ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১৬+১৭

0
1001

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৬
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

ছুরি দেখে তুলি বুঝতে পারলো ওর সাথে এখন খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
তুলির এই অবস্থা দেখে তিয়াশ হালকা হাসলো। তারপর তুলির মুখের সামনে ছুরি ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ করেই তুলির হাতে ছুরি টা ধরিয়ে নিজের বা হাতের তালুতে একটা টান দিলো তিয়াশ। সাথে সাথেই গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো তিয়াশের হাত বেয়ে।
কি হলো কিছু বুঝতে না পেরে তুলি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো তিয়াশের দিকে। তুলি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ক্ষত টা বেশ ভালো ভাবেই হয়েছে।

হুশ ফিরতেই তুলি আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠলো পাগল হয়েছেন আপনি। কি করলেন এটা।

তিয়াশ তুলির গালে আলতো ভাবে ধরে বললো চিন্তা করিস না এতো সহজে মরবো না।
তারপর করুন ভাবে বললো দেখো না দেখো আমার হাত কেটেছে কিছু করবে না?
নীরবের সময় তো ওর পাশে গিয়ে বসে ছিলে। ও.. ভুলেই গিয়েছিলাম তুই তো নীরব কে ভালোবাসিস।
বলেই অট্টোহাসি তে মেতে উঠলো তিয়াশ।

তুলির কাছে তিয়াশ কে মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না তাও তুলি সাহস দেখিয়ে বললো সরুন দেখি গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা কোথায়। হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে। বলেই উঠে চলে গেলো তুলি।

বক্স এনে হাতে তুলো দিয়ে ভালোভাবে জায়গা টা পরিষ্কার করে নিলো তারপর ওষুধ লাগিয়ে সুন্দর ভাবে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
একটা জ্বরের ওষুধ আর ব্যথার ওষুধ ও খাইয়ে দিলো জোর করে। তারপর শুয়ে পড়তে বললো তুলি। কারণ তারা সন্ধ্যায় বাইরে খেয়েছিলো।

পাশে বসেই তুলি দেখতে লাগলো ব্যান্ডেজ টা ঠিক ভাবে বাধা হয়েছে কিনা। তখনি হঠাৎ করে তিয়াশ উঠে তুলি কে বারান্দায় নিয়ে রেখে এসে ভিতর দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
তুলি হাজার বার বলার পরেও কোনো কথা কানে নিলো না তিয়াশ। উলটে বলে উঠলো আর একবার যদি তোর আওয়াজ পাই তাহলে এখান থেকেই নিচে ফেলে দিবো তোকে বেয়াদব মেয়ে। বলেই বারান্দার লাইট ও অফ করে দিলো।

তিয়াশ জানে তুলি অন্ধকারে ভয় পায় তাই ইচ্ছে করেই লাইট অফ করে দেয়। কিন্তু অপর পাশ থেকে আর আওয়াজ আসছে না দেখে তিয়াশ পিছে ফিরে দেখে মহারানি মনের সুখে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। আর নখ কামড়ে কিছু একটা ভাবছে।

দরজা গ্লাসের হওয়ায় এই পাশ থেকে ওই পাশ ভালোভাবেই দেখা যায় সবকিছু তাই ঘরের আলো ও বারান্দায় যাচ্ছে, তা দেখে তিয়াশ ঘরের লাইট ও অফ করে দিলো।
তুলি আবার কান্না কাটি শুরু করে দিলো। তুলির কান্নার আওয়াজ শুনে তিয়াশ যেনো অনেক খুশি হয়েছে তা দেখে যে কেউ বলে দিবে।

রাত দুটো পঁচিশ বাজে। তুলির চোখে ঘুম নেই।
তুলি মনে মনে ভাবছে চাঁদের আলো থাকায় আজ বেঁচে গেলাম। নয়তো ভয়ে আজকেই শেষ হয়ে যেতাম।
কিন্তু ওনার সাথে আমি আর থাকবো না। আব্বু আম্মু কোথায় তোমরা বলেই আবার কাঁদতে লাগলো তুলি।

হটাৎ করেই তুলির মাথায় আইডিয়া আসে।
আর তুলি মনে মনে বললো এখান দিয়ে পাইপ বেয়ে বেয়ে যদি নিচে নামতে পারি তাহলেই তো হলো।
আর সন্ধ্যায় তো ওনার ফোন থেকে নাম্বার টাও মুখস্ত করে নিয়েছিলাম। কিন্তু নাম্বার টা কার ছিলো? বাবার তো ছিলো না এটা সিওর।
কারণ বাবার ফোন চুরি হওয়ায় বাবা আর আগের সিম কার্ড উঠায়নি কাগজ পত্র না থাকায়। নতুন সিম কার্ড কিনেছিলো আর ওই নাম্বার আমি মুখস্ত করিনি। আমার ফোনে সেভ করে রেখেছিলাম। আর আমার ফোন টা তো ওই বাড়িতেই রয়ে গেছে।

যাই হোক আগে এখান থেকে নামি তারপর কারো কাছ থেকে ফোন নিয়ে ওই নাম্বারে কল দিয়ে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলবো।

তুলি বোকার মতো এতকিছু মনে মনে ভেবে নিজেই নিজেকে বাহবা দিচ্ছে।
তুলি নামার জন্য নিচের দিকে তাকিয়েই জ্ঞান হারাবার মতো অবস্থা। ৭ তলার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে তুলির মাথা ঘুরতে লাগলো। তুলি বুঝে গেছে এত নিচে নামা তার পক্ষে সম্ভব না।

যতো যাই হোক আমি নিচে নামবোই নইলে কোনদিন না কোনদিন জিদের বশে আমাকেই মেরে দেয় উনি।

এসব ভাবতেই তুলি বারান্দার গ্রিল ধরে ডিঙিয়ে অপর পাশে অর্থাৎ রাস্তার দিকে বেরিয়ে যায়।
হঠাৎ ই মনে তুলির কাছে মনে হচ্ছে তুলি গ্রিলের কিনারে না যেনো কোনো সুই জাতীয় কিছুর উপর দাঁড়িয়েছে।
আর তখনি পায়ের ব্যাথায় হাত ফসকে পড়ে যেতে নিলে বারান্দার গ্রিলের শেষ প্রান্ত ধরে ফেলে আর ওই অবস্থায়ই ঝুলে থাকে।
তুলির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিচের দিকে তাকাতেই তুলির মাথা ঘুরতে শুরু করে।

ভাইয়াআআআ কোথায় তুমি। ভাইয়া….. ভাইয়া…..

তিয়াশের হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় বারান্দার দিকে তাকাতেই দেখে তুলি নেই। আর ভাইয়া ভাইয়া বলে কেউ চেচাচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ভালো করে দেখার জন্য লাইট জ্বালিয়ে বারান্দার দিকে যায়। তখন আবার শুনতে পায়

তিয়াশ কই তুই। আমি মারা গেলে তোর নামে মামলা করবো বজ্জাত ছেলে আজ তোর জন্য আমার এ অবস্থা। তিয়াশ…..

তিয়াশ তাড়াতাড়ি করে বারান্দা খুলে তুলি কে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও দেখলো না। তখনি আবার শুনতে পায় ভাইয়া তুমি এসেছো আমাকে বাঁচাও…

তুলি তুই কোথায়? ভূত হয়ে গেলি নাকি? নাকি মিস্টার ইন্ডিয়া হয়ে গেলি থুক্কু মিসেস ইন্ডিয়া হয়ে গেলি?

ভাইয়া আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি প্লিজ তাড়াতাড়ি বাঁচাও আর আমার হাত ও কেটে যাচ্ছে গ্রিলের এই পাশে তারকাটা গাথা পুরো লাইনে।

তিয়াশ নিচে তাকাতেই দেখলো সত্যি সত্যিই এই অবস্থা আর তুলি কে উঠাতে গেলে হাতে তো আরো ঢুকে যাবে আর ওই তারকাটার উপর ভর দিয়ে উঠতে হবে।

অর্থাৎ তুলি কে তিয়াশ উপরে তোলার সময়ে পায়ের নিচে পেরেক ঢুকে যাবে।
হোটেল টা নতুন হওয়ায় উপরের দিকে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি।

তিয়াশ তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতরে চলে।

ভাইয়া কোথায় গেলি।কান্না করতে করতে বললো কথাটা তুলি।
তুলির কান্না মাখা ডাক শুনে আবার ছুটে গেলো তুলির কাছে।
তারপর তুলির কাছে এসে বললো তুই এখানে কি করছিস?
তোর তো বারান্দার ওই সাইডে যাওয়ার ই কথা না। সত্যি করে বল কি করছিলি? পালিয়ে যেতে চেয়েছিলি?
তিয়াশ অসম্ভব রেগে আছে তা ওর কথা শুনেই বুঝলো তুলি।

তুলি জানে এখন তুলি সত্যিটা বললে তিয়াশ ওকে সত্যি সত্যিই নিচে ফেলে দিবে তার হাত ছুটিয়ে।

তাই তুলি কান্না করতে করতেই বললো আমি কেনো পালাবো। আমি পালাতে চাইনি। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম চোখ খুলে দেখি আমি এই জাগায় ঝুলছি।

এমন মার মারবো মিথ্যা বলা ছুটে যাবে।
ধমকের সাথে কথাটা বলতেই তুলি কেঁপে উঠলো তুলি।

আর হবে না ভাইয়া এবারের মতো মাফ করে দাও। আমার খুব ভয় করছে আমাকে উঠাও না প্লিজ।

তখনি তিয়াশ নিচের দিকে ঝুকে বললো হুমম নিচ টা অনেক গভীর তুই পড়লে সাথে সাথে তোর গল্প এখানেই শেষ। আর তোর মতো মেয়ে বেঁচে থেকেই বা কি করবে।
এই কথা শুনে তুলির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

তারপর দাড়িয়ে হাত ভাজ করে তিয়াশ বললো,
তোকে যদি আজ মেরে দেই তো কেমন হবে?

প্রথম কথাটা ঠিক ভাবে বললেও পরক্ষণেই নিচে বসে লাল চোখ নিয়ে রাগী গলায় বললো,
পালাতে চেয়েছিলি না? তারপর গিয়ে নীরব কে বিয়ে করে নিতি বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো রাগ কমানোর জন্য।
আমার থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলি তাই তো? চেঁচিয়ে বলে উঠলো তিয়াশ।

তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
ঠিক আছে তোর ইচ্ছে টা আমি ই পূরণ করে দিচ্ছি, বলেই তিয়াশ তুলির হাত ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

ভাইয়া আমার সাথে এমন করো না। নিচে পড়ে গেলে আমি ম*রে যাবো।
তুলির কান্না কিছুতেই থামছে না।

তুলি অনেক মিনতি করছে তিয়াশ কে। কিন্তু তুলির কোনো মিনতিই যেনো এই মুহুর্তে তিয়াশের কানে পৌঁছাচ্ছে না।

উল্টো তিয়াশ তুলির প্রতি বিরক্ত হয়ে জোর করে তুলির হাত ছুটিয়ে নিচে ফেলে দিলো।

ভাইয়া….

চলবে….

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৭
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

আজ দুদিন পর তুলি হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়েছে। এখন তুলি কে হোটেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
বেশি উপর থেকে পরার কারণে ভয়ে দুইদিন অজ্ঞান ছিলো। এর মধ্যে হোটেলের ম্যানেজার এসে তুলির সাথে দেখা করতে এসেছেন।
আপনি সেদিন না থাকলে আমি সেখানেই পরে মা*রা যেতাম।
আমরা সময় মতো সবটা করতে পেরেছি। নয়তো কি হতো আমরাও জানতাম না।

সকালে তিয়াশ তুলি কে ওষুধ দিতে দিতে বললো অনেক জরুরী কাজ পরে গেছে নাহলে যেতাম না। আমি সব কিছু তোর সামনে রেখে যাচ্ছি আর মহিলা গার্ড এসে তোর খাবার দিয়ে যাবে সময় মতো। আর তাকে তোর দেখভালের জন্য রেখে যাচ্ছি। প্রয়োজন ছাড়া বিছানা থেকে নামবি না একদম। বলেই তুলির কপালে কিস করে।
তিয়াশের স্পর্শ তুলির সহ্য হচ্ছে না। মুখেও কিছু বলতে পারছে না।
তারপর তিয়াশ চলে যায়।

তিয়াশ যাওয়ার বিশ মিনিট পরেই তুলির রুমের বাইরের গার্ড এসে তুলির কাছে পারমিশন চায় কাউকে ভিতরে প্রবেশ করানোর।
তুলি কে এসেছে জানতে চাইলে তখনি এক প্রকার জোর করে গার্ড দের সরিয়ে তুলির রুমে ঢুকে পড়ে তারা।

বাবা নীরব তোমরা?
মহিলা গার্ড টি তিয়াশ কে ফোন করতে চাইলে তুলি আটকে দেয়। আর গার্ড দের চলে যেতে বলে। তারা না যাইতে চাইলেও জোর করে তুলি তাদের কে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।

আমরা তোকে নিতে এসেছি। আর হোটেল ম্যানেজারের থেকে আমরা সব কিছুই জেনে এসেছি। তার পরেও তুই তিয়াশের সাথে থাকতে চাস বল?

থাকতে না চাইলেও আমি তিয়াশকেই ভালোবাসি।

বাহ ভাইয়া থেকে এখন সোজা নাম ধরে ডাকছো!

এখন সে আমার স্বামী হয় নীরব ভাইয়া ভুলে যাবেন না প্লিজ।

এসব কথা বাদ দে মা। এখন আমাদের সাথে দেশে ফিরে চল।

তিয়াশ আসুক এক সাথে নাহয় যাবো। তোমরা বসো।

না মা তুই এখনি চল তোর মায়ের শরীর খুব খারাপ তোর কথা বলছে শুধু। পরে নাহয় তিয়াশ চলে আসবে।

তিয়াশ এলেই আমরা যাবো আব্বু। নাহলে আবার কি কান্ড করবে কে জানে।

তখনি তুলির আব্বু তুলির আম্মুকে কল দিয়ে তুলির কাছে দেয়।
মারে আমি খুব অসুস্থ জানি না কতক্ষণ বাচবো। আয় না মা একটি বার দেখা করে যা আমার সাথে।

কি হয়েছে তোমার আম্মু? তুমি ঠিক আছো তো? কন্ঠ শুনে তো মনে হচ্ছে তুমি খুব অসুস্থ।

হেরে মা তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। বলেই তুলির আম্মু জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকেন। আর কল কেটে দেন।

তুলি তার বাবাকে ফোন দিয়ে দেয়। আর চিন্তা করতে থাকে।
তখনি তুলির বাবা বলে উঠেন তুই তাড়াতাড়ি চল আমাদের সাথে বলেই হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন।
গার্ড রা আটকাতে চাইলে নীরব তাদের দূরে নিয়ে বলে তারা মার্কেটে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসবে তাই তিয়াশ কে জানানোর দরকার নেই। তাই তারাও আর এই ছোটো ব্যপার টা তিয়াশ কে জানায় নি।


বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতে লাগলো। তিয়াশের ও আসার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তুলি এখনো ফিরেনি দেখে গার্ড রা ভয় পেতে লাগলো। তবুও তারা অপেক্ষা করতে লাগলো তুলির জন্য। কিন্তু তুলি আর ফিরলো না। ফিরলো তিয়াশ। আর হাতে একটা উপহারের বাক্স।

তিয়াশ রুমে ঢুকেই বিছানা খালি দেখে ভাবলো তুলি হয়তো ওয়াশ রুমে আছে তাই তুলি কে ডাকতে ডাকতে বললো বের হয়ে দেখ তোর জন্য কি এনেছি। দেখলে খুশি হয়ে যাবি। আর সেই খুশিতে নাচতে মন চাইবে।
ক্লাস নাইনে থাকতে আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছিলি মনে আছে? কিন্তু তখন কাজ করতাম না আর বাবার টাকা দিয়ে তোকে দিতে চাইনি তাই তখন থেকেই কলেজে রাজনীতি.. আর কিছু বললো না তিয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বললো আর কতক্ষণ ওইখানে থাকবি। সারাজীবন থাকার প্ল্যান করলি নাকি ওখানে। বের হ। বলতে বলতে টাই ঢিলা করছে।

এদিকে তিয়াশ তুলি কে ডাকছে আর ওদিকে গার্ড রা ভয়ে ঘেমে শেষ।

তুলি এখনো বের ও হচ্ছে না আবার সাড়া ও দিচ্ছে না তাই তিয়াশ ওয়াশ রুমের দরজা খুলে ভিতরে দেখলো অন্ধকার। আর তুলি যে অন্ধকারে থাকবে না এইটা তিয়াশ খুব ভালো করেই জানে। তাও মনের শান্তির জন্য লাইট জ্বালিয়ে ভিতরে দেখে নিলো। কিন্তু ভিতরে কেউ নেই।
বারান্দায় গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।

তুলি কে না পেয়ে তিয়াশের চোখ এমনিতেই লাল বর্ন ধারণ করেছে।
তিয়াশ গিয়ে গার্ড দের সামনে দাঁড়াতেই তাদের কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। তা দেখে তিয়াশ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে গার্ড দের দিকে তাকালো। আর বললো তুলি কোথায়?

তাদের চুপ দেখে এবার তিয়াশ খুব চেঁচিয়ে বলে উঠলো হোয়াই আর ইউ অল সাইলেন্ট ডেম ইট!

তারা এখনো চুপ আছে দেখে তিয়াশ নিজের পি*স্তল বের করে তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ঠেকায় আর সাথে সাথে ভয়ে বলে উঠে ম্যামের বাবা এসেছিলো আর তার সাথে মার্কেটে যাবে বলে বেরিয়েছে। আমরা আপনাকে কল করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার বাবা না করে তাই আর করিনি। এইটুকু বলেই থামলো লোকটি।

তিয়াশ কিছু একটা ভেবে সোফায় বসে ল্যাপটপ অন করলো আর ভিডিও চালু করলো কিছু একটার। যেটাতে তুলির সকাল থেকে দুপুর অব্দি যা যা করেছে সব কিছুই দেখতে পারছে।
তিয়াশ ঘরে তুলির সেফটির জন্যে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলো আর তাতেই সব দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু শুনতে পাচ্ছে না। কারণ সকালেই তুলি পানি ফেলে দিয়েছিলো ল্যাপটপে যার কারণে সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। তিয়াশের রাগ আরো দশ গুণ বেড়ে গেলো।

ল্যাপটপে চোখ দিতেই দেখলো তুলির বাবার সাথে নীরব ও আছে। ব্যস অমনি ল্যাপটপ ছুড়ে ফেলে দিলো। আর যা বুঝার বুঝে গেছে।


আম্মু আম্মু… কোথায় তুমি বলতে বলতে তুলি তুলির মায়ের ঘরের দিকে যেতে লাগলো।
তুলি তাদের আগের বাসায় এসেছে।
তুলি তার মায়ের ঘরে গিয়ে যা দেখলো তাতে অবাক না হয়ে পারলো না।
তুলির মা খোস মেজাজেই নীরবের মায়ের সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
তুলি তার মাকে বললো তুমি তো ভালোই আছো তাহলে আমায় মিথ্যে বললে কেনো আম্মু।

তুলির আম্মু আমতা আমতা করে বললো আমি ভালো নেই রে মা বলেই ঘরে ঢুকে বিছানায় বসলেন অসুস্থতার ভান করে।

আমি যা বুঝার বুঝে গেছি আম্মু। তোমাকে আর কষ্ট করে অভিনয় করতে হবে না। আর বাবা শেষমেশ তুমিও।

তুলির বাবা বললো বুঝে যখন গেছিস তাহলে আর লুকিয়ে লাভ কি।
তোর সাথে নীরবের বিয়ে দিতে নিয়ে এসেছি আমরা।

তিয়াশের সাথে আমার ডিভোর্স না হলে বিয়ে কিভাবে দিবে বাবা। আর সে যে আমায় ডিভোর্স দিবে না তা খুব ভালো করেই জানো।

যাতে দিতে বাধ্য হয় সেই ব্যবস্থাই করবো।

তিয়াশ দিলেও আমি দিবো না বলেই বাইরে চলে যেতে নেয় আর তখনি তুলির বাবা তুলির হাত ধরে ঘরে আটকে রেখে চলে যায়।

তুলি রাগে দুঃখে চুপচাপ বসে থাকে। মনে মনে ভাবে সে তো আমার কথা ভাবেনি ফেলে দিয়েছিলো আমাকে। তখন নিচের লোকেরা ব্যবস্থা না করলে তো আমি মাটিতে পড়তাম। আর মা*রা যে যেতাম না তার নিশ্চয়তা ছিলো না। তাহলে তার জন্যই মনটা ছটফট কেনো করছে। তাকে তো আমি ঘৃণা করি। তাহলে এখন তার প্রতি ঘৃণা টা আসছে না কেনো?
ভালোবাসি বলে কি এখনো তাকে ঘৃণা করতে পারছি না?

এসব ভাবতে ভাবতেই কাঁদতে কাঁদতে তুলি সেই অবস্থা তেই ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম ভাঙলে দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজা খোলা তাই তুলি ও ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে নামতে নামতে দেখলো তুলির বাবা কারো সাথে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে উকিল হবে হয়তো।

ওইতো তুলি মা এসে গেছে। আয় মা বোস।
তুলি তার বাবার কাছে গিয়ে বসতেই তুলির বাবা তুলির হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে এখানে সাইন করে দেতো মা।

তুলি ভালো করে পড়ে দেখলো ওটা ডিভোর্স পেপার। তা দেখে তুলি রেগে গিয়ে বললো আমি ওনাকে ভালোবাসি ডিভোর্স কেনো দিবো।

তখনি তুলির মা তুলির সামনে ছুরি নিয়ে এসে নিজের গলায় ধরে বললো তুই সই না করলে আজ আমি এখনি তোর সামনে নিজেকে শেষ করে দিবো তুলি।

তুলি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে অসহায় হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কাগজ টা হাতে নিয়ে সই করতে নিবে তখনি কেউ ঝড়ের গতিতে এসে তুলি কে চড় বসিয়ে দেয়। তুলি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়।

আর তখনি তুলি কে নিচ থেকে তুলে বলে উঠলো আজ তোকে মেরেই ফেলবো আমি বলে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে এনে গাড়িতে বসিয়ে রওনা দেয়।
অন্য বিশাল বড় একটি বাড়িতে এনে শিড়ি দিয়ে তুলির চুল টানতে টানতে নিয়ে একটি ঘরে ফেলে নিজের কোমরের বেল্ট খুলে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।
এক সময় তুলি অজ্ঞান হয়ে গেলে মাটিতে বেল্ট ফেলে দিয়ে বাইরে চলে যায় গেট আটকে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে