#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১২
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
তুলির সাথে তিয়াশের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তিয়াশ তার লোকদের বললে তারা যাতে সবার সামনে থেকে বন্দুক সরিয়ে ফেলে। তারাও তাই করলো।
তখনি তিয়াশের বাবা বললেন তিয়াশ তুমি আর তুহিন তো কাল রাতের ফ্লাইটেই চলে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে তুমি এখানে কি করে এলে?
তুলি কে তোমরা আমার থেকে আলাদা করে দিবে তা তো হয় না আর তাছাড়া আমার লোক সব সময়ই তোমাদের সবার উপর নজর রেখেছিলো যার দরুন আমি সবার আগে সব কিছুর খবর পেয়ে যাই।
আমি তো কাল রাতেই সব জেনে গিয়েছিলাম কিন্তু আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুলি কি করে। আর ও যা করলো তার শাস্তি ও ভয়ঙ্কর ভাবে পাবে। কথাটা তুলির দিকে তাকিয়ে বললো তিয়াশ।
এখন তোমরা বলো তুলি কে মেনে নিবে এই বাড়ির বউ হিসাবে নাকি ওকে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে যাবো?
তিয়াশের বাবা বুঝতে পারলেন ছেলেকে এখন কিছু বলে আর লাভ নেই তাই তিনি চুপ করে রইলেন।
তখনি তিয়াশের মা তেড়ে এসে বললো এই মেয়েকে কখনোই আমি আমার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিবো না। ওকে ওর বাবা মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে দেও তিয়াশ।
তিয়াশ তার মায়ের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বললো তাতো আর এই জন্মে হচ্ছে না।
তিয়াশের মা বললো তাহলে তুমি আর অফিসেও বসতে পারবে না দেখি বউ কে কি করে খাওয়াও।
তিয়াশ হালকা হেসে বললো তোমরা এতো বোকা কেনো বলোতো মা। আমার আসে পাশে বডিগার্ড কি এমনি এমনি ঘুরে তাদের আমি বেতন দেই না? যতদিন অফিসে বসিনি বেতন দেই নি? রাজনীতি করি আমি ভুলে যাও কি করে আর সেই টাকাতেই অফিস করেছি নিজের। ভেবেছিলাম তোমাদের সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো কিন্তু তা আর হলো না। আর বাবার অফিসে বসেছিলাম শুধু তুহিনের কথায়।
আড়াল থেকে মিসেস আমেনা বেগম এসব দেখে আর শুনে খুবই খুশি হলেন। আর মনে মনে বললেন আমি আগেই বলেছিলাম ও কিছুতেই এ বিয়ে হতে দিবে না।
তিয়াশের মা চেঁচিয়ে বললো তুলির বাবাকে, কি দেখছেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটাকে তো আমার ছেলের মাথা খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন আর মেয়ে ও তাই করেছে এখন আপনার মেয়ে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বিদায় হোন।
তুলির বাবা তুলি কে বললো মা এসে পর। তুলি ও তার বাবার কথা মতো তিয়াশের হাত থেকে নিজের হাত ছুটাতে বেস্ত হয়ে পরে। তিয়াশ ছারছেনা দেখে তুলি বললো আমার হাত ছাড়ুন লাগছে আমার।
তিয়াশ কথাটা শুনার সাথে সাথে আরো চেপে ধরলো তুলির হাত। আর দাঁত কিটমিট করে বললো আরো লাগবে শুধু দেখতে থাকো জান।
হাতের ব্যথায় তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেছে। তাও কিছু বলছে না। কারণ তুলি বুঝে গেছে যতো বলবে ততো ব্যাথা বাড়বে আর তা বাড়াবে তিয়াশ নিজেই।
তিয়াশের মা এসে আদুরে গলায় ছেলেকে বললো বাবা এমন পাগলামি করিস না আমার কথা শুন ওর চেয়েও ভালো মেয়ে এনে দিবো তোর জন্য।
তিয়াশের মেজাজ এমনিতেই বিগরে ছিলো এই কথা শুনার পর আরো বেশি বিগরে গেলো।
তিয়াশ তার মায়ের কথার জবাব না দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো আমার বউ নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। কেউ বাধা দিতে চাইলে এখানেই মেরে রেখে যাবো। বলেই তুলি কে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে এলো। সবাই কিছু করতে চেয়েও কিছুই করতে পারলো না কারণ সবাই ই তিয়াশের রাগ সম্বন্ধে অবগত।
এদিকে তিয়াশ তুলি কে গাড়ির সামনে এনে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ধাক্কা দিয়ে তুলি কে বসিয়ে দেয়। তুলি বের হতে চাইলে দরজা ভালো করে লাগিয়ে দেয় যাতে বের হতে না পারে।
তিয়াশ ভিতরে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনি তার চোখ যায় তুলির গায়ের গয়নার দিকে যেগুলো তুলির বাবা আর নিরবেরা মিলে দিয়েছিলো। তিয়াশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুলির গায়ের গয়নার দিকে হাত দিতে নিলে তুলি বাধা দেয় এতে তিয়াশ রেগে গিয়ে তুলির মাথার ওরনা খুলে ওর হাত বেঁধে দেয় পেছন দিকে নিয়ে আর রুমাল দিয়ে তুলির মুখ বেঁধে দেয় যাতে কিছু বলতে না পারে বা করতে না পারে। তারপর ইচ্ছে করে টেনে টেনে তুলির গায়ের সমস্ত গয়না খুলে ফেলে। এতে অনেক জায়গায় ছিলেও যায় তুলির।
গয়না খোলার সময় তুলি ব্যাথা পেয়ে কেঁদে দেয় নিঃশব্দে তা খেয়াল করেও তিয়াশ ইচ্ছে করে আরো ব্যাথা দিয়ে টেনে খুলে। তুলি কে ব্যাথা দিয়ে যেনো সে অনেক তৃপ্তি পাচ্ছে তা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে তুলি।
তিয়াশ তার লোকদের ডেকে গয়না গুলো দিয়ে বলে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দিয়ে আসতে আর তারা তাই করলো।
তিয়াশ তুলির কানের কাছে মুখ এনে বললো সম্ভব হলে শাড়ি ব্লাউজ ও খুলে রেখে যেতাম।
তুলি তিয়াশের দিকে তাকালে তিয়াশ তুলি কে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেওয়া শুরু করে।
গাড়ি চলতে চলতে মাঝ রাস্তায় থেমে যায়। তিয়াশ নেমে দেখে গাড়ির টায়ার লিক হয়ে গেছে। এতে তিয়াশের রাগ হলেও তুলির ঘুমন্ত মুখ দেখে নিমিশেই রাগ পানি হয়ে যায়।
তুলি তখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।
তখনি তিয়াশের লোকেরা এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে স্যার। তিয়াশ টায়ারের কথা বললে তারা তাদের গাড়িতে করে চলে যেতে বলে আর বলে তারা নতুন টায়ার লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে আসছে।
তিয়াশ তাদের থামিয়ে দিয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে যতক্ষণ খুশি লাগুক আমি দাড়িয়ে আছি তোমরা নতুন টায়ার লাগাও।
তারাও কাজে লেগে পড়লো আদেশ শুনা মাত্র।
তিয়াশ এসে তুলির মুখের দিকে চেয়ে আছে গাড়ির জানালার কাছে দাড়িয়ে।
বাতাসে তুলির মুখের উপর চুল এসে পড়লে তিয়াশ তা আলতো করে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।
গাড়ির টায়ার লাগানো হয়ে গেলে তিয়াশ তাদের বলে আগে থাকতে গিয়ে সব রেডি করে রাখতে। গিয়ে যাতে কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। তাই তারাও চলে যায়।
তিয়াশ তুলির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ির দরজা খুলে পানির বোতল নিয়ে পানি ছুড়ে মারে তুলির মুখে। এতে তুলি ধরফরিয়ে উঠে। সামনে তাকাতেই দেখে তিয়াশ দাড়িয়ে আছে পানি হাতে। এতে তুলির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কাজ টা তিয়াশ ই করেছে।
আমি কষ্ট করে গাড়ি চালাবো আর তুই মহারানীর মতো পরে পরে ঘুমাবি তাতো হয় না। বলতে বলতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
তুলি ও আর ঘুমালো না।
গাড়ি চলতে চলতে এসে থামে এয়ারপোর্ট এর সামনে তা দেখে তুলি অবাক চোখে তিয়াশের দিকে তাকায়।
তিয়াশ তুলির চাওয়ার মানে বুঝতে পেরে বলে তুই যেই পরিমানে হট আর সুন্দরি তোকে বিদেশে বেঁচে দিলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। বলেই বাঁকা হাসলো তিয়াশ।
এদিকে তুলির অবস্থা প্রায় খারাপ। তুলি মনে মনে বলছে এই ছেলেকে দিয়ে বিশ্বাস নেই যা রেগে আছে তাতে এই কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না।
এসব ভেবেই ভয়ে ঢোক গিললো তুলি। মুখেও কিছু বলতে পারছে না কারণ তুলির হাত মুখ দুটোই বাধা।
।
।
তিয়াশ তুলি কে নিয়ে রাতের ফ্লাইটেই প্যারিসে চলে এসেছে। ভোর ৬ টার সময় তারা ল্যান্ড করে।
সারা রাত তিয়াশ নিজেও ঘুমায়নি তুলিকে ও ঘুমাতে দেয় নি। যখনি তুলির চোখ লেগে আসছিলো তখনি পানি মেরেছে তুলির মুখে তিয়াশ। এরপর তো বলেই দিয়েছে আবার ঘুমালে এর পর গরম পানি ঢালবে তুলির মুখে। এই ভয়ে তুলি আর চাইলেও ঘুমাতে পারেনি।
প্লেন থেকে নেমে তিয়াশ তুলি কে হাত মুখ বাধা অবস্থায় নিয়েই আরেকটা গাড়িতে উঠলো।
দেখে বুঝা গেলো এখানেও তার সাঙ্গোপাঙ্গো আছে। কারণ এখানে আসতে না আসতেই কালো পোশাক পরা লোক গুলো তাদের খেদমতে লেগে পড়েছে আর তিয়াশ হুকুম দিয়ে যাচ্ছে।
তারা গিয়ে একটি বড় হোটেলের সামনে নামলো তা দেখে তুলি চেয়ে রইলো। তুলি কে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তিয়াশ বললো এই খানেই তোকে বেঁচে দিয়ে আমি চলে যাবো বাংলাদেশে।
বলেই বাইরে এসে দরজা খুলে তুলি কে বাইরে বের করার চেষ্টা করলো তবুও পারলো না কারণ তুলি শক্ত হয়ে বসে আছে। অনেক ভয় পেয়েছে তুলি। তা তার মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
তিয়াশ আর কোনো উপায় না পেয়ে তুলি কে কোলে করে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই হোটেলের ম্যানেজার এসে তিয়াশ কে স্বাগত জানিয়ে নিজেই রুমের চাবি নিয়ে তাদের সাথে গেলো।
৭ তলায় গিয়ে ৩০৪ নাম্বার স্পেশাল রুমটা ওদের জন্য খুলে দেয়। আর তিনি রুম খুলে দিয়ে ভিতরে চাবি রেখে চলে যান।
ভিতরে গিয়ে তিয়াশ তুলি কে বিছানায় বসিয়ে দেয় আর ওর দিকে বাঁকা চোখে চেয়ে কাউকে কল দেয়।
কল ধরার পর অপর পাশ থেকে কিছু বললে তিয়াশ বলে উঠলো তাহলে আজ সন্ধ্যায় ডিল ফাইনাল। তারপর আরো কিছু কথা বলে কল কেটে দিয়ে তিয়াশ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
হোটেলের কর্মচারীদের বলে যায় ৩০৪ নাম্বার রুমে অনুমতি ছাড়া যেনো কেউ না ঢুকে। এমনকি কোনো খাবার ও যাতে না নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে তুলি ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
তুলি মনে মনে ভাবছে কিসের ডিলের কথা বললো ভাইয়া। তাহলে কি আমাকে সত্যি সত্যিই বেঁচে দিবে ভাবতেই কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো তুলির।
চলবে….
#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১৩
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
সন্ধ্যায় তিয়াশ হোটেলে ফিরে নিজের রুমে চলে গেলো। হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। ঘরে ঢুকে দেখলো লাইট অফ তাই লাইট জ্বালিয়ে দিলো। রুমে আলো জ্বলতেই দেখলো তুলি নিচে পড়ে আছে।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তুলি নিজেকে ছড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে যার ফল সরুপ না পেরে নিচে পড়ে রয়েছে। তার উপর কাল সকাল থেকে না খাওয়া।
তিয়াশ তুলির হাত মুখের বাঁধন খুলে ওকে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেলো না। তাই মুখে চাপর মেরে ডাকলো তাও কোনো সাড়া শব্দ মিললো না তুলির।
তিয়াশ ভয় পেয়ে যায় তুলি সাড়া দিচ্ছে না তাই। চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পড়তে লাগলো তিয়াশের। তাড়াতাড়ি করে তুলি কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
টেবিল থেকে পানি এনে মুখে ছিটা দিতেই তুলির অল্প অল্প জ্ঞান ফিরে। আর অজ্ঞেত মনে বিড়বিড়য়ে বলতে থাকে আমি নীরব কে বিয়ে করবো আম্মু।
তিয়াশ তুলি কে বিড়বিড়য়ে কথা বলতে দেখে তুলির মুখের কাছে নিজের কান নিয়ে যায় আর শুনতে পায়,
আমি নীরব কে বিয়ে করবো আম্মু তোমরা প্লিজ আমার উপর রাগ করে থেকে নিজেদের ক্ষতি করো না।
নীরব কে বিয়ে করতে চাই, ব্যস এইটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো তিয়াশ কে আবার রাগিয়ে দেওয়ার জন্য।
নীরব নীরব নীরব আর কত। তুলির দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় চেঁচিয়ে বললো কথাটা তিয়াশ।
জগের সব টুকু পানি তুলির গায়ে ছুড়ে মারলো তিয়াশ।
তুলি চোখ খুলেই উঠে বসে জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া শুরু করেছে।আর একটু হলেই দম আটকে মারা যেতো মেয়েটা।তুলি উঠে দেখে তিয়াশ ওর দিকে লাল চোখ করে তাকিয়ে আছে।
তুলি ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা হয়ে গেছে তারপর সকালের কথা মনে পড়তেই ভালো করে সব দিক খেয়াল করে দেখলো আর কেউ এসেছে কিনা তিয়াশের সাথে।
কেউ আসেনি দেখে ভয় টা একটু কমলো তাই তিয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
তিয়াশ কিছু না বলে তুলি কে টেনে তুললো আর বললো বেশি কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে আয় যা আর এই বিয়ের শাড়ি পাল্টে আয় এগুলো দেখলে আমার রাগ উঠে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসবি আমিও ফ্রেশ হবো। দেরি হলে নয়তো আমি ঢুকে যাবো ওয়াশ রুমে। বলেই টেবিল থেকে একটা শপিং ব্যাগ তুলির হাতে ধরিয়ে দেয়।
তুলি ডেবডেব করে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিয়াশ তুলি কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তেড়ে যেতে নেয় তুলির দিকে তখনি তুলি উঠে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশ রুমে।
বিশ মিনিটের মধ্যেই তুলি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। তিয়াশ তুলি কে দেখে মনে মনে বললো গোল জামায় ওকে ভালোই মানিয়েছে। তারপর তিয়াশ নিজেও চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
এদিকে তুলির পেটে ইঁদুর বিড়াল সব দৌড়া দৌড়ি করছে তাই পেটে হাত দিয়ে বসে রইলো।
কিছুক্ষণ পরেই তিয়াশ বেরিয়ে এলো।
তিয়াশ কে দেখেই তুলি বললো খিদে পেয়েছে আমার।
তিয়াশ যেনো শুনেও না শুনার ভান করলো। তাই তুলি আবার বললো খিদে পেয়েছে আমার কাল থেকে কিছু খাইনি।
তখনি দরজায় আওয়াজ এলো হোটেলের ওয়েটার বয় এসেছে। তিয়াশ গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ছেলেটি বললো গুড ইভিনিং স্যার। স্যার আপনি একটু আগে মেনু চেঞ্জ করে যেভাবে যেভাবে বলেছেন সেভাবে সেভাবেই এনেছি আর কোনো দরকার হলে বলবেন স্যার।
তিয়াশ ঠিক আছে বলে নিজেই গিয়ে হাতে করে গরম গরম খাবার নিয়ে এলো সব তুলির পছন্দের খাবার।
তুলি মনে মনে ভাবলো বেহায়ার মতো খাবার না চাইলেই পারতাম খাবার তো অর্ডার দিয়েই এসেছিলো। দিয়ে এসেছিলো বললে ভুল হবে কারণ লোকটি যা বললো তাতে বুঝতে পারলাম যে আমি ওয়াশ রুমে যাওয়ার পরে ভাইয়া আবার নতুন করে অর্ডার দিয়েছে।এসব ভেবে তুলি নিজেই নিজেকে বকলো।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে তিয়াশ তুলি কে না ডেকে নিজে নিজেই খাবার খাচ্ছে। অনেকক্ষণ যাবার পরেও যখন তুলি দেখলো যে তিয়াশ তাকে ডাকছে না তখন তুলি নিজেই তিয়াশ এর পাশের চেয়ারে গিয়ে ভয়ে ভয়ে বসলো। আর খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে। দুই চামিচ ভাত খাওয়ার পরেও যখন দেখলো তিয়াশ কিছু বলছে না তখন আপন মনে প্লেটে খাবার বেড়ে নেয় তুলি।
দুই লোকমা খাওয়ার পর বুঝতে পারলো এতে প্রচুর পরিমাণে ঝাল দেওয়া আছে যা একজন মানুষের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। তাড়াতাড়ি করে পানি খেয়ে ওই খাবার রেখে অন্য খাবার নেয় খেতে। এবারো একই কাজ ঘটলো অনেক ঝাল খাবারে।
তুলি চেয়ে দেখলো তিয়াশ পায়েশ খাচ্ছে কিন্তু তিয়াশ যেটা খাচ্ছে সেটা শুধু তিয়াশের কাছেই জন্যই।
তুলির জন্য আলাদা রাখা আছে অন্য পাত্রে তাই তুলি সেখান থেকে নিয়ে মুখে দিতেই বমি এসে পড়ে। অসম্ভব লবণ আর কেমন বিদঘুটে খেতে খাবার টা।
তুলি তিয়াশের খাবার টা দেখে বুঝতে পারে ওর টা খুবই ভালো খেতে। তুলি তিয়াশের থেকে চাইলেও তিয়াশ কোনো কথা না বলে খেয়ে উঠে যায়।
তুলি তিয়াশ কে বললো এই খাবার গুলো পচা আর অনেক ঝাল অন্য খাবার এনে দিন না।
তিয়াশ কোনো উত্তর দিলো না।
এতে তুলি বুঝে গেলো ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তিয়াশের এতো আয়োজন।
তুলি মনে মনে ভাবলো ভাইয়া বিয়ের সময় তো বলেই দিয়েছিলো তার নতুন রূপ হবে আমার জন্য সর্বনাশ। ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো তুলি।
তুলি পুরো এক দিন এক রাত না খাওয়া কোনো দিন তাকে খিদে সহ্য করতে হয়নি। চাওয়ার আগেই সব পেয়েছে। ভাবতেই চোখ ভিজে এলো তুলির।
খিদে ও পেয়েছে খুব। পচা খাবারের মধ্যে কয়েকটা ভালো খাবার ও আছে কিন্তু সেগুলো অনেক ঝাল। ক্ষুধার জালা সইতে না পেরে তুলি সেই খাবার গুলোই মুখে তুললো। অনেক কষ্ট করে অর্ধেক খাবার খাওয়ার পরই বমি চলে আসলো আর পারবে না খেতে। তাই দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় তুলি।
তিয়াশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপে চোখ দিলো।
তুলি যা খেয়েছিলো তার সব টুকুই বমি করে ফেলে দিলো আর খুব ঝাল ও লাগছে। বমি করার ফলে তুলির শরীর আরো খারাপ হতে শুরু করলো।
মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে রুমে এসে দাঁড়ালো আর সাথে সাথেই মাথা ঘুরে পরে গেলো।
তিয়াশ দৌড়ে এসে তুলি কে কোলে তুলে বিছানায় শোয়ালো আর ডাকতে লাগলো। তুলির জ্ঞান না ফেরায় তুলি কে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা হলো।
।
।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে তুলি ছয় ঘন্টা যাবত। সেলাইন চলছে ওর হাতে।
এখন প্রায় ভোর হতে চলেছে তুলির জ্ঞান ফিরেছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে তুলির। তুলি আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে ও। পাশে ফিরতেই দেখে তিয়াশ তুলির বেডের উপর মাথা দিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছে।
তখনি তুলির কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়। আর মনে মনে ভাবে তিয়াশের সাথে থাকলে ও নির্ঘাত মারা যাবে তাই পালানোর কথা ভাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ আসতে আসতে বেড থেকে নেমে রুমের বাইরে এসে পড়ে। আর এক দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে উঠে। রাস্তায় নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটা ধরে আর মনস্থির করে যে পুলিশ এর কাছে গেলেই হবে তাহলে তারা তাকে বাংলাদেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিবে।
আর একবার দেশে পৌঁছাতে পারলেই এমন দূরে চলে যাবো যে ভাইয়া কেনো ভাইয়ার ভ ও তুলির টিকি টা খুজে পাবে না। এসব ভাবতেই হেসে দিলো তুলি।
পুলিশ এর কাছে গিয়ে হেল্প চাইলে তারা জানতে চায় তুলি এখানে এলো কি করে তুলি ও তিয়াশের কথা বলে দেয়।
তারা তিয়াশ নাম শুনে তিয়াশের ব্যাপারে আরো ইনফরমেশন নেয়। তারপর তারা আলাদা ভাবে কিছুক্ষণ কথা বলে তুলি কে বসতে বলে অন্য জাগায় সরে গিয়ে কাউকে কল দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর তুলি বুঝতে পারে তারা কিছু একটা করতে চলেছে তাই উঠে চলে আসতে নিলে দরজার সামনে একজনকে দেখে থমকে যায় তুলি।
কারণ সামনেই দাড়িয়ে আছে তিয়াশ। তিয়াশ কে দেখেই তুলির হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।
তিয়াশ তুলির হাত ধরে পুলিশ দের ধন্যবাদ দিয়ে সাথে অনেক টাকা দিয়ে তুলি কে নিয়ে সোজা হোটেলে চলে এলো।
সকাল ৭:৩৫ মিনিট। তিয়াশ খাবার নিয়ে আসে নিচে গিয়ে।
খাবার প্লেটে বেড়ে তুলির পাশে গিয়ে বসে। তুলি এসে থেকে চুপচাপ বসে আছে কোনো রকম কথা বলে নি।
খাবার দেখে তুলি তিয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তিয়াশ তুলি কে অভয় দিয়ে বললো এই খাবার টা ভালো ও খেতে পারে।
অনেকক্ষণ যাবার পরেও তুলি খাচ্ছে না দেখে তিয়াশ তুলি কে খাইয়ে দেয়ার জন্য তুলির মুখের সামনে খাবার মেখে ধরলো। তুলি তারপরও খেলো না।
তুলি কেনো খাচ্ছে না বুঝতে পেরে খাবার টা প্রথমে তিয়াশ মুখে তুললো। তারপর তুলি কে বললো খেয়ে নে না বউ। দেখ আমি খেয়েছি আমার কিছু হয়েছে?
তারপর আবার তিয়াশ তুলির মুখের সামনে খাবার ধরতেই তুলি ও খেয়ে নিলো।
তুলি নিজের হাতে খেতে চাইলে তিয়াশ বাধা দিয়ে বললো আমি খাইয়ে দিচ্ছি তো।
তিয়াশ কে স্বাভাবিক দেখে তুলি খেতে খেতেই বলে উঠলো খাওয়া শেষে আমাকে বেঁচে দেবেন?
তিয়াশ হেসে দিয়ে বললো অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি? এটাই মনে হয় তোর? তোকে তো আমার কাছে রেখে তিলে তিলে শেষ করবো।
ব্যস তুলির গলা দিয়ে আর খাবার নামবে বলে মনে হয় না।
তুলি কি ভাবছে বুঝতে পেরে তিয়াশ বললো বাবার অফিসে তো আর বসবো না এখন তো নিজের টা নিজেকেই সামলাতে হবে। তাই আমার অফিসের ব্যাপারে কাল একটা ডিল ফাইনালের জন্য এখানে এসেছি। আর বিয়ে যেহেতু হয়েছে তাই ভাবলাম একেবারে মধু চন্দ্রিমা সেরে যাই। বলেই চোখ মারলো তিয়াশ তুলি কে।
তুলি খাচ্ছে না দেখে তিয়াশ তুলি কে বললো খাবার সব টুকু না খেলে তোকে বেঁচে দেওয়ার সম্ভবনা ৯০% আছে বলে আমি মনে করি।
তুলি কে বাকি খাবার টুকু জোর করে খাইয়ে দিয়ে উঠলো। তারপর হাত ধুয়ে এসে বললো কাল থেকে ঘুমাতে পারিনি একটু ঘুমাতে দে বলেই তুলি কে বিছানায় শুইয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।
আপনি ঘুমান আমার চোখে ঘুম নেই এই বলে তুলি উঠে যেতে নিলে তুলি কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো তিয়াশ।
অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে তিয়াশ। চাইলেও ছাড়াতে পারছে না তুলি তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে…