ভালোবেসে ঘর বাঁধবো পর্ব-০১

0
6916

#ভালোবেসে_ঘর_বাঁধবো(১)

লম্বা ঘোমটা টেনে বউ সাজে লাল টকটকে শাড়ি পড়ে বসে আছে মেহের। পুরো রুম জুড়ে ফুলের সুভাস ছড়িয়ে আছে। খাটের ওপর গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খুব সুন্দর করে খাটের মধ্যখানে ফুল দিয়ে আরমান প্লাস মেহের সাজিয়ে লিখেছে। অজান্তেই মন খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠলো। অস্বস্তি লাজুকলতা হানা দিলো চোখে মুখে। কনকনে ঠান্ডায় মেহের কাঁপছে ভীষণ। হঠাৎ গায়ে কেউ পানি ঢেলে দিলো। বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,
‘ তোমার মতো মেয়েদের কাজের মেয়ে হিশেবেই মানায় আরমান চৌধুরীর স্ত্রী হিশেবে নয়।’

মেহের এই প্রথম মনোযোগ দিয়ে কোনো পুরুষকে দেখছে। সে সজ্ঞানে কখনোই কোনো পরপুরুষের দিকে তাকায়নি। আরমান মেহেরের চাচাতো ভাই হওয়া সত্তেও মেহের কখনোই তার সামনে আসেনি। কেননা মেহের খুব ভালো করেই জানে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, ‘ মুমিন নারীদের বলুন তারা যেনো তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জা স্থানের হেফাজত করে।’ ( সূরা নূর-৩০-৩১)

তাছাড়া দৃষ্টি দিয়েই তো শ*য়তান মনে কুবাসনার সৃষ্টি করে এবং হারাম পথে এগিয়ে নিয়ে যায় যার শেষ পরিণতি জা*হান্নাম নামক শব্দ দ্বারা সমাপ্ত হয়।

মেহের আরমানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো রাগে তার কপাট রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে, চারপাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, সুদর্শন চেহারার সাথে এমন আচরণ যা বড্ড বেমানান লাগছে। ফুলশয্যা রাতে এমনটা মেহের কখনোই আশা করেনি। এই রাত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ প্রতিটি যুগলের জীবনের কাঙ্ক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ রাত।জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকেই শুরু এবং ইতি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। মেহের অতীতে ডুব দিলো-

মেহের সবে আসরের সালাতের সালাম ফিরিয়েই দেখলো তার চাচাকে।মেহের জায়নামাজটা গুছিয়ে চাচাকে আসসালামু আলাইকুম বললো।চাচা সালামের জবাব দিয়ে মেহেরকে নিজের পাশে বসালেন। মেহের চাচার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো চাচাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। মেহের খুব দ্রুত চাচাকে পানি পান করালেন। মেহের বুঝতে পেরেছে মেহেরদের এসি নাই বিধায় গরমে আজমল সাহেব ঘামছেন। আজমল সাহেব মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন চাচার কষ্টে মেহের যেন ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েছে। চাচা মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ আমি ঠিক আছি তুই আমার পাশে স্থির হয়ে বস। তোর সাথে আমার কথা আছে।’

মেহের দেখলো চাচা বড্ড সিরিয়াসলি কথাগুলো বলছে। মেহের চাচার কথা শুনতে মনোযোগী হলো।

চাচা মেহেরের সামনে হাত দুটো জোর হাত করে বললো, ‘ আমি তোর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাই আমার।’

চাচার কথা শুনে মেহের যেনো আকাশ থেকে পরলো। যে চাচার কথায় হাজার মানুষ ওঠবস করে, যার সম্মান সবার কাছে, যার সুনাম সবার হৃদয়ে সেই চাচাকে এমন ভেঙে পরতে দেখে মেহের যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। মেহের ছলছল চোখে তাকিয়ে চাচাকে বললেন,
‘ আমার কাছে আপনি যে কোনো কিছুই চাইতে পারেন, তবে আমি তো গরিব ঘরের মেয়ে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই আমার। ‘

-‘ তুই নিজেই তো হিরের টুকরো। আমি তোকেই চাই।’

মেহের আমতা আমতা করে বলল, ‘ মানে?’

-‘ তোকে আমার ছেলের বউ করতে চাই। তোর বাবার মৃত্যুর সময় যে আমি কথা দিয়েছিলাম তোকে সারাজীবন দেখে রাখবো। তোর পরিবারের উপর কোনো কালো ছায়া পরতে দিবো না। জানিনা কতটুকু তোদের ভালো রাখতে পেরেছি। তবে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আরো ভালো রাখতে চেষ্টা করবো। ‘

মেহের স্মৃতির পাতা উলটালো। যেনো ঐ তো সেদিন মেহের তার বাবার রাজকুমারী ছিলো, বাবা আদর করে মেহু বলে ডাকতো। অজান্তেই চোখে নোনা জল এসে গেল। মেহেররা তিন বোন। তাঁর কোনো ভাই নেই। তিন বোন এবং মা’কে নিয়ে তাদের সংসার। হিজলপুর গ্রামে বসবাস মেহেরদের। চাচা শহরের টপ বিজনেসম্যান। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের সবকিছু চাচাই বহন করছেন। এই দিক থেকে মেহের চাচার কাছে চিরঋণী। মেহের সবে অনার্সে ওঠেছে। বিয়ে নিয়ে তার কোনো ভাবনা ছিলো না। পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে বলে ভেবে রেখেছে। কিন্তু সব ভাবনা অনুযায়ী হয়তো সবকিছু হয় না। মেহেরের গলা শুকিয়ে আসছে কি বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না। মেহের আমতা আমতা করে বললো, ‘ মা!’

– ‘ তোর মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে মেহু।
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিবাহিতা নারীর মতামত বা সম্মতি গ্রহণ ছাড়া তার বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ব্যতিতও বিয়ে দেওয়া যাবে না।’ ( বুখারি ও মুসলিম)

কাজেই তোর মতামত জানাটা আমার জন্য অতীব জরুরী মেহু।’

চাচার মুখে মেহু ডাক শুনে মেহের নিজেকে সামলাতে না পেরে চাচার হাত ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললো। চাচা পকেট থেকে টিসু বের করে মেহেরের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল, ‘ আজকেই শেষবারের মতো চোখের পানি মুছে নে, এই বাবা বেঁচে থাকতে তোর চোখ থেকে আর অশ্রু ঝরতে দেবে না।’

মেহের আর কিছু না ভেবে বলে দিলো সে এই বিয়েতে রাজি।

চলবে-

(আফরিন ইভা)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে