#ভালোবেসে_ঘর_বাঁধবো (৫)
আরমান মেইন দরজায় পা রাখতেই মেহের পিছু ডাকলো। আরমান খানিকটা বিরক্ত বোধ নিয়ে বলল, ‘ হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?’
-‘দুঃখীত! আপনাকে কিছু বলার ছিলো।’
-‘ এমনটা না যে আমি আপনাকে বউ হিশেবে মেনে নিয়েছি। যার ধরুন অন্যান্য বউদের মতো জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে শুভেচ্ছা জানাবে। আরমান চৌধুরী এসব কিছুর তোয়াক্কা করে না অন্তত। বিশেষ করে আপনার মতো মেয়ের কাছ থেকে তো নয়ই।’
-‘ এসব কিছুই করবার জন্য আমি আপনাকে ডাকিনি।’
-‘ আয়াতুল কুরসি পাঠ করে বের হলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা জান মালের হোফাজত করেন।’ ভালো কাজে যাচ্ছেন তাই বলছি কী যদি পাঠ করে বের হতেন।’
আরমান আজ আর মেহেরের কথা অবজ্ঞা করতে মন চাইলো না, সে টেন্ডারটা ঠিকভাবে পেতে চায়। যার ধরুন মেহেরের বলা মতো পালন করে বাম পা দিয়ে বের হলো।
গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বাঁধবার সময় মেহেরের অবসাদ মুখটির অবয়ব ফুটে উঠলো। মনে হতেই মনটা কেমন জানি করে উঠল।আবার মনে হতেই নিজেকে বলল, ‘ তাতে তার নিজের কী! কারোর কিছুতে আরমান চৌধুরীর কিছু যায় আসে না।’
টেন্ডার জমা দিতে ঢুকতেই একজন উচ্চপদস্থ মহিলা কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হয়। মহিলা নিজ থেকেই আরমানের সাথে ভাব বিনিময় করছে। দু’জন বেশ অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে ভাবসাব আদানপ্রদান করে এবং টেন্ডার সফলকাম হওয়ার জন্য চূড়ান্ত ডিল করে।
মেহের বেলকনিতে যেতেই ক্লান্ত মন কানায় কানায় ভরে উঠল খুশিতে। বেলকনিতে রাখা গোলাপ গাছটি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। যেন আজ ফুলগুলো তার মন খুশি করতেই একসাথে ফুটেছে। মেহের কাছে গিয়ে ফুলের সুভাস নিচ্ছে। মন মাতানো সৌরভে তার মন আরো বেশি ঘায়েল হচ্ছে।
মেহেরের আজ অনেক টেনশন হচ্ছে। টেনশনে বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে জমায়েত হয়েছে। তাই সে ভাবলো সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করবে। কোন হালাল চাহিদা পূরণের জন্য দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলা হয়।
সালাম ফিরিয়ে মেহের নবীজির উপর দুরুদ পড়ল। নবীজির উপর দুরুদ পড়লে দুআ কবুল হয় এবং মুমিন বান্দার সৌভাগ্যের সব দরজা খুলে যায়।
-‘সত্যিই আপনি আমাকে ভালোবাসেন?’
-‘মিথ্যা মিথ্যা ভালোবাসা যায় নাকি পা’গলি বউ আমার!’
অব্যক্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে মেহের। এ চাহনিতে আছে কতশত আড়ষ্টতা আছে একরাশ মুগ্ধতা। শীতল শীতল ছোঁয়া শরীর ছুঁয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আকস্মিক এমন সময় প্রেম প্রেম নেশা চড়লো মেহেরের মনে। লজ্জায় মেহের লাল হয়ে মুখ ঢাকলো চোখ বুজে হাসলো।
গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠে কেউ ডাকলো, ‘ বেশ ভালইতো অভিনয় করতে জানো! শুনেছি তুমি মাদ্রাসা পড়াশোনা কর! মাদ্রাসায় অভিনয় শেখানো হয় না বলে তো আমি জানি। ‘
আশ্চর্য হয়ে তাকালো মেহের আরমান চৌধুরীর দিকে। তার মানে সেই জেগে জেগে দিবা স্বপ্ন দেখছে। নিজেকে মনে মনে বুঝালো- কারো প্রেমে পড়লে স্বপ্ন দেখতে দিবা নিশি লাগেনা। আগে এমন অনুভূতি কখনো হয়নি তার। মেহের কখনো অ’বৈধ প্রেম ভালবাসায় জড়ায়নি নিজেকে। বৈধ প্রেমের স্বাদ আলাদা বলে শুনে এসেছে এতকাল। আজ তার প্রমাণ পেল সে নিজেই। যদিও একতরফা প্রেম বলে একে।
আরমান গলা থেকে টাইটা খুলে বাবার কাছে গিয়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনা সেরে নিল।
আলাপের একপর্যায়ে আজমল সাহেব বললেন, ‘ তুমি কি এখনো তাকে ভুলতে পারছ না! মনে রেখো তুমি এখন বিবাহিত। আরেকজনের আমানত বলে কথা।’
-‘ চাই না আমি ভুলতে। তাছাড়া আর কিছু মনে রাখবার প্রয়োজন বোধ করি না।’
-‘যৌ’বন চলে যাচ্ছে বৃদ্ধ বয়সে কোন কিছু যেন আফসোসের কারণ না হয় তোমার। হয়তো আমার কথায় বিরক্ত বোধ করছো! তবে আমি একজন সচেতন পিতাও বটে।’
-‘মোটেও না।’
আরমান বাবাকে কিছু বলতে চাইলে আজমল সাহেব থামিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ পরীর মত বউ এনেছি, আশা করি রত্ন যত্ন নিতে শিখবে
-‘আশ্চর্য তো বাবা পেয়েছেটা কী? যখন তখন ওই মেয়েটার কথা বলে মাথাটা আমার হ্যাং করে ছাড়ে। মেয়েটা দেখছি বাবার মাথাটা পুরোপুরি চি’বিয়ে খে’লো।’
রুমে আসতে আরমান দেখলো আয়নার সামনে মেহের দাঁড়িয়ে তার লম্বা চুলগুলো আঁচড়াচ্ছে। সারাদিন মাথায় হিজাব পরা থাকে বলে মেহেরের দীঘল কেশ সবার দৃষ্টির অগোচরে লুকায়িত থাকে। দেখেই যেন আরমান মুগ্ধ হয়ে গেল। বাতাসে চুলগুলো হেলদোল খাচ্ছে একটু পর পর মেহেরের কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে। মেহের নাক কুঁচকে বারবার করে অবাধ্য চুলগুলো সরাতে বৃথা চেষ্টা করছে। শহরের মেয়েদের চুল নিয়ে আরমানের কখনোই ভাবান্তর হয়নি। কিন্তু আজ মেহেরের কালো কেশ তাকে কবি রঞ্জনা রায়ের ‘তুমি’ কবিতাটির মনকাড়া কয়েকটি লাইন মনে করিয়ে দিয়েছে -‘ তুমি বসে আছো এক দূসর সময়ের মাঝখানে, তোমার দীঘল চুলের ঘন উচ্ছ্বাসে ডুবে যায় জ্যোৎস্নার রুপালি পর্দা।’
যেনো আরমানও আজ ডুবতে চাইছে।
চলবে-
(আফরিন ইভা)।