ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-০১

0
485

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“অমাবস্যা রাত।রাত সাড়ে ১১টায় পিচঢালা রাস্তায় ফেইরি লাইটের আলোতে বড় বড় পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে ২২বছর বয়সী একজন তরুণী;তার নাম নীলাদ্রি।কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে,হাতে রয়েছে ব্যাগ ভর্তি ওষুধ।তাকে অনুসরণ করে দ্রুত পা ফেলে চলেছে ৪-৫জন বখাটে যুবক।”

“পেছনে থাকা যুবক গুলোকে দেখে তরুণী আরও দ্রুত হেটে চলেছে।এক পর্যায়ে দৌড়াতে শুরু করলো।যুবক গুলোও দৌড়াতে আরম্ভ করলো।ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো,’আজ মেয়েটাকে বাগে পেয়েছি;কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।’বলেই শ**য়তানি হাসি দিলো যুবকটি।”

“নীলাদ্রি দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় ওদের বাসার গলির সামনে চলে এলো।গলির কাছে আসতেই নীলাদ্রি সামনের দিকে তাকিয়ে ভ**য় পেয়ে গেলো।কারণ,ওর সামনেই আছে একটি কুকুরের র**ক্তাক্ত দেহ।কুকুরটির ঘাড় থেকে অনবরত র**ক্ত পড়ছে;আর সেগুলো পরম তৃপ্তি নিয়ে শুষে নিচ্ছে ৩টি বাদুড়।”

“চোখের সামনে এভাবে র**ক্তাক্ত অবস্থায় কুকুরটিকে দেখতে পেয়ে,আর তার সামনে ৩টি বাদুড় দেখতে পেয়ে নীলাদ্রির চোখজোড়া আরও বড় বড় হয়ে গেলো।নীলাদ্রি আর এক পা ও আগাতে পারলোনা।ওর পা জোড়া সেখানেই থমকে গেলো।কপাল পেয়ে দরদর করে ঘাম পড়তে লাগলো।”

“এদিকে যুবক গুলো এতক্ষণে সেখানে এসে হাজির হতেই,সামনে থাকা বী**ভৎস কাহিনীর সম্মুখীন হলো।ওরাও খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।যুবকদের পায়ের ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ পেতেই বাদুড় গুলো ওদের দিকে তাকালো।এবং ওদের সামনেই দেখতে পেলো নীলাদ্রি চেহারায় আ**তংক নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।বাদুড় গুলো পাখা মেলে যুবকগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।তখনই হুশে আসলো নীলাদ্রি।ও ভেবেছে বাদুড় গুলো ওর দিকে আসছে।ভ**য়ে চোখজোড়া বন্ধ করে সেখানেই বসে পড়লো নীলাদ্রি।”

“এদিকে যুবকদল বাদুড় গুলোকে এগিয়ে আসতে দেখেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো।নীলাদ্রি কয়েক সেকেন্ড পর পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই। গলির রাস্তা পুরোটা ফাঁকা।নীলাদ্রি আর একমুহূর্তও দেরি করলো না।শুকনো ঢোক গিলে বসা থেকে দাড়িয়ে, এক দৌড়ে ওর বাসার গেটের ভেতরে এসে হাঁপাতে লাগলো।এদিকে গেটের সামনে এসে দেখলো দারোয়ান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলাদ্রি দারোয়ান কে আর ডাক দিলো না।সিড়ি বেয়ে তিন তালায় উঠে ওদের ঘরের দরজায় ঠকঠক করতে লাগলো।ভেতর থেকে নীলাদ্রির মা সিতারা বেগম কাশতে কাশতে দরজা খুলে দেখলেন, নীলাদ্রির চেহারা থেকে শুরু করে পুরো জামা-কাপড় ঘামে ভিজে জুবুথুবু হয়ে আছে।”

“সিতারা বেগম কিছু বলার আগেই, নীলাদ্রি ওর মায়ের জন্য আনা ওষুধ গুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে লাগলো।মাথার উপরে ফ্যান চলছে; অথচ নীলাদ্রির ঘাম ঝড়ে পড়া যেনো আরও দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে।নীলাদ্রি কাভার্ড থেকে জামা-কাপড় বের করে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।প্রায় আধাঘন্টা পর শাওয়ার নিয়ে বের হলো নীলাদ্রি। এখন ওর কাছে বেশ ফ্রেশ লাগছে।এদিকে সিতারা বেগম নীলাদ্রির রুমে প্রবেশ করে বললেন,’কি হয়েছে তোর?এভাবে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে এলি কিভাবে?রাস্তায় কি কুকুর ধাওয়া করেছে?”

“মায়ের প্রশ্ন শুনে নীলাদ্রির মস্তিষ্কে আবারও সেই কুকুরটির র**ক্তাত দেহ ভেসে উঠলো,তার সাথে ভেসে উঠলো র**ক্ত চোষা ৩টি বাদুড়ের প্রতিচ্ছবি।নীলাদ্রি আবারও ঘামতে লাগলো।সিতারা বেগম নীলাদ্রির কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’নিশ্চয়ই তোকে কুকুর ধাওয়া করেছে।এতো রাতে তোকে ওষুধ আনতে পাঠানো আমার একেবারেই উচিত হয় নি।কিন্তুু কি করবো বল?শ্বাসকষ্টের সাথে কাশিটাও সমান ভাবে বেড়ে চলেছিলো।তাই তোকে বাধ্য হয়ে যেতে বলেছি।কিন্তুু তোকে এতো রাতে বাইরে পাঠিয়ে আমিও খুব টেনশনে ছিলাম।

“মায়ের কথা শুনে এতক্ষণে নীলাদ্রির ওর মায়ের শ্বাসকষ্টের কথা মনে পড়লো।নীলাদ্রি ওর মায়ের ওষুধ গুলো এক মাসের টা একসাথে কিনে রাখে।কিন্তুু এই মাসে পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকায়,মাসের শেষে ওষুধ গুলো কিনতে ভুলে গিয়েছিলো।যার ফলে রাতে সিতারা বেগমের শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি ও বেড়ে যায়।নীলাদ্রি তাই এতো রাতে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হয়।আর নীলাদ্রি কে দেখতে পেয়েই এতোদিন রাস্তা-ঘাটে উ**ত্যক্ত করা ছেলেগুলো হা**মলে পড়তে চায়।কিন্তুু আকস্মিক ঘটনা ঘটায় সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়।’কথাগুলো ভেবে নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ওষুধগুলো খেয়েছো মা?”

” সিতারা বেগম হাসি মুখে উত্তর দিলেন,’হুমম খেয়েছি।তাইতো এখন তোর সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছি।”

“নীলাদ্রি ওর মাকে বিছানায় বসালো,তারপর তার কোলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে বললো,’মা আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে।একটু মাসাজ করে দাও প্লিজ।’
সিতারা বেগম মুচকি হেসে পরম যত্নে নীলাদ্রির কপালে মাসাজ করে দিলেন।একসময় নীলাদ্রি ঘুমিয়ে গেলো।নীলাদ্রির মাথা বালিশে রেখে, ওর পাশে সিতারা বেগমও শুয়ে পড়লেন।”

——————-
“সকাল ১০টায় ইউনিভার্সিটিতে উপস্থিত হয় নীলাদ্রি। ওর পেছনে এসে ওর মাথায় গাট্টা মেরে ইরা বললো,’কিরে বান্দরনি এতো দেরি করে আসলি কেনো?তোকে না বলেছিলাম সাড়ে নয়টায় এখানে থাকবি।”

“নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’আরে আমি তো গতকাল রাতে মহাবিপদে পড়েছিলাম।তাই কাল রাতে খুব মাথা ব্যথা করছিলো।সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।”

“ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি বিপদে পড়েছিস শুনি?’
‘নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে ভ**য়ার্ত মুখ নিয়ে পুরো ঘটনাটা বললো।”

“পুরো ঘটনা শুনে ইরাও শুকনো ঢোক গিললো।কন্ঠে আ**তংক নিয়ে বললো,’বলিস কি?শহরের বুকে বাদুড় কিভাবে এলো?তাও আবার র**ক্ত চোষা বাদুড়?বাদুড় তো বেশিরভাগ গ্রামে থাকে।”

“নীলাদ্রি শুকনো মুখে বললো,’আমিও সেটাই ভাবছি।”

“ইরা বুঝতে পেরেছে নীলাদ্রি খুব ভ**য় পেয়েছে।তাই ওর ভ**য় কাটাতে হাসি মুখে বললো,’আচ্ছা ক্লাসে চল।আজ আমাদের অনার্স থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।আমি তো খুব এক্সাইটেড।মনে হচ্ছে তুই ফার্স্ট হবি,আর আমি সেকেন্ড হবো।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি মুখ ভেংচি কেটে বললো,’তোর এই চাপা বন্ধ করে ক্লাসে চল।সারা মাসে ১০দিন ক্লাসে এসে আবার বড় বড় কথা বলিস।আমরা কেউ ফার্স্ট, সেকেন্ড হবো না।যদিও প্রতিদিন কোচিং করেছি,আর পরীক্ষাও বেশ ভালো হয়েছে।কিন্তুু, কেনো জানি মনে হচ্ছে এইবার আমি ফার্স্ট হতে পারবো না।”

“ইরা চোখ পাকিয়ে বললো, ‘হয়েছে সকাল সকাল কুফা টাইপের কথা না বলে ক্লাসে চল।’বলেই ওরা দু’জন হাত ধরে
ক্লাসে গেলো।”

“ক্লাসে গিয়ে ওরা মাঝের বেঞ্চে বসলো।কিছুক্ষণ পর ক্লাসে টিচার এসে রেজাল্ট ঘোষণা করার জন্য তার হাতে একটি কাগজ নিলো।নীলাদ্রি এবং ইরা সহ সবাই কৌতূহল নিয়ে টিচারের দিকে তাকিয়ে আছে।ক্লাস টিচার হাসি মুখে বললেন,’অনার্স থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সামে এইবার ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হয়েছে ৩জন ছেলে স্টুডেন্ট।বিষয়টি একদমই মিরাক্কেল।যেখানে প্রতিবার মেয়েরা এগিয়ে থাকে।’বলেই তিনি হাসি মুখে তিনজনের নাম বললেন,’ফার্স্ট নিহান আহমেদ,সেকেন্ড এহতিশাম আহমেদ এবং থার্ড ইয়াশ আহমেদ।আরও একটি মজার ব্যাপার হলো এরা ৩জন আপন ভাই।তারা চলতি বছরের শুরুতে এসে এখানে ভর্তি হয়েছে।’বলেই তিনি হাসিমুখে ডান সারিতে সামনের বেঞ্চে বসে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,’কংগ্রাচুলেশনস ফর ইউর গ্রেট জার্নি।”

“টিচারের কথা শুনে তিন ভাই হাসি মুখে দাড়িয়ে একসাথে বলে উঠলো,’থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।প্লিজ প্রে ফর আজ।”

“তারপর টিচার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললেন,’তুমি এইবার চতুর্থ স্থান অধিকার করেছো নীলাদ্রি।মনে হচ্ছে তোমার পড়াশোনার প্রতি মনযোগ কমে গেছে।নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল, ওকে?”

“নীলাদ্রি দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,’ওকে স্যার।’তারপর টিচার কিছু লেকচার দিয়ে চলে গেলো।”

“এদিকে বেঞ্চে বসে থাকা তিনজন সুদর্শন পুরুষদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ক্লাসের সাবাই তাকিয়ে আছে।ওরা তিনজন বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাইরে মাঠে চলে গেলো।ওরা চলে যেতেই সবাই ওদের মেধা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য শুরু করলো।”

“অপরদিকে দুই গালে দুই হাত দিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে ইরা।নীলাদ্রি বুঝতে পেরেছে ইরার মন খারাপের কারণ।তাই ও ইরার গাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,’দেখ তোকে আগেই বলেছিলাম আমরা কিছুই হতে পারবো না।কারণ, আমরা এই এক বছর নিয়মিত ক্লাস করিনি।কোচিং করলেও, ক্লাস করাটা বেশি জরুরি ছিলো।একদিকে তোর মা মারা গিয়েছে।সেজন্য তোর মানসিক অবস্থা খারাপ।আরেকদিকে আমার মা অসুস্থ হয়ে গেছে।সবমিলিয়ে আজকের এই অবস্থা। দেখবি নেক্সট টাইম আমরা ওদের থেকে এগিয়ে থাকবো।তবে এটা মানতে হবে ছেলেগুলো সত্যি খুব ব্রিলিয়ান্ট।”

“টিফিন পিরিয়ডে নীলাদ্রি এবং ইরা ক্যাম্পাসের ভেতরে মাঠের এক সাইডে ঘাসের ওপর বসে কথা বলছিলো।এমন সময় একটি পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,’হেই মিস নীলাদ্রি।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াস দাড়িয়ে আছে।নীলাদ্রি ওদেরকে দেখে বেশ অবাক হলো।নীলাদ্রি ওদের বেশ খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।’ওদের তিন ভাইয়ের চেহারা প্রায় একরকম লাগে।ওদের গায়ের রং ধবধবে ফর্সা।মনে হয় ব্রিটিশদের বংশধর।খুব সহজেই চোখে পড়ে।কিন্তুু নীলাদ্রি এবং ইরা নিয়মিত ক্লাস না করায় হয়তো ওদের চোখে পড়েনি।ওদের কে হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভাববে,ওদের জন্ম কয়েক সেকেন্ড আগে পরে হয়েছে।কিন্তুু ওদের কে যারা সূক্ষ্মভাবে দেখবে তারা চিনতে পারবে।কারণ, ইয়াশ একটু গুলুমুলু, এহতিশাম এর স্বাস্থ্য ইয়াশের থেকে একটু কম।আর নিহান কে দেখলে মনে হয় সে জিম করে।তার বডি ফিটনেস একদম পারফেক্ট।’কথাগুলো ভেবেই নীলাদ্রি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ ওর নিহানের চোখজোড়ায় নজর পড়লো।নিহানের চোখজোড়া দিয়ে মনে হয় লাল আভা বের হচ্ছে।নীলাদ্রি ধীর পায়ে নিহানের দিকে এগিয়ে গেলো।এক হাত দূরত্বে আসতেই দেখতে পেলো নিহানের চোখের মণি একদম স্বাভাবিক।নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।দূর থেকে দেখলো একরকম;কাছে এসে দেখলো অন্যরকম।তাহলে কি এটা ওর মনের ভ্রম?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’এভাবে চোখ দিয়ে তাকালে তো নজর লেগে যাবে নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের মুখে নীলাঞ্জনা নামটি শুনে চমকে উঠলো নীলাদ্রি। কারণ, এই নাম টা ওর বাবা-মা ছাড়া কেউ জানেনা।জন্মসনদেও এই নাম দেওয়া হয়নি।আর কেউ ওকে এই নামে ডাকেও না।তাহলে এই লোক কিভাবে ওর নাম জানলো?”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে