ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৭+১৮

0
340

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৭(ধামাকা পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“আমি তোমার র**ক্ত চুষবো না।আমি শুধু তোমাকে গভীরভাবে একটু আদর করবো।”

“নিহানের বিড়বিড় করে বলা পুরো কথাটি নীলাদ্রি শুনতে পেলো না।শুধু ‘র**ক্ত’ শব্দটি শুনলো।”

“নীলাদ্রি নিহানকে বললো,’আপনি কি আমাকে র**ক্ত নিয়ে কিছু বললেন?”

“নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’হুমম বলেছি তো।তোমার সাথে আমার র**ক্তের সম্পর্ক না হলেও, গভীরভাবে আত্মার সম্পর্ক আছে।’বলেই নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ের দিকে আবারও এগিয়ে গেলো।”

“এইবার আর নীলাদ্রি নিহানকে বাঁধা দিলো না।কারণ, এখন যে নীলাদ্রি নিহান কে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে।ভালোবাসার মানুষটিকে কিভাবে ও ফেরাবে।তার ওপর ওদের সম্পর্ক বৈধ।নীলাদ্রিও নিহানের সাথে তাল মেলাতে শুরু করলো।একসময় নিহান নীলাদ্রি কে রেলিং থেকে কোলে করে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি কে বিছানায় বসিয়ে নিহান বিপরীত দিকে ফিরে একটা ওষুধ খেলো।নীলাদ্রি কে বিছানায় বসাতেই নীলাদ্রি বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো।আজ ওর লজ্জাদের যদি কিছুক্ষণের জন্য বিদায় দিতে পারতো; তাহলে হয়তো ওর অনুভূতি গুলো নিহানের কাছে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করতে পারতো। এই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে তো নীলাদ্রির মন আগেই পড়তে চেয়েছিলো।কিন্তুু তিক্ত কিছু ঘটনার কারণে নীলাদ্রির কঠোর ব্যক্তিত্ব, বারবার ওকে নিহানের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।আজ নিহান কে নীলাদ্রি কোনোভাবেই বাঁধা দেবে না।সবকিছু উজার করে নিহান কে ভালোবাসবে।একদিকে লজ্জা আরেকদিকে ভালোবাসার অনুভূতি, সবকিছু মিলিয়ে নীলাদ্রির অবস্থা টালমাটাল।নীলাদ্রি বালিশে মুখ গুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।নিহান বিষয়টি লক্ষ্য করে মুচকি হেসে, নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে হাত দিতেই, কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।নিহানের হাতের ছোঁয়া গুলো আরও গভীর হতে লাগলো।নীলাদ্রির পাশে শুয়ে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর সর্বাঙ্গে হাত বিচরণ করতে থাকলো।নিহানের প্রতিটি স্পর্শে নীলাদ্রি যেনো অজানা এক ভালো লাগায় হারিয়ে যেতে লাগলো।নীলাদ্রি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।নিহানের ঠোটঁজোড়ায় নিজের ঠোটঁজোড়া ডুবিয়ে দিলো।কিন্তুু নীলাদ্রির কাছে আজ নিহানের শরীর এবং ঠোঁটজোড়া ঠান্ডা লাগছে না। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার মতোই লাগছে।কিন্তুু এইমুহূর্তে নীলাদ্রি সেই ধ্যানে নেই।সেতো নিহানের সাথে গভীর চুম্বনে মত্ত রয়েছে।দু’জনের ঠোঁটজোড়া হয়তো আজ প্রতিযোগিতায় নেমেছে।একসময় খুব হাঁপিয়ে গেলো নীলাদ্রি।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিহানের টি-শার্ট একটানে খুলে ফেললো।নিহানের সারা শরীরে গভীর থেকে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ওদের মিলনের সাক্ষী হতে হয়তো আকাশ থেকে বারিধারা নামলো।বেলকনি থেকে ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ যতো তীব্র হলো, নিহান এবং নীলাদ্রির আলিঙ্গন ততো গভীর হতে থাকলো।কম্ফোর্টারে দুই মেরুর দুইজন নর-নারী আলিঙ্গনরত অবস্থায় আছে।নীলাদ্রির পুরো শরীরে নিহানের চুমুর বর্ষণ বইছে।যখনই ওদের ভালোবাসা পুরোপুরি ভাবে পূর্নতা পাবে,তখনই নিহানের সেই তিক্ত বিধিনিষেধের কথা মনে পড়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো।ফ্লোরে পড়ে থাকা টি-শার্ট টি পড়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।নীলাদ্রি এতক্ষণ পরম সুখের জোয়ারে ভাসছিলো।হঠাৎ নিহানের এহেন আচরণে ভড়কে গেলো নীলাদ্রি।নিহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’কি হলো?এভাবে উঠে গেলেন কেনো?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।নীলাদ্রির শরীরের তীব্র অনুভূতিগুলো এখনো জাগ্রত।এইমুহূর্তে নীলাদ্রি কে দেখে নিহানের খুব মায়া হলো।ইচ্ছে করছে সবকিছু উজার করে ভালোবাসতে।এতো প্রতীক্ষার পর নীলাদ্রির সম্মতি পেয়ে, নিহান সবকিছু ভুলে নীলাদ্রি কে আপন করতে যাচ্ছিলো।কতো বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো সে।আজ যদি সত্যি তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতো; তাহলে আবারও নীলাদ্রি কে হারিয়ে ফেলতো।নাহ!সেটা আর কিছুতেই হতে দেবে না নিহান।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি ১০মিনিট অপেক্ষা করো।আমি যাবো আর আসবো।প্লিজ কোনো প্রশ্ন করো না।’
নিহানের অসহায় মুখ টি দেখে নীলাদ্রির খুব মন খারাপ হলো।ভাবলো,’এই ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তে নিহান এইসব কি বলছে?”

“নীলাদ্রি ফ্লোরে থাকা শাড়িটি উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে বললো,’এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবেন আপনি?”

“নিহান নীলাদ্রির এই অসহায় মুখটি দেখতে পারছেনা।জীবনসঙ্গী কে এতো যুগ যুগ পর নিজের এতো কাছে পেয়েও, তার সাথে গভীরভাবে মিশতে না পারার কষ্ট গুলো নিহান নীলাদ্রি কে বোঝাতে পারবেনা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলাদ্রির গালে হাত দিয়ে বললো,’ফিরে এসে সব বলেবো।’বলেই আর একমুহূর্তও সেখানে অপেক্ষা করলো না নিহান।রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।আজ বজ্রপাত হচ্ছে না।নিহান একটু নিশ্চিন্ত হলো।তড়িৎ গতিতে নিহান ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করলো।ঝড়ের গতিতে ছুটে গেলো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে।কিন্তুু এই রাজ্যের অংশে মোটা দাগ অতিক্রম করে নিহানের ভেতরে প্রবেশ করা নিষেধ।তাই কয়েক ইঞ্চি দূরে দাড়িয়ে, নিহান ভ্যাম্পায়ারদের ভাষায় ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল কে ডাকলো।
নিহান ডাকতেই লিওনসেল সেখানে এসে নিহান কে দেখে বললো,’আমি জানতাম একদিন তুৃমি আসবে।এখন বলো কেনো এখানে এসেছো?”

“নিহান অসহায় ভঙ্গিতে বললো,’আপনি এই পর্যন্ত যতোগুলো শর্ত দিয়েছেন, আমি সব শর্ত মেনে চলেছি।নিজেকে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছি।কিন্তুু আজ সে আমাকে অতি আপন করে চাইছে।আমি কিভাবে তাকে ফিরিয়ে দেবো?আমি জানি, আপনার কাছে সেই বিশেষ ওষুধ আছে; যেটা খেলে স্ত্রীর সাথে মিলন করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।আমি আর তাকে হারাতে চাইনা।”

“নিহানের কথা শুনে ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন।তার হাসির আওয়াজে বাকি ভ্যাম্পায়ারগুলো সেখানে হাজির হলো।লিওনসেল নিহানকে বললো,’এড্রো (নিহানের ভ্যাম্পায়ার নাম) তোমার পুরো পরিবার ২০৯ বছর যাবৎ অভিশপ্ত অবস্থায় রয়েছে।তোমাদের কে পৃথিবীতে থাকা মানবজাতির সাথে মিশতে বলেছি;তোমরা মিশেছো।তোমার অর্ধাঙ্গিনী কে অবশেষে তুমি খুজে পেয়েছো।কিন্তুু তোমাকে বলেছিলাম তোমাদের মিলনের আগ মুহূর্তে, তাকে তুমি তোমার নিজের আসল পরিচয় জানাবে।তোমার অতীত,বর্তমান সবকিছু তাকে বলবে।তারপর তাকে তুমি ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমাদের জগতে নিয়ে আসবে।তোমাকে আমি সব ধরনের শক্তি দিয়েছি।যেটা তোমার বাবা-মা,তোমার দুই ভাই কে দেইনি।কিন্তুু তুমি এখন তোমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য পথ্য চাইছো?হাহাহাহা কেনো তোমার তাকে সবকিছু বলতে সমস্যা কোথায়?নাকি আবার তাকে হারিয়ে ফেলার ভ**য় পাচ্ছো?”

“নিহান অসহায় মুখ করে বললো,’আপনি আমার মন সম্পর্কে অবগত।তাই আপনাকে নতুন করে বলার কিছু নেই।আমি তাকে অনেকবার বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তুু প্রতিবার সে আমাকে বাঁধা দিয়েছে।কিন্তুু আজ যখন সে নিজে থেকে আমার কাছে এসেছে,তখন আমি সবকিছু ভুলে গিয়ে তাকে আপন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তুু আপনার দেওয়া শর্তগুলো মনে পড়তেই, আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করে আপনার কাছে ছুটে এসেছি।আমার সত্যি খুব ভ**য় হচ্ছে।দীর্ঘ ২০৯ বছর সাধনা করার পর তাকে আবারও পেয়েছি।আর কোনোভাবে তাকে হারাতে চাইনা।আপনি আমাকে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়েছেন ঠিকই।কিন্তুু আমার স্ত্রীর ওপর সেই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে নিষেধ করেছেন।আমি চাইলেই তাকে হিপনোটাইজ করে আমার বশে এনে, সবকিছু বলে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারতাম।কিন্তুু আপনি সেটাও নিষেধ করেছেন।তাকে সজ্ঞানে এগুলো বললে সে কোনোভাবেই আমার কথা মেনে নেবে না।আবারও দূরে সরিয়ে দেবে।আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি।আপনি বলেছেন, আমি আপনার শর্ত পূরণ করলে আপনি আমায় এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের পরবর্তী কিং বানাবেন।কিন্তুু আমি এইসব কিছু চাই না।আমি শুধু আমার স্ত্রী কে চাই।দরকার হলে কষ্ট হলেও আমি মনুষ্য জগতে সারাজীবন থাকবো।তবুও আমি তাকে আবার হারাতে পারবো না।আমার প্রতি তার এই প্রগাঢ় অনুভূতি গুলো আমি কিছুতেই নষ্ট করতে চাই না।তাই আপনার কাছে ছুটে এসেছি।আজ আমার একটি কথা অন্তত রাখুন।”

“ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিহানের কথাগুলো শুনছিলো।নিহানের কথা শেষ হতেই তিনি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন,’আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।তুমি আর কখনোই এই ওষুধ পাবে না।তবে ফ্রেডো (এহতিশামের ভ্যাম্পায়ার নাম) এবং ট্রোডো(ইয়াশের ভ্যাম্পায়ার নাম)পাবে।যদিও ট্রোডো তোমারই ভাই।কিন্তুু ফ্রেডোর অস্তিত্বে মিশে আছে ভ্যাম্পায়ার সত্তা।এখন এখান থেকে প্রস্থান করো, নইলে তোমায় আ**ঘা*ত করতে বাধ্য হবো।আমি তোমাকে সব ধরনের শক্তি দিয়েছি।এতোদিন যেহেতু সেগুলোর সদ্বব্যবহার করেছো।আশা করি শর্তগুলো পরিপূর্ণ ভাবে পালন করে, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করবে।অন্যথায় আবার এখানে এলে তোমাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’কথাগুলো বলেই ভ্যাম্পায়ার কিং সেখান থেকে চলে গেলেন।আজ বহু বছর পর নিহানের চোখ জোড়া বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে।কেনো সেদিন রাতে দুই ভাই মিলে নীলাঞ্জনার সেই অদ্ভুত আবদার রাখতে গিয়েছিলো?সেদিন যদি নীলাঞ্জনার এই আবদার টা না রাখতো; তাহলে হয়তো এতোকিছুই হতো না।হয়তো ওরা এই পৃথিবীতেই থাকতো না।”

“একরাশ বিষন্নতা নিয়ে নিহান ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে চলে এলো।পৃথিবীতে এখনও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।নিহান প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ ছাদে ভিজছে;সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।কিভাবে নীলাদ্রি কে সবকিছু বোঝাবে?নীলাদ্রি কি ওর সব কথা আদৌ বিশ্বাস করবে? নাকি নিহান কে আবারও পা**গল বলে আখ্যায়িত করে দূরে সরে যাবে?”

“নিহানের শরীর আবারও বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে।নীলাদ্রির যাতে নিহানের শরীরের সাথে মিশতে কষ্ট না হয়;তাই তখন সেই ওষুধ টি খেয়েছিলো।কিন্তুু এখন সেটার পাওয়ার চলে গেছে।সেই সাথে চলে গেছে নিহানের আত্মবিশ্বাস।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিহান ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো।”

“এদিকে বিছানায় শুয়ে নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নীলাদ্রি কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিহান ভাবছিলো, রুমে ঢুকে নীলাদ্রি কে কি জবাব দেবে?কিন্তুু নিহান রুমে ঢুকতেই, এলোমেলো অবস্থায় ঘুমন্ত নীলাদ্রিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।নিহান জামা-কাপড় নিয়ে নিঃশব্দে ওয়াশরুমে চলে গেলো।চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখলো, এখনোও নীলাদ্রি ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।তবে ওর শাড়িটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেছে।ফলে নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন শরীর টি চুম্বকের মতো টানছে নিহান কে।নিহান নীলাদ্রির কাছে বসলো।তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে, নীলাদ্রির মাথায় হাত দিয়ে গভীরভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।তারপর নীলাদ্রির ফুলে থাকা ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো।এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়িটি সুন্দর করে ঠিক করে দিলো।তারপর চুপটি করে নীলাদ্রির পাশে শুয়ে পড়লো।কিন্তুু আজ আর নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলো না।কারণ নীলাদ্রির অনুভূতি মিশ্রিত সেই তপ্ত শরীরে নিহান স্পর্শ করলে,নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।ফলে আবারও নীলাদ্রি কে হারিয়ে ফেলবে।নিহান নিজেকে খুব কষ্ট করে কন্ট্রোল করে অপরপাশে ফিরে শুয়ে পড়লো।প্রিয়তমা কে এতোটা কাছে পেয়েও নিজের করতে না পারার কষ্ট টা যে কতোটা বেদনাদায়ক; আজ নিহান সেটা হারে হারে টের পাছে।ভ্যাম্পায়ারদের ঘুম কম;তাই নিহান ও সারা রাত ঘুমাতে পারলো না।যেই রাতটি গভীর ভালোবাসায় ভরপুর হওয়ার কথা ছিলো,সেই রাতটি কে**টে গেলো বিষন্নতায়।ভোরের দিকে নিহান তার চোখজোড়া বন্ধ করলো।”

———–
“সকাল ৯ টার দিকে ঘুৃম ভাঙলো নীলাদ্রির।আড়মোড়া ভেঙে, হাই তুলে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘুমিয়ে আছে।নীলাদ্রির গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।নিহানের সাথে ওর রোমান্টিক মুহূর্ত গুলো মনে পড়তেই লজ্জা পেলো নীলাদ্রি।হঠাৎ মনে পড়লো,’ নিহান তো কোথাও চলে গেছিলো।১০মিনিটের কথা বলে ১ঘন্টা হওয়ার পরেও আসেনি।আর নীলাদ্রিও সেই অবস্থায় ঘুমিয়ে গেছে।’ভেবে নীলাদ্রি মুখ টা মলিন করে নিহানের দিকে তাকালো।একবার ভাবলো, ‘নিহান কে ঘুম থেকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করবে।’পরক্ষণেই ভাবলো,’এতো সুন্দর করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তিকে জাগানো ঠিক হবে না।’তাই নীলাদ্রি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো।”

“নীলাদ্রি নিচে নামতেই দেখলো, ডাইনিং রুমে সোফায় বসে ইরা এবং ইয়াশ কিছু একটা নিয়ে টানাটানি করছে।নীলাদ্রি ভ্রু জোড়া কুচকে সেখানে গিয়ে দেখলো, ইরা ইয়াশের কাছ থেকে ললিপপ নেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তুু ইয়াশ কিছুতেই ইরাকে ললিপপ দেবে না।কারণ এটা গরুর র**ক্তের ললিপপ।নিহান এবং নীলাদ্রির বিয়েতে আনা গরু,মুরগি এবং খাসির র**ক্ত সংগ্রহ করে ইয়াশ এই ললিপপ গুলো বানিয়েছে।আজ সকালে সোফায় বসে ইয়াশ সেটাই খাচ্ছিলো।তখনই সেখানে হাজির হয় ইরা।ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বলে, ‘আপনার কিন্তুু সুগার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত না।তবুও কেনো খাচ্ছেন?”

“ইয়াশ বুদ্ধি খাটিয়ে অসহায় মুখ করে বললো,’ঘুঘুপাখি এটা তো সুগার ফ্রী ললিপপ।স্পেশাল ভাবে অর্ডার করে বানিয়েছি।”

“ওওও আচ্ছা তাহলে ওটা আমাকে দিন।আমি আগে খেয়ে চেক করবো;তারপর আপনি খাবেন।আপনার কথা আমি মোটেও বিশ্বাস করিনা।’বলেই ইরা ইয়াশের কাছ থেকে ললিপপ নিতে গেলে, ইয়াশ সেটা সরিয়ে ফেললো।তারপর শুরু হয়ে গেলো দু’জনের মধ্যে ললিপপ নিয়ে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।নীলাদ্রি এই কাহিনী দেখে চেচিয়ে বললো,’এই টম এন্ড জেরির বংশধর তোরা এখন থামবি?নইলে ওই ললিপপ কিন্তুু আমার পেটে যাবে।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি এই কাহিনী দেখে চেঁচিয়ে বললো,’এই টম এন্ড জেরির বংশধর তোরা এখন থামবি?নইলে ওই ললিপপ কিন্তুু আমার পেটে যাবে।”

“ইয়াশ নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’ভাবি প্লিজ আপনার এই টিকটিকির মতো লাফিয়ে পড়া বান্ধবীর হাত থেকে আমায় বাঁচান।”

“নীলাদ্রি কটমটিয়ে বললো,’আমার বান্ধবী মোটেও টিকটিকি না বরং আপনি একটা উইপোকা।ইরা কে ললিপপ টা দিলে কি হয়?”

“নীলাদ্রির সঙ্গ পেয়ে ইরা খুব খুশি হলো।ইয়াশের হাত একটু আলগা হতেই, ইরা খপ করে ললিপপ টা নিয়ে সাথে সাথে মুখে দিলো।ইয়াশ তো এটা দেখে হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।”

“ইরা ললিপপ মুখে দিয়ে সাথে সাথে বের করে ওয়াক ওয়াক শুরু করলো।এক দৌড়ে বেসিনের কাছে গিয়ে বমি করে দিলো।নীলাদ্রি দৌড়ে গিয়ে ইরার পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশ পানির গ্লাস নিয়ে এসে ইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’ময়না পাখি পানি খেয়ে নাও।আমি আগেই বলেছিলাম এটা সুগার ফ্রী ললিপপ।তোমার তো এগুলো খাওয়ার অভ্যাস নাই।আমি তোমাকে দোকান থেকে মিষ্টি ললিপপ এনে দেবো।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা অগ্নিদৃষ্টিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি মানুষ নাকি অন্যকিছু?এতোটা জ**ঘন্য ললিপপ আপনি কিভাবে খান?ছিহ!আপনার রুচি টা যে এতোটা খারাপ সেটা আমার জানা ছিলো না।”

“তোতাপাখি এইরকম করে বলোনা প্লিজ। আমার রুচি খারাপ হলে তোমাকে পছন্দ করতাম না।”

“আমি কি খাওয়ার কোনো জিনিস যে আপনি রুচির কথা বলছেন?”

“ইয়াশ এবং ইরার ঝগড়া দেখে নীলাদ্রির মাথা ঘুরে যাচ্ছে।তখনই সেখানে এসে হাজির হলো এহতিশাম।এহতিশাম এসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’এখানে কি হচ্ছে?”

“এহতিশামের গম্ভীর কন্ঠ শুনে, ইরা এবং ইয়াশের ঝগড়া থেমে গেলো।”

“নীলাদ্রি বললো,’ওরা দুইজন সবসময় এভাবে ঝগড়া করে।ভাগ্যিস আপনি এসেছেন।এখন ঝড় থেমে গেছে।”

“এহতিশাম ইয়াশ কে বললো,’মায়ের শরীর টা আজ দুর্বল।মা ঘুমাচ্ছে।তোদের চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।তুই জানিস না রাতে আমার ঘুম হয় না?রুমে গিয়ে যতো ইচ্ছে ঝগড়া কর।”

“ইয়াশ এহতিশাম কে খুব ভ**য় পায়।ইয়াশ আমতা আমতা করে বললো,’সরি ভাইয়া এইরকম ভুল আর হবে না।’বলেই ইরার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো।”

“এহতিশাম নীলাদ্রিকে বললো,’নীলাদ্রি নিহান এতোদিন পর বাসায় এসেছে।কোথায় তুমি ওকে সময় দেবে;সেটা না করে তুমি এখানে ওদের তামাশা দেখছো।উপরে যাও;আমি মেইড কে বলছি তোমাদের জন্য খাবার পাঠাতে।’বলেই সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

“এহতিশামের এহেন কথায় নীলাদ্রি পুরো বোকা বনে গেলো।ভাবলো,’এই দুই ভাইয়ের থেকে এই লোকটা সবচেয়ে আলাদা। কেমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলে।অবশ্য এই পরিবারের সবাইকে আমার কাছে রহস্যময় লাগে।’ভেবে নীলাদ্রি ওপরে চলে গেলো।”

“এদিকে ইয়াশ ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনছে।ইরা এই বাসায় আসার পর থেকে সবসময় বোরিং ফিল করে।এই বাসায় কোনো টিভি নেই।তার ওপর ইরার মোবাইল টাও হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেছে।ইরা এই বাসায় আসার পর থেকে আয়না ও দেখতে পারেনি।ইয়াশের কাছে জিজ্ঞেস করলে,ইয়াশ ক্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে থাকে।ইরা এমনিতেই ইয়াশের ওপর বিরক্ত।তার ওপর ইয়াশের এইরকম বোকা চাহনি ইরার কাছে আরও বিরক্ত লাগে।ইরা বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে কালো স্ক্রিনে নিজের চেহারা টা দেখে,ইয়াশের পাশে গিয়ে বসে একটা ইয়ারফোন কানে দিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসে চেঁচিয়ে উঠলো।
ইরার চি**ৎ*কারে ইয়াশ বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ইয়ারফোন কান থেকে সরিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’আবার কি হয়েছে সোনা?আমি কোনো ভুল করলাম?”

“ইরা কোমরে দুই হাত দিয়ে বললো,’আপনাকে আমি অনেক সহজ-সরল ভেবেছিলাম;কিন্তুু যেমন টা আপনি দেখান,তেমন টা আপনি না।”

“কেনো?”

“আপনি এই লু**চু হাশমির ওই লু**চু গানটা শুনছিলেন।আর এখন আবার বোকা সাজছেন?”

“লু**চু হাশমি মানে?”

“ওরে আমার হাদারাম লু**চু হাশমিকে চেনে না।এই লু**ই**চ্চা ব্যাটার বিখ্যাত লু**ই**চ্চা গানটি শুনে এখন আবার অভিনয় করছেন।বাহ বাহ!আপনাকে তো অস্কার দেওয়া উচিত।”

“ইয়াশ বললো,’বিশ্বাস করো সোনা আমি জানিনা তুমি কি বলছো।এই গান গুলো আমি দোকানে গিয়ে মেমোরি তে ভরে এনেছি।আমি আজ পর্যন্ত কোনো গানের ভিডিও দেখিনি।তুমি তো দেখেছো আমাদের বাসায় টিভি নেই।আর নিহান ভাইয়া এবং এহতিশাম ভাইয়া আমাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে।বিশ্বাস করো আমি খারাপ কিছু দেখিনা।”

“ইরা কটমটিয়ে বললো,’ওরে আমার ভাইয়ের চামচা রে…ঠিকাছে এখন আমি বললাম,আজ থেকে আপনার ফোন চালানো পুরোপুরি বন্ধ।’আপনি আমার কথা শুনবেন?”

” হুমম তুমি বললে শুনবো।এই নাও ফোন।”

“ইরা তো বেশ অবাক হয়ে গেলো।ভাবলো,’এতো দেখি সত্যি সত্যি ফোন দিয়ে দিলো!’ভেবে ইরার মন টা একটু নরম হলো।ম্লান হেসে বললো,’থাক দিতে হবে না।আমি আপনার কথা বিশ্বাস করলাম।আর আজ আমি মেমোরির গান গুলো চেক করে দেখবো।যেগুলো খারাপ লাগবে সেগুলো ডিলিট করে দিবো ওকে?”

“ইয়াশ হাসি মুখে বললো,’ওকে।”

————–
“কিছুক্ষণ আগে মেইড এসে নীলাদ্রির রুমে খাবার দিয়ে গেছে।নিহান এখনোও ঘুমাচ্ছে।আসোলে নিহান ঘুমের ভান ধরে আছে।নিহান উঠলেই তো নীলাদ্রি গতকাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করবে।ভ্যাম্পায়ার রা মিথ্যা বলতে পছন্দ করে না।কিন্তুু নিহান এখন মনে মনে মিথ্যা কথা সাজাচ্ছে।”

“নীলাদ্রির খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।ভেবেছে, নিহান উঠলে একসাথে খাবে।কিন্তুু অতিরিক্ত ক্ষুধায় পেট মামা ডাকাডাকি করাতে, নীলাদ্রি ওর খাবার খেয়ে নিলো।তারপর বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসলো।”

“নিহান পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো নীলাদ্রি বেলকনিতে বসে আছে।নিহান ধরফরিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো।লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো।নীলাদ্রিকে গতকাল রাতের ব্যাপারে বলার জন্য মনে মনে নিহান অনেক কথা সাজিয়েছে।ভেবে নিহান বেলকনিতে গিয়ে নীলাদ্রির পেছনে দাঁড়ালো।আজ বাইরে বেশ রোদ উঠেছে।তাই বেলকনিতে আসতেই, নিহানের গায়ে সূর্যের প্রখর আলো লাগাতে তার শরীর টা মনে হয় পুড়ে যেতে লাগলো।নিহান তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে নীলাদ্রি কে ডাক দিলো,’নীলাঞ্জনা রুমে আসো প্লিজ।”

“নিহানের কন্ঠ পেয়ে নীলাদ্রি রুমে এসে বললো,’ওহহ।আপনি উঠেছেন?তাড়াতাড়ি নাস্তা করুন।আপনি ঘুমিয়েছিলেন,আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো তাই আপনাকে রেখেই খেয়ে ফেলেছি।এরপর থেকে একসাথে খাবো।নীলাদ্রি গতকাল রাতের কথা প্রায় ভুলে গেছে।”

“নিহান চুপচাপ নাস্তা খেয়ে নিলো।তারপর নীলাদ্রির হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে বললো,’আ’ম সরি গতকাল রাতের রোমান্টিক মুহূর্ত টা নষ্ট করার জন্য।গতকাল রাতে বাবা বলেছিলো, তার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল অফিস থেকে নিতে।কিন্তুু আমি ভুলে গিয়েছিলাম।বৃষ্টির মধ্যে অফিসে গিয়ে আসতে আসতে লেট হয়ে গেছে।”

“নিহানের কথাটা নীলাদ্রির কাছে কেমন ভিত্তিহীন মনে হলো।কারণ,ওই চরম মুহূর্তে কারো এই ধরণের কথা কিভাবে মনে পড়ে!’ভেবে নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’ইট’স ওকে।রোমান্স করার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে।আপাতত আসুন আমরা গল্প করি।আপনার সাথে এখন পর্যন্ত আমার ভালোভাবে কথা বলা হয়ে ওঠেনি।তাই ভেবেছি, আজ আমরা অনেক গল্প করবো।”

“নিহান বেশ খুশি হয়ে বললো,’আচ্ছা আগে তোমার মনের কথা গুলো বলো।তারপর আমি বলবো।”

“নীলাদ্রি শুরু করলো,’আমি ছোটবেলা থেকেই নীরব স্বভাবের মেয়ে।যদিও আমার ভেতরে অনেক চঞ্চলতা বিদ্যমান।কিন্তুু আমি সেটা কারো কাছে প্রকাশ করতে ভালোবাসি না।আমার ইচ্ছে ছিলো আমার সকল চঞ্চলতা গুলো আমার লাইফ পার্টনার কে দেখাবো।বাবা গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে মা**রা যাওয়ার পর মা খুব একা হয়ে যায়।আমার ভেতরের চঞ্চলতা গুলো সেখানেই দমে যায়।ভেবেছিলাম, প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর আমার থেকে বয়সে একটু বড় কাউকে বিয়ে করবো।কিন্তুু ঝড়ো হাওয়ার মতো হঠাৎ করে আমার জীবনে আপনি এসে পড়লেন।তারপর তো যা হওয়ার হলো।এখন আমার ইচ্ছে আমি পড়ালেখা কমপ্লিট করবো।কিন্তুু জব করবো না।মন দিয়ে আপনার সাথে সংসার করবো।আর এতোদিন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সরি।আসোলে আপনি যদি আমার প্রতিটি কাজে এভাবে সিনক্রিয়েট না করতেন, তাহলে আমিও এমন টা করতাম না।আপনি যেদিন আমাকে রেখে ইন্ডিয়া চলে গেলেন।সেদিন থেকে আপনাকে আমি মিস করতে শুরু করেছি।আপনার থেকে দূরত্বের কারণে, আপনার প্রতি আমার অবচেতন মনের অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে।আমি আপনার জন্য মনে হয় উ**ন্মা**দ হয়ে গেছিলাম।কিন্তুু এতো মানুষের ভিড়েও কারো কাছে আমার মনের কথা গুলো মুক্ত ভাবে প্রকাশ করতে পারিনি।কিন্তু এখন আমি আপনাকে…

” নিহান বাঁকা হেসে বললো,’এখন তুমি আমাকে কি?”

“নীলাদ্রি লাজুক হেসে বললো,’আপনি তো সবকিছুই জানেন।আমি আর নতুন করে কি বলবো?”

“উহুমম নতুন পুরাতন সবকিছু বলার জন্য সৃষ্টিকর্তা তোমায় কন্ঠস্বর দিয়েছেন।যদি কথা বলতে না পারতে,সেটা অন্য বিষয় ছিলো।আমরা মনের ভাষা প্রকাশ করার জন্যই তো মুখে বিভিন্ন বাচনভঙ্গিতে কথা বলি।তুমি তো দেখি বাংলা ব্যাকরণে খুবই কাঁচা।আচ্ছা বাদ দাও..এখন আসল কথা বলো,’তুমি আমাকে কি?”

“নীলাদ্রি লাজুক হেসে বললো,’আমি আপনাকে ভালোবাসি নিহান।খুব ভালোবাসি।”

“নীলাদ্রির মুখে ২বার ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনে নিহানের শরীরে মনে হয় শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো।মুহূর্তেই নিহানের মন পুলকিত হয়ে গেলো।নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বললো,’আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।যুগ যুগ ধরে ভালোবাসি নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে নিহানের কাছ থেকে সরে গিয়ে বললো,’আপনারা পুরুষ রা বড় ছলনাময়ী,এখন আমিতো নতুন তাই এতোটা ভালোবাসেন; যখন পুরনো হয়ে যাবো তখন তো আমার ভালোবাসা আপনার কাছে ফিকে হয়ে যাবে।”

“নিহান নিজের চিবুকে হাত দিয়ে বললো,’তা কিভাবে ফিকে হবে শুনি?”

“নীলাদ্রি মুচকি হেসে অভিনয় করে বলে উঠলো,

“ওহে নারী প্রেমের জলে ডুব দিওনা
এতো প্রেম নয়,যেনো বিষাক্ত ছলনা
প্রেম হলো কাঁঠালের আঠা,
প্রথম প্রথম লাগে বড় মিঠা
ক’দিন পরে পুরনো হলে,
লাগবে তোমায়
করলার থেকেও তিতা…”

~মেহের আফরোজ~

“নিহান নীলাদ্রির কবিতা শুনে নীলাদ্রির মতোই অভিনয় করে বললো,

“ওহে পুরুষ নারীর মোহে অন্ধ হয়ে
করো না তাকে বিশ্বাস,
ক’দিন পরে সুযোগ বুঝে
ছিনিয়ে নেবে নিঃশ্বাস,
নারীর মতো ছলনাময়ী
এই জগতে নাই,
মনের দুঃখে ইচ্ছে করে
বনবাসে যাই।”

~মেহের আফরোজ~

“নিহানের বিতর্কিত কবিতা শুনে নীলাদ্রি খুব অপমানিত বোধ করে কটমটিয়ে বললো,’আপনার মতো সন্দেহবাদী পুরুষদের মনের মধ্যে এই টাইপের সন্দেহবাদী কবিতাই ঘুরপাক খায়।”

“নিহান পাল্টা জবাব দিলো,’তোমার মতো অবিশ্বাসী নারী থাকলে পুরুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কষ্ট হয়ে যাবে।স্বামী কাজে একটু ব্যস্ত থাকলেই বলবে,’আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই আমায় আর সময় দাওনা ব্লা ব্লা ব্লা…

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রিও একের পর এক টেপরেকর্ডার চালু করে দিলো।দু’জনের কবিতা মূলক টক-ঝাল ঝগড়াতেই পুরো বিকাল টি কে**টে গেলো।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে