ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৫+৬

0
285

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]

“ইয়াশের কথা শুনে নিহান তার ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা র**ক্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে, সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনে ক্লাস শেষ হলে ইউনিভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।নীলাদ্রি ফুচকাওয়ালা কে বলছিলো,’মামা আজকের তেঁতুল টা মনে হয় অন্য তেঁতুলের থেকে একটু বেশি টক,তবে খেতে বেশ ভালো লাগছে।ফুচকাওয়ালা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললো,’হুম।আজকে আপনাদের ক্যাম্পাসের একজন ছেলে এই তেঁতুল গুলো দিয়ে বলেছে, আপনাদের যেনো এই তেঁতুলের টক বানিয়ে দেই।”

“নীলাদ্রি তো বেশ অবাক হলো।কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কে দিয়েছে?আপনি কি তাকে চেনেন?”

” ফুচকাওয়ালা বললো,’উমমম ছেলেটার নাম জানি না।তবে দেখলে চিনতে পারবো।ছেলেটার গায়ের রং বিদেশীদের মতো ফর্সা।আর বেশ লম্বা-চওড়া।”

“ইরা নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’বুঝেছি তোর আশিক দিয়ে গেছে।সে তো আবার তোর ব্যাপারে সবকিছু জানে।”

“নীলাদ্রি বাকি ফুচকাগুলো না খেয়ে, দোকানদার কে টাকা দিয়ে চলে গেলো।ইরাও নীলাদ্রির পেছনে এসে বলতে থাকলো,’আমার মনে হয় এই ছেলেটা তোকে অনেক আগে থেকেই চেনে।নইলে, এতোটা জোর দিয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।”

“নীলাদ্রি ইরাকে বললো,’হুম ঠিকই বলেছিস।আর নিহান যে আমাকে অনেক পছন্দ করে, সেটাও আমি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।নইলে, বারবার কেনো এতোটা অধিকার খাটিয়ে কথা বলবে।তবে আমি সেইম এইজ রিলেশনে বিশ্বাসী নয়।”

“ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কেনো?সেইম এইজ রিলেশনশিপকে তো আজকাল বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।সমবয়সীরা একে-অপরের মনের কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে।যেটা বয়সের গ্যাপ হলে বুঝতে পারে না।আমি তো সেইম এইজ রিলেশনশিপ বেশি পছন্দ করি।”

“নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’তুই ঠিক বলেছিস।সেইম এইজে রোমান্স, একে-অপরকে বুঝতে পারা এগুলো ঠিক থাকলেও স্যাক্রিফাইস টা থাকে না।যেটা বয়সের ডিফারেন্স হলে থাকে।বেশিরভাগ সমবয়সী প্রেমিক-প্রেমিকারা একে-অপরকে কথায় কিভাবে হারাবে,হেয় করবে সেই চিন্তা করে।অবশেষে তার শেষ পরিণতি হয় ব্রেকআপ বা ডিভোর্স। কিন্তুু বয়সের ডিফারেন্স হলে যেকোনো একজন স্যাক্রিফাইস করে।আর তাদের বেশিরভাগ কাপলগুলো বাহির থেকে দেখতে বেমানান মনে হলেও,ঘরের ভেতরে তারা খুব সুখে-শান্তিতে দিন কাটায়।আমি মনে করি ভালোবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।একে-অপরকে স্যাক্রিফাইস না করলে সেই সম্পর্ক কখনোও সুখের হয় না।”

“নিহান কে দেখলে তো মনে হয় আমাদের থেকেও ছোট।ওর স্কিন দেখেছিস?কতোটা ফ্রেশ।আমাদের দেশের ছেলেদের স্কিন এতোটা ফ্রেশ নয়।একটু হলেও স্পট থাকবে।নিহান কে দেখলে মনে হয়, তার বয়স ২০বছরের বেশি হবে না।যদিও আজকাল যুগের ছেলেদের দেখলে বয়স বোঝা যায় না।নিহানকে আমার অপছন্দ নয়;তবে তার সাথে রিলেশনশিপ সম্ভব না।আমার এইসব সমবয়সীদের ঝ**গড়াঝা**টি একদম পছন্দ নয়।এখন হয়তো, আমার কথা শুনে একদল সময়বয়সী রোমান্টিক কাপল এসে আমাকে রামধো**লাই দিবে।কিন্তুু, আমি কথাটা সবাইকে বলিনি।সবাই এক নয়।তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মতামত হলো, আমি যদি কাউকে বিয়ে করি; সে আমার থেকে কমপক্ষে ৫-৬বছরের বড় হতে হবে।এর থেকে বড় হলেও সমস্যা নেই।”

“এতক্ষণ ইরা নীলাদ্রির কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলো।নীলাদ্রির কথা শেষ হতেই ইরা বললো,’সৃষ্টিকর্তা যদি তোর ভাগ্যে সমবয়সী একজন কে লিখে রাখে তাহলে কি করবি?”

‘তাহলে আর কি করার মেনে নেবো।সৃষ্টিকর্তা যেটা করেন, বান্দার ভালোর জন্যই করেন।’

“ইরা ফিচেল হেসে বললো,’সত্যি গুরুমা আপনার থেকে এই জ্ঞানের বাণী আহরণ করতে পেরে, আমার জীবন ধন্য হলো।এই শিষ্য কে আপনি দোয়া করে দিন, যেনো আপনার মতো হতে পারি।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।”

———
“বাসায় গিয়ে নীলাদ্রি দেখলো, ওদের ডাইনিং রুমে দুইজন মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা দাঁড়িয়ে সিতারা বেগমের সাথে কথা বলছে।”

“নীলাদ্রিকে দেখে শায়লা বেগম এগিয়ে এসে মিষ্টি করে হেসে বললেন,’বাহ!মামনি তুমি তো দেখছি ন্যাচারাল বিউটি।এইজন্যই তো আমার ছেলে নিহান তোমাকে এতোটা ভালোবাসে।”

“শায়লা বেগমের মুখে নিহানের নাম শুনে, নীলাদ্রি মনে হয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।নীলাদ্রি ইমতিয়াজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে নিহানের বাবা।সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে বললেন,’নীলাদ্রি মা তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর।আর তারা তোকে দেখতে এসেছে।তাদের ছেলের নাকি তোকে খুব পছন্দ হয়েছে।তাদের ছেলে নিহান একটি ভালো কোম্পানি তে চাকরি করে।নিচু স্বরে সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে কথা গুলো বললেন।”

” নীলাদ্রি সিতারা বেগম কে কিছু না বলেই, চুপচাপ ওর রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে নীলাদ্রি আরেকদফা অবাক হলো।দেখলো, ওর বিছানার এক কোণে নিহান বসে আছে।নীলাদ্রি ভেতরে ঢুকতেই নিহান উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’নীলাঞ্জনা এতক্ষণ বাইরে কি করছিলে?তোমার জন্য কতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি, সেটা কি তোমার জানা আছে?’নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,’আপনি আপনার বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় কেনো এসেছেন?”

“নিহান বাকা হেসে বললো,’উফফ এতো ন্যাকা সাজো কেনো তুমি?একটু আগেই তো আন্টি তোমাকে সবকিছু বললো।তবুও আমার মুখ থেকে আবারও শুনতে ইচ্ছে করছে বুঝি?ওকে বুঝিয়ে বলছি,’আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য এসেছি।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি এই বাসা থেকে বের হবে না।আমাদের আগামীকাল বিয়ে হবে।তারপর আমরা হানিমুনে যাবো।তারপর তুমি ইউনিভার্সিটিতে যাবে।”

“নিহানের মুখে বিয়ের কথা শুনে নীলাদ্রি মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।ভাবলো, ‘একটু আগেই তো ইরা কে বড় বড় ডায়লগ ছেড়ে আসলাম।এখন যদি ইরা জানতে পারে, আমি নিহান কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তাহলে ও তো আমায় পঁচা নালায় ডুবিয়ে মা**রবে।’ভেবেই নীলাদ্রি নিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘দেখুন আমি সবসময় সরাসরি কথা বলতে পোছন্দ করি। তাই আপনাকে বলছি,এই বিয়ে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।কারণ,আমি সেইম এইজ রিলেশনশিপ বা বিয়ে পছন্দ করি না।আপনি আর আমি যেহেতু সমবয়সী তাই আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর চুলের খোপা খুলে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো।নীলাদ্রি হঠাৎ এইরকম হওয়াতে চমকে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে তেজি স্বরে বললো,’এটা কি ধরণের অ**সভ্যতা হচ্ছে?আপনি আমার রুমে এসে আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস পেলেন কিভাবে?এখুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।”

“নিহান এইবার নীলাদ্রির হাত ধরে ওকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ওর কাঁধে চিবুক রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’তোমার শরীরের সেই ঘ্রাণ এখনোও আগের মতোই আছে,শুধু বদলে গেছে তোমার মন-মানসিকতা।আমি চাইলে এখনই তোমাকে আপন করে নিতে পারি,সেই অধিকার আমার আছে।কিন্তুু, কিছু তিক্ত নিয়মের কারণে তোমার থেকে আমার এতোটা দূরত্বে থাকতে হচ্ছে। তবে চিন্তা করো না বিয়ের রাতেই তোমাকে নিজের করে নেবো।আর কখনোও তোমায় হারিয়ে যেতে দেবো না নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের কোমল স্বরে কথাগুলো শুনে, নীলাদ্রির শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।নীলাদ্রির নিঃশ্বাস ক্রমাগত ঘন হতে লাগলো।নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ে ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো।এই মুহূর্তে নিহানের নীলাদ্রির ঘাড়ে বা**ইট করতে ইচ্ছে করছে।ওর ভ্যাম্পায়ার সত্তা যেনো আবার নতুন করে জেগে উঠছে।কিন্তুু, নীলাদ্রি যে ওর সাধনা।কিভাবে তার ঘাড় থেকে সে র**ক্ত শুষে নিবে।কিন্তুু নিহানের যে খুব র**ক্তের তৃষ্ণা পেয়েছে।নিহান যেই র**ক্ত পছন্দ করে সেই র**ক্তই নীলাদ্রির শরীরে বইছে।নীলাদ্রির র**ক্তের গ্রুপ B+ পজিটিভ।এটা নিহানের প্রিয় র**ক্ত।তার অন্যতম কারণ হলো,’ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, B+পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের প্রাণীর মস্তিষ্ক ভীষণ তীক্ষ্ণ হয়।তাদের চিন্তা ও বুঝতে পারার সক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো হয়ে থাকে।তাদের পেরিটোনিয়াল এবং টেম্পোরাল লোব বেশি সক্রিয় হয়ে থাকে।সেই সঙ্গে তাদের স্মৃতিশক্তিও বেশ প্রখর হয়ে থাকে।’
নিহান বিভিন্ন ব্লাডগ্রুপ নিয়ে পড়াশোনা করে এই বিষয়ে জেনেছে।তখন থেকেই এই র**ক্ত তার ভীষণ প্রিয়।যদিও নিহান অন্য গ্রুপের র**ক্ত ও পান করে।”

“নীলাদ্রি কে সে যতোই ভালোবাসুক না কেনো,তার অস্তিত্বে ভ্যাম্পায়ারের বসবাস। সে কোনোভাবেই তার অভ্যাসগুলোকে পরিবর্তন করতে পারবেনা।কারণ, এটা যে তার অস্তিত্বে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।যদিও নিহান মানুষের র**ক্ত খুব একটা পান করে না।কারণ,মানবজাতি কে ওর কাছে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী মনে হয়।কিন্তুু পশুর র**ক্ত নিহান প্রতিনিয়ত পান করে।নিহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রিদের বেলকনির ওপর একটি দোয়েল পাখি বসে আছে।নিহান পাখিটির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে,ঝড়ের বেগে গিয়ে পাখিটিকে ধরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খেয়ে ফেললো।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ ওর চোখজোড়া বন্ধ করে অজানা অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলো।ওর এই অনুভূতির কারণ ও নিজেও জানেনা।নীলাদ্রি অনুভব করলো নিহান ওর কাছে নেই।ও চোখজোড়া খুলতেই দেখলো, নিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে লেগে আছে হাসির ঝলক।নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি বেলকনিতে কি করছেন?”

“নিহান মুচকি হেসে ওর কাছে এসে বললো,’কেনো তোমার শরীরে আমার করা স্পর্শ ভালো লাগছিলো বুঝি?আবার করবো?”

“নিহানের মুখে ঠোঁটকা**টা টাইপ কথা শুনে নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,’এই ছেলে আপনি এতো নি**র্লজ্জ কেনো?মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,কিছুই দেখি জানেন না।আপনাকে আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার সাথে বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করলে কিন্তুু খুব খারাপ হবে।আমি রেগে গেলে কতোটা ডে**ঞ্জারাস হতে পারি,সেটা আপনার ধারণারও বাইরে।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর হাত ধরে, হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বললো,’আজকের দিনটা ভালো করে এনজয় করে নাও।আগামীকাল থেকে সবকিছু আমার কথামতো চলবে নীলাঞ্জনা।আর শোনো আমি তোমার সমবয়সী নই।আমি তোমার থেকে ৫বছরের বড়।’বলেই নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।নীলাদ্রি ড্যাবড্যাব করে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ক্ষনিকের জন্য ওর মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নীলাদ্রি ড্যাবড্যাব করে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ক্ষণিকের জন্য ওর মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো।”

“নিহান নীলাদ্রির রুম থেকে বের হওয়ার পর ডেভিল হেসে ভাবলো,’আমার সত্যিকারের বয়স জানলে,এইমুহূর্তে তুমি হয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতে; তাই তোমার কাছে বয়স টা লুকিয়ে রাখলাম।তবে একসময় সত্যি আমি তোমার থেকে ৫বছরের বড় ছিলাম।আফসোস!তুমি সব ভুলে গেছো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ,শায়লা বেগম এবং নিহান সিতারা বেগমের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো।তাদের বিদায় দিয়ে সিতারা বেগম চোখের পানি মুছে নীলাদ্রির রুমে গিয়ে দেখলেন, নীলাদ্রি বিছানায় বসে বেলকনির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”

“সিতারা বেগম তার মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন।তিনি নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে বললেন,’নীলাদ্রি তুই এখনোও ফ্রেশ হোস নি কেনো?”

“নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,’মা আমি এই বিয়েতে রাজি না।তুমি আমার সম্মতি ছাড়া কেনো ওদের কে মতামত জানিয়েছো?”

“সিতারা বেগম অশ্রুভেজা নয়নে বললেন,’একদিন তো সব মেয়েকেই শশুর বাড়ি যেতে হবে।তাছাড়া তোর বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়েছে।তোর বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আরও আগেই তোকে বিয়ে দিতো।আর নিহান ছেলেটাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে।ওর সাথে বিয়ে হলে তুই খুব সুখী হবি মা।”

“নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’তাই বলে হুট করে আগামীকাল কেনো বিয়ে হবে?তাদের সম্পর্কে তুমি কতোটুকু জেনেছো?তাদের বাসায় গিয়েছো তুমি?তাদের বাসার আশেপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়েছো?নাহ!তুমি কিছুই জানো না।আমার তো মনে হচ্ছে, আমি তোমার কাছে বোঝা হয়ে গেছি।তাই আমাকে একজন অচেনা অজানা লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে তোমার ঘাড় থেকে বোঝা নামাতে চাইছো।”

“সিতারা বেগম নিজের চোখের জল আর দমিয়ে রাখতে পারলেন না।তিনি কান্না করে নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বললেন,’তুই কখনোই আমার কাছে বোঝা নয় নীলাদ্রি।আমি সবসময় তোর ভালো চাই।আমার কাছে আমার এবং তোর সম্মান টা সবচেয়ে বড়।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এই বাসায় তুই আর আমি একা থেকেছি।আজ পর্যন্ত আমাদের কেউ খারাপ কথা বলতে পারে নি।আমি চাই না সামনেও এই নিয়ে কেউ আমাদের আজেবাজে কথা বলুক।দয়া করে আমার থেকে এখন কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবি না।নিহানের সাথে বিয়ে হলে ধীরে ধীরে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।’বলেই সিতারা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণে বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, যে নিহান এবং তার পরিবার নিশ্চয়ই ওর মা কে ভ**য় দেখিয়েছে।নীলাদ্রি যথেষ্ট প্রতিবাদী মেয়ে।অন্যায়ের কাছে সে কখনোই মাথা নত করে না।কিন্তুু, এই মুহূর্তে তার প্রতিবাদী রূপ জাগ্রত হলে সিতারা বেগমের ক্ষতি হতে পারে।কারণ,নীলাদ্রি নিহানের বাবা-মায়ের বেশভূষা দেখে বুঝতে পেরেছে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি।’ভেবেই নীলাদ্রি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।নীলাদ্রি বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।নিহান কে ও কিছুতেই বিয়ে করবে না।ও নিহান কে পছন্দ করলেও, বিয়ে করার জন্য কখনোই পছন্দ করেনি।তাছাড়া নিহানের খাপছাড়া স্বভাব নীলাদ্রির বরাবরই অসহ্য লেগেছে।নিহান ছেলে হিসেবে সুদর্শন।তবে সুদর্শন হলেই যে তাকে বিয়ে করতে হবে, এমন কোনো কথা নয়।কারণ,নিহানের আচরণ গুলোতে নীলাদ্রির মনে হয়েছে ছেলেটা মানসিকভাবে অসুস্থ।নইলে এভাবে কেউ কাউকে জোর করে বিয়ের জন্য মানসিক টর্চার করতে পারে না।তাছাড়া নিহানের কথাগুলো আরও অদ্ভুত টাইপের।’ভেবেই নীলাদ্রি ওর ব্যাগ থেকে খাতা আর কলম বের করলো।

“নীলাদ্রি কলম হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করলো,’মা আমি বড় হয়ে বোঝার পর থেকে, তোমার সব কথা শোনার চেষ্টা করেছি।আমি জানি,নিহানের পরিবার তোমাকে এই বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য বাধ্য করেছে।তার কারণ টা তুমি আমার কাছে লুকিয়ে গেছো।অবশ্য তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।তবে আমি নিহান কে বিয়ে করতে পারবো না।আমি এই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি।তোমার ওষুধ গুলো টেবিলের ওপর রেখে যাচ্ছি।ঠিকমতো ওষুধ খাবে।আর চিন্তা করো না।সময় হলে আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো।আশা করি আমি চলে যাওয়ার পর নিহান তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।কারণ, এতোদিনে তাকে আমার এতোটাও অমানুষ মনে হয় নি।আর একটা কথা বলতে চাই,কেউ চাইলেই হুট করে কাউকে মেনে নিতে পারে না।সেখানে আমাকে জোর করে সবাই বিয়ের আসরে বসাতে চাইছো।এখন সেই আগের যুগ নেই যে আমি এইসব জোরাজুরি সহ্য করবো।যুগ পাল্টে গিয়েছে;সাথে মানুষের মন ও পাল্টে গিয়েছে।দু’টি মনে জোড়া না লাগলে কখনোই কাউকে হুট করে আপন করে নেওয়া যায় না।আমার মনে হয়, নিহান নামের মানুষটিকে বিয়ে করে আমি কখনোই সুখী হবো না।তাই আমি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার ওপর রাগ করে থেকো না।তোমার মেয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে।”

“নীলাদ্রি আর কিছু লিখতে পারলো না।ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে চিঠির পাতায় পড়ছে।নীলাদ্রি কাভার্ড থেকে সব জামা-কাপড় নিয়ে সেগুলো ব্যাগে ভরে,আর সাথে কিছু টাকা নিয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।”

“রাস্তায় গিয়ে একটি সি এন জি ভাড়া করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ১বছর আগে ফেইসবুকে ওর একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।সেখান থেকেই ওরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়।একবার নীলাদ্রিদের বাসায় মেয়েটি বেড়াতে এসেছিলো।তারপর নীলাদ্রি কে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে।তাই আজ বিপদের সময় নীলাদ্রি ওদের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“এদিকে নিহান বাসায় আসার পর থেকে তার মন ছটফট করছে নীলাদ্রি কে দেখার জন্য।কতো বছর ধরে এই একটি মুখ দেখার জন্য সে অপেক্ষা করেছে।অপেক্ষার প্রহর সহজে শেষ হয় না।নিহানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।নিহানের নীলাদ্রি কে আবারও দেখতে ইচ্ছে করছে।যেই ভাবা সেই কাজ।নিহান আবারও নীলাদ্রিদের বাসায় গেলো।সিড়ি বেয়ে উঠতেই দেখলো, নীলাদ্রিদের বাসার দরজা হালকা চাপানো।নিহান মনে মনে খুব খুশি হয়ে ভাবলো,’আমাকে আবারও এখানে দেখে নীলাঞ্জনা সারপ্রাইজড হয়ে যাবে।’ভেবেই গুটিগুটি পায়ে নীলাদ্রির রুমে ঢুকেই, নিহান থমকে গেলো।”

“সামনে তাকিয়ে দেখলো,’সিতারা বেগম তার হাতে নীলাদ্রির লেখা চিঠি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।তার চোখজোড়া ফুলে আছে,হয়তো অনেক কেঁদেছে।নিহান এগিয়ে গিয়ে বললো,’আন্টি নীলাঞ্জনা কোথায়?”

“সিতারা বেগম নিহানের দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে, তার দিকে চিঠিটা এগিয়ে দিলো।পুরো চিঠিটা পড়ে নিহানের তো পুরো মাথা আগুন হয়ে গেলো।নিহান র**ক্তিম দৃষ্টিতে সিতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার মেয়ে কাজ টা মোটেও ঠিক করেনি।’বলেই নিহান তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে দেখলো,’নীলাদ্রি কোথায় আছে।নীলাদ্রি এখনও ঢাকার মধ্যেই অবস্থান করছে।’দেখেই নিহান ডেভিল হাসি দিয়ে, সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।নিচে নেমে এহতিশাম আর ইয়াশকে ফোন দিয়ে কিছু কথা বলে;বিড়বিড় করে আওড়ালো,’আমি আসছি নীলাঞ্জনা,একটু অপেক্ষা করো সুইটহার্ট।”

“অপরদিকে সি এন জি গাজীপুরের কাছাকাছি আসতেই, হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেলো।ড্রাইভার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’আপা আমার গাড়িতে মনে হয় কোনো সমস্যা হয়েছে।এখান থেকে গ্যারেজ অনেক দূরে।যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে।আপনার হয়তো ততক্ষণে দেরি হয়ে যাবে।একটা কাজ করি এই অর্ধেক ভাড়া টা আপনি রেখে দিন,আর আমি আপনাকে অন্য একটা সি এন জি তে উঠিয়ে দিচ্ছি।’নীলাদ্রিও লোকটির কথায় মাথা নাড়লো।”

“লোকটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা খালি সি এন জি দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বললো।লোকটি ইশারা করতেই সি এন জি চালক গাড়ি থামালো।লোকটি নীলাদ্রিকে গাজীপুরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বললো।সি এন জি চালক নীলাদ্রির দিকে একবার তাকিয়ে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।”

“ড্রাইভার লোকটি হাসিমুখে নীলাদ্রির কাছে এসে বললো,’আপা আপনি ওই সি এন জি তে উঠুন।আমি তাকে সব বুঝিয়ে বলেছি।আপনি তাকে শুধু ভাড়া মিটিয়ে দিবেন,তাহলেই হবে।”

“নীলাদ্রি গাড়ি থেকে নেমে অপরপাশের সি এন জি চালকের দিকে একবার তাকালো।ধরণীতে তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।এই গুমোট অন্ধকারে লোকটির চোখজোড়া ভালো করে দেখতে পেলো না নীলাদ্রি।লোকটি মাথায় কালো রঙের টুপি, আর মুখে মাস্ক পড়ে আছে।নীলাদ্রি আর ঘাটলো না।ওর গন্তব্যে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারলেই হয়।
নীলাদ্রি ওর ব্যাগ নিয়ে সি এন জি তে উঠে পড়লো।নীলাদ্রি উঠতেই,লোকটি ঝড়ের গতিতে সি এন জি চালাতে লাগলো।নীলাদ্রি তো এটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।তাই লোকটিকে বললো,’এই যে শুনুন এতো জোরে গাড়ি চালাবেন না।গাড়ির স্পিড কমিয়ে চালান।আমার এতো তাড়াহুড়ো নেই।”

‘সি এন জি তে থাকা লোকটি গাড়ির স্পিড স্লো করে, মাথার টুপি এবং মাস্ক খুলে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,’তোমার তাড়া না থাকলেও আমার যে বড্ড তাড়া আছে নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি আবছা অন্ধকারে নিহানের কন্ঠ শুনে এবং চেহারা দেখে ভ**য় পেয়ে গেলো।ওর শরীরের শিরা-উপশিরায় মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড লেগেছে।নীলাদ্রি ওর হাত দিয়ে চোখ জোড়া কচলে আবারও নিহানের দিকে তাকালো।দেখলো সত্যি স্বয়ং নিহান ওর সামনে বসে আছে।নিহান একটি নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে,ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে ব্যাকসিটে এসে, নীলাদ্রির পাশে বসলো।তারপর নীলাদ্রির গালে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বললো,’কি ভেবেছিলে? তুমি চাইবে আর আমার কাছ থেকে এতো সহজে পালিয়ে যেতে পারবে?হাহাহোহোহো ইওর আইডিয়া ইজ কমপ্লিটলি রং নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের এতো কাছাকাছি আসাতে নীলাদ্রি ভ**য়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু করেছে।ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, এখানে কোনো জনমানব নেই,আশেপাশে কোনো বাড়ি-ঘর নেই।গাড়ির মধ্যে শুধু দুইজন নর-নারী বসে আছে।একজনের চোখে তার প্রিয়তমার জন্য অপরিসীম ভালোবাসা রয়েছে।আরেকজনের চোখে বিপরীত মানুষটির জন্য ভ**য় এবং অসীম ঘৃ**ণা ফুটে উঠেছে।”

“নীলাদ্রি নিহানের হাত ওর গাল থেকে সরিয়ে বললো,’প্লিজ আমার জানামতে আমি বা আমার মা আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।আর আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেও, আপনার মতো এমন অদ্ভুত মেন্টালিটির মানুষকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।তাই দয়া করে আমার পিছু ছাড়ুন।যদি কোনো ভুল করে থাকি তার জন্য আমায় ক্ষমা করে দিন।’বলেই নিহানের পায়ে নীলাদ্রি হাত দিলো।”

“নীলাদ্রির নরম হাতের স্পর্শ পেতেই, নিহানের পুরো শরীর মনে হয় কারেন্ট হয়ে গেলো।’নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে হাস্কি ভয়েসে বললো,’সেই একইরকম ভাবে আবার আমাকে ছুঁয়ে দিলে নীলাঞ্জনা।এইবার তো নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।ইচ্ছে করছে সব বিধি-নিষেধ অগ্রাহ্য করে তোমাকে নিজের করে নেই।’বলেই নীলাদ্রি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রি নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো।”

“নীলাদ্রি নিহানের পিঠে ওর নখের আঁচড় বসিয়ে দিলো।কিন্তুু, এতে নিহান একটুও নড়লো না বরং আগের থেকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এদিকে নীলাদ্রির দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো।তার অন্যতম কারণ হলো, নিহানের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।এভাবে জড়িয়ে ধরায় নীলাদ্রির মনে হচ্ছে,ও কোনো ডিপ ফ্রিজের মধ্যে অবস্থান করছে।যার ফলে নীলাদ্রির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নীলাদ্রি এইবার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে করুণ স্বরে বলে উঠলো, ‘আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ।’নীলাদ্রির করুণ কন্ঠস্বর শুনে নিহান হুঁশে এলো।নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমরা আজ রাতেই বিয়ে করবো নীলাঞ্জনা।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে