#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৫]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
আংকেলের কথা শুনে আমি রাজি হয়ে গেলাম তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু খুব ভয় হচ্ছে। কারণ অনেক দিন ধরেই আমার সাথে কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছেনা। ওখানে গিয়ে আবার কোন বিপদে পড়ি? মনের ভিতর থাকা সব ভয় বাদ দিয়ে তাদের সাথে রওনা দিলাম। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে আমাকে একটা বাসার সামনে নিয়ে চলে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই একটা মহিলা এসে দরজা খুলে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলো। মহিলা প্রথমে আমাকে খেয়াল না করলেও পরে খেয়াল করে বলল — এই ছেলেটা কে?
আংকেল বলল — আরে তোমাকে একটা ছেলের কথা বলছিলাম না? ও সেই ছেলে। যে আমাদের ছেলে নয়ন কে গাড়ি এক্সিডেন্টে থেকে বাচালো।
— ওহ আচ্ছা। বাবা তুমি দাঁড়িয়ে আছো এখানে বসো। আমি গিয়ে তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
আংকেল বলল — এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। ও আজ থেকে এখানেই থাকবে। আমাদের ছেলের মতো।
আংকেলের কথা শুনে আন্টি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল — তাহলে তো ভালোই হলো।
তাদের এসব দেখে আমার চোখে পানি চলে আসলো। যেখানে আমার পরিবারের কেউ আমাকে বিশ্বাস করেনি। যারা আমকে জন্ম দিয়েছে তারা আমাকে অবিশ্বাস করছে। আর এখানে এনারা আমাকে ভালো ভাবে চিনেও না আর সবাই আমার কতো খেয়াল রাখছে। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। আন্টি আমার চোখের পানি দেখে বলল — বাবা তুমি কান্না করছ কেন? কি হয়েছে তোমার?
— আন্টি এটা কোনো কষ্টের কান্না না। আসলে যেখানে আমার পরিবার আমাকে বিশ্বাস করেনি। সেখানে আমি আপনাদের কাছে অপরিচিত হয়েও আপনার কি ভাবে আমাকে আপনাদের পরিবারের এক জন করে রেখেছেন।
— কান্না করোনা। বাবা তুমি যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
আংকেল নুসরাতকে বলল — মা যা ঈশানকে তার রুম দেখিয়ে দে।
— ঠিক আছে আব্বু।
এবার নুসরাত আমাকে নিয়ে একটা রুমে চলে গেলো। মেয়েটা এখনো সেই বকবক শুরু করে দিলো।
নুসরাত আমাকে বলল — আচ্ছা আমাদের বাসা কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম — হুম আপনাদের বাসা টা খুব সুন্দর আর খুব ঘচালো।
— সব আমার হাতের। এই বাড়ির সব কাজ আমিই করি৷
— ওহ তার মানে এই বাড়ির কাজের মেয়ে আপনি?
এই কথা বলেই আমি অন্যদিকে ফিরে হাসতে শুরু করলাম। একটু পরে নুসরাতের দিকে তাকাতেই দেখি মেয়েটা রেগে লাল হয়ে গেছে। রাগে ফসফস করে ফুলছে। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলাম। ভয়ে বের হচ্ছিলাম না। একটু পরে দরজাটা একটু সরিয়ে দেখলাম মেয়েটা আছে কিনা। আমাকে চোরের মতো উঁকি মারতে দেখে নুসরাত খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো। মেয়েটার হাসি শুনে এবার একটু ভয় কমে গেলো। নুসরাত আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল — আমাদের বাসার মেহমান তাই কিছু বললাম না। খেতে আসুন। এবার চুপচাপ করে নুসরাতের সাথে খেতে চলে গেলাম।
সবাই এক সাথে খেতে বসলো। নয়ন আমাকে বলল — ভাইয়া আমি রাতে আপনার সাথে ঘুমব ঠিক আছে।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ঠিক আছে। এবার সবাই আমার দিকে খাবার এগিয়ে দিতে থাকে। হুট করে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো তখনই চোখ থেকে পানি বের হতে শুরু করলো। আন্টি বলল — বাবা কি হইছে তোমার আবার?
— আসলে আন্টি আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। এমন সময় আমার আম্মু আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন।
— এই ব্যাপার? আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
এবার আন্টি আমকে তার নিজের হাতে কাহিয়ে দিতে থাকে। আমাকে খাইয়ে দিতে দেখে নুসরাত বলল — এখন তো আমরা পর হয়ে গেছি? তাইনা আম্মু?
সবাই খিলখিল করে হেসো দিলো। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে খাটের উপরে বসতেই নয়ন আর নুসরাত চলে আসলো। নয়ন এসে আমার পাশে বসলো।
নুসরাত বলল — আনার ভাই কিন্তু আপনাকে অনেক ঝালাতে পারে সাবধানে থাকবেন। আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ডাকবেন। আমি পাশের রুমে আছি।
নয়ন বলল — আপু তুই আমার নামে মিথ্যে কথা কেন বলিস? আমি কাওকে ঝালাই না। তুই যা এখন আমরা ঘুমব।
নয়নের কথা শুনে নুসরাত নয়নের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। নুসরাত বলল — আচ্ছা ঠিক আছে অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন।
এই কথা বলে নুসরাত চলে গেলো। আমি আর নয়ন শুয়ে আছি৷ নয়ন বলল — ভাইয়া তোমার বাসায় কে কে আছে?
নয়নকে সব বললাম আমার বাসায় কেকে আছে। আমার শরীর টা একটু খারাপ লাগছে তাই নয়নকে বললাম ঘুমিয়ে পড়তে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়ন নেই। আমি উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম খালি গায়ে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি নুসরাত আমার রুমে। আমি খালি গায়ে থাকায় একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে একটা টি-শার্ট গায়ে দিতে দিতে বললাম — আপনি এতো সকালে এখানে কেন?
— এতো সকাল তাই না? ঘড়ির দিকে খেয়াল আছে?
নুসরাতের কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। ঘড়িতে ১০ টা বেজে গেছে।
— হইছে নাস্তা করতে আসুন।
আমি নাস্তা করতে চলে গেলাম।
নাস্তা খেয়ে নিজের রুমে বসে রইলাম। একটু পরে নুসরাত আমার রুমে আসলো।
নুসরাত আমার রুমে এসে বলল — আপনার সাথে গল্প করতে আসলাম।
— কি গল্প করবেন?
— আচ্ছা আপকি কি কখনো কাওকে ভালোবাসছেন?
— হুম।
— আপনার লাভ স্টোরি টা শোনাবেন প্লিজ?
— আমার আর লাভ স্টোরি। একটা মেয়ের সাথে আমার তিন বছরের রিলেশন ছিলো। আমার চাচাতো বোনের কথা বিশ্বাস করে আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিলো।
— আপু তো আপনাকে ভালোবাসতো তাইনা? তাহলে সে আপনাকে অবিশ্বাস করলো কেন?
— জানি না। আমার বিশ্বাস ছিলো সবাই আমাকে অবিশ্বাস করলেও স্নেহা আমাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু না ও আমাকে অবিশ্বাস করলো। আমার একটা কথাও শুনলো না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। আমি তাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করি।
নুসরাতকে সেদিনের সব ঘটনা খুলে বললাম। আমার কথা শুনে নুসরাতের মন খারাপ হয়ে গেলো। আমিও চুপচাপ হয়ে বসে রইলাম। নুসরাত আমকে বলল — আচ্ছা এখন আমি আসি।
এই কথা বলে নুসরাত চলে গেলো।
এই বাসায় আমার দেখতে দেখতে দুই দিন পার হয়ে গেলো। এখানে বসে থাকতে থাকতে নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগছে। ভাবতাছি কিছু একটা করার দরকার। একটা চাকরি করবো। নয়নকে বললাম আংকেল কে ডেকে আনতে। নয়ন কিছুক্ষণের মধ্যেই আংকেল কে নিয়ে আসলো।
আংকেল এসে বলল — বাবা কিছু বলবে?
— আংকেল একটা কথা বলার ছিল। আসলে বাসায় বসে থাকতে আমার ভালো লাগছেনা। খুব বোরিং লাগছে৷ আমি চাই একটা চাকরি করতে।
— কি বলছ তুমি বাবা? তোমাকে কোনো চাকরি করতে হবে না৷
— আংকেল বাসায় বসে থাকতে আমার ভালো লাগে না।
— আচ্ছা তুমি পড়াশোনা করছো কোন ক্লাস অব্দি?
— আংকেল সামনে আমার HSC পরিক্ষা।
— কি বলছো তুমি? তাহলে তো তোমার এখন পড়াশোনা করা দরকার। নুসরাত ও এই বার পরিক্ষা দিবে তোমার সাথে।
— ওহ। কিন্তু আমার তো আর পড়াশোনা করা হবে না। আমাকে তো কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে।
— সমস্যা নাই। তুমি নুসরাতের কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে। আগে তুমি তোমার আগের কলেজে গিয়ে ওখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে। তুমি কাল চলে যাও গ্রামে। ওখানে গিয়ে কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আসবে।
— ঠিক আছে আংকেল।
তারপর আংকেল চলে গেলো। রাতেই গ্রামে যাওয়ার জন্য সব কিছু ঠিকঠাক করে নিলাম। সকালে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে সেই জন্য। রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। অনেক দিন পর গ্রামে যাবো খুব ভালো লাগছে আবার মন খারাপ ও হয়ে যাচ্ছে। নিজের গ্রামে যাবো আব্বু আম্মুর সাথে একটু কথাও বলতে পারবোনা। এসব ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে। তারপর ও তাদের একবার দেখে আসবো।
চলবে?