Monday, October 6, 2025







ভাস্কর – লেখা-ইসরাত

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_এপ্রিল_২০২১

ভাস্কর
লেখা-ইসরাত
মাস শেষ হতে আরও আঠারো দিন বাকি। কিন্তু ব্যাগের ভিতর থাকা গভর্নর সাহেবের সাইন দেয়া কাগজগুলো সে কথা বলছে না। তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে টেনেটুনে আর এক সপ্তাহ এরা আমাকে পার করতে পারবে। এরপর? চিন্তার ছাপ মুখেও পড়েছিল বোধহয়। প্রিয় বান্ধবীর নজর এড়ালো না সেটা। পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী রে, মুখটা যে একেবারে আমসি বানিয়ে রেখেছিস।কী হয়েছে?” সোমা, আমার আত্মার বন্ধু, ওর কাছে আমার কিছুই গোপন নয়। বেশি কিছু বলতে হলো না। টাকা-পয়সার ব্যাপার, বলতেই বুঝে গেল। কিছুক্ষণ মুখটা শুকনো করে রাখল। তারপর কী মনে হতেই মুখটা আলোয় উদ্ভাসিত করে বলল, “এই, তোর একটা ব্যবস্থা হতে পারে, চল আমার সাথে।”

আমি যূথিকা, সবাই ডাকে যূথি। নিম্নবিত্ত কেরানি বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ। চতুর্থ সন্তানরা বেশিরভাগ পরিবারেই অবহেলিত হয়, না বড়, না মেজ, না সেজ, না ছোটো। পরিবারে তাদের কোনো অবস্থানই থাকে না। আমার ক্ষেত্রে এ ধারার কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। তার কারণ হচ্ছে, আমি অসম্ভব রূপবতী, আমার অন্য ভাইবোনরা দেখতে মোটামুটি ভালো হলেও আ্রমার আশেপাশে কেউই লাগে না। তাই আমার মা-বাবা সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আমরা থাকি সরকারি চতুর্থ শ্রেনীর স্টাফ কোয়ার্টারে। ফুল সুবাস ছড়ালে ভ্রমরের আনাগোণা থাকবেই, আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আজ চিঠি, তো কাল ফুল, বিয়ের প্রস্তাব তো লেগেই থাকছে ফি সপ্তাহে। একবার তো একজন হাতের রগ কেটে মরতে বসেছিল আমার জন্য। তবে মা আর ভাই বোনদের কড়া নজর এড়িয়ে আমার এদিক-ওদিক যাবার সুযোগ ঘটেনি তেমন।
ভাগ্যক্রমে আমি ছাত্রী হিসেবেও খুব ভালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগে পড়ছি। আমার অন্য ভাইবোনরা স্কুল জীবন থেকেই টুকটাক টিউশনি করালেও আমাকে তার অনুমতি দেয়া হয়নি,কারণ ওই যে, আমি রূপবতী কন্যা। বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, রূপে যদি কলঙ্ক লেগে যায়! ফলে হাতখরচার জন্য হা-ভাতের মতো বড় আপা না হয়, ভাইয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এদিকে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আমার চাহিদা বেড়েছে, বন্ধুদের সাথে খাওয়া-আড্ডা, প্রসাধনের সামগ্রী – এগুলোর জন্য কিছু বরাদ্দ রাখতে হয়। তাই বাড়তি আয়ের একটা উপায় খুঁজছিলাম। সোমার সাথে কথা হচ্ছিল মলচত্বরে বসে। একটা সিঙ্গারা খেয়ে চা নিলাম একটা। সোমা এর মধ্যে তাড়া লাগাল, “তাড়াতাড়ি কর তো, তোকে একজনের কাছে নিয়ে যাব।”
হাঁটতে হাঁটতে দু’জনে ডাকসুর কাছে চলে এলাম। ছেলেদের একটা দল বসে আছে, আড্ডা চলছে জম্পেশ। সোমা এগিয়ে গিয়ে একজনকে হাত নাড়ল, ঝাঁকড়া চুলের ভাসা ভাসা স্বপ্নালু চোখের একটা ছেলে, একটু একটু বাচ্চা বাচ্চা দেখতে, নাকের বাম পাশে একটা গভীর কাটা দাগ। আড্ডা ছেড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো সে। পরিচয় করিয়ে দিল সোমা, মুসাব্বির বাম ছেলেটার। মার্কেটিং এ বিবিএ করছে৷ পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর থেকে আমার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে সে। ছেলেদের এই মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমি অভ্যস্ত, তাই বিব্রত হলাম না। সোমা বলল, “আমার এই বান্ধবীকে তো দেখছ। রায়হান স্যারের মডেল হিসেবে কেমন হবে বলো তো?”
মুসাব্বির আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “দারুণ! অপূর্ব! স্যারের ছবির উপযুক্ত মডেলই বটে!” আমি প্রত্যুত্তরে হাসলাম। ছেলেটা বেশ সরল, আচরণে কোনো লুকোছাপা নেই। তবে সোমার কথা শুনে অবাক হলাম, কীসের মডেল হওয়ার কথা বলছে ও? আম্মা জানলে মাটিতে পুঁতে দিবে একদম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। সোমা আমার মনের অবস্থা বুঝে বলল, ” আরে বিখ্যাত আর্টিস্ট রায়হান ইমতিয়াজ স্যারের নাম শুনিসনি?” শিল্পসাহিত্যের জ্ঞানে আমি একটু পিছিয়ে আছি, মাথা নেড়ে না বললাম। এবার ছেলেটা হতাশ হয়ে বলল, “রায়হান স্যার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর। জীবনের একটা বড় অংশ ফ্রান্স আর ইতালিতে কাটিয়েছেন। এখন দেশে এসেছেন৷ শুনেছি কয়েক বছর থাকবেন, দেশের সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করবেন। আমি নিজে তার একটি ছবির মডেল হয়েছি।” এবার বুঝলাম, হালে পত্রিকাগুলোতে সদ্য ফ্রান্সফেরত এক চিত্রশিল্পীকে নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে। মুসাব্বিরের কথায় কিছুটা মনে পড়ল। কিন্তু আমি ছবির মডেল হব? কী না কী আঁকবে? কেমন ছবি? ন্যুড ছবি আঁকে নাকি আবার? শঙ্কিত হয়ে সদ্য পরিচিত মুসাব্বিরকে করেই ফেললাম প্রশ্নগুলো। মুসাব্বির হেসে বলল, “আমার তো প্রোট্রেট করেছে। তোমাকে যদি এমন কিছু করতে বলে যেটাতে তুমি কম্ফোর্টেবল নও, না করে দিবে। স্যার এত দারুণ ভদ্রলোক, তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই।” মুসাব্বিরের আশ্বাস পেয়েও আমার মন থেকে ভয় দূর হলো না। রায়হান ইমতিয়াজ তো অপরিচিতই,মুসাব্বিরকেও তো চিনি বা ঠিকমতো। সোমা কতটা চিনে, তাও জানি না।শেষে কোনো বিপদে পড়ব না তো? তারপরও প্রস্তাবটা নাকচ করলাম না, কারণটা সেটা নিঃসন্দেহে লোভনীয়। একটা সিটিং-এ পাঁচ হাজার টাকা। মাসে একবার করলেই আমার পুরো মাসের খরচ উঠে যাবে। মুসাব্বিরের ফোন নাম্বারটা নিয়ে আসলাম, বললাম, ভেবেচিন্তে জানাব।

পরের কয়েকদিন শুধু রায়হান ইমতিয়াজের খবর সংগ্রহ করলাম। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, তেমন কোনো দুর্নাম নেই। মেয়েঘটিত কাহিনি কিছু আছে বটে৷ কিন্তু তা উভয়পক্ষীয়। আমি মুসাব্বিরকে হ্যাঁ বলে দিলাম। আগামী মঙ্গলবার বিকালে যযাওয়া ঠিক হলো। নিজের নিরাপত্তার জন্য সাথে করে মরিচের গুঁড়ার স্প্রে বানিয়ে নিয়ে যাব ঠিক করলাম। উল্টা পাল্টা কিছু দেখলেই অস্ত্রের সদ্ব্যবহার করব।বাসায় আম্মাকে জানালাম, বাড়তি ক্লাস হবে।

মঙ্গলবার ক্লাস সেরে সোমার বাসায় চলে গেলাম। পরণের জামাটা পাল্টে সোমার একটা জামা পরলাম৷ সুন্দর ফ্লোরাল প্রিন্টের একটা কুর্তি। হালকা সেজে নিলাম। সোমা আমার দিকে তাকিয়ে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল, ‘কোথায় তুই রাজকন্যা হবি, আল্লাহ তোকে পাঠাল গরিব ঘরে। দেখ, কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তোকে।” কথা সত্য, কিন্তু শত দারিদ্র্য সত্ত্বেও আমার পরিবারকে আমি ভালোবাসি, জীবনের কঠিন বাস্তবতার আঁচ থেকে তারা সর্বতোভাবেই আমাকে আগলে রেখেছেন। অন্য কেউ এ কথা বললে ফুঁসে উঠতাম নির্ঘাত, তবে সোমার ব্যাপার ভিন্ন। ও আমাকে ছোটো করার উদ্দেশ্যে বলেনি। সে তো আমার আত্মারই একটা অংশ। সোমা নিজেই আমাকে রায়হান ইমতিয়াজের বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেল। গুলশান-১ এ একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়ির সামনের দেয়াল দেখেই বুঝা যায় এখানে কোনো শিল্পীর বাস। তিনটায় আসার কথা আমার, উবার চালক রাস্তা ভুল করে সময় নষ্ট করায় পাঁচ মিনিট দেরি হলো পৌঁছাতে। মুসাব্বির বলে দিয়েছিল বাড়ির প্রধান ফটকের সাথে একটা কলিংবেল থাকবে। খুঁজে নিয়ে সেটা বাজালাম। সাথে সাথেই ছোটো দরজাটা খুলে গেল। একা একা দরজা খুলে যাওয়ায় একটু ভড়কে গেলেও বুঝলাম ভিতর থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় দরজা খোলা হয়েছে। প্রথমে আমি ঢুকলাম, সোমাও ঢুকতে যাবে, এমন সময় দরজা বন্ধ হয়ে গেল দুম করে। অল্পের জন্য সোমার হাতে চাপা লাগেনি।।ভীষণ চমকে গেলাম। ঠিক তখনই একটা ফোন এলো আমার মোবাইলে। নাম্বারটা মুসাব্বির দিয়ে রেখেছিল আগেই। রিসিভ করতেই একটা ভরাট পুরুষালি কণ্ঠ শুনতে পেলাম, “তোমার বন্ধুকে চলে যেতে বলো যূথিকা। আমার স্টুডিওতে মডেল ছাড়া কারো প্রবেশ নিষেধ। সোমাটা ওদিকে আমার নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছে৷ বেচারি ভয় পেয়েছে। ভয় কি আমিও কম পেয়েছি? কিন্তু ফোনে সেই কণ্ঠ শুনে সম্মোহিতের মতো আমার সকল ভয় যেন কেটে গেছে। কী আধিপত্য তার কণ্ঠে! সোমার ডাকে সাড়া দিয়ে ওকে আশ্বস্ত করলাম। বললাম চলে যেতে। আমি সেশন শেষে উবার নিয়ে চলে যাব৷ পাঁচ হাজার টাকা পাচ্ছি, উবার পাঠাও তো চড়াই যায় এখন। ইট বিছানো হাঁটা পথের উপর দাঁড়িয়ে আছি। পথটা শেষ হয়েছে শ্বেত শুভ্র একটা দোতলা বাড়ির দরজায়। পথের দুপাশে লন। কিছু গাছ আছে। তবে লনের নিয়মিত পরিচর্যা হয় না মনে হয়, ঘাসগুলো এলোমেলো অসমান হয়ে আছে। বাড়ির সামনে এসে বেল খুঁজছিলাম, পরে দেখলাম দরজাটা ভেজানোই আছে।আস্তে করে ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। ঘরটিকে বসার ঘর কম, গ্যালারি বেশি বলা যায়। একটা সোফার উপর বসে আছেন সৌম্যদর্শন মাঝবয়েসী এক পুরুষ। তাকে নিয়ে বিস্তর গবেষণার সুবাদে মুখটা চেনাই ছিল, কিন্তু সামনাসামনি দেখে মুগ্ধ হলাম। অসম্ভব সুপুরুষ ভদ্রলোক, সৃষ্টিকর্তা মনে হয় এঁর কোনোকিছুরই কমতি রাখেনি। হ্যাঁ, রেখেছেন, তিনি পরিবারহীন। ইতালিতে থাকার সময় তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান। একেবারে শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছিলেন যেন মহিলা। কিছুতেই তার খোঁজ মিলেনি। রায়হান সাহেব অনেকদিন পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তার কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি তারা। স্ত্রী আর অনাগত সন্তানকে হারিয়ে কয়েক বছর সব রকমের শিল্পচর্চা থেকে দূরে রেখেছিলেন নিজেকে। এরপরই ফ্রান্সে পাড়ি জমান। সেখানে আবার নিজের ঘুমন্ত শিল্পীসত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলেন।

উনি একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিলেন। আমি ঘরে ঢুকতেই ম্যাগাজিনটা টেবিলের উপর রাখলেন। এরপর আমার দিকে না তাকিয়েই দরজাটা লাগিয়ে দিতে বললেন। আমি দরজা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। রায়হান ধীরপায়ে আমার কাছে এলেন। খুব কাছে, এতটা কাছে যে তার নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছিল। তিনি খুব কাছ থেকে গভীর মনোযোগের সাথে আমাকে পরখ করতে লাগলেন, ঠিক যেমন কোনো জহুরি স্বর্ণ পরীক্ষা করে তেমনি। আমার অস্বস্তি লাগায় চোখ নামিয়ে রেখেছিলাম। উনি আমার থুতনি ধরে আমার মুখ উপরে তুলে ধরলেন। চোখে চোখ রেখে তাকাতে হলো বাধ্য হয়ে। কী জাদুকরী দৃষ্টি! তার কণ্ঠের চেয়েও বেশি সম্মোহনী! আমি আমার আশেপাশে, অতীত- বর্তমানে কী আছে, সব ভুলে গেলাম। ভুলে গেলাম আমি নিম্নবিত্ত বাবার মেয়ে, ভুলে গেলাম টাকার জন্য ছবির মডেল হতে এসেছি, ভুলে গেলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত পরপুরুষের সাথে আমি একা, নিরাপত্তাহীন। মনে রইল শুধু এই ভয়ংকর সর্বনাশা দুইটি চোখ। সারা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠল আমার, মনে হলো এখনই জ্ঞান হারাব। জাদুকর তার চোখ সরিয়ে নিলেন। আমার মনের ভিতর উঠা তুফান যেন উনি টের পেয়েছিলেন। তাই নজর সরিয়ে নিলেও একহাতে ধরে রাখলেন আমায়। ধীরে ধীরে সোফায় এনে বসালেন। একটা গ্লাস এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি কোনো দ্বিধা না করে গ্লাসের সম্পূর্ণ তরল শেষ করে ফেললাম এক চুমুকেই। তরলটা পানি ছিল না, শরবতও না, কোনো ফলের জুস হবে বোধ হয়। অদ্ভুত মিষ্টি মিষ্টি, আবার নোনতা ভাবও আছে খানিকটা। খুব ভালো লাগল আমার। আরেক গ্লাস খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে আর চাইলাম না। একটু আগের ঘটনা নিয়ে বেশ বিব্রত লাগছে। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি আমার সমস্তটা পড়ে ফেলেছেন। উনি আমাকে বললেন, “তুমি যে ছবি আঁকার জন্য পারফেক্ট একটা সাব্জেক্ট, তুমি জানো?” মাথা নেড়ে না বললাম। উনি বলতে লাগলেন, আমার ক্যারিয়ারে এমন সাব্জেক্ট খুব কম পেয়েছি। তোমার চেহারার প্রতিটি ফিচার একদম নিখুঁত। আমি খুব লাকি যে তোমাকে পেয়েছি। আমি প্রশংসায় একেবারে গলে যেতে লাগলাম৷ যদিও এই প্রশংসায় আমার কোনো কৃতিত্ব নেই।

রায়হান সাহেব আমাকে বসিয়ে রেখে ভিতরে উনার স্টুডিওতে গেলেন। সব তৈরি করে আমাকে নিয়ে যাবেন। আমি ঘরটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। বসার ঘরটার চারপাশে রায়হান সাহেবের আঁকা ছবি, সত্যিই ভদ্রলোক প্রতিভাবান। কী পোট্রের্ট, কী প্রাকৃতিক দৃশ্য, কী স্টিল পেইন্টিং- সব ক্ষেত্রেই তিনি পারদর্শী। কিছু ছবি দেখে তো আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তুলির আঁচড়ে এত নিখুঁত রঙের খেলা কী আদৌ সম্ভব? এ কয়দিন উনাকে নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে ছবি আঁকা সম্পর্কেও অনেক কিছু জেনেছি। এমন গুণী শিল্পী আমার ছবি আঁকবেন, ভাবতেই শিহরিত হলাম।

হঠাৎ ঘাড়ের কাছে গরম নিঃশ্বাস পড়তেই চমকে উঠলাম। রায়হান সাহেব এসে গেছেন! আমার চমকে যাওয়া খেয়াল করে বললেন, “সরি। কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই। তুমিই এমন মগ্ন হয়ে ছিলে।” অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে বললাম, “হওয়ারই কথা, এত অসাধারণ আপনার হাতের কাজ।” উনি হেসে বললেন, ” এগুলো কিছুই না। আমার হাতের আসল কাজ তুমি দেখবে আরও পরে। এখন চলো।” বলে আমার বাম হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলেন তিনি। তার হাতের ছোঁয়ায় আবার সম্মোহিত হওয়ার পালা আমার৷ ভিতরে ভিতরে খুব অবাক হচ্ছি। আমার প্রতি পুরুষের আকর্ষণে আমি অভ্যস্ত। কিন্তু আমি এই এতখানি বয়স পর্যন্ত এভাবে কারোর প্রতি আকর্ষণ বোধ করিনি। মনে হচ্ছে কোনো এক মন্ত্রজালে আষ্টেপৃষ্টে বাধা পড়ে যাচ্ছি।

কাজের সময় উনি অন্য মানুষ। অখণ্ড মনোযোগের সাথে তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসটাকে রাঙিয়ে যাচ্ছেন। কখনও আমাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, এদিকে তাকাও, মুখটা ত্রিশ ডিগ্রি কোণে ঘুরাও। না বুঝলে নিজেই এগিয়ে এসে আমার মুখটাকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে আসছেন। আমার মধ্যে কী শয়তান ভর করেছে জানি না, ইচ্ছা করেই নির্দেশনা বুঝছিলাম না, যেন উনি এগিয়ে এসে ঠিক করে দেন। বারবার উনার স্পর্শ পাবার লোভে কাতর হয়ে যাচ্ছিলাম। আবার পরক্ষণেই নিজের ভাবনাকে ধিক্কার দিচ্ছিলাম। ছি ছি! এতটা অধঃপতন হলো কী করে আমার! আম্মা বলেন হাদীসে আছে, দু’জন বিনা সম্পর্কের নারী-পুরুষ একসাথে নির্জনে থাকলে তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান। এখানে আমরা ছাড়াও মনে হয় শয়তান উপস্থিত আছে। আর এই কাজ করব না বাবা! দরকার নেই এত টাকার। যত যাই হোক, আব্বা-আম্মা আমাকে ঘৃণা করবেন, এমন কিছু আমি করতে পারব না।

কোথা দিয়ে যে দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না। উনি হাত ধুয়ে এসে কিচেন থেকে দুইটা স্যান্ডউইচ নিয়ে এলেন। স্যান্ডউইচটা বেশ মজার। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার রান্না কি আপনি নিজেই করেন?
উত্তরে হ্যাঁসূচক জবাব এলো। বললাম, “আপনার হাতটাকে সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা উচিত। আপনার রান্নার হাতও চমৎকার।” প্রশংসা সহাস্যে গ্রহণ করে রায়হান বললেন, ” আমার আসল প্রতিভার সাথে তো তোমার পরিচয় ঘটেইনি এখনও। চলো দেখাই তোমাকে।”
সাথে সাথেই চেয়ার থেকে উঠে বললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন। কিন্তু তার আগে আমার ছবিটা দেখি।”
“ছবির কাজ এখনও অনেক বাকি। ফিনিশিং টাচ দিব আজকে রাতে। পরের বার যখন আসবে, তখন দেখো।”

মনটা খারাপ হলো কিঞ্চিৎ। বললাম, “স্যার, আমি আর আসব না। আসলে বাসায় জানাইনি। আর এ ধরণের কাজ আব্বা আম্মা কিছুতেই পছন্দ করবেন না।”
ভুল দেখলাম কিনা জানি না, মনে হলো উনার চোখ দুটো ধ্বক করে জ্বলে উঠল।
বিড়বিড় করে বললেন, “তাহলে তো আজকেই….”
“কিছু বললেন স্যার? আজকেই মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
উনি মাথা নেড়ে বললেন, “না, কিছু না। চলো আমার ভাস্কর্যের স্টুডিওতে নিয়ে যাই তোমাকে।” আবার আমার হাত ধরলেন। আচ্ছা, একটা আলতো স্পর্শে এমনভাবে কারো সমস্ত স্নায়ু দুর্বল করে দেয়া যায়?

পাশের ঘরটাই ভাস্কর্যের স্টুডিও। আমি আমার সারাজীবনে বোধহয় এতটা চমকাইনি কখনও। ঘরটায় ঢুকতেই মনে হলো সহস্র চোখ আমার দিকে ভীত, আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দেয়ালজুড়ে শেল্ফ, তাতে প্রায় গোটা পঁচিশেক কাদামাটির ভাস্কর্য, শুধু মাথা আর গলা। রায়হান ইমতিয়াজকে নিয়ে পড়াশোনার সময় ইন্টারনেট থেকে জেনেছিলাম এগুলোকে বলা হয় পোট্রেট বাস্ট । নিখুঁত হাতে বানানোরর পর তাদেরকে রঙ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যগুলোই তখন হয়ে উঠেছে শিল্পীর ক্যানভাস। এত জীবন্ত, মুখের রঙ, চোখের দৃষ্টি, চুলের বিন্যাস! এও কি সম্ভব! নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম, “অপূর্ব!অদ্ভুত!” উনি কখন আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি। খুব কাছ থেকে উনার কণ্ঠ শুনলাম, “তোমার ভালো লেগেছে?” উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললাম, “অবশ্যই! ভালো লাগবে না মানে! এমন দারুণ কিছু যে আমি আমার এ দু’চোখ দিয়ে দেখব, এ আমার কল্পনার বাইরে ছিল।” এবার উনি একটা হাত আমার কাঁধের উপর জড়িয়ে ধরলেন। ধীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন, “জানো যূথি, এ আমার বহু সাধনার ফসল। কত দেশে, কত জায়গায় আমি যাযাবরের মতো ঘুরে বেরিয়েছি এ বিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার জন্য। তোমার চোখের মুগ্ধতা দেখে বুঝতে পারছি আমি সফল হয়েছি।” আমি এমনভাবে উনার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলাম, যেন কতদিনের চেনাজানা তার সাথে আমার! জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু আপনার এসব ভাস্কর্য আপনি এক্সিবিশনে দেন না? কোথাও তো এগুলোর কথা পাইনি আমি।”
“এই শিল্প শুধু আমার জন্য, পৃথিবীর আর কারো জন্য নয়। এই শিল্পকে প্রত্যক্ষ করা একমাত্র জীবন্ত চোখ দুটি আমার হবে।” চমকে উঠে উনার কাঁধ থেকে মাথা উঠালাম। কী বলছেন উনি!
উনি যেন সেটা খেয়ালই করলেন না। আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, “তুমি আমার ভাস্কর্যের মডেল হবে? প্লিজ না করো না। তোমার চেয়ে পারফেক্ট ফেস আমি আর পাইনি, পাবোও না।”

না করার শক্তি কী আমার আছে? কিন্তু হঠাৎ একটা বিষয় মনে করে মূর্তিগুলোর দিকে এগিয়ে গেলাম। এগুলোর মধ্যে একটা মিল আছে। সবগুলো চেহারাতেই একটা ভয়, তীব্র ভয়, যেন সব হারানোর আতঙ্কে তাদের আত্মা খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। এত নিখুঁত অভিব্যক্তি কীভাবে সম্ভব? এরা কী অভিনেতা? কৌতুহল চাপিয়ে না রেখে জিজ্ঞেস করলাম রায়হান সাহেবকে। আমার প্রশ্নের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন, বললেন, “এই অভিব্যক্তিগুলো আসল, অভিনয় নয়, তাই এত নিখুঁত, এত জীবন্ত।” প্রশ্ন ছুঁড়লাম, “কিন্তু কীভাবে সম্ভব?” “সত্যিকারের ভয়ের মুখোমুখি হলে সবই সম্ভব।” “তার মানে?”
জবাবে উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন এলো, “মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায় কী বলো তো?”

একটু চিন্তা করে বললাম, “মৃত্যু?”

মাথা ঝাঁকালেন রায়হান, বললেন, “তুমি বুদ্ধিমতী।একদম ঠিক বলেছ। এই মডেলরা সত্যিকারের মৃত্যুভয়ের মুখোমুখি হয়েছে বললেই এমন অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে চেহারায়।”
এবার একটু ভয় পেলাম বৈকি! সত্যিকারের মৃত্যুভয়! সেটা কী করে সৃষ্টি করেন উনি? হঠাৎ একটা ভাস্কর্যের দিকে চোখ আটকে গেল। ঝাঁকড়া চুল, ভাসা ভাসা চোখে সীমাহীন বিস্ময় আর আতঙ্ক, পাতলা ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে যেন বাঁচার আকুতি করতে চাইছে। চেহারাটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে। নাকের পাশটায় একটা কাটা দাগ। এরকম আর কার দেখেছি? হঠাৎই মনে পড়ল গল্পটা, সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল কাঁটার ঝোপে। মুসাব্বির! মুসাব্বিরের আবক্ষ মূর্তি! চকিতে রায়হান সাহেবের দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি আমার দিকেই নিবদ্ধ ছিল।বললেন, “চিনেছ?” মুসাব্বিরের সাথে এ কয়দিনে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়েছে। আমার দিক থেকে বন্ধুত্বই, মুসাব্বির কী ভাবছে, জানি না। কিন্তু গত চার দিন ধরে তার কোনো পাত্তা নেই। এখানে আসার আগেও কয়েকবার ফ্যন করেছি ওকে, আমি, সোমা দুজনেই, বারবারই সুইউচড অফ বলছে ফোনটা।

উনি একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। বেশ কিছু নিউজ কাটিং, নিখোঁজ সংবাদের। আমার বিস্ময়ের পাল্লা কেবল ভারিই হচ্ছিল। নিখোঁজ অনেক ব্যক্তির চেহারার সাথে কিছু ভাস্কর্যের অদ্ভুত মিল! এ কীসের মধ্যে এসে পড়লাম আমি! আতঙ্কে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল যেন।

রায়হান বলতে শুরু করলেন, “আমার এই বাড়িটা প্রায় পাঁচ একর জমি নিয়ে তৈরি, জানো? বাড়ির পিছনে অনেক জায়গা, অনেক। দুইটা কুকুর আছে আমার, মারাত্মক হিংস্র। যেদিন আমি ভাস্কর্য বানাই, সেদিন তাদের একজনকে খাবার দেয়া হয় না সারাদিন। খুব ক্ষুধার্ত থাকে ওরা, আর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ। ক্ষুধার্ত কুকুরকে ভয় পাবে না তুমি?” বলে একটা মূর্তির সামনে দাঁড়ালেন। “আই যে এই ছেলেটা, খাবার ডেলিভারি দিতে এসেছিল। খুব ভয় পেয়েছিল, হা হা হা!” গগণবিদারী হাসিতে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। এ কি মানুষের হাসি?

আরেকটা আবক্ষ মূর্তির সামনে দাঁড়ালেন তিনি। ওটা দেখিয়ে বললেন, “আমার লনটা দেখেছ না আসার সময়। ঘাসগুলো কাটা হচ্ছে না বেশ কিছুদিন। হবেই বা কী করে? মালী সাহেব তো ঘাপটি মেরে এখানে বসে আছেন।”

রায়হানের কথা তখনও শেষ হয়নি, “আমার কুকুরগুলোকে যে রাখে, হায়দার, সেও কিন্তু অনেক ভয়ংকর। শুনেছি এককালে মানুষ খুন করত টাকার বিনিময়ে। খুন, ধর্ষণের কয়েকটি মামলা আছে ওর নামে। ওকেও তো ভয় পাবে তুমি, পাবে না, যূথি? তবে হায়দারের দিন শেষ বুঝেছ? বড্ড বেশি জেনে গিয়েছে যে। মালীটার লাশ পুঁতে ফেলার পর থেকে একটু অন্যমনস্ক হয়ে থাকে। তবে ওর ভয়-ডর কম। ওকে অন্য কিছুর ভয় দেখাতে হবে। কীসের ভয় দেখানো যায়, বলো তো?”

আমার কাছে এসে পড়লেন রায়হান। আমার গালে হাত বুলিয়ে বললেন, “এত সুন্দর তুমি যূথিকা, কীসে ভয় তোমার বলো? কুকুর, ঠাণ্ডা মাথার খুনি, নাকি এই সুন্দর মুখটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়? কীসে যূথি, বলো আমাকে?” আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে মনে আয়াতুল কুরসী পড়ার চেষ্টা করছিলাম, মাথা ঠিক রাখতে পারছি্লাম না, এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। আচমকা আমার গলা চেপে ধরলেন রায়হান৷ কতক্ষণ, দশ সেকেন্ড, ত্রিশ সেকেন্ড, নাকি দুই মিনিট,আমি জানি না, শুধু জানি,মৃত্যু অনেক কাছে ছিল। অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাস করতে করতে যে মুহূর্তে মনে হলো হাল ছেড়ে দিব, তখন হঠাৎ আমার হাত লেগে একটা ভাস্কর্য পড়ে গেল। নিমিষেই রায়হানের এক অসামান্য সৃষ্টি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। গলার চেপে থাকা হাতের বাঁধনও শিথিল হলো। উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম দু’চোখে ক্রোধ ঠিকরে পড়ছে। যেন এক্ষুণি আমাকে এই ভাস্কর্যের মতো টুকরো টুকরো করে ফেলবেন। আমার মনে হলো বাঁচতে হবে, আমাকে, যে কোনো মূল্যে বাঁচতে হবে, এই বোধ অস্থির করে তুলল আমাকে । মরিয়া হয়ে হাতের ধাক্কায় বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য ফেলে দিলাম। একে একে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনবদ্য সব সৃষ্টি। আমাকে আটকাতে আসা রায়হান ইমতিয়াজকে লক্ষ করেও কয়েকটা ভাস্কর্য ছুঁড়ে মারলাম। একটা কপাল ঘেঁষে গেল, রায়হান হাত চেপে ধরে সেখানে। কিছুক্ষণ পর হাত সরাতেই দেখলাম রক্ত! রায়হানের মুখে যন্ত্রণা, ক্রোধ- সব আবেগের সংমিশ্রণে অদ্ভুত এক অভিব্যক্তির খেলা দেখতে পাচ্ছিলাম। পিপার স্প্রের কথা মনে পড়ল, কিন্তু ব্যাগটা তো বসার ঘরেই রেখে এসেছি। কুকুরের ডাক শুনতে পেলাম। রায়হানের প্রশ্নটা মনে পড়ল, সত্যিই তো, আমি কীসে ভয় পাব? ভয়ংকর হিংস্র দুই কুকুর, নাকি ঠাণ্ডা মাথার খুনি নাকি এই বিকৃত মস্তিষ্কের প্রতিভাবান খুনিকে? দরজার বাইরে থেকে পায়ের আওয়াজ আসছে। সাথে জান্তব একটা গোঙানি, যেন শিকারের গন্ধ পেয়েছে ক্ষুধার্ত শিকারী। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। শেষ ভাস্কর্যটা আমি হাতে তুলে নিলাম। দৌড়ে দরজার কাছে চলে এলাম। রায়হানের চোখেমুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি। আমি দরজার আড়ালে থেকে দরজাটা খুলে দিলাম। ঘরে প্রবেশ করল চারপেয়ে একটা জন্তু আর হায়দার, যে এককালে ভাড়াটে খুনি ছিল। হায়দারকে মনে হয় নির্দেশনা দেয়া ছিল দরজা খুলতেই কুকুরটাকে ছেড়ে দিতে। হায়দার ঘরে ঢুকতেই আমি দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে স্টুডিওর বাইরে চলে এলাম। হায়দার চকিতে পিছন ফিরে তাকাল। কিন্তু আমাকে তাড়া করবে না মালিককে বাঁচাবে, তা বোধহয় ঠিক করতে পারছিল না। নাকি মালী নিখোঁজ হওয়ার পর সে বুঝতে পেরেছিল এরপর তার পালা? তা জানি না, তবে এটুকু জানি, সেদিন হায়দার চাইলে আমাকে সহজেই আটকাতে পারত। রায়হান দরজার বরাবরই দাঁড়িয়ে ছিল। কুকুরটা তার দিকে ক্ষীপ্রগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগমুহূর্তে রায়হানের চোখে-মুখে যে অভিব্যক্তির দেখা পেলাম আমি, তা ভয়ের, নিখাদ মৃত্যুভয়ের, অভিনয়ের লেশমাত্র সেখানে নেই।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ