#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]
“দু’জনের কবিতা মূলক টক-ঝাল ঝগড়াতেই পুরো বিকাল টি কে**টে গেলো।”
“সন্ধ্যায় নীলাদ্রি নিহানের জন্য গরুর মাংস ভুনা আর রুটি নিয়ে এসে টি-টেবিলে রাখলো।নিহান বিছানায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।এমন সময় তার নাকে রসুনের গন্ধ যেতেই নিহান কাশতে শুরু করলো।
নীলাদ্রি তো নিহানের কাশি দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে আপনার?মুখে কিছু গিয়েছে?”
” নিহান কাশির জন্য কথা বলতে পারছেনা।নাক মুখ কুঁচকে অনেক কষ্টে বললো,’এখানে রসুনের কিছু এনেছো?”
“নীলাদ্রির তো কিছুই মাথায় আসছেনা।বললো,’নাতো আমি রসুনের কিছুই আনি নি।”
“নিহানের চোখ আটকে গেলো টি-টেবিলে থাকা গরুর মাংস ভুনার দিকে।নিহানের আর বুঝতে বাকি রইলো না, যে গরুর মাংস ভুনাতে নীলাদ্রি রসুন বাটা দিয়েছে।”
“নিহান কাশতে কাশতে খুব কষ্টে বললো,’প্লিজ ওটা সরিয়ে ফেলো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ নীলাঞ্জনা।”
“নীলাদ্রি নিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান গরুর মাংস ভুনার বাটি দেখাচ্ছে।নিহান কে এতো কাশতে দেখে নীলাদ্রি তৎক্ষনাৎ বাটি টা কিচেনে গিয়ে রেখে আসলো।কিচেন থেকে দৌড়ে এসে দেখলো, নিহান পানি খাচ্ছে আর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নীলাদ্রি নিহানের কাছে এসে তার বুকে হাত বুলিয়ে বললো,’খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার?রসুনে আপনার কোনো সমস্যা আছে?”
“নিহান ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললো,’হুমম রসুনের গন্ধে আমার শ্বাসকষ্ট হয়।”
“নীলাদ্রি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।রসুনের গন্ধে যে কারো শ্বাসকষ্ট হয়,এটা ও প্রথম শুনলো।কারণ অনেকের রসুন খেলে শ্বাসকষ্ট,অ্যালার্জি হয়।কিন্তুু রসুনের গন্ধে হয়;এটা ও প্রথম জানলো।নিহান কে বললো,’আপনাকে কি ডাক্তার এই কথা বলেছে,যে রসুনের গন্ধে শ্বাসকষ্ট হয়?আমি তো জানি রসুন খেলে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়।আবার শ্বাসকষ্ট হলে অনেক সময় রসুন খুব কাজে লাগে।যেমন: হাফ কাপ দুধে রসুন দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়।”
“নিহান নীলাদ্রির কথায় কি বলবে ভেবে পেলো না।এখন তার কাছে একটু ভালো লাগছে।তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললো,’আমার শ্বাসকষ্টের জন্য কি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে নীলাঞ্জনা?”
“নিহানের বোকা টাইপ কথা শুনে নীলাদ্রি অবাক না হয়ে পারলো না।নিহানের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এটা কি ধরনের কথা বললেন?আপনার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হলেও আমি আপনার পাশেই থাকবো।তবে আমি দোয়া করি, আপনাকে যেনো আল্লাহ এমন কোনো কঠিন রোগ না দেয়।এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা কখনোও বলবেন না।”
“নিহান মুচকি হেসে নীলাদ্রির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,’ভালোবাসি তোমায়,পা**গলের মতো ভালোবাসি।”
” ব্যাস এই একটি কথাই নীলাদ্রি কে ঘায়েল করতে যথেষ্ট।নীলাদ্রি হঠাৎ করেই নিহানের ঠোঁট জোড়ায় ওর ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় নিহান পুরো হতবিহ্বল হয়ে গেলো।নীলাদ্রির উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে নিহান ও তাল মেলাতে লাগলো।একসময় নিহান নীলাদ্রি কে বিছানায় বসিয়ে নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে বাইট করলো।নীলাদ্রি তো পা**গল প্রায়, নীলাদ্রিও সমান তালে নিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঠান্ডা ঠোঁটে কা**মড় দিলো।নীলাদ্রির নিহানের ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তুু তার থেকেও বেশি ভালো লাগছে।নীলাদ্রি নিহানের টি-শার্ট খুলতে চাইলো। কিন্তুু ওই মুহূর্তে নিহানের আবারও লিওনসেলের সেই শর্ত গুলো মনে পড়লো।একদিকে অবাধ্য অনুভূতি, অপরদিকে অতীতের সেই তিক্ত শর্ত।কোন দিকে যাবে নিহান?কিন্তুু সাময়িকের এই অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিয়ে, নিহান কিছুতেই নীলাদ্রিকে সারাজীবনের মতো হারাতে পারবে না।তাই দ্বিতীয়বারের মতো আবারও নীলাদ্রির ডাকে সাড়া দিলো না নিহান।বুকের মধ্যে সীমাহীন কষ্ট চেপে রেখে নীলাদ্রির হাত সরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো,’এখন না নীলাঞ্জনা।”
“নিহানের প্রত্যাখ্যানে নীলাদ্রি এইবার অবাক না হয়ে পারলো না।মনের মধ্যে থাকা চাপা কষ্ট গুলো প্রকাশ করে বললো,’যখন আপনি আমাকে চাইতেন; তখন আমি ধরা দেইনি।আর আজ আমি আপনাকে চাইছি অথচ আপনি আমাকে ইগনোর করছেন।আপনি কি প্রতিশোধ নিতে চাইছেন?”
“নীলাদ্রির সাথে বিতর্ক করার মুড নিহানের নেই।নিহান কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা ভাবলো।তারপর বাঁকা হেসে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’উহুমম তোমার থেকে আমি কেনো প্রতিশোধ নেবো নীলাঞ্জনা?তুমি আমার রাজ্যের রানী।তাই তোমাকে চিরদিনের জন্য আমার সাথে থাকার ব্যবস্থা করবো।তাই একটু সময় চাইছি।”
“অদ্ভুত তো!আমি তো আপনার সাথেই আছি।আর মৃ**ত্যু*র আগ পর্যন্ত আপনার সাথেই থাকবো।”
“নীলাদ্রির সহজ-সরল স্বীকারোক্তি শুনে নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে, নীলাদ্রির ঠোঁটের বা**ইট করা জায়গায় আলতো করে চুমু দিলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’নীলাঞ্জনা আজ রাতে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।রেডি থেকো সুইটহার্ট। আর হ্যা, তুমি রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো; আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।আমার রাতে আসতে লেট হবে।”
“নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো,’কি কাজ আছে আপনার?আজ তো ছুটির দিন।ছুটির দিনে কিসের কাজ?”
” পুলিশদের মতো জেরা করছো কেনো তুমি?আমি কি বাইরে যেতে পারি না?নাকি সেটাও তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”
“নিহানের এইরকম ত্যাড়া টাইপ কথায় নীলাদ্রি খুব কষ্ট পেলো।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,,’একদিনেই পুরনো হয়ে গেলাম তাইনা?”
“এই যে আমার বিকালে বলা কথার সাথে তোমার কথাগুলো পুরোপুরি মিলে গেলো।তোমরা মানবজাতি মনে হয় এইরকমই।কিছু হলেই তোমাদের মন বেঁকে যায়।লিসেন,তুমি কখনোই আমার কাছে পুরনো ছিলেনা;আর না কখনো থাকবে।এখন এইসব কথা বলার সময় নেই আমার।আমি যাচ্ছি নীলাঞ্জনা।আর হ্যা, নিজের খেয়াল রেখো।’বলেই নিহান চলে গেলো।নীলাদ্রি করুণ দৃষ্টিতে নিহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।মনের মধ্যে আবারও চাপা ক্ষোভ তৈরি হলো।সাথে তৈরি হলো হরেক রকমের প্রশ্নের ঝুড়ি।”
———————
“এদিকে সন্ধ্যার একটু পরে ইরা ঘুমিয়েছে।রাত ৯টা বেজে গেছে এখনোও উঠছে না।তাই ইয়াশ ইরার কাছে এসে বসলো।ইরার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভাবলো,’আমার ইরা দেখতে কতোটা সুন্দর।ইশশ.. ওর গালে যদি একটা কিস করতে পারতাম,তাহলে মনে হয় আমার ঠোঁট জোড়া ধন্য হয়ে যেতো।কিন্তুু আমি ওর কাছে আসলেই তো, তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।এখন তো ইরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এখন একটা সুযোগ নেয়াই যায়,যতোই হোক আমারই বিয়ে করা বউ।’ভেবেই ইয়াশ ইরার গালে আলতো করে একটা চুমু দিলো।ইয়াশের তো একটা চুমু দিয়ে মন ভরে নি; তাই ইয়াশ ইরার ঠোঁট জোড়ায় খুব আস্তে করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ইশশ আজ ইয়াশের ঠোঁট জোড়া ধন্য হলো।ইয়াশ হাসি মুখে চোখজোড়া বন্ধ করে আনমনে গেয়ে উঠলো,
“🎶ঘুম ঘুম চোখে দেখি আমি তোকে
কি যে ভালো লাগে বোঝাতে পারিনা
তুই নে বুঝেনে, রেখে মাথা রেখে
আমার এই বুকে, বলতে পারিনা।
তোর থেকে চোখ যেন ফেরাতে পারিনা
এই পৃথিবীতে তুই তোরই তুলনা,
তোর থেকে চোখ যেন ফেরাতে পারিনা
এই পৃথিবীতে তুই তোরই তুলনা।
ঘুম ঘুম চোখে, দেখি আমি তোকে
কি যে ভালো লাগে, বোঝাতে পারিনা
তুই নে বুঝেনে, রেখে মাথা রেখে
আমার এই বুকে, বলতে পারিনা।”🎶
” ইয়াশের কন্ঠে গান শুনে ইরার ঘুম ভেঙে গেলো।ইয়াশকে গান গাইতে দেখে ইরা মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।ইরার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।ইরা এবং নীলাদ্রি দু’জনেই গান পাগলী।মানুষের কন্ঠ যেমনই হোক না কেনো,যদি গানের সুর,তাল,অনুভূতি গুলো একদম পারফেক্ট থাকে; তাহলেই তাদের গান শুনতে বেশি ভালো লাগে।ইরা ইয়াশের কন্ঠে গান শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।মনে মনে বললো,’ইয়াশ এতো সুন্দর করে গান গাইতে পারে?হাউ ইজ ইট পসিবল?যেমন অসাধারণ গানের গলা,তেমন তার পারফেক্ট সুর।”
“ইরা কে ভালোভাবে পটানোর জন্য এই গান টাই মনে হয় যথেষ্ট ছিলো।ইরা মনে মনে বললো,’এমন একজন সুন্দর কন্ঠের অধিকারী আমার স্বামী?ওয়াও ইয়াশ কবিতা যতোটা খারাপ আবৃত্তি করে।গান ঠিক ততোটাই ভালো গায়।’
আহা বেচারা ইয়াশের যে মাত্র একটা গান গেয়েই ভাগ্য খুলে যাবে সেটা ইয়াশ জানতো না।”
” ইরা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,’জাস্ট অসাম,মাইন্ডব্লোয়িং এন্ড মেলোডিয়াস ভয়েস আপনার।”
“ইয়াশ চোখ জোড়া খুলে ইরার দিকে হা করে তাকিয়ে বললো,’কি বললে তুমি?আবার বলো।”
“ইরা হেসে ইয়াশের হাত ধরে বললো,’খুব সুন্দর কন্ঠের অধিকারী আপনি।দারুণ গেয়েছেন।আপনার কবিতা যতোটা জঘন্য।গান ঠিক ততটাই সুন্দর।যাইহোক আমি খুব খুশি।থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর করে গান গেয়ে শোনানোর জন্য।”
” ইয়াশ এমনিতেই মোটা;তার ওপর ইরার এভাবে হাত ধরা এবং প্রশংসা শুনে ইয়াশ ফুলে বেলুন হয়ে গেলো।ইয়াশের ইচ্ছে করছে বাদুড়ের রূপ ধারণ করে এখুনি আকাশে উড়ে বেড়াতে।ইয়াশ ইরা কে বললো,’সত্যি সোনা তুমি আমার গান পছন্দ করেছো?আচ্ছা আরেক টা শোনাই।’বলেই,ইয়াশ চোখ বন্ধ করে আবারও গাইলো,
🎶চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…
আবার এলো যে সন্ধ্যা
শুধু দু’জনে….🎶
“ইয়াশ গাইছে আর ইরা ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।”
——————-
রাত ১০টায় মন খারাপ করে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে নীলাদ্রি।রাত ১২টার দিকে হঠাৎ কিছু একটার শব্দ পেয়ে ওর ঘুম ভেঙে গেলো।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’সে কখন এলো?আর এখনই বা কোথায় গেলো?নীলাদ্রি আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে নিহানের পিছু নিলো।দেখলো নিহান ছাদের দিকে যাচ্ছে।নীলাদ্রি নিঃশব্দে নিহানের পিছু পিছু ছাদে গেলো।”
“নিহান ছাদের কর্ণারে গিয়ে খাঁচায় থাকা দু’টি কবুতর বের করলো।নীলাদ্রি ছাদে না গিয়ে দরজার আড়াল থেকে এক জোড়া চোখ দিয়ে দেখতে থাকলো।ওর কিছু মাথায় আসছে না।ভাবলো,’এই জোড়া কবুতর এখানে কিভাবে এলো?আর নিহান এগুলো দিয়ে কি করবে?’ভেবেই নিহানের দিকে তাকাতেই, নীলাদ্রির চোখ জোড়া থমকে গেলো।নিহান মুখ হা করে চোয়ালের উপরে দুই পাশের ক্যানাইন দাঁত দুই টা বড় করলো।তার চোখ জোড়া টকটকে লাল,মনে হয় এখুনি র**ক্ত পড়বে।নিজের চোখকে আজ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না নীলাদ্রির।নিহান একটি কবুতর মুখের ওপরে রেখে মুহুর্তের মধ্যেই দুই ভাগ করে র**ক্ত গুলো খেয়ে ফেললো।একই ভাবে আরেকটি কবুতরের র**ক্তও খেলো।নীলাদ্রির তো এগুলো দেখে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেলো,মাথা ঘুরে উঠলো।নিজের মাথায় হাত দিয়ে স্থির হওয়ার চেষ্টা করলো;কিন্তুু পারলোনা।নিহানের ফর্সা মুখস্রি দিয়ে যখন ক্যানাইন দাঁত জোড়া বেরিয়ে এলো,আর যখন মুখের ওপর কবুতর টি ধরে দুই ভাগ করে তাজা র**ক্ত গুলো পান করলো;তখনই নীলাদ্রির গা গুলিয়ে এসেছে।নীলাদ্রি হয়তো এখনই বমি করে দিবে।আর নীলাদ্রির উপস্থিতি নিহান যদি টের পেয়ে যায়,তখন কি হবে ভাবতে পারছে না নীলাদ্রি।তাই দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।সিড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে গেলো।নীলাদ্রি পায়ে খুব ব্যথা পেয়ে ‘উহহ’ আওয়াজ করেই আবার মুখ চেপে ধরলো।তারপর পা ব্যথা নিয়েই সিড়ি বেয়ে নেমে দ্রুত রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান ধরলো।নীলাদ্রি এই ঘটনা যে দেখেছে, সেটা কিছুতেই নিহান কে বুঝতে দেবে না।”
“এদিকে নিহান রুমে এসে হাঁটাহাঁটি করছে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।নীলাদ্রি চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করছে,কিন্তুু কিছুই শুনতে পেলো না।নীলাদ্রি একটু পিটপিট করে তাকাতেই ওর শিরা-উপশিরার র**ক্ত চলাচল মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ওর সামনে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিহানের চোখ জোড়া টকটকে লাল,ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি,ক্যানাইন দাঁত দুটো বের করা।মনে হয় হরর মুভিতে থাকা আত্মা ওর সামনে বসে আছে।ডিম লাইটের নিভু নিভু আলোতে নিহানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নীলাদ্রি জোরে চি**ৎ*কার দিতে চাইলো; কিন্তুু পারলো না।মনে হয়, ওর কন্ঠস্বর কেউ কন্ট্রোল করে রেখেছে।নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে, নীলাদ্রির মুখের কাছে এসে ফ্যাশফ্যাশে কন্ঠে বলে উঠলো,
“Twinkle twinkle little star
How i wonder what you are…”
“নীলাদ্রি ভ**য়ে কথা বলতে পারছেনা।ওর ঠোঁট জোড়া মনে হয় কেউ সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রেখেছে।নীলাদ্রির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।নিহান সেটা বুঝতে পেরে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।নীলাদ্রি শোয়া থেকে উঠতে পারছে না।নিহান নীলাদ্রির মাথা উচু করে, বাচ্চাদের মতো করে নীলাদ্রি কে পানি খাইয়ে দিতে লাগলো।এভাবে পানি খাওয়াতে নীলাদ্রির বিষম উঠলো।নীলাদ্রি কাশতে থাকলো।কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো নীলাদ্রির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।নিহান নীলাদ্রির পিঠে হাত বুলিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’নীলাঞ্জনা তোমার ভ**য় লাগছে?চিন্তা করো না, আমি তোমার সব ভ**য় দূর করে দেবো।ভালোবাসি তোমায়,পা**গলের মতো ভালোবাসি।”
“নিহানের ‘ভালোবাসি’ কথাটি এখন আর নীলাদ্রির কর্ণগোচর হচ্ছে না।ও তো নিহানের ভ**য়ং**কর চেহারা টি কল্পনা করছে।নীলাদ্রি ঠকঠক করে কাঁপছে।নিহান নীলাদ্রির ভয়েস আর কন্ট্রোল করলো না।নীলাদ্রি হঠাৎ করেই কথা বলে উঠলো,’ প্লিজ আআআমায় ছা…ছাড়ুন।আমার খু..খুব কষ্ট হচ্ছে।আপনার শরীর ব…বরফের মতো ঠান্ডা।”
“নিহান ডেভিল হেসে বললো,’কেনো তুমিই তো গতকাল বললে,’ভালোবাসার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে।গতকাল তো আমার ঠান্ডা শরীরের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে ছিলে।আজ ভালোবাসা হাওয়া হয়ে গেলো?’নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে।কিন্তুু নিহানের মতো শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারের কাছে, নীলাদ্রির শক্তি পিঁপড়ার মতো।নিহান নীলাদ্রি কে নিজে থেকেই ছেড়ে দিলো।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার এই রূপ দেখতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে নীলাঞ্জনা?”
“নীলাদ্রি পিটপিট করে একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে,জোরে চি**ৎ*কার দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো।রুমটি সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় নীলাদ্রির চি**ৎ*কারের ছিটেফোঁটা শব্দও বাইরে গেলো না।নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’তাকাও সুইটহার্ট,তাকাও আমার দিকে। আমি তোমায় তাকাতে বলছি।তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই না সুইটহার্ট?অথচ ভালোবাসার মানুষের এমন রূপ দেখে এভাবে পাল্টে গেলে?উহুমম ইট’স নট ফেয়ার সুইটহার্ট।”
” নীলাদ্রি ওর চোখ জোড়া বন্ধ রেখে বললো,’না..আমি তাকাবো না আপনার দিকে।আপনি মানুষ নয়।আপনি ভূত বা খারাপ জ্বীন।আ…আপনি আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন।আমি মানুষ নিহানকে ভালোবেসেছি।কোনো জ্বীন-ভূতকে ভালোবাসি নি।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।আমার কাছ থেকে সরে যান।আমার খুব ভ**য় লাগছে।”
“নীলাদ্রির মুখে ভ**য়ের কথা শুনে, নিহান উত্তেজিত হয়ে আবারও নীলাদ্রি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রির এইবার দম ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।হেঁচকি তুলে কান্না করে বললো,’আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা; খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।”
“নিহান এইবার তার হাতের বাঁধন একটু আলগা করে বললো,’না না না কিছুতেই ছাড়বো না;ছাড়লেই তুমি চলে যাবে।২০৯বছর পর তোমাকে পেয়েছি।আর তোমাকে হারাতে পারবো না।তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি।আজ সবকিছু তোমায় বলবো।তারপর তোমাকে আমার মতো বানিয়ে ফেলবো।তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।একদম না..ভুলেও ছোটাছুটি করার চেষ্টা করবে না।তাহলে কিন্তুু তোমার ঘাড়ে বা**ই*ট করে দেবো।ছাদে দেখেছো তো,কবুতর দু’টোকে কিভাবে খেয়েছি?না না না তুমি ভ**য় পেয়ো না।তোমার পুরো র**ক্ত আমি খাবো না; শুধু একটু বা**ইট করবো।কিন্তুু…কিন্তুু তার আগে তোমাকে আমার সব কথা শুনতে হবে।তোমাকে আমার কথায় রাজি হতে হবে নীলাঞ্জনা।”
“নীলাদ্রির শরীরে কাঁপন শুরু হলো।নিহান বিষয়টি বুঝতে পেরে নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।তারপর নীলাদ্রি কে জোর করে শুইয়ে দিয়ে, ওর শাড়ির ফাঁক গলিয়ে নিজের হাত ওর পুরো পেটে বিচরণ করতে থাকলো।আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’তুমি যতোদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তোমার শরীর,মন সবকিছু শুধু আমার বুঝেছো তুমি?কি হলো বুঝেছো?”
” নীলাদ্রি একবারও নিহানের দিকে তাকায় নি। ও চোখজোড়া বন্ধ করে এখনও হেঁচকি তুলে কান্না করছে।একপর্যায়ে নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’আপনি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আপনি একটা…
“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে বললো,’হুসসস…আমি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আমি হলাম মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।”
#চলবে….
#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে বললো,’হুসসস..আমি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আমি হলাম মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।”
“নিহানের মুখে ‘ভ্যাম্পায়ার’ নামটি শুনে, নীলাদ্রির চোখের মণি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।ও আগে ভ্যাম্পায়ারের বিষয়ে শুনেছে,কিন্তুু সবসময় কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছে।কিন্তুু পৃথিবীতে ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব যে সত্যি আছে, সেটা ওর জানা ছিলো না।কখনোও এইসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ ও প্রকাশ করেনি।তার ওপর বাংলাদেশের মাটিতে ভ্যাম্পায়ারের বসবাস;এটাতো অবিশ্বাস্য।নীলাদ্রি পিটপিট করে নিহানের দিকে তাকালো।দেখলো, নিহানের চেহারা এবং চোখজোড়া একদম স্বাভাবিক।নীলাদ্রি অতিরিক্ত কান্না করার কারণে, ওর গালে লবনাক্ত পানির দাগ পড়ে গেছে।নিহান তড়িঘড়ি করে বাটিতে পানি এনে; রুমাল দিয়ে নীলাদ্রির পুরো চেহারা মুছিয়ে দিয়ে বললো,’এখন আমাকে দেখে ভ**য় পাচ্ছো নাতো?”
“নীলাদ্রি কিভাবে বলবে যে চোখের সামনে এমন ভূতের মতো একটা মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার কে দেখে, নীলাদ্রির প্রাণ বায়ু ছুটে যাওয়ার জন্য রাস্তা খুঁজছে।কিন্তুু নীলাদ্রি পথ হারা পথিকের ন্যায় নিহানের দিকে তাকিয়ে;মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।আমি আপনার কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না।প্লিজ আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা।জানিনা আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন।কিন্তুু আমি আপনাকে ইউনিভার্সিটিতেই প্রথম দেখেছি।আপনি জ্বীন-ভূত,ভ্যাম্পায়ার যাই হন না কেনো; আমার পেছনে আর লাগবেন না।ছোটবেলা থেকে ভূত-প্রেতে আমি ভীষণ ভ**য় পাই।জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি যে এমন কিছুর সম্মুখীন হবো;কখনোও কল্পনাও করতে পারি নি।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন, আমি আপনার সামনে আর কিছুক্ষণ থাকলে;ভ**য়ে হার্ট অ্যাটাক করে মা**রা যাবো।”
“নীলাদ্রির মুখে মা**রা যাওয়ার কথা শুনে, নিহানের চোখজোড়া আবারও লাল টকটকে হয়ে গেলো।নীলাদ্রির দুই বাহু শক্ত করে ধরে বললো,’একদম এই ধরণের আজে*বা**জে কথা বলবে না।তুমি বাঁচবে..আমার সাথে হাজার বছর বাঁচবে।’বলেই বিছানা থেকে নেমে নীলাদ্রিকে কোলে তুলে সিড়ি বেয়ে ছাদে নিয়ে গেলো।আকাশে থাকা অর্ধ নৌকা আকৃতির চাঁদের দিকে তাকিয়ে নীলাদ্রির সামনেই, নিহান হা করে চাঁদের থেকে শক্তি আহরণ করলো।নীলাদ্রি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে এই দৃশ্যটি দেখলো।নীলাদ্রিকে নিহান আবারও কোলে তুলে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠার রুমটিতে নিয়ে গেলো;নীলাদ্রি কে বিছানায় বসালো।নীলাদ্রি রুমটি দেখে অবাক হয়ে গেলো।পুরো রুমটি রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।খাটের চারিদিকে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেপের মধ্যে লেখা, ‘Nihan+Nilanjana”
“নীলাদ্রি কে এভাবে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নিহান কাছে এসে নীলাদ্রির গলার নিচে জেগে থাকা বিউটি বোনে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’আমাদের বাসর ঘর সাজানো কেমন হয়েছে নীলাঞ্জনা?”
“নীলাদ্রি কয়েক মিনিটের জন্য সবকিছু ভুলে পুরো রুমটিতে চোখ বুলিয়ে দেখছিলো।যখন নিহান ওর বিউটি বোনে চুমু দিলো, তখনই নীলাদ্রি চমকে গেলো।ওর মস্তিষ্ক সজাগ হতেই,নিহানের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললো,’ছোঁবেন না আমায়।তাহলে আমি কিন্তুু….
“নিহান বড় বড় পা ফেলে নীলাদ্রির খুব কাছে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো,’তাহলে?তাহলে কি করবে শুনি?আমাকে মে**রে ফেলবে?নাকি আবার পালিয়ে যাবে?’বলেই ডেভিল হাসি দিলো।তারপর নীলাদ্রির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,’না তুমি আমায় মা**রতে পারবে,আর না কোথাও যেতে পারবে সুইটহার্ট।তোমার যে কোনো রাস্তাই খোলা নেই।আর এতো সুন্দর করে বাসরঘর সাজিয়েছি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়।আজ সারা রাত জেগে আমরা গল্প করবো।তারপর তোমার আর আমার মধুচন্দ্রিমা হবে।আজ আমাদের মধ্যে কোনো বাঁধা থাকবেনা নীলাঞ্জনা।মন-প্রাণ উজার করে ভালোবাসবো তোমায়।আজ তোমায় শোনাবো, তোমার আর আমার ভালোবাসা এবং বিষাদময় অতীত কাহিনী।আর সেই সাথে শোনাবো, ভ্যাম্পায়ারদের জীবনী-শক্তি।”
“নীলাদ্রি অবাক হয়ে বললো,’আপনার আর আমার জীবন কাহিনী মানে?”
” হুমম তোমার আর আমার জীবন কাহিনী।আজ আমি বলবো;তুমি শুধু শুনবে।”
“হঠাৎ নিহানের মুখে স্বাভাবিক কন্ঠে কথাগুলো শুনে, নীলাদ্রি এখন নিহান কে বেশি ভ**য় পাচ্ছে না।ওর নিহানের কথাগুলো শোনার জন্য কৌতূহল জাগলো।নীলাদ্রি নিহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই, নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বলতে শুরু করলো।”
—————
অতীত…
” উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের একটি রাষ্ট্র পানামা। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দেশটি পূর্বে কলম্বিয়ার অধীন ছিল। পানামার রাজধানীর নাম পানামা সিটি। পানামাতে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর এর সংযোগকারী পানামা খাল অবস্থিত।২০৯ বছর আগে পানামা রাষ্ট্রের ছোট একটি শহরে আমরা বসবাস করতাম।আমি যখন ২২বছরের তাগড়া যুবক;তুমি তখন ১৭বছর বয়সী চঞ্চলা কিশোরী।আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিলো এবং তোমার মা-বাবার সাথে আমার মা-বাবার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো।যার ফলে মাঝে মাঝে আমার তোমাদের বাসায় আসা-যাওয়া হতো।আমি আর ইয়াশ হলো জমজ ভাই।ইয়াশ আমার থেকে ৫মিনিটের ছোট।সেই সময় আমার নাম ছিলো অ্যাড্রিয়ান এবং ইয়াশের নাম ছিলো সিন্ডি।আর তোমার নাম ছিলো ন্যান্সি;তবে তোমায় আমি ভালোবেসে ‘নিনা’ বলে ডাকতাম। যেদিন তুমি ১৬বছর পেরিয়ে ১৭বছরে পদার্পণ করেছো।সেদিন তোমার জন্মদিনে, আমি তোমায় আমার ভালোবাসার অনুভূতি গুলো জানাই।তুমি সেদিন মিষ্টি করে হেসে উত্তরে বলেছিলে, তোমাদের বাসার পেছনে খুব ভোরবেলা যেনো অপেক্ষা করি।”
“আমি বুঝে গেছিলাম, যে তুমিও আমাকে পছন্দ করো;তবুও কেমন যেনো দোটানায় ভুগছিলাম।সেদিন তোমার হ্যা বা না এর চিন্তায় সারারাত আমার ঘুম হয় নি।তোমার কথামতো তার পরের দিন ভোর বেলা তোমাদের বাসার পেছনে, তোমার জন্য অপেক্ষা করি।কিছুক্ষণ পর তুমি এসে আমাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে, তোমার মনে জমে থাকা আমার জন্য ভালোবাসার সেই মিষ্টি অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করো;যে তুমিও আমায় আগে থেকেই পছন্দ করো।আমি সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম।যেখানে আমি তোমার হ্যা বা না উত্তরের জন্য দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিলাম,সেখানে তুমি নিজেই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার মনের কথাগুলো জানাও।আমি খুব খুশি হয়ে সেদিন তোমার গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দেই।”
“বর্তমান সময়ে দক্ষিণ আমেরিকায় এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও,সেই সময় এগুলো ছিলো মানুষের চোখের কা’**টা।কোনো নর-নারী প্রেম করলেও খুব সাবধানে দেখা করতো।আর যদি একবার ধরা পড়ে যেতো, তাহলে তাদের সেই শহর থেকে বের করে দেওয়া হতো।আর সেখানে আমি তোমাকে চুমু দিয়েছিলাম।আমাদের সেই সুন্দর প্রেমময় দৃশ্যটি, গোলগোল চোখজোড়া দিয়ে ক্যাপচার করে রেখেছিলো পাশের প্রতিবেশী ডারলিন আন্টি।সে আমার এবং তোমার মা-বাবার কাছে বিচার নিয়ে যায়।যেহেতু তোমার এবং আমার বাবা-মায়ের বন্ডিং বেশ ভালো ছিলো।তাই তারা প্রথমে একটু রাগ করলেও,পরবর্তীতে সবাইকে বুঝিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে।এতো কঠোর নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়ার পরেও, এতো সহজে যে তোমায় পেয়ে যাবো সেটা যেনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছিলো।হয়তো অতি সহজে তোমায় পেয়েছি বলে,আজ তোমাকে পাওয়ার পথটি অনেক কঠিন হয়ে গেছে।’বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নিহান।”
“নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ যেনো চোখজোড়া কে নীলাদ্রি কিছুতেই বন্ধ হতে দেবে না।যেভাবেই হোক খুলে রাখবে।নিহান সেদিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে আবারও বলতে শুরু করলো।”
“সেদিন ছিলো ভরা পূর্নিমার রাত।আকাশে উঠেছিলো থালার মতো চাঁদ।সন্ধ্যার একটু পরে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাও।ফুলসজ্জা রাতে তোমার হাত ধরে বলেছিলাম, এই হাত কখনোও ছাড়বো না।তুমিও আমায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলে, পৃথিবীতে যতো বাঁধা-বিপত্তি আসুক না কেনো;তুমি আমার হাত কখনোই ছাড়বে না।সেই রাতটি ছিলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটি রাত।তোমার সর্বাঙ্গে আমি গভীরভাবে ছুঁয়েছিলাম।তুমিও সেদিন উদ্ভ্রান্তের ন্যায় আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলে আমার সর্বাঙ্গ।সেই রাত টি যে আমার জীবনে কতোটা স্পেশাল ছিলো;তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।এই সুপ্ত অসম্ভব সুন্দর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে আমি অপারগ।রাত পেরিয়ে ভোর হলো।খুব ভোরে উঠে আমরা সূর্য ওঠার দৃশ্য দেখলাম।সেই দিনটি যে তোমার সাথে আমার শেষ দিন হবে সেটা আমি বুঝতে পারিনি।বুঝতে পারলে হয়তো, তোমাকে আমার বুকের বা পাশে জাপটে ধরে রাখতাম।”
“আমি সিন্ডি(ইয়াশ) কে তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম।তোমার ক্ষেত্রে বরাবরই আমি বড্ড হিংসুটে ছিলাম।সেদিন বিকেলে তুমি আমার কাছে আবদার করলে,তুমি পানামা জঙ্গলে গিয়ে বন্য পাখি শিকার করবে।আর সেই পাখি দিয়ে পিকনিক করার প্ল্যান করলে।পানামা জঙ্গলটির বর্তমান নাম হলো ‘ড্যারিয়ান গ্যাপ।’এই দুর্গম জঙ্গলটিতে রয়েছে বিষাক্ত সাপ আর ভ**য়ং**কর নানারকম প্রাণী।আমি এই বিষয়ে ভালো করে কিছুই জানতাম না।তবে তুমি বলেছিলে, তুমি নাকি এর আগেও সেখান থেকে বন্য পাখি শিকার করেছো।
আমি সেদিন তোমাকে সন্ধ্যাবেলা যেতে নিষেধ করেছিলাম,দিনের বেলা যেতে বলেছিলাম ।কিন্তুু তুমি বায়না ধরলে তুমি সন্ধ্যা বেলায় সেখানে যাবে।আমি তোমার কথাটা ফেলতে পারিনি।আর সেটাই ছিলো আমার জীবনের করা সবচেয়ে বড় ভুল।সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের সাথে সিন্ডি(ইয়াশ) ও যোগ দেয়।ও আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করে বলে, তোমার সাথে ভুলেও কথা বলবে না।শুধু আমাদের পেছনে আসবে।ওর নাকি বন্য পাখি শিকার করার অনেক শখ।আমিও রাজি হয়ে যাই।”
“আমরা ‘ড্যারিয়ান গ্যাপ’ জঙ্গলে সন্ধ্যার পরে পৌঁছাই।দুর্গম জঙ্গলটিতে প্রবেশ করতে না করতেই, অজানা কারণে ভ**য়ে আমার গা ছমছম করে ওঠে।জঙ্গলটি জুড়ে ছিলো ভ**য়ং**কর দানবাকৃতির গাছ।মনে হচ্ছিলো এখুনি আমাদের ওপর হা**মলে পড়বে।আমার মনে হচ্ছিলো এই জঙ্গলটির নাম ‘ভুতুড়ে জঙ্গল’ হলে বেশি ভালো হতো।কেমন একটা গা ছমছম করা রহস্যময় পরিবেশ ছিলো।পাখিরা তখন নীড়ে ফিরে এসেছে।মাঝে মাঝে কিছু বন্য প্রাণীর ভ**য়ং**কর গ**র্জন কর্ণগহ্বরে ভেসে আসছিলো।তুমি খুশি মনে ধনুক নিয়ে বন্য পাখি খোঁজার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকো।আমি এবং সিন্ডি ও বন্য পাখি খুঁজতে থাকি।আমি তোমার কাছাকাছি ছিলাম।অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে আমি দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরাতেই, বি**কট একটি চি**ৎ*কারে আমার কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়।সেই চি**ৎ*কার টি আর কারো ছিলো না,স্বয়ং তোমার ছিলো।আমি তোমার দিকে তাকিয়ে দেখি;তুমি চোখ জোড়া খোলা রেখেই মাটিতে শুয়ে আছো।আমার মাথায় যেনো সেদিন আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।হাত-পা অসার হয়ে যাচ্ছিলো।মস্তিষ্কের নিউরনগুলো স্থির হয়ে গেছিলো।আমি হাটু গেড়ে তোমার পাশে বসে তোমায় ‘নিনা’ বলে ডাকতে থাকি।কিন্তুু তুমি কোনো সাড়াশব্দ করোনি।তুমি ছিলে নীরব নিস্তব্ধ।আমার হাত থেকে দিয়াশলাই জঙ্গলে থাকা শুকনো পাতায় পড়ে নিভু নিভু আগুন জ্বলে ওঠে।সেই আগুনের আবছা আলোয় তোমার র**ক্ত মাখা মুখস্রি দেখে আমার পৃথিবী যেনো সেখানেই থমকে গেছিলো।আমি তোমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে গগন কাঁপিয়ে চি**ৎ*কার করে উঠি।আমার চি**ৎ*কারে মনে হয়, সদ্য নীড়ে ফেরা পাখিরাও ভ**য় পেয়ে গেছিলো,এমনকি চারিপাশ থেকে ভেসে আসা হিং**স্র পশুদের গ**র্জনও থেমে গেছিলো। হঠাৎ পেছন থেকে সিন্ডির(ইয়াশের) চি**ৎ*কার ভেসে আসে।আমি পেছনে তাকাতেই দেখি, শুকনো পাতার ওপর সিন্ডির নিথর দেহ পড়ে আছে।আর ওর ঘাড় থেকে পরম যত্নে র**ক্ত শুষে নিচ্ছে ২টি বাদুড়।তারপর দুটো বাদুড় সিন্ডির মুখের মধ্যে মুখ লাগিয়ে ওদের মুখের র**ক্তগুলো ঢুকিয়ে দিলো।মুহূর্তের মধ্যেই আকাশ থেকে বারিধারা নেমে এলো।পৃথিবী ধীরে ধীরে বরফের ন্যায় ঠান্ডা হতে থাকলো।কিন্তুু ঠান্ডা হলো না আমার শরীর এবং মস্তিষ্ক।আমি বাদুড় দু’টির দিকে এগিয়ে যেতেই, ওরা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।হয়তো সেখানেই চিরজীবনের জন্য আমার মানবসত্তার সমাপ্তি ঘটলো।নিঃশব্দে আমার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।”
“যখন আমি চোখজোড়া খুললাম,তখন দেখলাম আমি শুয়ে আছি কোমল ঘাসের ওপর।মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসতেই দেখলাম, আমার সামনে দাড়িয়ে আছে অসংখ্য দানবাকৃতির দেহ এবং নেকড়ের মতো ভ**য়ং**কর চেহারার ভ্যাম্পায়ার।আর আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে আমার ভাই সিন্ডি(ইয়াশ)।সিন্ডিকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।সিন্ডির ঘুমন্ত চেহারা টা মানুষের মতো ছিলো;কিন্তুু ওর শরীর টা নেকড়ের মতো ছিলো।আমি খুব ভ**য় পেয়ে যাই।সামনের দিকে তাকিয়ে বলি,’কে তোমরা?আমাকে কেনো এখানে নিয়ে এসেছো?আআ..আমার নিনা কোথায়?”
“আমার পাশ থেকে একজন বলে ওঠে,’আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগতে তোমাদের স্বাগতম।তোমরা দুই ভাই এখন আমাদের মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছো।আমরা তোমাদের র**ক্ত পান করে,সেই র**ক্ত তোমাদের খাইয়েছি।আর তোমার সাথীর জন্য দুঃখ করে লাভ নেই।সে ম**রে গেছে।কিন্তুু আমরা তাকে মা**রিনি।তাকে মেরেছে আমাদের আরেক ভ্যাম্পায়ার দল।শুধু তাই নয়,তোমাদের মা-বাবা ওই জঙ্গলে তোমাদের খুঁজতে এসেছিলো।তখন সেই ভ্যাম্পায়ারদের দল তাদের কেও মে**রে ফেলেছে।আমরা খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম; তাই আমরা ওই জঙ্গলে গিয়েছিলাম পশু-পাখির র**ক্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে।সেখানে তোমাদের কে দেখে, আমার আর আমার স্বামীর খুব পছন্দ হয়।কারণ আমাদের একটি ছেলে আছে।ওর নাম ফ্রেডো(এহতিশাম)।আমাদের ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল বলেছেন,আমরা এক সন্তানের বেশি নিতে পারবো না।কারণ আমাদের খাবারের(র**ক্তের) চাহিদা অনুযায়ী, পৃথিবীতে মানুষ এবং পশু-পাখির সংখ্যা খুব নগন্য।তাই তোমাদের কে দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে।আমরা আমাদের পাওয়ার ব্যবহার করে তোমাদের সম্পর্কে সবকিছু জেনেছি।তোমাদের দু’জনের বয়স ২২বছর।আর তোমরা কখনো এর থেকে বাড়বে না।তোমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সারাজীবন এইরকমই থাকবে।কারণ এই বয়সেই তোমরা ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছো।আর তোমরা চাইলে যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারবে।ভ্যাম্পায়ারদের নির্দিষ্ট ভাষা আছে।সেটা তোমাদের শিখিয়ে দেবো।তোমার ভাইয়ের সব স্মৃতি আমরা মুছে ফেলেছি।ওকে এখন যা বোঝাবো ও তাই বুঝবে।কিন্তুু তোমার স্মৃতি মুছে ফেলি নি।কারণ,পৃথিবীতে তোমার একজন সাথী ছিলো।আমাদের খুব মায়া হয়েছে তোমার জন্য।হয়তো আমরা ঠিক সময় উপস্থিত হলে তোমার সাথী কেও ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলতাম।কিন্তুু আমাদের ভ্যাম্পায়ার দল ওর শরীর থেকে পুরো র**ক্ত শুষে নিয়েছে।যার ফলে ও মা**রা গিয়েছে।আমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের শরীর থেকে পুরো র**ক্ত পান করিনি।অল্প র**ক্ত পান করে, আমাদের মুখ থেকে সেই র**ক্ত তোমাদের খাইয়েছি।আর আমাদের মুখের লালাযুক্ত র**ক্ত তোমাদের মুখে প্রবেশ করায়,তোমরা ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করেছো।আমি জানি,তুমি সবকিছু তে খুব কষ্ট পেয়েছো।কিন্তুু আমাদের কিছু করার ছিলো না।আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগৎ টাই এইরকম।আজ থেকে আমরা দুইজন তোমার মা-বাবা।আমার নাম জেসিকা(শায়লা বেগম),আর তার নাম কোর্টন(ইমতিয়াজ আহমেদ)।আজ থেকে আমাদের ৩ছেলে।ফ্রেডো(এহতিশাম),এড্রো(নিহান),
ট্রোডো(ইয়াশ)।”
“তাদের কথাগুলো শুনে আমি নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।আমার শরীরও তাদের মতো ভ**য়ং**কর দানবাকৃতির রূপ ধারণ করেছে।আমি নিজেকে এই রূপে কিছুতেই মানতে পারলাম না।গগন বিদরী চি**ৎ*কার দিয়ে বললাম,’আমাকেও মে**রে ফেলতেন,কেনো বাঁচিয়ে রেখে এই অন্যরকম দুনিয়ায় নিয়ে এলেন?’বলেই আমি আবার গগন বিদরী চি**ৎ*কার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
জ্ঞান ফেরার পর চোখের সামনে যা দেখলাম, সেটা দেখে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।”
#চলবে….