ভুল এবং ভালোবাসা পর্ব:- ১৯(অন্তিম পর্ব)

0
3280

ভুল এবং ভালোবাসা
পর্ব:- ১৯(অন্তিম পর্ব)
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

শুভ্রর পরশে ক্ষাণিক’টা কেঁপে উঠে লাবণ্য কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কোনো চেষ্টা’ই করেনি। প্রিয় মানুষের স্পর্শ, ভালো’ই তো লাগছে। থাকুক না এভাবে, চুপচাপ, নিরবে। লাবণ্য পূর্বের ন্যায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু রাতের শহরটাকে দেখছে। বেশকিছু ক্ষণ এভাবে থাকার পর নিরবতা ভাঙে শুভ্র। একইরকমভাবে লাবণ্যকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখে’ই প্রশ্ন করে, হঠাৎ কেন এই জরুরী তলব বললে না তো? প্রশ্ন শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে শুভ্রর থেকে পিছিয়ে যায় লাবণ্য কিন্তু মুখে কোনো কথা বলে না। শুভ্র এতক্ষণে লাবণ্যর দিকে ফিরে তাকাই। প্রশ্ন করে আবারো, কি হলো? বললে না যে? কেন ডেকেছ আমায়? চুপচাপ লাবণ্য একহাত দিয়ে অন্য হাতের নখ কাটায় ব্যস্ত। শুভ্র আবারো প্রশ্ন করে, কি বলছি বলছি শুনতে পাচ্ছো? ডেকেছ কেন আমায়?
শুভ্রর প্রশ্নের উত্তরটা লাবণ্যর মুখস্ত থাকলেও, জড়তার কারণে এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারছে না। আর পারছে না বলেই লাবণ্য তখনো একমনে নখ কেটেই যাচ্ছে। এদিকে শুভ্র?!!! লাবণ্যর থেকে মৌনতা ছাড়া কোনো জবাব না পেয়ে লাবণ্যর একদম কাছে চলে যায়। কাছে গিয়ে দু’হাত দিয়ে আলতু করে লাবণ্যর গালে স্পর্শ করে। লাবণ্যর মুখটা উপরের দিকে তুলে প্রশ্ন করে শুভ্র, শুনো! এদিকে আমার চোখের দিকে তাকাও। লাবণ্য ভয়ে ভয়ে শুভ্রর চোখের দিকে তাকালো।
শুভ্র রাগী কন্ঠে বলে, ” আমি তোমাকে নখ কাটতে বলিনি লাবণ্য। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি, প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তরটা দাও। কেন ডেকেছ তুমি আমায়?”
শুভ্র দু’হাত দিয়ে তখনো লাবণ্যর মুখটা ওর দিকে রেখেছে। অসহায় লাবণ্য দু’চোখের পাতা বন্ধ করে আমতা আমতা স্বরে বলে উঠে, আ আ আমি আপনাকে…..(……)…..????
পরম আগ্রহের সাথে শুভ্র বলে, হ্যাঁ! বলো লাবণ্য। তুমি আমাকে কি? লাবণ্য ঢোক গিলে আবারো আমতা আমতা করে বলে, আমি আপনাকে…..(….)…..???
এভাবে যতবার শুভ্র লাবণ্যকে প্রশ্ন করেছে, বলো লাবণ্য! তুমি আমাকে কি? ততবারই লাবণ্য আমি আপনাকে বলে থেমে গেছে। সর্বশেষে বুকে সাহস সঞ্চয় করে ঢোক করে চোখটা বন্ধ করে একনিশ্বাসে বলে ফেলে লাবণ্য, আমি আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাব বললাম তো।
শুভ্রর হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে যায়। লাবণ্যর থেকে শুভ্র এটা প্রত্যাশা করেনি। শুভ্র ভেবেছিল আজ লাবণ্য বুঝি ওকে বলেই দিবে না বলা ভালোবাসার কথা। কিন্তু সে গুড়েবালি। শুভ্রর সব ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে লাবণ্য জানায় ও ঘুরতে যেতে চায়।
লাবণ্যর দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে শুভ্র, ঘুরতে যেতে চাও না? ঘুরতে যাওয়ার জন্য কি এ বাড়িতে কেউ ছিল না? আমাকেই ডেকে আনতে হলো? আমাকে কি তোমার এতটাই অকর্মা মনে হয়ছে? আমার কি কোনো কাজ নেই? তুমি জানো তুমি আমার কতটা মূল্যবান সময় নষ্ট করেছ? একনিশ্বাসে করা একগাদা প্রশ্ন। নিচু কন্ঠে লাবণ্যর জবাব, ভেবেছিলাম আপনি…..(…….)……???
পুরো কথা বলতে পারেনি লাবণ্য। তার আগেই শুভ্র আটকিয়ে দেয়। রাগ দেখিয়ে লাবণ্যর থেকে কিছুটা দুরে সরে গিয়ে বলে, থাকো তোমার ভাবনা নিয়ে। আমি গেলাম।
দু’লাফে ছাঁদ থেকে নেমে যায় শুভ্র। ছাদে সেই একই জায়গায় স্টেচুর মত দাঁড়িয়ে আছে লাবণ্য। ওর গাল গড়িয়ে অজস্র অশ্রুকণারা নিচে পরছে।

অতিবাহিত হয়ে যায় ৩টা দিন। এই ৩দিনে শুভ্র একটা বারের জন্যও এ বাসায় আসেনি। লাবণ্যকে ফোন দেয়নি। লাবণ্যও কোনো এক অজানা অভিমানে শুভ্রকে কল দেইনি। ৩দিন পর কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন হাতে নিয়ে শুভ্রর নাম্বারে কল দেয়। শুভ্র যেন সে ফোনেরই অপেক্ষায় ছিল। লাবণ্য কল দেওয়ার সাথে সাথে ছোঁ মেরে সেই কল রিসিভ করে শুভ্র। কল রিসিভ করে দু’জনেই নিরব। কেউ কোনো কথা বলছে না। দু’তিন মিনিট পর নিরবতা ভেঙে মুখ খুলে লাবণ্য। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে__
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম…..
ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে শুভ্রর ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আবার নিরব…..
মিনিট দুয়েক নিরব থাকার পর আবারো মুখ খুলে লাবণ্য, একটা কথা বলব?
এবার কিছুটা নরম স্বরে শুভ্রর জবাব, জি, বলো। লাবণ্য ভয়ে ভয়ে বলে, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। প্লিজ না করবেন না। শুধু ৫মিনিট, ৫মিনিট সময় আপনি আমায় দিবেন। আমি একটা কথা বলেই চলবে আসব। প্লিজ, আমার এই কথাটা রাখুন।
গম্ভীর কন্ঠে শুভ্র বলে, সকাল ৯টায় গলির মোড়ে এসো তাহলে। ৫মিনিট না হয় ওখানেই কাটাবো। অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুমাবো। রাখলাম। আল্লাহ হাফেজ।
লাবণ্যকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় শুভ্র। পরদিন সকাল নয়টা বাজা’র আধঘন্টা আগেই লাবণ্য সেই গলির মোড়ে একটা দোকানের সামনে এসে দাঁড়াই। শুভ্রও সেদিন তাড়াতাড়ি’ই বাসা থেকে বের হয়ছিল। তাই লাবণ্যকে ওর জন্য বেশীক্ষণ ওয়েট করতে হয়নি।
লাবণ্যকে দেখে ঘড়ির দিকে তাকাই শুভ্র।
ওহ, এসে গেছ তাহলে? ভালো’ই হলো। আমার আর অপেক্ষা করতে হলো না।
লাবণ্য মৃদু স্বরে বলে, হুম।
তারপর? কি অবস্থা? কেমন চলছে দিনকাল? শুভ্রর প্রশ্নের জবাবে ঠোঁটের কোণে একটা শুকনো হাসির রেখা টেনে লাবণ্য বলে উঠে,
” আছি এরকম। আপনি? আপনি কেমন আছেন?”
স্মিতহাস্যে শুভ্রর জবাব, মন্দ না! ভালো’ই আছি। মনে মনে শুভ্রকে বকে ওর বংশ উদ্ধার করে লাবণ্য। ব্যাটা! অন্যের মনে আগুন জ্বালিয়ে বেশ ভালো’ই আছিস! তোর ভালো থাকার ১২টা বাজাবো আজ আমি। ভালোবাসি বলে আড়ালে লুকিয়ে যাব আমি। এমন আড়ালে যে কেঁদে কেঁদে তুই অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে।
ঘোর কাটে শুভ্রর ডাকে। ওহ, হ্যালো! কোথায় হারিয়ে গেলেন? চমকে উঠে শুভ্রর দিকে তাকাই লাবণ্য। শুভ্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাবণ্যর মুখের দিকে তাকাই। কি হলো? বলো? কি বলবা? ৫মিনিট যে হয়ে গেল। লাবণ্য ঢোক গিলে বলে, ইয়ে মানে আমি আপনাকে…..(…..)…..???
হ্যাঁ, বলো। তুমি আমাকে কি? লাবণ্য বার কয়েক কথাটা বলে। কথাটার একই জায়গায় প্রতিবারই লাবণ্য থেমে যাচ্ছে। এবার রেগে গিয়েই শুভ্র বলল, তুমি আমাকে নিয়ে আজও কোথাও না কোথাও ঘুরতে যেতে চাও, তাই তো? কিন্তু মাফ চাচ্ছি লাবণ্য। আমি পারব না। আমার অনেক কাজ আছে। ঘুরার মত টাইম এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই। আমি গেলাম। কথাগুলো বলেই শুভ্র হনহনিয়ে রিক্সা দিয়ে চলে যায়। নিশ্চুপ লাবণ্য ফ্যালফ্যালিয়ে শুভ্রর সেই চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কেটে যায় আরো ১টা সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে শুভ্র একটা বারের জন্য লাবণ্যকে কল দেয়নি। লাবণ্যও শুভ্রকে কল দেওয়ার সাহস পায়নি। সেদিন ছিল শুক্রবার। যেদিন লাবণ্য শুভ্রকে আবারো কল দিয়ে দেখা করতে বলে। শুভ্র রাজি হয়ে যায়। লাবণ্যর কথামতো সেদিন বিকেলে বাসার অদূরে’ই একটা পার্কে শুভ্র লাবণ্যর সাথে দেখা করতে যায়। কথা বলার এক পর্যায়ে শুভ্র প্রশ্ন করে লাবণ্যকে, তুমি না কি বলতে চেয়েছিলে? যদিও না বলাটা বলার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল শুভ্র। কিন্তু শুভ্রর মায়া মাখা মুখ, হাসি, কথা বলায় তন্ময় হয়ে থেকে সেসব কিছু গুলিয়ে ফেলে লাবণ্য। শুভ্রের প্রশ্নের কাঙ্খিত উত্তর লাবণ্য দিতে পারেনি সেদিন। এদিকে শুভ্র প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে, লাবণ্যর মুখ থেকে ঐ চার অক্ষরের একটি শব্দ শুনার জন্য। শুভ্রর মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে লাবণ্যর মুখের ঐ ভালোবাসি কথাটা শুনার জন্য। কিন্তু বোকা লাবণ্য করলো কি জানেন?
শুভ্রর প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। শুভ্র ধমক দিয়ে লাবণ্যকে ওর দিকে ফিরায়। কি হলো? ঐ দিকে কি দেখছ? লাবণ্য বোকার মত শুধু হাসে। শুভ্র রেগে গিয়ে বলে, হাসার কিছু বলছি আমি? লাবণ্য আবারো হাসে। একগাল হেসে দুরে এক কাপলের দিকে আঙ্গুল ইশারা করে যারা ওদের বাচ্চা দু’দিক দিয়ে ধরে পার্কের ভিতর হাটাহাটি করছে।
শুভ্র গম্ভীর হয়ে বলে, ওরা হাটাহাটি করছে। তো এখানে হাসার কি হলো? লাবণ্য আবারো বোকার মত একগাল হেসে বলে, চিন্তা করতেছি এরকমই কতগুলো বাচ্চা যখন আপনাকে জাপটে ধরবে, আপনার ব্যাগ, সানগ্লাস, টাই নিয়ে যখন দৌঁড়াদৌঁড়ি করবে তখন আপনি কিভাবে হসপিটালে যাবেন। What nonsense!
এগুলো আমার প্রশ্নের উত্তর….??? শুভ্র রেগে গিয়ে লাবণ্যর দিকে তাকাই। লাবণ্য ভয় পেয়ে মুখটা বাচ্চাদের মত করে ফেলে। তারপর ঢোক গিলে বলে, রাগ করলেন? আমি তো আপনাকে বন্ধু ভেবেই কথাগুলো বলছি। শুভ্র হাতে থাকা সানগ্লাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বসা থেকে উঠে পরে। তারপর রাগান্বিত দৃষ্টিতে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে বলে, আমাকে তোমার পাগল মনে হয়, না? তাই এভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছো, তাই না? কিন্তু মিসেস লাবণ্য! অনেক হয়েছে। আর নয়। আর কখনো যাতে আমায় কল না দেওয়া হয়। আজ থেকে মনে করবা, শুভ্র নামের কেউ ছিল না তোমার জীবনে। যে ছিল সে মারা গেছে। হনহনিয়ে লাবণ্যর সামনে দিয়ে শুভ্র চলে যাচ্ছে রাগ দেখিয়ে। পিছন থেকে লাবণ্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে শুভ্রকে আটকানোর। এই শুনোন, শুনোন বলছি, আমি আপনাকে কথাটা বলব। একটু এসে বসুন, প্লিজ। আমায় একা রেখে যাবেন না। আপনি চলে গেলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম। আমি কিন্তু এখানে আপনার জন্য বসে থাকব। রাগ কমলে চলে আসবেন, মনে থাকে যেন! চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথাগুলো বলছিল লাবণ্য শুভ্রকে। কিন্তু শুভ্র সেই কথাগুলো শুনেও না শুনার ভাব করে লাবণ্যকে একা রেখে বাসায় চলে যায়।

সন্ধ্যা ০৭টা__
পার্ক থেকে এসে একঘুম দিয়ে উঠে পরেছে শুভ্র।ঘুমের জন্য মাগরিবের নামাজও মিস হয়ে গেছে ওর। বাহিরে প্রচুর ঝড় বইছে। জানালাগুলো কেমন উল্টে পাল্টে একটার সাথে আরেকটা ধাক্কা খাচ্ছে। আর সেই ধাক্কাতে প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে। এদিকে কারেন্টও চলে গেছে।বহুকষ্টে জানালাগুলো লাগিয়ে এসে অন্ধকার রুমে হাতড়ে হাতড়ে ফোন খুঁজছে শুভ্র। মৃদু শব্দে তখনো কল বাজছে। বাসা থেকে কল দিয়েছে। আশ্চর্য! এ সময় বাসা থেকে কেন কল দিচ্ছে? মায়ের কি শরীর খারাপ হয়েছে নাকি? সাত, পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে যায়। কল কেটে যাওয়ার পর চক্ষু চড়কগাছ শুভ্রর। ১০০এর উপরে কল দিয়েছে বাসা থেকে। কারো কিছু হয়ে গেল নাতো? ভিতরটা শিউরে উঠে শুভ্রর। কল ব্রেক করবে ভাবতেই শিশিরের নাম্বার থেকে কল। তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে শুভ্র। উৎকন্ঠার সাথে প্রশ্ন করে, কি হয়েছে শিশির? সব ঠিকঠাক আছে তো?! কান্নাজড়ানো কন্ঠে রোকসানা বেগমের জবাব, আমি শিশির না, তোর মা। শুভ্রর গলাটা শুকিয়ে যায়। মা, কাঁদছ কেন তুমি? কি হয়েছে? বাবা, শিশির ওরা ঠিক আছে তো? রোকসানা বেগম কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে, লাবণ্য ওর বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বের হয়েছিল বিকেলে, তারপর আর ফিরে আসেনি। এদিকে ওর বান্ধবীকে কল দিলাম, ওর বান্ধবী জানায় লাবণ্য ঐ বাসায় যায় নি। ঐ বাসায় যায়নি, ওদের গ্রামের বাড়িতেও যায়নি। কোথায় গিয়েছে তাহলে ও? বাবা, ও কি তোর কাছে গিয়েছে? আমরা তোর বাসায় খুঁজ করতে গিয়েছিলাম। খুঁজ নিয়ে জানলাম ওখানে তুই নেই। বাবা, লাবণ্য কি তোর কাছে? তুই নিয়ে গেছিস ওকে? মায়ের কথা শুনে শুভ্রর গলাটা কেমন শুকিয়ে যায়। অনেক কষ্টে মাকে বলে, মা! আমি রাখছি। পরে কথা হবে। ফোনটা কেটে শুভ্র তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়। বাইকটা নিয়ে রাস্তায় যখন বের হয় শুভ্র ততক্ষণে ঝড়ো হাওয়া থেমে যায়। আকাশ একটু একটু পরিষ্কার হতে থাকে। তবে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি থেমে নেয়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিঁজে বাইক নিয়ে শুভ্র এগিয়ে যাচ্ছে ঐ স্থানে, যে স্থান থেকে বিকেলে ও রাগারাগি করে চলে আসছিল। বাইকটা রাস্তার পাশে রেখেই ঝুপের আড়ালের ঐ স্থানটিতে চলে যায় শুভ্র, যে স্থানে বেঞ্চে বসে লাবণ্য বোকার মত হাসছিল, পাগলামি করছিল। বেঞ্চের কাছে ঝুপের ভেতরে তাকাতেই শুভ্রর চোখ ছানাভরা হয়ে যায়। শুভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, লাবণ্য গায়ের ওড়না জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। শুভ্রের কান্নাভেঁজা কন্ঠের লাবণ্য ডাক শুনে উপরের দিকে মাথা তুলে তাকায় ও। শুভ্রকে একনজর দেখে নিচের দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয় লাবণ্য। আচমকা লাবণ্যর একটা হাত ধরে ফেলে শুভ্র। তারপর টানতে টানতে ঝুপ থেকে বের করে। অভিমানী কন্ঠে লাবণ্যর জবাব, আমি বৃষ্টিতে ভিঁজতেছি। আমায় এভাবে টেনে আনলেন কেন? তখনি ঠাস শব্দে লাবণ্যর গালে একটা থাপ্পর পরল। আশ্চর্য! আপনি আমাকে থাপ্পর কেন মারলেন? কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি। আসো, আমার সাথে আসো। শুভ্র লাবণ্যকে টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে যায়। লাবণ্য মুখভার করে বলে, এখানে কেন আনলেন আমায়?
রাগান্বিত দৃষ্টিতে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে শুভ্রর জবাব, আর একটা কথাও যাতে না শুনি। জেদি কন্ঠে লাবণ্য বলে উঠে, কি করবেন? আরেকটা কথা বললে কি করবেন? দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয় শুভ্র, এই যে হাতটা দেখছ? এটা দিয়ে থাপ্পর মারব। এমন থাপ্পর দিব, সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।
অভিমানের সাথে কিছুটা রাগ মিশিয়ে লাবণ্যর জবাব, পারেন তো শুধু এটাই। আর কিছু পারেন রাগ আর থাপ্পর দেওয়া ছাড়া?
এবার আর না হেসে পারল না শুভ্র। লাবণ্যর বাচ্চাদের মত ওমন নাক ফুলিয়ে কথা বলা দেখে হেসে দিল শুভ্র। তারপর মুখে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বলল, এর ছাড়াও আমি অনেক কিছুই পারি। শুধু পাবলিক প্লেস দেখে কিছু করিনি এখনো। বাসায় থাকলে এতক্ষণে বুঝিয়ে দিতাম আমি কি পারি না পারি। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল লাবণ্য। নরম স্বরে বলল, আমি কি ঐভাবে বলছি নাকি? শুভ্র মুচকি হেসে বলে, হয়ছে! আর লজ্জা পেতে হবে না। বাইকে উঠো। লাবণ্য লজ্জায় আর কোনো কথা বলতে পারেনি। চুপচাপ বাইকে উঠে পরে লাবণ্য।
এদিকে মোড় নিয়েছেন কেন? শুভ্র সিরিয়াস মুডে বলে, তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য। অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে লাবণ্য, আমার স্বপ্ন? সেটা আবার কি? দুষ্টু হাসি দিয়ে শুভ্রর জবাব, এই যে অনেকগুলো বাচ্চা থাকবে আমার বাসায়। একজন আমার নাক ধরে তো আরেকজন কান ধরে, একজন চুল ধরে তো, আরেকজন সানগ্লাস ধরে টানবে। একজন কোর্ট ধরে তো আরেকজন টাই ধরে টানবে। ওহ, হ্যাঁ! আমি যাতে হসপিটালে যেতে না পারি এই জন্য আমার আরেক বাচ্চা আমার ব্যাগ ধরেও টানবে। এসব কিছুই তো তোমার তো তোমার স্বপ্ন, তাই না? শুভ্রর কথায় লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে লাবণ্যর। মনে মনে তখনকার বোকামির জন্য নিজে নিজেকে গালি দিচ্ছে লাবণ্য।
কি হলো? আমার বউটা চুপ হয়ে গেল যে? কিছু বলতেছ না যে? নিচু স্বরে লাবণ্যর জবাব, কি বলব? শুভ্র মুখে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বলে, এই যে! প্রস্তুত নাকি ক্রিকেট টিম তৈরির জন্য? লাবণ্য মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে শুভ্রকে কিলাতে শুরু করে। একটা বৃহৎ ভুলের পরিসমাপ্তি হয় যেখানে ভালোবাসার সূচনাটা সেখানে’ই। বেঁচে থাকুক ভালোবাসারা যুগ, যুগ ধরে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।

♪The End♪

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে