#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ০৮
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
তুলি কে ক্লাসের সময় নীলা কল দেয় আর কলেজের বাইরে আসতে বলে। নীলা ও এই কলেজে ভর্তি হয়েছে তুলি এই কলেজে ভর্তি হয়েছে তাই । আর নীলা তুলির স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড বলতে গেলে খুব ভালো ফ্রেন্ড ওরা দুজনে। নীলা তুলি কে সাথে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। আর সকালে তুলির বাবার কাছে নীলাই কল করেছিলো।
তুলি নীলাকে বললো তুই কবে থেকে কলেজে যাবি? একা একা আমার ভালো লাগে না ক্লাস করতে।
নীলা বললো এই তো কাল থেকেই যাবো। তুই সকালে রেডি হয়ে থাকবি তারপর আমরা এক সাথে কলেজে যাবো ওকে। ততক্ষণে নীলার আম্মু ওদের জন্য হালকা খাবার নিয়ে ঘরে এলো। নীলার আম্মু ওদের খাবার খেতে দিয়ে আবারো চলে গেলেন।
বিকালের দিকে নীলার আম্মু অনেকক্ষণ হলো তার ছেলেকে কল দিচ্ছিলো কিন্তু ধরছে না তাই তিনি চিন্তা করছিলেন। তখনি তুলি আর নীলা নীলার আম্মুকে বললো কি নিয়ে চিন্তা করছো?
নীলার আম্মু নীলা কে বললো বললো দেখ না তোর ভাইয়া কে সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না। ও যতো বেস্তই থাক আমার কল তো না ধরে থাকে না।
তুলি বললো তোর ভাইয়া লন্ডন থেকে চলে এসেছে?
নীলা বললো হেরে তোকে তো বলতে ভুলেই গিয়েছি আর ভাইয়া তো তোদের কলেজেই অনার্স থার্ড ইয়ার এ পরে। আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই নীলার আম্মুর ফোনে কল আসে তার ছেলের নাম্বার থেকে তাই তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করেন তিনি কল রিসিভ করে জানতে পারেন তার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ডাক্তার তার ছেলের ফোন দিয়ে ফোন করেছে।
নীলা আর তুলি কে বলার সাথে সাথে তারা হাসপাতালের নাম জেনে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।
এদিকে তিয়াশ হাসপাতালেই দাড়িয়ে আছে আর তিয়াশই ডাক্তার কে দিয়ে কল করিয়েছে।
তিয়াশ নীরবের কাছে গিয়ে বলতে লাগলো আমার ক্যাশোবতির পিছে পিছে ঘুরাঘুরি করা তাই না এবার তো শুধু পা ভেঙেছি এর পর সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো বিনা নোটিশে। বলেই একটি ভিলেনি হাসি দিলো তিয়াশ। (আর হ্যা নীরবই নীলার ভাই)।
আধা ঘন্টা পর তুলিরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছালো। হাসপাতালে গিয়ে রুম নাম্বার জেনে ৩ তলায় গিয়ে উঠলো তারা।
তিয়াশ ওখানেই দাড়িয়ে ছিলো তুলি কে ওদের সাথে আসতে দেখে যেনো তিয়াশ আরো রেগে গেলো। মনে মনে বলতে লাগলো এত দূর.. সোজা ওদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিস। নীরবের কথা শুনতেই একেবারে এসে হাজির হয়েছিস। আমি তোকে না পেয়ে পাগলের মতো খুজে তোদের বাসায় গেলাম কাকি বলেছিলো তুই তোর ফ্রেন্ড এর বাসায় আছিস আর এই তাহলে তোর ফ্রেন্ড।
তিয়াশের এখন ইচ্ছে করছে তুলি কে ধরে পিটাতে পারলে বোধহয় ওর রাগ কমতো। কিন্তু তা সম্ভব না তাই চোখ বন্ধ করে কতক্ষণ রাগ নিবারণ করার বৃথা চেষ্টা করলো তিয়াশ।
ডাক্তার এসে নীরব এর বর্তমান অবস্থা বলে গেলো। নীরবের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। নিরবের আম্মু কান্না করছে তাই তুলি আর নীলা শান্তনা দিচ্ছে। তুলির শান্তনা দেওয়া দেখে তিয়াশের রাগ আরো বেড়ে যায় তাই তিয়াশ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়।
সন্ধ্যার দিকে তুলির আব্বু আর নীলার আব্বু একসাথে হাসপাতালে পৌঁছায়। তখন নীরবের ও জ্ঞান ফিরে। তারা জানতে পারে কেউ নীরব কে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেছে।
নীরব তুলি কে দেখে অনেক খুশি হয়। নীরব তুলি কে বলে তুলি তুমি এসেছো? আমাকে দেখতে এসেছো?
তুলি কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো আপনি কেমন আছেন নীরব ভাইয়া?
নীরব সাবলীল ভাবে বললো এতক্ষণ ভালো না থাকলেও তোমাকে দেখার পর এখন আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছি এখনই দেখ তুলি।
নীরবের এমন কথা শুনে সবাই হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তুলি কে নীরব এর আম্মু বসতে বলে তিনিও বাইরে চলে গেলেন ডাক্তার কি বলে শুনতে।
এদিকে বাইরে আবির দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছে শুনছে। আসলে তুলি এসেছে তাই তিয়াশ আবির কে রেখে গেছে। তিয়াশ থাকেনি কারণ নীরবের প্রতি তুলির এত দরদ তিয়াশ সহ্য করতে পারবে না। কখন তুলির গায়ে হাত তুলে দেয় তাই তিয়াশ চলে গেছে।
আবির তিয়াশ কে কল দিয়ে সব ঘটনা বললো। সব কথা শুনার পর তিয়াশ তুলি কোথায় আছে জানতে চাইলে আবির বলে তুলি এখন কেবিনে আছে নীরবের সাথে।
এদিকে তিয়াশ আবির কে বলে তুলি কে দেখতে ইচ্ছে করছে তাই ভিডিও কল দেয় আবিরের ফোনে। তখনি এই দিকে নীরব হঠাৎ করে তুলির হাত ধরে বলে তুমি পাশে থাকলে আমি তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবো দেখো তুলি। এই দৃশ্য দেখে ফেলে তিয়াশ আর সাথে সাথে রাগে ফোন কেটে দেয়।
তুলি ও হাত ছিটিয়ে সরিয়ে নিয়ে বাইরে এসে বেঞ্চে বসে পরে কারণ তুলির অসস্হি লাগছিলো নীরব হাত ধরায়।
।
।
কেটে গেছে দুইদিন। এই দুইদিন অবশ্য তুলি নীলার সাথে নীরব কে দেখতে গিয়েছিলো তুলির বাবার কথায়। তিয়াশ সব খবরই রেখেছে কিন্তু কিছু বলেনি তুলি কে।
আজ তিয়াশ দের বাসায় পার্টির আয়োজন করা হয়েছে যেখানে তুলি রাও আমন্ত্রিত। পার্ট টা মূলত ব্যাবসা বিষয়ে তাই প্রায় সবাই এসেছে এখানে। তিয়াশ দের ব্যবসায় এবার অনেক লাভ হয়েছে আর তিয়াশ ও তুহিন অফিসে বসেছে তাই এই আয়োজন। পার্টিতে তিয়াশ কালো কোর্ট আর কালো জিন্স কালো শু পড়েছে হতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি চুল স্পাইক করেছে দেখতে পুরোই হ্যান্ডসাম লাগছে। তুহিন ও তিয়াশের মতোই গেটআপ দিয়েছে দুজন কেই দারুন লাগছে দেখতে। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে মেয়েরা তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
নীলিমা ও কালো শাড়ি পড়েছে তিয়াশের সাথে মিলিয়ে।নীলিমার মা বাবাও আজকে এই পার্টিতে আছে।
নীলিমা তিয়াশের কাছে গিয়ে বললো দেখে বলো না তিয়াশ আমাকে কেমন লাগছে?
তিয়াশ কোনো প্রতিউত্তর করলো না যেই জাগায় দাড়িয়ে ছিলো বরং সেই জায়গা থেকে সরে যায়।
নীলিমা আবারো কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিয়াশ রাগী চোখে নীলিমার দিকে তাকায় তাই নীলিমা আর কিছু না বলে সরে আসে ওখান থেকে।
তখনি বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে তুলির আব্বু আম্মু আর তুলি পিছে পিছে আসছে। তুলি আজকে ছাই কালারের লেহেঙ্গা সেট পড়েছে আর মাথায় হিজাব ঠোঁটে গারো লাল লিপস্টিক চোখে কাজল আর হাত ভর্তি ছাই কালার কাচের চুরি। মুখে আর কিছু মাখেনি তুলি। বেস এই টুকুতেই যেনো ওকে অপ্সরি লাগছে।
তুলি কে দেখে যেনো তিয়াশের পৃথিবী থমকে যায়। মনে মনে বলে এ আমি কোন হুর পরি কে দেখেছি বলেই বুকে হাত দিলো। কিন্তু পরক্ষণেই রেগে গিয়ে বললো ওকে এতো সাজতে কে বলেছে।
তিয়াশের আব্বু আর তুহিনের আব্বু মিলে তাদের ছোট ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরে। তারা কথা বলতে থাকে সাথে তুলির আম্মু ও আছে।
তিয়াশ তুলি কে দেখেও যেনো না দেখার ভান করছে তুলি তা বুঝতে পারলো।
তখনি তুলির সাথে একটি ছেলে কথা বলতে আসলে তিয়াশ এসে কথার বাহানা দিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে চলে যায়। এরকম আরো ছেলে তুলির সাথে কথা বলতে আসলে তিয়াশ একই কাজ করে।
পার্টির শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিয়াশের আব্বু আম্মু এনাউস করে যে আজকে তিয়াশ আর নীলিমার এংগেজমেন্ট হবে। কথাটি শুনার সাথে সাথে নীলিমার সে কি আনন্দ। নীলিমা গিয়ে কেক কাটার জাগায় দাড়িয়ে পড়লো সবার সামনে।
তুলির চোখে হটাৎ পানি অনুভব করলো তুলি। চোখে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পড়ছে যেই পানি খুব কষ্টের। তুলি তারাতারি চোখের পানি মুছে তিয়াশের দিকে চাইলো আসলে তুলি দেখতে চাইছে তিয়াশ কি বলে।
তুলি চেয়ে দেখলো তিয়াশ নির্বিকার ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো সবটা আগে থেকেই জানতো।
তিয়াশ ও সেদিনের হাসপাতালের আবিরের দেওয়া ভিডিও কলের কথা মনে করে নীলিমার সামনে এগিয়ে গেলো।
তুলির এসব আর সহ্য হচ্ছে না। যতই হোক ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখা যায় না।
তুলি মনে মনে ভাবলো ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ করে না তাও আমি কেনো মানতে পারছি না এসব। আমি তো ওনাকে অনেক ভালোবাসি উনি কি বুঝেন না।
তুলি তার প্রিয় মানুষটিকে অন্য কাউকে আংটি পড়াতে দেখতে পারবে না তাই তুলি শরীর খারাপের কথা বলে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো আর তুলির আব্বু তুলির অসুস্থতার কথা শুনে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলেন।
চলবে…