# ভিলেনি ভালোবাসা
পার্টঃ ০৪
লেখিকাঃ #তিথি সরকার
তুলি ক্লাস করছে এমন সময় তার পাশের মেয়েটি বললো তোমার গালে দাগ কিসের তুলি? মনে হচ্ছে কেউ মেরেছে।
তুলিঃ না তেমন কিছু না। বলেই খাতায় লিখতে শুরু করলো।
ক্লাবে তিয়াশ মিটিং করছিলো তখন তুহিন আর আবির ও এসে পৌঁছায়। মিটিং শেষ হলে তুহিন বলে সামনে আমাদের থার্ড ইয়ার দের ফাইনাল পরীক্ষা ক্লাস করবি না? নাকি এইসব নিয়েই পরে থাকবি তিয়াশ।
তিয়াশঃ যা গিয়ে ক্লাস কর।
তুই ও চল বলে টেনে নিয়ে গেলো তিয়াশ কে।
ক্লাস শেষ হলে সবাই গিয়ে মাঠে গিয়ে আড্ডা দিতে থাকে।কিছু মেয়ে সাইড এ দাড়িয়ে কথা বলছে তার মধ্যে একটি মেয়ে বলে.. দেখিস তিয়াশ কে আমি প্রোপজ করবো। আরেকটি মেয়ে বলে উঠে তিয়াশের সাথে তো নীলিমার বিয়ে হবে দেখিস না নীলিমা কেমন আঠার মতো তিয়াশের পিছে পরে থাকে। তখন প্রথম মেয়েটি বলে তো কি হয়েছে তিয়াশ তো আর ওকে পছন্দ করে না।
তুহিনঃ নীলিমার অনেক জ্বর এসেছে শুনলাম।
তিয়াশঃ ওর খবর কবে থেকে রাখতে শুরু করলি তুহিন?
তুহিনঃ আরে মা বলেছিলো তাই জেনেছি। মার টা তাহলে ভালোই পড়েছে বল?
তিয়াশঃ হুম।
তিয়াশ তুলির জন্য দাড়িয়ে ছিলো তখন দেখতে পায় নীরব ও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কাউকে বার বার খুজছে। তুলির ক্লাস শেষ হলে তুলি বের হয়ে আসে। তখনি নীরব তুলির কাছে গিয়ে বলে চলো তুলি আমি তোমার জন্যই দাড়িয়ে আছি। তুলি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো তিয়াশ কোথাও আছে কিনা। না দেখতে পেয়ে তুলি বললো আমি একাই যেতে পারবো আপনার এতো ভাবতে হবে না। নীরব যেই আবার তুলিকে কিছু বলতে নিবে তখনি হঠাৎ করে তিয়াশ এসে তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আর কলেজের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু প্রায় সবাই ই ধরে নিয়েছে যে তুলি তার ছোট কাকার মেয়ে তাই বোন হিসাবে নিয়ে যায় নিয়ে আসে কলেজে।
আর নীরব কতক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ওদের যাওয়ার দিকে চেয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায়।
গাড়িতে বসতে বললে তুলিও কোনো তর্ক না করে বসে পড়ে।
তুলিঃ আপনি কোথায় বসবেন?
তিয়াশঃ কেনো তোর পাশে। কোনো সমস্যা?
তুলিঃ ড্রাইভার আঙ্কেলের পাশে বসেন।
তিয়াশ না শুনার ভান করে তুলির পাশেই বসলো আর বললো আগে তো তুমি করে বলতি এখন এতই পর হয়ে গেলাম যে আপনি তে চলে গেলাম। বিড়বিড় করে বললো কথা টা।
তুলি কথা টা শুনেছে। কিন্তু মুখে কিছু বললো না। হটাৎ করে তুলি বলে বসলো..ভালোবাসো?
তিয়াশঃ হুম
তুলিঃ তাহলে বলছো না কেনো?
তিয়াশঃ কাকে?
তুলিঃ আমাকে
তিয়াশঃ পাগল হয়েছিস। তোর মতো বেহায়া মেয়েকে ভালোবাসবো।
তুলিঃ তাহলে এতো অধিকার দেখান কেনো।
তিয়াশঃ আবার আপনিতে ট্রান্সফার হয়ে গেলাম।
তুলি মনে মনে বললো ভালো না বাসলে আমার ছবি ফোনের ওয়াল পেপারে কি করে। ঘাস কাটতে রেখেছে আমার ছবি। ভালোবাসবে কিন্তু মুখে শিকার করবে না। কেনো রে বেটা মুখে শিকার করলে কি তোর মাথার সব চুল পরে যাবে। যতদিন শিকার না করবি আমিও জ্বালাবো দেখবো কত সহ্য করতে পারিস। আর শিকার করলেও জালাবো। ভাগ্যিস তখন গাড়িতে বসার সময় ভাইয়ার ফোন পরে গিয়ে ফোনের স্ক্রিন জলে উঠেছিলো।ভাইয়া ভেবেছে আমি দেখিনি। কিন্তু আমি তো দেখে নিয়েছি হুহ…ভাবতেই কেমন যেনো আনন্দ হচ্ছে।
তিয়াশঃ কিরে কি এতো ভাবছিস?
তুলিঃ ভাবছি কার ঘাড়ে চাপাবো।
তিয়াশঃ কি চাপাবি? কাকে চাপাবি?
তুলিঃ তেমন কিছু না।
কথা বলতে বলতে তুলি দের বাসার সামনে এসে গেছে তাই তুলি নেমে গেলো। তিয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুলি নিজের ব্যাগ থেকে ৪ টা খাতা বের করে দিয়ে বললো এই অ্যাসাইনমেন্ট গুলো দিয়েছে আজকে কলেজে কালকে জমা দিতে হবে। আমি ক্লাসে নতুন তাই আগের গুলোও করা নেই আমার। এই গুলো লিখে কালকে আমাকে দিবে আর তারপর আমি ক্লাসে জমা দিবো।
তিয়াশ হতভম্বের মতো চেয়ে আছে যেনো তুলি কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। বকবে না কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তুলিকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুলি দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আর যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলে যায় ভালো না বাসলে করার দরকার নেই।
এদিকে তিয়াশ পড়লো ঝামেলায় কিভাবে এক রাতে এতো অ্যাসাইনমেন্ট করবে সে।
ভাবতে ভাবতে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার ক্লাবে চলে গেলো সেখানে তুহিন ছিলো। তুহিন তিয়াশ কে দেখে বললো তোর হাতে এই খাতা গুলো কিসের? আর দেখে তো মনে হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্টের খাতা। আমাদের তো কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেয়নি। তিয়াশ কিছু বললো না চুপ করে আছে ওকে চুপ করে থাকতে দেখে তুহিন খাতা গুলো নিয়ে দেখলো এই গুলো তুলির খাতা।
তুহিনঃ তুই বোধ হয় ভুলে তুলির খাতা নিয়ে এসেছিস তিয়াশ। যা গিয়ে দিয়ে আয়।
তিয়াশঃ ভুল করে না তুলি নিজেই খাতা গুলো আমায় দিয়েছে।
তুহিনঃ ও.. বুঝেছি খাতা কিনতে বলছে বা রাখতে দিয়েছে তাই না? কিন্তু কিনলে নাম আসলো কি ভাবে চিন্তা করতে করতে বললো কথা টা তুহিন।
তিয়াশ তখন নরম গলায় বললো অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে দিয়েছে আমাকে তাও আবার কালকে সকালে জমা দিতে হবে ৪ টা অ্যাসাইনমেন্ট ই..(বেচারা মুখ করে তিয়াশ)।
তুহিনঃ বাহ বাহ ভালো তো করো তাহলে।
তিয়াশ করুন চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুহিনঃ একদম না তিয়াশ আমি এইসব করতে পারবো না আমার অনেক কাজ আছে।
তিয়াশঃ প্লিজ ভাই অর্ধেক করে দে।
তুহিনঃ একদম না। না মানে না।
তিয়াশঃ চকলেট দিবো তোকে।
তুহিনঃ হা হা হা.. হাসতে হাসতে বললো বাচ্চা পেয়েছিস তিয়াশ? আর তুই নিলি কেনো না করে দিতি। তোকে কেউ হুকুম দেওয়ার সাহস পায় না সেই জাগায় এক বাচ্চা মেয়ের হোম ওয়ার্ক নিয়ে এসেছিস করার জন্য? সত্যি ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত।
তিয়াশঃ হাসবি না একদম তুহিন ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। তুই তো জানিস ওর কথা আমি না রেখে থাকতে পারি না। আর আমি কিছু বলতেও পারিনি তখন।
আবির এতক্ষন সব শুনছিলো ও এসে বললো ভাই আজকে রাতে তাহলে আমরা বাকি ছেলেরা ইলেকশন এর জন্য কথা বলে আসি আপনি ভাবির কাজ করেন বলেই মুখ টিপে হাসলো তুহিন আর আবির।
ক্লাবের আরো লোকেরা কথা শুনছিলো কিন্তু বুঝেনি তারা কি বিষয় নিয়ে কথা বলছে। তবে এতটুকু বুঝেছে যে তিয়াশ ও কোনো একজন কে ভয় পায়। আর সেই ভয় টা হলো ভালোবাসার ভয়।
।
।
রাতে তুলি খেয়ে-দেয়ে ঘরে গিয়ে ভাবছে ভাইয়া কাজ টা নিশ্চয়ই কমপ্লিট করবে। নাহলে আমাকে বকা দিতো যদি নাই করতো কাজ টা। আর এতেই বুঝা যায় ভাইয়া আমাকে কতো টা ভালোবাসে। এখন ভাববার বিষয় ভাইয়াকে আর কি কি ভাবে জ্বালানো যায়। খুব চিন্তার বিষয়। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে তুলি।
এদিকে তিয়াশ খাবার খেয়ে ঘরে গিয়ে সারা রাত একটার পর একটা অ্যাসাইনমেন্ট করতে লাগলো। ঘুম পেলেও অনেক কষ্টে জেগে থেকে অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে লাগলো তিয়াশ।
রাতে তিয়াশের ঘরে আলো জ্বলতে দেখে তিয়াশের মা একবার এসে দেখে তিয়াশ রাত জেগে পড়াশোনা করছে। তখন ওনার চোখ পড়ে একটি খাতার উপর যেখানে তুলির নাম লেখা ছিলো। কিন্তু মুখে কিছু না বলে মনে মনে কিছু একটা ভেবে চলে যায়।
তিয়াশের আম্মু তিয়াশের আব্বু কে বললো তিয়াশ তো এখন তোমার ব্যবসা সামলালেই পারে। আর যতো তারাতারি সম্ভব তিয়াশের সাথে নীলিমার বিয়ে ট্ দিয়ে দিতে হবে।
তিয়াশের আব্বু বললো তিয়াশ রাজি থাকলে দিয়ে দিবো সমস্যা নেই।
তিয়াশের আম্মুঃ আমি যা বলবো আর যাকে পছন্দ করবো আমার ছেলেও তাকেই পছন্দ করবে। আমি যা বলবো তাই মেনে নিবে।
তিয়াশের আব্বুঃ তাহলে আর কি যা ভালো বুঝ কর।
ঠাস করে ঠাপ্পর মেরে সামনের দুটি দাঁত ফেলে দিয়েছে তিয়াশ তুলির। আর বলছে..
তোর সাহস কিভাবে হলো আমাকে হুকুম দেওয়ার বল.. (চেঁচিয়ে)
তুলঃ সরি ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না।
তিয়াশঃ কানে ধর বেয়াদব। এক পা উচু করে দাড়িয়ে থাকবি। যতখন না আমি বলবো নামাবি না পা।
তুলি অনেকক্ষন পা উচু করে রাখার পর হঠাৎ করে পরে যায়।
তুলি চোখ খুলতেই দেখে সে তার নিজের ঘরেই আছে আর খাট থেকে মেঝেতে পরে গেছে। তুলি মনে মনে ভাবলো তারমানে এটা স্বপ্ন ছিলো। শুধু স্বপ্ন নয় দুঃস্বপ্ন ছিলো। কি ভয়ানক স্বপ্ন ছিলো।
যদি কালকে সত্যি সত্যিই এমনটাই হয়। ফোনে দেখলো রাত ৩ টা বাজে। আর আজকে ওই আইডি থেকে কোনো মেসেজ ও আসেনি। ফোন রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো তুলি।
।
।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো তুলি।
আর এদিকে এখনো লিখছে তিয়াশ। সবে মাত্র লিখা শেষ হলো তিয়াশের। তিয়াশ ও ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আর রেডি হয়ে খেয়ে বাড়ি থেকে বের হলো তিয়াশ।
তুলির বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিয়াশ।
চলবে…