#ভালোবাসি_বলে(৪)
#Jannat_prema
এতো কিছু ভাবনার মাঝেই আচমকা মেসেঞ্জারের আওয়াজে ধ্যানচুত্য হলাম। পাশ থেকে ফোন নিয়ে চেক করতেই আমার চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। মাই হার্ট লেখাটা ফোনের ওয়ালপেপারের উপর জ্বলজ্বল করছে। এ সময় আরহাম ভাইয়ের মেসেজ তাও আবার রাতের বারোটা বাজে। তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে মেসেজ ওপশনে চাপ দিয়ে মেসেজটা পড়েই কপাল কুঁচকে গেলো আমার।
” এতো রাতে জেগে আছিস কেনো? ”
আরহাম ভাইয়ের এমন মেসেজে মনে মনে শয়তানি বুদ্ধির আর্বিভাব হলো। হঠাৎ এমন বুদ্ধি কেনো এলো জানি না। তবে ইচ্ছে হচ্ছে আরহাম ভাইকে জ্বালানোর। আমি চটপট হাতে টাইপিং করে পাঠালাম,
” প্রেম করছি তো, তাই জেগে আছি। ”
পাশে ছোট করে একটা লজ্জা পাওয়া ইমোজি দিয়ে দিলাম। দেখলাম আরহাম ভাই সাথে সাথে সিন করলেন মেসেজটা। আমি উৎসুক হয়ে আছি উনি কি মেসেজ দিবে সেটার।
.
আরহাম একটু আগে আসা মেসেজটার দিকে কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে বসে আছে। পরপরই আরহাম দাঁতে দাঁত চাপে। আইরিশ যে তার সাথে মজা করছে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। তবু কেনো বুকের বাঁ পাশটা চিনচিন করে উঠলো? আরহাম শক্ত চোয়ালে বসে থাকা অবস্থায় কল করলো আইরিশকে। ওপাশে কল রিসিভ করতেই আইরিশকে কিছু বলতে না দিয়ে কঠিন স্বরে ব’লে উঠলো,
” তোর প্রেম করা আমি চুটিয়ে দিবো। থাপ্পড় খাওয়ার আগে এক্ষুনি ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পরবি। ঘুমিয়ে পড়বি মানে ঘুমিয়ে পড়বি। যদি তোকে এক্টিভ দেখি, বাকিটা নিজেই বুঝে নিবি। রাখছি! ”
ঠাশঠাশ কথাগুলো বলে কল কেটে দিলো আরহাম। তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে গেলো স্টাডি টেবিলটার দিকে। আরহাম একবারো ভাবলো না অপর মানুষটার পরিস্থিতি এখন কেমন হতে পারে। সবগুলো বইয়ের ভাজ থেকে নিজের কাঙ্খিত বস্তুটা নিয়ে বিছানায় এসে বসলো। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা অনুভব করলো আরহাম। তারপর ফট করে চোখ খুলে দক্ষ হাতে কলম চালালো কালো মলাটের ডায়েরির পাতায়। মনের মাধুরি মিশিয়ে ছোট ছোট অক্ষরে লিখলো,
” তোকে ছোয়ার সাধ্য নেই আমার, কারণ
তুই যে আমার বদ্ধ হৃদয়ের রানি।
আড়ালে আবডালে আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে, সযত্নে আমি শুধু তোকেই আঁকি। ”
চরণগুলো কেমন এলোমেলো লাগলো আরহামের। ইচ্ছে করছে __আর ভাবলো না। প্রিয় ডায়েরিটা বুকের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। মনে মনে কিছুটা প্রশান্তি পেলো। যেনো সে কাছেই আছে, তার বুকের মাঝে চুপটি করে লুকিয়ে আছে। তার কানে ফিসফিস করে ব’লে,
” ভালোবাসি! ”
.
আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি। আমার এই ছোট্ট মেসেজে যে আরহাম ভাই ডাইরেক্ট কল দিয়ে বসবেন তা যেন সপ্নের মতো। তাহলে আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নিজেকে নিজেই চিমটি দিয়ে চিল্লিয়ে উঠলাম। তার মানে আমি সপ্ন দেখছি না। আচ্ছা আরহাম ভাই কি জেলাস ফিল করলো না তো? এখনো বারবার কানের কাছে আরহাম ভাইয়ের কঠিন স্বরের কথাগুলো বেজে যাচ্ছে।
” তোর প্রেম করা আমি চুটিয়ে দিবো। থাপ্পড় খাওয়ার আগে এক্ষুনি ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়বি। ঘুমিয়ে পড়বি মানে ঘুমিয়ে পড়বি। যদি তোকে এক্টিভ দেখি, বাকিটা নিজেই বুঝে নিবি। রাখছি! ”
পরক্ষণেই মনে পড়লো ঘুমানোর কথা। আমার ঘুম কি এতো সহজে আসবে। আরহাম ভাইয়ের হুমকি শুনে শুকনো ঢো’গ গিললাম ? কিভাবে আমাকে বলতে না দিয়ে, নিজেই বলে আবার নিজেই মুখের উপর ঠা’শ করে কল কেটে দিলো। এতো কিছু ভাবলে কি আর ঘুম ধরা দেয় চোখে।
.
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম। এখনো আমার চোখে ঘুমের রেশ কাটেনি। যার কারণে কিছুটা ঝাপসা দেখছি। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে তাকালাম মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া মানুষটার দিকে৷ মুখে হাসি ফুটিয়ে আব্বুর কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বললাম,
” কি ব্যাপার আব্বু আজকে এতো আদর করছেন? ”
আব্বু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ব’লে উঠলো,
” তুই আমার মা না! তোকে আদর করবো না তো কি ওই ছাগলটাকে আদর করবো? ”
আব্বুর কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললাম৷ শেষের কথাটা যে আশরাফ ভাইয়াকে বলেছে বুঝতে পারলাম। আব্বু আবারো ব’লে উঠলো,
” কালকে রাতে ভাত খেতে আসলি না কেনো? ”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
” খিদে ছিলো না, আব্বু। ”
” বুঝেছি থাক। তোর আম্মু বকা দিয়েছে বলে খেতে আসলি না। এখন তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। আজকে আমরা বাপ বেটি মিলে একসাথে নাস্তা করবো। ”
আব্বুর কথা শুনে ঝটপট উঠে গেলাম৷ আব্বু কথাটা বলে চলে গেলেন। ফুরফুরে মনে ফ্রেশ হতে গেলাম। প্রায় অনেক দিন পর আব্বুর সাথে নাস্তা করতে পারবো। আব্বুর অফিস টাইম সব সময় সকাল ৭:৩০ টা থেকে। ওয়াশরুমে যেতে যেতে ঘড়ির দিকে চোখ বুলালাম। এখন বরাবর আটটা বাজে। তারমানে আজকে আব্বু একটু দেরি করে যাবেন।
.
ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই দেখলাম আম্মু টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। ভাইয়া আর আব্বু নিজেদের চেয়ারে বসে টুকিটাকি কথা বলছেন। আমি চেয়ারে বসতে না বসতেই আম্মু বলে উঠলেন,
” ওমা এটা কি দেখছি। আজকে আমার ঘরের রানি এতো সকালে উঠে পড়েছে। আজকে মনে হয় সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠেছে। ”
ফট করে আশরাফ ভাইয়া ব’লে উঠলো,
” আম্মু সূর্য তো পূর্ব দিক থেকেই উঠে। ”
” তুই চুপ থাক। কথার মাঝে কথা বলতে নিষেধ করেছি না। তোরা সবাই এক বংশের মানুষ। ভালো হবি কেমনে। ”
এদিকে আমি অসহায়ের মতো একবার আম্মু তো আবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। আম্মু শুরু করলো আমাকে নিয়ে আর এখন শেষ করলো বংশ নিয়ে। বংশ নিয়ে টানাটানি করার অভ্যাসটা আম্মুর আর গেলো না।
” আইরিশ রেডি হয়ে নে। আজকে আমার সাথে ভার্সিটি যাবি। ”
খাবারটা মুখে নিতে গিয়েও মুখে নিলাম না। অবাক চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আজ পর্যন্ত নিজের সাথে ভার্সিটি না নেওয়া ভাইয়াটা হঠাৎ এমন কথা বলায় অবাক হলাম। আমি চেয়ার থেকে চট করে উঠে ফট করে ভাইয়ার কপালে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলাম। ভাইয়া বিরক্তি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
” এমন করছিস কেনো? ”
” ভাইয়া তুই সুস্থ আছিস তো? ”
আমার কথা শুনে ভাইয়া নিজেও চমকে উঠলো। বললো,
” কি যা তা বলছিস! ”
” না মানে যে ছেলে, বন্ধুকে ছাড়া ভার্সিটিতে পা রাখে না সে নাকি আমাকে নিজের সাথে ভার্সিটি নিয়ে যাবে। হাহ! হাস্যকর! ”
ভাইয়া কটমট করে তাকালো আমার দিকে। পানিটা খেয়ে ব’লে উঠলো,
” তুই যেতে চাইলে যাবি। কারণ আরহাম আজকে গাড়ি নিয়ে আসবে। তাই তোকে অফারটা করলাম। বাকিটা তোর উপর ডিপেন্ড করে। ”
খাবারটা আর চিবোতে পারলাম না। আরহাম ভাইয়ের কথা শুনলে যে থমকে যাই আমি। কোনোরকম খাবারটা পানি দিয়ে গিলতে লাগলাম। পাশ থেকে আব্বু বললো,
” আস্তে খা। গলায় আটকাবে। ”
আমি কি আর শুনার মানুষ। এখন আমার অনেক কাজ। নিজেকে পরিপাটি করতেই তো কত সময় পার হবে। সবাই আস্তে খাওয়ার কথা বললেও আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে চলে আসলাম।
.
আলমারি অনেক ঘেটেঘুটে শেষে সবুজের উপর সোনালী রঙের কারুকাজ করা গোল জামাটা গায়ে জড়িয়ে নিলাম। চুলগুলোকে সামনে দিয়ে ফ্র্যাঞ্চ বেণী করে পুরো চুলটাকেও বেণী করে ফেললাম। চেহারায় একটু স্নো লাগিয়ে, ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলাম। ততক্ষণে ভাইয়া ডাক দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বললো। ব্যাগটাকে কাঁধে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
গেটের কাছাকাছি আসতেই থমকে গেলাম মুগ্ধতায়। আরহাম ভাই আজকে বেগুনি রঙের শার্ট পড়েছেন, সাথে কালো রঙের প্যান্ট, চুলগুলো আজকে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে, ঠিক আমার হৃদয়ের মতো। উনার মতো মানুষকে এতো রঙিন পোশাক পড়তে নেই। যদি নজর লেগে যায়। আমার মনটা ঘোরতর নিষেধাজ্ঞা দিলো যে, আরহাম ভাইয়ের মতো ফর্সা মানুষ রঙিন পোশাক না পড়ুক। কারো নজর না লাগুক। তাকে শুধু এই আইরিশ রেহমান দেখবে।
চলবে!