#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৩]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ঈশান পাঞ্জাবীটা হাতে নিয়ে কান্না করতে থাকে। কি ভাবে সে শিউলীকে বিয়ে করে তার সাথে সারাজীবন কাটাবে? যে মেয়েটা তার নামে এমন একটা মিথ্যা অপবাদ দিলো যার কারণে ঈশান আজ সবার কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে আছে। ঈশান পাঞ্জাবী হাতে নিয়ে কান্না করতে করতে বসে গেলো। এমন সময় ঈশানের ভাবী তার রুমে এসে দেখে ঈশান কান্না করছে। ঈশান তার ভাবীকে দেখে চোখের পানি মুছে বসে থাকে।
ভাবী এবার ঈশানের কাছে এসে বলল — ভাই আমি বুঝতে পারছি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
— ভাবী আমি কি করব? আমি কি ভাবে শিউলীকে বিয়ে করবো? যে মেয়েকে আমি ছোট থেকে নিজের বোনের মতো জানতাম সে আমার নামে এতো বড় একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দিল?
— ভাই তুমি একটা কাজ করো।
— কি কাজ?
— তুমি এক্ষনি এখান থেকে পালিয়ে চলে যাও। এখানে থাকলে তোমাকে শিউলীর মতো একটা বাজে মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। তুমি এখান থেকে চলে যাও ভাই। এই নাও এখানে কিছু টাকা আছে এটা দিয়ে তোমার কিছু দিন কেটে যাবে পরে একটা ব্যবস্থা করবে।
আমি কান্না মাখা চোখে ভাবীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবী আমার হাতে টাকা গুলো ধরিয়ে দিয়ে বলল তুমি চলে যাও এক্ষনি এখন সবাই বিজি আছে। এটাই সময়।
এবার আমি নিজের চোখের পানি মুছে আমার কিছু জামাকাপড় নিয়ে ভাবীর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দাদির রুমে গেলাম। দাদির রুমে গিয়ে দেখি দাদি শুয়ে আছে। দাদির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই দাদি চোখ খুলে তাকিয়ে আমাকে বলল — কিরে তুই বেগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
— আমি চলে যাচ্ছি। এখানে থাকলে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমি এই বিয়ে করতে চাইনা।
দাদি আমার বেপার টা বুঝতে পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। দাদি কে বললাম — আমার মা বাবার দিকে খেয়াল রেখো দাদি। আসি আমি।
এই কথা বলে নিজের চোখ মুছে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে নিলাম। তারপর রিকশার মধ্যে উঠে রেলস্টেশনে দিকে চলে গেলাম। উদ্দেশ্য ঢাকা চলে যাবো। গ্রামে আমার থাকাটা রিক্স হয়ে যাচ্ছে। কেউ আমাকে এখানে দেখলেই বাসায় নিয়ে চলে যাবে। একটা টিকিট কেটে নিলাম। এবার আমি ট্রেনের অপেক্ষা করে বসে আছি। মনের ভিতরে অজানা ভয়। টিকেট তো কেটে নিলাম। কিন্তু আমি যাবো টা কোথায়? ঢাকা তো আমার পরিচিত কেউ নেই। আর ঢাকা কখনো যাইনি। এসব ভাবছি বসে বসে এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলল — এইযে মিস্টার! শুনছেন?
মেয়েটার কথা আমার কান অব্দি আসছেনা। আমি চিন্তায় ডুবে আছি। এবার মেয়েটা আমাকে ধমক দিয়ে বলল — এই আপনি কি কানে শোনেননা?
মেয়েটার ধমক শুনে আমার হুশ ফিরে আসলো। আমি বললাম — কি হয়েছে?
— কি হয়েছে মানে কি? আপনাকে আমি সে-ই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি আপনার কোনো পাত্তাই পাচ্ছিনা।
— দুঃখিত আমি খেয়াল করিনি।
— মন কই থাকে হ্যাঁ? কতবার ডাকছি আমি।
মেয়েটার এতো প্রশ্ন শুনে একটু রাগী কণ্ঠে বললাম — কিছু বলবেন?
— রাগ দেখাচ্ছেন কেন?
— আজব আমি আপনাকে রাগ দেখাবো কেন? কি সমস্যা সেটা বলুন আমাকে।
— আসলে একটা জিনিস জানার ছিলো।
— কি জিনিস বলুন।
— আমি এখানে নতুন এসেছি। ফ্রেন্ড দের সাথে আসছি কিন্তু সবাই আমাকে রেখে চলে গেছে। এখানকার কোনো কিছুই আমি চিনিনা। যদি বলতেন এখানে টিকেট কাউন্টার টা কোন দিকে?
— এটা তো এখানে যে কাওকেই জিজ্ঞেস করলেই হতো। যে কেউ দেখিয়ে দিতো।
— হুম কিন্তু আমি শুনেছি এখানের মানুষ নাকি খুব খারাপ হয়? আর এখানে নাকি টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। তাই কাওকে জিজ্ঞেস করার সাহস পাইনি। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।
— তা আপনার কি করে মনে হলো আমি ভালো মানুষ? আমিও তো এমনি হতে পারতাম।
— আরে না মানুষ দেখলেই আমি চিনতে পারি কে কেমন? আমি জানি আপনি খুব ভালো। আচ্ছা এবার বলুন টিকেট কাউন্টারটা কোন দিকে।
এবার আমি মেয়ে টাকে টিকেট কাউন্টার দেখিয়ে দিলাম। তারপর আবার চুপচাপ হয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন চলে আসে। তারপর আমি ট্রেনে উঠে আমার সিট খুঁজে বের করে বসে রইলাম। জানালার পাশেই পড়ছে আমার সিট। নিজের সিটে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ করে একটা মেয়ে কণ্ঠ শুনে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটা।
মেয়েটা আমাকে বলল — আরে আপনি এখানে কি করছেন?
— দেখছেন না ফুটবল খেলছি?
— আরে কি বলছেন এসব? আমি দেখি আপনি ট্রেনের ভিতরে বসে আছেন।
— তো দেখছেন যখন এতো প্রশ্ন কেন করছেন?
— বাব্বাহ মনে হয় খুব রেখে আছেন। বায়দা ওয়ে আমক নুসরাত আপনার নাম কি?
— আমি ঈশান।
— ওহ আপনি যাবেন কথায়?
— জানি না ট্রেন যেই অব্দি যায়। এতো কথা না বলে চুপচাপ থাকুন।
— দূর আপনি যেনো কেমন।
ঈশান আর কোনো কথা না বলে আবার বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এবার ট্রেন চলতে শুরু করে দিলো। ঈশান বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই দিকে নুসরাত বার বার ঈশানের দিকে তাকাচ্ছে।
নুসরাত বলল — আচ্ছা আপনি চুপচাপ হয়ে থাকেন কেন?
— কথা বলতে ভালো লাগছেনা তাই।
— ওহ। বাসা থেকে চলে যাচ্ছেন সেই জন্য মন খারাপ নাকি?
— নাহ।
— আপনার ফোন টা একটু দিবেন প্লিজ?
— কেন?
— আসলে আমার ফোন অফ হয়ে গেছে বাসায় একটা কল দেবো। সবাই হয়তো আমার জন্য চিন্তা করছে।
আমি আর কোন কথা না বলে ফোন বের করে নুসরাতের হাতে দিয়ে দিলাম। তারপর সে কলে কথা বলতে শুরু করে দিলো। কথা বলে আবার আমার ফোন আমার হাতে দিয়ে দিলো।
— আচ্ছা ঢাকাতে কি আপনার কোনো আত্মিয় আছে?
— নাহ।
— ওহ আপনি থাকবেন কথায়?
— তাও জানি না। দেখি আগে তো ঢাকা যাই তারপর একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
— আচ্ছা আপনার পরিবারে কে কে আছে?
— আমার পরিবারে সবাই আছে। আচ্ছা আপনি কি চুপচাপ থাকতে পারেন না? কখন থেকে আমাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন? একটু চুপ থাকেন প্লিজ।
নুসরাত আর কোনো কথা না বলে এবার চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলো। যে মেয়ে কথা ছাড়া থাকতে পারেনা সেই মেয়েকে চুপ করিয়ে রাখা তো আর সম্ভব না। নুসরাত আবার বলল — আচ্ছা একটা কথা বলার ছিল।
এবার আমি নুসরাতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নুসরাত ভয়ে বলল — না থাক কিছু বলার নাই।
এবার নুসরাত মনে মনে ঈশানকে বোকা দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে ট্রেন একটা স্টেশনে গিয়ে থামে লান্স ব্রেক এর জন্য। সবাই একে একে ট্রেন থেকে নেমে যেতে থাকে। ঈশান ও নামতে যাবে এমন সময় ঈশান তাকিয়ে দেখে নুসরাত বসে আছে।
ঈশান বলল — লান্স করবেননা?
— না আমার খিদে নাই আপনি গিয়ে খেয়ে আসুন।
— ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে আমি গেলাম।
এই কথা বলে আমি ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে। হাত মুখ ধুয়ে একটা খালি টেবিলে এসে বসলাম। এর মধ্যে নুসরাত এসে আমার সামনে বসলো।
— কি ব্যপার নেমে চলে আসলেন কেন?
— আসলে আমার খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার কাছে টাকা নেই। যা ছিলো সব টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ফেলছি। ট্রেন স্টেশনে আমাকে নিতে লোক আসবে। এখন আপনি আমার টাকা টা দিয়ে দেন। আমি ওখানে গেলে দিয়ে দেবো।
— ঠিক আছে।
এবার দুজনে খাওয়া দাওয়া করে ট্রেনে উঠে বসে আবার। ট্রেনের উপরে উঠে নিজের সিটের উপরে গিয়ে বসে।
চলবে??