#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ০৬
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার
নীলিমা ওদের পিছু নিতে নিতে হারিয়ে ফেলে তাই তখনি চলে যায় তিয়াশ দের বাড়িতে। তিয়াশ রেগে গিয়ে তুলি দের বাসার সামনে আগে থেকেই দাড়িয়ে থাকে। সাথে তুহিন ও আছে। তার কিছুক্ষণ পরেই রিক্সা থেকে তুলি নামে। ভাড়া মিটিয়ে যখনি বাসার সামনে আসতে নেয় দেখে তিয়াশ আর তুহিন দাড়িয়ে আছে আর তাদের দুজনের মধ্যে তিয়াশ কে দেখতে রাগী লাগছে তুলির কাছে।
তুলি ওদের সামনে যেতেই ওদের চোখ পড়ে তুলির ওপর। তুলি তুহিন কে জিজ্ঞেস করে এখানে কেনো তারা। তুহিন কিছু বলার আগেই তিয়াশ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে তোর সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে তাই না তুলি?
তুলি বললো আমি কি করেছি ভাইয়া। আমার উপর রেগে আছেন মনে হচ্ছে।
তিয়াশ বেশি কিছু না বলেই তুলির হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো। আর বাড়ির ভিতরে গিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে তুলির আব্বু আর আম্মুকে ডাকলো।
তুলি মনে মনে ভাবছে ও আসলে কি ভুল করলো যে সোজা ওর আব্বু আম্মুর কাছে বিচার দিতে সোজা ওর বাসায় চলে এসেছে।
আর তখনি তিয়াশ পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বার ডায়াল করে তুলির আব্বুর কাছে দিলো। আর বললো আব্বু তোমার সাথে কথা বলবে ছোটো আব্বু।
ব্যস এতোটুকু শুনার সাথে সাথে ওনার চোখে পানি চলে এসেছে। তাড়াতাড়ি ফোন টা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ভাইয়া কেমন আছিস?
ওপাশ থেকে কিছু বললো যা শুনে সে খুব খুশি হলো। আর ফোন কেটে দিয়ে তিয়াশের হাতে ফোন দিয়ে দিলো।
তুলির আম্মু জানতে চাইলে তিনি বললেন যে আমাকে ফাঁসিয়েছিলো সে ধরা পড়েছে। আমাদের মধ্যে আর ভুল বুঝাবুঝি নেই। আমি আজ খুব খুশি শাহানা।
তখনি তার খেয়াল হলো তিয়াশ আর তুহিন দাড়িয়ে আছে। ওদের দেখে বললো দাড়িয়ে আছিস কেনো তোরা বোস। আগে তো আমাকে আর তোদের কাকিকে ছাড়া কিছুই বুঝতি না।
তুলি এতক্ষণ কিছু না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে যে ওই বাড়ির সাথে ওদের সম্পর্ক আবার আগের মতো হয়ে যাবে বা হয়ে গেছে। তুলি মনে মনে ভাবলো তাই হয়তো বাসার সামনে দাড়িয়ে ছিলো। আর আমি ভেবেছি আমি কোনো দোষ করেছি তাই শাস্তি দেওয়ার জন্য দাড়িয়ে আছে।
তখনি তিয়াশ তুলির কানের কাছে এসে বললো এতকিছু কি ভাবছিস তোর শাস্তি বাকি আছে তা তো আমি দিয়েই ছাড়বো জাস্ট ওয়েট এন্ড সি বলেই রাগী ভাবে তাকিয়ে সফায় গিয়ে বসলো। তুলি বুঝার চেষ্টা করলো কিন্তু বুঝতে পারলো না তিয়াশ কেনো রেগে আছে। তাই তুলি উপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
তিয়াশ আর তুহিন এই বাসায় খেয়েই চলে গেলো।
সন্ধ্যায় তিয়াশ আর তুহিন ক্লাব থেকে এক সাথে বাসায় ফিরলো বাসায় ফেরার পরই দেখতে পেলো তুহিনের দুই বোনের সাথে বসে নীলিমা গল্প করছে।। নীলিমা তিয়াশ কে দেখেই বললো কলেজে তোমাদের এতো ডাকলাম কোথায় গিয়েছিলে তোমরা। জানো তোমাদের পিছু পিছু কতদূর গিয়েছিলাম কিন্তু পরে হারিয়ে ফেলি তোমাদের আর বাসায় এসে পড়ি। তুহিন বললো বাসায় কোথায় গেলে আসলে তো আমাদের বাসায়।
তখনি তিয়াশের আম্মু বলে উঠলো আসতে না আসতেই মেয়েটার পিছনে কেনো লাগছিস তুহিন। তিয়াশ ওর ঘরে যেতে নিলেই তিয়াশের আম্মু বলে উঠলো তুলি দের বাসায় গিয়েছিলি?
তিয়াশ বললো হুম গিয়েছিলাম আব্বু বলেছিলো যেতে।
তিয়াশের আম্মু আর কিছু বলবে তার আগেই তিয়াশের আব্বু বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো হুম আমিই বলেছিলাম কোনো সমস্যা তোমার? সমস্যা থাকলে আমায় বলতে পারো। আমি নিজেই যেতাম কিন্তু আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম আর আসতে আসতে যদি দেরি হতো এত তর সইছিলো না আমার। তাই আসল সত্যিটা জানার সাথে সাথেই তিয়াশ কে দিয়ে খবর টা পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিয়াশের আম্মু বললো ভালোই করেছো কয়দিন পরে তো বাড়িতে অনুষ্ঠান ওদের ও খবর দিও।
তিয়াশের আব্বু বললো তা তো অবশ্যই।
এদিকে অনুষ্ঠানের কথা শুনে নীলিমার চোখে মুখে আলাদা খুশির ঝলক ফুটে উঠেছে যা তুহিন খেয়াল করেছে তাই তুহিন জিজ্ঞেস করলো কিসের অনুষ্ঠান বাড়িতে? আমি তো কোনো ব্যাপার দেখেছি না যার জন্য অনুষ্ঠান করা যায়।
তিয়াশের আম্মু বললো তা হলেই তোরা দেখতে পারবি তুহিন। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তোরা।
তিয়াশ তুহিন আর কথা না বাড়িয়ে উপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। যেতে যেতে তুহিন তিয়াশ কে বললো বাড়িতে বিয়ের সানাই বাজতে চললো।
তিয়াশ বললো হুম ভাবি আসবে আমার একটা।
তুহিন হাসতে হাসতে বললো আজ্ঞে মশাই আমার না আপনার। এই কথা বলেই তিয়াশ কে নিচে তাকাতে বললো তুহিন। তাকাতেই দেখে লামিয়া আর লাবণি নীলিমাকে কি যেনো বলছে আর নীলিমা শরম পাচ্ছে আবার হাসছে।
তিয়াশ বললো কি হয়েছে ওরা কথা বলছে।
তুহিন বললো এখন বুঝবি না সময় হলে ঠিকই বুঝবি বলেই তুহিন তার ঘরে চলে গেলো।
এদিকে নীলিমা তিয়াশের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললো আন্টি আমি যে কি খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। আমার ভালোবাসা কে আমি নিজের করে পাবো আর মাত্র কয়দিন।
তিয়াশের আম্মু বললো তিয়াশের সামনে ভালোভাবে থাকবি বুঝলি। ওর সামনে কারো সাথে খারাপ আচরণ ভুলেও করবি না। তারপর তিনি নীলিমা মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।
তিয়াশ রাতের খাবার খেয়ে বের হতে নিলে তুহিন বলে কোথায় যাচ্ছিস এতো রাতে তিয়াশ?
তিয়াশের সহজ উত্তর কেশোবতির কাছে যাচ্ছি। তবে আজকে ওকে শুধু দেখতে যাচ্ছি না ওর শাস্তি বাকি আছে তা ই দিতে যাচ্ছি তুহিন। বলেই বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।
এদিকে তুলি ঘুমের মাঝে টের পাচ্ছে ওর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর যখনি পুরোপুরি দম বন্ধ হয়ে যেতে নেয় তখনি কেউ শ্বাস নেওয়ার জন্য হাতের বাঁধন হালকা করে দিচ্ছে। ঘর অন্ধকার থাকার কারণে ভালোভাবে দেখতেও পারছে না লোকটি কে। হটাৎ করেই অনুভব করলো ওর ঘাড়ে কেউ কামড় দিয়েছে আর মুখে হাত দিয়ে রেখেছে যাতে চিৎকার না করতে পারে তুলি। কামড় দেওয়ার পর কানের সামনে কেউ ফিস ফিসিয়ে বললো আমার থেকে দূরেদূরে থাকলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ কিছু হবে। দরকার পড়লে তোমাকে মেরে তারপর আমি মরে যাবো কেশোবতি। আর কখনো এই ভুল করো না। ভালোবাসি অনেক।
এই কথা বলেই তিয়াশ বারান্দা দিয়ে চলে যায়।
তুলি এতক্ষন ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছিলো। হটাৎ নিজেকে ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে রুমের জ্বালায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। মনের ভুল ভেবে আবার গিয়ে শুয়ে পরে কিন্তু এবার আর লাইট বন্ধ করে না তুলি। গুটিশুটি মেরে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পরে আর ভাবে যে এটা কোনো দুঃস্বপ্ন ছিলো।
চলবে…