#ভুল_বুঝনা_আমায়
[২য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ঈশান স্নেহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ঈশানের ভিতরে একটা ভয় ও কাজ করছে। শিউলী যদি আবার স্নেহাকে মিথ্যে বানোয়াট কথা গুলো বলে দেয়? ঈশান স্নেহার কাছে গিয়ে স্নেহার কাধের উপরে হাত রাখতেই স্নেহা উঠে দাঁড়িয়ে ঈশানের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ঈশান হতবাক হয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে রইলো।
এবার স্নেহা রাগী কণ্ঠে ঈশানকে বলল — তোর সাহস হয় কি করে আমাকে স্পর্শ করার? তোর মতো এমন বাজে লোক আমি আর দুটি দেখেনি।
— কি বলছো স্নেহা? কি হয়েছে তোমার? এমন করো কেন?
স্নেহার গালে হাত দিয়ে বললাম কথাটা।
স্নেহা এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দিলো। হার সরিয়ে দিয়েই বলল — তুই আবার আমাকে স্পর্শ করিস। তোর মতো নোংরা মানুষ আমাকে স্পর্শ করলে আমার শরীর ও নোংরা হয়ে যাবে। তুই কি ভাবে পারলি নিজের বোনের সম্মানের দিকে চোখ দিতে? তোর যখন এতোই দরকার ছিলো আমাকে বলতি। আমি না হয় তোকে সব দিয়ে দিতাম।
— স্নেহা আমাকে বিশ্বাস করো। শিউলী সব মিথ্যা কথা বলছে। ও আমাকে ফাসিয়ে দিচ্ছে।
— একটা মেয়ের নামে আবার মিথ্যে কথা বলিস তুই? একটা মেয়ে নিজের নামে এমন মিথ্যে কথা বলে? একটা মেয়ে কি নিজের ইজ্জত নিয়ে মিথ্যে বলতে পারে? আরে আমি কাকে কি বলছি। তুই আমার সামনে থেকে চলে যা তোর মুখ আমি আর দেখতে চাইনা।
— স্নেহা সবাই আমাকে অবিশ্বাস করছে। আমি ভেবেছিলাম আমাকে কেউ বিশ্বাস না করলেও তুমি তো অন্তত আমাকে বিশ্বাস করবে। তুমিও সবার মতো আমাকে অবিশ্বাস করলে। তোমার সাথে আমার এতোদিনে সম্পর্ক তুমি আমাকে এই চিনলে? আমার সব থেকে বেশি কষ্ট এখন হচ্ছে।
— দেখ তোর সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে তুই আমার সামনে থেকে চলে যা। আর কোনো দিন আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবিনা। কোনো চরিত্রহীন লোকের সাথে আমি আর যোগাযোগ রাখতে চাই না।
এই কথা বলে স্নেহা চলে যেতে চাইলে আমি আবার স্নেহার হাত ধরে বললাম — স্নেহা আমার কথাটা একটু শুনো প্লিজ।
— আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাইনা।
এই কথা বলে স্নেহা আবার চলে গেলো। আমি কান্না করতে করতে ওখানেই বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে আমি ক্লাসের দিকে হাটা শুরু করে দিলাম। ক্লাসের ভিতরে ঢুকতেই সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি গিয়ে আমার বন্ধু তুহিনের পাশে বসলাম। তুহিন আমাকে বলল — কিরে ঈশান তোর নামে এসব কি শুনি আমি? তুই নাকি তোর চাচাতো বোন শিউলীর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছিস?
— না দোস্ত সব কিছুই মিথ্যে। শিউলী আমাকে ফাসানোর জন্য সবার কাছে মিথ্যা কথা বলছে।
— কিন্তু কেন?
এবার আমি সব কিছুই তুহিনকে বললাম।
— এবার কি করবি তুই? শিউলী যে সবার কাছে বলছে এসব? এখন তো সবাই তোকে খারাপ ভাবছে।
— আমি বুঝতে পারছিনা আমি কি করবো।
এমন সময় ক্লাসে স্যার চলে আসে। স্যার কে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। আমিও দাঁড়িয়ে যায়। তারপর স্যার সবাইকে বসতে বলে। একটু পরে স্যারের চোখ আমার দিকে পড়তেই স্যার আমাকে দাড়াতে দাড়াতে বলল। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। এবার স্যার বলল — ঈশান তোমাকে আমি মনে করতাম তুমি খুব ভালো ছেলে। কিন্তু তুমি এমন কাজ করবে ভাবতে পারিনি। তোমার মতো ছেলেকে আমরা কিছুতেই এই কলেজে এলাও করতে পারিনা। বলা যায়না আবার কখন তুমি কার সাথে বাজে কাজ করার চেষ্টা করো। তুমি এখনই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও। স্যারের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পান বের হতে শুরু করে দিলো।
আমি স্যারকে বললাম — স্যার প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না কিছুদিন পরেই আমার পরিক্ষা। আমার এতোদিনের পরিশ্রম। আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
— সেটা তোমার ব্যাপার। তোমার জন্য তো আমরা আমাদের কলেজের নাম খারাপ করতে পারিনা। আর তোমাকে কলেজে রাখাও রিক্স। যার কাছে নিজের বোনের ইজ্জতের মূল্য নেই। যে নিজের বোনের সতিত্ব নষ্ট করতে চায় সে তো আবার অন্যদের উপরেও নজর দিতে পারে। তুমি এখনই বের হয়ে যাও। নাহলে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
আমি আর কোনো কথা না বলে নিজের বেগ নিয়ে ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় স্নেহার দিকে তাকালাম। কিন্তু স্নেহা আমার দিকে একটি বার ও তাকালো না। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি বের হতে শুরু করলো। আমি ক্লাস থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌছে গেলাম। সোজা আমার রুমে গিয়ে বেগ রেখে কান্না করতে শুরু করে দিলাম। আমার ভাবী আমার রুমে এসে দেখে আমি কান্না করছি। ভাবী এসে বলল — কি হলো এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে?
আমি ভাবীর সামনে মাথা নিচু করে বললাম — ভাবী আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিছে।
— কেন?
— শিউলী আমার জীনটা শেষ করে দিছে। সবাইকে বলছে আমি নাকি শিউলীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছি। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা।
— ভাই চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
— কি ভাবে কি ঠিক হবে? স্নেহা ও আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিছে। ও আমাকে ভুল বুঝল। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি।
–আমি শুনলাম তোমার সাথে নাকি শিউলী বিয়ে ঠিক করতাছে।
— কিহ? আমি কখনো এই মেয়েকে বিয়ে করবোনা। দরকার হলে আমি আত্মহত্যা করবো তাও আমি কিছুতেই শিউলীকে বিয়ে করতে পারবোনা।
— পাগল হয়ে গেলে বাকি ঈশান? এসব চিন্তা বাদ দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
এই কথা বলে ভাবী চলে গেলো। একটু পরে শিউলী আমার রুমে আসে। শিউলী আমার কাছে এসে বলল — কিরে কেমন দিলাম? ভালোই ভালোই বলছিলাম শুনলিনা।
— তুই কেন করলি আমার সাথে এমন? আমার জীবনটা তুই নষ্ট করে দিলি। আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে তুই কেন আমার এমন ক্ষতি করলি?
— তুই সেটা ভালো করেই জানিস৷ যাইহোক এবার আমাদের বিয়ের জন্য রেডি হয়ে যা৷
এই কথা বলে স্নেহা চলে গেলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। আমি আমার রুমে বসে আছি। এমন সময় আমার আব্বু এসে বলল — আগামীকাল তোর আর শিউলীর বিয়ে। বিয়ের প্রস্তুতি নে।
এই কথা বলে আব্বু চলে গেলো। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি স্নেহার ফোনে বার বার ফোন দিতে থাকি। কিন্তু স্নেহার ফোন অফ হয়ে আছে। আমার দাবি আমার রুমে আসে। আমি আমার দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকি। এবার আমি দাদিকে বললাম — দাদি আমি শিউলীকে বিয়ে করতে পারবোনা তুমি আব্বুকে বলো প্লিজ।
— তুই তো তোর আব্বুকে খুব ভালো করে চিনিস ও যেটা বলবে সেটাই করবে। কি আর করবি বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
এই কথা বলে দাদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। ইশান বুঝতে পারছেনা কি করবে সে? এক দিকে স্নেহার ফোন অফ। একটু পরে ঈশান ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বিয়ে সব কিছুই করা হচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখে ঈশানের জন্য পাঞ্জাবী রাখা।
চলবে??