#ভালোবাসি_বলে(১০)
#Jannat_prema
মেয়েটা খানিকটা ভড়কে গেলো। একবার আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে চটপট পায়ে এসে আমার পাশে বসে পড়লো। আমি অবাক হলাম কিছুটা। উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলেন,
” তুমি আসলেই কিউটের ডিব্বা। মায়াবি একটা চেহারা তোমার। আশরাফ এই জন্যই তো সব সময় বলবে আমার বোন আস্ত এক মায়াবি। ”
আমরা হা করে তাকিয়ে আছি আপুটার দিকে। উনি আমার গাল ছেড়ে আমাদের সবার দিকে এক পলক তাকালো৷ এরপর নিজেই মুচকি হেসে বলে উঠলো,
” হেই! তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? ”
” আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। আপনি আশরাফ ভাইয়ার ফ্রেন্ড? ”
আমার কথায় আপুটা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো৷ আমি চোরা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি উনি লজ্জা পাচ্ছে কেনো! কেমন সন্দেহের ঘ্রাণ পাচ্ছি। আমি বন্ধুদের দিকে তাকালাম৷ ওরাও আমার মতো সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমাদের সন্দেহকে সঠিক প্রমান করে মেয়েটা বলে উঠলো,
” আসলে আমি আশরাফের গার্লফ্রেন্ড সিমি। ”
আমরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। আমি ভাবতেই পারছি না ভাইয়া প্রেম করে৷ ওর মতো খচ্চরের সাথে এমন সুন্দর একটা মেয়েকে কিছুতেই মানাচ্ছে না। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমাদের সিনিয়র হবে৷ আমি অবাক স্বরেই বললাম,
” আপনার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক আছে? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে মাথা ঝাকালেন। পাশ থেকে শশি ফিসফিস করে ব’লে,
” তোর ভাই তো তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছে আইরিশ। ”
রাইহান আর আরিফাও কান পেতে আছে৷ আমি ওদেরকে ইশারায় শান্ত হতে বলে আপুটাকে ব’লে উঠলাম,
” আপনি আর ভাইয়া কি সম বয়সী? আর কত দিনের সম্পর্ক আপনাদের? ”
” না আমি এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল দিবো৷ আর আমাদের সম্পর্কের কালকে এক বছর পূর্ণ হবে। ”
আমি এবার হার্ট এ্যাটাক করবো মনে হচ্ছে। ভাইয়া তলে তলে এতো দুর চলে যাবে ভাবিনি৷ যাক মনে মনে একটা সস্তি অনুভব করছি যে ভাইয়ার সিক্রেটটা জেনে গেছি । আমার সাথে লাগতে আসলে একদম ব্ল্যাকমেল করবো৷ সিমি আপু হঠাৎ মুখটাকে কালো করে ব’লে উঠলেন,
” জানো আইরিশ তোমার ভাইয়াটা না খুব পাজি হয়ে গেছে। ”
” ভাইয়া কি করেছে আপু? ”
রাইহানের প্রশ্নে সিমি আপু আবারো লজ্জায় মাথা নিচু করলেন। আমি বুঝতে পারছি না সিমি আপু কথায় কথায় এতো লজ্জা পাচ্ছে কেনো৷ তবে সিমি আপুকে লজ্জায় খুব সুন্দর লাগে৷ মনে মনে মাশাল্লাহ বললাম। সিমি আপু মিনমিন করে বললেন,
” তোমার ভাইয়া কালকে রাতে আমার থেকে একটা জিনিস শুনতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু আমার এতোই লজ্জা পাচ্ছিলো যে আমি বলতেই পারিনি। ”
” কি জিনিস শুনতে চেয়েছিলো? ”
আরিফার অবাক প্রশ্ন। সিমি আপু ব’লে উঠলো,
” ও গুলো কি বলার জিনিস। ”
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে। আমি কাতর গলায় বললাম,
” এরপর কি হয়েছে আপু? ”
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” এরপর কি তোমার ভাইয়া রাগ করে কল কেটে দিলো৷ সব জায়গা থেকে আমাকে ব্লক মেরে দিলো। আমি ভাবলাম ওতো মাঝে মাঝেই এমন করে আবার নিজেই তার কয়েক মিনিট পরে সব ঠিক করে ফেলে৷ বাট কালকে রাত থেকে ও এখনো একটা কল বা মেসেজ কিছুই দেয়নি৷ আমি যে কল দিবো তারও কোনো ব্যাবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তোমার কাছে আসা৷ ”
আমরা সবাই এতোক্ষণ গালে হাত দিয়ে উনার কথাগুলো শুনছিলাম। ভাইয়ার উপর খুব রাগ লাগলো আমার। সিমি আপুর মতো এমন মিষ্টি মেয়েকে কেউ এই ভাবে ইগনোর করতে পারে! আমি সিমি আপুর হাতটা ধরে বললাম,
” তুমি করেই বলছি কেমন! ভাবিকে কেউ আপনি করে বলে! তুমি মন খারাপ করো না, আপু। ভাইয়াকে তো আমি দেখে নিবো। ”
” আসলে কি বলতো, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি তো তাই ওর সাথে কথা না বলতে পারলে কোনো কিছুতেই শান্তি খুজে পাই না৷ ”
সিমি আপু কত ভালোবাসে আমার ভাইয়াকে৷ আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমরা সবাই অনেকক্ষণ খোশগল্প করে যে যার ক্লাসে চলে গেলাম।
.
ভার্সিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি প্রায় বিশ মিনিটের মতো। ভার্সিটি ছুটি দিয়েছিলো আরো পঁচিশ মিনিট আগে৷ শশিদেরকে কোনো রকম ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দাড়িয়ে রইলাম আরহাম ভাইয়ের জন্য ৷ ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ আরহাম ভাই মেসেজ দিয়ে বললেন ছুটি শেষে যেনো উনার জন্য অপেক্ষা করি। আমি ঠিকই উনার কথা মতো দাড়িয়ে আছি, কিন্তু মহাশয়ের কোনো খবর নেই। আর দুই মিনিট যেতেই আরহাম ভাইয়ের ব্লু রঙ্গের গাড়িটা এসে থামলো৷ আরহাম ভাই মাথা বের করে ইশারায় গাড়িতে উঠে বসতে বললেন। আমি গিয়ে আরহাম ভাইয়ের পাশের সিটে বসতেই উনি বললে উঠলেন,
” রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো। যার জন্য এতো লেট হলো। ”
আরহাম ভাইয়ের মুখটা ঘেমে আছে৷ অনেকটা ক্লান্ত লাগছে উনাকে। আমি চট করে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে উনার মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে মুছে দিতে লাগলাম৷ বলে উঠলাম,
” তো কি হয়েছে? আপনি আরোও দেরি করে আসলেও আমি অপেক্ষা করতাম। দেখেছেন ঘেমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। দুপুরে খেয়েছেন? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। যার মানে উনি খান নি। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
” খান নি কেনো? ”
” তোর সাথে খাবো বলে। ”
আমি মুচকি হেসে উনার গাল থেকে হাত নামিয়ে নিলাম। আরহাম ভাই গাড়ি স্টার্ট দিলেন। ভাইয়ার কথা মনে হতেই ব’লে উঠলাম,
” ভাইয়া জানে আপনি কোথায়? ”
এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে আরহাম ভাই বললেন,
” আশরাফ অফিসে। আমি ছুটি নিয়ে এসেছি। আর আশরাফ জানে আমি আব্বুর চেম্বারে যাচ্ছি। ”
” তার মানে আপনি মিথ্যা কথা বলে এসেছেন? ”
” তুই বলতে চাচ্ছিস, আমি আশরাফকে সত্যিটা বলে আসতাম। ”
আমি ঝটপট মাথা ঝাকিয়ে বললাম,
” না না তা কেনো বলতে যাবো। আমি তো এমনে জিজ্ঞেস করছিলাম। ”
” তুই ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়েছিস কেনো? নিষেধ করেছিলাম না! ”
আমি চমকে ঠোঁটে হাত দিয়ে উনার দিকে তাকালাম। এতো হালকা করে লাগানোর পরেও আরহাম ভাই বুঝলো কিভাবে? আমি মেকি হাসি দিয়ে ব’লে উঠলাম,
” নাতো। কোথায় ঠোঁটে লিপবাম লাগি__”
আরহাম ভাইয়ের কঠিন চাহনি দেখে বাকিটা আর বলা হলো না। আমি অসহায় ভাবে বললাম,
” একটু হালকা করে লাগিয়েছি আরহাম ভাই। ”
আচমকা গাড়ি ব্রেক করলেন৷ এতে সামনের দিকে কিছুটা ঝুকে গেলাম৷ আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলাম রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়েছেন। হুট করে আরহাম ভাই আমার দিকে অনেকটা ঝুঁকে গেলেন৷ আমার পিঠ গিয়ে ঠেকলো গাড়ির সিটের সাথে। উনার এমন কাছে আসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। শ্বাস প্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আরহাম ভাই নে*শালো কন্ঠে ব’লে উঠলো,
” তোর এই গোলাপি ঠোঁটে তুই যখন লিপবাম লাগিয়ে আরো গোলাপি করিস না, তখন নিজেকে সামলানো বড্ড কষ্টকর হয়ে উঠে। তখন কি করতে ইচ্ছে করে জানিস? ”
আমি ঢোগ গিলে গলাটা ভিজানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। কাঁপা কন্ঠে বললাম,
” কিকি ইচ্ছা ককরে আরহাম ভাই? ”
আমার প্রশ্ন শুনে আরহাম ভাই আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। উনার আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁট ছুঁতেই পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো। আমার ঠোঁট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে ব’লে উঠলো,
” ইচ্ছে করে একটু ছুঁয়ে দিই। যেটা একান্ত আমার সেটা একান্তই রেখে দিই৷ ”
লজ্জায় কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে আমার। পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। আরহাম ভাই এমন কিছু বলবে জীবনেও ভাবিনি। বুকের ভিতর তিব্র ভাবে ধুকপুক করছে। আরহাম ভাই সরে বসলেন। আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আরহাম ভাই আবারো ব’লে উঠলো,
” বিয়ের আগে তোর ঠোঁটে যেনো কোনো কৃত্রিম কিছু না দেখি। ”
চলবে!