ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
884

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ০৫
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

তুলি বাসা থেকে বের হয়ে দেখলো তিয়াশ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তুলি মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিজেই গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো সামনের সিটে। তা দেখে তিয়াশ অবাক হলেও মুখে কিছু না বলে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।

তিয়াশঃ আজ জোড়াজুড়ি না করতেই ভালো মেয়ের মতো এসে বসে পড়লি যে। আর চোখে তাকিয়ে বললো কথা টা।

তুলিঃ তুমি হটাৎ এসে আমার বাসার সামনে দাঁড়ালে যে? বলে তিয়াশের উত্তরের জন্য তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তিয়াশঃ এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোকেও সাথে করে নিয়ে যাই। আর কিছু না।

তুলিঃ এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে? তোমাদের বাসা থেকে তো কলেজ বেশি কাছে তাহলে এই রাস্তায় কি করছো?

তিয়াশ এইবার রেগে গিয়ে বলে তোর এতো কিছু জেনে কি লাভ? নীলিমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু ও চলে গেছে কলেজে তাই ভাবলাম এই রাস্তা দিয়েই যেহেতু যাচ্ছি তোকে নিয়ে যাই সাথে করে।

তুলি মনে মনে ভাবলো কি বললো নীলিমা আপুর সাথে দেখা করতে এসেছে। তাহলে কি আমিই ভুল ভাবছি ভাইয়া আমাকে না নীলিমা আপুকে ভালোবাসে। আর ভাইয়ার ফোনে যেই মেয়েটা আমি নিজেকে ভেবেছিলাম সেটা আসলে নীলিমা আপুর ছবি। কারণ মেয়েটার এক সাইডের ছবি ছিলো সেটা। আর আমি ভেবেছিলাম আমার ছবি।
তুলি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। কলেজে পৌছাতে আর কিছুদূর বাকি তার আগেই তুলি বলে উঠলো গাড়ি থামান আমি নামবো।

তিয়াশঃ কেনো? কোনো কাজ থাকলে বল আমি করে দিচ্ছি এতো আগে কোনো নামবি। আর আবার আপনি।

তুলিঃ কলেজে গিয়ে আপনার গাড়ি দিয়ে নামলে সবাই খারাপ ভাবে নেয় ব্যাপার টা। আর তাছাড়া নীলিমা আপু দেখলেও খারাপ লাগবে তার। যতোই হোক আপনি তার হবু স্বামী। হবু স্বামীর সাথে অন্য একটি মেয়েকে দেখলে যে কোনো মেয়েরি খারাপ লাগবে।

তিয়াশের কোনো হেলদুল দেখলো না সে তার মতই গাড়ি চালাচ্ছে তাই তুলি জোরেই বলে উঠলো গাড়ি থামান বলছি।
তিয়াশ সাথে সাথেই গাড়ি থামিয়ে দিলো আর বললো সমস্যা কি তোর?
তুলি বললো আমি নামবো।
তিয়াশ ওর কথার পাত্তা না দিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলেই তুলি বাইরে বের হয়ে যায়। আর বলে আমার খাতা গুলো দিন।

তিয়াশঃ খাতা কিসের খাতা? খাতা দিয়ে কি করে? খায় না মাথায় দেয়?

তুলিঃ মজা বাদ দেন তিয়াশ ভাইয়া। আমার অ্যাসাইনমেন্ট খাতা দেন।

তিয়াশঃ অ্যাসাইনমেন্ট খাতা আবার কি আমি চিনি না। এই বলেই গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো তিয়াশ।

তিয়াশঃ কলেজে গিয়ে দাড়িয়ে আছে কখন আসবে তুলি। এতক্ষণ তো লাগার কথা না।

এদিকে তুলি রাস্তায় ভাবছে নিশ্চয়ই বজ্জাত ছেলে লেখে নি আমার অ্যাসাইনমেন্ট। এখন আমি কি করবো স্যার এমনিতেই কাল আমায় কতোগুলো কথা শুনালো আজ তো আরো শুনাবে আমি ১০০% শিওর।
আজ কি কলেজে যাবো নাকি কাল করে একেবারে নিয়ে আসবো। আর একটু এগোলেই তো কলেজ। কলেজের সামনে এসে ফেরত গেলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়। থাক যাই আজকে। বকা খেলে খাবো।

কলেজে নীলিমা তিয়াশ কে দেখতে পেয়েই তার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর বলে..
তিয়াশ জানো কারা যেনো আমায় মেরেছে। আমার অনেক জ্বর হয়েছিলো। আন্টিকে তো বলেছিলাম তুমি আমায় দেখতে গেলে না কেনো তিয়াশ। এই তিয়াশ আমার দিকে তাকাও গেটের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো।

তিয়াশঃ বিরক্ত করো নাতো যাও এখান থেকে। আর নিশ্চয়ই তুমি কোনো অপরাধ করেছো তাই তোমাকে মেরেছে এতে আমি কি করতে পারি।

নীলিমা হটাৎ করে তিয়াশের হাত ধরে বলছে তিয়াশ তুমি কি আমার উপর কোনো কারণে রেগে আছো?
তিয়াশ রেগে গিয়ে যখনি হাত ছাড়াতে নিবে তখনই তুলি কলেজে প্রবেশ করে। তিয়াশ তা দেখে তাড়াতাড়ি নীলিমার হাত ছুটাতে নেয়। কিন্তু নীলিমা ছাড়ে না।
তুলি প্রবেশ করতেই দেখে নীলিমা তিয়াশের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। তুলি আর ওদিকে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে শিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো ক্লাস করতে।
নীলিমা হাত ছাড়তে চাইছে না দেখে এক চড় বসিয়ে দিলো নীলিমার গালে তিয়াশ।
মাঠে যারা যারা ছিলো সবাই তাকিয়ে আছে।
তিয়াশ আর না দাড়িয়ে শিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।

তুলি দের ক্লাসে স্যার অ্যাসাইনমেন্ট চাইলে সবাই দিলেও তুলি দিতে পারলো না। তা দেখে স্যার বললো কি ব্যাপার তুলি তোমার অ্যাসাইনমেন্ট কোথায়? আমি কাল বলে দিয়েছিলাম কেউ আনুক আর না আনুক তুমি আনবে কারণ তোমার অনেক গুলো বাকি।

তুলি কিছু বলতে নিবে তার আগেই ক্লাসে তিয়াশ এসে হাজির। তিয়াশ কে দেখে সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে।
তিয়াশ স্যারের কাছে তুলির অ্যাসাইনমেন্টের খাতা দিয়ে বললো.. স্যার এই গুলো তুলির খাতা।
স্যার খাতা গুলো নিয়ে দেখতে লাগলো। একবার তুলির দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার তিয়াশের দিকে। কারণ তিনি তিয়াশের হাতের লেখা চিনেন। কিন্তু কিছু বললেন না।
তিয়াশ স্যার কে বলে চলে আসলো ক্লাস থেকে। আর সকলের গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো।
তুলির সামনের বেঞ্চের একটি মেয়ে আরেকটি মেয়েকে বলছে.. দেখেছিস এই মেয়ের খাতা তিয়াশ ভাইয়া দিয়ে গেলো। তিয়াশ ভাইয়া কি এই মেয়েকে ভালোবাসে নাকি রে? সে তো জানতাম কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলে না। আর এ তো সোজা খাতা বয়ে এনেছে এতদূর। কাউকে দিয়ে পাঠালেই তো পারতো। এরকম আরো অনেক কথা অনেকে বলছে। তখন স্যার সবাইকে চুপ করতে বললে সবাই চুপ করে যায়।

তিয়াশ নিচে নামতেই দেখে তুহিন দাড়িয়ে আছে। তিয়াশ কে দেখেই তুহিন বললো এই দিকে তো তুলির ক্লাস তুই এখানে কি করছিলি?
তখন তিয়াশ তুহিন কে সব বললো। তারপর ওরাও ওদের ক্লাসে চলে গেলো ক্লাস করতে।

কলেজ ছুটি হলে সবাই বের হয়। তিয়াশ আর তুহিন কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো তখন নীলিমা এসে বলে আমিও যাবো তোমাদের সাথে বাসায় আন্টি আমাকে আজকে ওই বাড়িতে খেতে বলেছে।
তুহিন বললো আমরা বাসায় না ক্লাবে যাচ্ছি। কই তিয়াশ তো দাড়িয়ে আর কারো জন্যে হয়তো অপেক্ষায় আছে নীলিমা বললো কথাটা।
তখনি তুলি দেখলো ওরা এক সাথে দাড়িয়ে আছে।

তুলি মনে মনে বললো সকালেও নীলিমা আপুর সাথে ছিলো আর এখনো। আর আমি ই বা এতো ভাবছি কেনো ওদের কয়দিন পর বিয়ে হবে ওরা তো কথা বলতেই পারে।
তুলি কে তিয়াশ খেয়াল করেনি। তুলি কলেজ থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠলো।
তিয়াশ অনেকক্ষণ যাবার পরেও যখন দেখলো তুলি আসছে না তখন তুলি দের ক্লাসের একটি মেয়েকে তুলির কথা জিজ্ঞেস করলে মেয়েটি বলে তুলি অনেক আগেই চলে গেছে। এই কথা শুনে তিয়াশের অনেক রাগ হয়। তিয়াশ কিছু না বলেই বের হয়ে যায় আর পিছু পিছু যায় তুহিন। আর পেছন থেকে ডাকতে থাকে নীলিমা।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে