#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৯ (শেষ পর্ব)
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
তিয়াশ রান্না করতে করতে তিয়াশ তিয়াশ করতে করতে নিলিমা ভিতরে চলে এলো। এসেই তুলি কে সরিয়ে তিয়াশ কে জড়িয়ে ধরে।
তিয়াশ তুমি রান্না করছো? এই মেয়েটা তোমাকে দিয়ে রান্না করাচ্ছে?
তিয়াশ এতক্ষণ চুপ ছিলো কারণ ঘটনা টা অতি দ্রুত ঘটে গেছে। আর তুলি ও হতভম্বের মতো চেয়ে আছে।
তিয়াশের হুস ফিরতেই চোখ লাল হয়ে যায়। সাথে সাথে নীলিমাকে নিজের থেকে সরিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো এই বাড়িতে ঢুকলে কিভাবে? বলেই চেঁচিয়ে গার্ড দের ডাকলো।
গার্ড রা ভিতরে এসে কিছু বলবে তার আগেই তিয়াশের মা ঢুকে পড়লো বাড়িতে। তাদের দেখে রীতিমত অবাক তিয়াশ আর তুলি।
বাবা দেশে ফিরলি আর আমাদের জানালি না পর্যন্ত। তখনি ভিতরে তুহিন ঢুকলো। কিছুক্ষণ কথা বলে বললো ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও না। তিয়াশের মা আর নিলীমা এক পর্যায় যেতে রাজি হলেও বললো রাতে এখানে থেকে সকালে চলে যাবে।
তুলির যা খিদে ছিলো এদের দেখে তা মিটে গেছে।
তিয়াশ তুমি রান্না ঘরে কি করছিলে? নিলিমা কথাটা বললো তিয়াশের হাত ধরে।
তিয়াশ রেগে গিয়ে কিছু বলার আগেই তুলি রেগে বলে উঠলো খাবার তৈরি করতে এতো দেরি হচ্ছে কেনো বুঝতে পারছি না।
বলেই নিলীমা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তিয়াশ কে রান্না ঘরে এনে বললো,
ওই মেয়েটা হাত ধরায় খুব ভালো লেগেছে? হাত ছাড়াচ্ছিলি না কেনো?
তিয়াশ কিছু বলার আগেই নীলিমা তিয়াশের যেই জাগায় ধরেছে সেই জাগায় ছুরি নিয়ে টান লাগিয়ে দিলো।
ভালোবাসিস যখন স্বীকার করেছিস তখন তুই সম্পূর্ণই আমার। অন্য মেয়ে তোকে কেনো ছুবে?
তিয়াশ বুঝতে পেরেছে তুলি খুব রেগে আছে তাই কিছু না বলে তুলি কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো ভালোবাসি তো অনেক ভালোবাসি।
তুলি খেয়াল করলো তিয়াশের হাত বেয়ে র*ক্ত পড়ছে তাই নিজেই ঘরে দৌড়ে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স আনলো।
তুলি কে দৌড়ে আসতে দেখে তিয়াশের মা ও রান্না ঘরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন।
তোর হাত কিভাবে কাটলো বাবা?
আমি কেটেছি মা।
এই মেয়ে তুমি আমায় মা বলে ডাকবে না বলে দিলাম।
তখনি তিয়াশ বলে উঠলো তুলি কে কিছু বলো না। ও যা খুশি করুক। বলেই জোর করে রান্না ঘর থেকে বের করে দিলো তিয়াশ তার মাকে।
খাবার টেবিলে তিয়াশ তুলি পাশাপাশি বসে আছে। আর তিয়াশের অন্য পাশে তুলি তুহিন কে বসিয়েছে যাতে নিলিমা তিয়াশের পাশে না বসতে পারে।
আমি তিয়াশের পাশে বসতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুলি তুহিন কে বসিয়ে দিলো। কিন্তু আমি তিয়াশের হাতেই খাবো। ভেবেই মনে মনে খুশি হলো নীলিমা।
আন্টি আমার হাতে কেটে গেছিলো জানোই তো। খাইয়ে দিবে? বলেই তিয়াশের মাকে চোখ মারলো নীলিমা।
তিয়াশের মা বুঝতে পেরে বললো আমারো একই অবস্থা। তুই বরং তিয়াশ কে বল।
বলার সাথে সাথেই তিয়াশ বলে উঠলো,
আমি কারো চাকর নই। যে যার টা নিজে খেতে পারলে খাক নয়তো দরজা খোলা আছে চলে যেতে পারে। বলেই তুলি কে খাওয়ানোর জন্য তুলির মুখের সামনে খাবার ধরতেই তুলি ও খেয়ে নিলো।
কথাটা নীলিমা কে বললো উপস্থিত সবাই বুঝতে পারলো। তখন তুহিন বলে উঠলো তুমি চাইলে আমি তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি। আমার কোনো আপত্তি নেই।
নিলীমা আর কিছু না বলে উঠে যেতে নিলে তিয়াশের মা চোখ দিয়ে ইশারা করলে আবার বসে পড়ে।
খাবার শেষে নীলিমা আর তিয়াশের মা তুলি কে আলাদা করে ঘরের এক কোনায় নিয়ে এসে বলে, দেখো মা তুমি তো তিয়াশের নিশ্চয়ই ভালো চাইবে বলো। তোমাকে যদি তিয়াশ নিজের কাছে রাখে তাহলে ও তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে আর আমাদের সাথেও থাকতে পারবে না। তুমি কি চাও না তিয়াশ ভালো থাকুক।
তুলি বলে উঠলো আমি কি করতে পারি?
তুমি আমার ছেলের জীবন থেকে সরে যাও। আমরা তিয়াশের আবার বিয়ে দিবো নিলীমার সাথে তাহলে তারা দুজনেই ভালো থাকবে। আমরাও শান্তিতে মরতে পারবো।
তুলি কিছু বলার আগেই তিয়াশ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো আমার তুলি কে ছাড়া আর কারোর প্রয়োজন নেই। আমি কিছু করার আগে সম্মান নিয়ে এখান থেকে তোমরা বেরিয়ে যাও এটাই তোমাদের জন্য ভালো হবে।
তিয়াশের মা আর কিছু বলার আগে তিয়াশ আবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো আমি কিন্তু এখনো নিলীমার সাথে কিছুই করছি না। আমি জানি ও আমার তুলির ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। তাই আমি কিছু করার আগে বেরিয়ে যাও।
নিলীমা আর তিয়াশের মা বুঝতে পারে তারা ধরা পড়ে গেছে। কারণ সেদিন তুলি কে মারার হুমকি নিলীমা দিয়েছিলো তিয়াশের মায়ের কথায়। তাই তারা আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় এই বাড়ি থেকে।
তুহিন তিয়াশের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সেও বেরিয়ে যায়।
রাতের খাবার শেষে তুলি আর তিয়াশ ঘরে চলে আসে।
তুলির গায়ে এখনো ব্যাথা আছে তাও গিয়ে বারান্দায় বসলো তখনি তিয়াশ এসে তুলির পাশে বসলো।
তুলি বুঝতে পেরে তিয়াশের বুকে মাথা রাখলো। তিয়াশ ও পরম জতনে তুলি কে জড়িয়ে ধরে।
।
।
দুই বছর পর
সেদিনের পর দিন তুলির বাবা মা এসে তাদের কাছে ক্ষমা চায় আর এও বলে তিয়াশের মায়ের ভয়ে তারা তুলির ডিভোর্সের ব্যবস্থা করেছিলো নয়তো তুলি কে মেরে ফেলবে। আর কোনো মা বাবাই চাইবে না তার সন্তানের কোনো ক্ষতি হোক।
নীলিমা কে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায় আর তুহিনের সাথে নীলিমার বিয়ে হয়। তাদের এখন এক বছরের একটা ছেলে বাবু আছে।
তারা এখন সবাই তিয়াশের বাবার বাড়িতে এক সাথে থাকে সাথে তুলির বাবা মাও।
এদিকে রাতে বারান্দায় বসে তিয়াশ তার কেশবতীর সাথে পূর্ণিমা বিলাসে বেস্ত।
তোর ভিলেনি ভালোবাসা দেখে তো আমি সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি চাইলে আর দেখাবো না। বলেই মুচকি হাসলো তুলি।
তিয়াশ আবার বলে উঠলো, আমার এই ভিলেনি ভালোবাসাই কিন্তু চাই বলেই তুলির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো। আর পেটে হাত বুলিয়ে বললো তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসো বুঝলে তারপর আমরা একসাথে তোমার আম্মুকে জালাবো।
তুলি আজ পাঁচ মাসের গর্ভবতী।
তুলি হাসতে হাসতে বললো দেখা যাক কে কাকে জালায় বলেই তিয়াশের বুকে মুখ লুকালো।
আর পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় দুজন বসে পূর্ণিমা বিলাস করতে লাগলো।
সমাপ্ত