#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৭ম_পর্ব
লেখনীতে;নাহার সাইবা
~ রোশনি, মা আমার তোমায় আমায় কথা দিতে হবে যে তুমি পুনরায় আকাশের জীবনে আর ফিরে আসবে না,আকাশকে মেঘলাকে নিয়ে সুখে থাকতে দেবে।জানি তোমার এতে কতটা কষ্ট হবে।তবে তোমায় তো আমি কারণ গুলো বলেছি। তুমি অন্তত বোঝার চেষ্ঠা কর একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে আমি কথা দিয়েছিলাম মেঘলার সুন্দর ভবিষ্যৎ আমি নিশ্চিত করব।এখন যদি তুমি আকাশের জীবন থেকে না সরে যাও তবে তা কখনোই সম্ভব নয়।তুমি কী চাও আমি কথার খেলাপ করি নাকি একটা মেয়ে যে ছোটবেলা থেকে সকল প্রকার ভালোবাসা, অধিকার থেকে বঞ্চিত তাকে পুনরায় ঠকাই?আশা করি তুমি দুটোর কোনোটাই চাইবে না।( দিবাকর বাবু)
দিবাকর বাবু এতগুলো কথা বলে দমলেন,অপরপক্ষের বক্তব্যের অপেক্ষায় রইলেন।রোশানি তার দিকে তাকালো একবার তারপর মাথা নুইয়ে ধরা গলায় বলল
~ আপনি যা ভালো মনে করেন আঙ্কেল আমি তাই মেনে নেব।মেঘলার সাথে হওয়া এতকিছু শুনে বা জানার পর আমারো খুব খারাপ লাগছে। এখন যদি আপনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন অর্থ্যাৎ মেঘলাকে আকাশের হাতে তুলে দিতে চান আর আমাকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের মাঝ থেকে দূরে সরে যেতে বলেন তাহলে আমি তাই করব।( রোশানি)
দিবাকর বাবু রোশানির মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন তবে তিনিও যে এছাড়া অন্য উপায় চোখে দেখছেন না।তাই তাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোশানি মেয়েটার সাথে অন্যায় করতে হচ্ছে। দিবাকর বাবু সস্নেহে রোশনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন
~ আমি জানি রোশানি এতগুলো বছর একটা মানুষকে ভালোবাসার পর তাকে অন্যের হাতে সমর্পণ করা খুবই কষ্টের।তবে একটা কথা জানো তুমি যে কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবে একদিন।তুমি যদি আজ মেঘলার জন্য এত বড় একটা ত্যাগ স্বীকার করে যাও দেখবে তোমার ভবিষ্যতে তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।আর আমার আশীর্বাদ সবসময় তোমার সাথে থাকবে তুমি জীবনে অনেক বড় হয় আকাশের থেকেও ভালো কাউকে নিজের জীবনে পাও সেই কামনাই করি।( দিবাকর বাবু)
দিবাকর বাবুর কথায় মাথা ঝাঁকালো রোশানি অতঃপর উঠে দাঁড়ালো একবারের জন্য ও দিবাকর বাবুর দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল
~ আঙ্কেল তাহলে আমি আজ আসি,আপনি যেমনটা বললেন তেমনটাই হবে। আকাশ আবার আমায় ফিরে পেতে চাইলেও আমি কখনো ফিরব না আর মেঘলার প্রতি অন্যায় হতে দেব না।আকাশকে উদ্ভুদ্ধ করব মেঘলাকে ভালো রাখার জন্য নিজে ভালো থাকার জন্য। ( রোশানি)
রোশানির কথায় দিবাকর বাবু নিরবে মাথা ঝাঁকালেন। তারপর রোশানি দিবাকর বাবুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ল আকাশ ফিরে আসার আগেই। এর মাঝে একটিবারও উপরে চোখ তুলে তাকালো না যদি তার ভেঙে পড়া রূপটা সবার সামনে ধরা পরে যায়,সে তো তবে আরো অসহায় হিসেবে পরিচিত হবে সকলের কাছে তা যে হতে দেওয়া যাবে না।
আকাশের বিয়ের আগের কথাগুলো মনে পড়তেই দিবাকর বাবুর বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।প্রথমে রোশানিকে যেমন আত্মকেন্দ্রীক ভেবেছিলেন মেয়েটা মোটেও তেমন নয় বরং মহানুভব!! না হলে নিরবে ভালোবাসা উৎসর্গ করে মহীয়সী হতে চায় কেই-বা?? কিছু ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল বলেই আজো পৃথিবীতে শান্তি আছে তা না হলে কবেই শান্তির বিলুপ্তি ঘটত..
এখন একটাই প্রার্থনা আকাশ আর মেঘলা যেন ভালো থাকে, সুখে থাকে তার জন্যই যে এতকিছুর আয়োজন!!
মেঘলার ঘুম ভাঙতেই পায়ের কাছে ভারি কিছু অনুভব করল সে তড়িঘড়ি করে উঠে বসল শায়িত অবস্থা থেকে। পায়ের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো এ যে স্বয়ং আকাশ তার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে খাটের এককোনায় বসে ঘুমচ্ছে!! সে কয়েকবার চোখ কচলালো এ যেন তার দেখার ভূল!! নাহ দৃশ্যপটের পরিবর্তন নেই আবারো চিমটি কাটলো নিজেই নিজের চামড়ায় হতেই পারে স্বপ্ন বা ভ্রম!! তবে এবারো খুব একটা পরিবর্তন এলো না।মেঘলা বেশ কয়েকবার চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে পরখ করল আকাশকে।নিষ্পাপ লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায় আকাশকে সেই সাথে ক্লান্তিতে ভরপুর চেহারায় যেন আলাদা শান্তি, স্নিগতা!! সে কিছু একটা মনে পড়তেই দূরে ছিটকে সরে এলো, মেঘলার এভাবে নিজের পা সমেত দূরে সরে যাওয়ায় আকাশের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটল।সে নড়েচড়ে বসল ঘুমঘুম চোখে তাকাতেই দেখতে পেলো মেঘলার উৎসুক চোখ দুটি সেই সাথে বিস্মিত চেহারা। নিজের দিকে আকাশকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘলা চেচিয়ে বলল
~ আপনি আমার পায়ের কাছে মাথা দিয়ে ঘুমচ্ছিলেন কেন?জানেন না স্ত্রীর পায়ে স্বামীর হাত পর্যন্ত দিতে নেই আর আপনি মাথা দিয়ে ঘুমচ্ছিলেন!! কেন আমায় পাপী বানাতে খুব ভালো লাগে?? ( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশের ঘুম উড়ো গেলো সে চোখ বড়বড় করে তাকালো মেঘলার দিকে মেঘলার চোখেমুখেও বিস্ময়ের ছাপ। সে আশেপাশে তাকালো নিজেকে আবিষ্কার করল মেঝেতে আর তার দূরে বিছানার উপর নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে মেঘলা।আকাশ এবার উঠে দাঁড়ালো সন্দিহান দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে নিজের কর্মকান্ডে অবাক হয়ে বলল
~ আমি এখানে মানে মেঝেতে বসে তোমার পায়ে মাথা দিয়ে ঘুমচ্ছিলাম!! ( আকাশ)
আকাশের প্রশ্নে মেঘলার নিজের ঝগরুটে স্বভাবটা কন্ঠে বজায় রেখে বলল
~ তা আর বলছি কী আমি মশাই? সকালে উঠে তো তাই দেখলাম আমার পায়ে ভারি মাথাটা ঠেকিয়ে ঘুমচ্ছেন যদিও আমার অসুবিধা হয়নি বরং সুবিধাই হয়েছে পায়ের ব্যাথায় ঘুমাতে পারছিলাম না আপনার ভারি মাথার ওজনে ব্যাথাটা কমে গেছে একদম ঐ যে কথায় আছে বিষে বিষ ক্ষয় ঠিক তেমন।( মেঘলা)
মেঘলা কিছুটা হেঁসে বলল আকাশ তার প্রতিত্তরে তেমন কিছু বলল না বা করল না।সে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুমে মেঘলা আকাশকে কথার পিঠে কথা না বলতে দেখে অবাক হলো যদিও ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই একের পর এক ঝটকা খেয়েই যাচ্ছে সে।
আকাশ একেবারে গোসল করে বেড়িয়ে এলো তবে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি না হয়ে একটা ট্রাউজারের সাথে গায়ে টিশার্ট জড়িয়ে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ালো ব্যস্ততা দেখিয়েই বলল
~ তাড়াতাড়ি বল কী কী দরকার তোমার?লিস্ট করে দাও।বাজারে যাচ্ছি নিয়ে আসব সব যাতে পরবর্তীতে আমায় খোঁটা দিতে না পার তোমার ভরণপোষণের ক্ষেত্রে অবহেলা করেছি।( আকাশ)
মেঘলা বিস্ময়ের সাথে বলল
~ অফিস যাবেন না?সময় হয়ে এসেছ তো।আর বাজার নিয়ে আমি আপনাকে কখন খোঁটা দিয়েছি সবসময় বলেন আমি নাকি বেশি বাড়িয়ে বলি এবার আপনি বলছেন না? ( মেঘলা)
মেঘলার তেজ মাখা কন্ঠ কর্ণকুহরে আঘাত হানতেই আকাশ বিরক্তির হলো
~ আমি আমার অফিসে যাব সময়মতোই সেই নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।যা বলেছি তা কর আর কথাটা আমি নয় তুমিই বেশ বলো বাড়িয়ে অপ্রোজনীয় কথা।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা আবারো কিছু বলতে উদ্যত হলে আকাশ ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলল
~ আর কোনো কথা নয় যা বলছি তাই সকালের নাস্তা বাড়িতেই করব লাঞ্চ ও। দেখি তুমি কত ভালো রাধুনি নাকি সবটাই মুখে মুখে।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা মুখ ভেংচালো তারপর একটা নোটপ্যাডের টুকরো কাগজ ছিঁড়ে তাতে বেশ কিছু জিনিসের নাম লিখে লিষ্টটা আকাশের হাতে ধরিয়ে দিল।
~ আপাতত এই জিনিসগুলো এনে আমায় ধন্য করলেই চলবে।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল
~ সবসময় মানুষকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য এমন পিঞ্চ মেরে কথা না বললেই নয়!! স্বভাবের দোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে তোমার এই গুণটা।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা মুখ বিকৃত করে দাঁড়িয়ে রইল।আকাশ ঘর থেকে বেড় হওয়ার পূর্বে বলে গেলো
~ আমি আজ নাইট ডিউটি রেখেছি অফিসে তাই বিকেলের পর বেড় হব বাড়ি থেকে। ( আকাশ)
আকাশ বেড়িয়ে পড়তেই মেঘলা বিজয় উল্লাসের প্রতীক হিসেবে লাফিয়ে উঠল সেই সাথে তার খিলখিলে হাসিতে দুই কামড়ার ফ্ল্যাট মুখরিত হয়ে গেলো।
~ যাক অবশেষে বকরাক্ষসটার সুবুদ্ধির উদয় ঘটছে আমায় দাম দিচ্ছে, কেয়ারও করছে।উফফ কী যে খুশি লাগছে তার আমার প্রতি আগ্রহ দেখে বলে বোঝাবার মতো নয়। ঠাকুর,তুমি এভাবেই আমাদের সম্পর্কে শান্তি এনে দাও আর কিচ্ছু চাই না আমার তার ভালোবাসা ব্যতিত।( মেঘলা)
চলবে….
#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৮ম_পর্ব
লেখনীতে ;নাহার সাইবা
আকাশ বাজারের পথে ধরে হাঁটছে আর ভাবছে আজকে সকালের ঘটনা।মেঘলা যে তার এতটুকু ভালো ব্যবহারেই এতটা ভেতর থেকে উচ্ছ্বসিত হয়েছে দেখেই দারুণ লেগেছে তার।আসলে প্রত্যেক মানুষের চাওয়া-পাওয়ার পরিধি একেকরকম। কেউবা অল্পতেই তুষ্ট আবার কাউকে যতই ভালোবাসা, ধনসম্পদ দেও না কেন পরিতুষ্টি আসবে না বিন্দু পরিমাণ। মেঘলা হলো প্রথম শ্রেণির মানুষদের মতো তার মতোই ভালোবাসা পেতে উন্মাদ তবে মেঘলা যার থেকে ভালোবাসা চায় সে যাবে আবার ভালোবাসা পেতে চায় অন্যজনের কাছ থেকে! গোলমালটা তো এখানেই। যদি আমরা যাকে ভালোবাসি সেও আমায় ভালোবাসত তাহলে হয়ত মেঘলার জীবনটা সুন্দর হত, তবে আকাশ মেঘলাকে ভালোবাসতে গিয়েও কেন যেন পারে না একটা নাম না জানা বাঁধা কোথা হতে উড়ে আসে। তবে এটাও ঠিক যে মেঘলার মুখে হাসি ফুটায় সেও প্রশান্তি অনুভব করেছে আচ্ছা তা তো কেবল একজন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি প্রেমই তো প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রীর প্রেম তো নয়। সে মেঘলাকে ভালোবাসবে একজন মানুষ হিসেবে তার অধিকার রক্ষা করবে তবে হৃদয়ে স্থান কখনো দিতে পারবে না।কাগজে কলমেই তাদের সম্পর্কটা স্বামী স্ত্রীর এছাড়া সে তাকে মৌনসম্মতিতে কখনোই স্ত্রী হিসেবে কল্পনাতেও আনতে পারে না যখন তার কল্পনার রাজ্যটাই অন্যজনকে ঘিরে। সে হাঁটতে হাঁটতেই প্রতিজ্ঞা করল মনে মনে
” আমি কখনোই মেঘলার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারব না তার অধিকার রক্ষা করব তাকে ভালো রাখব কেবল মামা আর রোশানির কথা অনুসারে এতে যদি আমাকে খারাপ থাকতে হয় তাই থাকব।তবুও মেঘলার থেকে দূরুত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে আমার কোনোক্রমেই তার প্রতি দুর্বল হলে চলবে না।আমার সক্রিয় অনুভূতির জগতে মেঘলাকে ঠায় দিতে পারব না কখনোই কারণ এতে যে আমি নিজেই দোদুল্যমান অবস্থায় পতিত হব।কী এক যন্ত্রণা কেবল আমাকে ঘিরেই!! চেয়েছিলাম যাকে ভালোবাসি তার সাথে সুখের নীড় গড়তে আর আজ এমন একজনের সাথে ঘরবন্দী যাকে চাইলেও আমি ত্যাগ করতে পারব না তার সিঁথি যে রাঙিয়েছি আমি!! যাইহোক আমি জানি একজন বাঙালি নারীর কাছে তার স্বামী কতটা শ্রদ্ধার,তার থেকেই তার সব চাওয়া-পাওয়া থাকে।তাই কখনোই পারব না মেঘলার মনকে খুন করতে মেয়েটা বড্ড মায়াবী সেই সাথে আমার মতোই মা বাবা হারা অনাথ।আমি জানি যার মা বাবা নামক আপন কেউ নেই তার অন্তত জীবনটা সুখের হতে পারে না অন্যের কাঁধে চড়ে কেননা এর প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই সেখানে মেঘলা একটি মেয়ে আর আমার মামা -মামী তো তাও ভালোই তার মেসো-মাসি তাকে কীভাবে বড় করেছে জানি না।নতুন সম্পর্কে জড়ানোর পর সুখের সন্ধানে নেমেও যদি বিষাদের ছোঁয়ায় মনে লেগে থাকে তাহলে তা তার প্রতি অন্যায়।কারণ মেঘলার দোষ নেই তাকে তাই শাস্তি দেওয়া অবাঞ্ছিত!! শান্তি যার প্রাপ্য নয়,সেই নিরবে শান্তি সয়ে যায় এমন কেন হলো দুনিয়াটা??সম্পূর্ণ এলোমেলো, খেই হারিয়ে ফেলেছি জীবনের। জানি না আর কখনো নিজেকে নিজের চারপাশের মানুষগুলোকে গুছিয়ে সাজিয়ে সুস্থ জীবনে অভ্যস্ত হতে পারব কীনা?? ”
আকাশের ব্যবহারে হয়ত অনেকেই ক্ষুব্ধ হবে তবে তার মনের ভেতর কী ঝড়ো হাওয়া বইছে একমাত্র সেই জানে যেই ঝড় পূর্বাভাস না দিয়েই আঘাত হেনেছে যার তান্ডব বহাল রয়েছে!!
এভাবেই চলছে দিনকাল আকাশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিজেকে মানিয়ে মেঘলার সাথে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য। তবে সেও মানুষ তারও অনুভূতি রয়েছে যেগুলো এলোমেলো তার ফলস্বরূপ মাঝেমধ্যেই খুটিনাটি ঝগড়া বেঁধে যায়,কখনো মেঘলা চুপ থাকে তো কখনো প্রতিবাদ করে।সত্যিকার অর্থে মেঘলা চুপিসারে সবটা মেনে মাথা নিচু করে চলে যায় তার সামনে থেকে তখন তার নিজেরই খারাপ লাগে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণে।আর যখন সামান্য প্রশংসাও করে মেঘলার তখনো যেন তার মুখে এলইডি বাল্বের উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করা যায় যেটা আকাশের ভালো লাগে।এর মাঝে রোশানির সাথে কথা হয়নি সেও সর্বাধিক চেষ্টা চালায় রোশানি নামক নিষিদ্ধ ব্যক্তির থেকে দূরে থাকার জন্য যাকে পাওয়া হয়নি তার থেকে দূরে সরে গেলেই বোধহয় ভালো না হয় দমবন্ধ পরিবেশটা আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
আজ অফিস থেকে ফিরতেই মেঘলা হাসিমুখে তাকে বরণ করে নিল,অফিসের ব্যাগটা নিজ থেকেই হাতে নিল আকাশ ক্লান্ত থাকায় কিছু বলল না।সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফিরে দেখলো মেঘলা তার জন্য চা বানিয়ে রেখেছে, আকাশকে আসতে দেখে হাসিমুখে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। আকাশ নিঃশব্দে তা হাতে নিয়ে বসে পড়ল সোফায়,মেঘলাও তার পাশে বসল আরেকটা চায়ের কাপ হাতে।সামনেই পেয়ালায় বিস্কুট আছে।চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে আয়েশ করে খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল
~ আজ অফিস কেমন কাটল?সারাদিন কী করলেন আপনি?দুপুরের খাবার কী বাহিরে খেয়েছিলেন?আমি তো বললাম একটু অপেক্ষা করুন ভাতটা চড়িয়ে আলু ভাজি করে দিচ্ছি তাও আপনার ধৈর্যে কুলাল না।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ ধীরেসুস্থে চা পান করতে করতে বলল
~ এত চিন্তার কিছু নেই।তুমি যখন ছিলে না অফিস ক্যান্টিন থেকেই খাবার খেতাম।আজো তাই করেছি।এতই যদি তুমি সচেতন বউ হতে চাও সকালের নাক ডাকা ঘুম বাদ দাও।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা সরাসরি প্রতিবাদ করে উঠল
~ আমি মোটেও নাক ডাকি না বকরাক্ষস সবসময় বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা আর আমাকে ছোট করা। নিজের নাক ডাকা শুনে আমার নামে চালান তাই না?কী মনে করেন কিছু বুঝি না আমি?সবই বুঝি বুঝলেন?( মেঘলা)
~ হুম,একটু বেশিই জানো এবং বুঝো তাই এটাও জানো না যে মানুষ নিজের নাক ডাকা কখনোই শুনতে পায় না।অতএব আমি যার নাক ডাক শুনি সে তুমি ব্যতিত আর কেউ নয়।কারণ বাসায় আমি আর তুমিই থাকি।ভূত বা পেত্নী থাকলেও নিশ্চয়ই নাক ডাকে না তারা।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা নাক ফুলিয়ে বসে রইল আকাশ একবার তাকালো তারপর মুখ ফিরিয়ে নিল নাক ফুলিয়ে রাখায় মেঘলাকে ঠিক ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে যেন তার সেই চেহারায় তার প্রিয়জনের প্রতি মিথ্যা অভিমান!!
কিছুক্ষণ নিরবে কেটে গেলো আকাশ মুখ খুলল প্রথমে
~ তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।( আকাশ)
আকাশের বলতে দেরি মেঘলার ঝাপিয়ে পড়তে নয়।
~ কীহ! আমার জন্য সুসংবাদ তাও আবার আপনার পক্ষ থেকে।মানা যায় এটা বলুন!?( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ রুষ্ট হলো সে মেঘলার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
~ সবসময় ফাজলামো না করলেই নয়? কী বলছি তা শুনবে তো আগে নাকি? ( আকাশ)
~ ঠিক আছে তবে তাই বলুন শুনতে তো মানা নেই আমার।( মেঘলা)
মেঘলা খিলখিলিয়ে হেঁসে বলল,আকাশ একঝলক সেই হাসিমাখা মুখটাকে দেখে নিল তারপর বলতে লাগল
~ শুনেছি তুমি কোনোমতে এসএসসি পাশ করেছ তো আর পড়ালেখার ধারও ঘেঁষোনি।তাই আমি চিন্তা করেছি একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিব খালি পরিক্ষা দেবে বাকি পড়াশোনা বাসায়ই চলবে আর আমি যতটুকু পারি সময় দিয়ে পড়াবো বাকিটা তোমার ইচ্ছে আর সাধনার মাঝেই ছেড়ে দিলাম।সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তোমারই লাভ।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলার চোখে জল চিকচিক করে উঠল সে যদি পারত এই বুঝি আকাশকে জড়িয়ে ধরত তবে আকাশের চোখরাঙানিতে তা সম্ভব হলো না। আবেগের বসে সে কেঁদেই দিল ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
~ ধন্যবাদ আপনাকে আমায় আবারো তিন বছর পর পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমার কলেজে গিয়ে ক্লাস করতে হবে না এমনিতেই পরিক্ষা গুলো দিয়ে একটা প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটই আমার জন্য যথেষ্ট আর আপনার মতো মাস্টার তো আছেই।এতদিন আপনাকে ডাকার মতো নাম পাইনি এখন পেয়ে গেলাম আজ থেকে আপনাকে আমি মাস্টারমশাই বলে ডাকব। ( মেঘলা)
মেঘলার উচ্ছ্বাস,উন্মাদনা দেখে আকাশের মনটাও গলে গেলো,তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল অজান্তেই!!
চলবে…