#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৩য়_পর্ব
লেখনীতে; নাহার সাইবা
ভোরবেলায় পাখির কিচিরমিচির শব্দে মেঘলার ঘুম ভেঙে গেলো।সে চোখ ডলতে ডলতে উঠে দাঁড়ালো। দেখতে পেলো সেই বারান্দাতেই রয়েছে, গতকাল কাঁদতে কাঁদতে কখন যে মেঝেতে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝে আসনি।পরনের লাল শাড়িটাও এলোমেলো হয়ে আছে,চুলেও জটলা পেকে গেছে। সে ঘরে প্রবেশ করে একবার দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকালো, দেখতে পেলো ছয়টা বেজে পচিশ মিনিট বাজতে কয়েক সেকেন্ড বাকি।সে তড়িঘড়ি করে নিজের কাপড়ের ব্যাগটা বেড় করল। একটা রেগুলার ইউজের সালোয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো স্নান করতে।স্নান সেরে বেড়িয়ে দেখতে পেল দশমিনিট অতিক্রম করে গেছে যদিও তার পাঁচ মিনিটেই স্নানের অভ্যাস আছে তবে আজ দেরিই হয়ে গেলো।আকাশের কথা মাথায় আসতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।লোকটা বাড়ি ফিরেনি হয়ত এখনো তার কারণেই রেগে ওমন রাত করে বেড়িয়ে পড়ল।সে মনে মনে ঠিক করে নিল লোকটার মন বুঝেই তার সাথে কথা বলবে। যদিও কাল আকাশের বলা কথাগুলো নিঃসন্দেহে একজন স্ত্রীর জন্য দুঃখজনক, তবুও তার জীবনটাই যখন দুঃখের ভেলায় ভাসানো সেক্ষেত্রে এভাবে পিছিয়ে পড়া শোভা পায় না।সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে স্বামীর মন জয় করার বাকিটা উপরে যিনি আছেন তার ইচ্ছে।
মেঘলা নিচে নেমেই দেখতে পেলো তার মামী শ্বাশুড়িকে রান্নাঘরে সেই সাথে কাজের লোকটাকে রুটি বানাতে।মেঘলাকে সকাল সকাল ভেজা চুলে মাথার সিঁথির ফাঁকে লাল সিঁদুরে একটা জলপাই রঙের জামা পড়ে নিচে নামতে দেখে শ্রীলেখা দেবী কফির মগটা রেখে তার দিকে তাকিয়ে হাসল,প্রতিত্তরে মেঘলাও মিষ্টি হাসি উপহার দিল।মেঘলা রান্নাঘরে ঢুকতেই শ্রীলেখা দেবী বলে উঠল
~ আরে মেঘলা মা তুমি এত সকালে। আরেকটু ঘুমালেও পারতে।এভাবেই বিয়ের পর প্রথম রাত। স্বামীর সাথে সেই সাথে নতুন জায়গা ঘুম নিশ্চয়ই কম হয়েছে? ( শ্রীলেখা দেবী)
শ্রীলেখা দেবীর কথায় মেঘলার মনটা খারাপ হয়ে গেলেও স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসল
~ না না আন্টি আমার ঘুম খুব ভালো হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করবেন না।আর আমার অভ্যাসই ভোরে উঠে পড়া তারপর স্নান সেরে রান্নাঘরে মাসিকে সাহায্য করি।তাই ভাবলাম আজকেও আপনাকে সাহায্য করতে চলে আসি। ( মেঘলা)
মেঘলার মিষ্টভাষীর কথায় শ্রীলেখা দেবী মুগ্ধ হলেন তবুও তিনি মেঘলাকে সামান্য আদেশের সুরে বললেন
~ তুমি কিন্তু আমায় পর করে দিচ্ছ মেঘলা।ভূলে যেও না আমি তোমার স্বামী অর্থ্যাৎ আকাশের মামী,এক কথাই নিজের সন্তানের থেকে কম ভালোবাসা তাকে দিইনি আমার ছেলে সন্তান না থাকার দরুন। সেদিক থেকে আমি তোমার মামী শাশুড়ি আর তুমি আমায় এখনো পুরনো সম্পর্কের নাম ধরেই ডাক।এটা কিন্তু একদমই ঠিক নয় আকাশের মতোই আমাকে মামী মা বলে ডাকবে কেমন?( শ্রীলেখা দেবী)
তার কথায় মেঘলা মৃদুস্বরে হাসল তারপর মাথা ঝাকিয়ে বলল
~ ঠিক আছে আন্টি থুড়ি মামী মা।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় শ্রীলেখা দেবী উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলেন।হাসি থামিয়ে বললেন
~ তুমি তো দারুণ মজার মেয়ে হাহাহা। যাইহোক আকাশ কোথায়?সে কখন নিচে নামবে?তার কী ঘুম ভাঙেনি এখনো। তুমি কী তাকে ডাকোনি?( শ্রীলেখা দেবী)
এবার মেঘলার মুখ কালো মেঘে ছেয়ে যেতে লাগল। সে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।মেঘলাকে চুপ করে যেতে দেখে শ্রীলেখা দেবী জিজ্ঞেস করে
~ কী হলো মেঘলা চুপ করে গেলে যে।কিছু হয়েছে নাকি?( শ্রীলেখা দেবী)
মেঘলা তারপরও কিছু বলল না ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।শ্রীলেখা দেবী এবার মেঘলাকে সহজ হতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বলে উঠল
~ তুমি কী কোনো কারণে ভয় পাচ্ছ মেঘলা? বা তোমাদের মাঝে কী কিছু ঘটেছে?প্রয়োজনে আমায় বলতে পারো।( শ্রীলেখা দেবী)
মেঘলা এবার মুখ খুলল।সে ধীরে স্বরে বলল
~ উনি তো গতকাল রাতেই ঘর থেকে বেড় হয়ে গেছেন আমার সাথে রাগ করে।আমার ব্যবহারে অখুশি হয়ে হয়ত তবে আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি তার সাথে স্বাভাবিক থাকার।তাও তিনি বোধহয় আমাকে মেনে নিতে পারছেন না তাই কাল বেড়িয়ে গিয়েছিলেন এখনো ফিরেনি।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় শ্রীলেখা দেবীর কথা গলায় আঁটকে গেলো।মেঘলা জলে পরিপূর্ণ চোখে তাকিয়ে রইল মেঝের দিকে।
~ তিনি এটাও বলেছেন তার ভালোবাসার মানুষ রয়েছেন পূর্বেই।আমায় বিয়ে করেছেন দয়া দেখিয়ে আপনাদের কথা মান্য করতে।তবে তিনি আমায় মেনে নিয়ে তার প্রেমিকাকে ভূলতে পারবেন না তাই আমাকে তাদের মাঝ থেকে দূরে সরে দাঁড়াতে বলেছেন।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় শ্রীলেখা দেবী স্তম্ভিত হয়ে গেলেন তিনি কোনোমতে নিজেকে সামলে একটা ঢোক গিললেন অতিকষ্টে।তারপর মেঘলাকে নিয়ে বসালেন সোফায় নিজেও বসলেন।কিছুক্ষণ নিরবেই কেটে গেলো সময়, মেঘলা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।শ্রীলেখা দেবী মেঘলাকে কী বলে স্বান্তনা দেবেন তাই ভাবতে লাগলেন।কিছু একটা ভেবে মেঘলার নরম দুটো হাত নিজের হাতের মাঝে নিলেন তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস নিয়ে বলতে লাগলেন
~ আমি জানি তোমার এখন ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে মেঘলা বিয়ের পরপরই স্বামীর অবহেলা পেয়ে।তবুও বলব ধৈর্য হারা হবে না।মনে রাখবে তুমি আকাশের বিবাহিতা স্ত্রী,সে নিজ হাতেই তোমার সিঁথি রাঙিয়েছে মানছি আমাদের জোড়াজুড়িতে বিয়েটা করেছে তবুও বিয়ে কিন্তু ঠিকই করেছে। আর বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যখন তখন বিয়ে করে তোমায় আবার ছুড়ে ফেলবে।বিয়ে যখন করেছে তোমায় অধিকার ও দিতে হবে তার।আর তুমিও কখনো নিজের স্বামীর থেকে দূরে সরে যাবে না সবসময় তাকে ঘিরে থাকবে সে যতোই বিরক্ত হোক না কেন।সে এভাবেই একদিন তোমায় ভালোবেসে ফেলবে তোমার প্রতি তার বিরক্তিই একদিন ভালো লাগার কারণ হবে বুঝলে?আর আকাশ ছেলেটাকে আমি ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছি ছেলেটা দেখায় মানুষকে মাঝেমধ্যে কাঠিণ্য তবুও সে মানুষকে উপেক্ষা করে তেমন একটা চলতে পারে না আর তুমি তো তার স্ত্রী।ইশ্বর প্রদত্ত পবিত্র সম্পর্ক গুলোর একটি।ছেলেটা মা-বাবা হারা হয়েও জীবনে এতদূর এসেছে শুধুমাত্র নিজের জেদ এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাড়নায়। জানো না যখন সে ক্লাস টেনে তখন থেকেই নিজের পড়াশোনার টাকা টিউশন করে নিজেই যোগাতো।তোমার মামার থেকে টাকা খুব জরুরী লাগলে তবেই নিত।আর হয়ত সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পায়নি বলে আক্ষেপ থাকবে,তবে তোমার কাজটা এখানেই। তার এই আক্ষেপটা পুষিয়ে নিজের জায়গা করে নিতে হবে।জানি খুব কঠিন কাজ তবুও যদি নিজের সম্পর্কটাকে নিয়ে তুমি সিরিয়াস হও শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাও তবে ধৈর্য ধরতে হবে তোমায়।আরেকটা কথা মনে রেখো কাউকে সহজে নিজের করে পাওয়ার মাঝে প্রাপ্তি খুব একটা নেই, তাকে নিজের মতো করে এবং নিজেকে তার মনমতো করে গড়ে তোলার মাঝেই সার্থকতা।শেষ কথাটা এটাই বলব ছেলেদের প্রথম ভালোবাসা হওয়ার থেকে শেষ ভালোবাসা যারা হয় তারাই ভাগ্যবতী।তুমিও পারো সেই ভাগ্যবতীদের একজন হতে ধৈর্য এবং নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। ( শ্রীলেখা দেবী)
শ্রীলেখা দেবীর কথায় মেঘলা হুহু করে কেঁদে উঠল আচমকা তাকে জড়িয়ে কাদঁতে লাগল। তিনি প্রথমে অবাক হলেও নিজের স্নেহের করটি মেঘলার মাথায় চালান করে দিলেন।সস্নেহে মেঘলাকে একজন মায়ের স্থান থেকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা চালাতে লাগলেন।
আকাশ বাড়ি ফিরতেই তাকে দিবাকর বাবু নিজের ঘরে ডেকে পাঠান।আকাশ ক্লান্ত, বিরক্ত সেই সাথে মামার উপর রাগটা চেপে রেখেই রুমে গেলো।তাকে নিজের ঘরে আসতে দেখে দিবাকর বাবু হাতে থাকা পত্রিকাটা পাশে রাখলেন। গম্ভীরমুখে বসে রইলেন নিজের পাশে আকাশকে বসার অনুমতি দিলেন না আকাশ দাঁড়িয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর আকাশ নিজেই বলে উঠল
~ মামা,তুমি আমায় ডেকেছিলে কিছু কথা বলার জন্য। তা যদি জরুরি হয় বল এখনই না হয় আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।( আকাশ)
~ তোমাকে এখন কোথাও যেতে হবে হবে না।ডেকেছি কাজের কথার জন্য খাজুরে আলাপ জুড়তে নয়।( দিবাকর বাবু গম্ভীর কণ্ঠে বলল)
~ তাহলে সেই কাজের কথাটা কী তাই বল মামা।তখন থেকেই তো দাঁড়িয়ে আছি।( আকাশ বিরক্তি নিয়ে বলল)
দিবাকর বাবু ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে আকাশকে উদ্দেশ্য করে বললেন
~ শুনলাম কাল রাতে যে বাড়ি থেকে বেড় হলে নতুন বউকে ফেলে মাত্রই নাকি ঘরে এলে।তা এতক্ষণ কোথায় ছিলে?সারারাত কী করছিলে?নতুন বউকে আমাদের কারণে অপদস্থ করার কারণ জানতে পারি?( দিবাকর বাবু)
~ ওহ্ তার মানে অসভ্য মেয়েটা তোমাদের সব বলে দিয়েছে?আচ্ছা বেয়াদব তো!! একদিন এই বাড়িতে পাড় হতে না হতেই আমার নামে নালিশ দিতে শুরু করেছে।যাইহোক ওর ব্যবস্থা পড়ে হচ্ছে তবে হ্যা মামা কিছু সঙ্গত কারণেই আমি তোমায় কারণগুলি আপাতত বলতে পারব না।যদিও জানি আমার এরকম আচরণের কারণ তোমার কাছে অজানা নয় তবুও না জানার ভান করলে আমার কিছু করার নেই।( আকাশ)
আকাশের এমন দায়সারা উত্তরে দিবাকর বাবু চরমভাবে অসন্তুষ্ট হলেও তিনি তা প্রকাশ করলেন না।টপিক চেঞ্জ করে জিজ্ঞেস করলেন
~ বৌভাতের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ। কয়েকদিন মেঘলাকে নিয়ে এ বাড়িতে থাক।সমস্যা নেই তবে শীঘ্রই অফিসের কাছাকাছি ফ্ল্যাট খুঁজো। যাইহোক মেঘলাকে তো আর মেসে নিয়ে থাকতে পারবে না বৌ মানুষ বলে কথা।অল্প ভাড়ার মাঝে দুই কামড়ার বাসায়ই তোমাদের জন্য পারফেক্ট।( দিবাকর বাবু)
~ কেন আমি যদি মেসে থাকতে পারি তাহলে ঐ মহারাণীর সমস্যা কোথায়?ওনার জন্য আবার আমি ভাড়া করা ফ্ল্যাট খুজতে পারব না।ও যদি এতই তোমাদের কাছে দামী হয়ে থাকে ওকে দত্তক কন্যা হিসেবেও নিতে পারতে।আমার বউ বানানোর কী দরকার ছিল?বিয়ে করেছি তোমাদের কথায়, দায়িত্ব নিতে পারব না কারণ আমি একবারও বলিনি নিজে সহ আরেকজন মানুষের যথাযথ ভরণপোষণের সামর্থ্য আমার আছে।তোমার ইচ্ছে থাকলে তুমি পালো এই মেয়েকে।এককালে ভাগ্নে ছিল তোমার হোটেলে এখন না হয় ভাগ্নে বউও থাকল। সমস্যা তো নেই।( আকাশ)
আকাশ আর দাঁড়ালো না সে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ঝড়ের বেগে। সঙ্গে সঙ্গে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াটাও কেঁপে উঠল!
চলবে…
#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৪র্থ_পর্ব
লেখনীতে ; নাহার_সাইবা
~ কী হলো এখনো তোমার গোছগাছ হয়নি।শুনো যদি বেশি সময় লাগে তাহলে তুমি থেকে যাও। যখন তোমার সব কাজ শেষ হবে তখন নিজেই চলে এসো।আমি আর তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারব না।( আকাশ)
আকাশের শাসানিতে মেঘলা কর্ণপাত করল না সে নিজের ভেজা কাপড়গুলো পলিথিনে ভরে লাগেজের সাইড পকেটে ঢুকালো।ওড়না ঠিকঠাক করতে করতে আকাশের দিকে ফিরে তাকালো একবার আবারো আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের কপালের টিপটা একদম মাঝ বরাবর বসালো,চোখে হালকা কাজল দিয়ে, সিঁদুরের কৌটা থেকে সিঁদুর সিঁথিতে দিল।তারপর সব সাজসজ্জার জিনিসপত্র নিজের হ্যান্ডব্যাগে নিয়ে আকাশের দিকে ঘুরে তাকালো মুচকি হেঁসে বলল
~ হয়ে গেছে আমার।আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না।( মেঘলা)
আকাশ বেজার মুখে বলল
~ হুম,এতক্ষণ তো অপেক্ষা যা করার করেই ফেলেছি। আর কী অপেক্ষার বাকি আছে?( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা খিলখিলিয়ে হাসল অতঃপর বলল
~ তো আপনাকে কী আমি বলেছিলাম অপেক্ষা করতে?আপনি স্বেচ্ছায় অপেক্ষা করলে তো আমার দোষ নেই বা অভিযোগ। ভালোই লাগে নিজের জন্য কারো কেয়ার দেখলে।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ আরো বিরক্ত হলো
~ শুনো আমি কারোর কেয়ার করছি না তোমার তো নয়ই। তাই সবসময় আগ বাড়িয়ে বুঝবেও না সেই সাথে কথাও বলবে না।( আকাশ)
আকাশ এই বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।মেঘলা আকাশের কথায় কষ্ট পেলেও কিছু বলল না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাগেজটা নিয়ে নামল নিচে।নিচে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল দিবাকর বাবু, শ্রীলেখা দেবী তাদের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আশা।মেঘলাকে আকাশের পেছনে ব্যাগ নিয়ে নামতে দেখে দিবাকর বাবু রেগে গেলেন তবুও কিছু বললেন না আকাশকে।আশা এসে দাড়ালো মেঘলার পাশে,মেঘলা হাসলো। আশা কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বলল
~ ভাবি,তোমরা চলে যাচ্ছ আজকেই?খুব মনে পড়বে তোমায়?( আশা)
আশায় কথায় মেঘলা তার পিঠে হাত রেখে বলল
~ আমারো তোমায় খুব মনে পড়বে আশা।মামী মা আর মামাকে নিয়ে সাবধানে থেকো।( মেঘলা)
এবার দিবাকর বাবু আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল
~ দুজনেই ভালো থেকো নতুন জায়গায়।নিজেদের মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও আশা করি ধীরে ধীরে সবটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে।আর আকাশ এ বাড়িতে থাকতে তুমি মেঘলাকে যা অপমান করেছ করেছ।ওখানে যাওয়ার পর যাতে এমন কোনো ঘটনা না ঘটে।আর যত তাড়াতাড়ি অতীতটাকে ভূলে বর্তমানকে আঁকড়ে ধরবে ততই মঙ্গল তোমার জন্য। একটা কথা মনে রেখো অনেক সময়ই আমরা হীরার খোঁজে নেমে খাঁটি স্বর্ণকে কেই হারিয়ে ফেলি।আমাদের কারোই কাম্য নয় তুমি জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়।( দিবাকর বাবু)
দিবাকর বাবুর কথায় আকাশ কিছু বলল না।মেঘলার হাতের লাগেজ টেনে বাড়ির বাহিরে নিয়ে গেলো।শ্রীলেখা দেবী মেঘলার হাত ধরে নিজের কাছে টানলেন অতঃপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
~ মা রে,অল্পতেই ধৈর্য হারা হবি না।মনে রাখবি তোর এখন একটাই লক্ষ্য স্বামী, স্বামীর মন জয় করা।আর আমাদের আশীর্বাদ সবসময় তোর সাথে আছে।কোনো খারাপ কিছু করলেই জানাবি আমাদের আর কোনকিছু ভূলেও গোপন করবি না মামা মামীর থেকে।আর আমাদের বিশ্বাস আছে আকাশ তোর সাথে তেমন নির্দয়ও হতে পারবে না।( শ্রীলেখা দেবী)
শ্রীলেখা দেবীর কথায় মেঘলা কিছুটা আস্বস্ত হলো,সে হাসার চেষ্টা করল যদিও খুব একটা পারল না।এরপর সেও বেড়িয়ে পড়ল,আকাশের দাড় করানো রিকশায় উঠে বসল দুজনে দূরত্ব বজায় রেখে তবুও এতটুকু রিকশায় দুটো মানুষ বসলে দূরত্ব বজায় রাখা যদিও অসম্ভবই বটে!!
সবাই যার যার ঘরে চলে গেলেও দিবাকর বাবু দাঁড়িয়ে রইলেন সেখানেই। তার মনে সংশয়,ভয়!! তিনি নিজের কথা রাখতে গিয়ে না আবার কথার খেলাপ করে বসেন।তার চন্দ্রার আত্মা যে এতে কষ্ট পাবে যদি মেঘলা সুখে না থাকে।দিবাকর বাবুর মনে অজানা ভয়ের দানা গুলো যেন সূচালো হয়ে বিঁধছে তিনি অনিশ্চিত আকাশ- মেঘলার ভবিষ্যত নিয়ে। সত্যিই কী মেঘলাকে একটি সুখী ভবিষ্যৎ দিতে পারবেন তিনি আকাশের মাধ্যমে?? নাকি জোর করে দেওয়া বিয়েটা কাল হয়ে দাঁড়াবে তার চন্দ্রার আমানত মেঘলার জন্য??!
দুপুরে নিজ বাড়িতে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল দুজনে।আকাশের মেসের খাট আর রেফ্রিজারেটরটা বাসায় নিয়ে এসেছে। এছাড়া একটা গ্যাসের চুলা রান্নাঘরে বসাবে আগামীকাল তাই আজকের দিনটা ও বাড়ি থেকে পাঠানো খাবারেই চলতে হবে দুজনকে।আকাশ বাড়িতে আসার পর থেকে একটাও কথা বলেনি মেঘলার সাথে।যদিও মেঘলা বরাবরই চেষ্টা চালিয়েছে আকাশের কাছ ঘেঁষার তবে ব্যর্থ! আকাশ আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে এভাবে বিয়ের পর বিয়ের সুবাদে খুব একটা ছুটি নেওয়া হয়নি তাই আজকের দিনের জন্য ছুটিটা বস হেঁসে খেলেই দিয়েছেন। ঘরের সব গোছগাছ সেড়ে ক্লান্ত মেঘলা ঘরে গিয়ে বসল, তাও ভালো ফ্যানটা মাথার উপর লাগানো হয়েছে তা না হলে এ-ই গরমে সিদ্ধ হতে হত।মেঘলা দেখতে পেলো আকাশ একমনে চ্যাট করে যাচ্ছে কপালে চিন্তার ভাজ, হাত কাঁপছে চ্যাটিং করার সময়।মেঘলা কৌতুহলের বসে জিজ্ঞেস করে ফেলল
~ আপনি কার সাথে চ্যাটিং করছে এভাবে? আর এত ঘামছেন কেন?( মেঘলা)
মেঘলার প্রশ্নে আকাশ মাথা তুলে তাকালো তার দিকে অতঃপর আবারো চ্যাটিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়ল।তার মাঝে কেবল বলল
~ তোমাকে নিশ্চয়ই বলতে বাধ্য নই। নিজের সীমা অতিক্রম করবে না বরাবরের মতোই বলছি। যেখানে যেমনটা আছ তেমনটাই থাক।এভাবেই মেজাজ খারাপ তোমার ষ্টুপিড মার্কা কথা শুনিয়ে আরো রাগিয়ে দিও না।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলার মুখটা চুপসে গেলো। সে আর কিছু না বলে পা দুলাতে লাগল।
রাতে খাবার শেষ করে দুজনে ঘুমাতে আসল।মেঘলা বিছানার চাদর, বালিশ ঠিক করে যেই শুতে যাবে ওমনি আকাশ বাঁধা দিয়ে উঠল
~এই মেয়ে কী করছ?কী করছ?তুমি বিছানায় শুবে নাকি?( আকাশ)
আকাশের প্রশ্নে মেঘলা স্বাভাবিকভাবেই হেঁসে জবাব দিল
~ হ্যা,আমি বিছানায় ঘুমাবো।তাছাড়া রুমে আর জায়গা কোথায়?( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ মুখ গম্ভীর করে বলব
~ অসম্ভব তুমি আর আমি কোনোভাবেই এক খাটে ঘুমাতে পারব না।তুমি ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়।এটাই তোমার জন্য সলিউশন। কেন ঐ বাড়িতে আমি সোফায় ঘুমিয়েছিলাম যাতে তুমি কাউকে অভিযোগ করতে না পারো তোমায় বিছানায় শুতে দেইনি।কিন্তু এটা আমার বাসা এখানে আমার কথা মতো চলবে।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা কিছু একটা ভাবল তারপর হাসি হাসি মুখ করে বলল
~ তাতো হয় না মিস্টার আকাশ।আপনি আমায় বিয়ে করেছেন সেটা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত।আমার সিঁথিতে আপনিই সিদুর প্রদান করেছেন তাই আপনার বিবাহিত সমাজস্বীকৃত স্ত্রী হিসেবে আপনার বাড়িঘরে আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।তাই আপনি না চাইলেও আমি বিছানাতেই ঘুমাব এবং আপনিও।যদি একান্তই আপনার সমস্যা থেকে থাকে তবে আপনি মেঝেতে শুইবেন আমি নই।বুঝলেন ব্যাপারটা?আমি প্রচন্ড অধিকার সচেতন। ( মেঘলা)
মেঘলা শেষের কথাটা বিজ্ঞের ন্যায় বলল।আকাশ মেঘলার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বলল
~ তোমার মতো বেয়াদব, ফাজিল একটা মেয়ের সাথে তর্কে জড়ানো আর গাধাকে পিটিয়ে মানুষ করার মাঝে পার্থক্য নেই । আসলে বল তো কী তোমার রক্তে বেয়াদবি মিশে আছ,মানুষকে মান্য গণ্য করতে জানো না।যাইহোক কথা আর বাড়াবো না থাক তুমি তোমার অধিকার নিয়ে এই বিছানায়।আমিই নিচে থাকছি।( আকাশ)
আকাশ এরপর নিচে ফ্লোরিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।মেঘলার দুচোখ পানিতে ভরে এলো, মেঘলা আর বসে না থেকে বালিশে মাথা গুঁজে দিল নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।আকাশ লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল বোধহয় আর সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।মেঘলা বিপরীত পাশে ফিরে কাঁদতে থাকল।হঠাৎ তার কানে ভেসে এলো আকাশের কিছু চাপা কথা
~ রোশানি রোশানি প্লিজ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।আমি মেঘলাকে বিয়ে করে ভালো নেই।আমি কিছুতেই তোমায় ভূলতে পারছি না।তোমায় আমার খুব প্রয়োজন রোশানি,একটা ভূল করে ফেলেছি মামা-মামীর কথা রাখতে গিয়ে। তবে এখন আমি এই বিয়ে থেকে মুক্ত হয়ে তোমার সাথে বাঁচতে চাই। দয়া করে চল কোথাও আমরা একসাথে হই কথা বলি!!( আকাশ)
আকাশের কথাগুলো কানে আসতেই মেঘলার কান গরম হয়ে এলো,মাথা ভনভন করতে লাগল।তার গোঙানির শব্দ ক্রমেই বিস্তার লাভ করতে লাগল নিঝুম, নিস্তব্ধ রজনীতে..
চলবে…