ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-০২

0
67

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“জন্মসনদেও এই নাম দেওয়া হয়নি।আর কেউ ওকে এই নামে ডাকেও না।তাহলে এই লোক কিভাবে ওর নাম জানলো?”

“নীলাদ্রির ভাবনার শেষ হতেই নিহান বলে উঠলো,’তোমার নামটা কিভাবে জানলাম সেটা নিয়ে এতো গবেষণা না করলেই নয়?”
“নীলাদ্রি পিলে চমকালো।ভাবলো,’আমি যে এই কথাটা ভাবছিলাম; সেটা এই লোক কিভাবে জানলো?”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’আমাকে নিয়ে হাজারবার ভাবার সময় তুমি পাবে।এখন এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে আমার কথা শোনো।তুমি এই ক্লাসের টপার ছিলে।আমি মনে করি এখনোও তুমি টপার আছো।হয়তো কিছু কারণে তুমি এইবার চতুর্থ স্থান অধিকার করেছো।কিন্তুু সমস্যা নেই পরেরবার দেখবে তুমি আবারও টপার হবে।আমি তোমায় সাহায্য করবো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে এহতিশাম বললো,’তুমি চাইলে আমরা বন্ধু হতে পারি।তাছাড়া আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি।’ইয়াশ এগিয়ে বললো,’জানেন আমাদের কোনো মেয়ে বন্ধু নেই।আপনি যদি আমাদের বন্ধু হন তাহলে খুব খুশি হবো।”

“ওদের কথা শুনে নীলাদ্রি কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ইরা এসে বললো,’এই যে তিন ভাইয়ের দল; আপনারা জানেন না যে ছেলে আর মেয়ে কখনোও বন্ধু হতে পারেনা?ছেলে আর মেয়ে একসাথে চলাফেরা করলে ওদের মাঝে তৃতীয় জন হয় শ**য়তান।আর সেখানে আপনারা তিনজন এসেছেন আমার বান্ধবীর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে।আমি সেটা কখনোই মানবো না।’কাটকাট গলায় কথাগুলো বলেই ইরা নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’চল এখান থেকে।আমি থাকতে তোর কোনো বন্ধু লাগবে না।আর ছেলে বন্ধু তো অনেক দূরের কথা।’বলেই নীলাদ্রি কে টেনে নিয়ে গেলো।ওদের যাওয়ার দিকে নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ হা করে তাকিয়ে রইলো।ওরা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাসে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা আজ আর ক্লাস করলো না।ওরা ইউনিভার্সিটির বাইরে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।এমন সময় ইয়াশ এসে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’হেই মিস টকটকি তোমার কথায় এতো ঝাঁঝ কেনো?”

“ইরা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’আগে বলুন টকটকি মানে কি?”

“ইয়াশ হেসে উত্তর দিলো,’টকটকি মানে টক।অর্থাৎ তোমার কথায় এতো টক কেনো?”

‘ইরা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’একদম আমাকে এই নাম ধরে ডাকবেন না।আমার নাম হলো ইরা।”

“ইয়াশ মুখ ভেংচি কেটে বললো,’নামের মতো তোমার চেহারাটাও বেশ মিষ্টি। কিন্তুু তুমি মনে হয় তেঁতুল বেশি খাও।তাই তোমার কথাগুলো এইরকম টকটকি।”

“ইরা এইবার তেঁতে উঠে বললো,’দেখুন আমার মুখ ছোটাবেন না।তাহলে কিন্তুু…

‘তাহলে কি?’

‘ইরা এবার রাগে গরগর করে বলতে লাগলো,’এই মটু আপনি কথায় এতো পটু কেনো?আপনাকে এতো কথা কে শিখিয়েছে?চুপচাপ পড়ালেখা করে এখান থেকে চলে যাবেন।আমাদের ধারে-পাশেও যেনো আপনাকে না দেখি।”

“ইরার কথা শেষ হতেই সেখানে হাজির হলো নিহান।নীলাদ্রি নিহান কে দেখে বললো,’দেখুন না আপনার ভাই আর আমার বান্ধবী মিলে কিসব ঝগড়াঝাটি করছে।রাস্তায় মানুষজন দেখে কি ভাবছে বলুন তো?
প্লিজ আপনার ভাইকে আপনি নিয়ে যান।আমি আমার বান্ধবী কে ম্যানেজ করছি।’নীলাদ্রির কথা শুনে
নিহান কিছুটা অপমান বোধ করলো।তারপর ওর লাল চোখজোড়া দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকাতেই,ইয়াশ শুকনো ঢোক গিলে বললো,’সরি ভাইয়া।এই টকটকির সাথে আমি আর কথা বলবো না।”

“ইয়াশের মুখে আবারও ‘টকটকি’ নাম শুনে ইরা এইবার তেড়ে যেতে নিলেই, নীলাদ্রি ওর হাত ধরে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়।”

———–
“নীলাদ্রি এবং ইরার বাসা কাছাকাছি হওয়াতে ওরা এক রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করে।নীলাদ্রি বিকালে টিউশনি করে;বাসায় ঢুকে সিতারা বেগম কে জড়িয়ে ধরে ওর রেজাল্টের কথা জানালে,তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,’আমাকে নিয়ে তুই অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করিস।তাই হয়তো পরীক্ষা ততোটা ভালো হয় নি।এখন থেকে আরও মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবি।দেখবি তুই আবারও আগের মতো ভালো রেজাল্ট করবি।’বলেই তিনি নীলাদ্রি কে বসতে বলে খাবার আনতে গেলেন।মা ও মেয়ে মিলে খাবার খেলো।”

“রাতে নীলাদ্রি পড়তে বসেছে এমন সময় বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঝড়ো বাতাস শুরু হয়েছে।নীলাদ্রি বেলকনির কাছে গিয়ে দরজা আটকাতে গিয়ে দেখলো,একটি কালো ছায়া ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।নীলাদ্রি সামনে তাকিয়ে দেখলো, কোনো মানুষ নেই,তাহলে এই কালো ছায়া কোথা থেকে আসলো?কালো ছায়াটি ওর আরো কাছে এসে ওর ঘাড়ের কাছে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,’তোমাকে আমার ভালো লেগেছে নীলাঞ্জনা।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি তো আমার সেই নীলাঞ্জনা যাকে আমি ২০৯বছর যাবৎ খুজছি।তোমাকে আমি আমার রানী করে নিয়ে যাবো নীলাঞ্জনা।তুমি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারবে না।যদি আমি ছাড়া অন্য করো বিষয়ে চিন্তাও করো, তাহলে আমি তোমার ভেতর ঢুকে গিয়ে তোমাকে গ্রাস করে নেবো।”

“ছায়াটির কন্ঠ এতোটা ভয়ং**কর ছিলো যে নীলাদ্রি সেখানেই ‘মা’ বলে জ্ঞান হারালো।”

“রাত ৩টায় জ্ঞান ফিরলো নীলাদ্রির।চোখ জোড়া খুলে দেখলো ওপরে ফ্যান ঘুরছে।মাথায় হাত দিয়ে আশেপাশে তাকালো।দেখলো ওর মাথার কাছে ওর মা বসে খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রির রাতের কথা মনে পড়তেই গাঁ ছমছম করে উঠলো।ভাবতে লাগলো,’ওই ছায়াটা কি ছিলো?কোনো দুষ্টু জ্বীন নয়তো?নাকি কোনো মানুষ মজা করেছে?কিন্তুু এখানে তো আমার সাথে তেমন কারো কথা হয় না।কারো বাসায় যাওয়া ও হয় না।তাহলে কে এসেছে?’নীলাদ্রি আর ভাবতে পারলো না।ওর মাথা ঝিমঝিম করছে।বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করলো,কিন্তুু শরীর সায় দিলো না।তাই আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।”

———————
“ক্যাম্পাসের মাঠের এক কোণে হাতে পেপার নিয়ে বসে আছে ইরা।ছোটবেলা থেকেই যেকোনো ক্রাইমের ওপর ইরার খুব ইন্টারেস্ট।আজ সকালে খবরের কাগজে এই তরতাজা নিউজটি পড়ে, পেপারের পাতাটি ছিড়ে ব্যাগে ভরে নীলাদ্রি কে দেখাতে এনেছে।নীলাদ্রি ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রথমে ক্লাসে গেলো।ক্লাসে গিয়ে ইরা কে দেখতে না পেয়ে মাঠের দিকে গেলো।গিয়ে দেখলো ইরা পেপারের কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছে।নীলাদ্রির মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।নীলাদ্রি চুপচাপ ইরার পেছনে গিয়ে ‘ভোওওওও’ করে আওয়াজ করতেই ইরা চি**ৎকার দিয়ে উঠলো।সেটা দেখে নীলাদ্রি হেসে কুটি কুটি হয়ে গেলো।”

“ইরা বুকে বার কয়েক থুথু দিয়ে বললো,’বান্দরনি এমনিতেই সকাল থেকে খুব ভ**য় পেয়ে আছি।তার উপর এভাবে তুই ভ**য় দেখালি।দেখিস আমিও সুযোগ বুঝে তোকে ভ**য় দেখাবো।’বলেই নীলাদ্রির দিকে কাগজটি ছুড়ে দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি কাগজটিতে চোখ বুলাতেই ওর চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।এরা সেই বখাটে ছেলেগুলো যারা সেদিন রাতে নীলাদ্রির পিছু নিয়েছিলো।কি বিভ**ৎস ভাবে ৫জন কে খু**ন করা হয়েছে।কারো চোখ নেই,কারো ঠোঁট নেই,কারো হাত নেই।নীলাদ্রি তড়িঘড়ি করে পেপারের লেখা পড়তে লাগলো।দেখলো ঘটনা টা গতকাল রাতে ঘটেছে।ওদের পাশে ই**য়াবা পাওয়া গেছে।আর সবচেয়ে বড় অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ওদের সবার ঘাড়ে দু টি দাঁতের দা**গ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ‘নীলাদ্রির গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো।কি থেকে কি হচ্ছে সবকিছুই ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। নীলাদ্রি আর পড়তে পারলো না।কাগজটি দুমড়ে-মুচড়ে সেখানেই ফেলে ক্লাসে চলে গেলো।”

“এদিকে নীলাদ্রির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ।নিহান কাগজটি হাতে নিয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাগজটি কু*টিকু*টি করে ছিড়ে ফেললো।তারপর ওরা তিনজন ক্লাসে চলে গেলো।”

“ক্লাসের মধ্যে চেহারায় ভীতু ভাব নিয়ে বসে আছে নীলাদ্রি। ওর পাশেই বসে নীলাদ্রির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ইরা।নীলাদ্রির সেদিকে কোনো ধ্যান নেই।সেতো এখন ভাবনার জগতে বিচরণ করছে।কিছুক্ষণ পর ইরা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,’ওই মাইয়া ওমন কইরা ভেটকাইয়া চাইয়া আছোস কেন?”

“অন্যসময় হলে ইরার মুখে আঞ্চলিক ভাষায় কথা শুনে নীলাদ্রি হেসে দিতো।কিন্তুু, এই মুহূর্তে সে রোবটের মতো ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’আচ্ছা মানুষ কি মানুষের ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষে নেয়?”

“নীলাদ্রির অদ্ভুত প্রশ্নে ইরার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।ভ্রু কুচকে বললো,’কিসব অদ্ভুত টাইপ প্রশ্ন করছিস?মাথা টা গেছে নাকি?ওওওওহ বুঝতে পেরেছি,ওই পেপারে খবরটা পড়ে এগুলো ভাবছিস তাই না?হাহাহা আরে ধুর পা**গলি ওরা তো বখাটে ছিলো।রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের প্রতিনিয়ত উত্য**ক্ত করতো।তাছাড়া ওরা দোকানে গিয়ে অনেক বেশি চাঁদা তুলতো,যেটা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে ছিলো।তাই হয়তো কেউ প্রতিশোধ নিতে এভাবে ওদের মে**রেছে।”

” নীলাদ্রি ইরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,’তাই বলে প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে এভাবে দাঁত বসিয়ে দেবে?”

“নীলাদ্রির কথা শেষ হতে না হতেই;পাশের বেঞ্চ থেকে নিহান রহস্য করে বলে উঠলো,’জানো তো বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে র**ক্তচোষা বাদুড়ের উপদ্রব অনেক বেড়েছে।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই হকচকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি জানলেন কিভাবে?”

“নিহান একটু বিস্ময়ের ভঙ্গিতে বললো,”সেকি তোমরা জানো না?দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অনেক বাদুড় বাংলাদেশে এসে পড়েছে।কারণ বাংলাদেশেী প্রানীদের র**ক্ত নাকি ওদের খুব তৃপ্তি দেয়।তাই তো ওরা ধীরে ধীরে এখানে বসতি গড়ছে।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রি এবং ইরার চোখজোড়া রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো।যে কেউ দেখলে ভাববে নিহানের দিকে দুই জোড়া রসগোল্লা তাকিয়ে আছে।’নিহান ওদের কৌতুহলী চেহারা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে