ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
961

#ভিলেনি ভালোবাসা
#পার্টঃ ০৩
লেখিকাঃ #তিথি সরকার

নীলিমাকে কারা যেনো কলেজের একা একটি ঘরে নিয়ে ইচ্ছা মতো চরিয়েছে। তবে সেগুলো সব মেয়ে ছিলো। মেয়ে গুলোকে দেখতে পায় নি নীলিমা কারণ ঘর অন্ধকার ছিলো। আর মেয়ে গুলো নীলিমা কে মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীলিমাও ওদের আর খুঁজে পায় নি। নীলিমার অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে তাই তার বন্ধুদের ফোন দিয়ে বলে তাকে বাসায় দিয়ে আসতে। নীলিমার বন্ধুরা দেখে জিজ্ঞেস করলে নীলিমা বলে আমি চিনতে পারিনি। তারপর নীলিমার বন্ধুরা নীলিমাকে তার বাসায় দিয়ে আসে।


সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো তুলির। ঘুম ভাঙতেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বসলো। মা মেয়ে মিলে গল্প করছে আর রাতের খাবারের আয়োজন করছে।

তুলিঃ আচ্ছা আম্মু ভাইয়াদের সাথে কি আবার সব কিছু ঠিক করা যায় না?

শেফালি বেগম (তুলির আম্মু) ঃ না যায় না। ওনার সাফ উত্তর।

তুলিঃ কেনো আম্মু আব্বু তো চাইলেই আবার আগের মতো সব ঠিক করতে পারে।

তুলির আম্মুঃ সব ঠিকঠাক করলেও দেখিস না তোর মেজো কাকি তোকে আমাকে দেখতে পারে না। আসলে তোর মেজো কাকি চেয়েছিলো তার ছোটো বোনের সাথে তোর বাবার বিয়ে দিতে কিন্তু তোর বাবা আমাকে বিয়ে করে আনলো ওই বাড়িতে এর পর থেকেই আমাকে দেখতে পারে না আর তুই হয়েছিস পর তোকেও দেখতে পারে না।

তুলি তার মায়ের মন ভালো করার জন্য বললো তোমার সিরিয়ালের সময় হয়ে গিয়েছে চলো দেখি।
এভাবেই মা মেয়ে গল্প করতে করতে কাজ করছে।


এদিকে তিয়াশ ক্লাব থেকে এসে তুহিন আর আবীরের কাছে আছে।

তুহিনঃ ছেলে টার নাম নীরব। আমাদের সাথেই পরে। সুমন কাকার বন্ধুর ছেলে। আর ওর জন্যই তুলিকে কাকা এই কলেজে ভর্তি করেছে। কাজ টা প্ল্যানফুল্লি করা হয়েছে যাতে ওদের মাঝে বন্ধুত্ব হয় আর শেষে ভালোবাসা আর ভালোবাসা থেকে বিয়ে।

আবীরঃ তুলি ম্যাডামই কি তাহলে আপনার মহারাণী তিয়াশ ভাই?

তুহিনঃ সে আবার বলতে…

তিয়াশ এতক্ষণ চুপ ছিলো এবার বলে উঠলো নীরবের উপর নজর রাখবি। যেনো বেশি মিশতে না পারে তুলির সাথে। আমি যাচ্ছি।

তুহিনঃ কোথায় যাচ্ছিস এতো রাতে তিয়াশ?

তিয়াশঃ যার কাছে প্রতিদিন রাতে যাই এক নজর দেখতে তাকে জোছনার স্নিগ্ধ আলোয়।
এই বলেই তিয়াশ বেরিয়ে গেলো।


তুলি আর তুলির আব্বু আম্মু খাচ্ছে এমন সময় তুলির আব্বু বলে উঠলেন

তুলির আব্বুঃ কলেজে কারো সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে মামুনি?

তুলিঃ হ্যাঁ আব্বু অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে?

তুলির আব্বুঃ কলেজ কেমন লাগে মামুনি?

তুলিঃ ভালো আব্বু।

তারপর তারা খেয়ে ঘরে চলে গেলো। তুলি টেবিলে পড়তে বসেছে এমন সময় ফোনে মেসেজ আসলো খেয়েছো কেশোবতি?
তুলি এবারো সেই মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিলো না।
তারপর কিছুক্ষণ পড়ে ঘুমিয়ে গেলো।

সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি মশার কামড় খাচ্ছি কিন্তু মহারাণীর ঘুমানোর কোনো নামও নেই। ঘুমালে একটু শান্তি মতো দেখতে পারি ওকে নাহলে তো চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে।
তিয়াশ দেখলো তুলির ঘরের লাইট নিভানো তাই আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পাইপ বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে পড়লো। বারান্দা দিয়ে যখনি ভিতরে যেতে নিবে তখনি দেখে তুলি ভূতের মতো বসে রয়েছে। আসলে তুলি ভাবছিলো কাল কলেজ যাবে নাকি যাবে না। তুলি কিছু একটা ভেবে ঘুমিয়ে পরে। আর এদিকে তিয়াশ হটাৎ করে তুলিকে এই ভাবে বসে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। তারপর আরো কিছুক্ষণ যাবার পর সে তার মহারাণী কে দেখে চলে আসে।


কিরে তিয়াশ এটা কোনো সময় বাসায় ফেরার? (তিয়াশের আম্মু বললো কথা টা) কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
তিয়াশঃ তোমার কাছে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।
তিয়াশের আম্মুঃ বড়দের মুখে মুখে কথা বলতে ভালোই শিখেছিস।
তিয়াশ শিড়ি বেয়ে চলে যেতে নিলে তিয়াশের আম্মু আবার বলে.. খাবি না? খেয়ে যা
তিয়াশঃ খিদে নেই।
এই বলেই চলে উপরে তিয়াশ।

তিয়াশ ঘরে ঢুকতেই তুহিন এসে বললো খেলি না কেনো।

তিয়াশঃ নাহ খিদে নেই।

তুহিনঃ কিছু নিয়ে চিন্তা করছিস তিয়াশ?

তিয়াশঃ হুম

তুহিনঃ কি নিয়ে?

তিয়াশঃ ভাবছি কয়দিন পরেই তো পিকনিক হবে কলেজ থেকে আর তুলি যেই একঘুয়ে মেয়ে ও কি যাবে?

তুহিনঃ না গেলে কি আমরা তো যাবো। আর এসবের দায়িত্ব তো আমাদের উপরেই থাকবে আমরা না গেলে তো আর চলবে না তাই না।

তিয়াশঃ তুলি কে ছাড়া আমি যাবো না।

তুহিনঃ তুই এর আগেও কখনো যাস নি। এবারো না?

তিয়াশঃ এর আগে কেনো যাই নি জানিসই তো। এর আগে তুলি ছিলো না আমার সাথে তাই যাই নি। কিন্তু এবার ও আছে তাই ও না গেলে আমিও যাবো না।

তুহিনঃ আচ্ছা ঠিক আছে আগে দেখি তুলি কি বলে। গেলে তো ভালোই না গেলে অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।

তিয়াশঃ হুম।
তিয়াশ আর তুহিন যে যার ঘরে চলে গেলো। আর তিয়াশ তুলির ছবি ফোনে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলো।


সকালে তুলি রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হলো তখনি আবার সব সময়ের মতোই মনে হতে লাগলো যেনো কেউ তাকে ফলো করছে। পিছনে ফিরে অনেকবার দেখেছে কিন্তু কাউকে দেখতে পায়নি।
কিছুদূর যেতেই দেখে নীরব ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। তুলির সামনে এসেই নীরব বললো চলো তোমাকে কলেজে ড্রপ করে দেই।

তুলিঃ না না নীরব ভাইয়া আমি যেতে পারবো।

নীরবঃ আরে চলো তো।

তুলি শত না করার পরেও নীরব মানার পাত্র নয়। অনেক জোড়াজুরির পর তুলি রাজি হলো। তাই তারা এক সাথে নীরবের গাড়ির কাছে গেলো। নীরব তুলির বসার জন্য গাড়ির সামনের দরজা খুলতেই কেউ একজন তুলির হাত টেনে তার কাছে নিয়ে ঠাস করে এক চর বসিয়ে দিলো তুলির গালে। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে তুহিন রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে যেনো এখনি কেটে কুটি কুটি করবে তাকে। তুলিকে মারতে দেখে নীরব বেশ জোরেই বলে উঠলো কি হলো ভাই এটা?
তিয়াশ নীরবের কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে গলায় বেশ কাঠিন্য ভাব নিয়ে বললো তুই ছেঁচড়া জানতাম কিন্তু এতোটা ছেঁচড়া জানতাম না। নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে লজ্জা করে না অন্যের গাড়িতে উঠতে?

তুলিঃ আমি তো না করেছিলাম কিন্তু ভাইয়া এতো জোর করলো তাই…

তুলিকে চুপ করিয়ে দিয়ে আবার রাগী গলায় বলে উঠলো জোর করলেই উঠতে হবে ইডিয়ট মেয়ে।
তখনি নীরব বলে উঠলো তুলি আমার গাড়িতে যাক বা না যাক তাতে আপনার কি? সম্মান করি আপনাকে সম্মানের অমর্যাদা করবেন না দয়া করে। তুলি চলো আমার সাথে এই কথা বলেই আবার তুলিকে গাড়িতে বসতে বললো।
তুলিও মনে মনে ভাবলো কাল আমায় নীলিমা আপু মারলো কই তখন তো কিছু বললো না আপুকে। আমিও আজ নীরব ভাইয়ার সাথেই যাবো দেখি কি করে এই ছেলে। নিজে ইডিয়ট আমাকে বলে ইডিয়ট গর্ধব একটা। মনে মনে ভেবেই গাড়িতে বসে পড়লো হাত ছাড়িয়ে।

তিয়াশ গাড়ি থেকে নামিয়ে তুলি কে আবার এক চর দেওয়ার জন্য হাত তুললে তুলি নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢাকে তা দেখে তিয়াশ হাত নামিয়ে নেয় আর শান্ত ভাবে বলে আমার সাথে চল কলেজে পৌঁছে দিচ্ছি।
তখন নীরব কিছু বলতে নিলে তিয়াশ রাগী চোখে তাকায় তাই নীরব চুপ হয়ে যায়।
তুলি মনে মনে ভাবে এক চড় অলরেডি খেয়ে নিয়েছি আর খেতে চাই না তিয়াশ ভাইয়ার সাথেই চলে যায় এই ভালো হবে। তখনি তিয়াশ ফোন বের করে কাউকে কল দিলো তার এক মিনিটের মধ্যেই তিয়াশের গাড়ি তাদের সামনে হাজির। এতো তারাতারি গাড়ি আসতে দেখে তুলি বললো ভাইয়া আপনি গাড়ি ছাড়া হাঁটছিলেন নাকি। নাকি গাড়ি নিয়ে বের হোন কিন্তু গাড়িতে বসতে ভালো লাগে না তাই খালি গাড়ি রেখে রাস্তায় হাটেন? নাকি গার্লফ্রেন্ডের পিছু নিয়েছেন তাই গাড়ি ছাড়া হাঁটছেন? কারণ আপনি যখন আমাদের সাথে কথা বলছিলেন তখন তো আশেপাশে কোনো গাড়ি ছিলো না। বলেই এক ভ্রু উচু করে তাকালো তিয়াশের দিকে।
তুলি তুলির এমন খাপছাড়া কথা শুনে কেশে উঠলো তিয়াশ আর ধমক দিয়ে বললো গাড়িতে উঠ এতো ফালতু কথা না বলে।

গাড়িতে বসার পর তিয়াশ ওর গালে হাত দিয়ে বললো বেশি লেগেছে? আবার ভাবিস না তোর জন্য চিন্তা হচ্ছে তাই বলেছি। জোরে মেরেছি তাই বলেছি। এমনিতে কাউকে মেরে আমি জিজ্ঞেস করি না তোর ভাগ্য ভালো তোকে জিজ্ঞেস করছি।
ঠাস করে কত্ব জোরে মেরে এখন বলছে বেথা করছে কিনা বেটা খচ্চর। মনে মনে বললো তুলি। মুখে কিছু না বলে চুপ করে রইলো। তিয়াশ ও আর কিছু বললো না।

কলেজে গিয়ে গাড়ি থামালে তুলি নেমে যেতে চাইলে তিয়াশ বাধা দেয় আর নিজে আগে নেমে তুলির পাশের দরজা খুলে দেয়। তুলি কলেজে নামার সাথে সাথেই সবাই অবাক চোখে চেয়ে থাকে বিশেষ করে মেয়েরা। কারণ তিয়াশ কাউকে তার গাড়িতে করে নিয়ে এসে আবার নিজেই দরজা খুলে দিচ্ছে তাও আবার একটা মেয়েকে। ব্যাপার টা যেনো কারো বিশ্বাস হলো না।
তুলি সবার মুখ দেখে বুঝতে পারছে যে সবাই কেনো চেয়ে আছে তাদের দিকে। কারণ কলেজে প্রথম দিন এসেই সব মেয়েদের কাছে তিয়াশের ব্যাপারে জেনেছিলো। সব মেয়েরা তিয়াশের সাথে কথা বলতে চাইলেও তিয়াশ বলে না। খুব রাগী তিয়াশ কিন্তু বড়দের সাথে ভালো ভাবে কথা বলে। সব মেয়েদের ক্রাশ তিয়াশ ব্লা ব্লা… কিন্তু পরে জানতে পারে এই তিয়াশ তার কাকাতো ভাই যাকে তুলি নিজেও ভালোবাসে।
তুলি সবার দিকে নজর না দিয়ে সোজা ক্লাসে চলে গেলো। যাওয়ার সময় শুনতে পেলো পেছন থেকে অনেকে অনেক কথা বলছে ফিসফিসয়ে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তুলি ক্লাসে চলে এসেছে।
আর তিয়াশ ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেলো ক্লাবে।


চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে