#ভালোবেসে_ঘর_বাঁধবো (৩)
মেহের চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিজেকে পরিপাটি করে কিচেনে গেল নাস্তা বানাতে।
মেহেরের শ্বাশুড়ি তাকে কিচেনে দেখতে পেয়ে বলল, ‘ এতো কাজ দেখাতে হবে না। আমাদের বাসায় কাজের লোকের অভাব নেই। বড়লোক শ্বশুরকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছো এখন আসছো আমার মাথা খেতে।’
মেহের বুঝতে পারলো আরমান তার মায়ের শিক্ষায় এমন ব*খাটে হয়েছে।
সবাই নাস্তা করবার জন্য একসাথে উপস্থিত হলো। মেহের দাঁড়িয়ে থেকে এটা সেটা এগিয়ে আনছে।
মেহেরকে দেখলেই আরমানের মনে পড়ে যায় তার হট বান্ধবীদের কথা। মেহেরের কথাবার্তা ও ড্রেসআপ সব কিছু দেখে আরমানের মন বলে ওঠে- এমন গ্যাঁয়োকে কিভাবে জীবনসঙ্গী করলি? যেখানে আরমানের জন্য হাজার কোটি হট মেয়েরা বিয়ে করতে রাজি,শুধু আরমানের হ্যাঁ এর অপেক্ষায় থাকতো সুন্দরীরা। আরমান বিয়ে টিয়ে ওসবকে তেমন আমলে নেয় না বলে কাউকে পাত্তা দেয়নি ওভাবে। শুধু বাবার ফাঁদে পা দিয়েছে সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যাবে বলে। সেখানে এই গ্যাঁয়ো ভূতকে বউ হিশেবে মেনে নেওয়া তার পক্ষে ইম্পসিবল।
আরমানকে মেহের চা এগিয়ে দিল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এক ঢোক মুখে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল আরমান। অগ্নি চোখে তাকালো মেহেরের দিকে। বিগলিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এটা কি চা! না-কি শরবত? এখন থেকে এসব অখাদ্যও খেতে হবে প্রতিদিন!’
এদিকে আজমল সাহেব রেগে আগুন তিনি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বললেন,
‘ মেহেরের সাথে তোমার এমনটা করা উচিত হয়নি আরমান। তুমি চিনি খাওনা সেটা মেহেরের অজানা ছিলো। তাই বলে এমন আচরণ করতে হবে ওর সাথে? আমাদের প্রিয় নবীজি স্ত্রীদের নারীসুলভ দোষ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং সুন্দর ভাষায় সংশোধন করে দিতেন। তাদের আচরণে কষ্ট পেলে কথা কম বলতেন বকাঝকা বা প্রহার করেননি।’
-‘বাবা আমি ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি তোমার পছন্দের পাত্রীকে আমি বিয়ে করেছি ঠিক, তাই বলে মাথায় নিয়ে নাচতে পারবো না।’
আজমল সাহেব বেশ কড়াকড়ি করে বললেন, ‘ আমিও আমার কথা ক্লিয়ার করতে চাই, মেহের কে তুমি স্ত্রী হিশেবে মেনে নাও, আর না হলে আমার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি মেহেরের নামে লিখে দেওয়া হবে এই বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।’
মা’কে রাগান্বিত স্বরে আরমান বলে দিলো,
‘ মা বাবাকে থামাও, নয়তো এর পরিণাম ভালো হবে না।’
চায়ের কাপ মেহেরের হাতে সজোরে লেগে হাত অনেকটা কে’টে গেছে। হাত থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়তে লাগলো। মেহের টের পেয়ে হাত লুকিয়ে ফেলেছিল তখন। মেহের খুব ভালো করেই জানে আজমল সাহেব কা’টা হাত দেখতে পেলে আরমানকে মেহেরের জন্য আরো বেশি অপমান করবে। যা মেহের কিছুতেই চায় না।
আরমান চলে যেতেই মেহের কা’টা হাত দিয়ে কাপের ভাঙ্গা টুকরোগুলো পরিষ্কার করতে লাগলো। আরমানের বলা শেষ কথাগুলো শুনে মেহেরের ভেতরটা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোর মত ভেঙ্গে গেছে। চোখের কোণ বেয়ে টপটপ করে জল গড়াতে লাগলো। মেহের রুমে গিয়ে কা’টা হাত নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
ঘণ্টাখানেক পর মেহের কা’টা জায়গায় ব্যথা অনুভব করে আহ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠলো। জেগে উঠে দেখল, কা’টা হাতে ব্যান্ডেজ করা আরমান ব্যান্ডেজ এর জায়গায় সজোরে চেপে ধরে আছে।
মেহের চিৎকার দিতেই আরমান মেহেরের হাত ছেড়ে দিল।
-‘ এখন নিজের কষ্ট হচ্ছে! অন্যকে কষ্ট দিয়ে তো ভেতর ভেতরে খুবই মজা পাচ্ছো।তখন আমারও কষ্ট হয়েছিল বাবা যখন এতোগুলা কথা শোনালো তোমার জন্যে। এখন স্বামীর কাছ থেকে এটুকু মজা তো তুমি আশাই করতে পারো। বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করতে এক কথায় রাজি হয়েছো। এখন তোমার অবশ্যই বুঝতে হবে বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করার শাস্তি স্বরূপ কি হতে পারে! আজ থেকে এখন থেকে আমার কথায় উঠতে বসতে হবে তোমায়। সো গেট রেডি ফর ইউর পানিশমেন্ট।’
মেহেরের কিছুই বলার নেই আড়ালে সে চোখের পানি মুছল।
আসরের নামাজ শেষে সালাম ফেরাতেই মেহের দেখতে পেল আরমান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে স্যুট প্যান্ট পরে খুব ভালোভাবেই রেডি হচ্ছে, কোথাও যাবে বলে মনে হচ্ছে।
কাঁপা কন্ঠে মেহের জিজ্ঞেস করল, ‘ আপনি কী কোথাও যাচ্ছেন?’
আরমান ক্রোধান্বিত হয়ে বলল,
‘সে কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে? বাবা তোমাকে এখানে আশ্রয়ের জায়গা দিয়েছে। তাই বলে তুমি ভেবনা তুমি এই পরিবারের সদস্য হয়ে গেছো!আমার স্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে গেছো! উকিলের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিন মাস পর আমরা ডিভোর্স নিয়ে নিতে পারব। আর এই তিন মাসে আমি বাবার সব সম্পদ নিজের নামে করে নিব। এরপর থেকে তোমার মত গ্যাঁয়ো মেয়ের মুখ প্রতিদিন দেখতে হবে না আমায়।’
মেহের আরমানের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী।
মেহের আরমান কে আগে না জানলেও বর্তমানে সে মনে মনে স্বামীর স্থান দিয়েছে। ইসলাম ডিভোর্সকে নিকৃষ্টতম হালাল করেছেন। যদিও ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য তালাকের বিধান রয়েছে। তবুও ইসলাম তালাককে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর এত মধুর এবং চিরদিনের জন্য তৈরি করা সম্পর্ক ভাঙতে ইসলাম বিষয়টিকে এতটাও সহজ করে দেননি। তাছাড়া মেহের এমন কোন বড় অপরাধ করেনি যার জন্য আরমান তাকে তালাক দিয়ে দিতে হবে। মেহেরের বুকের ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠলো। মনে মনে সে পণ করলো একজন ভালো স্ত্রী হওয়ার জন্য তার যা যা করার দরকার সে সবকিছুই করে যাবে। আরমানের মন যুগিয়ে চলবে।রাসূল (সাঃ) দাম্পত্যে কলহ নিরসন করতে একটি মূলনীতি বলে দিয়েছেন- স্বামীর সব আচরণ স্ত্রীর কাছে ভালো না লাগাই স্বাভাবিক। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা কাউকেই পূর্ণতা দান করে সৃষ্টি করেননি। প্রত্যেকের ভেতরেই কিছু না কিছু মন্দ স্বভাব থাকবে। ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। কাজেই স্বামীর কোনো স্বভাব স্ত্রীর কাছে অপছন্দ হলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে।
মেহেরের একমাত্র ভরসা আল্লাহর উপর এবং সবর করা কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘ হে মুমিনগণ ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। [১]
যেখানে আল্লাহ আছেন সেখানে আর কারোর সাহায্য লাগবে না বলে মেহেরের মুখে হাসি রেখা ফুটে উঠলো।
চলবে–
______
১/রেফারেন্স সূরা বাকারাহ’র – আয়াতঃ১৫৩
®আফরিন ইভা