ভালোবাসি বলে পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
890

#ভালোবাসি_বলে(সমাপ্ত)
#Jannat_prema

পেটে কারো হাতের ছোয়া পেতেই হাতের কলমটা পড়ে গেলো আইরিশের। এতোক্ষণ সে তার অতীতের কিছু কথা লিখছিলো। কত স্মৃতি জমে আছে এখনো। পুরোটা লিখা হলো না আইরিশের। আইরিশ হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। উঠে দাড়িয়ে আরহামের কাধে দুহাত রেখে ব’লে উঠলো,

” আজকে এতো তাড়াতাড়ি এসেছেন যে? ”

আইরিশকে নিজের সাথে মিশিয়ে নাকে একটা চুমু খেয়ে আরহাম বলে উঠলো,

” বউকে ছাড়া কি আর মন টিকে অফিসে। এমন মায়াবী বউ যার আছে, সেই জানে বউকে ছাড়া থাকতে কতটা কষ্ট। ”

আইরিশ খিলখিল করে হেসে উঠলো। স্ত্রীর এমন মনোমুগ্ধকর হাসি দেখে প্রশান্তিতে ভরে উঠলো বক্ষ। সারাদিনের ক্লান্তিটা যেনো নিমিষে মিলিয়ে গেলো। আরহামকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় আরহামের বুকে মুখ লুকালো। আরহামের বুকে মাথা ঠেকিয়ে পিঠে হাত রেখে আইরিশ বলে উঠলো,

” আপনি সব সময় এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেনো? ”

আইরিশের মাথায় ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে আরহাম বললো,

” তোকে দেখতে যে আমার ভালো লাগে। তোর দিকে তাকালে, তোর মুখের এই মিষ্টি হাসি দেখলো আমার সারাদিনের ক্লান্তি , চিন্তা সব দুর হয়ে যায়। বুঝলি! ”

আইরিশ আবারো মুগ্ধ হলো। মুচকি হেসে আরহামকে ছেড়ে দিলো। গলার টাই খুলে দিতে দিতে আরহামকে বললো,

” ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি একটু মায়ের কাছ থেকে আসি। ”

আরহাম ফ্রেশ হতে গেলে আইরিশ সেদিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো। ডায়েরিতে এখনো তাদের বিয়ের কথাগুলো লিখা বাকি আছে৷ শাশুড়ীর ঘরের দিকে যেতে অতীতে চলে গেলো।

.

প্রায় চার মাস এর মতো আরহাম ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয় না। এদিকে সবাই জেনে গেছে যে আরহাম ভাইকে আমি ভালোবাসি৷ আম্মু যখন জেনেছিলেন আরহাম ভাইকে আমি ভালোবাসি, সেদিন এমন একটা থাপ্পড় খেয়েছিলাম। এখনো মনে পড়লে ভয়ে শিউরে উঠি। সেদিন প্রথমবারের মতো আব্বু আমাকে বকা দিয়েছিলো। আরহাম ভাইকেও আর আমাদের বাসায় আসতে দেখলাম না। ভাইয়ার মুখ থেকে যখন শুনলাম, যে আরহাম ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিয়েছে। ঠিক সেদিন আমার পায়ের তলার মাটি যেনো সরে গেলো। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতে লাগলো। আমি যদি এমন করে কান্না কাটি না করতাম, তাহলে আরহাম ভাই কখনো তার অনুভূতি প্রকাশ করতেন না। হয়ত অনুভূতিগুলো আড়ালে থেকে যেতো। চার মাসের মধ্যে হাজার খানেক কল দেওয়া শেষ। কখোনো বা রিসিভ করে বলতেন, বিজি আছি পরে কল দিস। আবার কখনো বা রিসিভ না করে সোজা কল কেটে দিতেন। এদিকে আমার অনার্সের ফাইনাল এক্সামটা শেষ। আজকাল দিনগুলো কেমন বিষন্নতায় কাটছে। চারদিকে মনে হচ্ছে অক্সিজেনের অভাব বোধ করছি। আরহাম ভাইকে এক নজর দেখার জন্য যে মনটা ভিষণ কাতর হয়ে আছে। আচ্ছা আরহাম ভাইয়ের কি ইচ্ছে করে না আমাকে একবার দেখার? যদি এমন কিছুই হবে তাহলে কেনো উনি এতো এতো প্রেম বাণি বলেছেন। এখন আর চোখের কোণে পানি জমে না। বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কত ইচ্ছে ছিলো, আরহাম ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে এভাবে চন্দ্র বিলাস করবো। সেগুলো কি কখোনো পূরণ হবে না। বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। ফোনের ভাইব্রেশনের আওয়াজে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম আরহাম ভাইয়ের কল। এতোদিন পর উনার কল দেখে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা করে উঠলো। কলটা রিসিভ করতেও কেমন হাত কাঁপছে। কাঁপা হাতেই কল রিসিভ করে কানে ঠেকালাম। তবে কিছু বললাম না। ওপাশ থেকে আরহাম ভাইয়ের নিশ্বাসের আওয়াজ আসছে৷ দু’জনেই চুপ করি আছি। এভাবে কয়েক মিনিট যেতেই উনি বলে উঠলেন,

” দরজা খুলে গেটের সামনে আয়! ”

অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি৷ রাত এখন একটা বেজে দশ মিনিট। আমি গেটের দিকে তাকালাম। দেওয়ালের ওপাশে সত্যি আরহাম ভাই দাড়িয়ে আছেন? আমি ঝটপট মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলে আস্তে আস্তে বের হয়ে সবার ঘরের দরজার দিকে তাকালাম। ধীরে
মেইন দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। গেটের সামনে আসতে বুক ধুকধুক করছে। কতটা সময় পর মানুষটার দেখা পাবো ভেবে চোখের কোণে বারবার পানি এসে জমছে৷ গেটের বাইরে এসে দেখলাম আরহাম ভাই দাড়িয়ে আছেন। আচমকা দৌড়ে গিয়ে উনাকে ঝাপটে ধরে কেঁদে দিলাম। একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,

” আপনি এতোটা নিষ্ঠুর হলেন কিভাবে, আরহাম ভাই? আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলার মানে কি, আরহাম ভাই? ”

নিজের থেকে আমাকে সরিয়ে দিলেন আরহাম ভাই। হতবাক হয়ে আরহাম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছেন? আরহাম ভাই গম্ভীর হয়ে বললেন,

” গাড়িতে উঠ! ”

চোখের পানি মুছে হাজারটা অভিমান মনে নিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসলাম। আর বসবো না আরহাম ভাইয়ের পাশে। আরহাম ভাই ব্রু কুঁচকে আমার দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলেন৷ উনার এমন ব্যবহারে কাচের ন্যায় মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। জানালার ধারে মাথা রেখে ভাবতে লাগলাম চার মাস আগের একটা স্মৃতি।

সেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুজনে চলে গেলাম একান্ত কিছু সময় কাটাতে৷ পুরোটা সময় আরহাম ভাই আমার হাত আকড়ে ধরেছিলো। একসাথে পার্কে বসে বাদাম খাওয়া। আরহাম ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে কত কথার ফুলঝুরি খুলেছি। কখোনো বা রাস্তার মোড়ে হাসতে হাসতে ফুচকা খেয়েছি৷ আবার কখোনো বা আরহাম ভাইয়ের ঘামে ভেজা মুখশ্রী ওড়নার আঁচল দিয়ে যত্ন করে মুছে দিয়েছি। তখন আরহাম ভাই মুচকি হেসে বলেছিলেন,

” এভাবে সারা জীবন তোর হাতের যত্নের ছোয়া পেতে চাই, আইরু! তুই যত্ন করে আমাকে ছুঁয়ে দিবি, আমি নাহয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবো আমার শ্যামারানির দিকে। ”

গাড়ির ব্রেক করায় কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরি। সময়গুলো কেমন যেনো দ্রুত কেটে গেলো। সেদিন বৃষ্টিতে আমাকে আরহাম ভাইকে একসাথে দেখে ফেলেছিলো ভাইয়া। এভাবে বিষয়টা এতো দ্রুত সামনে এসে যাবে, কে জানতো? ভাইয়া তো জানে ভালোবাসা অন্যায় নয়। তাহলে কেনো এমন ভিলেনগিরি করছে?

” গাড়িতে বসে থাকবি সারা রাত? ”

ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। আরহাম ভাইকে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আবারো সেই লেকে নিয়ে আসলো আরহাম ভাই। এইখানেই তো আমাদের প্রণয় শুরু হলো। শুরু হলো আরহাম ভাইয়ের প্রতি গাঢ় অনুভূতি। আরহাম ভাই আমার পাশে এসে দাড়ালেন। অভিমান নিয়ে উনার থেকে অনেকটা দুরে গিয়ে দাড়ালাম। দুরে যখন সরিয়ে দিচ্ছে তখন আর এতো কাছে থেকে কি লাভ! আরহাম ভাইয়ের দিকে তাকালাম৷ উনার দৃষ্টি আমার দিকেই স্থীর। আজকে আরহাম ভাইকে পরিপাটি লাগছে না। কেমন ছন্নছাড়া লাগছে। চুলগুলো মুক্ত হাওয়ায় উড়ছে। চোখের নিচে হয়তো নির্ঘুমের কারণে, ডার্ক সার্কেল হয়ে আছে। হঠাৎ উনার এমন অবস্থা দেখে মনটা আনচান করে উঠলো। জানতে ইচ্ছে হলো, নিজের প্রতি এমন অবহেলা কেনো আরহাম ভাই?

” আমাদের সম্পর্ক তোর ভাই মেনে নিবে না, আইরিশ। ”

” কেনো আরহাম ভাই? ”

আরহাম ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলেন,

” আশরাফের কোনো কালেই এসব পছন্দ ছিলো না। যে তার বন্ধু, তার বোনের সাথে প্রেম করুক। কারণ আশরাফ সব সময় এটা ভেবে এসেছে যে, ভাইয়ের বন্ধু হলো ভাইয়ের মতো। সেটা তার বোনের ক্ষেত্রেও৷ কিন্তু অনুভূতি কি আর বলে কয়ে আসে। আশরাফ জানে আমি তোকে নিজের বোনের মতো দেখি। বাট আফসোস সেই নজরটা আমার কখোনো আসেনি, আইরিশ! ”

” তাহলে এখন কি বলতে চাইছেন? ”

আরহাম ভাই আমার দিকে তাকালেন। অপলক তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,

” আমাদের মিলন হবে না আইরিশ। ভালোবাসার জন্য প্রিয় বন্ধুকে হারাতে পারবো না আমি। আশরাফ এমন কিছু করবে জানলে আমি কখোনো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতাম না। ”

” তার মানে এখন আপনাকে ভুলে যেতে বলছেন? ”

” সেটাই ভালো হবে। ”

তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো আমার। ভালো করে চোখটা মুছে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,

” বাসায় যাবো। ”

.

সারা রাত নির্ঘুম কাটার পর সকালে চোখ লেগে আসছিলো। হুট করে আম্মুর কন্ঠে চমকে উঠে বসলাম। চোখ ডলে বিরক্তিতে ব’লে উঠলাম,

” কি হয়েছে ডাকছেন কেনো? ”

” একদম বিরক্তি দেখাবি না। সারা রাত প্রেম করে বেরাবি, সকালে ডাকলে ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠলে তো হবে না। আজকে বাসায় মেহমান আসবে। ঘর গুছানো লাগবে। উঠে কাজে লেগে পড়। ”

” কে আসবে, আম্মু? ”

আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,

” আজকে তোর বিয়ে। যারা দেখতে আসবে, তাদের তোকে পছন্দ হলে আজকেই কাবিন করে ফেলবে। ”

চরম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আছি। কি বলছে কি এসব আম্মু। আমি কিছু বলবো, আম্মু ধমকে উঠলেন,

” দেখ আইরিশ এখানে আমাদের সবার মান সম্মানের ব্যাপার জড়িয়ে আছে৷ যারা দেখতে আসছে তারা আমাদের খুব কাছের মানুষ। আরহামের ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। আর একটাও বাড়তি কথা শুনতে চাই না। এই লাল শাড়িটা পড়বি আজকে। তোর বাবা বলে দিয়েছে, তুই যদি কিছু করিস তাহলে তোকে ত্যাজ্য করে দিবে। ”

কথাগুলো বলেই আম্মু নিজের মতো করে চলে গেলেন৷ এদিকে আমার মাথায় কিছু যেনো ঢুকছে না। আজকে তোর বিয়ে কথাটা মাথায় আসতেই ছুটে গেলাম ভাইয়ার কাছে। ভাইয়া মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলো। আমাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে চমকে গেলো। আমি ভাইয়ার হাত ধরে কেদে দিয়ে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলে উঠলাম,

” ভাইয়া আম্মু এসব কি বলছে? ভাইয়া আমি আরহাম ভাইকে ভালোবাসি। আমি উনাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। ভাইয়া তুই একটু বুঝা না আম্মু আব্বুকে। ”

ভাইয়া আমাকে হতাশ করে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,

” মা বাবা যেটা বলছে, সেটা কর। এখানে আমি কিছু করতে পারবো না। ”

ভাইয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে কল দিলাম আরহাম ভাইকে। উনি কল রিসিভ করতে ব’লে উঠলাম,

” আজকে নাকি আমার বিয়ে আরহাম ভাই! আমি আপনাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না আরহাম ভাই। ”

আমাকে চরম হতবাক করে বলে উঠলো,

” তুই বিয়েটা করে ফেলিস আইরিশ। ”

আমি আর কিছু শুনলাম না। খট করে কল কেটে দিলাম। হাহ! যার জন্য আমি কেদে মরছি, সেই বলছে ন্যাকা কান্না করো কেনো? কেমন নির্জিব হয়ে গেলাম আমি।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। মানুষের কথার আওয়াজ পাচ্ছি। তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই৷ ফোন হাতে নিয়ে চাতক পাখির মতো বসে আছি৷ আরহাম ভাইয়ের একটা কল বা মেসেজের অপেক্ষায়। কিন্তু আমাকে আশাহত করে তার থেকে দুটোর একটাও এলো না। আম্মু রুমে এসে তাড়া দিলেন রেডি হওয়ার। না চাইতেও রেডি হয়ে নিলাম। ভাগ্যকে মেনে নিয়েই দেখি কি হয়।

রেডি হতেই আম্মু আমাকে নিয়ে গেলেন পাত্র পক্ষের সামনে। ইচ্ছে হলো না কাউকে দেখার। মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছি৷ আচমকা কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। আশ্চর্য হয়ে আম্মুকে প্রশ্ন করতে যাবো তার আগেই কাজি কবুল বলতে বললেন। আমি চুপ করে আছি। বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসছে। তাহলে কি সব শেষ হয়ে যাবে? ভাইয়া ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলো,

” কবুলটা বল, পিচ্চি! ”

ভাইয়ার মুখে অনেক দিন পর পিচ্চি ডাক শুনে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। চোখের অশ্রু ছেড়ে বাধ্য হয়ে কবুল বলে ফেললাম। পরপর পাত্রের কন্ঠে চমকে মাথা তুলে তাকালাম। আমার সম্মুখে আরাহম ভাই মুচকি হেসে বসে আছেন। চোখের ভুল ভেবে চোখের পলক ঝাপটে আবারো তাকালাম৷ না আরাহম ভাই তো বসে আছেন। আচমকা আমার মাথা ঘুরে উঠলো। চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে ঢলে পড়লাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি আরহাম ভাইয়ের রুমে। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে আছেন। আমার জ্ঞান ফিরতে মুচকি হেসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,

” কেমন লাগছে মিসেস, আইরিশ রহমান? ”

আমি অবাক হয়ে উঠে বসলাম। অবশেষে পুরো কাহিনি শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। এতোদিন যা যা হয়েছিল সব উনাদের মানে আমার ফ্যামিলি আর আরহাম ভাইয়ের ফ্যামিলির প্ল্যান করা ছিলো। এ নিয়ে অভিমান করলে আরহাম ভাই উনার ভালোবাসার ছোঁয়ায় ভেঙে দিলেন। অবশেষে আমাদের ভালোবাসার মিলন হলো৷

.

ডায়েরির শেষ পাতায় লিখা শেষ করে উঠে দাড়ালো আইরিশ। শাশুড়ির রুম থেকে এসে আবারো লিখতে বসেছিলো আইরিশ। কিভাবে যে তাদের ভালোবাসার তিন তিনটা বছর চলে গেলো। সে যে একটা নাদুস নুদুস পিচ্চি একটা ছেলের ফুফিও হয়ে গেলো। যাক অবশেষে ভাইয়ারও সংসার হলো নামি আপুর সাথে। আরিফা আর রাইহানেরও দুদিন আগে বিয়ে হলো। শশি সে তো দিবি স্বামীকে নিয়ে সুখে আছে৷ তবে কথাও একটা সন্তানের শুণ্যতা থেকেই গেলো। চেষ্টা যে করেনি তা না। সব শেষে সবাই সুখে দুঃখে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। আরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খালি রুমে চোখ বুলিয়ে বারান্দায় আসলো। আইরিশকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই তাকে জড়িয়ে ধরলো। আইরিশ খানিকটা চমকালেও হেসে ফেললো। আরহাম আইরিশের গালে চুমু দিয়ে ব’লে উঠলো,

” কি ভাবছিস আকাশের দিকে তাকিয়ে? ”

আইরিশ আরহামের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলে উঠলো,

” কিভাবে এতোগুলো সময় কেটে গেলো তাই না। কিন্তু আজও অনুভূতিগুলো কেমন তাজা হয়ে আছে স্মৃতিতে। ”

” হুম। তবে তোকে না পেলে হয়তো এতো ভালো থাকতাম না। তাই তো ভালোবাসি বলে আজও আগলে রেখেছি তোকে। আমার শ্যামারানি, আমার হৃদয়ের রানি।

সমাপ্ত!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে