ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০৭

0
882

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ০৭
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

সকালে তুলির ঘুম ভাঙতেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো গলায় কামড়ের দাগ। আর তখনি রাতের কথা মনে পড়ে গেলো তুলির। রাতে তুলি ভেবেছিলো হয়তো দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু এখন গলার দাগ দেখে তুলি নিশ্চিত যে গতকাল রাতে কেউ ঘরে এসেছিলো। আবার ভাবলো এতো রাতে কে আসতে পারে ঘরে। এমন কেউ তো নেই যে মাঝরাতে ঘরে এসে এভাবে হুমকি দিয়ে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই গলার দাগ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে তুলি।
গলার দাগ যতোই ঢাকার চেষ্টা করছে ততোই বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে। তাই গলায় ওরনা ভালো ভাবে পেচিয়ে নিলো।
সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় তুলির আব্বু তুলি কে বললো নীরব বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাইলে ওর সাথেই আসতে আর ও কলেজে নিয়ে গেলে ওর সাথে যেতে।
তুলি ও মাথা নাড়লো। কারণ বাবার মুখে মুখে কথা বলতে তুলির খুব ভয় করে।
তখনি তুলির বাবার কাছে একটি কল এলো তারপর কিছুক্ষন কথা বলে কল কেটে দিলো আর বললো নীলা কল দিয়েছিলো। তোকে নিতে চাইছে ওর সাথে তাই আমার থেকে পারমিশন নিলো।
(নীলা তুলির স্কুল ফ্রেন্ড। তুলির বাসায় নীলা প্রায়ই আসে। নীলার বাবার সাথে তুলির বাবার খুব ভালো সম্পর্কও বটে)

সকালের খাবার খেয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে উদ্দেশ্য কলেজে যাওয়া। রাস্তায় তুলি হাঁটছে। আর সব সময়ের মতোই তিয়াশ ও গেলো তুলির পিছে পিছে যা তুলি জানে না।
রাস্তায় কিছুদূর যেতেই দেখলো নীরব দাড়িয়ে আছে।
তুলি কে দেখেই ওর সামনে এসে দাড়ায় আর কথা বলতে থাকে। এক পর্যায় নীরব তুলি কে তার সাথে কলেজে নিয়ে যেতে চাইলে তুলি নীরবের সাথে যেতে রাজি না হলে নীরব তুলির বাবার কাছে কল দিয়ে বলে, ”আংকেল আমি তুলি কে কলেজে নিয়ে গেলে কোনো অসুবিধা আছে কি?”
ওপাশ থেকে তুলির আব্বু বললো, ”কোনো অসুবিধা নেই।”

কথাটি তুলি কে শুনালো নীরব। তারপরেও তুলি যেতে রাজি হয়না। কিনতু নীরব অনেক রিকোয়েস্ট করে যার জন্য রাজি হয়ে যায় তুলি। আর নীরবের গাড়ি করে কলেজে চলে গেলো।

তিয়াশ ওদের দেখে কিছু একটা ভেবে ফোন বের করে আবির কে কল দিয়ে কিছু বলে ভিলেনি হাসি দিয়ে ফোন কেটে দিয়ে বললো এরপর যা যা হবে তার জন্য তুমি দায়ি আমার প্রাণ প্রিয় কেশোবতি। পরক্ষণেই চোখ মুখে রাগের আভা ফুটে উঠলো। তারপর নিজেও চলে গেলো কলেজে।

কলেজে গিয়ে বন্ধুদের দেখে তুলি নিজেও দাঁড়ালো তাদের সাথে। তখনি নীলিমা তুলি কে ডাক দিলো। নীলিমার সাথে তার ফ্রেন্ড গুলোও ছিলো।
নীলিমা যে তুলি কে আবার অপমান করার জন্য ডাকছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তুলি।

নীলিমা দের কিছু দূরেই দাড়িয়ে আছে তিয়াশ আর তুহিন।

নীলিমা তুলি কে বললো কেমন আছো তুলি?

তুলি ও ভালো ভাবে বললো ভালো আছি আপু।

নীলিমা তুলির কাছে কলেজের প্রথম দিনের জন্য ক্ষমা চাইলো তা অবশ্য তিয়াশ কে দেখেই চাইলো।

তুলি ও তার বিনিময়ে একটি মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।

কথা বলা শেষ হলে তুলি চলে যেতে নিলে নীলিমার একটি ফ্রেন্ড নীলামাকে আসতে করে বললো, খেয়াল করেছিস নীলিমা?
নীলিমা বললো কি খেয়াল করবো।
তখন নীলিমার মেয়ে বন্ধু টি বললো ভালো করে দেখ ওর গলায় কিসের যেনো দাগ।
পাশের একটি মেয়ে বললো আরে দাগ না দাগ না বল লাভ বাইট। বলেই হাসতে লাগলো সবাই।
নীলিমা ও ভালো করে চেয়ে দেখলো তারা ঠিক কথাই বলছে।
নীলিমা মনে মনে ভাবলো দাগ থাকুক আর যাই থাকুক এই সুযোগে তুলি কে কিছু কথা শুনিয়ে দেই। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না।
তাই নীলিমা তুলি কে ডাক দিয়ে বললো তুলি তোমার গলায় ওটা কিসের দাগ? আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিয়াশের দিকে চোখ পড়ে নীলিমার।
আর মনে পরে যায় তিয়াশের মায়ের বলা কথা। তিয়াশের সামনে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার তিনি করতে না করেছিলেন। তাই নীলিমা ওর ফ্রেন্ড দের ইশারা করে যাতে ওরা বলে।
ওর ফ্রেন্ড রাও তা বুঝে যায় আর বলে উঠে, আরে নীলিমা বুঝতে পারছিস না? বয়ফ্রেন্ড হয়তো লাভ বাইট দিয়েছে।

তুলি তারাতারি ওরনা দিয়ে গলা ঢাকার চেষ্টা করলো।।

আবারো নীলিমার ফ্রেন্ড রা বলে উঠলো আরে আরে ঢাকছো কেনো আমরা তো দেখেই ফেলেছি বলেই হাসতে লাগলো।
নীলিমা বললো তুলি তোমার বয় ফ্রেন্ড থাকলে বলতে পারো আমরা তো তোমার বড় বোনের মতোই বলো। অবশ্য না বললেও আমরা জানি।

তুলি বললো কি জানো আপু আর কখন থেকে কি সব বলে যাচ্ছো এইসব। আমার কোনো বয় ফ্রেন্ড নেই।

নীলিমার ফ্রেন্ডরা তখন বললো আরে বুঝি বুঝি নীরব তো তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

তখনি তিয়াশ ওদের সামনে এসে বললো কিরে এখনো ক্লাসে যাচ্ছিস না কেনো? দাড়িয়ে দাড়িয়ে বয়ফ্রেন্ড এর গুনকির্তন শুনতে ভালো লাগে? কার সাথে কি করেছিস কে জানে এখন কলেজে এসে সবাইকে দেখাচ্ছিস লজ্জা করে না। ক্লাসে যা বলেছি। কথাটা অনেক রেগে বলেছে তুলি কে তিয়াশ।

তুলিকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না তিয়াশ।
নীলিমা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিয়াশ রাগী গলায় বললো আর কখনো তুলি কে নিয়ে বাজে কথা বলতে শুনলে তোমাদের ওখানেই মেরে গুম করে দিবো কেউ কোনো হদিস ও পাবে না বলে দিলাম। এই কথা শুনে সবাই ক্লাসের দিকে হাঁটা দিলো কেউ আর ভুলেও পিছে ফিরে চায় নি।

তুহিন তিয়াশ কে বললো চল ক্লাসে যাই।
তিয়াশ বললো তুই যা আমার কাজ আছে আমি যাবো না। তিয়াশ তুহিন কে বুঝিয়ে ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো। আর তিয়াশ কারো অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি আবির আসলো তিয়াশের সামনে এসে বললো ভাই সব রেডি এখন শুধু অপেক্ষা।

কলেজের রাস্তায় দাড়িয়ে নীরব কারো সাথে কথা বলছিলো তখনি কেউ পেছন থেকে কালো কাপড় দিয়ে মুখে বেঁধে নীরবকে তুলে নিয়ে গেলো।

তুলির কলেজ ছুটির সময় হলে আগে থেকে এসেই তিয়াশ দাড়িয়ে থাকে। ছুটি হওয়ার আধা ঘন্টা পরেও যখন দেখে তুলি বের হচ্ছে না তখন তুহিন বলে কাউকে জিজ্ঞেস করতে।
তাই তিয়াশ দারোয়ান কাকার কাছে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে তুলি দের ছুটির অনেক আগেই তুলি কলেজ থেকে বের হয়ে যায়। আর একটি গাড়ি এসে তুলি কে নিয়ে যায়।
তিয়াশ কিছু একটা ভেবে আবির কে কল দেয় তারপর আবিরের কথা শুনে কল কেটে দেয়।
তুহিন বলে নিশ্চয়ই কোনো পরিচিত কেউ ছিলো নাহলে ক্লাস শেষ হওয়ার আগে কেনো বের হবে আর কেনই বা অন্যের গাড়িতে উঠবে।
তিয়াশ কিছুক্ষণ ভেবে তুলি দের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সাথে তুহিন ও গেলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে