ভুলোনা আমায় পর্ব-১১

0
1267

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সোহান মুচকি হেসে “আলহামদুলিল্লাহ” বললো।আর মনে মনে বললো, আমি এটাই দেখতে চেয়েছে ইয়া আল্লাহ তুমি আমার নেক ইচ্ছে পূরণ করেছো। আমার অবুঝ স্ত্রী কে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছো। তোমার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া ইয়া আল্লাহ।

তারপর পাশে বসে থাকা সাবা কে বললো,
— এর পর নিশ্চয়ই তোমার কিছু বলার থাকতে পারে না।সাবা আমি জানি তুমি যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে। তুমি হয়তো জানো না আল্লাহ তা’আলা আমাদের জীবনসঙ্গী পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।

কার সাথে কার বিবাহ এটা নির্ধারণ করা।
তাকদীর অর্থাৎ ভাগ্য দুই প্রকার৷
১) তাকদীরে মুবরাম
এবং২) তাকদীরে মুয়াল্লাক
অর্থাৎ
ক) অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য
খ) ঝুলন্ত বা পরিবর্তনীয় ভাগ্য

জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটি বিষয় পূর্বে থেকেই আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন। কোনদিন আমাদের জন্ম হবে, কোনদিন আমাদের মৃত্যু হবে, কার সঙ্গে আমাদের বিয়ে হবে, এই সংক্রান্ত সকল কিছুই আল্লাহ তা’য়ালা পূর্বে থেকেই ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এটিকে অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য বলা হয় যা কি না পরিবর্তন সম্ভব নয়!

রাসূল সাঃ বলেছেন, দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না।

[জামে আত তিরমিজি হাদীস নং- ২১৩৯]

এখানে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা বুঝতে হবে! হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্যসমূহ দোয়ার দ্বারা পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন হয় ঝুলন্ত বা পরিবর্তনীয় ভাগ্যসমূহ।
যেমনঃ- আমাদের ভাগ্যে যদি অপমৃত্যু (অর্থাৎ আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে কিংবা এক্সিডেন্টের মাধ্যমে) মৃত্যু লিখা হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা চাইলে আমাদের দোয়ার বরকতে সেই অপমৃত্যু থেকে হেফাজত করতে পারেন, নেক হায়াত দান করবেন, আমল করার মতো জিন্দেগী দান করবেন। এর দ্বারা এটি বুঝায় না যে, দোয়ার দ্বারা নির্ধারিত হায়াত থেকে আল্লাহ তা’য়ালা হায়াত বৃদ্ধি করে দিবেন। এটি হচ্ছে দোয়ার দ্বারা (ঝুলন্ত) ভাগ্য পরিবর্তনের ব্যাখ্যা।

আবার বিয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা, আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য পূর্বে থেকে যাদেরকে নির্ধারন করে রেখেছেন তারাই আমাদের জীবনসঙ্গীনী হবে, তারাই আমাদের জন্য উত্তম এবং মঙ্গলজনক হবে বিধায় আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে আমাদের জন্য নির্ধারন করেছেন।

তাই প্লিজ অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করো। ভালো থেকো “আল্লাহ হাফেজ”।

আর মিজান ভাই আপনাকে “জাযাকিল্লাহু খাইরন” । অনেক বড় উপকার করলেন ভাই।

মিজান সাহেব হেসে বললেন,
— আজকে একটা ভালো কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে ভাই‌। আপনি কি আমার কম উপকার করেছেন।তার কিছু অংশ হয়তো শোধ করতে পেরেছি।আর হ্যা যেকোনো প্রয়োজনে বলবেন ভাই।
— জ্বি অবশ্যই। আজকে তাহলে যাই “আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতু”।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।
.
.
এই ভদ্রলোক মানে মিজান সাহেবের সাথে কথা বলে তাকে ভূয়া পেপার্স তৈরি করতে বলে সোহান। ভদ্রলোক পূর্বে সোহানের থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য পেয়েছেন তাছাড়া সোহান কে খুব ভালো জানেন,তাই নির্দ্বিধায় কাজটি করেন। কোথায় শুনেছিলাম ভালো কিছুর জন্য এটুকু মিথ্যা বলাই যায়। তাছাড়া বিনা কারণে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি হলে আল্লাহ তা’আলার আরশ কেঁপে উঠে। সেখানে একটু মিথ্যা বা ছলনা ব্যাপার না। বাকিটা আল্লাহ পাক ভালো জানেন “আল্লাহু আকবার”।
.
.
কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সোহান। অদূরে একজনকে বসে থাকতে দেখে দ্রুত পা চালিয়ে তার পাশে গিয়ে বসে। তারপর বলে,
— আমি তো ভেবেছিলাম টুসি ম্যাডাম হয়তো এতক্ষণে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে! কিন্তু সে যে রাস্তার পাশে এভাবে বসে আছে,ব্যাপার কি? নিজের গ্রামে ফিরে যাবে না নাকি?

সোহানের এমন পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে রেগে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে টুসি। সোহান আউচ বলার বদলে তৃপ্তির হাসি হাসছে।তার পিচ্চি ব‌উটাকে আরো রাগিয়ে দিতে বললো,
— পেপার্স টা এভাবে ছিরে দিলে, কাজটা ঠিক করনি একদম। ভেবেছিলাম আরেকটা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবো। নতুন ব‌উয়ের আদর পাবো!সব কিছুতে তুমি পানি ডেলে দিলে। কাজটা কিন্তু একদম ঠিক করোনি তুমি।

টুসি এবার সোহেলের গলা টিপে ধরে বললো,
— একদম অন্য নারীর কথা ভাবা তো দূর মুখে নিবেন তো আপনাকে মেরে আমিও মরবো! আপনার ভাগ আমি কাউকে দিব না বলে দিচ্ছি।

এই আবার কাঁদতে শুরু করে দিল। সোহান তার বাম হাত দিয়ে টুসির বাহু জড়িয়ে ডান হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— আমার বউ তো আমাকে বুঝতেই চায় না। আমি যে তাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে সেই প্রথম থেকেই! সে তো থাকে শুধু তার বাচ্চাগিরী নিয়ে। আমাকে তো বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না, তাই তো পাত্তা’হীনতায় ভুগতে ভুগতে দ্বিতীয় বিয়ের কথা যাষ্ট মুখে এনেছি।
কথায় আছে না পুরুষ মানুষ কে আঁচলে বেঁধে রাখতে হয়, এখন তুমি যদি তোমার আঁচলে আমায় বেঁধে না রাখো তাহলে তো আমি উড়াল দিব‌ই।

— আপনার মাথা!

টুসি উঠে হাঁটা শুরু করলো। পিছন পিছন সোহান ও উঠে টুসির মৌজা জড়ানো হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
— রাগ করেছো?রাগ করে না। তোমাকে মৃত্যুর আগে ছাড়ছি না ইনশা আল্লাহ। এবার বাসায় চলো।

টুসি খুব খুশি হয় সোহানের কথায়। তাই সেও সুহানের হাত শক্ত করে ধরে তার বাহুতে মাথা কাত করে হাঁটে।
.
.
রাত ১০ টা..
রোকেয়া বেগম পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
— বুঝলি বাপ গতকাল যে মেয়েটা দেখতে গেলাম দেখতে শুনতে ভালই তবে মেয়েরা পাঁচ পাঁচটা বোন। মেয়ের বাপ অবসরে আছেন, একটা ভাই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। অবস্থা ততো ভালো লাগলো না আমার কাছে।

সোহান তার আম্মার কথায় আহত স্বরে বললো,
— আম্মা দয়া করে তুমি টাকা পয়সার চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে একটা ধার্মিক মেয়ে খুঁজে আনো তাহলে দেখবে তোমার ঘরে আল্লাহ তা’আলার রহমত আসবে।আর এই মেয়েটা যদি ভালো লাগে তাহলে ওরেই ব‌উ করে নিয়ে আসো আম্মা।কারণ ঐ ঘরে আল্লাহ তা’আলার রহমতে পাঁচ পাঁচটা জান্নাতের ফুল। তুমি একটা ফুল নিয়ে আসো।
জানো আল্লাহ তা’আলা যখন খুশি হন তখন কন্যা সন্তান দান করেন “সুবহান আল্লাহ” ।

সোহান চলে গেলে রোকেয়া বেগম গভীর ভাবনায় মগ্ন হলেন। মেয়েটাকে তো ভালোই লেগেছে কিন্তু আর্থিক অবস্থা দিয়ে তো তেমন নেই। তাহলে এখন কি করবেন তিনি?
.
সোহান রুমে এসে টুসি কে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় এসে দেখে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার নিয়ন আলোয় ব্যস্ত যানবাহনের আশা যাওয়া দেখছে। সোহান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বাহুতে থুতনি রাখে। হঠাৎ কারো স্পর্শে শিউরে উঠে টুসি।গার গুড়িয়ে দেখে সোহান কে।
সোহান মুচকি হেসে বলে,
— ভয় পেয়েছো?

উত্তরে নিঃশব্দে মাথা নাড়ায় টুসি। সোহান তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গ্রিলের সাথে মিশিয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়।টুসি’র নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। সোহান তার অধরের কাছাকাছি নিজের অধর নিতে থাকে!যার ফলে বিন্দু পরিমাণ ফাঁকা জায়গা অবশিষ্ট থাকে।টুসি তার আঁখিপল্লব দুটো খিচে বন্ধ করে রাখে।
মিনিট খানেক চলে গেলেও যখন কিছুর অস্তিত্ব টের পায় না তখন চোখ খুলে তাকায়।আর এই সুযোগে সোহান তার অধৈর্য অধর দুটি বিপরীত অধরে ডুবিয়ে দেয়।টুসি তার হাত দুটো সোহানের পিছন দিকে নিয়ে খামচে ধরে সার্ট।
.
— একটা কথা ছিল বলবো?

টুসি সোহানের প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজেই বললো,
— কি বলেন?
— মাথা উঁচু করো তাহলে বলবো।
— না আপনি এমনি বলেন।

সোহান বুঝতে পারলো টুসি খুবই লজ্জা পাচ্ছে সোহানের সাথে চোখাচোখি হতে। আসলে এই প্রথম বার স্বামীর গভীর ছোঁয়া পেয়েছে তো তাই। সোহান বললো,
— আচ্ছা ঘুমাতে হবে তো রাত বেড়ে যাচ্ছে। বেশি রাত করে ঘুমানো ঠিক নয়।

টুসি কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না। আগের মতই র‌ইলো। সোহান দুষ্টুমি করে টুসি’কে নিজের বাহুবন্ধনে আরো শক্ত করে আবদ্ধ করে নিল। তারপর নিজের অধরপল্লব দুটি ছুঁয়ে দিল গভীর ভাবে টুসির গলার দিকটায়।টুসি বেচারি লজ্জায় লাল রঙা ধারন করে আরো মিইয়ে গেল।
.
.
মেহুল আর টুসি স্কুলে পৌঁছাতেই ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের থেকে শুনলো তাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্যার এবং সাধারণ গণিত ক্লাস নিতেন সেই ম্যামের বিয়ে হয়েছে!
ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এই নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। আসলে হ‌ওয়ার ই কথা স্কুলে ইয়ং টিচার এবং মিস থাকলে তাদের ব্যাপারে জানার আগ্রহ হয় ছাত্র ছাত্রীদের।তারা কবে বিয়ে করবে কখন করবে না করবে এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন কেউ বলছে দুজনের আলাদা বিয়ে হয়েছে আবার কেউ বলছে দুজন দুজনকে বিয়ে করেছেন। সঠিক খবর শিক্ষক মহল ছাড়া কেউ জানে না।
.
সোহান বাড়ি ফিরলে টুসি তাকে জানায় যে তার সাবা মিস বিয়ে করেছে।এই খবর শুনে সোহান খুব খুশি হয়। তবে টুসি’র মাথায় গতকালের বিষয়টি নাড়া দেয়,সাবা তাদের সাথে কোর্টে গিয়েছিল কেন?
সোহান কে জিজ্ঞাসা করলে সোহান বলে,
— তুমি পিচ্চি একটা মেয়ে তোমার মাথায় এগুলো ঢুকবে না।
— আমি পিচ্চি তাই না? দেখেন তাহলে…

সোহান রকিং চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার কোলে সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে বসেছে টুসি।
সেই অবস্থাতেই নিজের দন্ত দিয়ে সোহানের থুতনিতে কামড় বসিয়ে দেয় টুসি…

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে