Monday, October 6, 2025







ভৈবর নদীর পাড় পর্ব-২+৩

#ভৈবর_নদীর_পাড়
কলমে : #ফারহানা_কবীর_মানাল
পার্ট-২ + ৩

আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। ঘন কালো মেঘ। হঠাৎ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার। এমনই এক বর্ষার দুপুরে আমার জন্ম হয়েছিল। আকাশে কালো মেঘ। থেকে থেকে মেঘের গর্জন। বাবা হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাহাটি করছেন। হাঁটছেন খুব বিচলিত ভঙ্গিতে। যেন তার দুনিয়া উলোট-পালোট হয়ে যেতে বসেছে। মায়ের শরীরে র’ক্তের ঘাটতি ছিল। ডাক্তার যে কোন মুহুর্তে র’ক্ত চাইতে পারে অথচ র’ক্ত দেওয়ার লোক পাওয়া যায়নি। যা হোক একজনকে পাওয়া গেছিল, শেষ মুহুর্তে জানিয়ে দিলেন- তিনি আসতে পারবেন না। খুব জরুরি কাজ পড়ে গেছে। বাবা হাসপাতালের বারান্দায় বসে পড়লেন। তিনি ক্রমাগত ঘামছেন। শার্টের হাতায় সেই ঘাম মুছছেন আর আল্লাহ আল্লাহ করছন। চারটে বেজে এক মিনিটে আমার জন্ম হলো। ওয়াও ওয়াও করে কাঁদার সাথে সাথে ঝুম বৃষ্টি লাগল। ডাক্তার জানালো র’ক্ত লাগবে না। রোগী বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ আছে। বাবা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। ঠিক করছেন একশটা এতিম বাচ্চাকে ভাত খাওয়াবেন। জোড়া খাসি জ’বা’ই করে সেই ভাত খাওয়ানোর অনুষ্ঠানও পালন করা হয়েছে। যদিও এসবের কোন কিছু আমার চোখে দেখা নয়। লোকের মুখে শুনেছি। লোকে বলে শোনা কথা বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি। অন্তত বাবার ব্যাপারে আমার ষোল আনা বিশ্বাস আছে।

অচেনা লোকটি ফুফার পাশাপাশি হাঁটছে। নিচু গলায় ক্রমাগত কথা বলে যাচ্ছে। তার কথার ধরণ খুবই হালকা। বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। মাথা নিচু করে দ্রুত ভাবতে চেষ্টা করলাম। গ্রামের দিকে নদীর কাছাকাছি বেশিরভাগ খু’ন’খা’রা’বি হয়। নদীর পানিতে র’ক্তের দাগ ধুয়ে যায়। এরাও কি আমার সাথে তেমন কিছু করবে? বুঝতে পারছি না। অতিরিক্ত উত্তেজনায় মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আমার সাথেও তাই হচ্ছে। চিন্তা শক্তি এলোমেলো হয়ে গেছে। দু-জনের ভাব সুবিধার মনে হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু খুব একটা অসুবিধারও মনে হচ্ছে না। এই মুহূর্তে ঠিক কি করলে বিপদের সম্ভাবনা কমে যাবে? দৌড়ে পালাবো? দৌড়ে পালালে খুব একটা লাভ হবে না। নির্জন রাস্তা। রাস্তায় দু’পাশে কাঁটাবন। জায়গাটা একদম নিরিবিলি। এখান থেকে দৌড়ে পালানো সহজ কাজ না। নিশ্চিতভাবে ওরা আমায় ধরে ফেলবে। ধৈর্য ধরে আরও কিছুক্ষণ ওদের অনুসরণ করা যায়। কিন্তু এটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এতে বিপদ বাড়বে ছাড়া কমবে না। ফুফা বললেন, “ফয়সাল মিয়া, সাবধানে হাঁটবে। দেখে শুনে পা ফেলেবে। রাস্তার পাশে যেও না। নদীর পাড়ের এলাকা। সাপ থাকতে পারে।”

নিঃশব্দে মাথা নাড়লাম। কথা বলতে ইচ্ছে করছে। বলতে পারছি না। প্রচন্ড ভয়ের কারণে গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। অচেনা লোকটি বলল, “এই ছেলেকে দিয়ে কাজ হবে তো?”

কথাটা সে বেশ জোরেই বলল। এই প্রথম তার কোন কথা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাল। ফুফা জোর গলায় বললেন, “কাজ হবে না? কাজের ছেলের দেখেই তো সাথে নিয়ে এসেছি। কি ফয়সাল মিয়া? তুমি কাজের ছেলে না?”

আমি ক্রমাগত মাথা নাড়তে লাগলাম। সামান্য কথাবার্তায় অনেকখানি ভয় কেটে গেছে। এখন আর তেমন ভয় লাগছে না। শুধু মনে হচ্ছে শরীরের ওপর দিয়ে বরফ শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। খুবই ঠান্ডা হাওয়া। মন ভালো করার মতো ঠান্ডা। অচেনা লোকটাও অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। বেঁটেখাটো চেহারার মানুষটা হেলেদুলে হাঁটছে। পান খাওয়া হলদেটে-লাল দাঁত নিয়ে ক্রমাগত হাসছে। অদ্ভুতভাবে সেই হাসি দেখতে ভালো লাগে। মুখের দিকে তাকালে কেমন যেন মায়ায় পড়ে যেতে হয়। তখন লোকটাকে খুব অসহায় মনে হয়।

হাঁটতে হাঁটতে খোলা মাঠের মতো জায়গায় এসে উপস্থিত হলাম। মাঠের তিন পাশে ঘন জঙ্গলের মতো ঝোপঝাড়। এক পাশে নদী। ফুফা নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে বললেন, “ফয়সাল মিয়া, এখানেই জাল ফেলা হোক। তুমি কি বলো?”

“হোক।”

ফুফা মায়া ভরা চোখে আমার দিকে তাকালেন। অসম্ভব কোমল গলায় বললেন, “তোমার কি ভয় লাগছে?”

জড়ানো গলায় বললাম, “না না। ভয় লাগবে কেন? আপনি তো সাথেই আছেন।”

‘আপনি তো সাথেই আছেন’ এই কথাটা আমি ইচ্ছে করে বলিনি। মুখে চলে এসেছে। ফুফা হাসলেন। অচেনা লোকটি গায়ের চাদর খুলে মাটিতে রাখল। চাদর খুলে মাটিতে রাখার ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগল না। চাদরের আড়াল সরে যেতে অদ্ভুত একটা জিনিস খেয়াল করলাম। লোকটার একটা হাত নেই। কনুইয়ের উপরে শার্ট ঝুলছে। অবাক দৃষ্টিতে তার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটি বিব্রত গলায় বলল, “এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

“কিছু না। এমনিতেই।”

“কা’টা হাত দেখছ নিশ্চয়ই? বুড়ো বুড়ো লোকেরা পর্যন্ত আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে। তুমি তো বাচ্চা ছেলে।”

“আপনার হাতে কি হয়েছিল?”

“বিশেষ কিছু হয়নি। জাহাজের দড়িতে আটকে গেছিল। এক কো’পে কে’টে ফেলেছি।”

চমকে উঠলাম। উত্তেজিত গলায় বললাম, “আপনি নিজে কে’টে’ছেন?”

“হ্যাঁ, নিজেই কে’টেছি। লম্বা ঘটনা। পরে একদিন সময় করে বলল। মোশারফ ভাই! মাছ ধরার কি করলেন? জাল এনেছেন তো?”

ফুফা ডানে বামে মাথা নাড়তে লাগল। এর অর্থ তিনি জাল আনেননি। জাল যেহেতু আনেননি তাহলে নিশ্চয়ই মাছ ধরতে আসেননি। অন্য কারণে এসেছেন। কি সেই কারণ? তিশা আপুর কথা সত্যি নয় তো? ভয় যতটা কেটে গেছিল তার থেকে হাজার গুন বেশি ফেরত এসে আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। খেয়াল করলাম আমার শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। ফুফা বললেন, “এখন কি করা যায়? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি জাল নিয়ে আসবেন।”

অচেনা লোকটি অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসলো। সরল গলায় বলল, “আমার ঘরে জাল রাখা আছে। একটু সামনেই। খোকা তুমি গিয়ে জাল নিয়ে এসো। আমি যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিচ্ছি।”

কথার ভাব শুনলেই বোঝা যায় সে মিথ্যে বলছে। লোকটা আমায় বোকাসোকা ধরনের ছেলে মনে করেছে৷ বুদ্ধিমান মনে করলে এলোমেলো কথা বলত না। আমি ভালো-মন্দ কিছু বললাম না। অল্প হাসলাম। সম্মতির হাসি। লোকটা আমায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল। হাতের মধ্যে একটা পুঁটলি দিয়ে বলল, “ঘরের মধ্যে আমার ভাই থাকবে। এটা ওকে দিয়ে আসবে।”

কাঁপা হাতে শক্ত করে পুঁটলিটা চেপে ধরলাম। ফুফা ভাবলেশহীন চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। প্রতি মুহুর্তে ভাবনা বদলে যাচ্ছে। আপাতত ওদের কথা শোনা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। যে পথে এসেছি সে পথে ফিরে যেতে পারব না। অতিরিক্ত ভয় কাজ করলে পথ চিনে ফিরে যাওয়া যায় না। এলোমেলো পায়ে লোকটার দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে লাগলাম। পথ চলছি যন্ত্রের মতো। ইস্পাতের তৈরি রোবটও বলা চলে। তবু অনুভূতি শক্তি প্রবল! মনে হচ্ছে দু’টো সাপ হিসহিস করতে করতে আমার পিছু নিচ্ছে।

শেষবার সাপ দেখেছিলাম বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে। তখন আমি ক্লাস থ্রি-তে পড়ি। বর্ষাকাল। আকাশে মেঘ দেখে বাবা বললেন, “ফয়সালের মা, মাছ ধরার জালটা এনে দাও তো। আকাশে মেঘ জমলে কৈ মাছ ডাঙায় উঠে আসে।”

মা ভীষণ বিরক্ত হলেন। তেঁতো গলায় বললেন, “ফ্রিজে অনেক মাছ আছে। বর্ষা মুড়ি তোমাকে মাছ ধরতে যেতে হবে না। ঘরে শুয়ে থাকো।”

বাবা মা’য়ের কথা শুনলেন না। চুপিচুপি গিয়ে খাটের নিচ থেকে জাল টেনে বের করে আনলেন। আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, “আব্বাজান, মাছ ধরতে যাবেন নাকি?”

খুশিতে মাথা দোলাতে লাগলাম। বাবা চওড়া হাসি দিলেন। মা’য়ের চোখের আড়ালে দু-জনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। কথা হয়েছিল মাছ ধরতে নদীতে যাব। কিছুদূর যাওয়ার পরই ঝুম বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির ফোঁটা সুচের মতোই ধা’রা’লো। গায়ে বিঁধে যায়। ভাগ্যক্রমে তখন আমরা বাজারের মধ্যে ছিলাম। বাবা দোকান থেকে নতুন ছাতা কিনে ফেললেন। সেই ছাতা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “জীবনে একবার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে কখনও পিছু হটবে না। এতে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়।”

ছাঁদ ফুটো করা বৃষ্টির মধ্যে জাল কাঁধে নিয়ে বাবা মাছ ধরতে গেলেন। ছাতা মাথায় বাবার পিছুপিছু হাঁটছি। প্রথমবারের জালে বিশাল এক সাপ উঠল। বাবা সাপটিকে ধরে জঙ্গলে মধ্যে ছেড়ে দিলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, “কেউ বিপদে পড়লে তার সুযোগ নিতে হয় না।”

“সাপটা কি বিপদে পড়েছিল?”

“হ্যাঁ, পড়েছিল বৈকি! সেজন্য তো ছেড়ে দিলাম।”

কথায় কথায় উপদেশ দেওয়াটা বাবার স্বভাবেই ছিল। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভালো লাগত। সেদিন মাছ ধরতে ধরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দাদি আমাদের বাপ-ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দিলেন না। ভরাট গলায় বললেন, “তৃণু, ওদের ঘর থেকে চলে যেতে বল। এক্ষুণি বলবি। বাপ ছেলেকে দেখলে আমার চোখ জ্বালা করছে।”

মা অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকাতেই বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। মা সাবান পানি দিয়ে আমার গা ধুইয়ে ঘরে তুললেন। দাদি খুব রাগী মানুষ। বয়সের সাথে সাথে তার রাগ কমেনি। সুদে আসলে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।

হঠাৎই খেয়াল করলাম চোখের কোণটা ভিজে উঠেছে। মধুর স্মৃতি মনে করলে চোখ ভেজার কারণ কি? অচেনা লোকটার কথা সত্যি। জঙ্গলে মধ্যে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে। ঘরটা দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি ভেঙে পড়বে। ঘরের দরজা খোলা। সাবধানী পায়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাচার ওপর একটা লোক বসে আছে। তার চোখ জোড়া র’ক্তের মতো লাল। লোকটা ভারী গলায় বলল, “কি চাই?”

কি বলবো বুঝতে পারলাম না। অচেনা লোকটার নাম জেনে আসা উচিত ছিল। ফুফার কথা বলব নাকি বলব না। লোকটা আবারও খেঁকিয়ে উঠল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “কথা বলছিস না কেন?”

“আপনার ভাই জাল নিতে পাঠিয়েছে।”

লোকটা ভ্রু কুঁচকে গেল। চোখ সরু করতে করতে বলল, “জাল নিতে এসেছিস?”

ওপরে নিচে মাথা দোলাতে দোলাতে হ্যাঁ বললাম।

“পুঁটলি এনেছিস?”

“হ্যাঁ, এনেছি।”

“দে, আমার হাতে দে।”

পুঁটলিটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম। লোকটা চিলের মতো চো মে’রে আমার হাত থেকে পুঁটলিটা নিয়ে নিল। শক্ত গলায় বলল, “দরজার কাছে জাল রাখা আছে। নিয়ে যা।”

জালটা একটু বেশিই ভারী মনে হচ্ছে। সচারাচর মাছ ধরার জাল এতো ভারী হয় না। আমি জাল নিয়ে যাওয়ার পর মাছ ধরা শুরু হলো। ফুফা খুব মজা নিয়ে মাছ ধরছে। অচেনা লোকটার কথায় ক্রমাগত হাসছে। কতই না আনন্দ হচ্ছে ওদের। অথচ আমি এক ফোঁটাও আনন্দ করতে পারছি না। ভয়ে জড়সড় হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আসরের আজান কানে আসতেই ফুফা পানি থেকে উঠে এলেন। সরু গলায় বললেন, “ফয়সাল মিয়া, পানিতে না নামলে কি মাছ ধরার মজা পাওয়া যায়?”

“আমার কেমন যেন শীত শীত করছে। মনে হয় জ্বর আসবে। আমি পানিতে নামব না।”

“জ্বর আসা তো ভালো কথা না। চলো তাহলে বাড়ি ফিরে যাই। এমনিতেই একটু পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা চলেন। দাদি খুব চিন্তা করছে।”

ফুফা জবাব দিলেন না। আমায় সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। বাড়ির মধ্যে পা দিতেই মনটা শান্ত হয়ে গেল। যেন সাক্ষাৎ মৃ’ত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। দাদি অনেক বকাঝকা করলেন। সেসব কথার জবাব দিলাম না। বাথরুমে ঢুকে গায়ে পানি ঢালতে লাগলাম। শরীরে মধ্যে অদ্ভুত জ্বালা জ্বালা করছে। পানি দিয়ে না ধুলে এ জ্বালা কমবে না।

আমাদের বাড়িটা দোতলা। নিচ তলায় ছয়টা রুম। এক রুমে ফুফু আর ফুফা থাকে। এক রুমে ফুফু শাশুড়ি, এক রুমে শিমুল আর তালেব, এক রুমে ফুফুর ছোট ননদ, একটায় দাদি অন্যটায় আমি। আগে আমি দাদির সাথে থাকতাম। ক্লাস এইটে ওঠার পর ঘর আলাদা করে দিয়েছে। দোতলার একটা ঘরে তিশা আপু থাকে। বিশাল বড় ঘর এটাচ বাথ। আপু নিজের মতো করে ঘরটাকে সাজিয়ে নিয়েছে। রাতের খাওয়া শেষ করে আপুর ঘরে গেলাম। আপু দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বই পড়ছে। তার টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে বললাম, “কাগজে ওইসব কি লিখে দিয়েছ?”

তিশা আপু অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “কোন সব লিখে দিয়েছি?”

“মাছ ধরতে যাওয়ার সময় যেটা আমার হাতে দিয়ে আসলে।”

“ওহ! ওইটা? ওইটা তো আব্বা তোকে দিতে বলেছিল।”

হাতে চিমটি কাটলাম। হ্যাঁ আমি ঠিকই শুনছি। এবং আপুর কথা সত্যি হতে পারে। সেজন্যই বোধহয় হাতের লেখা চিনতে পারছিলাম না। কিন্তু ফুফা কেন আমায় ওইসব লিখতে যাবেন?

চলবে

#ভৈবর_নদীর_পাড়
কলমে : #ফারহানা_কবীর_মানাল
পার্ট-৩

আজ সোমবার। এই সপ্তাহে আজই প্রথম স্কুলে যাব। আজকে দিনটা অন্য দশটি দিনের মতো এক রকম নয়। একটু যেন অন্য রকম। আলো কেমন অন্য দিনের চেয়ে কোমল। বাতাস ভেজাভেজা। মানুষের চিন্তা ভাবনার সাথে দিন পাল্টে যায় নাকি?
বেলা করে ঘুম ভেঙেছে। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমতে পারিনি। চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে ছিলাম। রাতেরবেলা ঘুম না আসলে গল্প করার জন্য একজন মানুষের প্রয়োজন হয়। অনেকদিন ধরে এই প্রয়োজনীয়তাটা অনুভব করছি। তবে সে প্রয়োজন মেটানোর কোন উপায় পাওয়া যাচ্ছে না। একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকলেও কিছুটা সময় কাটানো যেত। কিন্তু দাদি আমার হাতে মোবাইল দিতে রাজি হন না। কেন হন না সেও এক রহস্য। এমন নয় যে তার টাকা পয়সার সমস্যা। দাদা সারাজীবন অমানুষিক পরিশ্রম করে অঢেল সম্পত্তি রেখে গেছেন। বাবাও কিছু কিছু করেছেন। সেই সম্পত্তির প্রতি ফুফুদের আগ্রহের শেষ নেই। দূরসম্পর্কের আত্মীয় পর্যন্ত কিছু পাওয়ার আশায় বসে থাকে। মানুষ হিসেবে দাদা খুবই চালাক এবং বুদ্ধিমান ছিলেন। সুস্থ থাকতেই সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন। যার যার প্রাপ্য অংশ তাদের নামে লিখে দিয়ে গেছেন। গ্রামের দিকে এক বিঘের মতো ধানিজমি ফুফুর নামে লিখে দেওয়া হয়েছে। বাবার নামে খুলনা শহরের দিকে ছোট মতো একটা বাড়ি কিনে দিয়েছেন। দাদিকেও আলাদা করে কিছু জমি লিখে দিয়েছিলেন। শুধু এই বাড়িটা নিজের জন্য আলাদা করে রেখে দিয়েছেন। কথা ছিল বাড়িটা এমনই থাকবে। বংশ পরম্পরায় বসবাস করবে। বাড়িতে খুব বেশি কিছু নেই। কিন্তু মুফতে যা পাওয়া যায় তাতেই ফুফুর লোভ। বিশেষ করে ফুফুর শাশুড়ি। তাকে আমি ছোট দাদি বলে ডাকি। ছোট দাদি প্রথম প্রথম খুব ভালো ছিলেন। এখন কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছেন। দিন গেলে সবাই পাল্টে যায়। আমিও বোধহয় অনেক পাল্টে গেছি। আগে দাদির সাথে অনেক সময় নিয়ে গল্প করতাম। আজ-কাল আর তেমন সময় হয়ে ওঠে না। একা থাকতে ইচ্ছে করে।

বেশ ক’দিন ধরে খেয়াল করছি বেশিরভাগ খারাপ খবরগুলো খাবার টেবিলে দেওয়া হচ্ছে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ফুফু বেজার মুখে বলল, “তাড়াতাড়ি খেয়ে নে সবাই। আজকে আমি তোদের স্কুলে দিয়ে আসব।”

শিমুল মুখ বেজার করে ফেলল। ম’রা গলায় বলল, “এই রোদের মধ্যে তোমাকে যেতে হবে না মা। আমরা তিন ভাই মিলে চলে যেতে পারব।”

তিন ভাই কথাটা বলে সে নিজে খানিকটা চমকে গেল এবং টেবিলে বসে থাকা বাকি সদস্যদেরকেও চমকে দিল। ফুফা গম্ভীর গলায় বললেন, “তোদের মা যা বলছে তাই কর। ফয়সালের ওপর এত বিশ্বাস করে বসে থাকিস না। ও তো তোদের সাথে যায় না। একা একা আগে আগে হাঁটে।”

শিমুল মুখ কালো করে তরকারির আলু ভাঙতে লাগল। তালেব বলল, “ফয়সাল ভাই আমাদের সাথে যাবে কিভাবে? দাদি তো তার সাথে কথা বলতেই নিষেধ করেছে।”

ফুফা তীক্ষ্ণ চোখে তালেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মুখে কিছু বললেন না। খেয়াল করলাম ছোট দাদি চোখ মোটা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা সবকিছুতে আমার দোষ দেখতে পান। শিমুল তালেব কোন ভুল কাজ করলেও দোষ হয় আমার।

ফুফু বলল, “শুনেছি ছেলে ধরা বের হয়েছে। ফেসবুকে খুব লেখালেখি হচ্ছে এটা নিয়ে। ছেলে মেয়েদের সাবধানে রাখতে বলা হচ্ছে। তাই আমি তোদের সাথে যাব। এই নিয়ে দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাই না।”

শিমুল আর তালেব খুব করে চাচ্ছিল যেন ফুফু ওদের সাথে না যায়। আড়ালে আবডালে তিশা আপু সাথে যাওয়ার জন্য রাজি করতে চেষ্টা করল। লাভ হলো না। আজকে তার খুব জরুরি ক্লাস আছে। সকাল বেলা তৈরি হয়ে তারপর খেতে বসছে। আপুর সাজ খুব চমৎকার। কলেজ ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে সাদা পাথরের কানের দুল, গলায় পাতলা চেনের সাথে লকেট ঝুলছে। ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপস্টিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় এমন কড়া লিপস্টিক পরার নিয়ম আছে জানা ছিল না। আমাদের স্কুলের রিতা মেডাম এসব ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি করেন। মেয়েরা উনার জন্য লিপস্টিক পরতে পারে না। উগ্র সাজে চুল বাঁধতে পারে না। এ কারণে বেশিরভাগ মেয়ে মেডামকে দু’চোখে দেখতে পারে না। বি’শ্রী ভাষায় গা’লা’গা’ল দেয়।

শেষ পর্যন্ত ফুফু আমাদের নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে ছোট দাদির সাথে কিসব কথা বলে আসলো। আজ-কাল শাশুড়ি বউয়ের খুব ভাব হয়েছে। এক সময় সাপে নেউলের সম্পর্ক ছিল। স্বার্থ মিলে গেলে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
শিমুল আর তালেব বেজার মুখে হাঁটতে লাগল। ফুফার পকেট থেকে চু’রি করা পাঁচশ টাকার নোটটা আজ আর খরচ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ফেরার পথে ফুফু সবাই আইসক্রিম কিনে দিল। আগে হেঁটে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “বাজান আমার উপর রেগে আছিস নাকি?”

চমকে উঠলাম ঠিকই, পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “না না। রেগে থাকব কেন?”

“এই যে ঠিকঠাক তোর খেয়াল রাখতে পারি না। সারাক্ষণ মুখ পু’ড়ি’য়ে কথাবার্তা বলি।”

“না ফুফু, আমি রেগে নেই।”

“কি আর বলব বাজান! নানান চিন্তায় মাথা খারাপ থাকে।”

আমি চুপ করে রইলাম। ফুফু নিজের কন্ঠে আগের থেকে অনেক বেশি দরদ জড়ো বলল, “বাজান, তোর ফুফার হাতে টাকা-পয়সা নেই। সংসার চালতে গিয়ে অনেক ধার দেনা করতে হচ্ছে। মা তো আজ-কাল কোন টাকা পয়সা দিতে চায় না।”

“আমি কি দাদিকে টাকা দেওয়ার জন্য বলব?”

“বলে আর কি করবি? তোর দাদির হাত দিয়ে কি টাকা সরে নাকি? এমন কৃপণ মহিলা আজও আমার চোখে পড়েনি।”

ফুফু ছোট একটা নিঃশ্বাস গোপন করতে চেষ্টা করল। দাদি কৃপণ নয় বরং তাকে দিলখোলা মানুষ বলা যায়। বাবা থাকতে প্রায় প্রতি মাসে ফুফুর বাড়ি বাজার দিয়ে পাঠাতেন। অবশ্য বাজার খরচ বাবার দিতে হতো না। দাদা দাদির জন্য কিছু টাকা আলাদা করে সরিয়ে রেখেছিলেন। দাদি সেখান থেকেই সব খরচ করতেন। মাঝেমধ্যে বাবাকেও কিছু দিতেন। আশেপাশের মানুষ, দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজনরা কেউ এই দেওয়া-নেওয়ার ভেতর থেকে বাদ পড়ত না। মাঝেমধ্যেই মনে হয় দাদা নিশ্চয়ই অসৎ পথে রোজকার করার ব্যবস্থা ছিল। না হলে উনি এতো টাকা কোথায় পেয়েছেন? প্রায়ই ভাবি দাদিকে জিজ্ঞেস করব, সময় কালে মনে থাকে না।

ফুফু বলল, “তোর ফুফার কাছে এক লোক টাকা পাবে। তাগাদা দিচ্ছে, মা’রার হুমকি দিচ্ছে।”

“কত টাকা পাবে?”

“তা লাখ খানেকের মতো। কোথা থেকে এতো টাকা জোগাড় করব ভেবে পাচ্ছি না। ভাবছি কিছু গহনা বিক্রি করব। মানুষটা তো আগে বাঁচুক। তোর ক্লাসের ছেলেগুলো বলে দেখিস তো। কেউ যদি কিনতে চায়।”

পৃথিবীতে এক শ্রেণির মানুষ থাকে। যাদের সাথে কেউ মিষ্টি করে কথা বললে খুব সহজে পুরনো কথা ভুলে যায়। সেই মুহূর্তে তাদের জন্য জীবন দিয়ে দিতেও পারে। আমি সেই শ্রেণির মানুষের মধ্যে একজন। যখন যে আমার সাথে ভালো কথা বলে তখন তাকে সবচেয়ে কাছের মনে হয়। এ কারণে ফুফুর কষ্ট খুব সহজে আমার হৃদয়ে আ’ঘা’ত করল। সাত-পাঁচ না ভেবেই বললাম, “আমি দাদিকে বলল টাকা দিয়ে দিতে। তোমার গহনা বেচতে হবে না।”

“লাভ নেই রে বাজান! আমি মা পায়ে ধরে পর্যন্ত বলেছি।”

“তবুও আমি বলে দেখব। যদি কিছু হয়।”

“চাইলে তুই নিজেও এই টাকা শোধ করতে পারিস।”

“কিভাবে? আমার কাছে এই মুহূর্তে বিশ টাকার একটা নোট ছাড়া এক পয়সাও নেই।”

“কাছে নেই তো কি হয়েছে? ব্যাংকে আছে। ভাইজান তোর জন্য আলাদা করে জমা করে রাখত। মা’য়ের কাছে চেকবই আছে। সেখান থেকে একটা চেক নিয়ে আসব। তুই সই করে দিলেই টাকা তুলতে পারব। দিবি বাজান? চিন্তা করিস না। তোর ফুফা টাকা পেলে পরে আবার ফেরত দিয়ে দেব।”

মাথা দোলাতে দোলাতে হ্যাঁ বললাম। ফুফু চওড়া হাসি দিল। তার চোখ মুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।

রাতে খাবার আয়োজন ভালো। বড় সাইজের গলদা চিংড়ি ভাজা হয়েছে। গরুর গোশতের সাথে পাতলা ডাল। সরু চালের ভাত। সবগুলোই আমার পছন্দের। মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব খাবারের ভালো ভালো অংশটুকু আমার পাতে জমা পড়েছে। বহুদিন বাদে মন ভরে খেতে পারছি। অনেকদিন এমন করে খাওয়া হয় না। দাদি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুব অবাক হচ্ছেন, সেই সাথে দুশ্চিন্তাও করছেন। খাওয়া শেষে মিষ্টি পানের ব্যবস্থা করা হলো। এই খাদ্যবস্তুটা আমার খুব পছন্দের। ছোট দাদি আমায় দু’টো পান দিলেন। আদুরে গলায় বললেন, “নেও জামাই, পান খাও। ঠোঁট লাল করে ঘুরে বেড়াও। মোরে পানে ফিরা চাও।”

ফুফু খুব জোরে জোরে হাসতে লাগল। আগে ছোট দাদি আমায় নানা ভাই বলে ডাকত। এই বাড়িতে আসার পর থেকে জামাই বলে ডাকে। এ বাড়িতে আসার পর সবার সম্মোধন পাল্টে গেছে। ফুফা আগে দাদিকে শাশুড়ি মা বলতেন, এখানে থাকতে শুরু করার পর থেকে আম্মা ডাকেন। ফুফার অন্য ভাই-বোনরাও আম্মা ডাকে। কেন ডাকে কে জানে! এসব নিয়ে দাদিকে খুব একটা ভাবতে দেখা যায় না।

শোবার আয়োজন করছিলাম। খাওয়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে। বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। বাতি নিভিয়ে বিছানায় যাওয়ার মুহূর্তে ফুফু এলো। তার আসার ভঙ্গি অনেকটা চো’রের মতো। ফিসফিস করে বলল, “বাজান, চেক নিয়ে আসছি। সই করে দে।”

কোনকিছু চিন্তা না করে সই করে দিলাম। আমার টাকায় যদি একটা মানুষের দেনা শোধ হয় তো হোক। একটা সইতে যদি ফুফুর চিন্তা দূর হয় তবে না হয় সই করেই দিলাম। কি যায় আসে? আমার তো কিছু কম পড়ে যাচ্ছে না। ফুফুর মুখে হাসি ফুটে উঠল। অনেকক্ষণ ধরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। বাতি নিভিয়ে বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিলাম।

সকালে ঘুম ভাঙলো চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে। ফুফু আর ফুফার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়ার কারণ বোঝা যাচ্ছে না। ফুফা কুৎসিত ভাষায় ফুফুকে গা’লা’গা’ল দিচ্ছেন। ফুফুও কিছু কম যাচ্ছে না। সমান তালে উত্তর দিচ্ছে। ছোট দাদি তাদের ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করছেন। ক্রমাগত ফুফার গায়ে হাত বুলাচ্ছেন। নিচু গলায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন। লাভ হচ্ছে না। দাদির অবশ্য কোন হেলদোল নেই। সোফায় বসে পান চিবুচ্ছেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি ঝগড়া দেখে খুব মজা পাচ্ছেন। ফুফুদের ঝগড়া ততক্ষণ চলল যতক্ষন না খবর এলো তিশা আপু পালিয়ে গেছে। ক্লাসের কোন ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। সেই ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেছে। আপুর বান্ধবী মনিরা এসে এই সংবাদ দিল। ফুফু ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল।

চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ