ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৩+৪

0
394

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান ওদের কৌতূহলী চেহারা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

“ইরা নিহান কে বললো,’এমন কোনো নিউজ তো টিভিতে দেখিনি।আপনি কিভাবে জানলেন?”

“নিহান উত্তরে বললো,’সবেমাত্র একটা-দুইটা নিউজ পেপারে বের হয়েছে; খুব তাড়াতাড়ি টিভিতেও দেখাবে।”

“নীলাদ্রির কৌতুহল যেনো এখনও কমছে না।নিহান কে দেখার পর থেকেই,ওর কাছে ছেলেটাকে বেশ অদ্ভুত লাগে।কেমন রহস্য করে কথা বলে ছেলেটা।’নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই ক্লাসে টিচার আসলো।নীলাদ্রি এবং ইরা সহ সবাই এই ক্লাস টিচারের ওপর ফিদা।সহকারী অধ্যাপক রেহান খান দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা এই অধ্যাপকের স্মার্টনেস এবং পার্সোনালিটির ওপর ফিদা।কিছু কিছু মেয়েতো তাকে সরাসরি প্রপোজ ও করেছে।কিন্তুু সে রিজেক্ট করে দিয়েছে।এদিকে অধ্যাপক রেহান ক্লাসে ঢুকতেই নীলাদ্রি এবং ইরা সহ বাকি মেয়েরা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রির সেই অপলক চাহনি দেখে হিংসায় জ্ব**লে-পু**ড়ে যাচ্ছে নিহান।ওর চোখজোড়া ক্রমাগত র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করছে।নিহানের যদি হার্টবিট থাকতো তাহলে হয়তো পাশ থেকে ওর হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শোনা যেতো।নীলাদ্রির এভাবে তাকিয়ে থাকা নিহান সহ্য করতে না পেরে,ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করলো।অধ্যাপকের দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকাতেই,কিছুক্ষণের মধ্যেই তার র**ক্তবমি হতে শুরু করলো।ক্লাসের সবাই বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।মেয়েরা হৈ চৈ শুরু করলো।এদিকে ছেলেরা মি.রেহান কে গিয়ে ধরে লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলো।ওরা ডক্টর কে ফোন করলো।”

“ইরা সবার সাথে অনেক আগেই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেছে।নীলাদ্রি যখনই বের হতে যাবে,তখনই ও খেয়াল করলো পেছন থেকে কেউ ওর হাত টেনে ধরেছে।নীলাদ্রির মনে হলো, ওর হাতে কোনো বরফ জাতীয় জিনিস লেগে আছে।”

“নীলাদ্রি পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিহান ওর হাত ধরে আছে।নীলাদ্রি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি এভাবে আমার হাত ধরলেন কেনো?”

“নিহান বাকা হেসে বললো,’নেক্সট টাইম ওই অধ্যাপকের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে না।তাহলে সেটা তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।”

“নীলাদ্রি বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌছালো।নিহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু্?উনি আমাদের অধ্যাপক।তার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো না তো আপনার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো?আর লোকটার র**ক্তবমি হয়েছে, তাই দেখতে যাচ্ছিলাম।আমি তো আপনার মতো নির্দয় ব্যক্তি না, যে একজনের বিপদের কথা জেনেও এভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো।আমার হাত ছাড়ুন।”

“নিহানের এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।ইচ্ছে করছে নীলাদ্রির ঘাড়ে বাইট করতে।হঠাৎ এহতিশাম নিহানের হাত ধরে বললো,’নিহান নীলাদ্রিকে ছেড়ে দে।”
বলেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘নীলাদ্রি তুমি নিহানের কথায় কিছু মনে করো না।ও একটু অন্যরকম স্বভাবের।ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবে।”

“নিহান নীলাদ্রির হাত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো,’দ্বিতীয়বার যেনো ওই অধ্যাপকের দিকে তোমাকে তাকাতে না দেখি।আমার কথা অমান্য করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি এইবার রেগে উড়নচণ্ডী হয়ে বললো,’হেই লিসেন,আমার যার
দিকে মন চায় তার দিকে তাকাবো।আপনি আমাকে এইসব বলার কে?”

“নিহান দুষ্টু হেসে বললো,’খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে নীলাঞ্জনা।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।” বলেই ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।”

“এহতিশাম ওদের কথোপকথন নীরব দৃষ্টিতে দেখছিলো।আর ইয়াশ এইসব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে ডুমুর ফল খাচ্ছিলো।এহতিশাম ইয়াশের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,’সারাদিন শুধু খাই খাই করিস।গতকাল রাতে এতোগুলো র**ক্ত খেয়েও কি তোর মন ভরে নি?”

“ইয়াশ মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,’কি এমন খেয়েছি?ওদের র**ক্তে যেই বি**ষাক্ত পদার্থ ছিলো।ওটা খেয়ে আমার রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি।তাই তো এখন এটা খেয়ে পেট ভরছি।”

“এহতিশাম আর কিছুই বলার ভাষা খুজে পেলো না।ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে নিহানের পিছু ছুটলো।”

“আজ বাইরে খুব বেশি রোদ পড়ে নি।তবুও নিহান ছাতা হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে দাড়িয়ে ছিলো।
নীলাদ্রি এবং ইরা অধ্যাপক কে নিয়ে আলোচনা করতে করতে ইউনিভার্সিটির বাইরে আসতেই দেখলো, নিহান ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।ইরা নীলাদ্রি কে বললো,’এই ছেলেটা পা**গল নাকি?এখন তো রোদও নেই,আর বৃষ্টি আসারও সম্ভাবনা নেই;তাহলে এভাবে ছাতা মাথায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে কেনো?”

“নীলাদ্রির এমনিতেই নিহানের আচরণে মাথা গরম ছিলো।ইরার কথা শুনে কটাক্ষ করে বললো,’তুই যা ভাবছিস তাই।এই ছেলেটার কেমিস্ট্রি নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করার কারণে পুরো মাথাটাই গেছে।দেখিস না ক্লাসে টিচার কোনো প্রশ্ন করলে কেমন গড়গড় করে উত্তর দেয়।”

“ইরা মাথা নেড়ে বললো,’ঠিক বলেছিস।আচ্ছা এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই,বাসায় চল।’বলেই ওরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

“নিহান সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো,’তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার রানী করবো নীলাঞ্জনা।তারপর ওই অধ্যাপক কেনো;কারো দিকেই তুমি চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।শুধু একবার আমার হয়ে যাও।তারপর বুঝবে আমি কি?”

—————
“রাতে নীলাদ্রি চেয়ারে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করছে আর ভাবছে,’বারবার আমার কেনো ওই বাদুড়গুলোর কথা মনে পড়ছে?আর ওই কালো ছায়ার কথা টা আমি ভুলতেই পারছিনা।কালো ছায়া টা আমায় নীলাঞ্জনা বলে ডাকলো কেনো?ওটা নিশ্চয়ই জ্বীন ছিলো।কারণ জ্বীনেরা সবকিছুই জানে।বিষয়টি মায়ের সাথে শেয়ার করলে, মা চিন্তা করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।এর থেকে ভালো হবে ইরাকে বিষয়টি শেয়ার করি।’ভেবেই নীলাদ্রি ইরাকে ফোন দিলো।একবার রিং হতেই ইরা ফোন রিসিভ করে বললো,’কিরে বান্দরনি রাত ১১টায় আমার কথা মনে পড়েছে?আকাশে তো চাঁদ দেখছি না।ওওওহ বুঝেছি চাঁদ আমার ফোনের অপরপাশে আছে।’বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।”

“নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’দেখ আমি তোর সাথে মজা করতে ফোন করিনি।খুব সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ফোন করেছি।”

“নীলাদ্রির গম্ভীর কন্ঠে কথাগুলো শুনে ইরা বেশ এক্সাইটেড হয়ে বললো,’হুমম এখন আমি সিরিয়াস মুডে আছি।কি বলবি বল।”

“নীলাদ্রি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গতকাল রাতের সেই কালো ছায়ার ঘটনা টা পুরোপুরি বললো।
ইরা তো এগুলো শুনে বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,’ককককিরে কি বলছিস তুই?ঢাকা-শহরে জ্বীন আসবে কোথা থেকে?এই তুই তোদের ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে রাখিস তো?আমি শুনেছি ওয়াশরুমে বদ জ্বীন থাকে।যারা ওয়াশরুমের দরজা খুলে রাখে, তাদেরকে নাকি বদ জ্বীন আকর্ষণ করে।”

“নীলাদ্রি ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি ওয়াশরুম থেকে এসে সবসময় দরজা লাগিয়ে রাখি।তাছাড়া এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।”

“ইরা ভীতু কন্ঠে বললো,’আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, তোর পেছনে কোনো দুষ্টু জ্বীন পড়েছে।এক কাজ কর, আগামীকাল ক্লাস মিস দিয়ে আমার এক পরিচিত কবিরাজ আছে তার কাছে যাবো।তার নাম মন্টু মোল্লা।উনি তোকে দেখলেই বলে দিতে পারবে তোর পেছনে কোন জ্বীন পড়েছে।’
নীলাদ্রি ইরার কথায় কবিরাজের কাছে যেতে রাজি হলো।”

———–
” পরের দিন নীলাদ্রি এবং ইরা হাজির হলো সেই কবিরাজের বাসার সামনে।বাসায় প্রবেশ করে দেখলো ওদের মতো অনেক মানুষ সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ওদের কে ডাকা হলো।ওরা ভেতরে ঢুকতেই কবিরাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ওহে জোড়া কন্যা আমার থেকে দুই হাত দূরত্বে ওই দস্তরখানায় বসে পড়ো।”

“নীলাদ্রির তো কবিরাজ কে দেখে বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।কবিরাজ কে দেখে মনে হয় ওদের বয়সী।তার চুলগুলো স্পাইক করা,মুখে ছোট ছোট দাড়ি।আসন করে বসলেও, তার গঠন দেখে মনে হচ্ছে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী।নীলাদ্রি ইরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,’এটা কি সত্যি কবিরাজ?নাকি অন্যকেউ?আমরা ভুল জায়গায় আসি নি তো?”

“ইরা হেসে নিচু স্বরে বললো,’আরে এটা আসল কবিরাজ।আমার চাচাতো বোন কে জ্বীনে ধরেছিলো।তখন সে অন্য জায়গায় থাকতো,সেখানেই দেখিয়েছিলাম।পরে আমি চাচির কাছ থেকে তার ফোন নাম্বার রেখে দেই।আর এটা হলো ডিজিটাল যুগ।এই যুগের কবিরাজরা একটু স্টাইল করেই চলে বুঝলি।অতশত না ভেবে চল গিয়ে বসি।”

“ওরা কবিরাজের থেকে দুই হাত দূরত্বে বসতেই কবিরাজ চোখ বন্ধ করে বললো,’বলো তোমাদের কার কি সমস্যা?’

‘ইরা নিচু স্বরে কবিরাজ কে সবকিছু বললো।’

“কবিরাজ চোখজোড়া খুলে একবার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’এই মেয়ে নিশ্চয়ই খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো।তাই তার রূপ এবং চুলের সুগন্ধি পেয়ে বদ জ্বীন পিছু নিয়েছে।সমস্যা নেই এগুলো দূর করা আমার হাতের মোয়া।আজ রাতেই সব সমাধান হবে।তবে তার জন্য আমার কিছু জিনিসপত্র লাগবে।তাই কিছু টাকা লাগবে।”

“ইরা জিজ্ঞেস করলো,’কতো টাকা?”

“কবিরাজ বললো,’আপাতত ৩ হাজার টাকা হলেই হবে।বাকিটা আগামীকাল সকালে দিলেই হবে।”

“নীলাদ্রি আগেই জানতো কবিরাজের কাছে আসলে টাকা লাগবে; তাই ও ব্যাগে ৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলো।”

“নীলাদ্রি কবিরাজ কে ৫ হাজার টাকা এগিয়ে দিতেই কবিরাজ তার ডান হাত উঠিয়ে বললো,’আমার পি এর কাছে দাও।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’যেমন দেখতে স্মার্ট, তেমন কথায় ও স্মার্ট।এমন কবিরাজ জীবনে প্রথম দেখলাম।’এর মধ্যেই কবিরাজের পি এ এসে হাজির হলো।নীলাদ্রি তার কাছে টাকাগুলো দিলো।”

‘কবিরাজ ওদেরকে আগামীকাল সকাল ১০টায় এসে হাজির হতে বললো।ওরা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।’

“এইদিকে নীলাদ্রি কে ক্লাসে না দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে গেলো।ও ইউনিভার্সিটির বাইরে চলে আসলো।আশেপাশে ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করলো নীলাদ্রি কোথায়। অবশেষে বুঝতেও পারলো,নীলাদ্রি ওর থেকে ১০মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছে।নিহান বাতাসের গতিতে সেখানে পৌঁছালো।রাস্তা দিয়ে কবিরাজ কে নিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছিলো নীলাদ্রি এবং ইরা।হঠাৎ নীলাদ্রি ওর কাঁধে কারো ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া অনুভব করলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো নিহান র**ক্তিম দৃষ্টি নিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি নিহানকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি এখানে?”

“নিহান গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘আজ ক্লাস মিস করলে কেনো নীলাঞ্জনা?’

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আজ ক্লাস মিস করলে কেনো নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি কথা বলার আগেই ইরা বলে উঠলো,’আমরা ক্লাস মিস করলে আপনার কি?আমরা আপনার কাছে কোনো কৈফিয়ত দিবো না।”

“ইরার কথা শুনে নিহান বাকা হেসে বললো,’ইয়াশ সত্যি বলেছে।তুমি একটা টকটকি।তোমার মুখ দিয়ে কি মিষ্টি কথা বের হয় না?এনিওয়ে তোমার মুখ থেকে কথা শোনার আগ্রহ আমার নেই।আমি নীলাঞ্জনার কাছে উত্তর জানতে চাইছি।’বলেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”

“নীলাদ্রি কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’আমি আপনার কাছে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নেই।আর হ্যা, কথায় কথায় এভাবে আমার গায়ে হাত দিবেন না।”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’ওহ মাই সুইটহার্ট তোমার গায়ে আমি ছাড়া আর কে হাত দিবে?তোমার শরীরে শুধু একবার না হাজার বার হাত দেওয়ার অধিকার আমার আছে।কারণ তুমি আমার…

“নিহানের কথা শেষ করতে না দিয়েই, ইরা কটাক্ষ করে বললো,’এই যে আশিক এইসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করুন।আমাদের নীলাদ্রি ওইরকম মেয়ে নয়;যে আপনি সিনেমার কয়টা মিষ্টি মিষ্টি ডায়লগ ছাড়বেন,আর আমার বান্ধবী পটে যাবে।’এখন আমাদের পথ ছাড়ুন,আমরা বাসায় যাবো।”

“নিহান ইরার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে বললো,’আমার নীলাঞ্জনা কে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।ওর মনে কখন কি চায় সব আমার জানা আছে।আর তোমাকে লাস্ট টাইম ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার আর নীলাঞ্জনার মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে আসবে না।নীলাঞ্জনা আমার সাধনা,আমার জীবন,আমার রাজ্যের রানী।”

“নিহানের কথাগুলো শুনে ইরা এইবার হেসে কুটিকুটি হয়ে গেলো।তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,’মাত্র দুই দিনের পরিচয়ে এতো অধিকার দেখাচ্ছেন?শুনুন নীলাদ্রি আমার ছোটবেলার বান্ধবী। আমরা একসাথে বড় হয়েছি;এমনকি স্কুল,কলেজ,ইউনিভার্সিটিতেও একসাথেই পড়েছি।আর আপনি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে বলছেন আমার থেকে নীলাদ্রি কে আপনি বেশি চেনেন?সত্যি আজকের দিনের সেরা জোকস ছিলো এটা।আর আপনার মতো ছাতাওয়ালা লোককে আমার বান্ধবী বিয়েও করবে না।আপনি কেমন মানুষ যে রোদ নেই,বৃষ্টি নেই তবুও ছাতা মাথায় দিয়ে হাটেন!”

“ইরার কথা শুনে নিহানের ইচ্ছে করছে ওর ঘাড়ে বাইট করে সব র**ক্ত শুষে নিতে।কিন্তুু এইসব করলে নীলাঞ্জনা খুব কষ্ট পাবে।আর এখনও নীলাঞ্জনা কে বাস্তবের মুখোমুখি করার সময় আসে নি।’নিহান ওর চোখজোড়া বন্ধ করে, আবার খুলে ইরার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,’তুমি কি জানো তোমার বান্ধবীর প্রিয় ফুল কি?”

“ইরা অট্টহাসি দিয়ে বললো,’অবশ্যই জানি।ওর প্রিয় ফুল হলো সূর্যমুখী ফুল।”

‘উহুমম ওর আরেকটি প্রিয় ফুল আছে সেটা তুমি জানো না।’

“নীলাদ্রির মুখ থেকে এতক্ষণে কথা বের হলো।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,’কি ফুল?’

‘নিহান বাঁকা হেসে বললো,’কাঠগোলাপ।”

“নীলাদ্রি এইবার অবাকের শীর্ষে পৌছালো।কারণ, ওর এই ফুলটিও বেশ পছন্দের;তবে কাউকে এই বিষয়ে কখনো বলা হয় নি।এমন কি ইরাকে ও না।তাহলে এই লোকটি কিভাবে জানলো?”

“নীলাদ্রি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি কিভাবে জানলেন?”

“নিহান প্রশ্ন টি শুনে বেশ মজা পেলো।মুচকি হেসে বললো,’তোমার আপাদমস্তক সবকিছু আমার মুখস্থ নীলাঞ্জনা। সময় হলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।’বলেই সেখান থেকে সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।”

” নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো নিহানের যাওয়ার পানে।সেদিন আর ওরা কিছুই আলোচনা করলো না।দু’জনেই নিহান কে নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে।”

——————-
“রাত সাড়ে ১০টা।আহমেদ ভিলাতে ভাঙ**চুরের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো ইমতিয়াজ আহমেদ এবং তার স্ত্রী শায়লা বেগমের।”

“তারা লক্ষ্য করলো ডাইনিং রুম থেকে ভা**ঙচুরের আওয়াজ আসছে।তারা বিছানা থেকে নেমে ডাইনিং রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো, নিহান ডাইনিং টেবিলে থাকা গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলেছে।আর ভয়ং**কর ভাবে গ**র্জন করছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে এখুনি ও ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করবে।ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম উভয়েই বেশ ভ**য় পেয়ে গেলেন।তারা দু’জনেই তড়িঘড়ি করে নিহানের কাছে আসলেন।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে নিহান বাবা?এভাবে ভা**ঙচুর করছিস কেনো?”

“নিহান র**ক্তিম দৃষ্টিতে শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি আমার নীলাঞ্জনা কে খুজে পেয়েছি মা।”

“নিহানের কথা শুনে ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম দু’জনেই বেশ অবাক হয়ে গেলেন।ইমতিয়াজ আহমেদ উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,’কি বলো?কিভাবে খুঁজে পেয়েছো তাকে?”

“নিহান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,’ আমি এক বছর যাবৎ যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি;সেখানেই।”

“নিহানের কথা শুনে ওর বাবা-মায়ের মুখমন্ডল যেনো খুশিতে চকচক করে উঠলো।শায়লা বেগম হাসি মুখে বললেন,’এতো খুশির সংবাদ। অবশেষে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে।কিন্তুু,তুমি হঠাৎ ভা**ঙচুর করছো কেনো?”

“নিহান কন্ঠে তেজি ভাব নিয়ে বললো,’সে আমাকে চেনে না।এমনকি, আমার সাথে ভালোভাবে কথাও বলতে চায় না।সে অন্য পুরুষদের দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটায়।এটা আমার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।আমি তাকে খুব শীঘ্রই এ বাড়িতে বিয়ে করে নিয়ে আসতে চাই।”

“নিহানের কথা শুনে ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন,’সেতো ভালো কথা।ওর বর্তমান বাসার ঠিকানা আমাকে দাও।আমি আগামীকাল ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।”

“নিহান ওর বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, ‘সে আমাকে বিয়ে করতে কিছুতেই রাজি হবে না।কিন্তুু, তাকে ছাড়া আমি আর একমুহূর্তও থাকতে পারছি না।তাই আমি একটা প্ল্যান করেছি;সে অনুয়ায়ী তোমরা কাজ করবে।তাহলেই আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবো।’বলেই নিহান ওর বাবা-মাকে প্ল্যানের ব্যাপারে সবকিছু বললো।নিহানের কথা শেষ হতেই ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগমের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো।”

—————
“ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাড়ের কাছে ঠান্ডা কিছুর অনুভব হতেই চোখ মেলে তাকালো ইরা।শোয়া থেকে উঠে বসে চারিদিকে তাকালো।দেখলো রুমে কেউ নেই।ভাবলো,’আমার ঘাড়ে ঠান্ডা কিছুর অনুভব হলো কেনো?’ভেবেই ঘাড়ে হাত দিয়ে তরল কিছু অনুভব করলো।ইরা হাত সামনে আনতেই দেখলো হাতে র**ক্ত লেগে আছে।এটা দেখেতো ইরার প্রায় বেহুশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো, ওর ঘাড়ে দু’টো দাঁতের দা**গ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ইরা এই দা**গ দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভেজাতেই কেমন যেনো নোনতা স্বাদ পেলো।আয়নার দিকে তাকিয়ে জিহ্বা বের করে দেখলো, জিহ্বায় সাদা কিছু লেগে আছে।”

“ইরা ভাবলো,’আমি তো গতকাল রাতে ব্রাশ করে ঘুমিয়েছিলাম;তাহলে মুখে এইরকম স্বাদ অনুভব হচ্ছে কেনো?আর এতো নোনতা লাগছে কেনো?আর আমার ঘাড়ে এই দাঁতের দা**গ কিভাবে এলো?”

“ইরা রুমের চারিদিকে আবারও ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা।বেলকনির দরজা সহ জানালাও ভেতর থেকে লক করা।তাহলে কিভাবে কি হলো?কিছুই ওর মাথায় আসছে না।ইরা ওর বাবার সাথে এতোটা ফ্রি না। ওর মা বেঁচে থাকলে হয়তো কথাগুলো তার সাথে শেয়ার করতো।’ভেবেই ইরা মোবাইল হাতে নিয়ে নীলাদ্রির নাম্বারে ডায়াল করলো।দুইবার রিং হতেই নীলাদ্রি ওর ফোন রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,’কিরে ইরা এতো সকালে ফোন করলি কেনো?”

“ইরা কন্ঠে আ**তংক নিয়ে নীলাদ্রি কে সবকিছু বললো।ইরার মুখে এহেন কথা শুনে নীলাদ্রির ঘুম পাখিরা উড়ে গেলো।ভ্রু কুচকে বললো,’কি বলছিস এসব?আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।আচ্ছা শোন আজ তুই হিজাব পড়ে ইউনিভার্সিটিতে আসবি,নইলে তোকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।আর আজ ১০টায় তো আমাদের কবিরাজের কাছে যাওয়ার কথা।তাই প্রথম দু’টো ক্লাস মিস দিতে হবে।তারপর ওরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।”

” সকাল ১০টায় নীলাদ্রি এবং ইরা কবিরাজের বাসার সামনে হাজির হতেই দেখলো, সেখানে অনেক মানুষের ভিড়।ওরা সেখানে গিয়ে দেখলো, কিছু মানুষ কবিরাজের নাম নিয়ে অকথ্য ভাষায় গা**লাগা**লি করছে।কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেছে।নীলাদ্রি কবিরাজের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে বড় একটা তালা ঝুলছে।নীলাদ্রি এবং ইরা এতক্ষণে বুঝতে পারলো ঘটনা কি ঘটেছে।”

“নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’নে তোর ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল কবিরাজ সবার টাকা নিয়ে পালিয়েছে।কতো কষ্ট করে টিউশনি করে ৩হাজার টাকা দিয়েছি।শেষমেশ কাজের কাজ কিছুই হলো না।’ইরা ভীতু দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’সরি দোস্ত আমি বুঝতে পারিনি যে সে এমন ব**জ্জাত ভন্ড কবিরাজ।”

“নীলাদ্রি ম্লান হেসে বললো,’কি আর করার! এই মাসে মায়ের জন্য ১৫দিনের ওষুধ কিনতে হবে।আর বাকি টাকা ছাত্রীর মায়ের কাছ থেকে অ্যাডভান্স চেয়ে নেবো।’বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লো।”

“ইরার মনের ভেতর খুব অপরাধবোধ কাজ করছে।আজ যদি ইরা এই কবিরাজের কাছে ওকে না নিয়ে আসতো,তাহলে এই দিন দেখতে হতো না।মনে মনে কবিরাজকে ইচ্ছেমতো গা**লি দিয়ে নীলাদ্রিকে বললো,’আমাদের ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে,নইলে আজকের ক্লাস টা মিস হবে।’ তারপর নীলাদ্রি এবং ইরা
ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।ওরা ক্লাসে গিয়ে দেখলো আজ নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ ক্লাসে নেই।ইরা বেশ অবাক হয়ে বললো,’ওই তিন ভাইয়ের দল আজ ক্লাসে আসে নি,স্ট্রেঞ্জ!”

“এদিকে গতকাল রাত থেকে কবিরাজ মন্টু মোল্লা কে হাত-পা বেঁধে একটি রুমের মধ্যে ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়েছে।মন্টু মোল্লা অনেকক্ষণ চিৎকার করেছে।কিন্তুু বাহির থেকে কোনো আওয়াজ আসেনি।একসময় কবিরাজ ক্লান্ত হয়ে গেলো।তখনই দরজায় ক্যাচক্যাচ শব্দ হতেই মন্টু মোল্লা সেদিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিহান বড় বড় পা ফেলে রুমে প্রবেশ করলো।নিহানের পেছনে এহতিশাম এবং ইয়াশও এলো।নিহান একটি চেয়ারে বসে ইয়াশ কে বললো,’ইয়াশ এই ভ**ন্ড কবিরাজের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দে।”

“ইয়াশ নিহানের কথামতো কবিরাজের কাছে গিয়ে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।মন্টু মোল্লা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।নিহান তার দিকে একটু ঝুঁকে তেজি কন্ঠে বললো,’নীরিহ মানুষগুলো কতো কষ্ট করে টাকা জমিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে তোর কাছে আসে।আর তুই তার সুযোগ নিয়ে তাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াস।আর তোর সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো,তুই আমার নীলাঞ্জনাকে মিথ্যা কথা বলে ওর থেকে টাকা নিয়েছিস। আজ তোকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।’বলেই নিহান ধীরে ধীরে তার ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করতে থাকলো।নিহানের লাল চোখজোড়া,বাদুড়ের মতো মুখমন্ডল,নেকড়ের মতো শরীর, আর সামনে বের হয়ে আসা দু’টো বড় দাঁত দেখেই মন্টু মোল্লা অজ্ঞান হয়ে যেতে নিলে, নিহান তার ঘাড়ে বাইট করে দেয়।এতোটা জোরে বাইট করে যে মন্টু মোল্লার ঘাড় থেকে অনবরত র**ক্ত ঝরতে থাকে।”

“সেটা দেখে এহতিশাম আর ইয়াশ লোভ সামলাতে পারে না।ইয়াশ নিহানের কাছে এসে বলে,’ভাইয়া তুমি তো A+ পজিটিভ র**ক্ত পান করো না।আমি আর এহতিশাম ভাইয়া করি।তাই ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দাও।রাতে তোমাকে পশুর B+ পজিটিভ রক্ত এনে দেবো।’ ইয়াশের কথা শুনে নিহান তার ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা র**ক্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে, সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে