ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
950

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৮
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

তিয়াশ এক ঘন্টা পর বাসায় ফিরে দেখে তুলি ওভাবেই পরে আছে।
তুলির কাছে গিয়ে ডাকতে থাকে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় তিয়াশ। পাগলের মতো তুলি কে ডাকতে থাকে। মুখে পানির ছিটা দেয় তাও কোনো কাজ হয়না। উপায় না পেয়ে ডাক্তার ডাকে।


রোগীকে এইভাবে কে মেরেছে? এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে এতো মার সহ্য করতে পারে?

তিয়াশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
ডাক্তার তিয়াশ কে বলে ইনি আপনার কি হয়?

আমার ওয়াইফ।

ডাক্তার কিছুক্ষন তিয়াশের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছু ওষুধ লিখে দেন।
যাওয়ার সময় বলে যান ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসবে। বউ কে ভালোবাসতে শিখুন। বলেই চলে যায়।

তিয়াশ তুলির মাথার কাছে বসে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর হঠাৎ করেই তুলির হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করতে করতে বলতে থাকে আমার ভুল হয়ে গেছে। যেই উকিল গিয়েছিলো তোদের বাসায় তার কাছে জানতে পেরেছি তোকে জোর করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বলেছিলো। আর এটাও জেনেছি এর আগেও তাদের কারণেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলি।

তারপর তিয়াশ তুলির দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে বলে তুই এখনো আমায় ভালোবাসিস। উনি বলেছে আমায়।
কথাটা বলার সময় তিয়াশের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ছিলো। তারপর পকেট থেকে এক জোড়া নূপুর বের করে তুলির পায়ে পড়িয়ে দেয়। যেগুলো সেদিন রাতে পড়াতে গিয়েও পড়াতে পারেনি।

তখনি তুলির জ্ঞান ফিরে আসে আর তিয়াশ কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুলি ভয় পেয়ে যায় একটু আগের কথা ভেবে। তুলি খেয়াল করে তার পায়ে কিছু একটা আছে। বুঝতে পারে এগুলো তিয়াশ তাকে পড়িয়েছে। খুব সুন্দর রূপার নূপুর গুলো। তাও তুলির মনে ভয় থেকেই যায়।

তুলি ভয়ে উঠে পিছিয়ে যেতে নিলে তিয়াশ বলে উঠে ভয় পাচ্ছিস কেনো তুলি।

তুলি তাও ভয় পাচ্ছে দেখে তিয়াশ হেসে দিয়ে বললো ভয় পাস না আমি ভালোবাসি তো তোকে।

তুলি অবাক হয়ে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই তুলি বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে যেতে নেয় কিন্তু শরীরে ব্যাথা থাকায় পরে যেতে নেয়। আর তখনি তিয়াশ গিয়ে ধরে ফেলে। বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি আমার জান পাখিকে।

নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলে উঠলো তুলি, তাহলে আমাকে মারলেন কেনো তখন?

রাগ গিয়েছিলো আমায় ডিভোর্স দিবি তাই সই করতে নিয়েছিলি কাগজে তা দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারিনি।

তাহলে সেদিন আমাকে অত উচু থেকে ফেলে কেনো দিয়েছিলেন?

বোকা মেয়ে একটা। তুই কোনো ব্যথা পেয়েছিলি? তাহলে ভাবলি কি করে এই তিয়াশ তোকে ব্যাথা পেতে দিবে। আমি সেদিন রাতে কিছুক্ষণের জন্য ঘরে এসেছিলাম দেখেছিস? তখনি আমি সবাইকে খবর দেই আর নিচে পড়লে যাতে তোর কোনো ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা করি।

ভালোবাসেন তাহলে আমাকে?

হুম অনেক। তুমি করে বল না তুলি।

হুম ঠিক আছে। কিন্তু এতদিন যে আমায় কষ্ট দিলে তার বেলায়? আজকেও মেরেছো। আমার সারা শরীর ব্যাথা করছে আর চুলেও।
এখন কি উচিত না তোমায় ও সেম ভাবে কষ্ট দেওয়া?

তিয়াশ মাথা নিচু করে রইলো। তারপর নরম গলায় বললো যা শাস্তি দিবি যা কষ্ট দিতে মন চায় দিবি মেনে নিব কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবি না প্লিজ তাহলে তোকে আবার কি করবো তা আমি নিজেও জানি না। বলেই তুলি কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

তুলি মনে মনে ভাবছে শাস্তি তো অবশ্যই পাবে বলে নিজে নিজেই হাসতে লাগলো।

তুলির হাসি শুনে বললো হাসছিস কেনো?

তুলি তিয়াশের বুক থেকে মাথা তুলে বললো খিদে পেয়েছে আমার খাবো আমি।

তিয়াশ বললো এই বাড়িতে কোনো লোক রাখা হয়নি নতুন বাড়ি তাই। তুই একটু ওয়েট কর আমি খাবার কিনে আনছি।

না কিনা খাবার খাবো না।

তাহলে অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।

সেই তো একই হলো।

তাহলে কি করবো। আনতেও দিবি না। অর্ডার ও করতে দিবি না তাহলে কিভাবে খাবার আসবে।

তুমি রান্না করবে এখন থেকে। কাজে যাওয়ার আগেও রান্না করে তবেই বের হবে।

রান্না করবো কি করে এখানে তো বাজার করা নেই।

আমি কি জানি। আমার সব কথা শুনবে বলেছো। না মানতে পারলে বলে দাও।

আমি তোর সব কথা মানবো। বল কি করবো?

বাজারে যাও গিয়ে বাজার করে আনো।

তিয়াশ তার লোকদের কল করে বাজার করে আনার জন্য। তখনি তুলি ফোন নিয়ে নেয় আর বলে। তুমি নিজে গিয়ে আনবে তারপর নিজেই রান্না করবে কিভাবে করবে জানি না।

তিয়াশ তুলির দিকে অসহায় ভাবে তাকালে তুলি তা পাত্তা না দিয়ে বলে উঠে, এখন আমাকে নিচে নিয়ে চলো আমি কার্টুন দেখবো। হাঁটতে তো পারবো না যেভাবে মেরেছো।

তিয়াশ তুলিকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে দেয়। আর তুলির হাতে রিমোট দিয়ে দেয়। তুলি কার্টুন ছেড়ে দেখতে থাকে। তিয়াশ তুলির দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনি তুলি বলে উঠে,
কি হলো সমস্যা কি যাচ্ছেন না কেনো? আমার খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি আসবি।

তিয়াশ তুলির দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে বলে আবার তুই তাকারি।

তো যাচ্ছো না কেনো। আর শুনো রাত্রে বেশি কিছু খাবো না, শুধু ডিম দিয়ে ডাল, ছোটো মাছ দিয়ে চরচরি, আলু ভাজা আর লাউ দিয়ে চিংড়ি মাছের তরকারি খাবো গরম গরম ভাত দিয়ে। ভাবতেই খিদে টা আরো বেড়ে গেলো।

তিয়াশ অবাক হয়ে বললো এতকিছু খেয়েও বলবি বেশকিছু খাইনা।
বিড়বিড় করে বললো বুঝতে পারছি এই জন্যই তোকে কোলে নিতে গেলে আমার অবস্থা খারাপ কেনো হয়।

কোনো সমস্যা?

আজ্ঞে না ম্যাডাম। বলেই তিয়াশ বাইরে চলে গেলো আর গার্ড দের বললো ভালোভাবে পাহারা দিতে।


রাত নয় টার সময় তিয়াশ বাজার করে বাড়ি ফিরলো। তারপর রান্না করা শুরু করলো ইউটিউব দেখে। কারন তিয়াশ কোনোদিন নিজের হাতে এক গ্লাস পানি ঢেলেও খায়নি।
তুলি তিয়াশের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে আর মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি করছে যে এখন কিভাবে তিয়াশ কে জ্বালাতন করা যায়।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে