ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-২১+২২

0
363

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“জ্ঞান ফেরার পর চোখের সামনে যা দেখলাম, সেটা দেখে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।”

“আমার চোখের সামনে শতশত ভ্যাম্পায়ার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সবচেয়ে বড় দানবাকৃতির ভ্যাম্পায়ার।তার বেশভূষা দেখে বুঝতে পারলাম,সে হয়তো এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কিং।
তার খুব নিকটে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমার বর্তমান বাবা-মা।আমি আর সিন্ডি(ইয়াশ) পাশাপাশি বসে আছি।কিন্তুু সিন্ডি আমার সাথে কোনো কথা বলছিলো না।সেই জায়গাটিতে চারিদিকে এতো পরিমাণে গাছ-পালা ছিলো, যে দিন না রাত সেটা বোঝার উপায় ছিলো না।হঠাৎ কারো বি**ক*ট চি**ৎ*কারে পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য মনে হয় কেঁপে উঠলো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম,ভ**য়ং**কর চি**ৎ*কার করা ব্যক্তিটি হলো ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল।তিনি মা-বাবার দিকে তাকিয়ে চি**ৎ*কার করে বললেন,’তোমরা অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার।তোমার পুরো পরিবার আজ থেকে অভিশপ্ত।আমি তোমাদের বলেছিলাম,মনুষ্য জগতে গিয়ে তাদের শরীর থেকে র**ক্ত পান করে তাদের মে**রে ফেলবে।কিন্তুু তোমরা দুইজন আমার কথা অমান্য করে, ওই মানবসন্তানদের ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমার ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে এনেছো।এর জন্য তোমাদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে।আজ থেকে এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে তোমাদের বহিষ্কার করা হলো।আজ থেকে তোমরা পৃথিবীতে গিয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করবে।আর তাদের সাথেই বাকিটা জীবন অতিবাহিত করবে।ভ্যাম্পায়ার হয়ে মানবজাতির সাথে জীবন অতিবাহিত করার কষ্ট তোমরা হারে হারে টের পাবে।”

“আমার বাবা-মা লিওনসেলের কাছে মাথা নত করে বললেন,’দয়া করে আমাদের এই শাস্তি দিবেন না।এছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি আমরা মাথা পেতে নেবো।আমরা মানবজগতে গিয়ে কিভাবে জীবিকানির্বাহ করবো?আমরা তো এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা।আর তাদের ভাষাও জানিনা।”

“লিওনসেল দাম্ভিক স্বরে বললেন,’এটাই তো তোমাদের জন্য মহাশাস্তি।আমার কথা অমান্য করার জন্য এটাই তোমাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি।তোমরা ওদের সাথে মিশতে মিশতে একসময় ওদের মতোই জীবন-যাপন করতে পারবে।এইমুহূর্তে এখান থেকে প্রস্থান করো।নইলে তোমার পুরো পরিবারকে ধ্বং**স করতে আমার একটুও সময় লাগবে না।”

“কোর্টন(ইমতিয়াজ আহমেদ) চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন,’আমাদের ওপর দয়া করুন আপনি।এখানে থাকতে হলে আপনি যেই শর্ত দিবেন, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেবো।”

“বাবার কথা শুনে লিওনসেলের হয়তো একটু মায়া হয়েছিলো।তিনি হঠাৎ আমার দিকে তাকালেন,তারপর আমার কাছে এসে বি**দ**ঘুটে হাসি দিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,’তোমরা মানবজাতি খুব সুন্দর এবং অত্যন্ত দুর্বল।কিন্তুু তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।ওরা ওদের ভুলের শাস্তি পাবে।সেই সাথে তুমিও পাবে।তবে তোমাকে যেহেতু আমার খুব পছন্দ হয়েছে,তাই আমি তোমাকে স্পেশাল পাওয়ার দেবো।যেটা তোমার দুই ভাইকে দেবো না।তুমি কঠিন বিপদের মুহূর্তে সেই স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করতে পারবে।’আর হ্যা,তোমাকে একটা শর্ত দিচ্ছি,’তোমার অর্ধাঙ্গিনী কে তুমি মনুষ্য জগতেই খুঁজে পাবে।সে অপূর্ণ অবস্থায় মারা গেছে।পৃথিবীতে তোমার সাথে থাকার বিশেষ ইচ্ছেটি তার পূরণ হয়নি।তাই তার আবার পুনর্জন্ম হবে।আর তোমার সাথে একদিন তার দেখা হবে।তবে এর জন্য তোমাকে কঠিন থেকে কঠিনতম সাধনা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে।পৃথিবীতে যাওয়ার পর তুমি তাকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে খুঁজবে।হয়তো তাকে পেতে তোমার হাজার বছরও লেগে যেতে পারে।তবুও তুমি একদিন তাকে পাবে।আর তারপর তুমি তার ওপর আমার দেওয়া বিশেষ পাওয়ার গুলো ব্যবহার করতে পারবেনা।তাকে তুমি সজ্ঞানে সবকিছু বুঝিয়ে আবারও বিয়ে করবে।আর তার সাথে মিলনের আগ মুহূর্তে তাকে তোমার অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবকিছু বলবে।তারপর তাকে রাজি করিয়ে তার ঘাড় থেকে র**ক্ত পান করে, সেই র**ক্ত তুমি তাকে পান করাবে।তারপর ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমার রাজ্যে নিয়ে আসবে।আর হ্যা,তোমার পুরো পরিবার যে ভ্যাম্পায়ার সেটা মানবজাতি যেনো কখনোই জানতে না পারে।তাহলে তোমাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।আমি এই রাজ্য থেকেই তোমাদের যাবতীয় কার্যাবলির দিকে নজর রাখবো।এই শর্তগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারো, তাহলে তোমাকে আমার ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের পরবর্তী রাজা বানাবো।”

“ভ্যাম্পায়ার কিং যখন আমাকে পরবর্তী রাজা বানানোর কথা বললো,তখন অন্য ভ্যাম্পায়ার গুলো আমার দিকে হিংসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো।যদিও আমি লিওনসেলের ভাষা বুঝিনি।কিন্তুু ওদের ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি ঠিকই লক্ষ্য করেছি।পরে মা-বাবা আমায় সবকিছু বুঝিয়ে বলে।তারপর লিওনসেল আমার মাথায় হাত দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে কিছু একটা পড়লেন,আর আমি নিজের ভেতরে অদৃশ্য কিছু শক্তি অনুভব করলাম।তখন থেকে আমরা পৃথিবীতে এসে মানবজাতির সাথে বসবাস শুরু করি।”

“প্রথম দিকে পৃথিবীতে মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন-যাপন করতে আমাদের খুব কষ্ট হতো;কিন্তুু পরবর্তীতে আমরা তাদের সাথে মিশতে শুরু করি।আমাদের যেহেতু এক্সট্রা পাওয়ার ছিলো,তাই প্রতিটি দেশে গিয়ে তাদের ভাষা শিখতে আমাদের ৩দিনের বেশি সময় লাগতো না।আমি,ফ্রেডো(এহতিশাম) এবং ট্রোডো(ইয়াশ) বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে ১-২বছর থাকতাম।আর প্রতিটি দেশে গিয়ে রূপ বদলে বিভিন্ন স্কুলে,কলেজে ভর্তি হতাম।এভাবে মানবজাতির সাথে থেকে আমাদের পড়াশোনাও কমপ্লিট হয়ে যায়।পৃথিবীতে মোট ২০৬টি দেশের মধ্যে ১২০টি দেশে তোমায় ২০৮বছর যাবৎ পা**গলের মতো খুঁজেছি।অবশেষে ১২১তম দেশে এসে তোমাকে পেয়েছি।এখানে এসে আমার নাম রাখি নিহান,ফ্রেডোর নাম রাখি এহতিশাম এবং ট্রোডোর নাম রাখা হয় ইয়াশ।বাবা-মা তাদের নাম রাখেন, ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম।”

“বাংলাদেশে আমাদের যেদিন ২০৯বছর পূর্তি হলো।সেই উপলক্ষে আমি,এহতিশাম এবং ইয়াশ তিনজনে মিলে প্ল্যান করি রাতে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে খুব তরতাজা সুস্থ- সবল পশুর খোঁজ করবো।আর তারপর আমরা সেটার র**ক্ত খুব মজা করে খাবো।যেই ভাবা সেই কাজ।আমরা বাদুড়ের রূপ ধারণ করে রাত ১১টার দিকে আমাদের বাসা থেকে একটু দূরের গলিতে ঢুকে দেখতে পাই, চকচকে একটি কালো কুকুর গলির এক সাইডে বসে আছে।কুকুরটা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলো।আমরা সেটা দেখে খুব খুশি হই।আমাদের থেকেও বেশি খুশি হয় ইয়াশ।কারণ ও খুব ভোজন প্রিয়।কাল বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি কুকুরটির ওপর।যখন আমরা পরম তৃপ্তির সাথে কুকুরটির ঘাড় থেকে র**ক্ত শুষে নিচ্ছিলাম,তখনই সেখানে এসে হাজির হলে তুমি।এহতিশাম তোমাকে চেনেনা।আর ইয়াশ যেহেতু আগের সব স্মৃতি ভুলে গিয়েছিলো,তাই ও তোমায় চিনতে পারিনি।কিন্তুু আমি…..আমি চিনেছি আমার ২০৯ বছরের চির সাধনা কে।তোমার সেই রূপ লাবণ্য সেই আগের মতোই আছে।পুনর্জন্ম হয়েছে তোমার।তুমি আমার নিনা।তোমাকে দেখার পর আমি কুকুরটির ঘাড় থেকে মুখ তুলে, অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দীর্ঘ ২০৯বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিলাম।এই অনুভূতি বোঝানো বড় দায়।কিন্তুু ক্ষণকালের ব্যবধানে সেই তৃষ্ণা মেটাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো ৪-৫জন যুবকদল।”

“আমার মনটা ক্ষণিকের মধ্যেই বিষাক্ত হয়ে উঠলো।আমি,এহতিশাম এবং ইয়াশ মিলে উড়ে গেলাম ওদের পানে।ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করলাম ওদের দেহ।আর তুমি সেখান থেকে চলে গেলে।তারপর সেই জায়গায় এসে তোমাকে পেলাম না।তোমাকে না পেয়ে আমি যেন আবার অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম।তখনই আমার বিশেষ পাওয়ারের কথা মনে পড়লো।আমি আমার পাওয়ার ব্যবহার করে তোমার বসবাসের স্থান জানার চেষ্টা করলাম,আর সফলও হলাম এবং সেই সাথে জানলাম ছোটবেলা থেকে তোমার সব জীবনবৃত্তান্ত।তবে সবচেয়ে মজার বিষয়টি ছিলো,যখন জানতে পারলাম গত এক বছর যাবৎ আমরা তিন ভাই যেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি;কাকতালীয় ভাবে তুমিও সেই একই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো।এই বিষয়টি সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিলো।তবে আমার জন্য খুব সুবিধা হয়েছিলো।কষ্ট করে আর ইউনিভার্সিটি পাল্টাতে হয় নি।”

“এক বছর যাবৎ তুমি ক্লাসে অনিয়মিত ছিলে,নইলে হয়তো আগেই আমাদের দেখা হয়ে যেতো।যাক ধৈর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়;কথাটা ১০০%সত্যি।আর সেটা আমি তোমাকে পেয়ে বুঝেছি নীলাঞ্জনা।তোমাকে আমি আবারও বিয়ে করেছি।আমি জানি পূর্বের স্মৃতি তোমার কিছুই মনে নেই।কারণ তোমার নতুন ভাবে জন্ম হয়েছে;হয়তো বা কখনো মনে হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।কিন্তুু আমার…আমার সব কিছু মনে আছে।তোমার সেই মিষ্টি হাসি,চঞ্চলতা,ভোরবেলা আমায় ‘ভালোবাসি’ বলে জড়িয়ে ধরা,ফুলসজ্জার রাতে পা**গলের মতো আমার সর্বাঙ্গে গভীরভাবে আদর করা সব..সবকিছু আমার হৃদ-মাঝারে খুব শক্তভাবে গেঁথে রেখেছি। আগের জন্মে তুমি আমার নিনা হয়েছিলে,আর এই জন্মে তুমি আমার নীলাঞ্জনা।ভালোবাসি তোমায় পা**গলের মতো ভালোবাসি নীলাঞ্জনা।”

“এতোদিন তোমার সাথে কথাগুলো বলার জন্য মনটা দোটানায় ভুগছিলো।কিন্তুু তোমাকে যে দ্বিতীয়বার আমি হারাতে চাইনা।তাহলে আমার ২০৯বছরের সাধনা সব বিফলে যাবে।সেই সাথে আমিও হারিয়ে যাবো চিরদিনের জন্য।আমি জানি, তুমি আমার ওই ভ**য়ং**কর রূপ দেখে খুব ভ**য় পেয়েছো।কিন্তুু আমি যদি কথাগুলো তোমায় মুখে বলতাম,তাহলে তুমি বিশ্বাস করতে না।তাই তোমাকে স্বচক্ষে দেখিয়েছি।আমি জানি তুমি ভীষণ ভ**য় পেয়েছো।কিন্তুু আমার যে কিছুই করার ছিলো না।’বলেই নিহান নীলাদ্রির গালে হাত রেখে বললো,’জানো নীলাঞ্জনা সেদিন ফুলসজ্জার রাতে যখন আমরা একে-অপরের ভালোবাসায় মত্ত ছিলাম,ঠিক তখন আমার লিওনসেলের সেই তিক্ত বিধিনিষেধের কথা মনে পড়লো।তখনই মনটা আমার বিষিয়ে উঠেছিলো।কিন্তুু ওই মুহূর্তে তোমার সেই অনুভূতি মাখা মায়াবী চেহারা দেখে,আমার ভেতরে জমে থাকা বিষন্নতা গুলো তুলে ধরতে পারিনি।সেদিন আমি অফিসে যাইনি,ছুটে গিয়েছিলাম সেই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে।কিন্তুু লিওনসেল আমায় সেই তিক্ত শর্তের কথাগুলো বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।আমাদের ভালোবাসা যদি সেই রাতে পূর্নতা পেতো, তাহলে তুমি সাথে সাথে মা**রা যেতে।’কথাটি বলতে গিয়ে নিহানের গলা কিছুটা আটকে গেলো।তারপর ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করলো,’কারণ ভ্যাম্পায়রদের সাথে মানবজাতির মিলন হলে মানুষ মা**রা যায়।তার অন্যতম কারণ হলো ভ্যাম্পায়ার এবং মানবজাতি ২জন দুই মেরুর।তবে ভ্যাম্পায়ার যদি মিলনের আগমুহূর্তে সেই মানুষটির ঘাড়ে বা**ইট করে,র**ক্ত শুষে নিয়ে ভ্যাম্পয়ারের মুখ থেকে লালা মিশ্রিত র**ক্ত সেই মানুষটিকে খাইয়ে দেয়;তাহলে সেও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। তখন আর মিলন হলেও সমস্যা হবে না।আমি চাইলেই হিপনোটাইজ করে
তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারতাম।কিন্তুু ধুরন্ধর লিওনসেলের শর্তের জন্য আটকে গিয়েছি।’বলেই নিহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’যাইহোক এখন রাত ৪টা বাজে।আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে;তবে তার আগে শুভ কাজটা সেরে ফেলি।তোমার ঘাড়ে আমি এখন বা**ইট করবো।আর আমার মুখ থেকে সেই র**ক্ত তোমায় খাওয়াবো।তারপর তুমিও আমার মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে।তারপর আমরা দ্বিতীয়বারের মতো মিলিত হবো।প্রেম সায়রে ভেসে যাবো দুজন।সুমিষ্ট ভাবে সফল হবে আমার ২০৯বছরের দীর্ঘ সাধনা।’বলেই নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকাতেই দেখলো, নীলাদ্রি ছু**রি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিহান ছু**রি*টির দিকে তাকিয়ে বললো,’সুইটহার্ট ছু**রি দিয়ে আমায় মে**রে ফেলবে নাকি হুমম?”

“নীলাদ্রি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছু**রি টা নিহানের পেট বরাবর তাক করে বললো,’আপনি একজন ঠকবাজ, প্রতারক।আপনি আমাকে নিজের কন্ট্রোলে আনার জন্য এই ধরণের উদ্ভট টাইপের গল্প গুলো সাজিয়ে বলেছেন।এই ধরনের কুসংস্কার কথা আমি বিশ্বাস করি না।”

“নিহান বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’এতক্ষণ যাবৎ এতোগুলো কথা তোমায় বলার পর,বলছো আমি উদ্ভট কথা বলছি?তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না?কেনো করছো না?আনসার মি।”

“নীলাদ্রি চোখজোড়া বন্ধ করে নিজের মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,’পুনর্জন্ম একটি ধর্মীয় মতবাদ যা প্রধানত হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম সহ অনেক ধর্মের মানুষ এটি বিশ্বাস করে। এছাড়া ইহুদি ধর্মেও আত্মার পুনর্জন্ম নামে একটি বিশ্বাস রয়েছে। মোক্ষ বা মুক্তি বা ঈশ্বরের সাক্ষাত অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত পুনর্জন্মের এই ধারা চলতে থাকে এবং মোক্ষ প্রাপ্তির মাধ্যমে এই জন্মান্তরের সমাপ্তি ঘটে। জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসের আরেকটি দিক হচ্ছে, এই বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি জীবন একই সাথে একটি পরকাল এবং পূর্বকাল। এই বিশ্বাস মতে, বর্তমান জীবন হল পূর্বজন্ম বা কর্মের ফল অনুযায়ী আত্মার কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। আত্মাকে একটি নিত্য সত্তা হিসাবে দেখা হয়।”

“মানুষের পুনর্জন্ম হওয়ার আক্বিদা হিন্দুদের মূল প্রথা ছিল। এটি কোন মুসলমানদের আক্বিদা নয়। যারা এই আক্বিদা পোষণ করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কারণ এর দ্বারা কিয়ামত, কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামকে অস্বীকার করা হয়ে থাকে। যদি পুনর্জন্ম হওয়ার দ্বারাই বান্দার শাস্তি ও পুরস্কার নিহিত হয়, তাহলে কিয়ামতের কোন প্রয়োজন নেই। বরং পৃথিবী টিকে থেকেই পাপ পুণ্যের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।”

“পুনর্জন্ম আকিদাপন্থীদের মতে ভাল কাজ করলে মৃত্যুর পর সে ভাল পরিবারে ভাল অবস্থায় জন্ম নিবে। আর খারাপ করলে পরজন্মে খারাপ প্রাণী হয়ে জন্ম নিবে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ ইসলাম ধর্মের মতে পৃথিবী ধ্বংসই হবে পাপ পুণ্যের পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের জন্য। এই বয়ানের মধ্যে দিয়ে ইসলাম এককভাবে স্বতন্ত্র, মৌলিকত্ব বজায় রেখেছে। প্রথম উদ্ভাবিত আদিম মতবাদকে উপেক্ষা করে ইসলাম বলছে; মানুষের রূহ বেহেশতে ছিলো। শাস্তিস্বরূপ আমরা পৃথিবীতে অবস্থান করছি।
একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর সে প্রথমে কবরের জগতে থাকে, তারপর তাকে কবরের জগতেই আবার শাস্তির জন্য জীবিত করা হবে। হাশরের ময়দানে সে দেহসহ উঠবে। হিসাব নিকাশ হবে। তার আমল অনুযায়ী সে হয়তো জান্নাতে যাবে নতুবা জাহান্নামে যাবে। তাই পুনর্জন্মের আক্বিদা ইসলাম বিরোধী। মুসলিম ধর্মে বলা হয়েছে—মৃত্যুর পর আত্মা বেহেস্তে বা দোজখে যাবে। সুখ অথবা দুঃখ নির্ধারণ করবে আল্লাহর শেষ বিচারের দিন কেয়ামত পর্যন্ত। সহস্র বছর ধরে যত মানুষ মারা গেছে, সব ধর্মের সব মানুষের বিদেহী আত্মারই পুনরুত্থান হবে শেষ বিচারের দিনটিতে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতে, আমাদের সচেতনতার বাইরেও দৃশ্যমান পৃথিবী গড়ে উঠতে পারে। আর এই ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞানীরাও একমত পোষণ করেন।”

“আপনার প্রশ্ন হতে পারে, পুনর্জন্ম কি সত্যি হয়? যদি হয়ও তাহলে কোন এক জীবের এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে যাওয়ার ভিত্তিটা কি? কি সেই জিনিস যা কোন একজনকে একটা জন্ম থেকে অপর একটা জন্মের দিকে নিয়ে যায়। এইটা বুঝতে হলে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতেই হবে। একটা মানুষ কীভাবে তৈরি হয়, সেই যান্ত্রিক প্রযুক্তির কথা বলছি। একজন মানুষের সব থেকে বাইরের পরিধিটা হলো ভৌত বা পার্থিব শরীর। যোগ বিদ্যায় সবকিছুকে শরীর হিসেবে দেখা হয়, কারণ, আমাদের পক্ষে এইভাবেই বুঝতে সহজ হয়।”

“শরীর তিনিটি মাত্রা বা ডাইমেনশন অথবা তিনটি স্তরের রূপে থাকে। যেমন পার্থিব শরীর বা ফিজিক্যাল বডিকে বলা হয় অন্নময় কোষ। অন্নময় কোষ মানে খাদ্য। এইটা হলো খাদ্যজাত শরীর বা ফুড বডি। পরেরটাকে বলা হয় মনোময় কোষ, যার অর্থ হলো মানুসিক শরীর বা মেন্টাল বডি। তৃতীয়টিকে বলা হয় প্রাণময় কোষ বা প্রানীক শরীর বা এনার্জি বডি। পার্থিব শরীর, মানুসিক শরীর ও প্রানীক শরীর এই তিনটি ডাইমেনশনই হলো ভৌত বা ফিজিক্যাল। জীবনের এই তিনটি ডাইমেনশনই কর্মের ছাপ বহন করে চলে। কার্মিক গঠন যদি ভেঙ্গে ফেলা যায় তখন আত্মা বলে কিছুই থাকেন না, প্রত্যেকটা জিনিস সবকিছুর মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।”

“মহা-সমাধি বা মহানির্মান বলতে যা উল্লেখ করা হয় তা হলো, মানুষ ধীরে ধীরে বুঝেতে সক্ষম হয় যে মূল চাবিকাঠিটা কোথায়, এবং কার্মিক কাঠামোটা তারা এমন ভাবে ভেঙ্গে ফেলে যাতে সত্যি সত্যি অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি মোটেও সহজ নয়। একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি- ‘যখন কেউ মারা যায়, আমরা বলি সেই লোকটা আর নেই, এইটা সত্য নয়। সেই ব্যক্তিটা আজ আর সে রকমভাবে নেই যেরকমভাবে আমরা তাকে জানতাম। কিন্তু সে অবশ্যই আছে। এখন যদি কার্মিক কাঠামোটা একশভাগ বিনষ্ট করে সে মারা যায় তাহলেই, তার অন্তিম প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে। এইটাকেই মুক্তি বা মহা-সমাধি বলা হয়েছে। জীবন ও জন্ম মৃত্যুর প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। মুক্তি মানে হলো শরীর ও মনের কাঠামো থেকে মুক্তি হয়ে যাওয়া। এই শরীর তো মাটির তৈরি, পৃথিবীরই একটা অংশ যা আমরা ধার করেছি। অণু-পরমাণু সহ অবশ্যই আমাদের সবকিছু শোধ করতে হবে। তাই একমাত্র কর্মের দ্বারা সময়ের সদ্ব্যবহারই আমাদের সকল মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।’আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।”

“নীলাদ্রির একাধারে বলা কথাগুলো শুনে নিহান উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো।তারপর নীলাদ্রিকে বললো,’দেখো ঐ দিকে কি যেনো আছে…

“নীলাদ্রি অবাক হয়ে নিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই, নিহান বাঁকা হেসে তড়িৎ গতিতে নীলাদ্রির হাত থেকে ছু**রি টা নিয়ে নিলো।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো নীলাদ্রি।চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,’ছু**রি টা আমায় দিন বলছি।একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।আপনি সাধারণ মানুষ না।আপনি খারাপ কিছু।’কিন্তুু আমি হলাম, ‘আশরাফুল মাখলুকাত;সৃষ্টির সেরা জীব।’আমি কিছুতেই আপনার কাছে ধরা দেবো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে যেতে থাকলো আর বলতে থাকলো,’তোমার লেকচার যেহেতু শেষ।তাহলে এখন আমরা মূল কাজটি শুরু করি।আর এই ছু**রি দিয়ে তুমি আমায় আ**ঘা*ত করলেও আমার কিছুই হবে না।কারণ ভ্যাম্পায়ার রা মানুষের আ**ঘা*তে মা**রা যায় না।আর ধরাতো তোমায় দিতেই হবে সুইটহার্ট।আজ আমার হাত থেকে কোনোভাবেই তুমি নিস্তার পাবে না।তোমাকে তো আমার করেই ছাড়বো।’ বলেই নিহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“তোমাকে তো আমার করেই ছাড়বো।’বলেই নিহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।”

“নীলাদ্রি গলা কা**টা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকলো,কিন্তুু নিহানের কাছ থেকে কিছুতেই ছুটতে পারছে না।নিহান ডেভিল হেসে নীলাদ্রির গালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’সুইটহার্ট তুমি একটা শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে খামোখা নিজের এনার্জি লস করছো।উফফ তুমি বড্ড বোকা।তবে আগের জন্মে খুব বুদ্ধিমতী ছিলে।আমি ইশারা করতেই, কতো সুন্দর করে আমায় আদর করতে।কিন্তুু এখন একদম ন**টি হয়ে গেছো।সমস্যা নেই, আমার শীতল ছোঁয়া দিয়ে তোমাকে হ**টি বানিয়ে ফেলবো।আর ইউ রেডি সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে থাকলো।হঠাৎ ওর মাথায় উপস্থিত বুদ্ধি এলো।ভাবলো,’ নিহান কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে।নীলাদ্রির মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো।মুহূর্তের মধ্যেই নীলাদ্রি নীরব হয়ে গেলো।’নিহানের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’আমার নিঃশ্বাস টা বন্ধ হয়ে আসছে।প্লিজ আমায় ছাড়ুন।আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।”

“নীলাদ্রির ভালোবাসার মোহে বেশামাল নিহান ওর কুটিল বুদ্ধি ধরতে পারলো না।আর নিজের পাওয়ার দিয়ে নীলাদ্রির মনের কথাও জানলোনা।নীলাদ্রির কোমল কন্ঠস্বর শুনে,নিহানের হৃদয় মুহূর্তেই পুলকিত হয়ে গেলো। নীলাদ্রিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে নীলাদ্রির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,’জানোতো নীলাঞ্জনা যারা জন্ম থেকেই ভ্যাম্পায়ার হয়,তাদের মন অনেক শক্ত হয়।তাদের মধ্যে দয়া-মায়া খুব কম থাকে।তবে কিছু কিছু ভ্যাম্পায়ার ব্যতীত।আমি যেহেতু আগে মানুষ ছিলাম,তারপর ভ্যাম্পায়ার হয়েছি;তাই আমার মধ্যে এখনও কিছুটা মায়া কাজ করে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,আমার বর্তমান বাবা-মা আমার ব্রেইন থেকে আগের স্মৃতিগুলো মুছে দেয়নি।জানো তো আমার এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া কেউ নেই।আমার নিজের বাবা-মায়ের মা**রা যাওয়ার খবর শুনে আমি মনে হয় ভেতর থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিলাম।মাঝে মাঝে ভাবতাম,ভ্যাম্পায়ার কিং যদি একবার বলতো যে আমার বাবা-মায়েরও পুনর্জন্ম হবে;তাহলে আমি তাদেরকেও খুঁজে বের করতাম।’বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নিহান।”

“নীলাদ্রির কাছে নিহানের বলা কথাগুলো অসহ্য লাগছে।তবুও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে।নীলাদ্রি মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে ভাবলো,’একবার শুধু আপনাকে বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই,তারপর আমি ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করে শেষবারের মতো পালাবো।আপনি আর আমার চিহ্ন ও খুঁজে পাবেন না।দরকার হলে বনে-জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে থাকবো।বন্য পশুরা আমাকে ছিঁড়ে খেলেও আপনার মতো বদ্ধ পা**গল,অদ্ভুত সাইকোর কাছে ধরা দেবো না।”

“ভেবেই নীলাদ্রি মেকি হাসি দিয়ে বললো,’শুনুন আজ আমি আপনার সম্পর্কে এতো কিছু জেনে অলরেডি শকড খেয়েছি মনে হয়।যাইহোক,এক রাতে এতো প্যারা নিলে কখন না জানি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি।এখন ভোর হয়ে গেছে।তাই এই শুভ কাজ টা এখন না করে,ভাবছি আগামীকাল রাতে আমি নববধূ রূপে সাজবো।তারপর আপনার সাথে সাথে আমিও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবো।যদিও ভ্যাম্পায়ারে আমি বিশ্বাসী না।তবুও আপনি নিশ্চয়ই আমার কাছে এতোগুলো কথা মিথ্যা বলবেন না।আর তখন এতো মিসবিহেভ করার জন্য সরি।”

“নিহান নীলাদ্রির নমনীয় কন্ঠে কথাগুলো শুনে খুব খুশি হয়ে গেলো।নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে তার ঠান্ডা হাত বুলিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’তোমার এতোটা কাছে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার জন্য খুব কষ্ট হয়ে যায়।আচ্ছা তোমাকে আরেকদিন সময় দিলাম সুইটহার্ট।আর হ্যা, এখন থেকে আগামীকাল রাত পর্যন্ত তুমি আমার সাথে এই চিলেকোঠার রুমে থাকবে।ভুলেও বের হবে না।তুমি ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পর,আমি একবারে তোমাকে নিয়ে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে যাবো।আর সেখানেই আমরা দ্বিতীয়বারের মতো ফুলসজ্জা করবো।”

” নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে; হাই তুলে চোখ ছোট ছোট করে বললো,’হুমম আপনি যা বলবেন তাই হবে।কিন্তুু এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।প্লিজ এখন আর কিছু শুনতে পারবো না।আমাকে একটু ঘুৃমাতে দিন।”

“ওকে তুমি ঘুমাবে তবে আমার বুকে।আর যদি কথা না শোনো তাহলে আমি তোমার বুকে ঘুমাবো।”

” না না না আমিই আপনার বুকে ঘুমাবো।আপনি শুয়ে পড়ুন।”

“নীলাদ্রি বলতেই, নিহান বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো।নীলাদ্রি মুচকি হেসে নিহানের বুকে শুয়ে পড়লো।”

“সকালে শায়লা বেগম,ইমতিয়াজ আহমেদ,এহতিশাম,ইয়াশ এবং ইরা ডাইনিং রুমে বসে গল্প করছে।ইরা ইয়াশের সাথে বেশ হাসি মুখে কথা বলছে।ইরা আর ইয়াশকে হাসি-খুশি দেখে এহতিশাম একবার আড়চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ইয়াশ তোর সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কথা আছে।খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে আসবি।’বলে এহতিশাম হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো।”

“ইয়াশ খাওয়া-দাওয়ার পর এহতিশামের রুমে গিয়ে বললো,’ভাইয়া তুমি আমায় ডেকেছো কেনো?”

“ওহহ তুই এসেছিস?আচ্ছা তোর আর ইরার মধ্যে কি সবকিছু হয়ে গেছে?”

“ইয়াশ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়ে গেছে ভাইয়া?”

“এহতিশাম চোখের মণি ঘুরিয়ে বললো,’উফফ তুই একটা গাধা।আমি বলছি যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক টা হয়, ওটা কি তোদের মধ্যে হয়ে গেছে?”

“এহতিশামের কথা শুনে ইয়াশ এইবার বুঝতে পেরে বেশ লজ্জা পেলো।লাজুক হেসে বললো,কি যে বলো না ভাইয়া।তেমন কিছু এখনোও হয় নি।তবে ইরা আমার সাথে এখন খুব ভালো ব্যবহার করে।কিন্তুু তুমি হঠাৎ পার্সোনাল প্রশ্ন করছো কেনো?”

“তুই তো জানিস কারো পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাতে আমার একদম ভালো লাগে না।কিন্তুু বড় ভাই হিসাবে আমার সব দিকে খেয়াল রাখা উচিত।ভ্যাম্পায়ার কিং এর শর্ত গুলো তোর মনে আছে তো?ইরা কে তোর ভ্যাম্পায়ারের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছিস?ও রাজি হয়েছে?”

“ইয়াশ চিন্তিত মুখ করে বললো,’না তো এখনোও বলি নি।ওর মন জয় করতে এখনোও আমার অনেক সময় লাগবে।ভাবছিলাম, ওর মুখে ভালোবাসার কথা শুনে তারপর বলবো।আর যদি একেবারেই রাজি না হয়।তাহলে ওকে হিপনোটাইজ করে ভ্যাম্পায়ার বানাবো।আর ভ্যাম্পায়ার কিং তো আমাদের কোনো বিধিনিষেধ দেয় নি।এতটুকু তো আমি করতেই পারবো।”

“এহতিশাম মুচকি হেসে বললো,’বাহ বাহ!তোর তো দেখছি অনেক বুদ্ধি হয়েছে।”

“ইয়াশ মাথায় হাত দিয়ে বললো,’হিহিহি ওই আরকি একটু আকটু বুদ্ধি হয়েছে।আচ্ছা ভাইয়া আমি রুমে গেলাম।নইলে ইরা আবার প্রশ্ন শুরু করবে।”

“আচ্ছা যা।আমি এখন অফিসে যাবো।নিহান হয়তো যাবে না।”

“ইয়াশ এহতিশামের রুম থেকে বেরিয়ে, নিজের রুমে চলে গেলো।”

“এদিকে ইরা শায়লা বেগমের সাথে সোফায় বসে গল্প করছে।গল্পের এক পর্যায়ে ইরা জিজ্ঞেস করলো,’আচ্ছা মা এই বাড়িটা এমন কালো রঙের কেনো?অন্য রং ও তো করাতে পারতেন।আর মা আপনাদের বাসায় আসার পর থেকে কোথাও আয়না দেখতে পেলাম না।কারণ টা কি জানতে পারি?শুনেছি শুধু নিহানের ওয়াশরুমে নাকি একটা আয়না আছে।সেটাও নাকি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।”

“শায়লা বেগম মিষ্টি করে হেসে বললেন,’কালো রং আমাদের খুব প্রিয়।তাই পুরো বাড়ির দেয়ালের রং কালো করিয়েছি।আর নিহান এবং এহতিশাম এই বাড়িতে আয়না আনতে নিষেধ করেছে।কেনো করেছে সেটা জানিনা।তবে জিজ্ঞেস করলে বলে,ওদের নাকি আয়না দেখতে ভালো লাগে না।”

“ইরা শায়লা বেগমের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আপনার নিজেকে কখনোও আয়নাতে দেখতে ইচ্ছে করে না?”

“ইরার প্রশ্নে শায়লা বেগম কি বলবে ভেবে পেলো না।
তখনই সদর দরজার বাইরে কলিংবেল বেজে উঠলো।শায়লা বেগম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে তড়িঘড়ি করে দরজা খুললেন।দরজা খুলতেই,একজন ভদ্রলোক বললেন,’আসসালামু আলাইকুম আমার নাম রাহাত আহমেদ।আমি ইরার বাবা।”

“দরজার বাইরে থেকে দীর্ঘদিনের চিরচেনা কন্ঠটি কর্ণগহ্বরে যেতেই, ইরা বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে মিষ্টি করে হেসে উঠলো ইরা।ইরার মন যেন আনন্দে নেচে উঠলো।সেইদিনের পর থেকে এই প্রথম রাহাত আহমেদের কন্ঠ শুনলো।ইরা দৌড়ে গিয়ে রাহাত আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললো,’বাবা তুমি এসেছো?আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।”

“রাহাত আহমেদ মুচকি হেসে বললেন,’তোকে সারপ্রাইজ দিলাম রে মা।আর সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে নীলাদ্রি।এখন ভেতরে আসতে দিবি না?আমার ১০মিনিট পর অফিসে চলে যেতে হবে।”

“ইরা রাহাত আহমেদ কে ছেড়ে দিলো।শায়লা বেগম হেসে বললেন,’আসুন বেয়াই সাহেব।আপনি আগে জানিয়ে আসলে খুব ভালো হতো।”

“ইরা রাহাত আহমেদের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো।তারপর বললো,’বাবা কতোদিন পর তুমি এখানে এসেছো।কোথায় তোমার সাথে মন ভরে একটু গল্প করবো।কিন্তুু সেটা না করে তুমি এখনই চলে যাবে?উমম প্লিজ বাবা আজ তুমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নাও।”

“না মামনি আজ ছুটি নিতে পারবো না।এমনিতেই তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হলো; তাই দেখে গেলাম।আরেক শুক্রবার তোদের বাসায় আসবো।’শায়লা বেগম ঝটপট যতটুকু পারলেন, ততটুকু নাস্তা রাহাত আহমেদের সামনে রাখলেন।এরইমধ্যে ইয়াশ সেখানে এসে দেখলো, রাহাত আহমেদ সোফায় বসে ইরার সাথে গল্প করছে।এটা দেখে ইয়াশ বেশ খুশি হয়ে সেখানে গেলো।রাহাত আহমেদ কে সালাম দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলো।ইরা বললো,’বাবা নীলাদ্রির সাথে দেখা করে যাবে না?ওকে ডাক দেই।একটু দাঁড়াও।”

” না মা।আর ৫মিনিট দেরি হলে অফিসের বাস পাবো না।আর হ্যা, তোরা সবাই কিন্তুু আমার বাসায় যাবি।’বলেই রাহাত আহমেদ শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,’বেয়ান আমার বাসায় আপনাদের সপরিবারে দাওয়াত রইলো।”

“শায়লা বেগম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সম্মতি জানালেন।তারপর রাহাত আহমেদ চলে গেলেন।”

————-
“এদিকে নীলাদ্রি অনেক আগেই উঠে গেছে। রাতে নীলাদ্রি অনেক কষ্ট করে নিহানের ঠান্ডা বুকের ওপর শুয়েছিলো।আধাঘন্টা পর নিহান যখন ঘুমিয়ে গেলো, তখন নীলাদ্রি বালিশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।সকাল সকাল নীলাদ্রির ঘুম ভেঙে গেলেও, বিছানায় শুয়ে মোচড়ামুচড়ি করছে।”

“নিহানেরও ঘুম ভেঙে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রি চিন্তিত মুখ নিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।নিহান নীলাদ্রির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’কখন উঠেছো সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি হকচকিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,’এই তো কয়েক মিনিট আগে উঠলাম।”

” নিহান মুচকি হেসে নীলাদ্রির দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,ওর ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিতে চাইলো।নিহান কে এগিয়ে আসতে দেখে, নীলাদ্রির গতকাল রাতে নিহানের কবুতর ভাগ করে র**ক্ত খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।নীলাদ্রি অস্ফুটস্বরে বললো,’না না না এখন না প্লিজ।”

“নিহান ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেনো?এখন তো আর ফুলসজ্জা করবো না।জাস্ট লিপ কিস করবো।”

“আআআ..আসোলে আমি তো ব্রাশ করিনি,আর আপনিও ব্রাশ করেন নি।এই অবস্থায় এগুলো কেমন আনইজি লাগবে।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হো হো করে হেসে উঠলো।বললো,’ওকে তুমি ফ্রেশ হও।আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

“নীলাদ্রি নিচু স্বরে বললো,’আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমি কি নিচে গিয়ে আমাদের জন্য খাবার আনবো?”

“নীলাদ্রির নিচে যাওয়ার কথা শুনে নিহান চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,’একদম তুমি নিচে যাবে না।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।’বলেই নিহান বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ৫মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো।নীলাদ্রি উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই দেখলো, নিহান খাবার নিয়ে এসেছে।নিহান এবং নীলাদ্রি দু’জনেই ব্রেকফাস্ট করলো।”

“কিছুক্ষণ পর নিহান নীলাদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর ওর চুলগুলো পেচিয়ে আবার ছেড়ে দিচ্ছে।”

“হঠাৎ নীলাদ্রি বলে উঠলো,’আচ্ছা আপনি বলেছিলেন, ভ্যাম্পায়ারদের জীবনী-শক্তি সম্পর্কে আমাকে বলবেন।আমি তো এদের সম্পর্কে কিছু জানিনা।আমাকে একটু বলবেন?”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’হুমম অবশ্যই বলবো।’বলেই নিহান শুরু করলো,
“ভ্যাম্পায়ারের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে র**ক্তচোষা। এটি মূলত পৌরাণিক বা লোককথার একটি প্রানী যা জীবিত প্রাণীর র**ক্ত খেয়ে বাঁচে।
ভ্যাম্পায়ারদের শরীর স্ফীত, গায়ের রং আরক্তিম, নীলচে লাল অথবা কালো; এই বৈশিষ্ট্যগুলি ভ্যাম্পায়ারদের সাম্প্রতিক র**ক্তপানের দ্যোতক।”

“হাজার হাজার বছর আগে থেকেই ভ্যাম্পায়ারের মিথ প্রচলিত আছে মানবসমাজে। ভ্যাম্পায়ার আসলে কি? কিভাবে তাদের জন্ম হল? বাস্তবে কি ভ্যাম্পায়ার আসলেই আছে?আমি জানি তোমার মনে এমন হাজারো প্রশ্ন বাসা বেঁধেছে।এইরকম বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবো আজ।ভ্যাম্পায়ার কি?”

“হলিউডের মুভি-সিরিজগুলো দেখলে মনে হতে পারে ভ্যাম্পায়ার হচ্ছে কোন রূপসী নারী, যার জন্তুর মতো বড় বড় দাঁত রয়েছে। পুরুষ মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভুলিয়ে ভালিয়ে র**ক্ত চুষে খাওয়াই এদের কাজ।”

” তবে এই ভ্যাম্পায়াররা শুধুমাত্র রাতেই বের হয়। দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে, কারন সূর্যের আলো এরা সহ্য করতে পারে না।সূর্যের আলোতে ওদের শরীর ঝলসে যায়।তাই যে ভ্যাম্পায়ারগুলো পৃথিবীতে মানুষরূপে বসবাস করে তারা বাইরে বের হলে সবসময় ছাতা মাথায় দিয়ে বের হয়।তবে বেশিরভাগ সময় তারা রাতে বের হয়।ভ্যাম্পায়ার রা আয়না দেখতে পারেনা।কারণ আয়নার সামনে দাঁড়ালে তাদেরকে দেখা যায় না।তাই আমাদের বাসায় আয়না নেই।”

” ভ্যাম্পায়ারদের এভাবে উপস্থাপনের পেছনে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস।
চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো। ইহুদীদের পৌরাণিক কাহিনীতে “লিলিথ” নামে একটি চরিত্র রয়েছে। তাকে বলা হয় সকল অশুভ জীবের মাতা, অর্থাৎ যত ডেমন আছে- সবই এসেছে লিলিথের গর্ভ থেকে। লিলিথ রাতের বেলা অপরূপা সুন্দরী নারীর বেশে পুরুষদের ঘরে প্রবেশ করতো। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সাথে মিলিত হতো। কিন্তুু লিলিথের সাথে মিলন শেষে কোনো পুরুষ বেঁচে থাকতো না। লিলিথ তখন সেই পুরুষদের র**ক্ত পান করতো এবং গর্ভবতী হতো। তার গর্ভে জন্ম নিতো অজস্র অশুভ জীব।গ্রিক মিথলজিতেও ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে বিশ্বাস করা হতো, রাজা বেলাসের মেয়ে লামিয়া ছিল দেবরাজ জিউসের গোপন প্রেমিকা।জিউসের স্ত্রী হেরা দেবী যখন জেনে যায় লামিয়ার কথা।তখন লামিয়ার সকল সন্তানকে সে হ**ত্যা করে ফেলে।প্রতিশোধস্বরূপ লামিয়া ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায় এবং রাতের বেলা শিশুদের র**ক্ত পান করতে শুরু করে।”

“মধ্যযুগে ইউরোপে ভ্যাম্পায়ারের ভীতি এত প্রবল ছিল যে, লা**শকে হৃৎপিণ্ড বরাবর ফেঁ**ড়ে দেয়া হতো, কারণ বিশ্বাস করা হতো যে, এতে ভ্যাম্পায়ার হয়ে লা**শ ফেরত আসতে পারে না। সে সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডাইনি কিংবা ভ্যাম্পায়ারের সন্দেহে প্রচুর মেয়ে মানুষকে হ**ত্যার প্রমান পাওয়া গেছে। ২০০৬ সালে ভেনিসের কাছে ১৬ শতকের একটি কবরে মুখে ইট দেয়া একটি মহিলার মৃ**তদেহ পাওয়া যায়।ধারণা করা হয় যে ভ্যাম্পায়ার মনে করে তাকে হ**ত্যা করা হয়েছিলো।র**ক্তচোষা বৈশিষ্ট্যের জন্যে এদের বলা হয় ভ্যাম্পায়ার বাদুড়। এরাও রাত্রিবেলা বের হয়। দিনের আলো সহ্য করতে পারেনা বলে গুহা, পরিত্যক্ত কুয়া, ফাঁপা গাছের গুড়ি কিংবা পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় নেয়।এরা গরু, ছাগল এমনকি সুযোগ পেলে মানুষের শরীর থেকেও র**ক্ত চুষে খায়। তবে বাংলাদেশে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় নেই বললেই চলে।ভ্যাম্পায়ার বাদুড় মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে দেখা যায়।”

“ভ্যাম্পয়াররা চাঁদ থেকে শক্তি আহরণ করে।তবে তাদের প্রধান খাবার যেহেতু র**ক্ত;তাই টানা ২দিন যদি তারা র**ক্ত না খেতে পারে তাহলে মা**রা যায়।এছাড়াও ভ্যাম্পায়ারদের কিছু স্পেশাল পাওয়ার আছে।তারা মানুষের মনের খবর জানতে পারে,এমনকি কোনো মানবজাতি যদি তাদের আ**ঘা*ত করে, তাহলে তাদের কিছু হয়না।তবে তাদের স্বজাতি ভ্যাম্পায়ার আ**ঘা*ত করলে, তারা ব্যথা অনুভব করে।ভ্যাম্পায়ারদের শরীরে র**ক্ত নেই।তাই তাদের শরীর সবসময় বরফের মতো ঠান্ডা থাকে। তারা বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে।কিন্তুু বজ্রপাত একদম সহ্য করতে পারেনা।”

“ভ্যাম্পায়ারদের চির শত্রু হলো রসুন।অনেক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে রসুনের অসাধারণ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে: প্রাচীন মিশর থেকে রোমানিয়া পর্যন্ত , রসুন একটি প্রাকৃতিক পোকামাকড় প্রতিরোধক, একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য পূর্বপ্রাকৃতিক মন্দের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভ্যাম্পায়ারদের বিরুদ্ধে রসুন নিরাময় ক্ষমতা প্রয়োগ করে।তাই আমাদের বাসায় রসুন জাতীয় কোনো খাবার খাওয়া হয় না।আর আমাদের খুব কাছে রসুন আনা হলে আমরা সহ্য করতে পারিনা।”

—————–
“নিহানের মুখে ভ্যাম্পায়ারদের বৈশিষ্ট্যগুলো শুনে নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো, আর সাথে খুশিও হলো।আর সবচেয়ে বেশি খুশি হলো ভ্যাম্পায়ারদের সবচেয়ে দুর্বল পয়েন্টের কথা শুনে।ওর মাথায় ঝটপট একটা আইডিয়া আসতেই, বিশ্বজয়ের হাসি দিলো নীলাদ্রি।”

“সারাদিন নিহান নীলাদ্রির সাথে এভাবেই লেপ্টে রইলো।
রাত ৯টায় নিহান নীলাদ্রিকে কালো রঙের শাড়িটি পড়তে সাহায্য করলো।আর ওকে নিজে হাতে জুয়েলারি পড়িয়ে দিলো।হালকা মেকআপে নববধূর মতো সেজেছে নীলাদ্রি।নিহান নীলাদ্রির সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙের শেরওয়ানি পড়লো।নিহান নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরতেই,নীলাদ্রি বললো ‘আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি?’
নিহান হাসি মুখে মাথা নাড়লো।নীলাদ্রি ওয়াশরুমে চলে যেতেই, নিহান চিলেকোঠার রুম থেকে বের হয়ে ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে আকাশে থাকা অর্ধ-বৃত্তের মতো চাঁদ থেকে শক্তি আহরণ করলো।”

“নীলাদ্রি এই সুযোগ টাই খুজছিলো।বাঁকা হাসি দিয়ে রুম থেকে চুপি চুপি বের হয়ে, এক দৌড়ে সিড়ি থেকে নিচে নেমে কিচেনে চলে গেলো।কিচেনে গিয়ে দেখলো কেউ নেই।নীলাদ্রি খুব খুশি হলো।কিচেনের এক সাইডে ঝুড়িতে থাকা রসুনগুলো নিয়ে এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলো।নীলাদ্রির উপস্থিতি টের পেতেই নিহান পেছনে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রি নিহানের চারপাশে বৃত্তের মতো রসুন গুলো বিছিয়ে দিয়েছে।নিহান তো সেটা দেখে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।”

“নিহান কাশতে শুরু করলো,নিহান অনেক কষ্টে নীলাদ্রি কে বললো,’এটা কি করছো নীলাঞ্জনা? প্লিজ এগুলো সরাও, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“নীলাদ্রি ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে বললো,’এতোদিন আমাকে খুব জ্বালিয়েছেন।আপনাকে কিছুই বলিনি।কারণ আপনার মতো এমন অদৃশ্য পাওয়ার আমার ছিলো না।আপনি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করলেও, আমি মানুষ নিহান কে ভালোবেসেছি। আর সারাজীবন তাকেই ভালোবেসে যাবো।কিন্তুু আপনার এই ভ্যাম্পায়ার রূপকে না।আমি হলাম সৃষ্টির সেরা জীব; আশরাফুল মাখলুকাত।আমি কখনোই জেনেশুনে এই পাপ কাজ করবো না।আমি কিছুতেই ভ্যাম্পায়ার হবো না।আপনি এই গন্ডির মধ্যেই পড়ে থাকুন।আপনার আর আমার এই পৃথিবীতে হয়তো মিলন হলো না।তবে যদি বেঁচে থাকি, তাহলে পরকালে আপনাকে মানুষ রূপে চাইবো।’বলেই ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো নীলাদ্রি।এই মুহূর্তে কালো শাড়ি পরিহিত, নীলাদ্রির খোলা চুলে ফর্সা মুখস্রিতে ঐ চোখজোড়ার অগ্নিদৃষ্টি দেখলে; যে কেউ ওকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলে আখ্যায়িত করতো।”

“নিহানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলো। খুব কষ্ট করে বললো,’এএএএ..এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে আমি ম**রে যাবো নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রির হয়তো কিছু কানে ঢুকলো না।একবারও নিহানের অসহায় মুখটির দিকে তাকালো না।ও দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।হল রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে কেউ নেই।নীলাদ্রি এক দৌড়ে সদরদরজা খুলে অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে