#ভালোবাসি_বলে(১২)
#Jannat_prema
বেলকনির দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ শুনে একটু আগে আসা ঘুমটা ছুটে গেলো। লাফ দিয়ে উঠে বসে বারান্দার দরজার দিকে তাকালাম। ভয়ে বুকটা মোচড়ে উঠলো৷ শুকনো ঢোগ গি’লে বিছানা থেকে নেমে ওড়না গায়ে দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম৷ এতো রাতে কে এমন দরজায় টোকা দিচ্ছে! হঠাৎ মস্তিষ্কের ভিতর আমদানি হলো, চোর নয়তো! আমি ঝট করে বিছানার নিচ থেকে শোলার ঝাড়ুটা নিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলাম। আবারো আগুন্তুক ব্যাক্তিটা দরজায় করাঘাত করলো। যদিরে এটা চোর হয় এমন পিটান পিটাবো যে নিজের পরিচয় ভুলে যাবে। সবাই এখন ঘুমে বলে ডাকলাম না। এটা চোর কিনা আগে নিশ্চিত হয়ে নি৷ আমি দরজায় কান পেতে বলে উঠলাম,
” ককে ওপাশে? ”
” তোর জামাই, গাধি! ”
ছিটকে সরে গেলাম। আরহাম ভাইয়ের কন্ঠ চিনতে আমার ভুল হয়নি। হাতের ঝাড়ুটা কে বিছানার উপর ফেলে তাড়াতাড়ি করে বারান্দার দরজা খুলতেই দেখলাম আরহাম ভাই রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনার রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে মিইয়ে গেলাম। মিনমিনিয়ে বললাম, ” সরি! ”
আরহাম ভাই কিছু না বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলো। আমি উনার দিকে তাকালাম৷ আরহাম ভাই তীক্ষ্ণ চোখে বিছানায় রাখা শোলার ঝাড়ুর দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের ভাবনাগুলো মাথায় আসতেই জিভে কামড় দিলাম৷ উনি যদি জানেন যে আমি উনাকে চোর ভেবে ঝাড়ু নিয়েছি পোটানোর জন্য তখন! আর এমন ভাবনা আসবে না কেনো? এতো রাতে কেউ আসে। আর আসবে একটা মেসেজ বা ফোন দিয়ে বলবে না। আরহান ভাইয়ের কথায় ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরলাম৷
” এই ঝাড়ুটা কি আমার জন্য নিয়েছিস? ”
উনার কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। মাথাটাকে ডানে বামে নাড়াতে নাড়াতে বললাম,
” না না আরহাম ভাই। আমি তো ঝাড়ুটা চো__”
কি বলতে যাচ্ছিলাম। আমি যে উনাকে চোর ভাবছিলাম সেটা কেনো বলবো। আরহাম ভাই বিছনার উপর বসে বললেন,
” তোর মোবাইল কথায়? ”
হঠাৎ মোবাইলের কথা কেনো জিজ্ঞেস করছেন বুঝলাম না। তবুও এদিক সেদিক খুজে শেষে বালিশের নিচে পেলাম৷ লক খুলেই চেক করতেই আমার চোখ ছানাবড়া। আরহাম ভাইয়ের ১৫+ কল আর বিশের উপরে মেসেজ। আর এদিকে আমি কখোন যে ফোন সাইলেন্ট করে বালিশের নিচে রেখেছিলাম তার হুশ নেই৷ মোবাইলের থেকে চোখ সরিয়ে আরহাম ভাইয়ের দিকে তাকালাম। আরহাম ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” কয়টা কল আর মেসেজ দিয়েছি তোকে? ”
” আমি খেয়াল করিনি আরহাম ভাই। ”
আরহাম ভাই ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললেন,
” শেষে তুই আমাকে চোরের উপাধি দিলি, আইরু! ”
আমি অসহায় চোখে তাকিয়ে আছি। যেটার ভয়ে ছিলাম সেটাই উনি ধরে ফেললেন।
” এটা কি পড়েছিস? ”
গায়ের টিশার্টটাকে টেনে টুনে বললাম,
” দেখেন না কি পড়েছি। ”
আরহাম ভাই আমার আপাদমস্তক একবার দেখে বললো,
” এদিকে আয়! ”
এগিয়ে গেলাম আরহাম ভাইয়ের কাছে৷ এগিয়ে যেতেই আরহাম ভাই বলে উঠলেন,
” কফি বানাতে পারিস? ”
আমি মাথা নেড়ে জানালাম, পারি।
” তাহলে দুই মগ কফ বানিয়ে নিয়ে আসবি। আমারটাতেও চিনি দিবি, যা। ”
আমি কপাল কুঁচকে বলে উঠলাম,
” আপনি কি কফি খেতে এখানে এসেছেন? ”
আরহাম ভাই তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে উঠলেন,
” না তো! তোর সাথে বিয়ের আগে রোমান্স করতে এসেছি। আয় রোমান্স করি৷ ”
লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো আমার। আমার কথার পিঠে যে উনি এমন কথা বলবে তা যেনো মাথায় আসেনি৷ আমি দরজা খুলে উঁকি দিলাম। না কেউ জেগে নেই৷ শব্দহীন পায়ে হেটে কিচেন রুমে চলে আসলাম৷ আমার রুম একদম শেষের দিকে বলে সহজে আমার রুমের হালচাল বুঝা যায় না। গরম পানি চুলার উপর দিয়ে আরহাম ভাইয়ের কথাগুলো মনে করে আনমনেই হেসে ফেললাম৷ দিন দিন আরহাম ভাইটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। আগে তো দু একটা কথা ছাড়া আমার জন্য উনার মুখ থেকে তো কথাই বের হতো না৷ কফি বানিয়ে রুমে আসতেই দেখলাম, আমার ডায়েরিটা উনার হাতে। আমাকে দেখতেই আরহাম ভাই ডায়েরিটা রেখে ট্রে থেকে এক কাপ কফি নিয়ে চলে গেলেন বারান্দায়। আমি একবার আমার ডায়েরির দিকে তাকালাম৷ সেখানে আরহাম ভাইকে নিয়ে আমার কত অনুভুতি লিখা। উনার নাম লিখা না থাকলেও মাই হার্ট দিয়ে সব কথা লিখা৷
” কফিটা নিয়ে এদিকে আয়! ”
আরহাম ভাইয়ের ডাক শুনে নিজের জন্য রাখা কফি মগটা নিয়ে বারান্দায় আরহাম ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাড়ালাম৷ উনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমিও তাকালাম আকাশের দিকে। আজকে আকাশে চাঁদ নেই। নিকষ কালো অন্ধকারে কি দেখছেন আরহাম ভাই৷ পাশ থেকে আরহাম ভাইয়ের আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকালাম।
” এতো অনুভূতি কার জন্য লিখেছিস? মাই হার্টটা কে? ”
আমি তব্দা খেয়ে কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও দিলাম না। আরহাম ভাই বুঝলো না লেখাগুলো কার জন্য লিখা। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো৷ ইচ্ছে করেই উত্তর দিলাম,
” সবগুলো আমার এক্সের জন্য লিখা। ছেলেটাকে এতো ভালোবাসতাম, এতো ভালোবাসতাম যে তাকে ভুলতে না পেরে এতো কথা, এতো অনুভূতি লিখেছিলাম। বুঝেছেন! ”
আমার কথা শেষ হতে একটা হাত আমার কোমর জড়িয়ে মিশিয়ে নিলো তার বুকের সাথে৷ হাতে থাকা কফির মগটা পড়তে গিয়ে সামলে নিলাম৷ আমার পিঠটা আরহাম ভাইয়ের বুকের সাথে লেগে আছে৷ বুকের ভিতর ঠা*শঠা*শ আওয়াজ করছে৷ চমকে তাকালাম আরহাম ভাইয়ের দিকে। উনি মুচকি হেসে আমার কাধে থুতনি রেখে বলে উঠলো,
” দেখ, আকাশে আজকে চাঁদ নেই বলে চারদিকে কেমন অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। ”
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কন্ঠে বললাম,
” হুম ততো? ”
আরহাম ভাই আমাকে আরেকটু উনার সাথে মিশিয়ে নিলো। বললো,
” তুই আমার কাছে না থাকলে, আমার অবস্থা ঠিক এই নিকষ কালো অন্ধকারের মতো লাগে। ”
আমার মন জুড়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। খুশির ঢেউ প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেলো৷ আরহাম ভাই এতোটা ভালোবাসেন আমায়! ইচ্ছে করলো এভাবে থেকে যাই দুজন। সময়টা নাহয় থমকে যাক। থমকে যাক সব কিছু।
.
” আইরিশ! আমার মা! আমার কালাচাঁদ, উঠ মা! ”
এমন মায়াময় কন্ঠের ডাক শুনে চোখ টেনে খোলার চেষ্টা করলাম। আবারো চোখটা বুঝে আসতেই দুই তিনবার চোখের পলক ঝাপটে খুলতেই দেখলাম আম্মু শোলার ঝাড়ু হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে আমার ঘুম উদাও হয়ে গেছে৷ এক লাফে বিছানার ওপাশে দাড়িয়ে গেলাম৷ এবার বুঝলাম আম্মু কেনো এতো মিষ্টি করে ডাকছে৷ আম্মুর এমন মিষ্টি ডাক শুনে তো ভাবছিলাম আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে। আড় চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার। নয়টা পনেরো বাজে। তার জন্যই তো আম্মু ঝাঁটা হাতে দাড়িয়ে আছে। আমি কান্নার স্বরে বললাম,
” আম্মু সরি। আর এমন দেরি হবে না। ”
” তোকে আমি সাড়ে আটটা থেকে ডেকে যাচ্ছি, আইরিশ । ভার্সিটিতে কি আমি যাবো? প্রতিদিন তোকে সকাল বেলা ডাকা লাগে কেনো? আইরিশ তুই রাতে জেগেছিলি? ”
আমি মাথা নেড়ে মিথ্যা বললাম,
” না না। এলার্জির ওষুধ খাওয়াতে এতো ঘুম হয়েছে, আম্মু। সত্যি বলছি। ”
আম্মু কিছুটা শান্ত হলেন। সন্দেহের স্বরে বললেন,
” ওষুধের পাতাটা দেখা। ”
আম্মুর কথা শুনে ভয়ে আমার আত্না বের হয়ে যাবে মনে হয়। এখন যদি ওষুধের পাতাটা দেখে তাহলে তো ধরা খেয়ে যাবো। আম্মুকে বলে উঠলাম,
” এখানে এতো দেখার কি আছে। আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। এটা আপনার থেকে আশা করিনি আম্মু। নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করেন না। ছিহ! ”
আমার ইমোশনাল কথা শুনে আম্মু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে গেলেন,
” নাস্তা করতে আয়। বান্দি পেয়েছিস তো মুখের সামনে নাস্তা বানিয়ে খাওয়াবো তোকে। ”
আম্মু যেতেই বুকে হাত দিয়ে সস্তির শ্বাস নিলাম। আম্মু যদি গোয়েন্দা হতো ভালো হতো।
চলবে!