ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-২৩

0
60

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি এক দৌড়ে সদর দরজা খুলে অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকলো।”

“এদিকে ইরা দুপুর থেকে ভাবছে নীলাদ্রির সাথে দেখা করবে।লাঞ্চের সময় ইরা অনেকক্ষণ নীলাদ্রির জন্য অপেক্ষা করেছে।কিন্তুু নীলাদ্রি নিচে আসে নি।ইরা নিহানের জন্য নীলাদ্রির রুমে যেতেও ভ**য় পাচ্ছে।অনেক ভেবে সব ভ**য় কে জয় করে নীলাদ্রির রুমের কাছে গিয়ে উঁকি দিলো ইরা;দেখলো রুম পুরো ফাঁকা।নিহানকে রুমে না দেখতে পেয়ে খুব খুশি হলো।।ইরা ভাবলো,’নীলাদ্রি হয়তো ছাদে গেছে।’ইরা ধীর পায়ে ছাদে গিয়ে নিহানকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।নিহান বসে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।নিহানের চারিদিকে বৃত্তের মতো রসুন বিছিয়ে দেওয়া।ইরা বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছালো।ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।ইরা আশেপাশে তাকিয়ে নীলাদ্রি কে খুঁজতে থাকলো।কিন্তুু কোথাও নীলাদ্রি কে না দেখে নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হয়েছে আপনার?আপনার চারিদিকে এতো রসুন কেনো?আর আপনি এমন করছেন কেনো?”

“নিহান নিভু নিভু চোখে ইরার দিকে তাকিয়ে তার দুর্বল হাত দিয়ে ইশারা করে, রসুন গুলো সরিয়ে ফেলতে বললো।ইরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও,নিহান বারবার ইশারা করাতে বুঝে ফেললো।ভাবলো,’নিশ্চয়ই এই রসুনের জন্য নিহানের কোনো সমস্যা হচ্ছে।ইরা তৎক্ষনাৎ রসুন গুলো এক করে পাশে থাকা ঝুড়িতে ভরে, দৌড়ে গিয়ে কিচেনে রেখে আসলো।তারপর এক গ্লাস পানি নিয়ে ছাদে গিয়ে নিহান কে দিলো।নিহানের শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমে এসেছে।নিহান গ্লাস নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পানি খেয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে অর্ধ-বৃত্ত আকৃতির চাঁদ থেকে হা করে শক্তি আহরণ করলো।”

” ইরা তো এইসবের কিছুই বুঝতে পারলো না।এদিকে ইরা কে ছাদের দিকে ছুটে যেতে দেখেছিলো ইয়াশ।তাই ইয়াশও ইরার পিছু পিছু ছাদে গিয়ে নিহানের এই অবস্থা দেখে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,’ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?”

“নিহান ক্লান্ত ভঙ্গিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা আবার পালিয়ে গেছে।”

” ইয়াশ তো এটা শুনে পুরো থ হয়ে গেলো।ইরা গোলগোল চোখ করে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’ নীলাদ্রি কখন পালিয়েছে?কেনো পালিয়েছে?”

“নিহান ইয়াশ কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো, ইরা কে নিয়ে যেতে।’
ইয়াশ বিষয়টি বুঝতে পেরে ইরাকে বললো,’সোনাপাখি এখান থেকে চলো।ভাইয়ার হয়তো খুব খারাপ লাগছে।ভাইয়া একটু রেস্ট করুক।তুমি চিন্তা করো না, ভাইয়া ভাবি কে ঠিক খুঁজে বের করবে।”

” ইরা ইয়াশ কে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,’গতবার নীলাদ্রির বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছিলো।তাহলে আজ কি বলবেন আপনি?ওহহ আপনি তো ভোলাভালা পুরুষ মানুষ।আপনার ভাইদের মুখের ওপর কিছুই বলতে পারেন না।আর আমাকে আপনি কেনো নিশ্চিন্তে থাকতে বলছেন?এই অবস্থায় কেউ কিভাবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে?’বলেই নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার চারিদিকে এতো রসুন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কেনো?আর আপনার এখানে বসে এতো কষ্ট হচ্ছিলো কেনো?তাছাড়া কি হয়েছে নীলাদ্রির?ও কেনো আবার পালিয়ে গেলো?”

“ইরার চি**ৎ*কার চেচাঁমেচিতে সেখানে হাজির হলো, শায়লা বেগম এবং ইমতিয়াজ আহমেদ।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে এখানে?এতো চি**ৎ*কার চেচাঁমেচি হচ্ছে কেনো?”

“নিহান আহত মন নিয়ে শায়লা বেগম কে বললো,’মা নীলাঞ্জনা আবার আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”

“কি বলছিস?কোথায় গিয়েছে নীলাদ্রি?'(উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ইমতিয়াজ আহমেদ।)”

“নিহান ইরার সামনে কিছুই বলতে চাইছে না।তাই ইয়াশ কে আবারও ইশারা করলো।ইয়াশ এইবার ইরার হাত শক্ত করে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।”

“ইরা রেগে গিয়ে,’আরে..আরে কি করছেন?আমার হাত এতো শক্ত করে কেনো ধরেছেন?উফফ হাতে ব্যথা পাচ্ছি।ছাড়ুন আমায়।”

“ইয়াশ ওর হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা করে, জোর করে ইরা কে নিচে নিয়ে গেলো।রুমে গিয়ে ইয়াশ দরজা আটকে দিয়ে বললো,’তোমাকে কতবার করে বললাম,নিচে চলো।কিন্তুু তুমি শুনলে না কেনো?”

‘কেনো?শুনবো কেনো?আমার বান্ধবী কেনো পালিয়ে গেছে, সেটা আমি জানতে চেয়েছি।এটা জানতে চাওয়া কি আমার অন্যায়?বাই দ্য ওয়ে আপনার মুখে দেখছি বেশ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা ফুটেছে।আমাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছেন কেনো?আমি আপনার সাথে ইদানীং ভালো আচরণ করি দেখে কি সাহস বেড়ে গেছে?”

“ইয়াশ নিচু স্বরে বললো,’সরি সোনা তুমি তো ব্ল্যাক মাম্বার থেকেও বিষধর,সেটাতো আমি ভুলেই গেছিলাম।আর হবে না।আসলে নিহান ভাইয়া তোমার সামনে কথা বলতে আনইজি ফিল করছিলো।সেটা বুঝতে পেরে তোমাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি।”

“আমার সামনে কথা বলতে কেনো আনইজি ফিল করছিলো?আপনি জানেন আমি ছাদে গিয়ে দেখলাম,উনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা।তার চারিদিকে রসুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তখন আমি রসুন সরিয়ে ফেলেছি।তারপর তার শ্বাসকষ্ট কমেছে। আজ আমি না গেলে কি হতো বলুন তো?আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, রসুনে তার কি সমস্যা বলুন তো?”

” ইয়াশ কি বলবে;রসুন তো ওদের শত্রু।ইয়াশ মিনমিন করে বললো,’সোনা তোমার এখন ঘুমের প্রয়োজন।তোমার মাথাটা মনে হয় অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে।কেমন যেনো ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধ পাচ্ছি।প্লিজ একটা ঘুম দাও।আসো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

“আপনার কি আক্কেল দাঁত নেই নাকি?মনে হয় এখনও ওঠে নি।যদিও আমার এখনও আক্কেল দাঁত ওঠেনি।তবুও আপনার থেকে অনেক বেশি আক্কেল-জ্ঞান আমার আছে।আমার বান্ধবী পালিয়ে গেছে, আর আপনি আমায় ঘুমাতে বলছেন?মানে এটা কোনো কথা হলো?”

“ইয়াশ বুঝে গেছে ইরাকে এভাবে মানানো যাবে না।তাই ইয়াশ বাধ্য হয়ে নিজের ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ইরার দিকে তাকাতেই, ইরার চোখে ঘুমঘুম ভাব চলে এলো।ইরা দাঁড়ানো অবস্থায় টলতে লাগলো।ইয়াশ ইরা কে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।ধীরে ধীরে ইরা ইয়াশের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো।ইয়াশ ইরাকে শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’সরি সোনা আমি নিরুপায়।তুমি খুব জেদি মেয়ে।আমার কোনো কথাই শুনতে চাও না।তাই নিজের পাওয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম।এখন তুমি কয়েক ঘন্টা শান্তিতে ঘুমাও।আমি নিহান ভাইয়ার কাছে গেলাম।’বলেই ইয়াশ সেখান থেকে চলে গেলো।”

“শায়লা বেগম এবং ইমতিয়াজ আহমেদ নিহান কে স্পেশাল ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করেছেন।নিহানের মস্তিষ্ক অতিরিক্ত রাগে বেশামাল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।সুস্থ হওয়ার পর থেকেই কয়েক সেকেন্ড পরপর ভ**য়ং**কর ভাবে গ**র্জন করে উঠছে।ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন,’নিহান তুমি ঠান্ডা হও।এখন তুমি সুস্থ হয়েছো।এখন তুমি তোমার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির বর্তমান স্থান চিহ্নিত করো।’নিহানের মুখে পৈ**শা**চিক হাসি ফুটে উঠলো।নিহান তার পাওয়ার ব্যবহার করে চোখজোড়া বন্ধ করে দেখলো,নীলাদ্রি ওদের বাসা থেকেও প্রায় ১ঘন্টা দুরত্বে একটা রাস্তার পাশে বসে আছে।নীলাদ্রির চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।”

“নিহান চোখজোড়া খুলে ডেভিল হেসে মনে মনে বললো,’তুমি যতো দূরেই যাও না কেনো সুইটহার্ট,আবার আমার নীড়েই তোমাকে ফিরে আসতে হবে।আজ তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে চিরদিনের মতো আমার করে নেবো।”

“এদিকে নীলাদ্রি অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তার এক সাইডে বসে ভাবছে,’ওই লোকটার সাথে তাহলে আমার ওই গলিতে দেখা হয়েছিলো?তারা তিন ভাই ভ্যাম্পায়ার?আবার তাদের মা-বাবাও ভ্যাম্পায়ার?এর মানে এতোদিন আমি ভ্যাম্পায়ারদের সাথে ছিলাম?ভাবা যায়?এইজন্যই তো তারা সবসময় র**ক্ত জাতীয় খাবার খায়।ছিহ!কি বিশ্রী ভাবে কুকুরের ঘাড় থেকে র**ক্ত খাচ্ছিলো।দেখেইতো আমার গা গুলিয়ে আসছিলো।নিহানের শরীর এতো ঠান্ডা।আর ওই বখাটে ছেলেগুলো?পেপারে দেখেছিলাম, ওই ছেলেগুলো কে কতো নৃ**শং**স ভাবে মে**রেছে।উফফ..শিট আমি তো ইরার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।ইরা কে তো ওই ভ্যাম্পায়ারদের বাসায় ফেলে এসেছি।ইশশ ওকেও যদি নিয়ে আসতাম।কিন্তুু এতক্ষণে হয়তো ওই সাইকো ভ্যাম্পায়ার নিহান কে সবাই ওই অবস্থায় দেখে ফেলেছে।নাহ আমি কিছুতেই তার কাছে ফিরে যাবো না।আমি মানুষ নিহান কে ভালোবেসি,কোনো র**ক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার কে না।বেচারি ইরার কি হবে?ইরা কে ইয়াশ ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলবে না তো?এখন আমিই বা কি করবো?আমি তো বাসা থেকে কিছুই আনি নি।কত কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে এখানে এলাম।মায়ের কাছে গেলে তো সেখানেও ওই পি**শাচ টা আমায় ধরে ফেলতো।এক টাকাও আমার কাছে নেই।কার কাছে হেল্প চাইবো?কেউ যদি আবার সুযোগ নেয়?আজকাল কাউকে তো বিশ্বাসও করা যায় না।আপনজনেরাই ধোকা দেয়।সেখানে তো…

“নীলাদ্রি আর ভাবতে পারছে না।হঠাৎ করেই ওর মাথা ঘুরে উঠলো।মাথায় হাত দিয়ে চোখজোড়া খুলে রাখতে চাইলো।কিন্তুু না..আজ চোখজোড়াও হয়তো ওর সাথে বেইমানি করছে।একসময় নীলাদ্রির চোখ জোড়া আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেলো।”

—————–
“ঘুটঘুটে অন্ধকার একটি রুমে ঘুমিয়ে আছে নীলাদ্রি।হঠাৎ চোখে পানির ছিটা পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো নীলাদ্রির।মাথায় হাত দিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।নীলাদ্রি খুব কষ্ট করে উঠে বসলো।হাত দিয়ে চোখজোড়া কচলে ভালো করে তাকাতেই দেখলো,ওর সামনে লাল টকটকে ভ**য়ং**কর দুটি চোখ লাইটের মতো জ্বলজ্বল করছে।অন্ধকারের মধ্যে ঘুম থেকে উঠে চোখের সামনে লাল টকটকে চোখজোড়া দেখে ভ**য়ে বি**ক*ট চি**ৎ*কার দিলো নীলাদ্রি।তখনই কেউ ওর মুখ চেপে ধরে বললো,’উহুমম এভাবে চি**ৎ*কার করে না সুইটহার্ট।তাছাড়া চি**ৎ*কার করলেও, তোমার চি**ৎ*কার এই চার দেয়ালের বাইরে যাবে না।”

“পুরুষালি কন্ঠস্বর টা নীলাদ্রির বড্ড চেনা চেনা লাগছে।কিন্তুু অতিরিক্ত ভ**য় এবং ডিপ্রেশনে থাকার কারণে, কিছুই ধরতে পারছে না।কিন্তুু সামনে থাকা ব্যক্তিটির বরফের মতো ঠান্ডা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরায়, নীলাদ্রির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।নীলাদ্রি মুখ দিয়ে ‘উমম’ শব্দ করছে।সামনে থাকা ব্যক্তিটি নীলাদ্রির কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে ছেড়ে দিলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেলো।নীলাদ্রি ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বললো,’এহতিশাম আপনি এখানে?”

“মুহূর্তের মধ্যেই হোহো করে ভ**য়ং**কর শব্দে হেসে উঠলো এহতিশাম।এহতিশামের হাসির আওয়াজে মনে হয় রুমের চার দেয়াল কেঁপে উঠলো,সেই সাথে তীব্র কম্পন হলো নীলাদ্রির শরীরে।হাসি থামিয়ে এহতিশাম বিছানায় বসে থাকা নীলাদ্রির কাছে এসে ওর দুই বাহু ধরে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’কেমন সারপ্রাইজ দিলাম সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে এহতিশামের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’সসস..সুইটহার্ট মানে?আআআ..আপনি আমাকে সুইটহার্ট ডাক..ডাকছেন কেনো?”

“নীলাদ্রির কথা শুনে এহতিশামের চোখজোড়া আরও লালচে বর্ণ ধারণ করলো।মনে হয় চোখজোড়া থেকে এখুনি র**ক্ত বেরিয়ে আসবে।এহতিশাম চোখ-মুখ শক্ত করে কঠোর ভঙ্গিতে বললো,’কেনো আমি সুইটহার্ট বললে দোষ কি?নিহান যখন সুইটহার্ট বলে, তখন খুব ভালো লাগে তাই না?”

‘মানে?ককক..কি বলতে চাইছেন আপনি?’

“দেখো নীলাদ্রি এইসব মেলোড্রামা করে তোতলানো বন্ধ করো।শুনতে খুব বিরক্ত লাগছে।আমি জানি তুমি খুব সাহসী মেয়ে।আর সাহসী মেয়েদের কন্ঠে এমন তোতলানো কথা বেমানান।আমার মতো স্পষ্ট ভাষায় কথা বলো।আর হ্যা, আজ তোমায় যে কথা গুলো বলবো মনযোগ দিয়ে শুনবে।তারপর হয় এসপার হবে;নইলে ওসপার হবে।এনিওয়ে বলছি।”

“এহতিশাম শুরু করলো,’বাংলাদেশে যখন আমাদের ১বছর পূর্তি হলো সেদিন আমি,নিহান এবং ইয়াশ প্ল্যান করে রাতে পশু শিকার করতে বের হলাম।আমরা তোমাদের বাসা থেকে একটু দূরের একটি গলিতে একটি চকচকে কুকুর দেখতে পেলাম।আমরা খুশি হয়ে কুকুরটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম; আর ৩জনে মিলে কুকুরের ঘাড় থেকে র**ক্ত খেলাম।ঠিক তখনই তুমি এসে সেখানে হাজির হও।তখন আমরা তিন জন তোমার দিকে তাকাই।আমি জীবনে অনেক সুন্দরী নারী দেখেছি।আমার ভালোও লেগেছে।কিন্তুু ভ্যাম্পায়ারদের মন অনেক কঠিন হয়।আমি জানি, নিহান তোমাকে তার ভ্যাম্পায়ার হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে।তাই নতুন করে আর বললাম না।তো সেই রাতে যখন তোমায় প্রথম দেখলাম;মনের অজান্তেই অচেনা-অজানা মানবীর দিকে চোখজোড়া পুরোপুরি আটকে গেলো।কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো আমার শরীরে।নিহানের কাছে আমি তোমার আগের জন্মের কাহিনী সব শুনেছি।আর আমার বাবা-মা নিহান এবং ইয়াশ কে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে নিয়ে আসাতে,ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল আমাদের অভিশাপ দিয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করতে পাঠিয়ে দেয়।আর সাথে জুড়ে দেয় কিছু তিক্ত শর্ত।দীর্ঘ ২০৯বছর যাবৎ আমরা অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছি।আমি জানি,নিহান তোমাকে এগুলোও বলেছে।আসোলে আমি তোমাদের সম্পর্কে সবকিছুই জানি।হাহাহাহা কিভাবে জানি শুনবে সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় এহতিশামের দিকে তাকিয়ে আছে।বেচারি সজ্ঞানে একের পর এক শকড নিতে পারছেনা।২দিন যাবৎ একের পর এক চমক পেয়েই যাচ্ছে।নীলাদ্রির ছোট্ট মস্তিষ্কের এতো চাপ নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হয় মাথা ফেটে যাবে।নীলাদ্রি কোনো কথা না বলে স্ট্যাচুর মতো এহতিশামের দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রির এই শান্ত রূপ দেখে এহতিশামের ঠোঁটের কোণে শ**য়**তানি হাসি ফুটে উঠলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো,’তুমি খুব সুন্দর দেখতে।যদিও আমি অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছি।কিন্তুু তবুও কেনো জানিনা তোমাকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।সেদিন রাতে ওই বখাটে ছেলেগুলো যখন তোমার পিছু নিয়েছিলো, সেদিন আমরা ওদের ওপর হা**মলা করি।নিহান সাধারণত মানুষের শরীর থেকে র**ক্ত কম খায়।কিন্তুু আমি আর ইয়াশ খাই।সেদিন সেই ছেলেগুলোকে আমি নিজে হাতে শাস্তি দিয়েছি।নিহান তো ওদের শরীরের কয়েকটি জায়গায় ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করে চলে গেছিলো।আর আমি কি করেছি জানো?আমি ওদের শরীর থেকে হাত,চোখ,ঠোঁট সবকিছু আলাদা করেছি।সেই সাথে ওদের ঘাড়ে অনেকগুলো বা**ইট করেছি।তারপর ওদের দূষিত র**ক্তগুলো আমি আর ইয়াশ মিলে পরম যত্নে শুষে নিয়েছি।নিহান এবং ইয়াশের কারণে, আজ আমরা অভিশপ্ত হয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করছি।তাই শুরু থেকেই নিহানের প্রতি আমার চাপা ক্ষোভ ছিলো।কিন্তুু আমি সেটা কখনোই প্রকাশ করিনি।শুধু একটা সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষা করেছি।অবশ্য নিহানকে এখন আমি মনে মনে ধন্যবাদ জানাই।কারণ, মানবজাতির সাথে না মিশলে তো তোমাকে পেতাম না।”

“জানো,আমি যখন জানলাম তুমি সেই মানবী; যে কি না নিহানের আগের জন্মের স্ত্রী।এটা শুনে আমার মাথা টা খুব গরম হয়ে গেছিলো।কিন্তুু পরক্ষণেই ভাবলাম,’তুমি তো এই জন্মে ওর স্ত্রী না।চাইলেই তোমাকে পেতে পারি।’তাই নিজের মস্তিষ্ক সবসময় ঠান্ডা রাখতে হবে।নিহান তোমার সব খোজ- খবর নিয়ে আমাকে বলে।আমিও ঠান্ডা মাথায় ওর সাথে তাল মেলাই।ইউনিভার্সিটিতে নিহান তোমার দিকে যখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো,তখন আমার খুব মেজাজ খারাপ হতো,হিংসা হতো।আমি বইয়ের মাঝে মুখ গুজে থাকার ভান করে, সবার আড়ালে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমাকে আর ইরাকে যেই মন্টু কবিরাজ ধোকা দিয়েছিলো,তাকেও সেই বখাটে ছেলেগুলোর মতোই শাস্তি দিয়েছি।খু**বলে-খু*বলে খেয়েছি ওর শরীর।যখন নিহান আমাকে বললো,’ও তোমাকে বিয়ে করবে।তারপর তোমাকে সবকিছু বলে তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাবে।তখনই আমার ইচ্ছে করছিলো ওকে মাটিতে পি**ষে ফেলি।কিন্তুু নাহ! তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় দারুণ একটা প্ল্যান এলো।আমি জানতাম, তুমি কখনোই নিহান কে মানবে না।আর লিওনসেলের শর্ত অনুযায়ী নিহান তোমাকে হিপনোটাইজ করে, বশে এনে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারবে না।তাই নিজের সূচালো বুদ্ধি কে কাজে লাগালাম।তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি নিহান কে সবদিক থেকে সাহায্য করলাম।নিহানের কাছে আমি সবচেয়ে মহৎ ভাই হয়ে থাকলাম।তারপর তোমাকে যেদিন রেহান বা**জে ভাবে হ্যা**রাজ করেছিলো।সেদিন নিহান আমাকে পুরো বিষয়টি বললে, আমি ওকে রেহান কে ভ**য়ং**কর ভাবে মা**রার আইডিয়া দেই।বেচারা নিহান তোমার প্রেমে এমনিতেই মরিয়া।তাই ওর কাছে আমার আইডিয়া টা খুব ভালো লাগে।তারপর রেহানের বন্ধুর বাসায় গিয়ে রেহানকে খুব ভ**য়া**নক ভাবে হ**ত্যা করি।”

“তোমার শরীরে হাত দেওয়ার অপরাধে রেহানের শরীর থেকে সব র**ক্ত শুষে নিয়ে, নেকড়ে ভ্যাম্পায়ারদের দল দিয়ে ওর পুরো শরীর নিশ্চিহ্ন করে দেই।তারপর যেদিন তুৃমি আরেকবার পালিয়ে গেলে,সেদিনও তোমাকে উত্যক্ত করা ৪জন বখাটে যুবকদের আমি ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করে খেয়ে ফেলি।ইয়াশ খুব সহজ-সরল।তাই ওকে কখনোই এইসব বিষয়ে জড়াইনি।তবে ইয়াশ যদি কোনোভাবে তোমার প্রতি আমার দুর্বলতার ব্যাপারে জেনে যেতো, তাহলে ওকেও আমি শেষ করে ফেলতাম।”

“ওহহ সুইটহার্ট আরেক টা কথা তোমাকে মনে করিয়ে দেই,তোমার মনে আছে যেদিন তোমাকে নিহান বিয়ে করে এনেছিলো, সেদিন রাতে বেলকনিতে তুমি একটা কালো কুচকুচে বিড়াল দেখেছিলে?হাহাহা সেই বিড়াল টা আমি ছিলাম।তুমি আমাদের বাসায় আসার পর থেকে প্রতি রাতে, আমি বিড়ালের রূপে বেলকনি থেকে তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখ খানা মন ভরে দেখতাম।তবে নিহান সেটা কখনোই জানতে পারেনি।আর আজও জানতে পারবে না।কারণ,আমার পাওয়ার ব্যবহার করে তোমাকে আমার খাঁচায় বন্দী করেছি।নিহানের কোনো পাওয়ার এখানে কাজে লাগবে না।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে