ভালো থেকো ভালোবাসা পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
1709

#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#১৭তম_পর্ব তথা অন্তিম পর্ব
লেখনীতে ; নাহার সাইবা

হুম মেঘলা তার ঠিক দুই মাসের মাথায় মারা যায় হাসপাতালের আইসিইউতে। সারাজীবন দুঃখের নৌকা বওয়া মাঝির জীবনাবসান ঘটে সেই আইসিইউতে।আকাশ সহ পরিবারের সকল ছিল তার পাশে সেদিন,তার কথা বলার সামর্থ্য ছিল না রুগ্ন চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।কী করুণ লাগছিল মেয়েটাকে! যেই মেয়েটার এক দন্ড কথা না বললে শ্বাস নিতে পারত না,আজ শ্বাস নেওয়ার জন্য কথা বলতে পারল না।মেয়েটা কথা বলার মানুষ চাইত আপন মানুষগুলো সঙ্গে, আজ সবাই তার পাশে থাকলেও সেই চাঞ্চলতা বিন্দু পরিমাণ নেই,নেতিয়ে পড়েছিল।ধীরে ধীরে অগ্রসর হলো মৃত্যুর দিকে,রাত ১২ বাজবার ঠিক এক মিনিট আগেই মেঘলা নামক মেয়েটা দুনিয়া থেকে বিদায় নিল।মেঘলার মাসীমণির সেই কান্না যে মানুষ দেখেছে তার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আকাশের মামা-মামীও ছিলেন।দিবাকর বাবু নিরবে বেড়িয়ে পড়েছিলেন সেখান থেকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে রাতের আধারের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আর অস্ফুটস্বরে আওড়াচ্ছিলেন
~ আমি পারিনি রাত,তোমার স্মৃতিকে আগলে রাখতে তাকে তোমার থেকেও কষ্ট নিয়ে এই পৃথিবীর মায়া ছাড়তে হলো।তুমি আমায় কখনো ক্ষমা করো না,তোমার মৃত আত্মার সম্মানও যে রাখতে পারিনি!!
রোশানিও উপস্থিত ছিল সে অনবরত চোখের পানি ফেলছিল আর হাতে থাকা মেঘলার লেখা চিরকুটটা তখন তার ঘামে ভেজে কিছুটা দুমড়েমুচড়ে গেছে।আবারো চোখের পানি মুছে সে কাগজা চোখের সামনে মেলে ধরল।ভাঙা ভাঙা স্বরে পড়তে লাগল
প্রিয় দিদি,
তোমার উপর প্রথম দিকে আমার প্রচন্ড রাগ আর হিংসা হয়েছিল কেননা তুমি আমার স্বামীর ভালোবাসা ছিলে।আর তোমার জন্যই সে আমায় প্রত্যাখান করেছিল।তবে দিনদিন তুমি আমার ধারণা পাল্টে দিল জানি খুব চেষ্টা করেছিলে আমার আর ওনার সম্পর্কটাকে একটা গতি এনে দিতে নিজের সর্বসুখ বিলীন করে হলেও।কিন্তু নিয়তি বলেও কথা আছে জানো তো?তিনি আমার ভাগ্যে নেই তাহলে পাব কী করে?তবে মনে রেখো তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই,তুমি আমার শেষ দিন গুলোই যেভাবে সঙ্গ দিয়েছ তাতেই বোধহয় আমি আরো দশদিন বেশি শ্বাস নিয়েছি প্রাণ ভরে।হয়ত যেকোনো সময় নিশ্বাস থেমে যাবে।তখন আকাশ মানুষটাকে তুমি তোমার করে নিতে পারো রুশা দিদি আমার কোনো আপত্তি নেই,তবে তুমি অনিক দা’র সাথে ভালো থাকলে তার সাথেই থেকো।কিন্তু একটু খেয়াল রেখো মানুষটার,রাগটা হয়ত বেশিই তবে মনটা খুব নরম। আমার মতোই সব হারিয়ে তোমাকে হারাতে চায়নি তাই বাজে ব্যবহার করেছে আমার সাথে ও আমি মনে রাখিনি তোমরাও ভূলে যেও।সর্বোপরি আমার মৃত্যুর পর সবাই ভালো থেকো সকল দুঃখ ধুয়েমুছে যাক এই প্রার্থনাই করি।

ইতি
তোমার স্নেহের
মেঘলা

চিরকুটটা পড়া শেষ হতেই রোশানির নিজের ওড়নায় মুখ চেপে কাদঁতে লাগল,এই আহাজারির শেষ কোথায় তার জানা নেই।
শ্রীলেখা দেবী সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা প্রাণহীন মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলেন
~ ঘুমো মা,শান্তিতে ঘুমো তোকে আর কেউ জ্বালাতন করবে না।তোর যন্ত্রণায় কেউ অতিষ্ঠ হবে না।তোকে যারা অপ্রয়োজনীয় মনে করত আজ তাদের সুখের দিন!! তুই বিদায় নিয়ে তাদের মঙ্গল করে গেলি।এখন আর কেউ তোকে কষ্ট দিবে না কেবল শান্তি আর শান্তি…
শ্রীলেখা দেবীর মনে পড়ে গেলো কয়েক সপ্তাহ আগের কথা,মেঘলা তখন বাসায়ই। তিনিও ছিলেন কটাদিন মেঘলার সাথে আকাশের উপর কোনো ভরসা নেই মেয়েটার ঠিকমতো খেয়াল রাখে কিনা সন্দেহ ছিল তা নিয়ে।দুপুরবেলা মেঘলাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। মেঘলা হঠাৎ খাওয়া থামিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল
~ মামী মা, তুমি যখন আমায় আদর করে খাইয়ে দেও না তখন মনে হয় যেন আমার নিজের মা’ই খাইয়ে দিচ্ছে। কখনো মায়ের আদর ভালোবাসা পাইনি তো তাই জানিও না কেমন হয় তা! তোমার জন্যই আমি আজ মায়ের স্নেহ মমতা আংশিক হলেও ভোগ করছি।( মেঘলা)
~ এমনভাবে বলতে নেই মেঘলা, আমি তোমার মায়ের মতোই আবার মা বলতেও আপত্তি নেই।আর তোমার মতো লক্ষি একটা মেয়ের মা হওয়া চাট্টিখানি কথা নাকি হ্যা?( শ্রীলেখা দেবী)
শ্রীলেখা দেবী বেশ রসিকতা করেই বললেন।মেঘলা এবার তার বলহীন হাতে শ্রীলেখা দেবীর বাহুতে হাত রাখল,দুর্বল কন্ঠে বলল
~ তাহলে মেয়ে হিসেবে একটা অনুরোধ করি তোমায় মা কেমন?জানি আমার আজকের অবস্থার জন্য তুমি মনে মনে ওনাকে দুশো, তবে আমি বলব তাকে আর এভাবে নিজের ছত্রছায়ার বাহিরে রেখো না।লোকটা এতদিন যা-ই করুক এখন আমার খুব খেয়াল রাখে,হয়ত ভালোও বাসে।হাহ যাইহোক তুমি তার থেকে আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখো না,তোমার মনে তাকে অপরাধী বানিয়ে তুমি যেমন সুখে নেই তেমন তিনিও বিনা অপরাধে অপরাধী হয়ে ভালো নেই।তাকে ক্ষমা করে দিও তিনি যাই করুক না কেন আমি তো কোনো অভিযোগ রাখিনি তার জন্য মনে, তুমি রেখো না।আর হ্যা,তার তো বেশি বয়স হয়নি একটা অল্প বয়সী তার পছন্দের সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে দিও ঠিক আছে? ( মেঘলা)
মেঘলা এই বলে হাসতে লাগল,বেশিক্ষণ হাসতে পারল না কাশি উঠে গেলো।শ্রীলেখা সজল চোখে তার দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন।আরেকজনের ও চোখে জল চিকচিক করছিল তিনি আর কেউ নয় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ।
আকাশ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলার প্রাণহীন দেহ টার দিকে।সবাই নানাভাবে শোক পালনে ব্যস্ত থাকলেও সে একদম স্থির। কোনো নড়চড় নেই,মেঘলার দেহ থেকে প্রাণপাখিটা যেই মুহুর্তে উড়াল দিল সেও দাড়িয়ে পড়ল এখনো সেখানে দাড়িয়ে। বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে ক্রমেই যেন ব্যাথার বিস্তার লাভ করতে লাগল।মনে হতে লাগল তার খুব মূল্যবান একটা জিনিস যেন হারিয়ে ফেলেছে সে।অথচ মেঘলা কী আসলেই তার কাছে মূল্যবান ছিল?সে তো রোশানিকে ভালোবাসত তাকে পাওয়ার জন্য মেঘলাকে মূল্যহীন মনে করেছিল।অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ রোশানি এই জায়গায় উপস্থিত থাকতেও তাকে যেন চোখেই পড়ছে না আকাশের,এই মুহুর্তে সকল ধ্যান-জ্ঞান মেঘলার মাঝে আবদ্ধ। মেঘলা যদি জানত সে যে মানুষটাকে পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছে আজ সকল ভাবনা ছেড়ে সেই মানুষটাও তার ভাবনায় নিমজ্জিত তাহলে হয়ত সীমাহীন খুশিতে লাফিয়ে উঠত!! কিন্তু আফসোস খুব কম মানুষই ভালোবাসার মানুষগুলো থেকে মর্যাদা পায় জীবদ্দশায়,বেশিরভাগই ভালোবাসার চাহিদা নিয়ে জীবন কাটায়।

এরপর আরো দুসপ্তাহ কেটে গেলো।মেঘলার সৎকার, অন্তষ্টিক্রিয়া সহ সকল কর্ম সম্পাদন শেষ।আকাশ কেবল একটা রোবটের ন্যায় কাজগুলো করেই গিয়েছে তার মাঝে যে প্রাণ ছিল বোঝা দুষ্কর।
বসে আছে তার আর মেঘলার স্মৃতিবিজরিত রুমটায়,এখনো যেনো কানে ভেসে আসছে মেঘলার খিলখিল হাসির শব্দ, আর সেই মিষ্টি মধুর ডাক “মাস্টারমশাই ” তবে না সবটাই কাল্পনিক বাস্তবে মেঘলা নামক মেয়েটার কোনো অস্তিত্ব নেই সজাগ মস্তিষ্কে কথাটা আসতেই বুকের মাঝে দু ইঞ্চি খাদ তৈরি হয় যেন।সামনেই পড়ে আছে একটা হলুদ খাম,খুব ধীরে সুস্থে খাম থেকে তার ভেতরকার চিঠিটা বেড় করল।মেলে ধরল নিজের সামনে।চোখের দৃষ্টিও কেমন যেন সরু হয়ে আসছে তবুও পড়তে শুরু করল
পরমপ্রিয় স্বামী তথা মাস্টারমশাই,
প্রথমেই আমার নিবেদিত ভালোবাসা গ্রহণের আহ্বান রইল যা আজীবন ছিল।এই চিঠিটা শুধু নিজের মনের স্বান্তনার জন্য লিখিনি লিখেছি আপনাকে কিছু জানানোর জন্য। তবে তার আগে কিছু কথা বলেনি,আপনার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো।আপনাকে আমি ঠিক কতটা ভালোবাসি তা হয়ত এই চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারব না,প্রকাশ করলেও হয়ত আপনি গ্রহণ করবেন না কেননা সরাসরি তো কতোই চেষ্টা করেছি আমার প্রেম জাহিল করার।পেরেছি আমি?নাহ পারিনি ব্যর্থ আমি,ব্যর্থ আমার ভালোবাসা। তবুও আমার অবুঝ হিয়ায় কেবল একটাই জিজ্ঞাসা একটু ভালোবাসা দিলে কী হতো মাস্টারমশাই??খুব কী বেশি হয়ে যেত আমায় একটু বুকে জড়িয়ে ধরে বললে “ভালোবাসি আমিও”? জানি এবং বুঝি আমার এই দুঃসময়ে আপনি যা করেছেন তা ভোলবার নয়,গোটা আপনি তাকেই ভোলবার নয় যেখানে। তবু প্রত্যেকবার একজন মানুষ হিসেবে মানবিকতার পরিচয় না দিয়ে আমায় প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করলেও খুব খুশি হতাম।যাইহোক এ ছিল আপনার প্রতি আমার ক্ষুদ্র অভিযোগ বা অভিমান।এবার আপনাকে কিছু সত্যি জানাতে চাই জানেন আমি অনাথ নই,আমার বাবা আছেন জীবিত। তিনি আমার সঙ্গে দেখাও করতে এসেছিলেন যখন আপনি ছিলেন না।তার নামটা ছিল তথাগত মজুমদার, হয়ত চেনা চেনা লাগছে আরেকটু চিনিয়ে দিই ইনি হলেন রোশানি দি এর বাবা!! চমকে গেলেন বুঝি?হুম,আমিও অবাক হয়েছিলাম জানার পরে সবটা তবে কী করব বলুন তো সত্য অপ্রিয় হলেও সত্য তাকে মেনে নেওয়াই কর্তব্য। আমি চাইলেই পারতাম রোশানি দিকে কথাগুলো বলতে। তবে আমি চাইনি আমি চলে যাবার পর আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।থাকুক না একটা জীবন চলেই গিয়েছে, কষ্ট না হয় সবটা আমি নিজের মাঝেই বয়ে গেলাম বাকিরা সুখে থাক।আপনিও থাকবেন খুব ভালো থাকবেন। তবে আপনার সাথেও আমার কিছু স্মৃতি সুখ-দুঃখ মিলিয়ে।মনে আছে মাতাল হয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে আপনি আমার কতটা কাছে এসেছিলেন,মনে মনে লাড্ডু ফুটছিল! আবার ভয়ও পেয়েছিলাম যদি হুঁশ ফেরার পর আপনি আমার উপর চড়াও হন? আপনাকে যে খুব ভয় পাই!! তাই অতিকষ্টে সরে এসেছিলাম নিজের মাঝে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলাম।আপনার ঘুমন্ত, ক্লান্ত মুখ টার দিকে তাকিয়ে আনন্দে সারারাত কাটিয়েছিলাম।
জানেন মাস্টারমশাই আপনাকে যতবার দেখি ততবারই প্রেমে পড়ি,পাগল হয়ে যাই একপ্রকার।তখন সকল বাঁধা অতিক্রম করে আপনার হতে চাইতাম শুধু। তবে আমি যে জনমদুখিনী আমার ভাগ্যে সুখ সহে কী করে?আপনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন আমায় ডিভোর্স দেওয়ার জন্য, আলাদা হওয়ার জন্য আর সেই পথটা আরে মসৃণ করে দিল আমার ক্যন্সার।তবুও যখন আমার মতো অচলপ্রায় মানুষটাকে নিয়ে ভাবতেন তখন আমার মন জুড়িয়ে যেত,বাঁচার ইচ্ছে বেড়ে যেত। খুব ভালোবাসি আপনাকে এবং আপনার প্রতি সকল অভিযোগ, অভিমান তুলে নিলাম।আপনার ভবিষ্যত মসৃণ হোক এই কামনা করি।আর যদি কখনো মনে হয় রোশানি দি এর সঙ্গে ভালো থাকবেন তাকে নিয়েই ভালো থাকবেন কোনো প্রকার দ্বিধা অনুভব করবেন না।যাকে ভালোবাসি আমরা তাকে খুব কাছে পাওয়া আসলেই দুষ্কর আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সকল বাঁধা উপড়ে আপনারা চাইলে সুখী হতে পারেন তাতে আমার কোনো আফসোস থাকবে না। মৃত মানুষের আফসোস কী হয়??হাহা যাইহোক এর থেকে কথা না বাড়িয়ে বিদায় নেই আপনাকে আর বিরক্ত করব না কখনো চিঠিটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আর হুম শেষ কথা একটাই ভালো থেকো ভালোবাসা
ইতি
৷ আপনার অবহেলার ছাত্রী, স্ত্রী,ভালোবাসার দাবীদার
মেঘলা…

~ এর পরে কী হলো কাকু? আপনি কী আর বিয়ে করেছিলেন?আর রোশানি অনিক ওদেরই বা কী হলো?
চাপা উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে হড়বড় করে বলে উঠল অমিত মিত্র বয়স ২৮ এর যুবক ভীষণ তাগড়া,কৌতুহল জিনিসটা বেশি এক দেখাতেই আকাশ বুঝে গেলো।সে চোখের চশমাটা নামিয়ে চোখ কচলাল, ফাঁকে চোখের পানি মুছে নিল হয়ত।তারপর চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে বলল
~ নাহ আর কখনো বিয়ে করার ইচ্ছে হয়নি।কেমন যেন মৃত হয়ে পড়েছিলাম তার চলে যাবার পর,সারা দুনিয়া আমার উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিল।হয়ত আমার অবুঝ মনের বুঝ হলো,মস্তিষ্কের সুবুদ্ধি হলো তাই আমায় আর দোলাচালের মাঝে রাখল না।জীবনের একসময় এসে উপলব্ধি করলাম হয়ত সত্যি সেই শ্যামলা,চঞ্চলতা মেয়েটাকে আমি ভালোবেসেছিলাম তবে এমন সময় উপলব্ধি হলো যখন সে আমার পাশেই ছিল না।অতঃপর এই যে আমিও এখন জীবনের শেষ প্রান্তেই আছি।কেবল মৃত্যুর প্রতিক্ষা করি,যদি তার দেখা পাই।অতঃপর স্বীকার করব হয়ত আমি তাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলাম ক্ষমা চাইব যদি নেয় আমায় আপন করে…,
অমিত আর কিছু বলল না।উঠে দাঁড়ালো, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বাড়ি ফিরতে হবে।যাওয়ার আগে হঠাৎ থেমে আকাশকে প্রশ্ন করল
~ আচ্ছা কাকু আপনি নামটা কী যেন বলেছিলেন?মেঘলা?( অমিত)
~ হুম, এক আকাশ কষ্টের ভেলায় ভাসমান মেঘলা…
অমিত এবার বেড়িয়ে এলো বৃদ্ধাশ্রম থেকে,তার খুব অস্বস্তি শুরু হয়েছে আকাশের কাছ থেকে তার অবহেলার ভালোবাসার কাহিনি শোনার পর তবে সে নিশ্চিত আকাশ এখন মেঘলাকে ভালোবাসে চরমভাবে তা না হলে কেউ এভাবে সংসার জীবন ত্যাগ করে সন্নাসী হয়?তবে আকাশের ক্ষেত্রে যা হয়েছে সে হলো ভালোবাসার মানুষটাকে মূল্য দিতে পারেনি সঠিক সময়ে যার জন্য তাকে পস্তাতে হচ্ছে এবং আজীবন তাই করতে হবে।ব্যর্থতা,অপূর্ণতার ক্ষেত্র ভেঙে সে বেড় হতে পারবে না।
অমিতের ভয় অন্য জায়গায় তাকেও একজন মেঘলার মতোই ভালোবাসে কাকতালীয় হলেও সত্য তার নামও মেঘলা এবং তার ছাত্রী,সে একজন কলেজের প্রফেসর আর সেখানেই মেঘলা নামক সাইকো ক্যারেক্টারের সাথে তার পরিচয়।যদিও ধীরে ধীরে সেও দুর্বল হয়ে পড়ছে তার প্রতি তবুও প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে কিন্তু আকাশের গল্প শুনে ভয় হচ্ছে যদি সময়ের সময় দাম দিতে না পারায় তার প্রিয় মানুষটিও হারিয়ে যায়? ভাবনা মাথায় আসতে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু হলো..

আকাশ জানালার ধারে দাড়িয়ে অস্তমিত সূর্যকে দেখছে,গোধুলির লাল, নীল বর্ণিল আভা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে যে যার মতো কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছে প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে।একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার আনমনেই বলে উঠল
~ তোমাকে আমি পেয়েও হারিয়েছি মেঘলা যা আমার জীবনের সবচেয়ে মহামূল্যবান বস্তুর বিদায় কারো যাতে আমার মতো প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে আফসোস না করতে হয় তাই প্রায় শোনাই তাদের আমাদের গল্প যদি শিক্ষা নেয়! আমার মতো আর কারো প্রিয়জন তার অবহেলায় হারিয়ে যাক চাই না।ভালো থাকুক পৃথিবীর সব ভালোবাসার মানুষগুলো…

অমিত;ওহ্হ বলাই হয়নি তার ডাকনামও কিন্তু আকাশ!! দাঁড়িয়ে আছে কলেজ ক্যাম্পাসে।শীতের শুরু এত সকালে কেউ আসবে না এদিকে তাই এই সময়ে মেঘলাকে ডেকে পাঠিয়েছে।হাতে একগুচ্ছ তাজা গোলাপ, এই শীতের সকালে এগুলো সংগ্রহ করতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছেই আর তার নিচে একটা ডায়েরি হয়ত তার মনের জমানো কথাগুলো লেখা তাতে।তার সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন ঘটল লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা এক তরুণীর, ঠোঁটে সেই অমলিন হাসি,কাজল কালো চোখটা তাকে বিমোহিত করছে।আহা!! মেয়েটা টিপটা এখনো পড়তে শিখলো,সেই বহু সময়,শ্রম দিয়েও টিপটা মাঝ বরাবর ঠিক বসেনি,তাকেই ঠিক করে দিতে হবে হয়ত।মেঘলা তাকে দেখে একপ্রকার দৌড়ে এলো সেই মিষ্টি মধুর স্বরে ডেকে উঠল
” মাস্টারমশাই!!

❤️❤️❤️সমাপ্ত ❤️❤️❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে