ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
1120

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৬
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

ছুরি দেখে তুলি বুঝতে পারলো ওর সাথে এখন খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
তুলির এই অবস্থা দেখে তিয়াশ হালকা হাসলো। তারপর তুলির মুখের সামনে ছুরি ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ করেই তুলির হাতে ছুরি টা ধরিয়ে নিজের বা হাতের তালুতে একটা টান দিলো তিয়াশ। সাথে সাথেই গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো তিয়াশের হাত বেয়ে।
কি হলো কিছু বুঝতে না পেরে তুলি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো তিয়াশের দিকে। তুলি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ক্ষত টা বেশ ভালো ভাবেই হয়েছে।

হুশ ফিরতেই তুলি আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠলো পাগল হয়েছেন আপনি। কি করলেন এটা।

তিয়াশ তুলির গালে আলতো ভাবে ধরে বললো চিন্তা করিস না এতো সহজে মরবো না।
তারপর করুন ভাবে বললো দেখো না দেখো আমার হাত কেটেছে কিছু করবে না?
নীরবের সময় তো ওর পাশে গিয়ে বসে ছিলে। ও.. ভুলেই গিয়েছিলাম তুই তো নীরব কে ভালোবাসিস।
বলেই অট্টোহাসি তে মেতে উঠলো তিয়াশ।

তুলির কাছে তিয়াশ কে মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না তাও তুলি সাহস দেখিয়ে বললো সরুন দেখি গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা কোথায়। হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে। বলেই উঠে চলে গেলো তুলি।

বক্স এনে হাতে তুলো দিয়ে ভালোভাবে জায়গা টা পরিষ্কার করে নিলো তারপর ওষুধ লাগিয়ে সুন্দর ভাবে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
একটা জ্বরের ওষুধ আর ব্যথার ওষুধ ও খাইয়ে দিলো জোর করে। তারপর শুয়ে পড়তে বললো তুলি। কারণ তারা সন্ধ্যায় বাইরে খেয়েছিলো।

পাশে বসেই তুলি দেখতে লাগলো ব্যান্ডেজ টা ঠিক ভাবে বাধা হয়েছে কিনা। তখনি হঠাৎ করে তিয়াশ উঠে তুলি কে বারান্দায় নিয়ে রেখে এসে ভিতর দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
তুলি হাজার বার বলার পরেও কোনো কথা কানে নিলো না তিয়াশ। উলটে বলে উঠলো আর একবার যদি তোর আওয়াজ পাই তাহলে এখান থেকেই নিচে ফেলে দিবো তোকে বেয়াদব মেয়ে। বলেই বারান্দার লাইট ও অফ করে দিলো।

তিয়াশ জানে তুলি অন্ধকারে ভয় পায় তাই ইচ্ছে করেই লাইট অফ করে দেয়। কিন্তু অপর পাশ থেকে আর আওয়াজ আসছে না দেখে তিয়াশ পিছে ফিরে দেখে মহারানি মনের সুখে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। আর নখ কামড়ে কিছু একটা ভাবছে।

দরজা গ্লাসের হওয়ায় এই পাশ থেকে ওই পাশ ভালোভাবেই দেখা যায় সবকিছু তাই ঘরের আলো ও বারান্দায় যাচ্ছে, তা দেখে তিয়াশ ঘরের লাইট ও অফ করে দিলো।
তুলি আবার কান্না কাটি শুরু করে দিলো। তুলির কান্নার আওয়াজ শুনে তিয়াশ যেনো অনেক খুশি হয়েছে তা দেখে যে কেউ বলে দিবে।

রাত দুটো পঁচিশ বাজে। তুলির চোখে ঘুম নেই।
তুলি মনে মনে ভাবছে চাঁদের আলো থাকায় আজ বেঁচে গেলাম। নয়তো ভয়ে আজকেই শেষ হয়ে যেতাম।
কিন্তু ওনার সাথে আমি আর থাকবো না। আব্বু আম্মু কোথায় তোমরা বলেই আবার কাঁদতে লাগলো তুলি।

হটাৎ করেই তুলির মাথায় আইডিয়া আসে।
আর তুলি মনে মনে বললো এখান দিয়ে পাইপ বেয়ে বেয়ে যদি নিচে নামতে পারি তাহলেই তো হলো।
আর সন্ধ্যায় তো ওনার ফোন থেকে নাম্বার টাও মুখস্ত করে নিয়েছিলাম। কিন্তু নাম্বার টা কার ছিলো? বাবার তো ছিলো না এটা সিওর।
কারণ বাবার ফোন চুরি হওয়ায় বাবা আর আগের সিম কার্ড উঠায়নি কাগজ পত্র না থাকায়। নতুন সিম কার্ড কিনেছিলো আর ওই নাম্বার আমি মুখস্ত করিনি। আমার ফোনে সেভ করে রেখেছিলাম। আর আমার ফোন টা তো ওই বাড়িতেই রয়ে গেছে।

যাই হোক আগে এখান থেকে নামি তারপর কারো কাছ থেকে ফোন নিয়ে ওই নাম্বারে কল দিয়ে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলবো।

তুলি বোকার মতো এতকিছু মনে মনে ভেবে নিজেই নিজেকে বাহবা দিচ্ছে।
তুলি নামার জন্য নিচের দিকে তাকিয়েই জ্ঞান হারাবার মতো অবস্থা। ৭ তলার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে তুলির মাথা ঘুরতে লাগলো। তুলি বুঝে গেছে এত নিচে নামা তার পক্ষে সম্ভব না।

যতো যাই হোক আমি নিচে নামবোই নইলে কোনদিন না কোনদিন জিদের বশে আমাকেই মেরে দেয় উনি।

এসব ভাবতেই তুলি বারান্দার গ্রিল ধরে ডিঙিয়ে অপর পাশে অর্থাৎ রাস্তার দিকে বেরিয়ে যায়।
হঠাৎ ই মনে তুলির কাছে মনে হচ্ছে তুলি গ্রিলের কিনারে না যেনো কোনো সুই জাতীয় কিছুর উপর দাঁড়িয়েছে।
আর তখনি পায়ের ব্যাথায় হাত ফসকে পড়ে যেতে নিলে বারান্দার গ্রিলের শেষ প্রান্ত ধরে ফেলে আর ওই অবস্থায়ই ঝুলে থাকে।
তুলির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিচের দিকে তাকাতেই তুলির মাথা ঘুরতে শুরু করে।

ভাইয়াআআআ কোথায় তুমি। ভাইয়া….. ভাইয়া…..

তিয়াশের হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় বারান্দার দিকে তাকাতেই দেখে তুলি নেই। আর ভাইয়া ভাইয়া বলে কেউ চেচাচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ভালো করে দেখার জন্য লাইট জ্বালিয়ে বারান্দার দিকে যায়। তখন আবার শুনতে পায়

তিয়াশ কই তুই। আমি মারা গেলে তোর নামে মামলা করবো বজ্জাত ছেলে আজ তোর জন্য আমার এ অবস্থা। তিয়াশ…..

তিয়াশ তাড়াতাড়ি করে বারান্দা খুলে তুলি কে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও দেখলো না। তখনি আবার শুনতে পায় ভাইয়া তুমি এসেছো আমাকে বাঁচাও…

তুলি তুই কোথায়? ভূত হয়ে গেলি নাকি? নাকি মিস্টার ইন্ডিয়া হয়ে গেলি থুক্কু মিসেস ইন্ডিয়া হয়ে গেলি?

ভাইয়া আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি প্লিজ তাড়াতাড়ি বাঁচাও আর আমার হাত ও কেটে যাচ্ছে গ্রিলের এই পাশে তারকাটা গাথা পুরো লাইনে।

তিয়াশ নিচে তাকাতেই দেখলো সত্যি সত্যিই এই অবস্থা আর তুলি কে উঠাতে গেলে হাতে তো আরো ঢুকে যাবে আর ওই তারকাটার উপর ভর দিয়ে উঠতে হবে।

অর্থাৎ তুলি কে তিয়াশ উপরে তোলার সময়ে পায়ের নিচে পেরেক ঢুকে যাবে।
হোটেল টা নতুন হওয়ায় উপরের দিকে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি।

তিয়াশ তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতরে চলে।

ভাইয়া কোথায় গেলি।কান্না করতে করতে বললো কথাটা তুলি।
তুলির কান্না মাখা ডাক শুনে আবার ছুটে গেলো তুলির কাছে।
তারপর তুলির কাছে এসে বললো তুই এখানে কি করছিস?
তোর তো বারান্দার ওই সাইডে যাওয়ার ই কথা না। সত্যি করে বল কি করছিলি? পালিয়ে যেতে চেয়েছিলি?
তিয়াশ অসম্ভব রেগে আছে তা ওর কথা শুনেই বুঝলো তুলি।

তুলি জানে এখন তুলি সত্যিটা বললে তিয়াশ ওকে সত্যি সত্যিই নিচে ফেলে দিবে তার হাত ছুটিয়ে।

তাই তুলি কান্না করতে করতেই বললো আমি কেনো পালাবো। আমি পালাতে চাইনি। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম চোখ খুলে দেখি আমি এই জাগায় ঝুলছি।

এমন মার মারবো মিথ্যা বলা ছুটে যাবে।
ধমকের সাথে কথাটা বলতেই তুলি কেঁপে উঠলো তুলি।

আর হবে না ভাইয়া এবারের মতো মাফ করে দাও। আমার খুব ভয় করছে আমাকে উঠাও না প্লিজ।

তখনি তিয়াশ নিচের দিকে ঝুকে বললো হুমম নিচ টা অনেক গভীর তুই পড়লে সাথে সাথে তোর গল্প এখানেই শেষ। আর তোর মতো মেয়ে বেঁচে থেকেই বা কি করবে।
এই কথা শুনে তুলির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

তারপর দাড়িয়ে হাত ভাজ করে তিয়াশ বললো,
তোকে যদি আজ মেরে দেই তো কেমন হবে?

প্রথম কথাটা ঠিক ভাবে বললেও পরক্ষণেই নিচে বসে লাল চোখ নিয়ে রাগী গলায় বললো,
পালাতে চেয়েছিলি না? তারপর গিয়ে নীরব কে বিয়ে করে নিতি বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো রাগ কমানোর জন্য।
আমার থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলি তাই তো? চেঁচিয়ে বলে উঠলো তিয়াশ।

তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
ঠিক আছে তোর ইচ্ছে টা আমি ই পূরণ করে দিচ্ছি, বলেই তিয়াশ তুলির হাত ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

ভাইয়া আমার সাথে এমন করো না। নিচে পড়ে গেলে আমি ম*রে যাবো।
তুলির কান্না কিছুতেই থামছে না।

তুলি অনেক মিনতি করছে তিয়াশ কে। কিন্তু তুলির কোনো মিনতিই যেনো এই মুহুর্তে তিয়াশের কানে পৌঁছাচ্ছে না।

উল্টো তিয়াশ তুলির প্রতি বিরক্ত হয়ে জোর করে তুলির হাত ছুটিয়ে নিচে ফেলে দিলো।

ভাইয়া….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে