#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৪
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
তিয়াশ বিকালের দিকে ঘুম থেকে জেগে যায়। তুলি এখনো ঘুমাচ্ছে। শরীর দুর্বল তাই।
তুলি কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অনেকক্ষণ তুলির দিকে তাকিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
তিয়াশ তুলির গলায় হাতে লক্ষ্য করতেই দেখলো রক্ত বেরিয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে। তখনি তিয়াশের মনে পড়ে, গাড়িতে তিয়াশ নিজেই টেনে টেনে খুলেছিলো তুলির গায়ের গহনা। মনে পড়তেই সেই জায়গা গুলোতে ঠোঁট ছুয়ে দেয় তিয়াশ।
তুলি কে না জাগিয়ে নিজে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো তিয়াশ।
তখনি তিয়াশের ফোনে মেসন্জারে একটা ভিডিও মেসেজ আসে আর তা ওপেন করতেই দেখে তুলি হাসপাতালে নীরবের হাত ধরে বসে রয়েছে আর নীরব কিছু একটা বলছে।
তিয়াশের রাগ মুহুর্তেই চরমে পৌঁছে গেলো। কে মেসেজ টা পাঠিয়েছে তা জানার জন্য সেই ব্যক্তির আইডি তে ঢুকতে গিয়ে দেখে অজানা ব্যক্তিটি তিয়াশ কে ব্লক করে দিয়েছে বা আইডি ডিলিট করে দিয়েছে।
অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তুলির দিকে চেয়ে আছে তিয়াশ। মূহুর্তেই হাতে পানি ভর্তি জগ নিয়ে তুলির উপর ছুড়ে মারলো।
তুলি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে উঠেই দেখলো তিয়াশের হাতে পানির জগ এবং তা খালি তা দেখেই তুলি বুঝতে পারলো কাজ টা তিয়াশ করেছে। এবার আর তুলি চুপ থাকতে পাড়লো না।
চেঁচিয়ে বলে উঠলো সমস্যা কি তোর? আমি ঘুমাতে চেয়েছিলাম? জোর করে ঘুম পারালি আবার নিজের ইচ্ছা হয়েছে তাই পানি মেরে উঠাবি। বিয়ে করতে চেয়েছিলাম তোকে? করলি কেনো বিয়ে। জোর করে বিয়ে করলে বউকে খুশিতে রাখতে হয় জানিস না? যখন যেভাবে খুশি কষ্ট দিচ্ছিস। মানুষ মনে হয় না আমাকে? আফ্রিকার জঙ্গলের হনুমান কোথাকার।
চোখ বুজে এক নাগারে কথা গুলো বলেই থেমে গেলো তুলি। যখন মনে পড়লো কার সামনে কি বলছে তখন পিট পিট করে তাকাতেই দেখে তিয়াশ স্বাভাবিক ভাবেই দাড়িয়ে আছে। তিয়াশের মাঝে কোনো প্রকার রাগ দেখতে পাচ্ছে না তুলি।
তিয়াশ কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে।
তিয়াশ রুমে ফিরে দেখলো তুলি এখনো সেই ভাবেই বসে আছে। তাই তিয়াশ তুলি কে বললো ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার বাড়ছি বলেই প্যাকেট থেকে একে একে খাবার বের করতে লাগলো তিয়াশ।
তুলি মনে মনে ভাবছে বেটার হলো কি। তখন অতো কিছু বললাম কিছু বললো না আবার এখন এসে তুমি তুমি করছে। ব্যপার টা কি।
তিয়াশ তুলির দিকে তাকিয়ে দেখলো তুলি তিয়াশের দিকে ছোটো ছোটো চোখ করে তাকিয়ে আছে।
তিয়াশ আবার তুলি কে বললো বউ যাচ্ছো না কেনো? নাকি আমি নিয়ে যাবো সেই আশায় আছো। তাহলে একটু অপেক্ষা করো আমি হাতের কাজটা শেষ করেই আসছি।
তুলি এই কথা শুনা মাত্র বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমে দৌড়।
তিয়াশ কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে বললো ভয় কাকে বলে এবার হারে হারে টের পাবি বউ।
একটু পর তুলি বের হয়ে এসে দেখে টেবিলে খাবার বারা। তিয়াশ তুলি কে বললো এসো বসো বলে তুলি কে হাত ধরে এনে চেয়ারে বসালো।
তুলি আজ তিয়াশের ব্যবহারে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।
আর মনে মনে বলছে, ভাইয়া আবার আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে আর কষ্ট দিবে না।
তুলি মনে মনে এ কথা ভাবতেই খুশিতে মনটা ভোরে গেলো তুলির।
তিয়াশ যত্ন করে খাবার বেড়ে দিলো আর খেতে বললো তুলি ও খাওয়া শুরু করলো। খাবারের মাঝে তিয়াশ বলে উঠলো খেয়ে তৈরি হয়ে নিও তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।
তুলি ও খুশি হয়ে বললো ঠিক আছে।
।
।
খাবার শেষে তুলি আর তিয়াশ তৈরি হয়ে নিলো বাইরে বেরোনোর জন্য।
তুলি কে দেখে তিয়াশ এক নজরে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো। নিল রঙের গাউন পড়েছে সাথে মেচিং হিজাব যা তিয়াশ তুলির জন্য কিনে এনেছে। আর মুখে হালকা সাজ।
অনেক জাগায় ঘুরাঘুরি করলো তুলি আর তিয়াশ আর অনেক রকম জিনিস ও কিনলো।
সন্ধ্যা প্রায় ৭:৪৫ বাজে। ওরা দুজন মিলে একটা বারে ঢুকলো। তুলি প্রথমে ভিতরে যেতে না চাইলেও তিয়াশ জোর করে বারের ভিতরে ঢুকালো তুলি কে। ভিতরে গিয়ে তিয়াশ আর তুলি একসাথে বসলো।
তুলির এখানে অস্বস্হি হচ্ছে দেখেও তিয়াশ না দেখার ভান করলো।
তুলি কে তিয়াশ বললো এতো ভয় পেলে চলবে এখানে যদি তোর সারাজীবন থাকতে হয় তখন কি করবি। বা কেউ তোকে এখান থেকে কিনে নিয়ে গেলো তখন কি করবি?
তুলি তিয়াশের কথার মানে বুঝলো না মনে মনে বললো কিনে নিবে আমায় মানে কি। আর এখানেই বা থাকতে হবে কেনো আজীবন। আর হোটেলে তো ভালোই ছিলো এখন তুই তুকারি করছে কেনো।
তুলি এসব ভেবে ভয়ে ভয়ে তিয়াশের দিকে তাকাতেই তিয়াশ হেসে বললো ড্রিংক করবি?
তুলি কে চুপ করে থাকতে দেখে তিয়াশ বললো তুই একটু বোস আমার একটা কাজ আছে বলেই উঠে চলে গেলো তুলির সামনে থেকে।
অনেকক্ষণ যাবার পরও দেখলো তিয়াশ আসছে না। এখন প্রায় রাত ৯ টার কাছাকাছি হতে চললো। তুলির কাছে ফোন ও নেই যে তিয়াশ কে একটা কল করবে আর তুলির তিয়াশের নাম্বার ও জানা নেই।
তখনি হঠাৎ একটা ছেলে এসে বললো, হেই বিউটিফুল! ইউ আর লুকিং সো গরজিয়াস। কেন ইউ ডান্স উইথ মি? বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো তুলির দিকে।
এদিকে তুলির খুব কান্না পাচ্ছে। তুলি ছেলেটাকে পাত্তা না দিয়ে উঠে গিয়ে একজনের কাছে জানতে চাইলো তার সাথে যে এসেছিল সে কোথায়।
সেই লোক বলে আমি দেখিনি। তখন অন্য আরেকজন বলে আমি দেখেছি। তখন তুলি সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে সেই ছেলে তো অনেক আগেই এখান থেকে চলে গেছে। প্রায় এক ঘন্টা হতে চললো।
তুলি বুঝে গেছে তিয়াশ ওকে ইচ্ছে করে এখানে রেখে চলে গেছে।
তুলি মনে মনে ভাবলো এর জন্যই এতো ভালো আচরণ করেছে বিকাল থেকে আমার সাথে। আর আমি বোকার মতো ভাইয়া কে বিশ্বাস করে গেছি মনে মনে বললো তুলি।
হঠাৎ করেই তুলি হাতে টান খেলো। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো কতগুলো মেয়ে তুলির হাত ধরে রেখেছে যেনো তুলির হাত ছাড়লেই এখনি তুলি পালিয়ে যাবে।
তুলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখে যেই ছেলেটি ওর সাথে কথা বলেছিলো সেই ছেলেটি মেয়েদের কিছু ইশারা করে বলছে।
তা দেখে তুলি মেয়েদের বললো, হাত ছাড়ুন আমার।
তখন ওই ছেলেটি বলে উঠলো।
ছাড়ার জন্য তো আটকানো হয় নি আপনাকে মিস তুলি। অনেক টাকা দিয়ে কিনেছি আপনাকে।
ছেলেটি আবার মেয়ে গুলোকে ইশারা করতেই মেয়ে গুলো তুলির চোখ মুখ হাত বেঁধে নিয়ে যায় গাড়িতে। আর প্রাইভেট কার টিও কোথাও যাওয়ার জন্য রওনা হয়।
তুলি মনে মনে ভাবছে ছেলেটি তো বাংলায় কথা বললো। তারমানে তিয়াশ ভাইয়া আমাকে এর কাছেই বেঁচে দিয়েছে ভাবতেই তুলির ঘৃণা জন্মালো তিয়াশের প্রতি।
চলবে…
#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৫
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
হঠাৎ গাড়ি থামলো বলে মনে হলো তুলির কাছে। মেয়ে গুলো ওর পাশ থেকে এক এক করে সরে যাচ্ছে তাও বুঝতে পারছে তুলি। কিন্তু চাইলেও চোখ খুলে দেখতে পারছে না কোথায় আসলো সে।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অনুভব করলো কেউ তার মুখের বাঁধন খুলে দিচ্ছে। কিন্তু চোখের বাঁধন এখনো খুলছে না তাই তুলি নরাচরা করা শুরু করলো আর বলতে লাগলো কে সামনে? কথা বলছেন না কেনো? কোথায় নিয়ে এসেছেন আমায়?
অপর পাশের লোকটি তুলির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তুলি কে গাড়ি থেকে নামালো আর কোথাও একটা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু তুলি এক পাও হাঁটতে নারাজ। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা তার।
তুলির এই বাচ্চামো স্বভাব দেখে অপর পাশের লোকটি হেসে দিয়ে তুলি কে কোলে তুলে নিলো। তারপর অনেকটা সময় ধরে হেঁটে এক জাগায় নামিয়ে দিলো। আর তুলি কে নামিয়ে দিয়েই হাত খুলে দিয়ে চোখ ও খুলে দিলো।
তুলি অনেকক্ষণ পর চোখ খোলা পেয়ে ভালো করে চোখ ডলে নিলো তারপর সামনে তাকাতেই দেখতে পায় ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে মাটিতে লেখা হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ।
তুলি মনে মনে ভাবছে আজ তো আমারো জন্মদিন আমার মনেই ছিলোনা। কিন্তু এসব কে করলো? কার জন্য এসব।
হ্যা আজ তুলির জন্মদিন আর তুলির সে কথা মনেই নেই।
তুলি পিছে তাকাতেই দেখে কেউ নেই তাই আবার সামনে তাকায় আর সামনে তাকাতেই দেখে তিয়াশ এক হাঁটু ভাঁজ করে গোলাপ ফুল নিয়ে বসে আছে তুলির দিকে তাকিয়ে।
তুলির হুশ ফিরতেই তিয়াশ বলে উঠলো আই লাভ ইউ তুলি।
তুলি ফুল ও নিচ্ছে না আবার কিছু বলছে ও না। তুলির কাছে মনে হচ্ছে ও যেনো কোনো ভয়ংকর সুন্দর স্বপ্ন দেখছে। যা ও সবসময় কল্পনা করতো।
তিয়াশ আবারো বলে উঠলো অনেক অনেক অনেকক ভালোবাসি তোমায় তুলি।
তুলি মনে মনে বললো ভাইয়া আমায় ভালোবাসে। আমার উপর আর রেগে নেই।
তুলির খুশির আজ যেনো কোনো বাঁধ মানছে না।
কিন্তু মনে মনে ভয় ও পাচ্ছে ভাবছে এটা আবার নতুন কোনো সূচনা নয়তো আমাকে কে কষ্ট দেওয়ার।
তিয়াশের থেকে গোলাপ ফুল নিতে গিয়েও নিলো না তুলি।
তিয়াশ রাগতে গিয়েও রাগলো না উঠে দাড়িয়ে তুলির হাতে জোর করে ফুল টা ধরিয়ে দিলো।
তুলি এখনো তিয়াশ কে ভয় পাচ্ছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
তা দেখে তিয়াশ বললো কাঁদছিস কেনো আমি আছি তো।
তুলি কাঁদতে কাঁদতে বললো আপনি আছেন বলেই তো আমার এতো ভয়। আমাকে তো বেঁচে দিয়েছিলেন।
তুলি কথাটা বলা মাত্রই পেছন থেকে একজন বলে উঠলো দেখেছিস তিয়াশ ভাবি আমাকে ভুল বুঝছে। সব তোর জন্য হয়েছে সা*লা।
তিয়াশ বললো তুলি কে বুঝিয়ে বলছি দারা।
না আমি বলছি তোকে আর কিছু বলতে হবে না। এমনিতেই আমার ক্যারেক্টারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস তুই ভাবির সামনে বলেই লোকটি বলতে শুরু করলো আমি রক্তিম তিয়াশের কলেজ ফ্রেন্ড। আর সৌভাগ্যবশত এখন আমরা দুজনেই সফল বিজনেসম্যান। কিন্তু এখনো তিয়াশের লেভেলে পৌছাতে পারিনি। আমার অফিস এখানেই আর আমাকে কিছু অর্ডার দেওয়ার জন্যই তিয়াশ এখানে আসে। আমিই তিয়াশের কাছে যেতাম কিন্তু ও বললো ওর হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেছে আর এই কাজের সুবাদে বউ কেও বিদেশ ঘুরিয়ে নিবে তাই তিয়াশ নিজেই চলে এলো আপনাকে নিয়ে। আর বারে যা যা হয়েছে তা সব তিয়াশের প্ল্যান।যাতে এইটুকু সময়ের মধ্যে আপনাকে কিভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া যায় তার প্ল্যান করতে পারে আর সে তাই ই করছিলো। আমি শুধু সাহায্য করেছি মাত্র। আর হে তিয়াশের লোক আপনার আশে পাশেই ছিলো সারাক্ষণ। তাই চাইলেও আপনার ক্ষতি কেউ করতে পারতো না ভাবি।
আমার কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেলে নিজের ভাই মনে করে মাফ করে দিবেন।
এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলো রক্তিম।
আর এইমূহুর্তে সব কথাই যেনো তুলির মাথার দশ হাত উপর দিয়ে গেলো।কিন্তু তুলি এইটুকু বুঝতে পারলো যে তিয়াশ তাকে বেঁচে দেয়নি ভেবেই মনে শান্তি পেলো।
রক্তিম তিয়াশ কে বললো তোর বউ তুই রাখ আমি গেলাম। আমার এখন আবার আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যেতে হবে।
তিয়াশ বললো কেক খেয়ে যা।
নারে অনেকটা লেট হয়ে গেছে তোরা থাক আমি অন্য একদিন তোদের বাসায় গিয়ে পেট পুরে খেয়ে আসবো নে। বলেই রক্তিম চলে গেলো ওদের বিদায় জানিয়ে।
রক্তিম চলে যেতেই তিয়াশের ফোনে কল আসলো আর কেউ একজন বলে উঠলো যা যা তুলি কে বললে একটু আগে, সেই সব কথা গুলো মিথ্যে এটা বলো তুলি কে। নয়তো আমার বন্দুকের নিশানা তোমার তুলির দিকে তাক করা আছে আর তা সোজা ওর মাথায় ঢুকে যাবে। বলেই কল কেটে দিলো অপর পাশের লোকটি।
তিয়াশ সব দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো কেউ নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো গাছের পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। তিয়াশের মনে তুলি কে হারাবার ভয় ঢুকতে শুরু করলো। এই মুহূর্তে তুলি কে নিয়ে কোনো রকমের রিস্ক নিতে চায় না তিয়াশ।
কিভাবে তুলি কে এসব যা বলেছে সব মিথ্যে। কিছুক্ষন ভেবেই তিয়াশ পকেট থেকে আবার ফোন বের করে কাউকে কল দিলো আর তুলির কাছে দিয়ে বললো কথা বল।
আর একটা কথা শুনে রাখ তোর আজকে জন্মদিন তাই ভালো ভাবে কথা বলছি আর তোকে যে প্রোপোজ করলাম সেইটাও রক্তিমের কোথায় বুঝলি। কারণ ও তো জানে এক সময় তোকে ভালোবাসতাম তাই তোকে আজকের দিনে সারপ্রাইজ দিতে বললো। এতদিনের বন্ধুত্ব তাই আর ওর মুখের উপর না করতে পারিনি।
কথাটা শুনে মূহুর্তেই তুলির চোখে হাজারো অশ্রুকনা এসে হাজির হলো।
ওপাশ থেকে কলে তুলি শুনতে পেলো কেউ একজন হ্যালো হ্যালো করছে। তাই তুলি ফোন টা কানে নিতেই শুনতে পেলো তুলির বাবা বলছে মা কেমন আছিস। বাবার কন্ঠ শুনে মুখে হাসি ফুটলো তুলির।
সব সময় আমরা তোকে আগে উইশ করতাম কিন্তু এবার তো আর তা হলো না। তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিলেন সাথে তুলির মা ও।
তুলি তার মাকে কাঁদতে শুনে বলে উঠলো কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেনো আম্মু?
তুলির মা বললো তিয়াশ তোর বাবার অফিস কেড়ে নিয়েছে সেই রাতেই। এখন আমাদের বাড়িটা ছাড়া আর কিছুই সম্বল নেই রে মা। আরো অনেক কিছু বললো তুলি কে তারা।
তিয়াশ তুলি কে কথা বলতে দিয়ে কেক আনতে গেলো। আর খুঁজতে লাগলো সেই ফোনের লোকটিকে। খুঁজে না পেয়ে ভাবলো হয়তো চলে গেছে আর মনে মনে বললো তাহলে এবার তুলি কে সবটা বললেই ও বুঝে যাবে।
আর যেই হোস না কেনো তোকে তো আমি খুঁজে বের করবোই আমার তুলি কে মারার হুমকি তাই না। এরপর তোর এমন অবস্থা করবো যে নিজেকে নিজে দেখে ভয় পাবি। কথা গুলো খুব রাগ নিয়ে বললো তিয়াশ।
তিয়াশ মনে মনে বলতে লাগলো কথাগুলো বলে মনে হয় একটু বেশিই রাগীয়ে দিয়েছি আমার মহারানী কে। যাই এখনি গিয়ে তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। সকালে যেই ভাবে তুই তুকারি করেছে আবার হনুমান বলে বকাও দিয়েছে তুলির রাগ না ভাঙ্গালে আমায় বোধহয় এবার আরো কিছু বানিয়ে দিবে নিজে নিজে এসব ভেবেই হাসতে লাগলো তিয়াশ।
কেক একটি টেবিলে রেখে তুলির কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।
আর এসে যা শুনলো তাতে ভীষণ রকমের রেগে গেলো তিয়াশ।
তিয়াশ তুলির কাছে আসছিলো তখন শুনতে পায় হে বাবা আমি ভাইয়া কে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তোমরা চিন্তা করো না। অপর পাশ থেকে আবার কিছু বললে তুলি বললো হে নীরব ভাইয়া আমি ভালো আছি আর ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে উইশ করার জন্য। আপনার শরীর এখন কেমন আছে? হাতের ব্যথা সেরেছে?
অপর পাশ থেকে কোনো উত্তর পেলো না তুলি কারণ ততক্ষণে ফোন তিয়াশের হাতে চলে গেছে।
তুলি তিয়াশের দিকে তাকাতেই দেখে তিয়াশ তার দিকে এক জোড়া লাল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই গালে ব্যাথা অনুভব করলো তুলি। কারণ তিয়াশ তুলির গালে সপাটে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়েছে।
তিয়াশ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো ভেবেছিলাম সব কিছু নতুন করে শুরু করবো কিন্তু না তোর তো আমার খারাপ রূপ টাই ভালো লাগে। তাই জন্য আমাকে ডিভোর্স দিতে চাস নিরব কে বিয়ে করতে চাস।
তুলি ও সোজা উত্তর দিলো কেনো চাইবো না। আপনি আমার বাবার অফিস কেনো বন্ধ করেছেন বলুন।
বেশ করেছি।
তাহলে আমিও বেশ করবো। নীরব কে বিয়ে করবো।
এক হাত কোমরে রেখে আরেক হাত মাথার চুল পিছে নিতে নিতে রাগ সংযোজন করার চেষ্টা করে বলে উঠলো তিয়াশ, ঠিক আছে.. আমার খারাপ রূপ তোর এতো পছন্দ। তাহলে তাই হোক।
আমায় ডিভোর্স দিবি তাই তো। বলেই টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে বসালো তুলি কে আর হোটেলে ফিরে এলো।
হোটেলে এসেই চুপচাপ সোফায় বসে রইলো তিয়াশ মাথায় হাত দিয়ে। আর তুলি খাটে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
হঠাৎ করেই তিয়াশ উঠে গিয়ে টেবিল থেকে ছুরি নিয়ে এসে তুলির সামনে বসলো। আর তুলির মুখের সামনে ছুরিটি নিয়ে তাতে আঙ্গুল দিয়ে ধার দেখার মতো করে দেখতে লাগলো।
চলবে…