ভুল এবং ভালোবাসা পর্ব- ০২

0
2666

ভুল এবং ভালোবাসা
পর্ব- ০২
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

একে তো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, তারউপর সারাদিনের অভুক্ত। শরীরটা একদম নেতিয়ে পরছিল। কোনো রকমে খাবারগুলো ফ্রিজে তুলে রেখে শুয়ে পরে লাবণ্য। অন্যদিন বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ঘুম চলে আসলেও আজ কেন জানি হাজার চেষ্টার পরেও ঘুম চোখে আসছে না। লাবণ্য পারছে না ঘুমোতে। সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করল লাবণ্য। মাঝরাত্রে হাড়কাঁপিয়ে জ্বর আসে ওর। ছটফট লাবণ্য বিছানা থেকে উঠে শুভ্রর রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নক করে শুভ্রর রুমের দরজায়। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম চোখে দরজা খুলে শুভ্র। দরজা খুলে লাবণ্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ চরমে উঠে যায় ওর। ভ্রু বাকিয়ে রাগী স্বরে বলে উঠে সে, ” রাত বিরাতে কি শুরু করছ এসব? আমায় কি শান্তিতে একটু ঘুমুতেও দিবে না?”
কাঁপা গলায় লাবণ্যর জবাব, ” সকাল থেকে আমার খুব জ্বর, ঔষধও আনতে পারিনি। আপনার কাছে কি জ্বরের ট্যাবলেট হবে?”
গলার আওয়াজ কিছুটা নিচু হয় কথাটা শুনে কিন্তু রাগটা কমেনি। রাগান্বিত স্বরে শুভ্রর পাল্টা জবাব, ” তো আমি কি ঔষধের ফার্মেসী খুলে বসেছি যে আমার কাছে ঔষধের জন্য এসেছ?!!! যত্তসব”
না, মানে আপনার কাছে ঔষধ থাকে তো তাই…..(……)…..????
পুরো কথা বলতে পারেনি লাবণ্য। তার আগেই মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দেয় শুভ্র। জ্বরে কাতর লাবণ্য অশ্রুভেঁজা চোখে ফিরে যায় রুমে। পরনের ওড়নার একপাশ পানিতে ভিঁজিয়ে নিজে নিজেই কপালে দিয়ে রাখে একটু ভালো লাগার আশায়। অসুস্থ্য শরীরেরও নামাজটা মিস করেনি। কাঁপা কাঁপা শরীরে উঠে দাঁড়ায় লাবণ্য। শুভ্রর রুমের সামনে গিয়ে কড়া নাড়ে। শুভ্রকে নামাজের জন্য জাগিয়ে দিয়ে নিজেও নামাজটা আদায় করে নেয়। অন্যান্য দিনের মতো কুরআন তেলওয়াতটা আর করা হয়ে উঠেনি। একে তো জ্বর, তারউপর শরীরটা একদম নেতিয়ে পরেছিল। নামাজের বিছানায়’ই শুয়ে পরে লাবণ্য। এদিকে নামাজ পড়ে একটু শুয়েছিল শুভ্র। অন্যান্য দিনের মত সেদিন আর লাবণ্য ডাকতে পারেনি শুভ্রকে। যার কারনে শুভ্রর ঘুমটাও ভাঙেনি। যখন ঘুম ভাঙে তখন সকাল সাড়ে ১০টা। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে হুড়মুড়িয়ে বাসা থেকল বের হয় শুভ্র। একবারও জানার প্রয়োজন মনে করল না, পাশের রুমে এত বেলা অবধি কি করছে মেয়েটা? কেন জাগিয়ে দেয়নি ওকে?

অসুস্থ্য লাবণ্য ছটফট যন্ত্রণায় সারাটা দিন বিছানায় ছটফট করেছে আর আল্লাহ, আল্লাহ করেছে। আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল লাবণ্যর উপর। সেদিন সন্ধ্যায় কাকতালীয় ভাবে বাসায় আগমন ঘটে শুভ্রর বাবা-মায়ের। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, অথচ বাসায় কোনো আলো নেই, নেই কোনো সাড়া শব্দ। তবে কি বাড়িতে কেউ নেই নাকি? শুভ্রর বাবার প্রশ্নের জবাবে ওর মা বলে উঠে, তা কি করে হয়? বাসার মেইন দরজায় যে খুলা। চলো তো একটু ভিতরে গিয়ে দেখি! দরজা ঠেলে লাবণ্য, লাবণ্য করতে করতে শুভ্রর রুমে প্রবেশ করে ওর বাবা- মা। পুরো রুম জুড়ে ময়লা আর বিছানাটাও কেমন অগোছালো। লাবণ্য কি আজকে ঘরদোয়ার পরিষ্কার করো নি? বলতে বলতে পাশের রুমে প্রবেশ করে শুভ্রর মা। রুমে প্রবেশ করতেই শুভ্রর মায়ের একটা চিৎকার ভেসে উঠে। চিৎকার শুনে শুভ্রর বাবার ছুটে যান। স্ত্রীর মতো তিনিও আঁতকে উঠে একমাত্র আদরের বউমাকে বিছানায় নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই লাবণ্যর পাশে বসে লাবণ্যকে ডাকতেছে আর বলতেছে-
” মা! কি হয়ছে তোমার? মা চোখ খুলো। মা, ও মা? কি হয়ছে তোমার? জ্বরে যে গাঁ পুড়ে যায় শুভ্রর বাপ! এখন কি করব?”
লাবণ্য একটু একটু করে চোখ মেলে তাকায়। শ্বশুর শাশুড়ি দু’জনের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দেয়। শুভ্রর বাবা মা লাবণ্যকে বিছানায় উঠিয়ে শুইয়ে দেই। লাবণ্য আলতো করে ওর শ্বাশুড়ির হাতটা চেঁপে ধরে আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ” আমায় কিছু খেতে দাও। খুব ক্ষিদে পেয়েছে মা”…..
বহু চেষ্টা করে লাবণ্যর শ্বশুর শাশুড়ি বুঝতে পারল লাবণ্য খেতে চাচ্ছে। বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবারগুলোই মুখে তুলে খাইয়ে দেয় লাবণ্যকে। তারপর সাথে থাকা জ্বরের ট্যাবলেট থেকে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে লাবণ্য নিথর হয়ে শুয়ে থাকে বিছানায়। ওর শ্বশুর ছুটে যায় হসপিটালে। কান ধরে টেনে আনে ছেলেকে।
বাসায় আসার পর শুভ্রর কি মেজাজ!
বাবা! আজকে রোগীর অনেক ভীড়। আমায় হসপিটালে যেতে হবে। দয়া করে আমায় যেতে দাও।

” হসপিটালে আজ আর যেতে হবে না। তোর আসল রোগী বিছানায় শুয়ে আছে, ওর কাছে যা। ওর চিকিৎসা কর।”
পিছন থেকে কথাটা বলে উঠে শুভ্রর মা।

মায়ের কথা শুনে থমকে দাঁড়ায় শুভ্র;

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে