায়ার রা চাঁদের আলো থেকে শক্তি আহরণ করে।”

“নীলাদ্রি এভাবে কিছুক্ষণ নিহান কে নিয়ে ভাবার পর, বেলকনি থেকে নিচে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে ওর ধ্যান ভাঙলো।নীলাদ্রি দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে কেউ নেই।হঠাৎ নীলাদ্রি বেলকনি থেকে নিচে তাকাতেই দেখলো,’একটা কুচকুচে কালো বিড়াল দৌড়ে নিহানদের বাগানের দিকে গিয়ে চোখের পলকেই আড়াল হয়ে গেলো।এটা দেখে নীলাদ্রি তো ভ**য়ে শেষ।এতো রাতে আবছা অন্ধকারে ওইরকম একটি কালো বিড়াল কে দৌড়াতে দেখলে;যে কারো হার্টবিট বেড়ে যাবে।নীলাদ্রি ছোটবেলা থেকেই হরর মুভি থেকে ১০ হাত দূরে থাকে।নীলাদ্রি ওর বাবার সাথে মাঝে মাঝে যখনই হরর মুভি দেখতো,’তখনই ও আর ওয়াশরুমে যেতে পারতো না।ভাবতো, ভেন্টিলেটর দিয়ে ভূত ওকে দেখবে।নীলাদ্রির এই ভ**য় কাটতেই এক সপ্তাহ লেগে যেতো।”
“নীলাদ্রি আর কিছু ভাবতে পারলো না।দৌঁড়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে কাঁপতে লাগলো।অপরদিকে সেই কালো বিড়াল টি গাছের আড়াল থেকে মানুষের চেহারার আকৃতি ধারণ করে বি**দ*ঘু**টে হাসি দিলো।”

“নীলাদ্রি বিছানায় আসতেই নিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।ভ্যাম্পায়ার রা সাধারণত কম ঘুমায়।২৪ঘন্টার মধ্যে ওরা মাত্র ২-৩ঘন্টা ঘুৃমায়।নিহানের ঘুম এখন পুরোপুরি ভেঙে গেছে।নিহান নীলাদ্রি কে এভাবে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ওর কাছে এগিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রির শরীরে পুরুষালী ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই,নীলাদ্রি ভ**য়ে যেই না চি**ৎকার দিতে যাবে;তখনই নিহান ওকে ঘুরিয়ে ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিলো।প্রায় ৫মিনিট পর নিহান নীলাদ্রি কে ছাড়লো।”

“নীলাদ্রি মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য ট্রমায় চলে গিয়েছিলো।নিহান তার ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া দিয়ে নীলাদ্রির ঠোঁট এতো জোরে চেপে ধরেছিলো, যে নীলাদ্রির ঠোঁট র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।নীলাদ্রি ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নীলাদ্রির ওই ঠোঁট জোড়া দেখে নিহানের আবারও নেশা ধরে গেলো।নীলাদ্রি কে কিছু ভাবতে না দিয়েই আবারও নিহান ওর ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।এইবার আর নীলাদ্রি সহ্য করতে পারলো না।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিহান কে ধা**ক্কা দিলো।কিন্তুু, নিহান কে এক বিন্দুও নড়াতে পারলো না।কারণ,নিহান একজন মানুষ রূপী শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার।নীলাদ্রির শক্তি ওর কাছে পিঁপড়া দৌড়ানোর মতো লাগছে।এভাবে প্রায় ১০মিনিট ধ**স্তা*ধ**স্তি করার পর নিহান নীলাদ্রি কে ছাড়লো।”

“নীলাদ্রি তো রে*গে*মে*গে ফা**য়ার হয়ে গেলো।নিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঁ**ঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,’মেয়ে মানুষ দেখলেই শুধু গায়ে পড়তে মন চায়?যান না যান ওই প**তি**তালয়ে যান।সেখানে আমার থেকেও অনেক রূপবতী কা**মুক নারী পাবেন।তার ওপর গিয়ে, আপনার ওই বরফের মতো ঠোঁট দিয়ে মন ভরে নির্যাতন চালাবেন।একদম আমার ধারে-কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না।তাহলে কিন্তুু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।’অতিরিক্ত রে**গে গিয়ে নীলাদ্রি মনে হয় ওর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তাই নিহান কে একাধারে কথাগুলো বলে সাপের মতো ফোঁ*স**ফোঁ*স করছে নীলাদ্রি।”

“এদিকে নীলাদ্রির মুখে প**তি**তালয়ে যাওয়ার কথা শুনে নিহানের তো মাথা ১০০ তে ১০০ গরম হয়ে গেলো।অতিরিক্ত রেগে গিয়ে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করতে লাগলো।নীলাদ্রি নিহানকে এভাবে গ**র্জন করতে দেখে খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রির দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে থেকে ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে; পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘তুমি আমায় প**তি**তালয়ে যাওয়ার কথা কেনো বললে?হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়ট?আমি শুধু তোমার,বুঝেছো তুমি?আমার হাত তোমার শরীরের সর্বাঙ্গে বিচরণ করার অধিকার আমার আছে।তুমি কি ভেবেছো, তোমার এইসব
নোং**রা কথা শুনে তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো?হাহাহাহা কখনোও না।তুমি আমার বহু যুগের সাধনা।ভালোবাসি তোমায়;পা**গলের মতো ভালোবাসি।এই কেনো তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে চাও না?আমি এতো যুগ যুগ ধরে তোমার জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি;কিন্তুু তুমি দেখছি তার কোনো মূল্যই দিচ্ছো না।অবশ্য ভালোবাসার কোনো মূল্য হয় না।তবে আজ রাতে তোমাকে মূল্য দিতে হবে।’বলেই নীলাদ্রি কে কোলে করে ঝড়ের গতিতে ছাদে নিয়ে গেলো।”

“পূর্নিমা রাতে চাদের আলো এইবার দুইজন কপোত-কপোতীকে ঘিরে ধরেছে।চাঁদের আলো পড়তেই, নিহানের মুখস্রি আগের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে গেলো।নিহান কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো।চাদের আলো থেকে শক্তি গ্রহণ করার পর; নিহানের মাথা কিছুটা ঠান্ডা হলো।তারপর নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে ওর পেটে হালকা করে স্লাইড করতে করতে বললো,’এই ব্লু কালার নাইটি তে তোমায় অসাধারণ লাগছে নীলাঞ্জনা।খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু তুমি তো অসুস্থ; তাই তখন তোমাকে একটু লিপ কিস করেছিলাম।কিন্তুু তুমি কি করলে?আমাকে উল্টা-পাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দিলে।”

“এদিকে নিহানের কথাগুলো মনে হয় নীলাদ্রির কানেই ঢুকছে না।ও তো একটু আগে নিহানের ঘাড় কাত করে ভ**য়ং**কর দৃষ্টিতে তাকানোর কথা ভুলতেই পারছেনা।”

“নীলাদ্রির আতং**কিত চেহারা দেখে নিহান তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ওর মনের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলো।আর সফলও হলো।নিহান বুঝতে পেরেছে, নীলাদ্রি তার আচরণে বেশ ভ**য় পেয়ে গেছে।”

“নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’তোমাকে আরও ভ**য় পেতে হবে।একটু আগে যেই বা**জে কথাটি বলেছো,তার জন্য তোমাকে সারা রাত লাভ টর্চার করা হবে নীলাঞ্জনা।’ভেবেই নিহান নীলাদ্রির নাইটির ফাক গলিয়ে তার হাত নীলাদ্রির পুরো পেটে বিচরণ করতে থাকলো।ধীরে ধীরে নিহানের ঠান্ডা হাত নীলাদ্রির পেটের ওপরে উঠতেই নীলাদ্রি খপ করে তার হাত ধরে ফেললো।’অনুনয়ের সুরে বললো,’প্লিজ আপনি আমার সাথে এখন কিছু করবেন না; আমি প্রস্তুত নই।”

“নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’এইজন্যই তো তোমায় এভাবে স্পর্শ করছিলাম।এখন খেলা জমবে।’ভেবেই নীলাদ্রির পেট থেকে হাত সরিয়ে ওর গালে আলতো করে
হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,’সুইটহার্ট আজ সারা রাত আমরা এই ছাদে পূর্নিমার চাঁদ গায়ে মাখবো।আর তুৃমি সারা রাত ঘুমাতে পারবে না।আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।ভুলেও যদি দু’চোখের পাতা এক করেছো,তাহলে তোমার কোনো বাঁধা আমি শুনবো না।”

“নিহানের এহেন কথা শুনে নীলাদ্রি পড়লো বিপাকে।ভাবলো,’আমি তো এমনিতেই ঘুম কাতুরে।তার ওপর সারাদিন যে পরিমাণে ধকল গিয়েছে। আমি কিভাবে সারা রাত জেগে এই তার-ছেঁড়া সাইকোটার দিকে তাকিয়ে থাকবো?অবশ্য সাইকোটা যেই সুন্দর। দেখলেও মন ভরে না।তবুও এই লোক আমার জীবন নষ্ট করেছে।কিছুতেই আমি তার কথা শুনবো না।’পরক্ষণেই ভাবলো,’যদি লোকটা আমার অসুস্থতার ব্যাপারে মিথ্যা বলা টের পেয়ে যায়,তাহলে তো আমি শেষ।নাহ যতো কষ্টই হোক আজ আমায় এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।আচ্ছা সাইকোটার কি চোখে ঘুম নেই?যেভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে মনে হয় নিশাচর প্রানী।ইতর,নির্লজ্জ,বেহায়া লোক।মনে মনে এইরকম অসংখ্য গালি নিহান কে দিয়ে নীলাদ্রি অসহায় মুখ করে বললো,’দেখুন আমি ঘুমাতে খুব ভালোবাসি।আমি বেশি হলে আর মাত্র এক ঘন্টা কষ্ট করে জেগে থাকতে পারবো।কিন্তুু, তারপর চোখ তো আর আমার কন্ট্রোলে থাকবে না।এক কাজ করবেন,আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনি আমার চোখ দুটোকে আঙুল দিয়ে খুলে রাখবেন।”

“নিহান এতক্ষণ তার পাওয়ার দিয়ে নীলাদ্রির মনের কথাগুলো শুনে অন্যদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো।যখন শুনলো,নীলাদ্রি সারা রাত জাগতে পারবে না; তখনই নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘যখনই দু’চোখের পাতা এক করবে,তখনই ফুলসজ্জা হয়ে যাবে।তখন চাইলেও আমায় ফেরাতে পারবে না।”

“নিহানের হুমকি মূলক বানী শুনে নীলাদ্রি অসহায় মুখ করে মাথা নেড়ে বললো,’ওকে।আমি সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।”

‘নিহান মুচকি হেসে বললো, ‘ইওর টাইম স্টার্ট’স নাউ।’

“নীলাদ্রি কিছুক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।নিহান ও অপলক দৃষ্টিতে তার প্রিয়তমা কে দেখতে থাকলো।নিহান এমন ভাবে নীলাদ্রি কে দেখলো,যেনো ওর আপাদমস্তক কোনো ফিতা দিয়ে ইঞ্চি ইঞ্চি করে মাপছে।নীলাদ্রি তো খুব অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো।এভাবে ২ঘন্টা কাটার পর, নীলাদ্রি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।নিহানের বুকে আপনা-আপনি ঢোলে পড়লো।নিহান ঘুমন্ত নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আবারও তার ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া এমন মিলিয়ে দিলো।মনে হয়,যেনো কতো যুগের না পাওয়ার তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো।”

——————-
“সকাল ৭টা থেকে ইরা নীলাদ্রির নাম্বারে ক্রমাগত কল করে যাচ্ছে।কিন্তুু নীলাদ্রি ফোন রিসিভ করলো না।কারণ নীলাদ্রি ওর ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।আর বর্তমানে নীলাদ্রি এখন নিহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”

“এদিকে ইরা নীলাদ্রি কে ফোনে না পেয়ে ওদের বাসার দিকে ছুটলো।নীলাদ্রির বাসার দরজায় আসতে দেখলো, দরজায় বড় একটা তালা ঝুলানো।ইরা বেশ হতাশ হয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে রওনা দিলো।ভাবলো,’নীলাদ্রি বান্দরনি কে একবার পাই; তখন ওর চুল ছিড়বো।আমাকে বিপদে রেখে কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?’ভাবতে ভাবতেই ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলো।ইরা ক্লাসে ঢুকে দেখলো এহতিশাম আর ইয়াশ এসেছে।কিন্তুু আজ নিহান আসে নি।ইরা বেশ অবাক হলো।তারপর ইরা পেছনের বেঞ্চ ফাঁকা পেয়ে সেখানেই বসে পড়লো।এহতিশাম মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে।আর ইয়াশ মনযোগ দিয়ে ইরা কে দেখছে। ৩টা ক্লাস হওয়ার পর, টিফিন পিরিয়ডে সবাই ক্যান্টিনের দিকে ছুটলো।নীলাদ্রি না থাকায় ইরার খুব মন খারাপ ছিলো।তাই ও গাল ফুলিয়ে বেঞ্চে বসে রইলো।”

“ইরা কে ক্লাসে একা দেখে, ইয়াশ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।ইয়াশ গুটিগুটি পায়ে হেঁটে গিয়ে ইরার পাশে বসে বললো,’হাই টকটকি।”

“নির্জন ক্লাসে ইয়াশের কন্ঠ পেয়ে, ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ইয়াশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এই ছেলে এভাবে কেউ কাউকে ভ**য় দেখায়?”

“কই আমি তোমাকে ভ**য় দেখালাম?আমি তোমায় শুধু ‘টকটকি’ বলে ডেকেছি।আচ্ছা শোনো, আমি গতকাল সারা রাত জেগে তোমার জন্য একটা কবিতা বানিয়েছি।আমি জানি, তুমি গান খুব পছন্দ করো।তাই কবিতাটি তোমায় গানের সুরে শোনাতে চাই।”

“এই তীব্র গরমে ইয়াশের কথা শুনে ইরার শরীরে আরও গরম লাগতে শুরু করলো।ইরা ভাবলো,’দেখি মটু টা আমার জন্য কি এমন কবিতা বানিয়েছে!এমনিতেই মনটা খুব খারাপ।এই মটুর কবিতা শুনে মন টা যদি একটু ভালো হয়।’ভেবেই ইরা ওর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বললো,’আচ্ছা শোনান আপনার গানের সুরে কবিতা।”

“ইয়াশ হাসি মুখে শুরু করলো,

“ওগো আমার ইরাবতী
তোমার প্রেমে পাগল আমি,
তুমি কি জানো না তা?
আমার কথা অবিশ্বাস করলে
কেটে ফেলবো তোমার পা,

রাত-বিরেতে ঘুরে আমি
জীব-জন্তুুর র**ক্ত খাই,
এই পৃথিবীর বিনিময়ে
তোমায় আমি চাই।”

ক্রেডিট বাই ~মেহের আফরোজ~

———
“ইরা ইয়াশকে গানের সুরে কবিতা বলতে বলে,বোতলের ছিপি খুলে সবেমাত্র পানি খাচ্ছিলো।ইয়াশের মুখে এমন গান শুনে ইরা বিষম খেলো।তাই শেষের ৪ লাইন শুনতে পেলো না।ওর কাশি উঠে গেলো।ইরাকে কাশতে দেখে,ইয়াশ ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশের স্পর্শ পেয়ে;ইরা বি**স্ফো**রিত নয়নে ইয়াশের দিকে তাকালো।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে