#ভুল_বুঝনা_আমায়
[সূচনা পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
হঠাৎ করে আমার চাচাতো বোন শিউলী আমার সামনে তার জামাকাপড় খুলে পুরো ন*গ্ন হয়ে যায়। তার এমন কান্ড দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে বললাম।
— এসব তুই কি করছিস? আমি তোর ভাই। প্লিজ এমন করিস না। বাসায় কেউ আমাদের এই ভাবে দেখলে কি ভাববে?
— যে যাই ভাবে ভাবুক তাতে আমার কিছু আসে যায়না। আমি তোকে ভালোবাসি। আমি তোর জন্য সব কিছুই করতে পারি। তুই শুধু আমার। দেখ আমার মধ্যে কি নেই? আমি তোকে আমার শরীর দিয়ে দিলাম।
শিউলীর কথা শুনে আমি তার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। থাপ্পড় খেয়ে শিউলী তার জামাকাপড় ঠিক করে নেয়। আর খাটের উপরে বসে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
আমি শিউলীকে বললাম — আমি তোকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখি। আর তুই কিনা ছিহ! আর তুই কি জানিস না আমি স্নেহাকে কতটা ভালোবাসি?
— আমি তোকে স্নেহার সাথে কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারিনা। আমি চাই তুই শুধুই আমার হয়ে থাক। তুই আমার না হলে আমি তোকে আর কারো হতে দেবোনা।
এই কথা বলেই শিউলী এবার নিজের ঠোঁটের লিপস্টিক নিজের হাত দিয়ে পুরো ঠোঁটে লেপটে দেয়। আর তার জামার হাতা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।
আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম শিয়লীর দিকে। আমি বললাম — এসব কি করছিস তুই শিউলী? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?
— হুম আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এখন দেখ আমি কি করি।
এই কথা বলে শিউলী জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করে দেয়। শিউলীর চিৎকার শুনে সবাই দরজার সামনে চলে আসে। আমি দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই শিউলী আমাকে একটা টান মেরে খাটের উপরে ফেলে দিয়ে শিউলী দরজা খুলে দেয়৷ আর দরজা খুলেই দেখে আমার আব্বু আম্মু আর শিউলীর আব্বু আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। শিউলী গিয়ে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
আর সবাই রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে আমি রুমে ভিতরে। সবাই আমার দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে আছে। আমি আমার বাবার কাছে গিয়ে বললাম — আব্বু আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করো।
আমি এই কথা বলার সাথে সাথে আমার আব্বু আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
আমি গালে হাত দিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে দিলো। এই প্রথম আমার আব্বু আমার গায়ে হাত তুললেন।
এবার শিউলীর আব্বু শিউলীর মাথায় হাত রেখে বলল — কিরে মা কি হয়েছে? ঈশান তোর সাথে কি করছে?
শিউলী মিথ্যা কান্না করতে করতে বলল — আব্বু ঈশান ভাইয়া আমাকে বলল তার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতে। আমি পানি নিয়ে আসতেই ঈশান ভাইয়া রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে।
এই কথা বলে শিউলী তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
আমি শিউলীকে বললাম — দেখ বোন তুই কেম মিথ্যা কথা বলছিস আমার নামে? তুই সত্যিটা বল সবার কাছে। আমি তোর সাথে কোনো খারাপ কিছু করিনি।
শিউলীর আম্মু শিরিন বলল — ছিহ ঈশান আমি কখনো ভাবতে পারিনি তুমি আমার মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করার চেষ্টা করবি। আমিতো তোকে সব সময় নিজের ছেলের মতো দেখে আসছি। আর সেই তুই আমার মেয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করলি।
— কাকি বিশ্বাস করুন শিউলী মিথ্যে কথা বলছে। আমি শিউলীর সাথে কোনো খারাপ কিছু করতে চাইনি। আমি তো ওঁকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখি। তাহলে আমি কেনো ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করব?
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আব্বু আমার কলার টান দিয়ে বলল — তুই কি বলতে চাইছিস একটা মেয়ে ইচ্ছে করে তার ইজ্জত নিয়ে মিথ্যে কথা বলছে? তোকে নিয়ে একটা সময় আমি আর তোর মা সবার কাছে গর্ব করতাম আর তুই কিনা ছিহ ভাবতেই আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
— হ্যাঁ আব্বু ও সব মিথ্যা কথা বলছে। বিশ্বাস করো আমাকে। উল্টো ও,,,,,
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। আমি এখানেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কারণ আমি জানি এখন আমি যাই বলিনা কেন কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবেনা। এবার আব্বু একটা লাঠি নিয়ে এসে আমাকে মারতে শুরু করে দেয়। আমার মার খাওয়া দেখে আমার আম্মুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আর ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে আব্বুর পা ধরে বললাম — আব্বু আমি কিছুই করিনি আমাকে আর মেরো না। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।
কিন্তু আব্বু আমার কথা কানে না নিয়ে আমাকে মারতেই থাকে। আমি আমার আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম — আম্মু তুমিতো তোমার ছেলেকে খুব ভালো করে জানো তোমার ছেলে কখনো কোনো মেয়ের সম্মান নষ্ট হবে এমন কিছু করবেনা।
আম্মু শুধুই নিরবে চোখের পানি ফেলছে আমার অসহায় মুখের দিকে একটি বার তাকালোও না। আব্বু আমাকে মারতে মারতে একটা সময় গিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে যায়। তাও আমাকে মারতে থাকে। আমি মা-বাবা বলে চিৎকার করতে থাকি। এবার আমার কাকা এসে আব্বুকে থামিয়ে দেয়।
আর আব্বু আমার রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আমি শিউলীর দিকে করুনার নজরে তাকিয়ে রইলাম। শিউলী আমার এমন অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। একটু পরে সবাই আমার রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আমি ফ্লোরের উপরে পড়ে আছি।
এইবার আমাদের পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি ঈশান। মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছি। আমরা দুই ভাই। আমি ছোট। আমার বড় ভাই বাহিরে থাকে। শিউলী আমার চাচাতো বোন। আর আমরা সবাই একি বাড়িতে থাকি। এক বাড়িতে আমি মা-বাবা ,আমার ভাবী, দাদি, আর শিউলীর মা-বাবা আর শিউলী। শিউলী আমার থেকে এক বছরের ছোট। আর শিউলী আমার সাথে একিই কলেজে পড়াশোনা করে। শিউলী আমার এক ক্লাসের জুনিয়র। আমার গার্লফ্রেন্ড স্নেহা। স্নেহা আর আমার রিলেশন সেই স্কুল লাইফ থেকে। আমাদের তিন বছরের রিলেশন। আমরা দু’জন দুজনকে অনেক ভালোবাসি। স্নেহা আমি একই ক্লাসে।
এবার গল্পে ফিরে আসি। আমি ফ্লোরের উপরে শুয়ে আছি। আমার দাদি আমার কথা শুনে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসে। দাদি এসে দেখে আমি ফ্লোরের উপরে শুয়ে আছি।
দাদি আমার কাছে এসে বলল — কিরে কি শুনি এসব? আমি তো জানি আমার নাতি এসব কখনো করতে পারেনা।
আমি আমার দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকি। দাদি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — কি হইছে আমাকে বল তুই সব কিছু।
— দাদি কি হইছে আমি তোমাকে সেটা বলতে পারবোনা। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছেনা।
এমন সময় আমার ভাবীও চলে আসে। আব্বু অন্য রুম থেকে দাদিকে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়। ভাবী আমার কাছে এসে বলল — কি হয়েছে ভাই? এসব কি সত্যি নাকি?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। ভাবী আমার ব্যপার টা বুঝতে পেরে ভাবী বলল — তুমি আমাকে সব সত্যি কথা খুলে বলো।
— ভাবী বলতে পারি কিন্তু তোমার আমাকে কথা দিতে হবে তুমি কাওকে কিছু বলবেনা।
— কথা দিলাম ভাই। তুমি আমাকে সব বলো।
এবার আমি ভাবীকে সব সত্যি বলে দিলাম। ভাবী আমার কথা শুনে বলল — তুমি এই সত্যি কথা সবাইকে বললে না কেন?
— বললে কি হতো? আমি জানি কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবেনা। যেখানে আমি বার বার বলছি আমি কিছুই করিনি। আমার মা-বাবা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি।
— আমি গিয়ে সব বলে দিচ্ছি। আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে শিউলী এমন একটা কাজ করতে পারলো? আমি গিয়ে সব কিছু বলে দিচ্ছি।
— ভাবী তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো কাওকে কিছু বলবেনা।
ভাবী আর কোনো কথা না বলে আমাকে খাটের উপরে উঠিয়ে শুইয়ে দিলো। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ একটি বারের জন্যও আমাকে ডাকতে আসলোনা। না খেয়েই রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। শরীর তেমন একটা ভালোনা। পুরো শরীরে অনেক ব্যাথা। তাই ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো। কোনো রকম ভাবে রেডি হলাম কলেজে যাওয়ার জন্য। খাওয়ার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আমার জন্য কোনো খাবার রাখা নেই। আমার যেই মা আমাকে ছাড়া খাবার খায়নি কখনো। সেই মা এখন আমাকে না ডেকেই খাবার খেয়ে নেয়। নিজের অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে দিলো। নিজের চোখের পানি মুছে বের হতে যাবো এমন সময় মনে হলো কেউ আমার হাত ধরে রেখেছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাবী। ভাবী আমার হাতে একটা ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলল — কলেজে যাওয়ার পথে নাস্তা করে নিয়।
আমি আর কিছু না বলে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজে চলে গেলাম। কলেজে গিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি শিউলী কলেজে এসে সবাইকে আমার নামে মিথ্যে কথা বলে দিয়েছে? আমি এবার স্নেহাকে খুঁজতে শুরু করে দিলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি স্নেহা একটা গাছের নিচে বসে আছে একা। আমি স্নেহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। কারণ আমি জানি সবাই আমাকে অবিশ্বাস করলেও স্নেহা আমাকে অবিশ্বাস করবেনা।
চলবে??