#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৭
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
আজ দুদিন পর তুলি হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়েছে। এখন তুলি কে হোটেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
বেশি উপর থেকে পরার কারণে ভয়ে দুইদিন অজ্ঞান ছিলো। এর মধ্যে হোটেলের ম্যানেজার এসে তুলির সাথে দেখা করতে এসেছেন।
আপনি সেদিন না থাকলে আমি সেখানেই পরে মা*রা যেতাম।
আমরা সময় মতো সবটা করতে পেরেছি। নয়তো কি হতো আমরাও জানতাম না।
সকালে তিয়াশ তুলি কে ওষুধ দিতে দিতে বললো অনেক জরুরী কাজ পরে গেছে নাহলে যেতাম না। আমি সব কিছু তোর সামনে রেখে যাচ্ছি আর মহিলা গার্ড এসে তোর খাবার দিয়ে যাবে সময় মতো। আর তাকে তোর দেখভালের জন্য রেখে যাচ্ছি। প্রয়োজন ছাড়া বিছানা থেকে নামবি না একদম। বলেই তুলির কপালে কিস করে।
তিয়াশের স্পর্শ তুলির সহ্য হচ্ছে না। মুখেও কিছু বলতে পারছে না।
তারপর তিয়াশ চলে যায়।
তিয়াশ যাওয়ার বিশ মিনিট পরেই তুলির রুমের বাইরের গার্ড এসে তুলির কাছে পারমিশন চায় কাউকে ভিতরে প্রবেশ করানোর।
তুলি কে এসেছে জানতে চাইলে তখনি এক প্রকার জোর করে গার্ড দের সরিয়ে তুলির রুমে ঢুকে পড়ে তারা।
বাবা নীরব তোমরা?
মহিলা গার্ড টি তিয়াশ কে ফোন করতে চাইলে তুলি আটকে দেয়। আর গার্ড দের চলে যেতে বলে। তারা না যাইতে চাইলেও জোর করে তুলি তাদের কে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
আমরা তোকে নিতে এসেছি। আর হোটেল ম্যানেজারের থেকে আমরা সব কিছুই জেনে এসেছি। তার পরেও তুই তিয়াশের সাথে থাকতে চাস বল?
থাকতে না চাইলেও আমি তিয়াশকেই ভালোবাসি।
বাহ ভাইয়া থেকে এখন সোজা নাম ধরে ডাকছো!
এখন সে আমার স্বামী হয় নীরব ভাইয়া ভুলে যাবেন না প্লিজ।
এসব কথা বাদ দে মা। এখন আমাদের সাথে দেশে ফিরে চল।
তিয়াশ আসুক এক সাথে নাহয় যাবো। তোমরা বসো।
না মা তুই এখনি চল তোর মায়ের শরীর খুব খারাপ তোর কথা বলছে শুধু। পরে নাহয় তিয়াশ চলে আসবে।
তিয়াশ এলেই আমরা যাবো আব্বু। নাহলে আবার কি কান্ড করবে কে জানে।
তখনি তুলির আব্বু তুলির আম্মুকে কল দিয়ে তুলির কাছে দেয়।
মারে আমি খুব অসুস্থ জানি না কতক্ষণ বাচবো। আয় না মা একটি বার দেখা করে যা আমার সাথে।
কি হয়েছে তোমার আম্মু? তুমি ঠিক আছো তো? কন্ঠ শুনে তো মনে হচ্ছে তুমি খুব অসুস্থ।
হেরে মা তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। বলেই তুলির আম্মু জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকেন। আর কল কেটে দেন।
তুলি তার বাবাকে ফোন দিয়ে দেয়। আর চিন্তা করতে থাকে।
তখনি তুলির বাবা বলে উঠেন তুই তাড়াতাড়ি চল আমাদের সাথে বলেই হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন।
গার্ড রা আটকাতে চাইলে নীরব তাদের দূরে নিয়ে বলে তারা মার্কেটে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসবে তাই তিয়াশ কে জানানোর দরকার নেই। তাই তারাও আর এই ছোটো ব্যপার টা তিয়াশ কে জানায় নি।
।
।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতে লাগলো। তিয়াশের ও আসার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তুলি এখনো ফিরেনি দেখে গার্ড রা ভয় পেতে লাগলো। তবুও তারা অপেক্ষা করতে লাগলো তুলির জন্য। কিন্তু তুলি আর ফিরলো না। ফিরলো তিয়াশ। আর হাতে একটা উপহারের বাক্স।
তিয়াশ রুমে ঢুকেই বিছানা খালি দেখে ভাবলো তুলি হয়তো ওয়াশ রুমে আছে তাই তুলি কে ডাকতে ডাকতে বললো বের হয়ে দেখ তোর জন্য কি এনেছি। দেখলে খুশি হয়ে যাবি। আর সেই খুশিতে নাচতে মন চাইবে।
ক্লাস নাইনে থাকতে আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছিলি মনে আছে? কিন্তু তখন কাজ করতাম না আর বাবার টাকা দিয়ে তোকে দিতে চাইনি তাই তখন থেকেই কলেজে রাজনীতি.. আর কিছু বললো না তিয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বললো আর কতক্ষণ ওইখানে থাকবি। সারাজীবন থাকার প্ল্যান করলি নাকি ওখানে। বের হ। বলতে বলতে টাই ঢিলা করছে।
এদিকে তিয়াশ তুলি কে ডাকছে আর ওদিকে গার্ড রা ভয়ে ঘেমে শেষ।
তুলি এখনো বের ও হচ্ছে না আবার সাড়া ও দিচ্ছে না তাই তিয়াশ ওয়াশ রুমের দরজা খুলে ভিতরে দেখলো অন্ধকার। আর তুলি যে অন্ধকারে থাকবে না এইটা তিয়াশ খুব ভালো করেই জানে। তাও মনের শান্তির জন্য লাইট জ্বালিয়ে ভিতরে দেখে নিলো। কিন্তু ভিতরে কেউ নেই।
বারান্দায় গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
তুলি কে না পেয়ে তিয়াশের চোখ এমনিতেই লাল বর্ন ধারণ করেছে।
তিয়াশ গিয়ে গার্ড দের সামনে দাঁড়াতেই তাদের কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। তা দেখে তিয়াশ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে গার্ড দের দিকে তাকালো। আর বললো তুলি কোথায়?
তাদের চুপ দেখে এবার তিয়াশ খুব চেঁচিয়ে বলে উঠলো হোয়াই আর ইউ অল সাইলেন্ট ডেম ইট!
তারা এখনো চুপ আছে দেখে তিয়াশ নিজের পি*স্তল বের করে তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ঠেকায় আর সাথে সাথে ভয়ে বলে উঠে ম্যামের বাবা এসেছিলো আর তার সাথে মার্কেটে যাবে বলে বেরিয়েছে। আমরা আপনাকে কল করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার বাবা না করে তাই আর করিনি। এইটুকু বলেই থামলো লোকটি।
তিয়াশ কিছু একটা ভেবে সোফায় বসে ল্যাপটপ অন করলো আর ভিডিও চালু করলো কিছু একটার। যেটাতে তুলির সকাল থেকে দুপুর অব্দি যা যা করেছে সব কিছুই দেখতে পারছে।
তিয়াশ ঘরে তুলির সেফটির জন্যে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলো আর তাতেই সব দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু শুনতে পাচ্ছে না। কারণ সকালেই তুলি পানি ফেলে দিয়েছিলো ল্যাপটপে যার কারণে সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। তিয়াশের রাগ আরো দশ গুণ বেড়ে গেলো।
ল্যাপটপে চোখ দিতেই দেখলো তুলির বাবার সাথে নীরব ও আছে। ব্যস অমনি ল্যাপটপ ছুড়ে ফেলে দিলো। আর যা বুঝার বুঝে গেছে।
।
।
আম্মু আম্মু… কোথায় তুমি বলতে বলতে তুলি তুলির মায়ের ঘরের দিকে যেতে লাগলো।
তুলি তাদের আগের বাসায় এসেছে।
তুলি তার মায়ের ঘরে গিয়ে যা দেখলো তাতে অবাক না হয়ে পারলো না।
তুলির মা খোস মেজাজেই নীরবের মায়ের সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
তুলি তার মাকে বললো তুমি তো ভালোই আছো তাহলে আমায় মিথ্যে বললে কেনো আম্মু।
তুলির আম্মু আমতা আমতা করে বললো আমি ভালো নেই রে মা বলেই ঘরে ঢুকে বিছানায় বসলেন অসুস্থতার ভান করে।
আমি যা বুঝার বুঝে গেছি আম্মু। তোমাকে আর কষ্ট করে অভিনয় করতে হবে না। আর বাবা শেষমেশ তুমিও।
তুলির বাবা বললো বুঝে যখন গেছিস তাহলে আর লুকিয়ে লাভ কি।
তোর সাথে নীরবের বিয়ে দিতে নিয়ে এসেছি আমরা।
তিয়াশের সাথে আমার ডিভোর্স না হলে বিয়ে কিভাবে দিবে বাবা। আর সে যে আমায় ডিভোর্স দিবে না তা খুব ভালো করেই জানো।
যাতে দিতে বাধ্য হয় সেই ব্যবস্থাই করবো।
তিয়াশ দিলেও আমি দিবো না বলেই বাইরে চলে যেতে নেয় আর তখনি তুলির বাবা তুলির হাত ধরে ঘরে আটকে রেখে চলে যায়।
তুলি রাগে দুঃখে চুপচাপ বসে থাকে। মনে মনে ভাবে সে তো আমার কথা ভাবেনি ফেলে দিয়েছিলো আমাকে। তখন নিচের লোকেরা ব্যবস্থা না করলে তো আমি মাটিতে পড়তাম। আর মা*রা যে যেতাম না তার নিশ্চয়তা ছিলো না। তাহলে তার জন্যই মনটা ছটফট কেনো করছে। তাকে তো আমি ঘৃণা করি। তাহলে এখন তার প্রতি ঘৃণা টা আসছে না কেনো?
ভালোবাসি বলে কি এখনো তাকে ঘৃণা করতে পারছি না?
এসব ভাবতে ভাবতেই কাঁদতে কাঁদতে তুলি সেই অবস্থা তেই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম ভাঙলে দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজা খোলা তাই তুলি ও ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে নামতে নামতে দেখলো তুলির বাবা কারো সাথে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে উকিল হবে হয়তো।
ওইতো তুলি মা এসে গেছে। আয় মা বোস।
তুলি তার বাবার কাছে গিয়ে বসতেই তুলির বাবা তুলির হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে এখানে সাইন করে দেতো মা।
তুলি ভালো করে পড়ে দেখলো ওটা ডিভোর্স পেপার। তা দেখে তুলি রেগে গিয়ে বললো আমি ওনাকে ভালোবাসি ডিভোর্স কেনো দিবো।
তখনি তুলির মা তুলির সামনে ছুরি নিয়ে এসে নিজের গলায় ধরে বললো তুই সই না করলে আজ আমি এখনি তোর সামনে নিজেকে শেষ করে দিবো তুলি।
তুলি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে অসহায় হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কাগজ টা হাতে নিয়ে সই করতে নিবে তখনি কেউ ঝড়ের গতিতে এসে তুলি কে চড় বসিয়ে দেয়। তুলি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়।
আর তখনি তুলি কে নিচ থেকে তুলে বলে উঠলো আজ তোকে মেরেই ফেলবো আমি বলে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে এনে গাড়িতে বসিয়ে রওনা দেয়।
অন্য বিশাল বড় একটি বাড়িতে এনে শিড়ি দিয়ে তুলির চুল টানতে টানতে নিয়ে একটি ঘরে ফেলে নিজের কোমরের বেল্ট খুলে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।
এক সময় তুলি অজ্ঞান হয়ে গেলে মাটিতে বেল্ট ফেলে দিয়ে বাইরে চলে যায় গেট আটকে।
চলবে….